#এক_গুচ্ছো_কদম
#পর্বঃ২২
লিখাঃসামিয়া খান
ইউনিভার্সিটির অন্যতম গসিপ হচ্ছে প্রফেসর. ভৌমিক আর মিস.হিমাদ্রি।সবার একটু বেশীই কৌতুহল তাদের প্রতি।প্রফেসর ভৌমিক ইউনিভার্সিটির সকলের উপর একটু বেশীই কড়া।একমাত্র হিমাদ্রি বাদে।যেখানে কোন স্টুডেন্ট তো দূরে থাক প্রফেসরের মেয়ে কলিগরা পর্যন্ত তার আশেপাশে যেতে পারেনা সেখানে হিমাদ্রি বেশ স্বাচ্ছন্দ্যেভাবে ভৌমিকের সাথে চলাফেরা করে।আপাত দৃষ্টিতে এটা সকলের কাছে বেশ দৃষ্টিকটূ।
গাড়ী থেকে নেমে সামনে ইউনিভার্সিটির হাঁটা ধরলো হিমাদ্রি।তার কাছে বড় অবাক লাগে এখানকার পরিবেশ দেখে।আমেরিকা আর বাংলাদেশের মধ্যে কতোটা পার্থক্য।পিছনদিক থেকে হঠাৎ ভোমিকের ডাকে ভাবনাজগত থেকে বাস্তবে ফিরে আসলো।
“মিস. হিমাদ্রি! উইল ইউ প্লিজ ওয়েট ফর মি?”
“ইয়েস প্রফেসর?”
“ফলো মি আই হ্যাভ এ সারপ্রাইজ ফর ইউ।”
“সিওর প্রফেসর।”
ভৌমিকের পিছন পিছন হিমাদ্রি চলতে লাগলো।খুব বেশী সম্ভব ভৌমিক ওকে বোটানিক্যাল ল্যাবের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।আমি ভৌমিক হুট করে ওকে বোটানিক্যাল ল্যাবে কেনো নিয়ে যাচ্ছে তা বুঝতে পারছেনা সে।কোন প্রশ্নও করতে পারছেনা।কারণ ভোমিক বেশী প্রশ্ন করাটা পছন্দ করেনা।
বোটানি ল্যাবের সামনে গিয়ে দাড়ালো ভৌমিক।পিছনে হিমাদ্রিও এসে দাঁড়ালো।আর ইউ রেডী ফর ইট মিস.হিমাদ্রি।
“ফর হোয়াট প্রফেসর?”
“হুশ।ডোন্ট আস্ক এনিথিং।জাস্ট ফলো মি।”
বোটানিক্যাল ল্যাবটা অনেক উচ্চমানসস্মত একটা ল্যাব।ল্যাবের একটা প্যাসেজ পার হয়ে ভোমিক বড় একটা কাচের একুরিয়ামের সামনে দাঁড়ালো।একুরিয়ামটা কালো কাপড় দিয়ে ঢাকা।আশেপাশে আরো ল্যাবে কর্মরত মানুষগুলো ওদের দিকে তাঁকিয়ে আছে।ভৌমিক পিছন দিকে একবার ঘুরে ঠোঁটটা একবার প্রসারিত করলো।হঠাৎ করেই একুরিয়ামের উপর থেকে টান দিয়ে কাপড়টা ফেলে দিলো।ভেতরের জিনিসটা দেখে বিস্ময় আর শকে হিমাদ্রির মুখটা হা হয়ে গেলো।একটু সামনে এগিয়ে গিয়ে একুরিয়ামের উপরে হাত রাখলো সে।
“এটা তো Rafflesia Arnoldi “.
” ইয়েস ইট ইজ।Rafflesia Arnoldi.পৃথিবীর সব থেকে বৃহৎ ফুল।”
“আই এম জাস্ট স্পিচলেস। ইট ইজ সো বিউটিফুল। ”
“ইয়েস ইট ইস।”
“এটা কোথায় পেলেন?”
“মূলত এই ফুলটা এসিয়া এবং ফিলিপাইনের রেন ফরেস্টে জন্মায়।এবং তা বছরে একবার, শুধুমাত্র পাঁচদিনের জন্য।”
“এটা তো রেয়ার এবং খুব সহজে খুঁজে পাওয়া যায়না।এটার ওজন কতো?”
“প্রায় ১২ কেজী এবং গড় দৈর্ঘ প্রায় একশ সেন্টিমিটার।”
“আমি কী এটা ধরতে পারি?”
“নো।বিকজ ইট স্মেল লাইক রোটিং ফ্লেস।”
“আই নো তার জন্য এই ফুলকে মিট ফ্লাওয়ার অথবা করপস ফ্লাওয়ার বলা হয়।”
“ইয়েস।এটা দেখে কী খুশী আপনি মিস.হিমাদ্রি?”
