আমি শুধু তোমার পাঠ-৭

#আমি_শুধু_তোমার
#লেখনিতেঃ লামিয়া ইসলাম তন্নি
#সপ্তম_পর্ব

✘কপি করা সম্পূর্ণ নি/ষিদ্ধ✘
উকিলের চেম্বারে বসে আছি দু’জনে। আমাদের সামনের চেয়ারটা ফাঁকা। উকিল সাহেব কোনো একটা জরুরী ফোন এটেন্ড করতে কিছুক্ষণ আগেই বাহিরে গেলেন। স্যার মানে আমার আ/সামি মহাশয় আরকি! তিনি বসে ফোনে কিছু একটা করছেন। আমি নিচে তাকিয়ে আছি। আজ আমার সব থেকে বেশি খুশি হওয়ার কথা থাকলেও, আমি খুশি হতে পারছি না। মনে হচ্ছে যেন, এমনটা না হলে খুব ভালো হতো।

আমি চাপা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে চোখ তুলে এনার দিকে তাকালাম। উনি দাঁত দিয়ে নিচের ঠোঁট কা/মড়ে আছেন। চোখগুলো ছোটছোট! কপালে ভাঁজ! সব মিলিয়ে চমৎকার লাগছে মানুষটাকে। যেন সৃষ্টিকর্তা পৃথিবীর অর্ধেক সৌন্দর্য দিয়ে এই মানুষটাকে বানিয়েছেন। আমার ভীষণ ইচ্ছে করলো ওনার গালের খোঁচা খোঁচা দাঁড়িগুলাতে একটিবার হাত বোলাতে। কিন্তু, ইচ্ছেটা প্রকাশ করা হলো না। আমি চোখ ফিরিয়ে নিলাম। তখনই উকিল সাহেব ভেতরে প্রবেশ করলেন। চেয়ারে বসতে বসতে জোরপূর্বক হেসে বললেন,
“সরি, অনেকক্ষণ অপেক্ষা করালাম।”

উকিল সাহেবের কথায় উনি আলতো হেসে বললেন,
“ইট’স ওকে।”

উকিল সাহেব বসলেন। সামনে থাকা গ্লাস থেকে তিন ঢোকে পানি খেলেন। তারপর, কিছুটা সময় নিলেন। মাইন্ড ফ্রেশ করলেন হয়তো! এরপর, আমাদের দিকে তাকালেন৷ বললেন,
“সব শুনলাম। এরপর যা বুঝলাম, তাতে আমার মনে হয় না যে, ডি/ভোর্সের প্রয়োজন আছে। দু’টো হাঁড়ি পাশাপাশি রাখলে বাড়ি তো খাবেই। তাই না? তোমরা স্বামী-স্ত্রী। একই বাড়িতে থাকো। একই ঘরে বসবাস করো। একই বিছনাতে ঘুমাও। একই সাথে খাও। সেখানে একটু আকটু ঝগড়া হবেই। এটা স্বাভাবিক। আমার বিয়ের ৩৫ বছর চলছে। এখনও রোজ আমার স্ত্রীর সাথে আমার ঝগড়া হয়। কিন্তু, কিছুটা সময় পরই আমরা সব ভুলে এক হয়ে যাই। সকালে ঝগড়ার পর বিকেলে আমার জ্বর হলে কিংবা বাড়ি ফিরতে দেরি হলে, আজও আমার স্ত্রী ব্যস্ত হয়ে পড়ে। চিন্তা করে। আমার সাথে তার এত ঝগড়ার পরও আমি অসুস্থ হলে নির্ঘুম রাত কাটিয়ে জায়নামাজে বসে আমার সুস্থতার জন্য কাঁদে। তোমাদের মাঝেও হয়তো ঝগড়া হয়। রাগারাগি হয়। কিন্তু, দিনশেষে একে ওপরের জন্য ঠিকই ভাবো। আসলে হয় কি বলো তো? কাছে থাকতে মানুষ প্রিয়জনের মূল্য বোঝে না। দূরত্ব আর হারানোর ভয়, প্রিয়জনের মূল্য বোঝায়। তোমরা একসাথে আছো, তাই তোমাদের মনে হচ্ছে আলাদা হলে ভালো থাকবে। কিন্তু, আলাদা হওয়ার পর আফসোস করবে। তাই বলছি, আরেকবার ভেবে দেখো। কারণ, একবার পেপারে সই করলে ৩ মাস তোমরা সময় পাবে। এই সময়ের ভেতর যদি তোমরা তোমাদের সিদ্ধান্ত না বদলাও, তবে ৩ মাস পর তোমাদের ডি/ভোর্স হয়ে যাবে।”

