অচেনা তুমি পর্বঃ৩০

0
1515

#অচেনা_তুমি
#লেখিকাঃমহিমা_হাছনাত_মাহি
#পর্বঃ৩০

আকাশে পূর্ণ থালার ন্যায় চাঁদ উঠেছে। চারদিকে ঝি ঝি পোকার ডাক। তার সাথে আমের মুকুলের সুগন্ধি মেশানো মৃদু বাতাশ। এমনই এক রোমাঞ্চকর পরিবেশে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে নাদিম আর কুবরা।

নাদিমঃ এই নাও কুবরা। ( সাদাফের দেওয়া টাকা টা)

কুবরাঃ না না আমি নিবো না। সব তো আপনিই সাজিয়েছেন। আমাকে তো কিছুই করতে দেননি। তো আমি নিজে কি করবো । আমি তো যাস্ট একটু সাঙ্গ দিয়েছি আপনার।

নাদিমঃ তবু সাঙ্গ তো দিয়েছো। আর আমার কি টাকা কম আছে নাকি। তুমি ওর শালি। আর শালিরাই তো দোলাভাইদের কাছ থেকে ঘর সাজানোর টাকা আদায় করে।

কুবরাঃ না না। আমি তো পেয়েছিই। অইযে গেট ধরেছিলাম। ওকখান থেকে আমরা ৫ জনে ভাগ করে নিয়েছি আমার আর লাগবে না।

নাদিমঃ না তুমি নিবে। ওইগুলো তো ভাগাভাগি হয়ে গিয়েছে। তুমি এটা পুরোটা নাও। নিচে কেউ দেখবে বলে তোমায় এখানে ডেকে আনা।

কুবরাঃ না নিবো না। রাখুন ( এই বলে নাদিমের দিকে এগিয়ে দেয়) ।

নাদিমঃ না তুমি নিবে। ( কুবরার দিকে এগিয়ে দেয়)

কুবরাঃ না নিবো না।

নাদিমঃ নিবে নিবে নিবে।

কুবরাঃ নিবো না, নিবো না, নিবো না।

এই বলে দুজনের মধ্যে টাকা নিয়ে টানাটানি শুরু হয়ে যায়। টানতে টানতে এক পর্যায়ে নাদিম ইচ্ছে করেই কুবরাকে নিজের দিকে টেনে নিয়ে আসে। আর কুবরা ও টাল সামলাতে না পেরে নাদিমের উপর হুমড়ি খেয়ে পড়ে একেবারেই মিশে যায়।

দুজনের মধ্যে পিনপতন নীরবতা। রাতের আধারেও পূর্নিমার আলোয় নাদিম কুবরার লেপ্টে যাওয়া ওয় কাজল মাখানো ওই ক্লান্ত মাখানো চোখজুড়া স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে। দুজন দুজনের মধ্যে শুধুমাত্র নিশ্বাসের গভীর আলোড়ন ছাড়া আর কিছুই শোনা যাচ্ছে না। সময় যতো এগুচ্ছে নিশ্বাস যেন আরো ভারী হয়ে আসছে। তবু চেয়ে থাকার নেশাডুর থেকে মন সরতেই চাইছে না।

নাদিমঃ কি মনে করো কি তুমি? আমার চেয়ে তোমার শক্তি বেশি? পেরে উঠতে পারবে বলে ভাবো বুঝি?

কুবরা কিছু না বলে নাদিমের দিকেই চেয়ে আছে এখনো।

নাদিমঃ তবে কি জানো তো… এক মূহুর্তে এসে আমি খুব দূর্বল হয়ে পড়ি।কখন জানো?? যখন তুমি আমার সামনে থাকো.. যখন তোমার ওই টোল পড়া হাসিটা দেখি। যখন এভাবেই তুমি অপলকভাবে আমার দিকে তাকিয়ে থাকো। বিশ্বাস করো কুবরা এই সব কিছু না আমার এখানে গিয়ে লাগে। ( বুকের বা পাশে হাত দিয়ে) ।

