#প্রেমমানিশা(২০)
‘ আপনি আগে কখনও সিলেট আসেননি তাইনা ? ‘ গাড়ির স্টিয়ারিং এ হাত রেখেই কথাটা বললো ফারহান।
তারা এখন বর্তমানে ঢাকার দিকে রওনা দিয়েছে। ধরণীতে আঁধার নেমে এসেছে অনেক আগেই। আজ পুরোটা সময়ই কাটিয়েছে সিলেটের বিভিন্ন দর্শনার্থী স্থানে ঘুরে বেড়িয়ে। কথা ছিলো শুধু মাধবপুর লেকে আর নীলকন্ঠ টি কেবিনে যাবে। কিন্তু সেই কথা ভেঙে তারা সিলেট টি স্টেট এও গিয়েছিল। আজ এই প্রথম দুজনে অনেকটা সময় একসঙ্গে কাটিয়েছে। বিয়ে ঠিক হওয়ার পর থেকেই তারা শুধু রাতের আঁধারেই একে ওপরের কাছে কথাবার্তা আদান প্রদান করেছে। তবে আজ তারা দিনের আলোতেও একে অপরের সান্নিধ্য পেয়েছে।
‘ উহু, সিলেট আগেও অনেকবার এসেছি। ‘ সানাহ্ ফোনে সোসিয়াল মিডিয়া স্ক্রল করতে করতে বলল ।
‘ তাহলে মাধবপুর লেক, নীলকন্ঠ টি কেবিন, সিলেট টি স্টেট, রাতারগুল, বিছানাকান্দি একটাও চিনেন না কেন ? ‘ ফারহান ড্রাইভিং করতে করতেই অবাক হয়ে বললো।
‘ এখানে আগে মামনি আর বাবাইয়ের সঙ্গে আসতাম। তারা মারা যাওয়ার পর বেশ কয়েকবার মা আর বাবার সঙ্গেও এসেছি। এখানে আমার বড় ফুপির বাড়ি। একটা সময় তার বাড়িতে বছরে তিন চারবার আসতাম যেখানে আমি ঘর ছেড়ে বেরই হই না। ‘ সানাহ্ এবার ফোন রেখে ফারহানের দিকে তাকিয়ে উৎসুক চোখে বললো।
‘ ওহ আই সি,তারমানে আপনার ফুপিই আপনাকে হেল্প করেছে সিলেটে বসতি গড়তে ? আপনার একার পক্ষে তো কখনোই সম্ভব না একলা একা এই শহরে এতকিছু অ্যারেঞ্জ করা। তারমানে উনিই সাহায্য করছিলেন। ভদ্র মহিলা দেখি আমার নয়া সংসার হওয়ার আগেই ভেঙে দিচ্ছিলেন। ‘ ফারহান সরু চোখে সানার দিকে তাকিয়ে বললো ।
‘ এভাবে বলছেন কেন ? বড় ফুপি কিছু করেনি, আমি জাপান ভাইয়ের থেকে হেল্প নিয়েছিলাম ‘ সানাহ্ ভ্রু কুচকে বললো।
‘ এখন এই জাপান ভাই কে ? নাম এত অদ্ভুত কেন ? এই নাম কে রেখেছে ? ‘ ফারহান বিরক্তিতে ভ্রু কুচকে বললো। সানার মুখে অন্য কোনো ছেলের নাম তার শুনতে একদমই ভালো লাগছেনা। কে এই জাপান ভাই যার কাছ থেকে প্রখর আত্মসম্মান সম্পন্ন সানাহ্ও হেল্প নিলো ?
