#এক_গুচ্ছো_কদম
#পর্বঃ১৩
লিখাঃসামিয়া খান
পরম আবেশে ঘুম চলে আসছে মৃদুলের।চোখগুলো আধো জাগরণ অবস্থায় রয়েছে।মাথার চুলের ভিতরে অনেক যত্ন,আদর,ভালোবাসা দিয়ে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।আর মৃদুল কোলের মধ্যে মাথা রেখে শুয়ে আছে।কেমন যেনো একটা মমতার ঘ্রাণ নাকে আসছে তার।আচ্ছা মমতার আবার ঘ্রাণ হয় নাকী?মমতা তো একটা অদৃশ্য স্পৃহ্য অনুভূতি। হলেও হতে পারে ঘ্রাণ।এবং তা শুধু একজন ব্যাক্তি ক্ষেত্রে প্রবলভাবে প্রকাশ পায় সে হলো মমতাময়ী মা।আজ প্রায় পাঁচ বছর পরে মৃদুল নিজের মায়ের সান্নিধ্য লাভ করতে পারলো।
চোখ দুটো বন্ধ করে কেবল তন্দ্রাআচ্ছন্ন হয়েছিল মৃদুল। এমন সময় কানে একটা মিষ্টি রিনরিনে স্বর ভেসে আসলো,,
“মৃদ বাবা ঘুমিয়ে গিয়েছিস?”
কোলে মাথা রেখেই মৃদ জবাব দিলো,,
“না মা ঘুমাইনি।তোমাকে অনুভব করছি।দেখছি তুমি সত্যিই এসেছো কীনা?”
“আমার বাপজানটা এতো বোকা কেনো?আমি না আসলে তাহলে এখন কার কোলে শুয়ে রয়েছিস?”
“তুমি তো কল্পপনাও হতে পারো মা।”
“নারে বাপজান আমি সত্যিই এসেছি।তুই কতো পালটে গিয়েছিস।তোর ওই রিনা খানের মতো শ্বাশুড়ী তোর ঠিকমতো যত্ন করেনি?”
“মা জানো একটা কথা,,মেয়েরা যেমন তার শ্বশুড়বাড়ীর মেয়ে হতে পারেনা।তেমনি ছেলেরাও তার শ্বশুড়বাড়ী ছেলে হতে পারেনা।মুখে যতোই বলুক না কেনো।”
“জানিরে বাপজান।এজন্য একটা কথা আছে, মুখের কথায় চিড়ে ভিজেনা।”
“তুমি তো পুরোপুরি সুস্থ মা?”
“আমি সুস্থ বাপজান। খালি একটাই দুঃখ আমার দুর্জয়টা এভাবে চলে গেলো।”
কথাটা বলেই আঁচলে মুখ চেঁপে কান্না করে দিলো।এবং তা বেশ শব্দ করে।কোলে থেকে মাথা উঠয়ে মায়ের মাথাটা নিজের বুকে চেঁপে ধরলো।কান্না করতে করতে মৃদের মা হমায়রা বললো,,
“সবাই মনে করছে আমি কিছু জানিনা।কিন্তু আমি তো সব জানি।আমার দুর্জয় মারা যাওয়ার আগে আমার কাছে এসেছিল।আমারে বলছিলো কী জানিস?বলেছিলো মা আমি আমার ভুলের প্রায়শ্চিত করতে যাচ্ছি। আমাকে মাফ করো।তখন তো বুঝিনি। শরীর অসার থাকলে কী হবো আমি তো আর মরে গিয়েছিলাম না।পরে ঠিকই বুঝছি আমার দুর্জয়টা আমাকে রেখে চলে গিয়েছে।
মায়ের কান্না কীভাবে থামাবে তা জানেনা মৃদ।কিন্তু কান্না করাটা স্বাভাবিক।নিজের ঔরসজাত সন্তান যখন নিজের আগে কবরে বিলিন হয়ে যায় তখন কীরকম অনুভূতি হয় তা সেই সন্তানের পিতা মাতা ছাড়া এ পৃথিবীর আর কেও উপলোব্ধি করতে পারবে না।
,
,
,
কিচেনে মাদিহাকে কোলে নিয়ে দাড়িয়ে আছে সৃষ্টি।সামনে মেহেলতা আর হিমাদ্রি রান্না করতে ব্যাস্ত।আর রোদসী প্রতিদিনের মতো আজোও বাইরে।মূলত মৃদুলের মা অনেকটা রিকোভার করেছে কিন্তু দেহের নিম্নভাগ এখনো অসার।সবসময় হুয়িল চেয়ার ইউস করতে হবে।
শ্বাশুরী,শ্বশুর এবং স্বামী ফিরে এসেছে দেখে মেহেলতার আনন্দের শেষ নেই।হিমাদ্রিকে নিয়ে খুব যত্ন করে সবার পছন্দসই খাবার তৈরী করছে সে।
“হ্যাঁ রে সৃষ্টি, মার সাথে দেখা করেছিস?”
“না এখনো করিনি।আমার কেমন যেনো লাগছে।মা কী আমাকে মেনে নিতে পারবে?”