কুবরা লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে।উপর দিয়ে যতোই ঝগড়া করুক না কেন, কবে যে এই ঝগড়া করতে করতেই এই নাদিম নামক প্লে বয়কে চরম ভাবে ভালোবেসে ফেলেছে সে নিজেরেই অজানা। তবে এটা সত্য যে কুবরা নিজেও জানে নাদিম ও তাকে সমান ভাবে ভালোবাসে। আর এসবের প্রমান সে, কুবরার জন্য অন্য জনের প্রতি জেলাস, কুবরার সব আবদার পূরন করা, তাকে খেয়াল রাখা, মন ভালো করা এসব থেকেই যথেষ্ট ভাবে পেয়েছে।

আর নাদিম ও জানে কুবরা নাদিমকে ঠিক কতোটা ভালোবাসে। অন্য কোনো মেয়ের সাথে ভুলেও কথা বলে ফেললে ম্যাডাম দুদিন পর্যন্ত নাক,গাল ফুলিয়ে বসে থাকে, অন্য মেয়েদের সাথে কথা বলতেই বারন করে, এমনকি সপ্তাহে কয়েকবার নাদিম বাড়িতে আসলে কুবরা নিজের হাতে পছন্দের নাস্তা বানিয়ে রাখে তার জন্য। তার ওপর নাদিকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতে গিয়ে ধরা খেয়ে যায় সে।

এ থেকে বুঝা যায় দুজন দুজনের ভালোবাসায় ঠিক কতোটা মত্ত। তবু মুখ ফুটে কেউই কাউকে বলে নি এখনো। নিজের মনে নিজেরাই একে অপরের প্রতি ডুবে থাকে।

কুবরাঃ বলছি যে, অনেক রাত হয়েছে। ছাড়ুন নিচে আম্মু খুজবে।

নাদিমঃ উহু ছাড়বো না। আজ একদমই মন চাইছে না।
কুবরাঃ আমি কিন্তু চিল্লাবো এখন।

নাদিমঃ চিল্লাও আমি কি মানা করেছি? তুমি ভাবছো আমায় সবাই খারাপ বলবে? উহু… ম্যাডাম…. এক্কেবারে বিয়ে দিয়ে দিবে। ( কুবরার কানের কাছে এসে)

কুবরা লজ্জায় আর স্থির হয়ে সেখানে দাঁড়িয়ে থাকতে পারলো। নাদিমের বাধন হালকা হতেই দৌড়ে চলে আসে।

নাদিমঃ আরে… টাকা টা.. কুবরা…যাহ চলে গেলো? এই মেয়ের কি শুধু আমার কাছেই আসলে দুনিয়ার সব লাজ লজ্জা ভর করে? বুঝিনা আমি। বাচ্চাদের মতো শুধু পালাতে থাকে।

এদিকে কুবরা নিজের রোমে এসে দরজা বন্ধ করে হাপাতে থাকে। আচ্ছা লোকটার কি একটুও লাজ লজ্জা নেই। সোজা বিয়ে!! ইসসস ( বলেই দুই হাত দিয়ে মুখটা ডেকে নেয়) তবে নাদিমের সাথে বিয়ের কথা শুনে মনে কোথাও যেন খুব ভালোলাগা কাজ করছে। থেকে থেকে মনে মনে মুচকি হাসছে শুধু। এরপর আলমারি থেকে কাপড় নিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসে ঘুমিয়ে পড়ে।

🌄🌄🌄

ভোর ৫ টা নাগাত চারদিকে আজানের সমাগম। পাশের মসজিদের আজানের ডাকে ঘুম ভেঙে যায় শুভ্রার। ঘুম থেকে উঠে মাথা তুলে দেখে সাদাফের বুকে পরম আবেশে শুয়ে আছে শুভ্রা। ড্রিম লাইটের শুভ্র আলোতে সাদাফের ঘুমন্ত মুখটা আবছা আবছা লাগছে। বিয়ের সারাদিনের ক্লান্ততা যেন এই গভীর ঘুমের মধ্যে দিয়ে বিদায় জানান দেয়। শুভ্রা উঠে সাদাফকে আস্তে আস্তে ডাকতে থাকে।

