মরীচিকার সন্ধানে
পর্ব – ১১
– ইউ নিড টু হেল্প মি। প্লিজ প্লিজ প্লিজ। টক টু মাই মাম প্লিজ।
নাজমা ওর মোবাইলে মেসেজটার দিকে তাকিয়ে আছে। দুইদিন আগে হোয়াটস্যাপে এই মেসেজটা পাঠিয়েছে মায়মুনা। এরপর আর কোনো উচ্চবাচ্য করেনি মেয়েটা। উচ্চবাচ্য না করাই ভালো। নাজমার মাথায় আসছেনা যে মায়মুনা আসলে ওর কাছ থেকে কী হেল্প চাচ্ছে। জিজ্ঞেস করে দেখারও খুব একটা প্রয়োজন বোধ করেনি নাজমা। মায়মুনার খুব ভালোমতোই জানা আছে যে নাজমার ওকে সাহায্য করার কোনো ক্ষমতাই নাই। নাজমা নিজে সেই কবে থেকে সিরিয়ায় যাবার জন্য রেডি হয়ে আছে, সেটাও ও করে উঠতে পারছেনা। নাজমার থেকে তো মায়মুনার ক্ষমতা অনেক বেশি। মায়মুনা ব্রিটিশ মেয়ে, অল্পবয়সী একটা মেয়ে, ওকে নিয়ে সমস্ত যুক্তরাজ্য তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে, ওর কারণে আই সিস বাহিনীর ব্যাপক প্রচার হচ্ছে। ওর ক্ষমতাই তো ক্ষমতা। আজ যদি নাজমা সেদেশে গিয়ে চিরতরের জন্য হারিয়ে যায় কারো হয়তোবা ব্যাপারটা নজরেও আসবেনা। নিজের অজান্তেই নাজমার বুক থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে গেলো।
নাজমা ফোনটা এখনো হাতে নিয়ে বসে আছে। ওদের একটা সিস্টারস হোয়াটস্যাপ গ্রুপ আছে। সেখানে কিন্তু মায়মুনা ঠিকঠাকই আছে। কোনো ধানাইপানাই করছেনা। হোয়াটস্যাপ গ্রুপে অবশ্য ওদের এখন খুবই লিমিটেড অ্যাকসেস। মায়মুনার সাথে জার্মানি আর সুইডেনের আরো দুইজন মেয়ে একসাথে সেখানে গিয়েছে। জার্মানির মেয়েটার নাম লীনা আর সুইডেনের মেয়েটার নাম আসমা। লীনার বয়স ষোলো আর আসমা সতেরো। ওরা সবাই যে যার দেশ থেকে ইস্তানবুলে নামে। তারপর সেখান থেকে একসাথেই ওদেরকে সিরিয়ার রাকাতে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনজনই এখনো রাকাতেই আছে তবে ওরা একসাথে নাই। প্রথমদিকে প্রতিদিন একটা নির্দিষ্ট সময়ে কিছুক্ষনের জন্য ওরা ওদের মোবাইল ফোনে হোয়াটস্যাপ ব্যবহার করতে পারতো। এখন মেয়েগুলো ব্যস্ত হয়ে যাবার কারণে সেটাও পারছেনা। ওখানে পৌঁছনোর পর আসমা শুরু থেকেই চুপচাপ ছিল কিন্তু মায়মুনা আর লীনার উত্তেজনার কোনো শেষ ছিলোনা। রাকার জীবন, ওদের নতুন জীবন, খিলাফত সব মিলিয়ে ওদের মনে হয়েছিল ওরা যেন স্বর্গেই পৌঁছে গেছে। ওদের আনন্দ উত্তেজনা দেখে নাজমার একটু হিংসাই হয়েছিল। কিন্তু নাজমা নিজেকে বুঝিয়েছে, আল্লাহ যখন ওর সময় নির্ধারণ করবেন তখনই ও যেতে পারবে। তার এক মুহূর্ত আগেও না এক মুহূর্ত পরও না। তাছাড়া ওদের সেই সিস্টারস হোয়াটস্যাপ গ্ৰুপে আরো কয়েকজন বিভিন্ন দেশের সিস্টার আছে যারা নাজমার মতো ওদের ডাকের অপেক্ষায় আছে। নাজমা তো আর একা না।