উকিল সাহেবের কথা শুনে আমার বুকটা হাহাকার করে উঠলো। আমি ওনার দিকে তাকালাম। উনি কি বুঝলো কে জানে? আমি তো নিজেই নিজের মনকে বুঝতে পারছি না। উনি এক পলক আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
“আমাদের ভাবার কিছু নেই, আঙ্কেল। আমরা আমাদের সিদ্ধান্ত নিয়ে সন্দিহান নই। আপনি কাজ শুরু করুন।”

ওনার কথা শেষে উকিল সাহেব এক পলক আমার দিকে তাকালেন। তারপর, দীর্ঘ এক শ্বাস ফেলে টেবিলের ড্রয়ার থেকে একটা ফাইল বের করলেন। সেখান থেকে ডি/ভোর্সের কাগজটা বের করে শুরুতেই আমার দিকে এগিয়ে দিলেন। আমি পেপারটাতে চোখ রাখলাম। সাথে সাথে চোখ পড়লো বড় বড় অক্ষরের লিখাটাতে। আমার কলিজাটা কেঁপে উঠলো। হুট করেই নিজেকে কেমন যেন পাগল পাগল মনে হলো। মনে হলো, খুব কাছে কিছু হা/রিয়ে যাচ্ছে। আমি ঢোক গিললাম। নিজেকে শান্ত রাখার অনেকটা চেষ্টা করলাম। কিন্তু, মন মস্তিষ্কের দ্বন্দ্বে আমি ক্লান্ত হয়ে গেলাম। মাথার ভেতর টন টন ব্যথা করে উঠলো। চোখের সামনে সব ঘোলা হয়ে এলো। শরীরটা ধীরে ধীরে নেতিয়ে এলো। বুঝতে পারলাম, আমি জ্ঞান হা/রাবো এখনই। যতক্ষণে বুঝলাম। ততকালীন ঢলে পড়লাম আমি। কিন্তু, মাটিতে পড়ার আগেই কেউ ধরে ফেলল। বুঝতে পারলাম, এটা আর কারো নয়। আমার আ/সামি মহাশয়ের ছোঁয়া! এই ছোঁয়া যে আমার চিরচেনা! খুব কাছের, আপন ছোঁয়া। সেই ছোঁয়া পেয়ে চোখ ভরা ক্লান্তি, মন ভরা বিষাক্ততার মাঝেও আমার অন্যরকম এক অনুভূতি হলো। এক ভালোলাগা, এক শান্তি অনুভব করলাম। তারপর.. তারপর আর কিছু বলতে পারি না!

~~~~~~~~

কতক্ষণ অজ্ঞান ছিলাম জানিনা। অজ্ঞান হওয়ার পর কী হয়েছে, সেটাও জানিনা। তবে, চোখ খুলতেই সেই চিরপরিচিত পরিবেশ চোখের সামনে ভাসতে লাগলো। সেই দেয়াল, সেই ছাঁদ, সেই ফ্যান সবকিছু! বুঝতে পারলাম, আমি আমার চিরচেনা সেই ঘরটিতে আছি। আমি এবার পাশ ফিরে তাকালাম। পাশেই উনি কপালের ওপর হাত রেখে আধশোয়া অবস্থায় আছেন। ঘুমিয়েছেন কিনা ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। আমি মাথা ঘুরিয়ে সামনে তাকালাম। তারপর, ধীরে ধীরে উঠে বসার চেষ্টা করতেই ওনার গায়ে একটু ধাক্কা লাগলো। যাতে করে উনি লাফিয়ে উঠলেন। যা দেখে আমার বুঝতে বাকী রইলো না যে, ওনার চোখ লেগে গিয়েছিল। আমি সঙ্গে সঙ্গে নিচু স্বরে ‘সরি’ বললাম। উনি সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ না করে পাল্টা আমায় বলল,
“এত পাকনামি করো কেন তুমি? এমনি সময়তে তো বাচ্চাদের কাজকে ও হারমানাও। কিন্তু, মাঝেমধ্যে এত বেশি বোঝো কেন? একা একা উঠে কোথায় যাচ্ছিলে?”

আমি আস্তে করে বললাম,
“কোথাও না। ঘুম ভেঙে গিয়েছে, তাই উঠে গিয়েছি।”

উনি কিছুক্ষণ আমার দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে থেকে উঠে গেলেন। আমি ড্যাবড্যাব করে তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলাম।