শুভ্রাঃ এই যে.. আজান দিচ্ছে উঠোন।

সাদাফঃ উমম… শুভি… আজকেও। চলো আরেকটু ঘুমাই।

শুভ্রাঃ এই একদম উল্টো পালটা কথা বলবেন না। নো এক্সকিউজ ফর প্রেয়িং। উঠোন উঠোন দেখুন আলো হয়ে যাচ্ছে। এখন কাজা হয়ে যাবে।

সাদাফঃ তুমিও না শুভ্রা। অক্কে উঠছি ম্যাডাম। আজ কতো বউ বউ লাগছে আমার শুভিকে ( গাল দুটো টেনে)

শুভ্রাঃ বউ বলেই বউ লাগছে, বোঝলেন মশাই!!এখন উঠোন। আমি ফ্রেশ হয়ে আসি ততোক্ষনে।

মিনিট দশেক পর শুভ্রা ফ্রেশ হয়ে এসে ওযু করে নামাজ পড়তে দাঁড়ায়। ততোক্ষণে সাদাফ ও ফ্রেশ হয়ে মসজিদে চলে যায়।

মসজিদ থেকে নামাজ শেষ করে এসে দেখে শুভ্রা ও নামাজ শেষ করে শাড়ি পড়ে আয়নার সামনে চুল মুচছে।

লালের মধ্যে সবুজ পাড়ের শাড়ি তার উপর হাটু পর্যন্ত উন্মুক্ত খোলা চুল গুলো থেকে টপটপ পানি বেয়ে পড়ছে। এই প্রথমবার সাদাফ শুভ্রাকে মাথায় উড়না ছাড়া দেখছে। কাল রাতে যা দেখেছে তাও চুল বাধারত অবস্থায়। শুভ্রার চুলের গড়ন আর নতুন বধুময় বেশের এই চাকচিক্য দেখে সাদাফের মুখ থেকে আপনা আপনি বেরিয়ে আসে “”মাশাআল্লাহ…. “”।

চুল মুছতে মুছতে পেছন থেকে সাদাফের গলার আওয়াজ শুনে শাড়ির আচল দিয়ে মাথায় কাপড় দিয়ে শুভ্রা। সাদাফ এগিয়ে আসে মাথা থেকে শাড়ির আঁচলটি নামিয়ে নেয়।

সাদাফঃ আর কি হবে মাথায় কাপড় দিয়ে। তোমার ওই ঘায়েল করা সুদীর্ঘ কেশলয় তো দেখেই ফেলেছি শুভি। আজ এই খোলা চুলে তোমায় বেশ অন্যরকম লাগছে। বলতে গেলে এক লাল টুকটুকে ছোট্ট লাল পরী।

শুভ্রাঃ আসলে আমি তো এর আগে শুধু আম্মু আব্বু আর কুবরার সামনে ছাড়া আর কারো সামনেই মাথা থেকে কাপড় নামাই নি। তাই ….

সাদাফঃ এখন তো আমি তোমার বর। বাইরের কেউ তো আর নই না?? কাল পর্যন্ত নাহয় বাইরের লোক ছিলাম। তুমি এখন নির্দিধায় চুল ছেড়ে রাখতে পারবে। ( শুভ্রার হাত থেকে টাওয়াল টা নিয়ে সাদাফ নিজে মুছে দিতে দিতে)

সাদাফ পেছন থেকে শুভ্রার চুল মুছে দিচ্ছে আর শুভ্রা সামনের আয়না দিয়ে সাদাফের কান্ড দেখছে। সাদাফকে দেখে এক মূহুর্তের জন্য যেন তার বাবার কথা মনে পড়ে গেলো। এতোগুলো চুল শুভ্রা মুছতে সামলে উঠে পারতো না বলে তার বাবা রোজ গোসলের পরে চুল মুছে দিতো। বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে শুভ্রার নিজ থেকেই সামলানো শিখে যায়। সাদাফের মধ্যে যেন তার বাবারই যত্নের প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে।

সাদাফঃ শুভি একটা কথা বলবো??

