#অচেনা_তুমি
#লেখিকাঃমহিমা_হাছনাত_মাহি
#পর্বঃ৪৯
মাঘ মাসের সময় শেষ হতে চললো বলতে। চারদিকে যখন ফজরের আযানের মধুর কণ্ঠধ্বনি বাজছে সাথে সাথে গাছে গাছে ডাকছে কোকিল পাখি। কোকিলের সরু কন্ঠে কো…. কো… সুরেলা ডাক আর আযানের শব্দে ঘুম ভেঙে যায় কুবরার।
চোখ পিটপিট করে খুলে দেখে উষ্ণ কম্বলে আবৃত হয়ে নাদিমের বক্ষে আরামের ছন্দে ঘুমুচ্ছিলো সে। মাথা তোলে চোখে পড়ে নাদিমের ক্লান্তমাখা প্রশান্তিময় ঘুমের চেহারা। তবু ঠিক রাতে যেভাবে বুকে জড়িয়ে নিয়েছিলো একদম কোনো নড়াচড়া না করে সারা রাত এভাবেই ধরে রেখেছিলো কুবরাকে। যেন কোনো মতেই তাকে হাতছাড়া করা যাবে না এই অবস্থা।
আযানের আওয়াজ শুনেই মাথায় টনক নড়ে নামাজ পড়তে হবে। উঠতে গেলেই নাদিমের শক্ত শেখল তাকে আকড়ে ধরে।
কুবরাঃ এই যে?? উঠুন আযান দিচ্ছে… ( নাদিমকে আলতো করে ধাক্কা দিয়ে ডাকে)
আশ্চর্য!! এভাবে ঘুমোতে হয়? এতো ডাকছি কোনো সাড়াশব্দ নেই….। নিজে তো উঠছেই না আবার আমাকেও ধরে আছে আজব!!
কি যেন একটা ভেবে কুবরা শয়তানি হাসি দিয়ে গা থেকে কম্বল টা টেনে সরিয়ে ফেলে। কিছুক্ষণের মধ্যেই নাদিম ভ্রু-কপাল কুচকে ঘুমু ঘুমু চোখে কম্বল হাতাতে শুরু করে।
নাদিমঃ হু….হু… শীত…. আহ কম্বল কই 🥶🥶… ( ঘুমের ঘুরে)
কুবরাঃ আজ্ঞে না কোনো কম্বল নেই উঠুন নামাজ পড়বেন না?
নাদিমঃ এই তুমি কে? ( ঘুমু ঘুমু চোখে)
কুবরাঃ এহ! আমি কুবরা আর কি?
নাদিমঃ ও কুবরা.. তুমি কখন এলে? তুমি সত্যিই… স্বপ্ন থেকে.. চলে এসেছো? আমি আর কাজ করবো না… সত্যি বলছি। ( চোখ বন্ধতে ঘুমের ঘুরে)
কুবরাঃ এ্যা… এই লোকটা সকাল সকাল এসব বলে কি? বলি আমি আবার কবে আসবো? কাল যে আমায় বিয়ে করে নিয়ে আসলেন মনে নেই?? আর এসব কি উলটা পালটা কথা বলছেন আপনি,, কি করবেন না?? ( বড় করে বলে)
নাদিমঃ এহ এহ এহ ( হচকচিয়ে উঠে) তুমি সত্যিই আছো? ক.. কি হয়েছে চিতকার করছো কেন সকাল সকাল। আসলে স্বপ্ন দেখছিলাম তোমায় নিয়ে ( জড়িয়ে ধরে) চলো না আরেকটু ঘুমাই।
কুবরাঃ উহু একদম না। আগে উঠুন নামাজ পড়তে হবে। এখন যদি নতুন বউ পড়ে পড়ে ঘুমোয় তখন যে আপনার বউয়ের বদনাম হবে সেটা ভালো লাগবে? আর আপনার খালা যে ডেঞ্জারাস! বাব্বাহ আমাকে যে উনার কোনো মতে খাটছে এটাই যথেষ্ট। কোনো প্রকার উনার সামনে খারাপ হতে চাচ্ছিনা আমি।
নাদিমঃ ইশশ.. আমার ছোট্ট বউটা এতো বোঝদার হয়ে গেলো কবে থেকে? সব কিছু কতো তারাতাড়ি ক্যাপচার করে নিতে পারছো..