~~~~~~~

ফ্রেশ হয়ে বিছানার কোণে এসে বসতেই ফোনটা বেজে উঠলো। ফোনের স্ক্রিনে ভেসে উঠলো অভ্র’র নাম। আমি ফোনটা রিসিভ করব কি করব না, ভাবনার মাঝেই উনি ভেতরে এলেন। হাতে ট্রে। ট্রে’তে নিশ্চয়ই খাবার আছে। এর ভেতরই ফোনটা বাজতে বাজতে কে/টে গেল। উনি এগিয়ে এসে টেবিলের ওপর ট্রে’টা রাখলেন। আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
“খেয়ে নাও।”

ওনার কথা শেষ হতেই আমার নাক-মুখ কুচকে এলো। পৃথিবীতে এই একটা কাজ আমার কাছে সবচেয়ে ক/ষ্টের বলে মনে হয়। সেটা হলো খাওয়া। আমাকে আইসক্রিম, ফুচকা, ভাজাপোড়া যত দিবে, খেতে পারব। কোনো আপত্তি করব না। বরং, খুশি মনে খেয়ে নিব। কিন্তু, ভাত খাওয়া ভীষণ ক/ষ্টের। ভাত খেতে বললেই কান্না পায়। যেমনটা এখন পাচ্ছে। আমি চোখ-মুখ বাচ্চাদের মতো করে ওনার দিকে তাকালাম। উনি ভ্রু উচিয়ে ইশারা করলেন। যার অর্থ- ‘কী’। আমি চোখ ফিরিয়ে নিলাম। নিচে তাকিয়ে আস্তে করে বললাম,
“খেতে ইচ্ছে করছে না। আমার ভাত ভালো লাগে না।”

উনি বিস্মিত স্বরে বললেন,
“ভাত ভালো লাগে না? কেন?”

আমি ছোট করে বললাম,
“জানিনা।”

উনি আবার বললেন,
“তবে কী ভালো লাগে?”

আমি এবার ওনার দিকে তাকালাম। বাচ্চাদের মতো করে বললাম,
“আইসক্রিম, চিপস, ফুচকা, কিটক্যাট, নুডলস আর ভাজাপোড়া।”

আমার কথা শুনে আগের থেকেও বেশি অবাক হলেন। বললেন,
“এসব খেলে পেট ভরে?”

“না ভরুক। আমার ভালো লাগে।”

উনি হেসে ফেললেন। বললেন,
“এগুলো ছাড়া কী ভালো লাগে?”

আমি আস্তে করে বললাম,
“বিরিয়ানি আর ভুনা খিচুড়ি।”

উনি মুচকি হাসলেন। তারপর, ট্রে নিয়ে বেরিয়ে গেলেন। আমি এটা ভেবে ভীষণ খুশি হলাম যে আপাতত আমার খেতে হচ্ছে না। তাই, খুশি খুশি মনে ওনার বুক সেল্ফ থেকে সব থেকে পাতলা গল্পের বইটা নিয়ে পড়তে বসলাম। এখন আর ঘুম আসবে না। তাই, বসে বসে বোর হওয়ার চেয়ে গল্প পড়ে সময় কাটানোটাই বেস্ট মনে হচ্ছে। যদিও বই পড়ার ক্ষেত্রে আমি ভীষণ অলস। সেটা হোক পাঠ্যবই কিংবা গল্পের বই। তবুও, আজ কি ভেবে পড়তে চাচ্ছি কে জানে!