শুভ্রাঃ হুম বলুন।

সাদাফঃ তোমায় না খোলা চুলে খুব সুন্দর লাগে। এর পর থেকে আমার সামনে না হয় এই খোলা চুলেই থেকো? ( শুভ্রাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে)

শুভ্রাঃ আচ্ছা ঠিক আছে থাকবো। এবার হয়েছে ছাড়ুন, চুল শুকিয়ে গেছে নাস্তা বানাতে হবে আমার।

সাদাফঃ উফফফ তোমার এই পালাই পালাই অভ্যাস টা কি বিয়ের পরেও যাবে না শুভি? এখনো??

শুভ্রাঃ মাগো… যেভাবে বলছেন যেন একদম দু/তিন বছর হলো আমাদের বিয়ে।

সাদাফঃ আমার তো মনে হচ্ছে দু/তিন বছর হলেও তুমি এরকম পালাই পালাই করবে। যেমনটা শুরু থেকে করে এসেছো।

শুভ্রাঃ আচ্ছা তা না হয় দেখা যাবে। এখন তো ৭ টা বাজে না? সবাই তো উঠে পড়বে। আমাকে নাস্তা বানাতে হবে তো। সবাই মেহমান রা পরে যদি আপনাদের বউয়ের বদনাম করে তখন ভালো লাগবে তো?

সাদাফঃ আমার বউয়ের কোনো কালেই কেউ বদনাম করবে না। আমার বউটা এত্তো ভালো। যাও। নতুন বউমা! ( শুভ্রার কপালে উষ্ণ এক ভালোবাসার পরশ দিয়ে)

শুভ্রা রেডি হয়ে নিচে এসে দেখে ইলিয়ানা রান্নাঘরের তাকের উপর এদিক ওদিক তাকাচ্ছে আর হাতে একটা ফ্রাইপেন নিয়ে চুলায় নাড়াচ্ছে । আজ আচমকা ইলিয়ানাকে রান্নাঘরে দেখে শুভ্রা যেন আকাশ থেকে পড়ে। আর কি কি করে অবাক করে দিবে মেয়েটা সবাইকে। যে মেয়ে এক গ্লাস পানিও অর্ডার করে খেত আজ স্বয়ং সে রান্নাঘরে!

শুভ্রাঃ ইলু আপু! তুমি এতো সকাল সকাল রান্নাঘরে? কিছু লাগবে?

ইলিয়ানাঃ আরে শুভ্রা তুমি? আজ এতো সকাল সকাল উঠতে গেলে কেন? নতুন বউ আর সকাল সকাল রান্নাঘরে চলে এলে? এমনিতেই কাল কতো ধকল গেলো তোমার উপর। আরো কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নিতে পারতে।

শুভ্রাঃ সে আর নতুন কি। আমি কি আর পুরাতন কেউ? তারাতাড়ি উঠে সকলের জন্য নাস্তা বানানো তো আমার বরাবরেরই অভ্যাস। তা তোমার কিছু লাগবে? আমায় বলো আমি দিচ্ছি।

ইলিয়ানাঃ আসলে আজ আমি চেয়েছিলাম যেন আমিই সকলের জন্য নাস্তা বানাইব। প্রতিদিন তো তুমিই বানাও। আজ যেহেতু তোমার বিয়ের প্রথম দিন তাই ভেবেছি আমিই বানাই। কিন্তু আমি তো রান্নার “র” ই জানি না। এখানে এসে ঝামেলায় ফেসে গেলাম।

শুভ্রাঃ আচ্ছা আচ্ছা। সমস্যা নেই। চলো আজ আমি তোমাকে শিখিয়ে দিই। এরপর নাহয় তুমি নিজের রান্না করবা।