হোয়াটস্যাপ গ্ৰুপের এই কয়েকজনের পরিচয় কিন্তু খুব বেশিদিনের না। এই কয়েকমাসের হবে। কিন্তু এই কয়মাসে এই কয়েকজন মেয়ে যেন নিজেদের পরিবারের থেকেও আপন হয়ে গেছে। বিভিন্নদেশের মেয়েরা সব, একেকজনের ভাষা একেক, কোনোরকমে ভাঙাচোরা ইংরেজিতে ওরা কথাবার্তা চালায়। কারো সাথে কারো কোনো মিল নাই অথচ সবার সাথে সবার কী ভীষণ মিল। আসলে দেশ, ভাষা, বর্ণ, পরিবার, অর্থ, বিত্ত এসব কোনো ব্যাপার না। দিন শেষে ওরা সব আল্লাহর বান্দা, ওদের সবার কাজ একটাই, আল্লাহ কে সন্তুষ্ট রাখা। ওদের সবার লক্ষ্য একটাই – জান্নাত লাভ করা। আর আল্লাহকে সন্তুষ্ট রাখা তো কঠিন কোনো ব্যাপার না। সবাইকে শুধু আল্লাহর বিধানমতো জীবনযাপন করতে হবে। আল্লাহ সবকিছু সুন্দর এবং সুশৃঙ্খলভাবে, ন্যায্য ভাবে চালনার নিয়ম বলে দিয়েছেন। সেই নিয়মমতো চলতে পারলে জীবন অনেক সুন্দর হবে, পৃথিবীতে অন্যায় অবিচার কমে আসবে। আর সেই পথে চলতে হলে সারা বিশ্বে খিলাফত প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সেই খিলাফত সবার জন্যই মঙ্গল বয়ে আনবে। কিন্তু অমুসলিমদের একটা দল তো সবার মঙ্গল চায়না। তারা চারিদিক শোষণ করে নিজেরা ক্ষমতা হাতিয়ে নিয়ে সারা পৃথিবীকে নিয়ন্ত্রণ করছে। তারা তো কিছুতেই সেটা হতে দিবেনা। সেকারণেই শুরুতে ছোটোখাটো সেই ইসলামিক রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে তারপর ধীরে ধীরে সেই রাজ্য সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিতে হবে।
হোয়াটস্যাপ গ্ৰুপের সব মেয়েরা যে খিলাফত নিয়ে চিন্তিত ছিল তা অবশ্য ঠিক না। অনেকে শুধু নিজেদের জন্য একটা সুন্দর এবং সঠিক জীবন চেয়েছিলো। যেই জীবন সম্মানের জীবন, শান্তির জীবন, প্রেম-ভালোবাসার জীবন, একজন আদর্শ মায়ের জীবন, একজন স্ত্রীর জীবন। যেই জীবন আল্লাহর বিধানের জীবন। তবে সবাই জানে যে এই জীবন লাভ করতে হলে কষ্ট করতে হবে। শুরুটা সহজ হবেনা। অনেককিছু স্যাক্রিফাইস করতে হবে, কিছু তো রক্তপাত ঘটবেই। আল্লাহর পথে রক্তপাত দোষের কিছু না। বৃহত্তর স্বার্থে এসব করতেই হবে। তাছাড়া আই সিস বাহিনী তো কোনো রক্তপাতই ঘটাচ্ছে না। ওয়েস্টের অমুসলিমরা তো একেবারে প্রকাশ্যে সারা পৃথিবীতে মুসলিম মেরে ছারখার করে দিচ্ছে। তার বিরুদ্ধে কাউকে না কাউকে তো রুখে দাঁড়াতে হবে। তাই না? গত কয়েকমাস ধরে গ্ৰুপের মেয়েগুলো পৃথিবীব্যাপী এই অন্যায় অবিচার দেখে দেখে ক্লান্ত। আর ওদের কাছে সবচেয়ে অবাক করা বিষয় যেটা মনে হয়েছে সেটা হলো ওদের পরিবারের সবাই মুসলিম হয়েও চুপচাপ সব মেনে নিচ্ছে। এসব ব্যাপারে কোনো দৃকপাত তাদের নাই। নিজেদের আনন্দ, ফুর্তি, দুনিয়াদারির মোহে তারা ব্যস্ত। ওদের সাথে এইসব