ভালোবাসার_রঙ ‘৩’ #Jerin_akter_nipa

0
250

#ভালোবাসার_রঙ ‘৩’
#Jerin_akter_nipa

এক সপ্তাহ পর…
রায়া প্রতিদিন বিকালে ছাঁদে যায়। আজও তার ব্যতিক্রম হলো না। দুপুরে খেয়ে বিছানায় শুয়ে কিছুক্ষণ গড়াগড়ি করে কখন যে ঘুমিয়ে গেল, টেরই পেল না। ঘুম ভাঙতে ভাঙতে বিকেল। উঠেই চোখে মুখে পানি ছিটিয়ে দৌঁড়ে ছাঁদে চলে আসে। ছাঁদের একপাশে অনেক জাতের ফুলের গাছ আছে। ছোটখাটো একটা বাগান বলা চলে। আজ বেশ কয়েকটা গাছে কলি দেখতে পাচ্ছে। কাল সকালেই ফুটবে এগুলো। গাছগুলো কাছে গিয়ে ঝুঁকে পড়ে দেখতে দেখতে হঠাৎ রায়ার মাথায় একটা অস্থির আইডিয়া এলো। সে শুনেছিল গাছগুলো নাকি ওই বদের হাড্ডি লাগিয়েছে। এহহ ঢং! ছেলে মানুষের আবার ফুল গাছের প্রতি এতো আগ্রহ কেন? গাছগুলো প্রতি কত ভালোবাসা! সকাল বিকেল পানি দেয়। কত যত্ন নেয়। রায়া মনে মনে শয়তানি হাসি দিল। বলল,
“-হো হা হা হা হা…! তোমাকে জব্দ করার এর থেকে ভালো আইডিয়া আর হতেই পারে না। আমাকে পরপর দু’টো চড় মেরেছিলে,না? এবার তোমাকে বুঝাব মজা। রায়ার সাথে লাগতে আসলে কী হয় এবার সেটা হাড়ে হাড়ে টের পাবে বাছাধন।’
-ওসব চিন্তা ভুলেও মাথায় এনো না রায়াপু।’
হঠাৎ কারো কন্ঠে ভয় পেয়ে পেছন ফিরে তাকাল রায়া। নিচের তলার নিউজকে দেখে বুকে ফুঁ দিলে বলল,
-শয়তান, আমাকে ভয় পাইয়ে দিয়েছিলি তুই। ‘
নিউজ গুলুমুলু টাইপ ছেলে। এবার সিক্স এ পড়ে। ওর ভালো নাম নাফিজ। কিন্তু সবাই নাফিজ থেকে নিউজ বানিয়ে দিয়েছে। এই নাম দেওয়ার পেছনেও কাহিনী আছে অনেক। নিউজ কোমরে হাত রেখে ভ্রু নাচিয়ে বলল,
-গাছগুলো কার জানো?’
রায়া ভাব নিয়ে বলল,
-জানব না কেন?’
-তবুও তুমি গাছের আশেপাশে ঘুরঘুর করছো!’
ঠোঁট চোখা করে সামনে এগিয়ে এসে রায়া বলল,
-হ্যাঁ করছি, তো?’
-ইহফাজ ভাইয়ার সাথে তো তোমার তেমন জমে না।’
রায়া এবার ওভার ভাব নিয়ে বাঁ হাতে সমানে আসা চুলগুলো পেছনে দিয়ে বলল,
-ওই বদের সাথে মেরে গেলেও আমি কথা বলব না। জমা জমি তো অনেক দূরের কথা।’
বাঁকা হাসছে নিউজ।
-হু… হু… তুমি যা ভাবছো,ভুলেও সেটা করতে যেও না। ইহফাজ ভাইয়ার গাছের সাথে কিছু করলে ভাইয়া তোমাকে আস্ত রাখবে না। ভাইয়া যেমন প্রতিদিন নিম পাতার রস খায়। তেমনি তুমি ওর গাছের ক্ষতি করলে তোমার রস বানিয়ে খাবে।’
রায়া মুখ ভেঙ্গিয়ে বলল,
-কচু করবে তোর ভাই। আর তাছাড়া আমি অতটাও পাষাণ নই। ওই বদের হাড্ডির জন্য বেচারা গাছ গুলোর কোনো ক্ষতি করব না। আমি তো শুধু…
বলতে বলতে থেমে গেল রায়া। এই ছেলের উপর বিশ্বাস করা যায় না। এর নামই হয়েছে নিউজ। থাকে নিচের তলায় কিন্তু পুরো তিনতলার সবার খবর রাখে সে। বয়স দশ /এগারো বছর হলে কী হবে? কাজে কামে কুটনামিতে ব্যাটা ৮০+ বুড়ো। রায়া প্রথম দিন এর নাম ‘নিউজ ‘ শুনে ছাঁদ থেকে লাফিয়ে পড়ার মত দশা হয়েছিল। কিন্তু তার কিছুদিন পর থেকে বুঝতে পারছে কেন একে সবাই নিউজ নাম দিয়েছে। নিজের ঘর থেকে শুরু করে পাড়ার প্রতিটা খবর এর কাছে পাওয়া যায়। সবাই মিলে এর একদম ঠিক নামটাই দিয়েছে।
রায়া কপাল কুঁচকে কথা ঘুরানোর জন্য বলল,
-তুই এখানে কী করছিস?’
নিউজ স্টাইল মেরে চুল ঠিক করতে করতে পা নাচাতে নাচাতে বলল,
-যেখানে কোনো নিউজ তৈরি হতে নিবে আমি তো সেখানেই থাকব।’
-এখানে কোনো নিউজ তৈরি হচ্ছে না। যা তুই, ঘরে যা। পড়াশোনা নাই তোর? সারাক্ষণ কুটনামি করে বেড়াস।’
-আপু তুমি আমার প্রফেশনকে কুটনামি বলবে না। আমি বড় হয়ে একজন জার্নালিস্ট হতে চাই। তাই ছোট থেকেই প্রাকটিস রাখছি।’
রায়া ওর কান টেনে ধরে বলল,
-ওরে আমার জার্নালিস্টরে! কুটনামি তোর একমাত্র প্রফেশন।’
-আমি কিন্তু ভাইয়ার কাছে সবকিছু বলে দিব।’
রায়া ডান ভ্রু উঁচিয়ে বলল,
-কী বলবি তুই? ‘
-বলব তুমি ওর গাছের…
-তুই যদি ওই বদের হাড্ডির কাছে টু শব্দও বলিস তাহলে আমি এই ছাঁদ থেকে তোকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিব। তারপর পাড়ায় খবর ছড়াব, তুই মনে মনে আমাকে পছন্দ করতি। আমাকে প্রপোজ করার পর আমি তোকে বুঝিয়ে শুনিয়ে না করে দিয়েছি। আর সেই দুঃখে তুই সুইসাইড করেছিস।’
-ওরে বাবাহ! চোরের উপর বাটপারি।’
হাসলো রায়া।
-তুই ফেইক নিউজ,লিক নিউজ হলেও আমি কিন্তু রিয়েল রায়া। যা বলেছি তাই করব। একচুলও এদিক ওদিক হবে না। যা এখন এখান থেকে, ভাগ।’
নিউজ দৌঁড়ে যেতে যেতে বলল,
-কাজটা ভালো করলে না রায়াপু। সময় আমারও আসবে।’
-আরে হুর… দেখা যাবে।’
রায়াও ছাঁদ থেকে নেমে এলো। ভেবে নিয়েছে সে। যা করার কাল সকালে করবে। আজ রাতটা শুধু পার হোক। পরদিন সকাল সাড়ে পাঁচটায় অ্যার্লাম সেট করে রাখল রায়া। জীবনেও সে এতো সকালে ঘুম থেকে উঠে না। কিন্তু কাল যেভাবেই হোক উঠতে হবে। ওই বদ ছাঁদে ব্যায়াম করতে যাওয়ার আগে তাকে যেতে হবে।