আমি বইটা খুলতে যাব তখনই ফোনটা আবার বেজে উঠলো। আমার মেজাজটাই খা/রাপ হয়ে গেলো। ইদানীং কেন যেন অভ্র’র সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করে না। সেই রাতে ওনাকে অনেক কথা শুনিয়েছে সে। যদিও সরিও বলেছে। কিন্তু, কথায় আছে না? জুতা মে/রে গরু দান? তেমনটা হয়ে গেল তো! বিয়ের পর থেকে প্রথম প্রথম কয়েকদিন কথা হতো ওর সাথে। ধীরে ধীরে কমতে কমতে গত দুই মাসে ৪-৫ বার কথা হয়েছে মনে হয়। আমার এসব ভাবনার মাঝেই কলটা আবার কে/টে গেল। আমি হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। তারপর, ফোনটা সাইলেন্ট করে রেখে বই পড়ায় মনোযোগী হলাম।

~~~~~~~~

শুয়ে বই পড়তে পড়তে কখন চোখ লেগে গিয়েছিল খেয়াল নেই। কোনো মোহনীয় স্বরে ঘুম হালকা হয়ে এলো আমার। কেউ আমার মাথায় হাত বুলাচ্ছে। ইশশ্, কি শীতল, শান্তিময় তার ছোঁয়া! আমার ঘুমকে যেন আরও ভারী করে দিচ্ছে। কানে তার কন্ঠস্বর বাজছে। তার ডাক শুনতে পাচ্ছি। কিন্তু, উঠতে ইচ্ছে করছে না। এই ঘোরে ডুবে থাকতে ইচ্ছে হচ্ছে আরও অনেকটা সময়!

সেই কন্ঠস্বর এখনও আমার নাম জপ করছে। সেই কন্ঠের অধিকারী মানুষটার হাত আমার মাথা ছেড়ে গাল ছুঁয়েছে। আমি যেন জমে যাচ্ছি। উঠতে চাইছি। কিন্তু, কোনো অদৃশ্য বন্ধন তা হতে দিচ্ছে না। সে আমায় আবার ডাকলো,
“লামিয়া? ওঠো।”

আমি ঘুমের ঘোরেই তাকে জড়িয়ে ধরলাম। বললাম,
“আরেকটু ঘুমাই, প্লিজ। এখন উঠতে ইচ্ছে করছে না।”

আচমকাই আমার কানে হাসির শব্দ ভেসে এলো। আমার ঘুমেরা যেন এবার উড়ে পালালো। আমি লাফিয়ে উঠে বসলাম। চোখের সামনে জ্বলজ্যান্ত মানুষটাকে দেখে চমকে উঠলাম। ল/জ্জায় জিব্বায় এক কা/মড় বসালাম। শীট! ঘুমের ঘোরে জড়িয়ে ধরা মানুষটা আর কেউ নয়। স্বয়ং, আমার আ/সামি মহাশয়। আমি ল/জ্জায় ওনার দিকে তাকাতে পারলাম না। ছিঃহ্! উনি কী ভাবছেন? নিশ্চয়ই আমাকে নির্ল/জ্জ ভাবছেন? নির্ঘাত আমায় এখন এটা নিয়ে ল/জ্জা দেবেন।

আমার ভাবনাদের বিদায় দিতে কথা বললেন উনি। আশ্চর্যজনক ভাবে, উনি এ বিষয়ে কোনো কথাই বললেন না। বরং, এমন ভাব করলেন যেন কিছুই হয়নি। হয়তো, আমার লজ্জাটা বুঝতে পেরেছেন। তাই তো, একদম স্বাভাবিকভাবে বললেন,
“যাও, ফ্রেশ হয়ে এসো। খেয়ে নিবে।”

ওনার কথা শুনে আমি অবাক হলাম। এক পলক জানালার বাহিরে তাকালাম। এখনও অন্ধকার! তার মানে রাত এখনও। তবে, এত রাতে কোন সময়ের খাবার? প্রশ্নটাকে মনে দমিয়ে রাখতে না পেরে ওনাকে শুধালাম,
“কয়টা বাজে?”

উনি একদম স্বাভাবিক স্বরে বললেন,