নিয়ে কথা বলতে গেলে তারা বরং রেগে যায়, বিরক্ত হয়। ওদের গ্ৰুপের বড় সিস্টার একারনে পরিবার বা বন্ধুবান্ধবের সাথে এইসব ব্যাপারে কথা বলতে একেবারে মানা করে দিয়েছে। ভীষণ কঠোরভাবে মানা করে দিয়েছে। সিস্টারের ভাষায় আল্লাহ এই মানুষগুলোকে অন্ধ করে রেখেছে, বধির করে দিয়েছে। এদেরকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে কিছু দেখালেও এরা দেখতে পাবেনা, কানের কাছে কিছু বললেও এরা শুনতে পাবেনা। এদের সাথে বাক-বিতন্ডায় না যাওয়াই উত্তম। গ্ৰুপের মেয়েগুলোও এই ব্যাপারটা হাড়ে হাড়ে টের পায়। ওরা আর কারো সাথে কথা বলেনা। আর কারো সাথে কথা বলার ওদের প্রয়োজন নাই। ওদের জন্য ওরা নিজেরাই যথেষ্ট।
তবে ভবিষ্যতের কথা না হয় বাদ দেওয়া যাক। শুধুমাত্র এই গ্ৰুপের মধ্যে দিয়ে মেয়েগুলো যতটুকু পেয়েছে তাই বা কম কী। এই গ্ৰুপ ওদেরকে স্বস্তি দিয়েছে, শান্তি দিয়েছে, জীবনের পারপাস খুঁজে পেতে সাহায্য করেছে। এই গ্ৰুপের সব মেয়েগুলো তাই সবার প্রতি ভীষণ কৃতজ্ঞ, ভীষণ অনুগত।
একেকজন মেয়ে ভিন্ন ভিন্ন মানুষদের দ্বারা এই গ্ৰুপে যুক্ত হয়েছে। নাজমাকে যেমন অ্যাড করেছে তৌফিক আর মায়মুনাকে অ্যাড করেছে নাজমা। মায়মুনা সেসময় হাতে মেন্দি লাগাতে লাগাতে ওর জীবনের কথা নাজমার সাথে শেয়ার করতো। নাজমার ব্যাপারটা একটু অবাকই লেগেছিলো। পৃথিবীতে এত মানুষ থাকতে মায়মুনার মনে হয়েছে নাজমাকে ওর কষ্টের কথা বলা যায়। এটা কি আল্লাহর তরফ থেকে আসেনি? কেননা নাজমা ঠিকই জানতো কিসে মায়মুনার স্বস্তি হবে, শান্তি হবে আর আল্লাহ মায়মুনাকে সেই পথ দেখানোর জন্য নাজমার কাছে নিয়ে এসেছিলো। মায়মুনার ছোটবেলার বান্ধবী, ওর সুখ দুঃখের সাথী সানার মৃত্যুর পর ওর জীবন একেবারে থমকে গিয়েছিলো। সানা মারা যাওয়ার পর ওর সাদা বান্ধবী অলিভিয়া ওর বয়ফ্রেন্ডকে আঁকড়ে ধরে। মায়মুনার তখন আঁকড়ে ধরার কিছু ছিলোনা। রাতারাতি ভীষণ রকমের একাকিত্ব ওকে পেয়ে বসেছিল। একা একা স্কুলের সময়গুলো ওর যেন কাটতো না। এতদিন পর হঠাৎ করে নতুন বন্ধুও জোগাড় করবে কেমন করে ও? বাসায় ফিরেও তো মায়মুনা আরো একা হয়ে যেত। সানা যতদিন ছিল ততদিন স্কুলের বাইরেও তো ওরা কখনো ইনস্টাগ্রামে, কখনো অন-লাইনে গেম খেলে বা কখনো ফোনে কথা বলে ঘন্টার পর ঘন্টা কাটিয়ে দিতো। হঠাৎ করে এই বন্ধু হারানোর কষ্ট আর তার সাথে ভীষণ একাকিত্ব মায়মুনার জীবনটা দুর্বিষহ করে তুলেছিল। এই গ্রুপে এসে মায়মুনা যেন নতুন করে বাঁচতে শিখেছিল। আর শুধু মায়মুনা কেন, নাজমাও কি তা শিখেনি? তা নাহলে ও কিভাবে ওর দুই ছেলের কথা ভুলে গিয়ে নতুন জীবনে মজে থাকতে পারে? এই জীবনে ও কী পেয়েছে? তৌফিকের একটু সান্নিধ্য? তাও তো মাত্র কয়দিনের জন্য। এই গ্ৰুপটার মধ্যে দিয়েই তো ও নতুন করে বেঁচে থাকার অর্থ খুঁজে পেয়েছে।