‘ জাপান ভাই আমার বড় ফুপির ছোটো ছেলে। তারা দুই ভাই। বড় ভাইয়া হলো আরাব ভাই আর জাপান ভাই হলো ছোটো। জাপান ভাইয়ের সঙ্গে আমার বেশ মিল কিন্তু আরাব ভাই আমার সঙ্গে দেখা হলেই ঝগড়া করেন তাও ইচ্ছা করে। অবশ্য এসব এখন কমেছে কারণ এক তো তার বিয়ে হয়ে গেছে আর দ্বিতীয়ত আমি আর ফুপির বাড়ি যাই না। প্রথম প্রথম বিয়ের পরেও ঝগড়া করতো কিন্তু এখন আর করে না। ‘ সানাহ্ বেশ উৎসুক হয়ে বললো। ফারহানকে তার পরিবারের ব্যাপারে বলতে তার বেশ ভালই লাগছে। সানাহ্ কখনোই আত্মীয় স্বজন নিয়ে এতটা সিরিয়াস ছিলনা কিন্তু ফারহানের সঙ্গে কথা বলতে হলেও তো তার একটা যুতসই বিষয় দরকার।
সানাহ্ কথাগুলা যত উৎসাহ নিয়ে বললো ফারহান তার অর্ধেক উৎসাহ নিয়েও কিছু বললো না। শুধু মলিন গলায় ‘ ওহ্ ভালো ‘ বলে কথা কাটিয়ে গেলো। বস্তুত সানার কাছ থেকে তার চিন জাপান ভাইয়ের কথা শুনতে একদমই ইচ্ছা করছে না। ভেবেছিল দুজনে সারাদিন একসঙ্গে সময় কাটাবে,নিজেদের ফিউচার প্ল্যানিং করবে কিন্তু বালাইশাট। সানার তো সেই দিকে নজরই নেই। সানাহ্ ব্যস্ত তার চিন জাপান ভাইয়ের গুণগান গাইতে।
সানাহ্ যেরকম গম্ভীর আর আনসোসিয়াল টাইপের মেয়ে তাতে তার বন্ধু হওয়া তো দূরে থাক কেউ তার সঙ্গে কথাই বলে না। সেখানে তার সাথে তার জাপান ভাইয়ের রীতিমত বন্ধুত্ত্ব ফারহানের ভালো লাগছে না। মনে হচ্ছে ওই চিন জাপান সানাহ্কে নিজের দিকে টানতে চাইছে। কী আছে কি ওই চিন জাপানের মধ্যে ?
ফারহানের কাছ থেকে কোনো যুতসই উত্তর না পেরে সানাহ্ আর কথা বাড়ালো না। বুঝলো ফারহান কোনোকিছু নিয়ে চিন্তায় আছে বলেই তার কথার উত্তর দিচ্ছে না ঠিক মত। এই সময় ফারহানকে আর কিছু বলে লাভ নেই। সে হয়তো কানেই তুলবে না। এসব ভেবে সানাহ্ চুপ করে গেলেও ফারহান নিজে থেকেই কথা বলতে শুরু করলো। সবকিছুই তার জাপান ভাইকে নিয়ে আর সানাহ্ও খুশি মনে উত্তর দিল। তার আর জানা হলো না ফারহান কেন জাপানকে নিয়ে এত প্রশ্ন করছে আর ফারহানেরও জানা হলো না জাপান অলরেডি এনগেজড।
বাড়ি পৌঁছতে পৌঁছতে রাত প্রায় দশটা বেজে গেলো। বাড়ি ফিরতে সময় ফারহানের সঙ্গে বাইরে থেকে খেয়ে এসেছিল বলে বাড়ি ফিরে আর খাওয়ার প্রয়োজন মনে করলো না সানাহ্। বাড়ি ফিরে এতটাই ক্লান্ত ছিল যে ফারহানকে ঠিক মত বিদায়ও জানালো না। উল্টো কোনমতে ঢুলতে ঢুলতে ঘরে গিয়ে ঢুকলো। অবশ্য মিসেস কায়নাত মেয়ের এহেন ব্যবহারে লজ্জিত। মেয়েটা জামাইকে একটু বিদায়ও জানালো না।
