#এক_তুমিতে_আসক্ত
#পার্টঃ২৫
#Writer:#মারশিয়া_জাহান_মেঘ
ভার্সিটি থেকে আসতেই প্রান্তিক কাউকে কিছু না বলে সোজা উপরে উঠে যায়। প্রিয়ন্তি অর্ষা তাইফা আর রিমি বসে পরে বসার রুমে। অর্ষা ঘাবরে আছে। মনিশা চৌধুরী আর রাহেলা বানু ওদের সবার মুখে চিন্তার ভাব দেখে বললো,
‘কিরে কি হয়েছে প্রিয়?
‘আরে আম্মু আজকে অর্ষাকে একটা ছেলে প্রপোস করেছিলো। ভাইয়া তার অবস্থা খারাপ করে দিয়েছে।
‘ওমা কি কস?
‘হুম খালামনি সে আর বলি কি? তোমার মেয়েতো ভয়ে সোজা আমার পিছে লুকিয়ে ছিলো।
‘হেরে প্রিয় প্রান্তিক ভীষণ রেগে আছে তাইনা?
‘জ্বি আন্টি ভাইয়া ভীষণ রেগে আছে।
‘তাইফা তোমরা অর্ষার সাথে ছিলানা?
‘জ্বি আন্টি তবে অর্ষা একটু আগে বের হয়েছে বলেই এতোকিছু হয়েছে।
অর্ষা….এই অর্ষা…প্রান্তিকের ডাকে চমকে উঠে অর্ষা। মনিশা চৌধুরী বললো,
‘কিরে অর্ষা আমার ছেলেটা ডাকছে তোকে যা।
‘খালামনি..মানে..
‘আরে ভয় পাসনা তোকে বকা দিবেনা।
‘যদি দেয়?
‘দিবেনা। যদি বেশি রেগে থাকতো তাহলে এতোক্ষণে সব ভেঙ্গে ফেলতো। আর এখন তোকে ডাকছে তাই আমি জানি প্রান্তিক বেশি রেগে নেই।
মনিশা চৌধুরীর সাথে প্রিয়ন্তিও বললো,
‘হে হে অর্ষা তুই বরং যা।
অর্ষা কিছু বলার আগেই উপর থেকে প্রান্তিক আবার বললো,
“এই তুমি শুনোনা আমি ডাকছি? এতোক্ষণ লাগে আসতে?
অর্ষা এইবার দৌঁড়ে সিঁড়ি দিয়ে উপরে যায়।
১৬৭.
অর্ষা পা টিপে টিপে দরজার সামনে যায়। শাড়ির আঁচলটা এক হাত দিয়ে ধরে রুমে উঁকি দেয়।
‘বেলকনিতে এসো’
প্রান্তিকের গম্ভীর কন্ঠ শুনে অর্ষার ভেতরে পানি শুকিয়ে গেছে। সে ধীরে ধীরে বেলকনিতে যায়। অর্ষা যেতেই প্রান্তিক অর্ষাকে উল্টো করে গ্রিলের মুখোমুখি মুখ করিয়ে কোমর ধরে ওর কাঁধে থুতনি রাখে। অর্ষা বার বার বলছে,
‘কি করছেন ছাড়ুন। ছাড়ুন প্লিজ।
প্রান্তিক অর্ষার কোমড়ে হাত রেখে কাঁধে থুতনি রেখে বললো,
‘আকাশ অনেক সুন্দর তাইনা বউ?
কিন্তু এই আকাশ এতো সুন্দর কেনো জানো?
অর্ষা চুপ হয়ে আছে। সে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু সে ব্যর্থ।
‘কি হলো? বলো জানো?
‘অর্ষা অস্ফুটে উত্তর দেয়, না।
‘এই নীল আভার জন্য।
প্রান্তিক অর্ষার কোমর ছেড়ে দিয়ে অর্ষার দুই কাঁধে হাত রেখে নিজের মুখোমুখি দাঁড় করায়। এক ধ্যানে অর্ষার দিকে তাকিয়ে আছে সে। অস্ফুটে বললো,
অর্ষা…
প্রান্তিকের এইভাবে তাকিয়ে থাকা আর এমন আসক্ততার ডাকে অর্ষা কিছুটা কেঁপে উঠলো।
‘জ্বি বলুন।
‘এক_তুমিতে_আসক্ত আমি। ভালোবাসি তোমায়। বাসবে আমায় ভালো?