“২ টা ৪৫ মিনিট।”

আমি অবাক চোখে ওনার দিকে তাকালাম। বললাম,
“রাত ২টা ৪৫ মিনিট? তো আপনি এখনও জেগে কেন? সকালে ভার্সিটিতে যাবেন না? আর, আমিই-বা এত রাতে কোন সময়ের খাবার খাব?”

উনি ফুঁস করে নিশ্বাস ছাড়লেন। বললেন,
“শুরু? একসাথে এত প্রশ্ন করলে কোনটা রেখে কোনটার জবাব দিব, বলতে পারো?”

ওনার কথা শুনে আমি মনে মনে বেশ বিব্রত হলাম। জোরপূর্বক হেসে বললাম,
“একটা একটা করেই দিন।”

উনি মৃদু হেসে বলতে লাগলেন,
“প্রথমত, এখন মাঝরাত। দ্বিতীয়ত, আমি রান্না করে বউকে খাওয়ানোর জন্য জেগে আছি। তৃতীয়ত, সকালে ভার্সিটিতেও যাব। চতুর্থতম অর্থাৎ সর্বশেষ, তুমি এখন রাতের খাবার খাবে।”

ওনার একের পর এক উত্তর শুনে আমি হাসব না কাঁদব ভুলে গেলাম। অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম তার দিকে। বিস্মিত স্বরে শুধালাম,
“এত রাতে কী রান্না করেছেন?”

উনি হেসে বললেন,
“বউ’র ভাত পছন্দ নয়। বিরিয়ানি পছন্দ। তাই, বিরিয়ানি রান্না করলাম।”

এই মুহূর্তে! ঠিক এই মুহূর্তে আমি একদম বাকরূদ্ধ হয়ে গেলাম। কি বলব, কি রিয়াকশন দিব খুঁজেই পেলাম না। একটা মানুষ ঠিক কতটা.. ঠিক কতটা ভালো হতে পারে? আমি জানি না! কেন যেন আমার কান্না পেল। সারাদিন পরিশ্রম করে রাতে না ঘুমিয়ে আমার জন্য এতটা সময় চুলোর কাছে থেকে রান্না করেছে? ভাবতে নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে ভাগ্যবতী নারী মনে হচ্ছে।

আমাকে চুপচাপ দেখে উনি হেসে বললেন,
“কী হলো? চুপ করে বসে আছো কেন? যাও, ফ্রেশ হয়ে এসো। এত ক/ষ্ট করে রান্না করলাম। খেয়ে রিভিউ দাও, দেখি।”

আমি চোখে পানি নিয়ে হেসে ফেললাম। বললাম,
“আপনি এত ভালো কেন, মাস্টার সাহেব? আমি তো আপনার প্রেমে পড়ে যাচ্ছি বোধহয়।”

আমার কথাটার অর্থ উনি বুঝলেন কিনা জানিনা। তবে, কথার উত্তরে উনি বেশ শব্দ করে হেসে উঠলেন। বললেন,
“প্রেমে পড়া তো খুব সহজ কাজ, ম্যাম। এটা কোনো ব্যাপরই না। নতুন কিছু ভাবুন।”

কথাটা বলে আবার হেসে ফেললেন। আমি স্পষ্ট বুঝলাম উনি মজা করলেন। তবে, মজার ভেতরও অন্যরকম একটা আভাস পেলাম। আমি জবাব না দিয়ে উঠে গেলাম।

ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে সোফায় গিয়ে বসতেই উনি বিছানা থেকে উঠে এসে পাশে বসলেন। ঢেকে রাখা বিরিয়ানি উম্মুক্ত করতেই ঘ্রাণে পুরো রুম ভরে গেল। আমি চোখ বন্ধ করে ঘ্রাণ নিলাম। ইশশ্, কি চমৎকার সুবাস! যার ঘ্রাণ এত মিষ্টি, তার স্বাদ নিশ্চয়ই খুব ভালো?