ফারহান কাল রাতেই সবাইকে জানিয়ে দিয়েছিল যে তারা আজ ফিরে আসছে। ফারহানের কথা শোনামাত্রই সকলেই সকাল সকাল রওনা দিয়েছিলেন যার কারণে দুপুর হতেই তারা বাড়ি পৌঁছে গেলেন। মিসেস কায়নাত ভেবেছিলেন মেয়ে ফিরে এলে সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে বসে খাবেন তাই বান্ধবী কাম হবু বেয়াইনকে আজ রাতটা থেকে যেতে বলেছিলেন। বান্ধবীর অনুরোধ ফেলতে না পেরে আর অনেকদিন পর সানার সঙ্গে দেখা হবে এই ভেবে মিসেস আশাও রাজি হয়ে গেছিলেন। কিন্তু কেউ ভাবেনি সানাহ্ বাড়ি ফিরে কারোর চেহারা না দেখে সোজা নিজের ঘরেই ঢুকবে। এমন কি একবারের জন্য ফারহানের দিকে পর্যন্ত তাকায়নি।
সানাহ্ রুমে ঢুকে ঘুম ঢুলতে ঢুলতে কোনমতে হট শাওয়ার নিলো। শীতকাল হওয়ায় হট শাওয়ার নেওয়ায় আরাম লাগছে। গোসল সেরে জামা কাপড় বদলে কোনমতে চুল হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে শুকিয়েই গা এলিয়ে দিল বিছানায়। বেড সাইড ল্যাম্প অফ করে গায়ে নরম কম্বল টেনে দিল। আহা কী আনন্দ আকাশে বাতাসে। সিলেট থাকাকালীন এতদিন এরকম আরামে থাকেনি। বিছানায় শুয়েছে ঠিকই কিন্তু নিজের বিছানার মত আরাম পায়নি। উল্টো ওখানে শীত বেশি হওয়ায় শীতে কেপেছে।
মেয়েকে এভাবে উপরে চলে যেতে দেখে লজ্জিত মিসেস কায়নাত নতমুখে বললেন ‘ তুমি কিছু মনে করোনা বাবা। আমি বুঝতে পারিনি ও বাড়ি ফিরেই কোনো দিকে না তাকিয়ে সোজা ঘরে ঢুকে যাবে। জানলে ওকে আটকে দিতাম। মেয়েটা যে কিভাবে আনসোস্যাল হলো গড নোজ। আশা তুই কিছু মনে করিস না বোন। ‘
‘ আমি কিছু মনে করিনি আন্টি। সানাহ্ আসলে আনসোস্যাল নয়। সে বড্ড মিশুকে কিন্তু মানুষ বুঝে সঙ্গ দেয়। এতদিন সেরকম কাউকে পায়নি তাই মিশতে পারেনি। তবে ওর এরকম ব্যবহারের পিছনে আমি দায়ী। আজ সারাদিনে ওকে অনেক খাইয়েছি। আসার সময়ও ডিনার করে এসেছি দুজনে। আজ সানাহ্ তার ডায়েট চার্ট আর হেলদি লাইফ স্টাইল ভুলে অনেক কিছু খেয়েছে যার ইফেক্ট পড়ছে এখন। ডিনার করে যখন আমরা ফিরছিলাম তখনই ঘুমে ঢুলছিল। আসলে সারাদিন জার্নি করলো তার উপর অভ্যাসের বাইরে খাওয়া দাওয়া তো তাই। ‘ ফারহান তার মা আর মিসেস কায়নাতের উদ্দেশ্যে বললো।