অর্ষা ঈষৎ কেঁপে উঠে শেষের কথাটায়। অর্ষা কিছু না বলে…হোট করে ওইখান থেকে বিদ্যুৎ গতিতে পা ফেলে স্থান ত্যাগ করে।
১৬৮.
‘অর্ষা ধর্ষনের শিকার হয়েছিলো’ ছোটবেলা তা জানলে অর্ষা কখনোই প্রান্তিক কে তার জীবনে জায়গা দিবেনা। ওর শুধু মনে হবে ওহ’ প্রান্তিক কে ঠকাচ্ছে।
‘আহা..ফরহাদ আস্তে বলো দেয়ালেরো কান আছে।
‘আমার এইটা বার বার মনে হচ্ছে তাইতো বলছি’.
হঠাৎ কোনো কিছু পড়ার শব্দে ফরহাদ চৌধুরী আর মনিশা চৌধুরী আতঁকে উঠে। দু’জনই ভয়ে পিছনে তাকায়। দেখে অর্ষা মুখ চেপে দাঁড়িয়ে আছে। প্রান্তিকের কথা শুনে দৌঁড়ে অর্ষা নিচে নামতে যাচ্ছিলো। হঠাৎ এমন কথায় থমকে যায় তার পা। অর্ষা একবার পরে যাওয়া ফুলেট টবটার দিকে আরেকবার ওদের দিকে তাকিয়ে কান্না করতে করতে চলে যায় দৌঁড়ে।
১৬৯.
ড্রাইভ করতে করতে চারিদিকে বার বার দেখছে প্রান্তিক। অর্ষাকে পাগলের মতো ১ ঘন্টা ধরে খুঁজছে সে। বার বার কল আসছে শৈবাল,ইরফান অনিকের। সবার উত্তর একটাই ‘অর্ষাকে কোথাও পায়নি। হঠাৎ প্রান্তিকের চোখ যায় রাস্তার ওপাশের পার্ক টায়। সে কল কেটে তাড়াতাড়ি গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাস্তা পার হয়ে গেলো অর্ষার পাশে। মেয়েটার চোখ দু’টোতে গড়গড়িয়ে পানি পড়ছে। আকাশের দিকে দৃষ্টি স্থির তার। শাড়ির আঁচলটা মাটিতে এলোমেলো হয়ে পড়ে আছে।
‘বউ…তুমি কাউকে কিছু না বলে কেনো এইখানে এসেছো?
অর্ষাঃনিশ্চুপ…
আম্মু আব্বু যা বলেছে তা কোনোটাই সত্যি নয়। অর্ষা এইবার প্রান্তিকের শার্টের কলার চেপে ধরে বললো,
‘কেনে? কেনো আপনি আমাকে বিয়ে করলেন? বলুন কেনো আমার থেকে লুকিয়েছেন আমার সাথে ছোটবেলায় কি হয়েছে? বলুন প্লিজ বলুন কে আমার এতো বড় সর্বনাশ করেছে? কেনো কেনো কেনে আপনি একজন ধর্ষিতাকে বিয়ে করেছেন?
