মরীচিকার সন্ধানে পর্ব – ১৬

মরীচিকার সন্ধানে
পর্ব – ১৬

মায়মুনা বালতি থেকে ঠান্ডা পানি মগে ভরে নিয়ে মাথায় ঢেলে যাচ্ছে। কিছুদিন হলো ওদের বিল্ডিংয়ে প্রায়ই পানি থাকছেনা। বম্বিং আর গোলাগুলির কারণে প্রায় দিনই এদিক ওদিক পানির পাইপ ভেঙে যাচ্ছে। সেগুলো আবার তাড়াতাড়ি কোনোরকমে জোড়াতালি দিয়ে ঠিক করাও হচ্ছে। তবে সব পাইপ তো ঠিক করা সম্ভব না। সেকারণে বিভিন্ন জায়গা থেকেও পানির ব্যবস্থা করার দরকার পড়ছে। তাছাড়া পানিকেও যুদ্ধের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। যেসব এলাকা একেবারে পুরোপুরি আইসিসদের দখলে সেখানে অনেকসময় ইচ্ছাকৃতভাবে পানি সরবারহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। তার উপর আবার খরা, নদী শুকিয়ে পানির স্তর নেমে যাওয়া, এধরণের সমস্যা প্রতিবছরের মতো তো লেগেই আছে। সেকারণে গেস্ট হাউজের মেয়েদের উপর বেশি পানি খরচ না করার কড়া নির্দেশ আছে। মায়মুনা সাধারণত এই ধরণের নির্দেশ ভালোমত মেনে চলে। অনেকেই এখানে আছে যারা এসবের কোনো তোয়াক্কা করেনা। স্বার্থপরের মতো পুরো বালতি পানি দিয়ে গোসল সেরে ফেলে। তখন অন্যদের পানি পেতে অসুবিধা হয়। মায়মুনা এইসব ব্যাপারে খুবই সচেতন। কিন্তু আজকে ওর ভীষণ অস্থির লাগছে। অন্যদের কথা চিন্তা না করেই একের পর এক মগ ঠান্ডা পানি মাথায় ঢেলে যাচ্ছে। এতে করে ওর যেন শরীর জুড়াচ্ছে। আজকে সারাদিন অনেক ধকল গেছে ওর উপর দিয়ে।

গোসল সেরে ভেজা গায়েই কালো আবায়াটা পরে নিলো ও। গা মুছে সময় নষ্ট করার ইচ্ছা হলোনা মায়মুনার। কিসের সময় নষ্ট তা অবশ্য ও জানেনা। ওর হাতে তো সময়ের কোনো অভাব নাই। কিন্তু মায়মুনার মনে হচ্ছে ওর এখন ভীষণ তাড়া। মাথাটা কোনোরকমে মুছে বাথরুম থেকে বেরিয়ে এলো মায়মুনা। ওর এখনো বুক ঢিপ ঢিপ করছে। ব্যাপারটা আসলেই কেউ টের পেয়ে যায়নি তো?

মায়মুনা ঘরে এসে জায়নামাজ পেতে একটা কুরআন হাতে নিয়ে তার উপর বসে পড়লো। অদূরেই আরো দুইজন মেয়ে অবেলায় ঘুম দিয়েছে। আরেকজন ঘরের কোনায় বসে একটা বড় কাপড় কেটে সেলাই করে হিজাব বানাচ্ছে। এখানে সবার অবিশ্রান্ত অবসর। সবাই অপেক্ষায় আছে তাদের পরের গন্তব্যস্থলের জন্য। কোনো এক সৈনিকের স্ত্রী হবার জন্য। সবার অবশ্য সেই সৌভাগ্য হয়না। তারা মোটামুটি পাকাপোক্তভাবে গেস্টহাউজের তদারকি এবং রান্নার কাজে নিয়োজিত হয়। তবে এখানে সবাই জানে যে এই নশ্বর পৃথিবীতে পাকাপোক্ত বলে কিছু নেই। সবাই এখানে আজ আছে তো কাল নেই। এই উপলব্ধি নিয়েই এখানে সবার জীবন কেটে যাচ্ছে। সৈনিকের স্ত্রী ছাড়াও যাদের ভাগ্য কিঞ্চিৎ ভালো তাদের বাইরে কোনো হাসপাতালে, মসজিদে বা অন্য কোথাও কাজে যোগদান করার সুযোগ হয়। আর কেউ কেউ আছে যারা এখানে এসে মানসিক চাপ নিতে পারেনি। মানসিক বিকারগ্রস্ত হয়ে দিন কাটাচ্ছে। তারা কারও স্ত্রী হবারও অযোগ্য আবার কোনো কাজ করারও অযোগ্য। তাদের খুব একটা কেউ ঘাটায়না। তারা আপনমনে সারাদিন পড়ে থাকে। ওদের দেখে মায়মুনার কেন যেন হিংসা হয়। কী শান্তির জীবন ওদের। কোনো দুশ্চিন্তা নেই, ভবিষ্যতের জন্য কোনো পরিকল্পনা নেই, আশেপাশের কোনো ব্যাপারে কোনো দৃকপাত নেই।