‘ এসব তুই কি বলছিস কায়নাত ? তোর আমাকে সেরকম মানুষ মনে হয় ? মনে রাখিস আমি সানাহ্কে আমার ছেলের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে তাকে আমার মেয়ে হিসেবে আমার বাড়িতে তুলবো, ছেলের বউ হিসেবে নয়। আমার দুটো ছেলে। একটাও মেয়ে নেই। ফারহানের বাবা আর আমার অনেক ইচ্ছা ছিল একটা মেয়ে হবে। কিন্তু সেটা তো পুরন হয়নি। কিন্তু সানার মাধ্যমে আমার সেই ইচ্ছা পূরণ হবে। আপসোস এটাই যে ফারহানের বাবা মেয়েকে দেখে যেতে পারলেন না। ‘ মলিন গলায় বললেন মিসেস আশা।
মায়ের কথার ধরণে ফারহানের বুঝতে দেরি হলো না যে ওর মা ওর বাবার কথা মনে করে মন খারাপ করছে। বস্তুত ফারহান তার মায়ের মন খারাপ মোটেই দেখতে পারেনা। মাকে এক ফোঁটা চোখের জল ফেলতে দেখলেই তার বুক চিড়ে ব্যথা অনুভব করে। কিন্তু এখন মায়ের মন খারাপ ভাব সরাতে হলে তার মাইন্ড ডাইভার্ট করতে হবে। ফারহান মিসেস আশার মাইন্ড ডাইভার্ট করতে বললো ‘ তাহলে আন্টি এবার উঠি..… বাড়িতে কিছু কাজ আছে। সেগুলো করা দরকার। তাছাড়া কাল সকালে বেরোতে হবে। অনেকদিন তো ভার্সিটি যাইনা। ‘
‘ সেকি তুমি চলে গেলে কি করে হবে ? আমি যে ভাবলাম কাল সকালে সবাইকে নিয়ে ব্রেকফাস্ট করবো। ‘ মিসেস কায়নাত বললেন।
‘ সরি আন্টি আপনার কথা রাখতে পারলাম না। আরেকদিন সবাই একসাথে খাওয়া দাওয়া হবে। আজ থাক। অনেকদিন ভার্সিটি যাইনি তাই কাল থেকে রেগুলার হতে হবে। এত মিস দিলে বিয়ের সময় ছুটি নিয়ে প্রবলেম হবে। ‘ ফারহান একান্তই মিসেস কায়নাতের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিল কারণ এমনিতেই অনেকদিন ছুটি কাটিয়ে এসেছে। এখন আর ছুটি কাটানো যাবে না ।
ফারহানের কথা শুনে হতাশ হলেন মিসেস কায়নাত। অসহায় গলায় বললেন ‘ এত করে যখন বলছো তখন আর কি করবো। তুমি নাহয় চলে যেও কিন্তু আশাকে রেখে যাও। ও বেচারি সানার সঙ্গে এখনও কথাই বলেনি। ‘
‘ আচ্ছা ঠিকাছে কিন্তু আন্টি কাল সকালে সানাহ্ যখন ঘুম থেকে উঠবে তখন বলবেন পরীক্ষার আগে যতদিন আছে ততদিন যেন ক্লাসটা রেগুলার করে। এমনিতেই অনেক দিন গ্যাপ গিয়েছে। এখন বেশি গ্যাপ দিলে সমস্যা হবে। আর দয়া করে জিজ্ঞেস করবেন না ও এতদিন কোথায় ছিল, কি করেছে আর বাড়ি ছেড়েই বা কেন গেছে। আমি চাইনা আপনি এসব জিজ্ঞেস করুন। ব্যাপারটা একেবারেই আমাদের ব্যক্তিগত। ‘
ফারহানের বিনীত গলায় করা অনুরোধ মিসেস কায়নাতের মন ছুঁয়ে দিলো। উনি সাত পাঁচ না ভেবেই বললেন ‘ আচ্ছা ঠিকাছে তুমি যেটা বলেছ সেটাই হবে। আমরা কেউ ওকে কিছু জিজ্ঞেস করবো না। তুমি নিশ্চিন্তে যাও। তোমার হবু বউয়ের সর্বোচ্চ যত্নআত্তি করবো আমরা । ‘
