অন্ধকার মানব পর্বঃ২২

0
697

#অন্ধকার_মানব(The unpredictable love)
#পর্ব_২২

লিখা✍️তাজরিয়ান খান তানভি

মাঝরাতে ঘুম ভেঙে যায় দ্বিধার।চেষ্টা করেও কিছুতেই আর ঘুমাতে পারলো না।তাই নিচে নেমে আসে।জাদ এখনো চুপচাপ ড্রয়িং রুমে বসে আছে।দ্বিধা এসে ওর পাশে বসে।

“উঠে আসলেন যে?

“ঘুম আসছে না।”

“আপনি কি সারারাত এখানে বসে থাকবেন?

“হ্যাঁ।

“কিসের এতো ভয় আপনার?

“আপনাকে হারানোর ভয়।”

দ্বিধা আস্তে করে ওর মাথাটা জাদ এর ঘাড়ের কাছে রাখে।
“তাহলে আমাকে আপন করে কেনো নিচ্ছেন না?

“তা কোনোদিনও সম্ভব নয় তা আপনি ভালো করেই জানেন।”

“ভালোবাসেন না আমাকে??

জাদ সোজা বলে–
“নাহ।”

“তাহলে কেনো এসেছেন এখানে?

“নিয়তি টেনে এনেছে আমাকে।”

দ্বিধা জাদ এর সামনে হাটু গেড়ে বলে–
“কেনো নিজেকে কষ্ট দিচ্ছেন আর সাথে আমাকেও?

জাদ ওকে দাড় করিয়ে বলে–
“ঘুমাতে যান,,,আপনার শরীর খারাপ করবে।”

দ্বিধা ওকে ঝাড়া মেরে বলে —
“আমার শরীর নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না।”

“রাগ করবেন না।যা ভবিতব্য তাই হবে।নিয়তি কে বদলানোর ক্ষমতা কারো নেই।”

দ্বিধা কান্না জড়ানো কন্ঠে বলে–
“আমি আপনাকে ছাড়া থাকতে পারবো না জাদ।”

“আপনাকে তো আমাকে ছাড়াই থাকতে হবে।
জানেন তো ভোরের আলোয় অন্ধকার হারিয়ে যায়।আপনি হচ্ছেন সেই ভোরের আলো যার আভায় আমার অভিশপ্ত অন্ধকারের কোনো জায়গা নেই।”

“প্লিজ এমন বলবেন না।আমি তো সব জেনেশুনে আপনাকে মেনে নিয়েছি তাহলে আপনি কেনো আমায় মেনে নিচ্ছেন না?

“এর আগেও আমি কাউকে হারিয়েছি তাই নতুন করে কাউকে হারানোর ক্ষমতা আমার নেই।”

“কার কথা বলছেন আপনি?

“ছিল কেউ আপনার মতোই।”

দ্বিধা আর কথা বাড়ায় না কারন ও ভালো করেই জানে জাদ ওকে কতটা ভালোবাসে।শুধুমাত্র ওদের দুজনের মধ্যে আলাদা সত্ত্বা নামে কাচের আয়নার জন্য ওর ভালোবাসা তো মিথ্যে হতে পারে না।

সকালে জাদ চলে যেতে চাইলে মি.ইরাজ ওকে বলে–

“তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।”

“বলুন।”
ইরাজ জাদ কে ব্যাক ইয়ার্ডে নিয়ে যায় যাতে করে ওদের মধ্যে হওয়া কথোপকথন কেউ শুনতে পায়।

“কে তুমি?

“আমার নাম আপনার অজানা নয় মি.ইরাম।”

ইরাজ ক্ষীপ্ত কন্ঠে চেচিয়ে উঠে–
“তুমি কি ভেবেছো,,আমি কিছুই জানতে পারবো না?
কাল রাতে তোমার আর দ্বিধার সব কথা আমি শুনেছি।এখন আমি জানতে চাই কে তুমি?কি তোমার আসল পরিচয়?কেনো এসেছো তুমি আমার প্রিন্সেস এর জীবনে?

“আই নো মি.ইরাম,আপনি সব শুনেছেন।
তারপরও বলবো আমি আপনাদের কোনো ক্ষতি করতে আসিনি।আপনারা নিশ্চিন্তে থাকতে পারেন।”

“আমি তোমার কোনো এক্সপ্লেনেশন শুনতে চাইনি।আমি শুধু জানতে চাই কে তুমি??

“সেটা না হয় নবনীযুক্তার কাছ থেকে জেনে নিবেন।”
ইরাজ বিস্ফোরিত চোখে বলে–
“তুমি ওর এই নাম জানলে কোথা থেকে??