মায়মুনা জায়নামাজে বসে মনোযোগ দিয়ে ঘরের মেয়েগুলোকে দেখে নিলো। নাহ, এখানে কেউ কিছু বুঝতে পারেনি। কিন্তু রিসেপশনের সিস্টার মাইশা কিছু টের পেয়ে গেলো নাতো? মায়মুনা জানে যে গেস্টহাউজের তত্ত্বাবধায়নে যেই সিস্টাররা আছে তারা ভীষণ সেয়ানা। কিছু টের পেয়ে গেলেও সাথে সাথে কিছু বলবেনা। একেবারে ঠিক সময়মতো ধরে ফেলবে। মায়মুনার অস্থিরতাটা আরো বেড়েই চলছে। ও কুরআনটা জায়নামাজের উপর রেখে উঠে গিয়ে ঘরের একপাশে রাখা ওর কাপড়ের ব্যাগটা থেকে আরেকটা ওড়না বের করে নিলো। মাথার ওড়নাটা খুলে ব্যাগে রেখে নতুন বের করা ওড়নাটা আবার মাথায় পেঁচিয়ে নিলো। এই ওড়না বদলকরাটা একটা অজুহাত মাত্র। মায়নুমা আসলে ব্যাগের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে চেক করে নিলো যে ওর পাসপোর্টটা ঠিক আছে নাকি। নাহ, পাসপোর্ট ঠিক জায়গামতোই আছে। মায়মুনা আবার জায়নামাজে এসে বসে কুরআনটা তুলে নিলো।

পাসপোর্টটা হাতে পাবার আগ পর্যন্ত মায়মুনা বেশ আত্মবিশ্বাসের সাথে মুস্তাফার পরিকল্পনাটা মনে মনে প্রতিনিয়ত ঝালাই করে নিচ্ছিলো। যতই চিন্তা করছিলো ততই ওর আত্মবিশ্বাস যেন বেড়ে যাচ্ছিলো। ওর মনে হয়েছে যে পুরো ব্যাপারটাই বেশ সহজ। ওকে যেভাবে একেক জায়গা থেকে একেকজন সাহায্য সহযোগিতা করে সিরিয়ায় নিয়ে এসেছে ঠিক সেইভাবে ওকে আবার ফিরিয়ে নিয়ে যাবে। কিন্তু এই পাসপোর্ট বের করতে যে এত ঝামেলা হবে ও বুঝতেই পারেনি। একেবারে পাক্কা পাঁচদিন লেগে গেলো শুধু পাসপোর্ট বের করার সুযোগের অপেক্ষায়। আজকেও সারাটাদিন অপেক্ষার পর মায়মুনা মোটামুটি হাল ছেড়ে দিচ্ছিলো। কিন্তু দুপুরের পর অপ্রত্যাশিতভাবে সুযোগটা চলে আসলো। মায়মুনা সেইসময় রিসেপশনে ডাস্টিংয়ের কাজ করছিলো। হঠাৎ করেই একটা নতুন মেয়ে গেস্টহাউজে হাজির হয়। ওকে এক লোক একটা গাড়ি করে নামিয়ে দিয়ে রিসেপশনের সিস্টার মাইশার কাছে কিছু কাগজপত্র দিয়ে চলে যায়। সেই মেয়ে আবার ইংরেজি বা আরবি কিছুই বলতে পারেনা। সে নাকি পাকিস্তান থেকে এসেছে। কিছুক্ষন তার সাথে ব্যর্থ কথোপকথন চালানোর পর সিস্টার মাইশা ওকে নিয়ে আরেকজনের সাথে কথা বলার জন্য ভিতরে চলে যায়। সেইসময় মায়মুনাকে বলে যায় যাতে ও রিসেপশনের ডেস্কটা দেখে রাখে। সেই সুযোগে মায়মুনা খুব সহজেই ডেস্কের ড্রয়ার থেকে চাবিটা বের করে ওর আবায়ার ভিতরে একটা ছোট পোটলার মতো ব্যাগে ভরে ফেলে। সেই সিস্টার মেয়েটাকে কার কাছে দিয়ে পাঁচ মিনিটের মধ্যেই আবার রিসেপশনে ফিরে আসে।

