#লবঙ্গ_লতিকা
#নুজহাত_আদিবা
পর্ব ২১
সাদের পড়াশোনার পর্ব শেষ। পড়াশোনা শেষ করে এখন একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে জব করছে। আঙুর বালা ইনিয়ে বিনিয়ে অনিতাকে সাদ আর তমার রিসিপশনের ব্যাপারটা মনে করিয়ে দিলেন। অনিতা ভেবে দেখলেন আসলেই সাদ আর তমা দুজনেই এখন বড় হয়ে গেছে। তমারও আঠারো বছর হয়ে গেছে। তাই এখন বড় করে রিসিপশনের অনুষ্ঠান করাই যায়। ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিলেন আজই মহসীন খানের সঙ্গে ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনা করবেন।
আলতা পায়ে পুকুরে পা ডুবিয়ে বসে রয়েছে এক তরুনী। কিশোরী থেকে তরুনীতে রূপান্তরিত হওয়া মেয়েটি আসলে তমা! চঞ্চলতা আগের থেকে বেশ খানিকটা কমে গেছে। খুব বুদ্ধিমতী আর গুছানো প্রকৃতির মানুষ তমা। আগের মতো লাপ-ঝাপ দৌড়দৌড়ি সব একেবারে বাদ।
আঙুর বালাকে অনিতা রাতে ফোন দিয়ে চলে আসতে বললো। মহসীনের সাথে তাঁর আলোচনা শেষ। সাদ এখন প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে গেছে। তাই এখন ওরা এক সাথে থাকতেই পারে।
সকালে তমাকে আর অনিতাকে ট্রেনে উঠিয়ে দিলো রাফসীন। বাসেই যাওয়ার ইচ্ছে ছিল। তবে আঙুর বালার পছন্দ ট্রেন। তাই, ট্রেনে করেই যাচ্ছে তাঁরা। রাফসীনরা, আর তমার পরিবার ঢাকা যাবে আরো দু’একদিন পরে। আগে আঙুর বালা গিয়ে তমার আর সাদের রিসিপশনের ডেট ঠিক করুক। তারপর সবাই একসাথে যাবে।
জানালার পাশের সিটটাই বেছে নিয়েছে তমা। পাশে আঙুর বালা বসে আছে। তমা চুপ করে জানালার পাশে হেলান দিয়ে পুরনো অতীতে ফিরে গেল। কত মায়া কত স্মৃতি জমা আছে সেখানে।
সাদ তখন ইন্টার পরীক্ষা দিয়ে গ্রামে ঘুরতে এসেছে। মহসীন খান আর অনিতা সেবার আসেনি। সাদ একাই এসেছিল। সাদ এসেই রাফসীন চাচার সঙ্গে বাজার করতে গেল। এক গাদা বাজারের বস্তা নিয়ে বাড়ি ফিরে এলো। এসেই বাজারের ব্যাগ নিয়ে বাড়িতে ঢুকেই জোরেশোরে আছাড় খেল! কী একটা অবস্থা! এত বড় ছেলে আবার মাটিতে আছাড় খায় কীভাবে? বাড়ির কাজের লোক সকালে পানি দিয়ে ঘর পরিস্কার করছিল। কিন্তু কে জানতো? সাদ তখন বাড়িতে আসবে। আর জোরেশোরে আছাড় খেয়ে মাটিতে পরবে?
তমার চোখে সাদের আছড়ে মাটিতে পরার দৃশ্যটা ভেসে উঠতেই তমা খিটমিটিয়ে হেসে উঠলো। আঙুর বালা তমার হাসি দেখে বিরক্ত হয়ে বললো,” পাগল হইসোস নি?একলা একলা হাসোস কার লগে?” তমা কোনো জবাব দিলো না। চুপচাপ বসে রইলো। জানালার পাশে মাথা ঠেকিয়ে ঘুমু চোখে কয়েকবার তাকালো। এরপরে ঘুমের রাজ্যে তলিয়ে গেল।
রেলস্টেশনে নেমেই আঙুর বালা আর তমা দেখলো মহসিন খান মা আর ছেলের বউকে নেওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে আছে। তমা মাথা নিচু করে সালাম দিলো। সেখান থেকে বাসে করে বাড়িতে পৌঁছাল তমা। কতবড় শহর! কত কত মানুষ! এত বড় বড় দালানকোঠা! তমা অবশ্য আগে আরো দু’বার শহরে এসেছিল। মায়ের শরীর খারাপ করেছিল। তাই চিকিৎসার জন্য এসেছিল।
বাড়িতে পৌঁছে আঙুর বালা আর তমাকে নিয়ে দো”তলায় উঠলো মহসীন। কলিংবেল বাজিয়ে খানিকটা সময় দাঁড়াতে হলো। অনিতা এসে গেট খুলে দিয়ে আঙুর বালাকে সালাম দিলো। তমা অনিতাকে সালাম দিয়ে ভয়ে ভয়ে বাড়ির ভেতরে ঢুকলো। দরজা দিয়ে ঢুকতেই আগে ড্রয়িং রুম পরে। এরপর বাকি ঘরগুলো। তমা একটা ঘরে টুপ করে উঁকি দিয়ে দেখলো। হুম, খুব সুন্দর! কিন্তু, গ্রামের ঘরগুলোর মতো এত এত বিশাল বিশাল ঘর নেই।
তমা আর আঙুর বালা অনিতা, মহসীন সবাই একসঙ্গে খাবার খেয়েছে। মহসীন খাওয়া দাওয়া শেষ করে বাইরে বেড়িয়ে গেছে। অনিতা আর আঙুর বালা গল্প করছে। আঙুর বালা পানের ডাবা থেকে পান খাচ্ছে। তমা অনিতার মাথার কাছে বসে বসে তাঁদের গল্প শুনছে। আর আঙুর বালা জানালার কাছে বসা।
কলিংবেলের আওয়াজ পেতেই অনিতা তমাকে গেটটা খুলে দিয়ে আসতে বললেন। তমা গেট খুলতেই দেখতে পেল। টাক মাথার একটা লোক দাঁড়িয়ে আছে।মাথায় লাল লাল রক্তের ন্যায় কিছু ছড়িয়ে আছে। তমা ভয়ে ভয়ে বললো,” জি বলুন।”
লোকটি রাগান্বিত গলায় বললো,” এই বাসায় পান খায় কে?”
তমা ভীত গলায় বললো,” কেন?”
লোকটি নিজের মাথার দিকে আঙুল দেখিয়ে বললো,” রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম। এই বাড়ির জানালা দিয়ে একজন আমার মাথায় পানের পিক ফেলেছে। এত বড় সাহস! এটা কেমন আচরণ? জানালা দিয়ে ময়লা ফেলা কেমন ভদ্রতা?”
তমা ক্যাবলা কান্তের ন্যায় লোকটির দিকে তাকিয়ে আছে। বজ্জা/ত বুড়ি ছাড়া আর কারোর কান্ড নয় এটা! বুড়ি সবসময় তমাকে বিপদে ফেলে। আজ কী করলো! একটা টাকলু লোকের মাথায় পানের পিক ফেলে মাথা লাল বানিয়ে দিয়েছে। ছিহ! কী একটা অবস্থা!
চলবে…