ইলিয়ানাঃ সত্যিই?? তুমি আমাকে সত্যিই আমাকে শেখাবে? উফফ তুমি কত্তো ভালো ( বলেই শুভ্রাকে জড়িয়ে ধরে ইলিয়ানা)

এই প্রথম মনে হয় ইলিয়ানা শুভ্রার কাছে এসেছে। ইলিয়ানার জড়িয়ে ধরাতে কেমন জানি মনে হলো তার এক বড় বোন তাকে জড়িয়ে ধরেছে।

শুভ্রাঃ চলো আসো। এখন সবাই উঠে যাব। তাড়াতাড়ি করতে হবে। আজ এমনি লেট হয়ে গিয়েছে।

কিছুক্ষন পর সাদাফের মা হায় তুলতে তুলতে রান্নাঘরে ঢুকেন। সাথে ইলিয়ানার মা ও। দুজনেই রান্নাঘরে ইলিয়ানা আর শুভ্রাকে দেখে আকাশ থেকে পড়ে। বিশেষ করে ইলিয়ানার মা।

ইলিয়ানার মাঃ বুবু!! আমি সত্যিই দেখছি তো। এটা আমার মেয়ে?

সাদাফের মাঃ আমিও তো তাই দেখছি আর কি। ইলিয়ানা রান্নাঘরে? তাও শুভ্রার সাথে?

ইলিয়ানাঃ এভাবে অবাক হওয়ার কি আছে? কেন আমি রান্না কর‍তে পারি না? নাকি খাবে না? আমি তো যাস্ট শুভ্রাকে হেল্প করছি। কিছু তো পারিই না।

সাদাফের মাঃ তা তো খুব ভালো কথা মা রে। এতোদিন যেভাবে চলেছিস এভাবে কি থাকা যায়? দেখ তোকে এখন দেখতেও কতো সুন্দর লাগছে আর আমাদের সাথে হাসি খুশি থাকায় আমাদেরও কতো ভালো লাগছে। ( ইলিয়ানার মাথায় হাত বুলিয়ে)

ইলিয়ানাঃ আর তা কি এমনি এমনি। আমাদের শুভ্রা আছে বলেই তো হলো। শুভ্রাকে দেখেই আমি বুঝতে পেরেছি যে আমি যেভাবে চলতাম এভাবে শুধু বদনাম আর বিপদ আয় করা যায়। নচেত আর কিছু নয়। ( শুভ্রাকে এক হাত দিয়ে জড়িয়ে)

সাদাফের মাঃ আর তুই ও বলি হারি। আজকের দিনে ও তোকে সকাল সকাল উঠে পাকনামি কে করতে বলেছে শুনি? আমরা আর কি জন্য আছি? কাল সারাদিন কতো ধকল গেছে বলতো তোর উপর।

শুভ্রাঃ ও আর কিছু না। এ তো সব তো রেডি প্রায়। তোমরা যাও বসো আমরা সার্ভ করে দিচ্ছি।

৮ টা বাজতে বাজতে সকলে ড্রইং রুমে চলে আসে। সকলে তো নতুন বউয়ের রান্না খেয়ে প্রশংসায় পঞ্চমুখ।

পারভেজর মাঃ বাহ শুভি শশুর বাড়িতে এসে তো রান্নায় তুই মা কেও ছাড়িয়ে গিয়েছিস বলতে হয়।

শুভ্রাঃ আমি কি আর আম্মুর সমান হতে পারি। সব কিছু তো তোমার আর আম্মুর কাছ থেকেই শেখা। আর ইলু আপু হেল্প না করলে তো এতোকিছু এতো তাড়াতাড়ি হয়েও উঠতো না।

শুভ্রা ইলিয়ানার কথা বলায় পারভেজ খাওয়া থেকে মুখ তুলে এক পলক শুভ্রার পাশের জনের দিকে তাকাতেই দেখে কালকের সেই বোরখা পরিহিতা। দুজনের চোখাচোখি হতেই চোখ নামিয়ে ফেলে সে।