মায়মুনা তো ওখানে গিয়ে ভালোই ছিল। কিন্তু হঠাৎ কী হলো? ষোলো বছরের লীনা তো এখনো সুযোগ পেলেই ওর নতুন জীবনের কথা ওদেরকে জানাচ্ছে। সবাইকে খুব তাড়াতাড়ি যোগদান করার জন্য তাগিদ দিচ্ছে। আর আসমা তো সবসময়ই একটু চুপচাপ। ওর মনের কথা বুঝা খুব একটা সহজ না। কিন্তু তাও মনে হচ্ছে ও নতুন জীবন পেয়ে কৃতজ্ঞ। তাহলে মায়মুনার সমস্যা কোথায়? তাহলে কি ওর ঈমান দুর্বল? শুধুই ঝোকের বশে ওখানে চলে গিয়েছে কিন্তু ও আসলে আগে যা ছিল তাই আছে। আল্লাহর পথে সামান্য কষ্ট করার ক্ষমতা ওর নাই।
নাজমা সব মেয়েগুলোর মধ্যে মায়মুনাকে সবচেয়ে বেশি স্নেহ করে। একমাত্র মায়মুনাকেই তো ও সামনাসামনি দেখেছে। ঘন্টার পর ঘন্টা ওরা মেন্দির স্টলে বসে গল্প করেছে। মায়মুনা চলে যাবার পর থেকে নাজমার খুব একা বোধ হয়। ও মেয়েটাকে খুব মিস করে। গতদুইদিন মায়মুনা কোনো মেসেজ পাঠায়নি। এখন নাজমার একটু অস্থিরই লাগছে। ঠিক এই সময়ের দিকেই ও মেসেজ করতো। কী মনে করে জানি নাজমা মায়মুনাকে লিখে পাঠালো,
– তুমি কি আমার সাথে খুব কুইকলি একটু কথা বলতে পারবে? পারলে জানায়ও কখন বলতে পারবে। আমি তখন কল করবো।
মায়মুনা মনেহয় ফোন হাতে নিয়েই বসে ছিল। সাথে সাথেই উত্তর।
– এখন পারবো কিন্তু খুব অল্পসময়ের জন্য।
নাজমা আর সময় নষ্ট না করে হোয়াটস্যাপে কল করলো। সাথে সাথেই মায়মুনা ফোন ধরে ফেললো,
নাজমাই প্রথমে কথা বললো,
– আস্সালামুআলাইকুম। কী হেল্প লাগবে বোলো?
– ওয়ালাইকুমআসসালাম। আমাকে এখান থেকে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে তোমাকে।
মায়মুনা ফিশ ফিশ করে খুব তাড়াতাড়ি কথাটা বলে উঠলো। নাজমা অবাক হয়ে বললো,
– কেন আর কীভাবে?
– সেই সৌদি লোকটা আমাকে বিয়ে করতে চাচ্ছে। কী এক নিয়ম বের করেছে। বলছে যে চার মাস দশ দিন অপেক্ষা করা লাগবেনা। এখুনি বিয়ে করা যাবে। ও তো আল্লাহর নিয়ম উপেক্ষা করতে চাচ্ছে। ও তো মুসলিমই না। ওকে আমি বিয়ে করবো কেন?
– তুমি না বলে দিলেই তো হয়ে গেলো।
– সেটাতো হচ্ছেনা। ওই লোকের অনেক পাওয়ার। এখানে অনেক পলিটিক্স। তবে কয়েকজন ব্যাপারটায় অমত করছে দেখে আপাতত একটু দেরি হচ্ছে। তা না হলে গত সপ্তাহেই ও আমাকে বিয়ে করে ফেলতো। আর ব্রাদার তৌফিকও এই ব্যাপারে না করছেনা। ও নাকি ব্রাদার তৌফিকের ফ্রেন্ড।
– তুমি এখন কোথায়?
– একটা গেস্ট হাউজে আছি আপাতত। আমি টয়লেটের জানালা দিয়ে বের হয়ে ছাদের একটা কোনায় এসে তোমার সাথে কথা বলছি। ধরা পড়লে আমাকে ওরা মেরে ফেলবে। এই ফোন আমার কাছে থাকার কথা না।
– তো এই ফোন কার?