রিসেপশনের ডাস্টিং শেষে মায়মুনা সেই আলমারির রুমটা গোছানোর অজুহাতে সেই রুমে গিয়ে আলমারি থেকে পাসপোর্ট বের করে নেয়। এই কঠিন ব্যাপারটা মায়মুনার জন্য বেশ সহজেই হয়েছিল। প্রায় দশমিনিট লেগেছিলো মায়মুনার সেই আলমারি খুলে সবকিছু ঘেটে ওর নিজের পাসপোর্টটা খুঁজে বের করতে। তারপরও একেক পাসপোর্ট একেক দেশের হওয়ায় ওর ব্রিটিশ লাল পাসপোর্টটা বের করতে বেশি বেগ পেতে হয়নি। আর পুরো সময়টায় সেই রুমে কেউ আসেনি। প্রতিটা সেকেন্ড মায়মুনার কাছে ঘন্টার মতো মনে হচ্ছিলো। মনে হচ্ছিলো এই বুঝি কেউ এসে পড়লো। কিন্তু কেউ আসেনি। পাসপোর্টটা বের করে ও ঘরে এসে ওর ব্যাগের মধ্যে সাবধানে পাসপোর্টটা রেখে দেয়।

এই পর্যন্ত সব ঠিকই ছিল। কিন্তু সমস্যা হয়েছিল চাবিটা আবার রিসেপশনের ড্রয়ারে ফেরত দেবার সময়। নানান অযুহাতে মায়মুনা রিসেপশনের আশেপাশে ঘুরঘুর করছিলো কিন্তু এক মুহূর্তের জন্য সেই ডেস্ক খালি পায়নি। এরপর নতুন মেয়েটার পাসপোর্ট আলমারিতে রাখার জন্য সেই চাবির খোঁজ পড়ে। কিন্তু চাবি তো আর সেই ড্রয়ারে পাওয়া যায়না। সেই চাবি খুঁজে বের করা নিয়ে গেস্টহাউজে একেবারে হুলস্তুল পড়ে যায়। সাধারণভাবেই শুরুতেই সন্দেহটা এসে পড়ে মায়মুনার উপর। মায়মুনা তো সেই ডেস্ক পরিষ্কারের কাজ করে। রিসেপশনে আজকে ওকে কিছুক্ষনের জন্য রেখে যাওয়া হয়েছিল। তাছাড়া সিস্টার মাইশা গত কয়েকদিন ধরে মায়মুনাকে অকারণে রিসেপশনের আশেপাশে ঘুরঘুর করতে দেখেছে। তাই শুরুতেই মায়মুনাকে সবাই মিলে জেরা করা শুরু করে দেয়। মায়মুনা ভিতরে ভিতরে ভয়ে মরেই যাচ্ছিলো কিন্তু জান দিয়ে চেষ্টা করেছে যাতে তা বাইরে প্রকাশ না পায়। কিন্তু ও জানেনা যে আসলেই ও অভিনয় করতে পেরেছে কিনা। মায়মুনা কিছু জানেনা ভাব করে নিজে থেকেই ওদের সাথে চাবি খোঁজাখুঁজি শুরু করে দেয়। মায়মুনার মনে হয়েছে পুরোটা সময় সিস্টাররা ওর দিকে সন্দেহের চোখে তাকিয়ে ছিল। ভয়ে মায়মুনা একেবারে কাঠ হয়ে ছিল। ওর আবায়ার ভিতরে একটা পোটলার মধ্যে তো সেই চাবিটা ছিল। ওর মনে হচ্ছিলো এই বুঝি ওকে সার্চ করা হবে। এই বুঝি ও ধরা পড়ে গেলো।