“অনেক।বাট আই ওয়ান্ট টু টাচ ইট।”
“ইউ কান্ট বিকজ ইট স্মেল ব্যাড। এন্ড ইউ অলয়েজ স্মেল গুড।”
কথাটা ভৌমিক একটু আস্তে বললো।হিমাদ্রি হয়তো শুনেনি।বরং উৎসাহের সাথে ফুলটা দেখতে ব্যাস্ত সে।ভোমিকের নিশ্বাস যেনো আঁটকে যাচ্ছে।দুটো মানুষের হাঁসি এতোটা সেম কীভাবে হয়?যে হাসিটা তাকে পাঁচ বছর আগে ছেড়ে চলে গিয়েছিলো তা আবার হিমাদ্রির মাধ্যমে ফিরে এসেছে।তার জন্যই বারবার হিমাদ্রির খুশীর জন্য সে অনেক কিছু করে।হিমাদ্রির মুখের হাসিটা দেখার লোভ কোনমতেই সে সামলাতে পারেনা।
,
,
,
কাঁচের টুংটাং ধ্বনিতে মুখরিত পরিবেশ।অথচ সেখানে দুজন ব্যাক্তি বসে আছে।তারা দুজনেই নিশ্চুপভাবে খাচ্ছে।লাল সাদা মিশেলে একটা শাড়ী পরেছে নূপুর।সাথে ফুল স্লিভ ব্লাউজ।স্ট্রেট করা চুলগুলো খুলে সামনে এলিয়ে দিয়েছে।পিছনে একটা গোলাপ ফুল চুলে গুঁজে দিয়েছে।অনেক ফর্সা নূপুর।দেখতে এখন কোন প্রতিমার মতো লাগছে।
“এতো সাজার কারণটা কী জানতে পারি মিস.?
” মিস.নূপুর এহসান।”
“হুম।”
“দ্যা মোস্ট এলিজিবল ব্যাচেলরের সাথে ডিনারে এসেছি তাহলে রেডী তো সেরকমভাবেই হয়ে আসা উচিত।”
“আমি ওতোটা স্পেশাল নই যতোটা আপনি মিন করেছেন।”
“আপনার একথাটা শুনলে যে কেও হাঁসবে স্যার।”
“আপনার ওই এলিজিবল কথাটাও হাসির।বিকজ আই হ্যাভ এ ডটার।”
“বাট আপনার মেয়ের তো মা নেই।”
“ইউ আর রং মিস.এহসান।আমার হিম হলো মাদিহার মা।”
“কেমন মা যে নিজের মেয়ের সাথেই থাকেনা।”
মৃদ থেমে গেলো।তার মুখের রেখাগুলো শক্ত আকার ধারণ করছে।
“মিস.এহসান ইউ ডোন্ট নো এনিথিং এবাউট হিম।”
“সরি স্যার।”
“নেক্সট টাইম আমার হিমের সম্পর্কে কিছু বলবেন না।”
“এগেইন সরি স্যার।”
মৃদুল আর কিছু বললো না।চুপচাপ খাওয়ায় মন দিলো।কিছুক্ষন পরে নিরবতা ভেঙে নূপুর মৃদুলের দিকে একটা প্রশ্ন ছুড়লো।
“নিজের বিধবা ভাই বউকে এতো ভালোবাসেন কেনো?”
“হিম আমার ভাই বউ হওয়ার আগে আমার বন্ধু।ও যখন কোলে ছিলো তখন থেকে আমার সাথে থেকেছে।আমার যখন পাঁচ বছর তখন ওরা এলাকায় আসে।”
“তারমানে ছোটবেলা থেকে প্রেম ছিলো আপনাদের? ”
“নাহ।”
“তাহলে?”
“হিমাদ্রি ছোট বেলায় দেখতে অনেক সুন্দর ছিলো।একদম ছোট একটা পুতুলের মতো লাগতো।ছোট ছোট হাত দিয়ে যখন আমাকে স্পর্শ করতো তখন মনে হতো ঠিক তুলতুলে একটা বিড়ালছানা।”
“আপনার কথার ধরণ দেখে মনে হয় আপনি এখনো তা ফিল করতে পারছেন।”
“কাহিনি শুনবেন আমার আর হিমের?”
“অবশ্যই। ইট উইল বি মাই প্লেজার।”
“হিম হচ্ছে সে নারী যে একটা পুরুষের জীবনে আসলে অবশ্যই তার জন্য মুঠো ভর্তি সৌভাগ্য নিয়ে আসবে।”
চলবে,,
বিঃদ্রঃকালকে থেকে প্রি টেস্ট।তাই ছোট হলো।