মেহেলতা জবাব দেওয়ার আগে পাশ থেকে কাবাবের মন্ড মাখতে মাখতে হিমাদ্রি জবাব দিলো,,
“এরকম কেনো ভাবছো সৃষ্টি।পজিটিভ চিন্তা করো।মা নিশ্চয় কখনো কারো সাথে অন্যায় হয় এমনটা চাবেনা।”
“ঠিক বলেছিস হিম তুই। শুধু শুধু সৃষ্টি ভয় পাচ্ছে।”
“না ভাবী শুধু শুধু সৃষ্টি ভয় পাচ্ছেনা।দুঃশ্চিন্তা করাটা স্বাভাবিক।”
মেহেলতা কিছু বলতে যাবে তার আগে বেশ জোরে জোরে মাদিহা কান্না করে দিলো।আর হাতদুটো হিমাদ্রির দিকে বাড়িয়ে দিচ্ছে বারবার।
“হিম মনে হয় মাদিহা তোর কোলে নিয়ে উঠবে।”
“কিন্তু এখন কীভাবে কোলে নিবো আমি?চুলার তাপ লাগবে শরীরে তো ওর।”
“তাহলে রান্নাঘর থেকে দূরে গিয়ে কোলে নে।”
“তুমি কী একা একা রান্না করতে পারবে?”
“পারবো তুই যা।”
হাতদুটো ধুয়ে হিমাদ্রি মাদিহার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো।মাদিহা প্রায় লাফানোর মতে করে হিমাদ্রীর কোলে উঠে গেলো।হিমাদ্রি হেঁসে মাদিহার গালে একটা চুমো দিয়ে বুকে জরিয়ে নিলো।ওকে নিয়ে কিচেন থেকে বের হবে তখন পিছন থেকে সৃষ্টি হিমাদ্রিকে জিজ্ঞেস করলো,,
“সত্যি তো আমাকে মেনে নিবে আপু?”
হিমাদ্রি থমকে গিয়ে পিছনের দিকে তাঁকালো।সৃষ্টি মায়াভরা চোখে হিমাদ্রির দিকে তাঁকিয়ে আছে তার উত্তরের অপেক্ষায়। একটু এগিয়ে গিয়ে সৃষ্টির ডান গালে নিজের হাত দিয়ে স্পর্শ করলো হিমাদ্রি,,
“সৃষ্টি সবসময় মনে রাখবে তুমি হলো দুর্জয়ের দেওয়া আমনত আমার কাছে।তোমার এবং ভবিষ্যতে যারা আসবে তাদের কোন প্রকার ক্ষতি হতে দিবো না আমি সবসময় ঢাল হয়ে থাকবো।”
,
,
,
মাদিহা হিমাদ্রীর ঘারে মাথা দিয়ে শুয়ে রয়েছে আর হিমাদ্রি ওকে কোলে নিয়ে করিডর দিয়ে পায়চারী করছে।ঘুমায়নি মাদিহা জেগে আছে এবং এক হাত দিয়ে পিঠে ছড়িয়ে থাকা হিমাদ্রির চুল নিয়ে খেলা করছে।
হিমাদ্রির বেশ ভালোই লাগে এরকম একটা নরম, তুলতুলে পুতুলের মতো মেয়েটাকে সারাক্ষণ নিজের কাছে রাখতে।কেমন যেনো একটা মা মা ফিলিংস হয়।মাদিহাকে কোলে নিয়ে হিমাদ্রি দোলনায় বসে পরলো।একটু পরে কোথা থেকে এসে মৃদুলও দোলনায় বসে পরলো,,
“হিম রোদসী কোথায় কিছু জানিস?”
“না তো।প্রতিদিনের মতো আজকেও বাইরে গিয়েছে।এসে পরবে।”
মৃদ একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো,,
“আমি কী স্বামী হিসেবে খুব খারাপ?”
“কেনো হঠাৎ একথা কেনো বলছো।আমি যতোদূর জানি স্বামী হিসেবে তুমি যথেষ্ট রেসপন্সেবল।”
“তাহলে রোদসী আমাকে এ ব্যাপারে কিছু বলিনি কেনো?
” কোন ব্যাপারে?”
মৃদুল কোন জবাব দিলো না।শুধু হিমাদ্রির দিকে একটা প্রেগন্যান্সির কিট এগিয়ে দিলো।হিমাদ্রি হাতে নিয়ে দেখলো রেজাল্ট পজিটিভ।
“এটা কার মৃদ?”
“এটা রোদসীর।দুইদিন আগে টেস্ট করিয়েছে।আমি ওকে কিছু বলিনি।আমি অপেক্ষা করছিলাম ও কবে নিজ থেকে আমাকে এ ব্যাপারে বলবে।কিন্তু দুদিন হয়ে গেলো তাও তো কিছু বললো না।”
“তুমি কী সিওর এটা রোদসীর?”
“হুম সিওর।”
“তাহলে অপেক্ষা করো রোদসী অবশ্যই তোমাকে এ বিষয়ে অবগত করবে।”
“হয়তো।মাদিহাকে একটু দে তো।সব ঠিক থাকলে খুব তাড়াতাড়ি মাদিহার খেলার সাথি আসছে।”
মাদিহাকে মৃদুলের কোলে দিয়ে দিলো হিমাদ্রি। হুট করেই হিমাদ্রির মন খারাপ হয়ে গেলো।এবং কেনো হলো তা বুঝতে পারলোনা।শুধু মনে মনে নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করলো,,
“আচ্ছা বিনা কারণে কী কখনো মন খারাপ হয়?”
চলবে,,,