এরপর ডেস্কের নিচে চাবি খোঁজার নাম করে কোনোরকমে চাবিটা বের করে মাটিতে রেখে দেয় মায়মুনা। তারপর আরো একঘন্টা ধরে সবাই মিলে এদিক ওদিক খোঁজাখুঁজি করার পর এক সিস্টার রিসেপশনের ডেস্কের নিচ থেকে সেই চাবি উদ্ধার করে আনে। কিন্তু মায়মুনার মনে হয়েছিল চাবিটা ডেস্কের নিচে পাওয়া মাত্র সবাই আরো বেশি করে মায়মুনাকে সন্দেহ করা শুরু করেছে। কিন্তু কেউ আর মায়মুনাকে কিছু বলেনি। মায়মুনা সেখান থেকে এসে সোজা বাথরুমে গোসল করতে ঢুকে গেছে।

মায়মুনা জায়নামাজে বসে কাঁপছে। ওর মনেহচ্ছে সিস্টাররা সব বুঝে গেছে। এখন ওরা কিছু একটা ব্যবস্থা করবে। মায়মুনা আর এখান থেকে পালাতে পারবেনা। ব্রাদার জালাল এখনো মায়মুনার পিছে লেগে আছে। ইদ্দতকাল না পূর্ণ করার আগে বিয়ে করা ঠিক না দেখে অনেকেই এই বিয়েতে বাধা দিচ্ছে। এই কারণে সে এখনো কিছু করে উঠতে পারছেনা। কিন্তু সুযোগ পেলেই সে কলকব্জা নাড়াচ্ছে। পুরো চারমাস তার অপেক্ষা করার ধৈর্য্য নাই। ব্রাদার জালালের বিয়ে করার মতো অবশ্য মেয়ের অভাব নাই এখানে। সে চাইলেই মায়মুনার থেকে ভালো মেয়ে জোগাড় করতে পারে। কিন্তু মায়মুনাকে বিয়ে করার এত আগ্রহের কারণ অন্য। মায়মুনাতো এখন পৃথিবী বিখ্যাত আইসিস গার্ল। ওকে বিয়ে করতে পারলে ব্রাদার জালালের নাম যশ আরো বেড়ে যাবে।

মায়মুনার ভীষণ অস্থির লাগছে। ওর এখন মা বাবাকে পাসপোর্টের কথাটা জানানো দরকার। যাতে করে ওরা তাড়াতাড়ি মায়মুনার পালানোর একটা দিন ঠিক করতে পারে। কিন্তু এখন ছাদে গিয়ে ওর কথা বলার সাহস হচ্ছেনা। এতদিন ধরে প্রায় প্রতিদিনই গোসলের সময় বাথরুমের জানালা দিয়ে বের হয়ে ছাদে উঠে ও একটু কথা বলে এসেছে। কিন্তু আজকে কিছুতেই ও সাহস পাচ্ছেনা। মনেহচ্ছে কিছু উল্টা পাল্টা করে ফেললেই ও ধরা পড়ে যাবে। মায়মুনা ঠিক করলো যে আজকে ও আর কিছু করবেনা। আগামীকাল সকালে সবকিছু ঠান্ডা হয়ে এলে দেশে ফোন করে বাবা মাকে জানাবে।

মায়মুনা আবারো জায়নামাজ থেকে উঠে ওর ব্যাগের কাছে চলে গেলো। ব্যাগের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে এবার মোবাইলটা ধরে একটু দেখে নিলো। এখানে অনেক কষ্ট করে মোবাইলটা চার্জ করে রাখে মায়মুনা। গেস্ট হাউজে কাজ করার সময় আবায়ার নিচে সেই পোটলার মধ্যে মোবাইল আর চার্জার রাখে। কোনো নির্জন রুম পরিষ্কার করার সময় পাঁচ দশ মিনিটের মতো কোনো একটা সকেটে ফোনটা চার্জ করে নেয়। এইটুকু চার্জেই কাজ হয়। প্রতিদিনও চার্জ করা লাগেনা। মায়মুনার হাত এখনো ওর ব্যাগের মধ্যে। আলতো করে সেই মোবাইলটা ধরেই আছে। হঠাৎ করেই ও মত পাল্টালো। ওর মনেহলো আগামীকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করা যাবেনা। ও তাড়াতাড়ি একটা কাপড়ের মধ্যে লুকিয়ে ফোনটা বের করে বাথরুমের দিকে রওনা করলো। ঘর থেকে যাবার সময় ও খেয়াল করলো যে সেলাই করার মেয়েটা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।