আমি আর নিজেকে সামলাতে পারলাম না। এমনিতেই বিরিয়ানির প্রতি দূর্বল। তার উপর এমন লোভনীয় সুবাস। আমি চটজলদি হাত ধুয়ে নিলাম। উনি প্লেটে বিরিয়ানি দিতে নিতেই আমার চোখ পড়লো ওনার। হাতে। আমি সঙ্গে সঙ্গে আঁতকে উঠলাম। তৎক্ষনাৎ তার হাত থেকে চামচ ছিনিয়ে নিয়ে রেখে দিলাম বিরিয়ানির বোলে। তার হাত নিলাম আমার হাতে। বললাম,
“এটা কী করেছেন? যেটা পারেন না, সেটা কেন করতে গেলেন? দেখেছেন কতটা হাত পু/ড়ে গিয়েছে?”

কথাগুলো বলতে বলতে আমার গলা ধরে এলো। কারণ, ওনার অনেকটা হাত পু/ড়েছে। ফর্সা শরীর হওয়াতে তা স্পষ্ট। আমি নিজেকে সামলে নিয়ে উঠে গেলাম। ড্রয়ার থেকে ফার্স্টএইড বক্সটা নিয়ে তার পাশে গিয়ে বসলাম। বক্স থেকে মলমটা বের করে আঙুলে লাগিয়ে নিয়ে কাঁপা কাঁপা হাতটা এগিয়ে নিলাম পো/ড়া জায়গাটার দিকে। ভ/য়ে ভ/য়ে সেখানে মলম দিতেই উনি চাপা স্বরে ‘আহ্’ বলে উঠলেন। বুঝতে পারলাম, জ্বা/লা করছে। আমার খুব কান্না পেল। আমার জন্যই হয়েছে সবটা। বিরিয়ানির কথা না বললে সে রান্না করতে যেত না। হাতটাও পু/ড়তো না। আমি নিজেকে সামলে রাখলাম। রাগী স্বরে বললাম,
“বেশি পাকনামি করেছেন না? এখন ফল ভোগ করুন।”

কথাটা বলে আবার মলম লাগাতে ব্যস্ত হলাম। উনি হাসলেন। যা আমার চোখ এড়ালো না। উনি অন্যরকম স্বরে বললেন,
“হাতটা না পু/ড়লে এই রূপটা দেখা হতো না।”

ওনার কথা শুনে আমার হাত থেমে গেল। চোখ তুলে ওনার দিকে তাকালাম। উনি হাত সরিয়ে নিলেন। বললেন,
“খেয়ে নাও।”

কথাটা বলে উঠে যেতে নিতেই আমি ওনার হাত টেনে ধরলাম। উনি ফিরে তাকালেন। আমি ওনাকে টেনে বসিয়ে দিয়ে প্লেটে বিরিয়ানি নিলাম। তারপর, হাত ধুয়ে প্লেটে হাত দিলাম। প্রথম লোকমাটা এগিয়ে দিলাম তার মুখের কাছে। সে অবাক হয়ে তাকালো। হয়তো এমনটা আশা করেনি। আমি মৃদু হেসে বললাম,
“নিন।”

উনি কথা না বাড়িয়ে মুখ খুলে বিরিয়ানি মুখে নিলেন। তারপর, আমাকে বললেন,
“তুমিও খাও।”

ওনার কথামতো আমিও খেলাম। প্রথম লোকমা মুখে দিতেই বুঝতে পারলাম, আমার ভাবনা থেকেও কয়েকগুণ বেশি সুস্বাদু হয়েছে বিরিয়ানিটা! আমি ওনার দিকে তাকালাম। উনি ভ্রু উচিয়ে শুধালেন,
“কী?”

আমি মুচকি হেসে বললাম,
“ভীষণ ভালো হয়েছে।”

উনি হাসলেন। ইশশ্, কি চমৎকার সেই হাসিটা! আমি মুগ্ধ হয়ে দেখলাম।

~চলবে…?
(গল্প দেওয়ার কথা থাকলেও কিছু সম/স্যার জন্য গল্প দিতে পারিনি। সেজন্য, আমি আন্তরিক দুঃ/খিত। আপনাদের আশায় রাখাটা ঠিক হয়নি।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here