ফারহান যেন মিসেস কায়নাতের কথায় সস্তির নিশ্বাস ফেলল। মুচকি হেসে বলল ‘ ধন্যবাদ আমার কথার মান রাখার জন্য। আমি তাহলে আসি আন্টি। আপনারা সবাই ভালো থাকবেন। মা ভাল থেকো। আমি আসছি তাহলে। আল্লাহ্ হাফেজ…. ‘
—-
সকাল হতেই সানাহ্ তার বই খাতা গোছানো শুরু করে দিলো। দুই একদিন কি ছিলনা এর মধ্যেই পুরো ঘর ময়লা হতে বসেছে। আজ সময় নেই বিধায় আর সেসব নজর দিলো না। কোনোমতে ব্যাগ গুছিয়ে, নিজে রেডি হয়ে ব্যাগ কাধে সিড়ি দিয়ে নেমে এলো।
মিসেস কায়নাত খাবার ঘরেই ছিলেন। বান্ধবী আশার সঙ্গে মিলে সকালের নাস্তার বন্দোবস্ত করছিলেন। সিঁড়ি দিয়ে সানাহ্কে ধুপধাপ নামতে দেখে বললেন ‘ তুই এসে গেছিস ? আয় চেয়ারে বসে খেয়ে যা। তোর আশা আন্টি তোর সঙ্গে কথা বলবে। ‘
মিসেস কায়নাতের কথায় দ্বিরুক্তি করলো না সানাহ্। সে তার কাধের ব্যাগটা সোফায় রেখে খাবার টেবিলে এসে বসলো। মিসেস কায়নাত সানাহ্কে জিজ্ঞেস করলেন ‘ এখন এত সকালে কি খাবি ? ‘
‘ দুধ দিয়ে ওটস দাও…. আসসালামু আলাইকুম আন্টি। কেমন আছো তুমি ? ‘
‘ আমি ভালো আছি। তোমার শরীর এখন কেমন লাগছে ? ইজ এভরিথিং ফাইন ? ‘
‘ অল ইজ ওয়েল অ্যান্ড ফাইন। তুমি খাবে না ? ফারহান কি কাল রাতেই চলে গেছেন ? আসলে কাল আমি এত টায়ার্ড ছিলাম যে চোখই খুলে রাখতে পারিনি। হুট করে আজ মনে পড়লো ফারহানকে কাল বিদায়ও জানাইনি। ‘
‘ হুম চলে গেছে আর যেতে যেতে তোমাকে বলে গেছে যেন এখন থেকে ভার্সিটির ক্লাসটা তুমি রেগুলার করো। অনেকদিন তো গ্যাপ গেলো..… এখন নাহয় মন দিয়ে পড়। তোমাদের বিয়ের পরপরই তো তোমার পরীক্ষা। এটা তো ফাইনাল তাই না ? ‘
‘ হ্যাঁ এটা ফাইনাল ‘
‘ তারমানে এরপর তুমি অনার্স পাস করে যাবে। তাহলে তো আরও মন দিয়ে পড়তে হয়। আমি চাই সবাই বলুক আমি উমুকের শাশুড়ী। তোমার ইচ্ছা থাকলে তুমি বিয়ের পর চাকরিও করবে। কেউ তোমাকে কিছু বলবে না। করবে চাকরি ? ‘
আশার কথায় চওড়া হাসি দিল সানাহ্। তার এই বিস্তৃত হাসি তার গালে টোল ফেলল। সানাহ্ মৃদু গলায় বললো ‘ এখনই বলতে পারছি না আন্টি। দেখা যাক কি করি..… সেটা বিয়ের পর ভাবা যাবে। ‘
‘ কী হলো কি ? শাশুড়ী বউয়েতে কি কথা হচ্ছে ? আমার বদনাম করা হচ্ছে ? ‘ মিসেস কায়নাত এতক্ষণ রান্নাঘরে রুটি সেকছিলেন। রুটি সেকা শেষে রুটিগুলো নিয়ে খাবার ঘরে এসে ঢুকতে ঢুকতে বললেন।