জাদ মৃদু হাসে।
“আমি এমন অনেক কিছুই জানি যা আপনি জানেন না।চলি আমি।”

জাদ যাওয়ার পরও ইরাজ থম মেরে দাড়িয়ে থাকে সেখানে।ওর ভয় আরও দ্বিগুন হয়ে যায়।

দ্বিধা পারিজা ইরাম কে জাদ এর কথা জিঙ্গেস করতেই ইরাজ জানায় ও চলে গেছে।

“তোমার সাথে আমার কথা আছে দ্বিধা।”
দ্বিধা খানিক না বেশ অবাক হয়।কারন ইরাজ ওকে ওর নাম ধরে তেমন ডাকে না।আজ হঠাৎ কেনো বলল।
ইরাজ দ্বিধা কে দ্বিধার ঘরে নিয়ে আসে।

“পাপা তুমি আমাকে এখানে নিয়ে এলে কেনো?
ইরাজ শক্ত গলায় বলল–

“জাদ সম্পর্কে কি জানো তুমি??

“মানে??

“কাল রাতে তোমাদের সব কথা শুনেছি আমি।তাই আমি শুধু জানতে চাই কে ও?কি ওর পরিচয়?
দ্বিধার মনে ইতিবিতি করা শুরু করলো।ও বুঝতে পারছে না কি বলবে।যদি আসল পরিচয় জেনে পাপা জাদ কে ভুল বুঝে।
ও আমতা আমতা করে বলে–

“পাপা ভুল ভাবছো।তেমন কিছু নয়।”

“দ্বিধা আমি তোমার পাপা।আমাকে কোনটা ভুল কোনটা সঠিক বুঝাতে এসো না।জাদ কে আমার প্রথম থেকেই সন্দেহ হয়।ওর আচার আচরন অদ্ভুত।আর আমার সন্দেহ কাল রাতে তোমাদের কথা বার্তায় আরো স্পষ্ট হয়।”
দ্বিধা ভাবলো একদিন তো জানবেই।তাই ও আর সত্য গোপন না করে ও বলল–

“পাপা,জাদ কোনো সাধারন মানুষ নয়।”

ইরাজ উত্তেজিত হয়ে বলে–
“তাহলে??

“ও এক ভ্যাম্পায়ার।”

“কি বলছো তুমি?

দ্বিধা ইরাজের হাত ধরে বলে–
“কিন্তু পাপা,,,ও তাদের মতো নয়।ও একদম আলাদা।”

“হ্যাঁ আলাদা।কারন ও কোনো মানুষ নয়।আই ডোন্ট বিলিভ দিস।সবজেনেও তুমি,,,,

“পাপা আমি জাদ কে ভালোবাসি।”

“হোয়াট??

“তুমি কি পাগল হয়ে গেছো।এইসব কি বলছো তুমি??

“পাপা,তুমি যা ভাবছো তা নয় ও সত্যিই আলাদা।ও আমাদের কারো কোনো ক্ষতি করবে না।”

“চাঁদের আলো কখনো সূর্যের কিরনের দেখা পায় না তুমি নিশ্চয় জানো?

“পাপা তুমি হয়তো ভুলে যাচ্ছো সূর্যের আলোয় চাঁদ আলোকিত হয়।”

“দ্বিধাআআআ,,,

“পাপা,,,তোমার আমার কথা বিশ্বাস না হলে রিশাল কে জিঙ্গেস করো।”

ইরাজ অবাক হয়ে ছোট্ট করে হাসলেন।
“তার মানে তুমি বলতে চাও রিশালও সব জানে??

“হ্যাঁ পাপা।”

“ওয়েল,,,,তোমরা দুজন সবজেনেও চুপ করে ছিলে??
একবড় শ্বাস ছেড়ে আবার বললেন–

“রিশাল কে আমি দেখে নিবো।কিন্তু আজ থেকে তুমি ঘরের বাইরে যাবে না।”

“পাপা,,এইসব কি বলছো?
আমি জাদ কে ভালোবাসি।”

“ভালো মানুষকে বাসা যায় জানোয়ার কে নয়।আর তুমি একবারও ভাবলে না যে ও কাল পুরো রাত আমাদের ঘরে ছিলো।ও যদি আমাদের উপর অ্যাটাক করতো।”

“ও সেরকম নয়।”
ইরাজ ইরাম আর কিছু না বলে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে যায়।পারিজা ইরাম কে বলে যেনো কোনো অবস্থায় দরজা না খুলে।

হসপিটালে এসে হন্য হয়ে খুজচে রিশাল কে ইরাজ।আর পেয়েও যায়।

“আমি তোমাকে বিশ্বাস করেছিলাম রিশাল,কিন্তু তুমি তার মর্যাদা রাখো নি।”

রিশাল আগের চেয়ে একটু ভালো।নার্স মাত্রই ওকে মেডিসিন দিয়ে গেছে।গলায় প্রচন্ড আঘাতের কারনে ভালো করে কথা বলতে কষ্ট হচ্ছিল।
“আঙ্কেল এইসব আপনি কি বলছেন?