পারভেজের মাঃ বাহ ভারি মিষ্টি তো দেখতে তুমি। কি নাম তোমার।
ইলিয়ানাঃ জ্বি আমার নাম সামিরা বিনতে ইলিয়ানা।
পারভেজের মাঃ খুব সুন্দর। তো তুমি বুঝি জামাইয়ের বোন হও?
ইলিয়ানাঃ জ্বি আন্টি সাদাফ ভায়ার খালাতো বোন হই।

ইলিয়ানার হবভাব আর কথাবার্তা পারভেজের মায়ের খুব মনে লাগে। বিশেষ করে ইলিয়ানার ওই গোলগাল মিষ্টি চেহারা। ক্ষনে ক্ষনে খাওয়ার ফাকে তিনি শুধু ইলিয়ানার দিকেই তাকাচ্ছেন।

খাওয়াদাওয়া শেষে প্রায় সকল মেহমানরা চলে যায়। পারভেজ রা ও চলে যেতে চেয়েছিলো কিন্তু প্লেনের ফ্লাইট কালকের আগে হবে না। তার মা গাড়িতে বেশি জার্নি ও করতে পারে না বিধায় আজও তাদের এখানে থাকতে হচ্ছে।

বিকেলের দিকে পারভেজের ভালো না লাগায় একটু ছাদে আসে । ছাদের একটা চেয়ারে বসে মোবাইলে ফেসবুক স্ক্রল করছিলো সে। হঠাত করে সকালে তার মাকে বলা ইলিয়ানার নাম টা মনে পড়ে। কিসের তাড়নায় ফেসবুকে ইলিয়ানার নাম টা সার্চ৷ করে তার আইডি বের করে ফেলে সে। আইডি এসেছে ঠিক তবে প্রফাইলে কোনো ছবি নেই অথচ ২০ হাজারের ও বেশি ফলোয়ার। এতো ঘাটাঘাটি করার পরে না পেলো কোনো পোস্ট না পেলো তার কোনো ছবি। তবে তাকে এটাই বেশি অবাক করাচ্ছে যে এই যুগে এসে কেউ ফেসবুক ইউজ করা সত্ত্বেও না আছে কোনো পোস্ট না ছবি। তাহলে এতো ফলোয়ার কিভাবে?

কিছুক্ষণ বসার পর ছাদে ইলিয়ানা,শুভ্রা,কুবরা,সাদাফ, আর নাদিম ও উঠে। আবির দুপুর থেকে তার এক বন্ধুর সাথে বেরিয়েছে বেড়াবে বলে।

কুবরা তো কাল রাতের পর থেকে যথারীতি নাদিমের থেকে দূরে দূরে থাকছে। লজ্জায় তার সামনে ও যেতে পারছে না। এদিকে নাদিম সকাল থেকে কুবরার পেছন পেছন ঘুরছে তো নাগালই পাচ্ছে না।

ছাদে উঠার পর সাদাফ আর শুভ্রা ছাদের পাশে একটা দোলনায় বসে। কুবরা শুভ্রার মোবাইলটা নিয়ে একদম টপ ফ্লোরে উঠে ছবি তোলার জন্য। সাদাফের বাবা শুভ্রাকে যে আইফোন টা দিয়েছিলো সেটাই। কুবরা তো সারাক্ষন এটা নিয়ে ছবি তুলতে থাকে। নাদিম এই সুযোগে কুবরার পিছু পিছু সেখানে চলে যায়।

নাদিমঃ এই তোমার সমস্যা কি বলোতো?

কুবরা পেছনে ফিরে দেখে নাদিম ভ্রু কুচকে কিঞ্চিৎ বিরক্তিমাখা মুখে বুকে হাত গুজে কুবরার দিকে তাকিয়ে আছে।

কুবরাঃ সমস্যা আমার আবার কি সমস্যা হবে?