অর্ষা পাগলের মতো কান্না করে প্রান্তিক কে এক নাগারে এইসব বলেই যাচ্ছে। প্রান্তিক কোনো উপায় না পেয়ে রেগে অর্ষাকে থাপ্পড় মারলো।
‘কি হয়েছে কি তোর? কোনো ধর্ষিতাকে বিয়ে করা পাপ নয়। আর এতে তো তোর কোনো দোষ নেই। দোষ আমাদের মতোই বিপরীত কিছু কাপুরুষ। ধর্ষিতা বলে কি নতুন জীবনের স্বপ্ন দেখা পাপ? আমি তোকে ভালোবাসি বুঝলি? ভালোবাসি তোকে। আর ওই কুত্তা***সোহেল কেতো আমি কিছুতেই ছাড়বোনা। জেলে ছিলো এতোদিন। কিন্তু জেল থেকে পালিয়েছে। তোকে নিয়ে কোনো রিস্ক নিতে চায়নি বলে আবার বিয়ে করেছি। কি অবাক হয়েছিস? আবার কেনো বলেছি জানিস? কারণ ছোটবেলাও আমাদের বিয়ে হয়ে ছিলো৷ তখন আমিও ছোট ছিলাম। কিন্তু তোর প্রতি আমার ভালোবাসা ছিলো অসীম। তাই খালুজান ওই জানু**চ্চাকে জেলে দেওয়ার পর আমার ছোট্ট মস্তিষ্ক তখন সবার সামনে বলে উঠে আমি অর্ষা রাণীকে বিয়ে করবো।
ব্যাস হয়ে গেলো। আমার সব জেদ দিয়ে আমি সবাইকে বিয়েতে রাজী হতে বাধ্য করিয়েছি। এরপর থেকে তোর সব খেয়াল আমি রাখতাম। কথা ছিলো তুই ১৮ তে পা দিলে আবার বিয়ে হবে। তোর কি মনে হয়? এইখানে খালামনি তোকে এমনি এমনি দিয়েছে? আমার জন্য দিয়েছে শুধুই আমার জন্য।
অর্ষা অবাক হয়ে এইসব শুনছিলল হঠাৎ ঢলে পড়ে প্রান্তিকের বুকে।
‘অর্ষা এই অর্ষা কি হয়েছে তোমার? কথা বলো অর্ষা। ওহ মাই গড স্যান্সলেস হয়ে গেছে!
১৭০.
মনিশা চৌধুরী মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন। কি থেকে কি হয়ে গেলো৷ তারা কল্পনাও করেনি যে অর্ষা শুনে ফেলবে। হঠাৎ দেখলো প্রান্তিক অর্ষাকে কোলে নিয়ে তড়িঘড়ি করে বাসায় ডুকছে।
‘অর্ষা এই অর্ষা কিরে প্রান্তিক কি হয়েছে মেয়েটার?
‘আম্মু সেন্সল্যাস হয়ে গেছে।
‘তাড়াতাড়ি রুমে নিয়ে যা ডক্টরকে কল দেয়।
‘হুম তাড়াতাড়ি কল দাও আব্বু। আর আম্মু এক গ্লাস গরম দুধ নিয়ে আসোতো।
‘আচ্ছা বাবা যা যা নিয়ে যা ওকে।
১৭১.
নাফিস সরদার আর রাহেলা বানু কান্নায় ভেঙ্গে পরেছেন। এতো আদরের মেয়ে তাদের। কি থেকে কি হয়ে গেলো? কিছুক্ষণ আগেও সব ঠিক ছিলো। আবার গ্রাম থেকে খবর এসেছে যেতে। চেয়ারম্যান বলে কথা যেতেতো তাকো হবেই।
‘রাহেলা ব্যাগ পত্র গোছাও।
‘আপনে কি কন? আমার মাইয়াডার এই অবস্থা..
‘এইখানে ওর আরেক মা বাবা আছে। আর সবচেয়ে বড় কথা প্রান্তিক বাপজান আছে। সেবার কমতি পরবেনা।
‘তবুও..
‘না রাহেলা আর কিছুইনা রেডি হও যাও।
১৭২.
অর্ষা চোখ খুলতেই প্রান্তিক তোয়ালেটা রেখে তড়িঘড়ি করে অর্ষার কাছে যায়। অর্ষার গাল বেয়ে পানি পরছে। প্রান্তিক তা মুছে দিয়ে অর্ষার ঘাড় ধরে আধশোয়াভাবে বসালো। টি-টেবিলে রাখা দুধের গ্লাসটুকু নিয়ে অর্ষার মুখ পানে ধরলো। অর্ষা নিরব হয়ে আছে। মুখে টু শব্দটাও করছেনা সে। নিরব হয়ে দুধ টুকুও খেয়ে নিলো এইবার।
প্রান্তিকের এখন ভীষণ ভয় করছে। অর্ষা হোট করে এতো নিরব হয়ে যাওয়াতে। ভালো ডক্টরের কাছে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিয়ে যেতে হবে অর্ষাকে.. এইটা ভাবতেই প্রান্তিক অর্ষার দিকে তাকায়। অর্ষার দৃষ্টি জানালার বাইরে।
চলবে….