কুবরাঃ ও আমি অনেক আগেই হয়েছি। এবার কিন্তু সত্যি দেরী হয়ে যাচ্ছে। নামাযের ওয়াক্ত চলে গেলে কিন্তু শেষ। উঠুন উঠুন। ( নাদিমকে ঠেলে তুলে দিয়ে)
এরপর দুজনে ফ্রেশ হয়ে নাদিম মসজিদে চলে যায় কুবরাও নামাজ পড়ে ফেলে। নামাজ শেষে কুবরা উঠে একটা শাড়ি নেয়। আজ বিয়ের প্রথম দিন বলে কথা। সেলওয়ার পড়লে দেখাবে কেমন।
শাড়িটা নিয়ে পেটিকোট আর ব্লাউজ পড়ে তারপর পেচিয়া শাড়িটা পড়তে পড়ে যায় মহাবিপদে। কারণ শাড়ি পড়তে চাইলেই কি হবে শাড়িটাতো পড়তে জানতে হবে। কিন্তু সে তো শাড়িটাই পড়তে জানে না।
কুবরাঃ উহহু… কপাল আমার… এতো কিছু শিখেছি কিন্তু এই মেইন জিনিসটাই তো শিখে নিলাম না। এখন শাড়ি না পড়লে উনার খালা যদি কিছু বলে! মারেম্মা মহিলা যেমন খিটখিটে… শাড়ি না পড়লে নির্ঘাত কিছু না কিছু বলবে। যাই হোক বয়স্ক মানুষ বলে কথা। উফফ আপ্পি কয়েক বার এভাবে পড়িয়েছিলো মনে হয়। ( শাড়ির কুচি বানাতে বানাতে)
হঠাৎ দরজায় লক খোলার আওয়াজ পেয়ে তারাতাড়ি করে নিজের গায়ে যেমন পারে তেমন শাড়ি পেচিয়ে নেয়। নিশ্চয় নাদিম এসেছে।
নামাজ পড়ে এসে রোমে ঢুকে দেখে কুবরা একটা বেবি পিঙ্ক কালারের একটা শাড়ি এবড়ো থেবড়ো ভাবে জড়িয়ে আছে। মুটামুটি তাকে দেখতে একটা জোকারের ড্রেসাপের মতোই লাগছে।
নাদিমঃ হো.. হো.. হো.. সকাল সকাল এ তুমি কি পড়েছো, কুবরা। ( হাসতে হাসতে 😆😆)
কুবরাঃ এভাবে হাসার কি দরকার শাড়ি পড়েছি আর কি। ( মুখ বাকিয়ে 😏)
নাদিমঃ আচ্ছা তা এভাবে কেউ শাড়ি পড়ে আগে জানতাম না তো! কোন দেশীয় স্টাইলে শাড়ি পরেছো তুমি এটা? আগে তো দেখিনি। ( দরজা বন্ধ করে)
কুবরাঃ দেখছেন না শাড়ি পড়তে পারিনি ঠিক ভাবে! এর মানে নিশ্চয় আমি শাড়ি পড়তে পারি না..
নাদিমঃ কুল… তাহলে তুমি বলছো আমি যেন তোমায় শাড়ীটা পড়িয়ে দিই। ( কুবরা দিয়ে এগিয়ে এসে)
কুবরাঃ দে..খুন আমি মোটেও সে কথা বলিনি। আর তাছাড়া আমি মেয়ে হয়ে শাড়ি পড়তে পারি না আর আপনি ছেলে হয়ে কি করে পারবেন?
নাদিমঃ বুদ্ধি থাকলে আর ঘর জামাই থাকতে হয় না বুঝেছো। ( পকেট থেকে মোবাইল টা বের করতে করতে)
কুবরাঃ এহ! এখানে ঘর জামাইর কথা কোথা থেকে আসলো! আমি তো বলছি শাড়ির কথা।
নাদিমঃ কিছু না দেখি এদিকে হও আমি শাড়ি পড়িয়ে দিচ্ছি।
কুবরাঃ এএএ… কিইই! আপনি শাড়ি পড়িয়ে দিবেন মানে? আর আপনি বললেই আমি আপনার থেকে শাড়ি পড়ে নিবো নাকি? আর আপনি শাড়ি পড়াতে পারেন
কি করে? সত্যি করে বলুন তো এর আগে কাউকে শাড়ি ও পরিয়ে দিয়েছেন নাকি? ( চোখ ছোট ছোট করে নাদিমের দিকে তাকিয়ে)
নাদিমঃ ধুর বোকা.. হাতে ইউটিউব থাকতে আমার কি অন্যজন কে শাড়ি পড়িয়ে শিখতে হবে নাকি? আর তুমি যখন নিশ্চয় শাড়িটা পড়তে পারো না আমাকেই তো পড়িয়ে দিতে হবে। নাকি বিয়ের প্রথম দিনেই শাড়ি না পড়ে ঘুরবা। খালামনি দেখলেই হবে কিন্তু।
কুবরাঃ ন..না না। শাড়ি তো আমি পড়বোই কিন্তু…( মিনমিন করে)
নাদিমঃ তাহলে? আসো আমি পড়িয়ে দিচ্ছি।