মায়মুনা হনহন করে রুম থেকে বের হয়ে এসে সোজা বাথরুমে ঢুকে গেলো। ঢুকেই দরজাটা লক করে দিয়ে জানালা গলিয়ে বের হয়ে কার্নিশের উপর দাঁড়িয়ে একটু কসরত করে ছাদে উঠে গেলো। প্রতিদিন এভাবে উঠে উঠে ও একেবারে এক্সপার্ট হয়ে গেছে। সেখানে এক মুহূর্ত দেরি না করে ফোনটা বের করে নাম্বারটায় ডায়াল করলো। দুইটা রিং বাজতেই মুনিরার গলা। মুনিরা যেন ওর ফোনের অপেক্ষায়ই ছিল। মায়মুনা সময় নষ্ট না করে বলে উঠলো,

– মা, আমি বেশি কথা বলতে পারবোনা। পাসপোর্ট পেয়েছি। খুব তাড়াতাড়ি আমাকে তারিখ জানাও। আমি আগামীকাল আমাদের সময় সকালে আবার ফোন করে তোমার কাছ থেকে জেনে নিবো।

এই বলে মায়মুনা ফোনটা কেটে দিতে যাচ্ছিলো। কিন্তু মুনিরা তাড়াতাড়ি বলে উঠলো,

– তারিখের জন্য কালকে ফোন করা লাগবেনা। মুস্তাফা বলেছে আজকে যদি তুমি পাসপোর্ট পেয়ে ফোন দাও তাহলে তোমাকে বলতে যে ফেব্রুয়ারির পাঁচ তারিখে ওরা তোমাকে নিয়ে আসতে পারবে।

– থ্যাংক ইউ মা। ফেব্রুয়ারির পাঁচ তারিখ তাহলে ঠিক থাকলো। আমি আগামী একদুইদিন মনেহয় ফোন করতে পারবোনা। কিন্তু পাঁচ তারিখের আগে ফোন করে সব ঠিক আছে নাকি জেনে নিবো ইনশাল্লাহ। রাখি তাহলে।

– দাড়াও। তোমার বাবা তোমার সাথে কথা বলতে চায়।

– আচ্ছা কিন্তু তাড়াতাড়ি করো মা।

মুনিরা একটু ইতস্তত করেই ফোনটা আসাদকে দিলো। মুনিরা চায়না আসাদ এই কথাগুলো মায়মুনাকে জানাক। মেয়েটা আগে সহি সালামতে ফিরে আসুক তো। তারপর যা হয় তা হবে। তার আগে জানালে মায়মুনা যদি আবার মত পাল্টায়। কিন্তু মুস্তাফা আর আসাদ দুইজনই বলেছে যে মায়মুনার এসব জানা প্রয়োজন। আর ফিরে আসার আগেই জানা প্রয়োজন।