পরের দিন সকালে অ্যার্লামের ক্রিংক্রিং আওয়াজে ঠিক সাড়ে পাঁচ টায় রায়ার ঘুম ভাঙলো। অনান্য দিন তো অ্যার্লাম অফ করে আবার ঘুমায়। আজ রায়া তা করলো না। হুড়মুড় করে লাফিয়ে উঠে বসে। কতক্ষণ চোখ পিটপিট করে ঘরের চারদিকে দেখে দিল। চোখ কচলিয়ে বালিশের পাশ থেকে ফোন হাতে নিয়ে সময় দেখল।
-হায় আল্লাহ! পাঁচটা চল্লিশ বাজে। উঠে বসতে বসতে দম মিনিট কেটে গেল! আজ কি সময় একটু তাড়াতাড়িই পার হয়ে যাচ্ছে? না, বাবা। আর দেরি করা যাবে না। দেরি করলে তখন আবার ছাঁদে গিয়ে দেখব ব্যাটা বদ নিম পাতার রসের গ্লাস হাতে ছাঁদ জুড়ে পায়চারি করছে।’
বিছানা ছেড়ে নামতে নামতে ব্যস্ত হাতে ওড়না টেনে নিল রায়া। উসকোখুসকো চুলে তৈলাক্ত মুখেই ছাঁদে যাওয়ার জন্য দৌড় দিল।