‘ তোমার কেন মনে হয় আমরা সবসময় তোমাকে নিয়েই ডিসকাস করি মা ? আমাদের কি আর কাজ নেই যে তোমাকে নিয়ে ডিসকাস করবো। তুমি কখনোই আমাদের ডিসকাশনের টপিক ছিলে না। ইউ ওয়ের অলওয়েজ এপার্ট ফ্রম মি ‘ গম্ভীর গলায় বললো সানাহ্।
‘ আঃ এসব কি বলছো সানাহ্ ? কায়নাত তোমার মা..… ‘ মিসেস আশা অবাক হয়ে বললেন। আশা কখনও সানাহ্কে এভাবে কথা বলতে দেখেননি। সানাহ্ বরাবরই তার মাকে সম্মান দিয়ে কথা বলে এটাই তার জানা। তাই চিরচেনা সানার অন্য রূপ দেখে কিছুটা রুঢ় হলেন। মায়ের সঙ্গে সানার এরকম ব্যবহার উনার ভালো লাগেনি।
‘ শুধু জন্ম দিলেই মা হওয়া যায় না আন্টি। আত্মার সম্পর্ক থাকা লাগে। আই থিঙ্ক সেই সম্পর্ক একমাত্র মামণির সঙ্গেই ছিল আমার। আসলে কথায় আছে মায়ের থেকে মাসীর দরদ বেশি। মায়ের এই এক্সট্রা ইন্সিকিউরিটি আর তার আমাকে নিয়ে সবসময় টেনশন করা আমাকে সিক বানাচ্ছে। এসবের জন্যই আমি বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিলাম। কিন্তু ফারহান আমাকে ফিরিয়ে আনতে গিয়েছিলেন বলে উনাকে ফিরিয়ে দেইনি। তার সঙ্গে আমার আত্মার সম্পর্ক হতে যাচ্ছে…… তাকে ফিরিয়ে দেওয়া মানে নিজেকে অপমান করা। ‘
কথাগুলো এক নিশ্বাস বলে ধুপধাপ পা ফেলে আর কোনদিকে চোখ না দিয়ে কাধে ব্যাগ তুলে বেরিয়ে গেলো সানাহ্। তার এখন এই পরিস্থিতিতে মোটেই খাওয়ার ইচ্ছা নেই। সকাল সকাল মুডটাই খারাপ করে দিয়েছে।
মিসেস কায়নাত বিমূর্ষ ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছেন সানার যাওয়ার দিকে। এমনটা অস্বাভাবিক নয়। এরকম প্রায়ই ঘটে থাকে যখন সানাহ্ বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে যায় আর তাকে আবার ফিরিয়ে আনা হয়। সবার উপর তৈরি হওয়া ফ্রাস্ট্রেশন সানাহ্ তার উপর ফেলে।
তবে আজ মিসেস কায়নাত এটাও জেনে গেলেন সানার জীবনে সে আজও মায়ের জায়গা তৈরি করতে পারেনি যেটা তার ব্যর্থতা। ফোঁস করে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন ‘ আশা তুই কিছু মনে করিস না। আসলে এখন সবকিছুর চাপ সবদিক দিয়ে আসছে তাই হুট করেই সানার মাথা গরম হয়ে গেছে। এমনিতে ও খুব ঠান্ডা মেয়ে। দেখিস না তোর সঙ্গে কি সুন্দর করে কথা বলে ? ‘
মিসেস কায়নাতের কথা শুনে মিসেস আশা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। মৃদু গলায় বললেন ‘ হুম ‘
~ চলবে ইনশাআল্লাহ্……