– এটা ইব্রাহিমের। যাইহোক, এগুলো তোমাকে মেসেজ করে পরে বলবো। শুধু এই নাম্বারটার কথা কাউকে বলবেনা। আমি সিস্টারস গ্ৰুপে অন্য আরেক ফোন থেকে তোমাদের কথা বলি। সেই ফোনটা মাঝে মাঝে আমাদের ব্যবহার করতে দেওয়া হয়। তাও আবার সুপারভাইসড অবস্থায়। এক সিস্টার পাশে বসে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকে। আপাতত তুমি ব্রাদার তৌফিককে বলে বিয়েটা বাতিল করার চেষ্টা করো। এখানে অনেক অস্ট্রেলিয়ান ব্রাদার আর সিস্টার এসেছে। ওরা সারা রাকায় ছড়ানো ছিটানো। কিন্তু ওদের নেটওয়ার্ক খুবই স্ট্রং। ওরা সবাই সবাইকে সাহায্য করে। আর আমরা ইউকের কয়েকজন কেমন ছন্নছাড়া হয়ে আছি। ব্রাদার তৌফিক আমার জন্য কিছু করছেনা।
নাজমা ওর কথাগুলো কিছুই বুঝতে পারছেনা। ওর একেবারে মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে সব। ও শুধু বললো,
– আচ্ছা, আমি তৌফিকের সাথে কথা বলবো। আর কী করতে হবে?
– আমি তোমাকে মেসেজ করে জানাবো। এই ফোন আমি বেশিরভাগ সময় বন্ধ করে রাখি। এই নাম্বারটা ওরা মনিটর করেনা। ওরা ভেবেছে যে ইব্রাহিমের সাথে ওর ফোনটা নিশ্চয়ই ধ্বংস হয়ে গেছে। তাই আমি খুব সাবধানে অল্প সময়ের জন্য ফোনটা ব্যবহার করি। তুমি বেশি মেসেজ করোনা। শুধু এই সময়টায় ফোনটা সাথে রেখো। আমি তোমাকে ফোন করে বা মেসেজ করে সব জানাবো। রাখছি এখন ।
এই বলে মায়মুনা ঠাস করে ফোনটা রেখে দেয়।
নাজমা এখনো মায়মুনার সমস্যা বুঝতে পারছেনা। ঠিক আছে সেই লোককে ও বিয়ে না করতে চাইতেই পারে। কিন্তু তাই বলে সব ছেড়ে ছুড়ে চলে আসতে হবে?
নাজমা তৌফিককে একটা মেসেজ পাঠাতে যাচ্ছিলো। আর তখনই মায়মুনার মেসেজ।
“আমি যেই গেস্টহাউজে আছি সেটার নাম “উম্মুল মুমিনীন”। আমার এখান থেকে বের হওয়া নিষেধ। মাহরাম ছাড়া মেয়েরা কোথাও একা একা যেতে পারেনা। রাকা শহরে এখনো অনেক লোকাল মানুষ আছে যারা অগত্যা এদের নিয়মকানুন মেনে নিয়েছে। এদের আই সিসের উপর অনেক রাগ আর ক্ষোভ। ওরা অনেকসময় অনেক ফাইটারদের পালিয়ে যেতে সাহায্য করে। কিন্তু এমনি এমনি করেনা। ধরা পড়লে ওদেরকে মেরে ফেলা হয়। কিন্তু যারা অনেক গরিব তাদেরকে টাকা দিতে পারলে অনেক সময় ওরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাহায্য করতে রাজি হয়। ওদের এসব কাজের জন্য বিশাল নেটওয়ার্ক আছে। আমার তো কোনো টাকা পয়সা নাই। তুমি দেখোনা আমার মা তোমাকে টাকা দিলে সেটা আমাকে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে পারো কিনা। তুমি মেসেজটা দেখে নিলেই এক মিনিটের মধ্যে আমি এই মেসেজ ডিলিট করে দিবো। তোমার আমাকে হেল্প করতে হবে। এখানকার সব ঘটনা জানতে পারলে তুমি অবশ্যই আমাকে হেল্প করবে। যেমন আগে করেছো। ব্রাদার তৌফিককে এসব বলোনা। শুধু কায়দা করে বিয়েটা ভাঙার ব্যবস্থা করো। লাভ ইউ, মিস ইউ সিস্টার। তুমি ছাড়া আমার আর কেউ নাই।”
নাজমা এখনো সব বুঝে উঠতে পারছেনা। কিন্তু ওর কৌতূহল যেন বেড়েই চলছে। সেই স্বর্গ রাজ্যে, নিষিদ্ধ রাজ্যে কী ঘটে সবকিছু জানার জন্য ও যেন উন্মুখ হয়ে আছে। নাজমা দেরি না করে তৌফিককে একটা মেসেজ করে দিলো,
– প্লিজ কল মি হোয়েন ইউ আর ফ্রি।
(চলবে)
©আমিনা তাবাস্সুম