নাদিমঃ তো সকাল থেকে এভাবে এদিক ওদিক পালাচ্ছো কেন? ( সামনে এগোতে এগোতে)

কুবরাঃ পালাবো? আশ্চর্য! আপনি কি বাঘ নাকি ভাল্লুক যে আমি ভয় পেয়ে পালাবো?

নাদিমঃ তাই? তাহলে এভাবে পিছিয়ে যাচ্ছো কেন?

কুবরাঃ আপনি এগোচ্ছেন তাই…. ( কুবরার পিঠ দেওয়ালে ঠেকে যায় একেবারে)

নাদিমঃ বাঘ ভাল্লুক নাই হলাম। হতে পারে এর চেয়েও বড় কিছু। ( কুবরার কানের কাছে এসে)

নাদিমের এই কাছে এসে ফিসফিসিয়ে বলা কথা সবসময় কুবরার সারা শরীরে শিহরণ জাগিয়ে তুলে। আর নাদিম এটা ইচ্ছে করেই এমন করে যার কারণ কুবরার ওই ভয়ার্ত চোখের চাহনি আর কম্পিত ঠোঁট তাকে আরো নেশাক্ত করে তুলে।

কুবরাঃ সব…সময়..এতো.. কাছে কেন আসেন বলোন তো। কেউ দেখে ফেলবে। আমার খুন আনিজি ফিল হয়।

নাদিম কুবরার ভয়ার্ত চেহারা দেখে মুচকি হেসে দূরে সরে আসে।

নাদিমঃ তবে বলছো, দূরে থাকতে? আমি দূরে চলে গেলে থাকতে পারবা তো?

কুবরা কিছু না বলে আগের মতো দাঁড়িয়ে আছে।

নাদিমঃ ঠিক আছে। তবে থাকো দূরে। আর আসবো না কাছে। একদিন তো তুমি নিজেই আমার কাছে চলে আসবে দেখে নিও। সেদিন দেখবো তোমার আনিজি।

এই বলে নাদিম ফোন টা কানে দিয়ে কথা বলতে বলতে চলে যায়। এদিকে কুবরা নাদিমের আগামাথা কিছুই বুঝতে না পারায় বেকুপের ন্যায় আগের মতো দাঁড়িয়ে আছে।

ছাদের এক পাশে শুভ্রা আর সাদাফ একসাথে সময় কাটাচ্ছিলো বলে ইলিয়ানা অপর পাশে চলে আসে।
এসেই দেখে সেখানে শুভ্রার সেই পরিচিত ভাই চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে ফোন স্ক্রল করছে। ইলিয়ানা ও আরেকটু দূরে গিয়ে হাতে ফোনটা নিয়ে ফেসবুকে ঢুকে। ঢুকে দেখে পারভেজ রায়হান নামের একটা ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট। আইডিতে ঢুকে প্রফাইল দেখতে সামনে আসে শুভ্রার সেই ভাইয়ের হাস্যোজ্জ্বল এক সুদর্শন ছবি।

তেমন কিছু না ভেবে রিকুয়েষ্ট এক্সেপ্ট করে নেয় ইলিয়ানা। পারভেজের কাছে সাথে সাথে এক্সেপ্টের নোটিফিকেশন আসায় চোখ তুলে দেখে একটু দূরে পেছন হয়ে দাড়িয়ে আছে ইলিয়ানা।

তবু কিছু কথা না বলে চুপচাপ যে যার মতো রয়েছে।
পশ্চিম আকাশে সূর্য ঢলে পড়েছে আকাশের বুকে। ঠিক তেমনি শুভ্রাও সাদাফের বুকে মাথা রেখে দোলনায় দোল খেতে থাকে দুজন কপোত-কপোতী। বিকেলের এই স্নিগ্ধ শান্তিময় পরিবেশ উপভোগ করতে করতে কেটে যায় শুভ্রা আর সাদাফের বিয়ের দ্বিতীয় দিন।

#চলবে।

( আচ্ছা গল্প পড়তে কি এখন কারো তেমন ভালো লাগছে না? নাকি আমার গল্প লিখা ভালো হচ্ছে না?)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here