আসাদ ফোনটা কানে দিয়ে হ্যালো বলতেই মায়মুনা বলে উঠলো,

– আস্সালামুআলাইকুম বাবা। প্লিজ একটু তাড়াতাড়ি বলো।

আসাদ কঠিন কথাগুলো মায়মুনাকে বলার জন্য তৈরি হয়েছিল। কিন্তু মায়মুনার গলা শুনে ও যেন আর কথাগুলো বলে উঠতে পারছেনা। মুস্তাফা বারবার করে বলে দিয়েছে যে এখানে ফিরে আসলে মায়মুনার কী হতে পারে তা যেন ওকে জানানো হয়। ওকে যে এয়ারপোর্ট থেকেই সম্ভবত অ্যারেস্ট করে নিয়ে যাওয়া হবে, তারপর বিচার, রায় হওয়া পর্যন্ত হয়তোবা পুলিশ কাস্টডিতেই ওকে থাকতে হতে পারে, দীর্ঘ সময় ধরে ডিরাডিক্যালিজেশন প্রোগ্রামের মধ্যে দিয়ে যেতে হতে পারে, জেল খাটতে হতে পারে, এসব সব যাতে বিস্তারিতভাবে মায়মুনাকে বুঝিয়ে বলা হয়। মায়মুনা যেন সবকিছুর জন্য ভালোমতো প্রস্তুত হয়ে আসে। কী ধরণের কথা বললে মায়মুনার সুবিধা হবে এসব মুস্তাফা ওদের শিখিয়ে দিয়েছে। কোনোভাবেই মায়মুনার কথায় যাতে প্রকাশ না পায় ও আইসিসদের প্রতি সহানুভূতিশীল। এসব মায়মুনাকে বুঝিয়ে না বললে ও আরো বিপদে পড়তে পারে। কিন্তু এই মুহূর্তে আসাদ কিছুই বলে উঠতে পারছেনা। ওর মনে হচ্ছে এসব শুনে মায়মুনা পিছিয়ে যাবে। ওর মনে হচ্ছে ও তো আসলে এই মায়মুনাকে জানেনা, চিনেনা। আসাদ কোনোরকমে বলে উঠলো,

– মারে আর মাত্র কয়টা দিন। তারপর ইনশাল্লাহ দেখা হচ্ছে।

– ইনশাল্লাহ বাবা। কিন্তু কী বলতে চেয়েছিলে বলো।

– নাহ, তেমন কিছু না। এয়ারপোর্টে হয়তো পুলিশ থাকতে পারে। একটু সময় নিয়ে ইন্টারোগেট করতে পারে কিন্তু বি স্ট্রং। আর আমরা তো এখানে আছিই। যা যা করা লাগে করবো ইনশাল্লাহ।

– ওকে বাবা। এখন আমাকে যেতে হবে।

এই বলে লাইনটা কেটে দিয়ে তড়িৎগতিতে মায়মুনা বাথরুমে এসে আবায়ার মধ্যে মোবাইলটা ঢুকিয়ে বাথরুমের ফ্লাশটা টেনে দিয়ে দরজাটা খুলে দিলো। দরজা খুলতেই দেখলো সিস্টার মাইশা একেবারে মূর্তির মতো সামনে দাঁড়ানো।

ওকে দেখা মাত্রই সিস্টার মাইশা বলে উঠলো,

– কোথায় ছিলে তুমি? সেই কখন থেকে দরজা নক করে যাচ্ছি?

মায়মুনার হাত পা একেবারে ঠান্ডা হয়ে গেলো।

(চলবে)
©আমিনা তাবাস্সুম

পর্ব ১ – https://www.facebook.com/groups/Anyaprokash/posts/1259058571275834
পর্ব ২ – https://www.facebook.com/groups/Anyaprokash/posts/1259763221205369
পর্ব ৩ – https://www.facebook.com/groups/Anyaprokash/posts/1260389041142787
পর্ব ৪ – https://www.facebook.com/groups/Anyaprokash/posts/1261082907740067
পর্ব ৫ – https://www.facebook.com/groups/Anyaprokash/posts/1262397227608635
পর্ব ৬ – https://www.facebook.com/groups/Anyaprokash/posts/1263604834154541
পর্ব ৭ – https://www.facebook.com/groups/Anyaprokash/posts/1264302014084823
পর্ব ৮ – https://www.facebook.com/groups/Anyaprokash/posts/1265021037346254
পর্ব ৯ – https://www.facebook.com/groups/Anyaprokash/posts/1265720383942986
পর্ব ১০ – https://www.facebook.com/groups/Anyaprokash/posts/1267085007139857
পর্ব ১১ – https://www.facebook.com/groups/Anyaprokash/posts/1268406783674346
পর্ব ১২ – https://www.facebook.com/groups/Anyaprokash/posts/1269108633604161
পর্ব ১৩ – https://www.facebook.com/groups/Anyaprokash/posts/1269684430213248
পর্ব ১৪ -https://www.facebook.com/groups/Anyaprokash/posts/1278962922618732
পর্ব ১৫ – https://www.facebook.com/groups/Anyaprokash/posts/1279769539204737
পর্ব ১৭ – https://www.facebook.com/groups/Anyaprokash/posts/1282510435597314

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here