“আমি সব জানতে পেরেছি।তুমি জেনেশুনে দ্বিধা কে এমন বিপদের মুখে কি করে ঠেলে দিলে?

“আঙ্কেল আমি সত্যিই কিছু বুঝতে পারছি না।”

“বুঝতে পারছো না,,কি বুঝতে পারছো না জাদ কে সেটা তুমি জানতে না।আর জেনেও,,,
রিশাল নিস্তব্ধ।একদম নিস্তব্ধ।কিছুই বলার নেই তার।তারপরও সে বলে–

“আই অ্যাম সরি আঙ্কেল।কিন্তু স্পাইসির জন্য এটা প্রয়োজন ছিলো।ইতাফের হাত থেকে ওকে একমাত্র জাদ ই পারবে বাচাতে।”

“আর ইউ কিডিং উইথ মি???
ইতাফ আজ এতোবছর বছর ধরে আমার মেয়েটাকে কষ্ট দিয়েছে আর সেখান থেকে বাচিয়ে ওকে তুমি নিশ্চিত মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিলে?

“আপনি ভুল করছেন আঙ্কেল।জাদ স্পাইসি কে ভালোবাসে।ও ওর কোনো ক্ষতি হতে দিবে না।”

ইরাজ বিদ্রুপ এর হাসি হাসলো।
“শিকারি কখনো শিকার কে ভালোবাসতে দেখেছো?
জাদ এর মতো এক রক্ত পিপাসু জানোয়ার দ্বিধা কে ভালোবাসবে!!!

ঠিক সেই সময় আইভান আর ফ্রিদা সেখানে প্রবেশ করে।

“আপনি ভুল বলছেন মি.ইরাজ।

“আপনারা কারা?
আইভান বলে–
“যাকে নিয়ে এতো চর্চা হচ্ছে আমরা তার প্যারেন্টস।”

ইরাজ ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাদের দেখে।ফ্রিদা তাকে বলে–
“আপনার ভয়ের কোনো কারন নেই।সহস্র বছর থেকে আমরা সৃষ্টির সেরা জীব মানুষের মাঝেই নিজেদের অবস্থান গড়ে নিয়েছি।বিনা কারনে তাদের ক্ষতি আমরা কখনো করিনি।”

“আপনাদের সাথে কথা বলার কোনো রুচি আমার নেই।ফর গড সেক আমার মেয়ে কে ছেড়ে দিন।”

“আমরা আপনার মেয়ের কোনো ক্ষতি করিনি।”

“তা করেন নি।কিন্তু আপনাদের উপর আমার বিশ্বাস নেই।তাই আজকের পর আপনারা আমার মেয়ের কাছ থেকে দুরে থাকবেন,,বিশেষ করে আপনাদের ছেলে।এটা টোয়ালাইট মুভি নয় যে একজন ভ্যাম্পায়ারের সাথে আমি আমার মেয়ের জীবন জড়িয়ে দিবো।”
রিশাল এর দিকে ঘুরে তাকিয়ে বলে–

“তুমি আমার বন্ধুর ছেলে।তাই সুস্থ হওয়ার পর তুমি আমেরিকা ফিরে যাবে সেই সুযোগ আমি তোমাকে দিচ্ছি।”

ইরাজ তার কথা শেষ করে এক মুহুর্ত অপেক্ষা না করে সেখান থেকে বেরিয়ে যান।আইভান আর ফ্রিদা দুজন দুজনের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে।তাদের উদ্দেশ্য করে রিশাল বলে–

“এখন কি হবে?আঙ্কেল যদি স্পাইসি কে জাদ এর কাছে আসতে না দেয়?

ফ্রিদা শীতল কন্ঠে বলে–
“জাদ তো যেতে পারবে।

“কিন্তু আনটি,,,
“ইউ ডোন্ট ওয়ারি।দ্বিধার কোনো ক্ষতি হবে না।জাদ সে ব্যবস্থা আগেই করেছে।”

“আইভান আমার মনে হয় ইরাজ বেশ ঘাবড়ে গেছে।”

“মে বি।”

“ওকে।আমাদের কাজ শেষ।রিশাল এখন বেটার।খুব টায়ার্ড লাগছে।”

“বাসায় যাওয়া যাক।”

“ইশায়া কি সত্যিই আসবে?

“কিং তো তাই বলল।”

“বাট আইভান,ইশায়ার এখানে আসা কি আদৌ ঠিক
হচ্ছে?

“আমিও সেটাই ভাবছি।জাদ কি রিয়েক্ট করে ওকে দেখে।”

“আমার কিন্তু ভয় হচ্ছে।”

“ডোন্ট ওয়ারি বেবি।ইশায়াই তো হচ্ছে আমাদের গোল্ড কী।”
বলেই গাড়ির এক্সলেটরে চাপ দিলো আইভান।

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here