ইহফাজ মসজিদ থেকে ফজরের নামাজ পড়ে এসেছে। এসেই টেবিলের উপর রাখা গ্লাস হাতে নিয়ে ছাঁদের দিকে যেতে লাগল। প্রতি দিন সকালেই ছাঁদে যায় সে। এই সুযোগে গাছগুলোও দেখা হয়। আবার একটু হাঁটাহাটিও হয়ে যায়। গাছগুলো তার ভীষণ প্রিয়। সে নিজের হাতে লাগিয়েছে। এখন তো ফুল দিতে শুরু করেছে। ফুল ভর্তি গাছগুলো দেখলে মনে অন্য রকম একটা শান্তি পায় সে। তার এমন শখ দেখে আপু সুযোগে পেলেই খোঁচা দেয়। হাসাহাসিও কম করে না। আপু হাসুক তাতে তার কিছু আসে যায় না। প্রতিটা মানুষের শখ আলাদা। একেক জন একেক কাজ করে আনন্দ পায়। ছাঁদের ছোট দরজাটায় পা দিয়ে ইহফাজ গ্লাসে এক চুমুক দিল। পরমুহূর্তে তার শখের গাছগুলোর দিকে তাকিয়ে মুখ থেকে সবটুকু রস ছলকে পড়ে গেল। চোখ বড় বড় করে হাঁ করে দাঁড়িয়ে রইল সে। দুমিনিট নড়ার মত শক্তি পেল না। আজ একটা গাছেও একটা ফুলও নেই। কেউ ফুল গুলো তুলে নিয়ে গাছগুলোকে সাফ করে দিয়ে গেছে। চোয়াল শক্ত হয়ে গেল ইহফাজের। কিড়মিড় করে সে বলতে লাগল,
-কার এত বড় সাহস! আমার গাছের ফুলে হাত লাগিয়েছে কে? নিচের তলার নিউজ করেছে? না। নিউজের এত সাহস নেই। ও খুব ভালো করেই জানে গাছগুলো আমার। তাহলে কে করেছে এই কাজ? নিচের ফ্ল্যাটে নিউজ ছাড়া আর কোন বাচ্চাকাচ্চা নেই। দোতালায়ও তো কোন বাচ্চা নেই।’
চোখ বন্ধ করে কিছু ভাবলো ইহফাজ।
-দোতালায় বাচ্চা না থাকুক। এক শয়তান তো আছে। এটা ওই শয়তানেরই কাজ। ওই ফাজিল মেয়েকে ছাড়া এই কাজ কেউ করবে না।’
-তুমি ঠিকই ভাবছো ভাইয়া।’
পেছন থেকে নিউজ কথা বলে উঠল। ইহফাজ স্পষ্ট বুঝতে পারছে তার সাথে লেগে না পেরে মেয়েটা তার গাছগুলোর উপর দিয়ে রাগ ঝেড়েছে। ইহফাজ ছাড়বে না ওকে। হাত, পা ভেঙে দিবে। যেন আর কখনও ছাঁদে আসতে না পারে। ফাজিল মেয়ে পেয়েছেটা কি? ও কিছু বলছে না বলে, যা ইচ্ছা তাই করবে? আজ তো ওকে কিছুতেই ছাড়বে না। ইহফাজ নিউজের দিকে ফিরে বলল,
-তুই দেখেছিস, ওই মেয়েটাই করেছে?
আমতা আমতা করে নিউজ বলল,
-কাল সন্ধ্যায় দেখেছিলাম রায়া আপু তোমার গাছগুলোকে কীভাবে কীভাবে যেন দেখছিল। আমার তখনই সন্দেহ হয়েছিল, আপু কিছু একটা তো করবেই।’
-ওই মেয়েরই কাজ এটা। ফাজিল মেয়েটাকে আমি খুব ভালো করেই চিনি।
আগুনে ঘি ঢেলে দেওয়ার কাজটা নিউজ করে দিল।
-দেখলে ইহফাজ ভাই, আপুর কত সাহস। আমরা কেউ একটা ফুল ছিড়তে সাহস পাই না। আর আপু সব গাছ খালি করে দিয়ে গেল। ওয়াহ! ওয়াহ! ওয়াহ!’ থুতনি চুলকিয়ে আপন মনে নিউজ বলল,
-আমার একটা প্রশ্ন। আচ্ছা, আপু সকাল সকাল এতো ফুল দিয়ে কী করবে? এটা তো ফেব্রুয়ারি মাস,না? ইহফাজ ভাই, আজ কয় তারিখ গো?’
ইহফাজ আগুন চোখে নিউজকে দেখল। কটমট করে বলল,
-তোর ওই সাহসী আপুর সব সাহস আজ আমি বের করব। ওর সাহস বের করার পর ফাটা বেলুনের মত যদি চুপসে না যায়,না? তাহলে আমার নামও ইহফাজ না। তুই আয় আমার সাথে।’
ইহফাজ আগে আগে সিঁড়ি দিয়ে নেমে আসছে। নিউজ দৌঁড়ে পেছনে আসতে আসতে বলল,
-তাহলে ইহফাজ ভাই, সকাল সকাল একটা ব্রেকিং নিউজ বানাতে পারবো তো?’
-শুধু ব্রেকিং নিউজ না। তাজা নিউজ, মাসালা নিউজ,গরম নিউজ সব বানাতে পারবি।’
মনের রাগ মনে চেপে রেখে ইহফাজ দোতলায় যাচ্ছে। ওদিকে রায়া জানেই না কোন ঝড় তার দরজায় এসে টোকা দিচ্ছে।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here