এই বলে নাদিম এক ঝটকায় কুবরাকে নিজের দিকে টেনে আনে। তারপর ভিডিও তে যেরকম দেখাই ঠিক সেভাবেই শাড়িটা পড়ানোর চেষ্টা করছে। কুবরা শাড়ি না পড়লেও তেমন কিছু বিরাট সমস্যা হতো না। কিন্তু কুবরার কাছে আসার বাহানায় শাড়ি পড়াতে জোর দেয় সে।
নাদিমের সামনে এমনভাবে দাড়াতে লজ্জায় কাপছে কুবরা। বাধ্য হয়ে তবু নাদিমের কাছে ধরা দিতে হয়েছে তাকে। নাদিমের প্রতিটি স্পর্শে ক্ষনে ক্ষনে কেপে উঠছে সে বার বার। কুচিটা ঠিক করে গুজে দিতে গেলে চোখ খিচে বন্ধ করে নাদিমের হাতটা আটকে দেয় কুবরা।
কাজ করতে করতে নাদিম ও যেন আর স্থির থাকতে পারছে না। কি শাড়ি পড়াতে মন দিবে নাকি কুবরার ওই মাতানো ঢেউ বসানো ধবধবে ফর্সা মেদহীন পেটের দিকে তাকাবে। কিন্তু কুচি ঠিক গেলে বার বার সেদিকে চোখ চলেই যাচ্ছে। নিজেকে আর সামলে উঠতে পারছে না সে। ক্রমাগতই কেমন মাতালের মতো আসক্তি পাচ্ছে সেই লক্ষ্যস্থির জায়গায়।
কুবরাঃ ব..ব্যাস… এবার আমি.. পারবো.. ( কাপাকাপা কন্ঠে)
কুবরার আটকে ফেলাতে হুশ ফিরে নাদিমের। এতোক্ষন যেন একটা গভীর ঘোরে ছিলো সে। আর কিছুক্ষন হলেই হয়তো দুজনের মধ্যে কিছু একটা হয়ে যেত। নাদিম নিজেকে সামলে উঠে দাঁড়ায়। । ততোক্ষনে কুবরা আয়নার সামনে গিয়ে শাড়ির আচল ঘুরিয়ে টিপটাপ ভাবে পড়ে ফেলে।
নাদিমঃ তুমি আসলে স্বাস্থ্যের প্রতি অনেক ক্ষতিকর। আচ্ছা কি আছে বলোতো তোমার মধ্যে? জানো তোমার বেলি দেখে আমার মধ্যে কি রকম মাদকতা কাজ করছিলো। ( পেছন থেকে কুবরাকে জড়িয়ে ধরে)
লজ্জায় কুবরার ইচ্ছে করছিলো এক্ষুনি দৌড়ে পালিয়ে যেতে। সবসময় এমন এমন কথা বলে লজ্জায় ফেলে দেয় তাকে। অবশ্য নিজেরও তখন নাদিমের ছোয়া পেয়ে কম মনে মনে কম ঝড় বয় নি।
কুবরাঃ ধ্যাত। এরকম আবার হয় নাকি। বিয়ে হয়ে গেলো, অথচ এখনো ফ্লার্টবাজি রয়ে গেলো।
নাদিমঃ হুম হয় হয় এরকমই হয়। এরকম একটা সুন্দরী বউ কজনে পায় বলোতো। আমার ভাগ্য যে তোমায় আমি বউ হিসেবে পেয়েছি। আর এগুলো কে হালাল ফ্লার্টিং বলে। নিজের বউয়ের সাথে ফ্লার্ট করবো না তো আর কার সাথে করবো বলোতো?
নাদিমের কথা শুনে কুবরা আয়নায় তার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসে শুধু। নাদিম নিজেকে ভাগ্যবান ভাবছে তাকে পেয়ে। অথচ সে কতোটা ভাগ্যবতী ভাবে নিজেকে নাদিম কে পেয়ে। কুবরার তো মনে হয় তার চেয়েও অনেক বেশি নাদিম তাকে ভালোবাসে। নাহলে তার এক কথাতেই কাল রাতে নাদিম সব কিছু মেনে নিতো না। সবচেয়ে বড় কথা চোখের জ্বল এসে গিয়েছিলো শুধু মাত্র সে রাগ করেছে ভেবে।
কুবরাঃ হয়েছে হয়েছে দেখুন ৭ টা বাজে বোধহয় এতোক্ষনে। এখনো যদি আমি বাড়ির কারো জন্য জল খাবারের ব্যবস্থা না করি তখন যে বাদাম মিয়ার বউয়ের বদনাম হবে। ছাড়ুন আমায় এখন।
নাদিমঃ উহু। আমি মোটেও বাদাম তাদাম নই। রেস্পেক্ট ইউর হাজবেন্ড। কল মি নাদিম। ( কুবরার ঘাড়ে মুখ গুজে)
কুবরাঃ ওমা। কেমন মান্ধাতার আমলের স্বামীদের মতো হুকুম করছে। যেমন ভাবে বলছেন আপনি আমাকে মিস কুইন কুবরা বলেন ই না।
নাদিমঃ ও আমি জানি না। বাট ফ্রম নাও ইউ হেভ টু কল মে “নাদিম “। আমি জানি তুমি আমাকে নাদিম বলে ডাকতে পারো না বলে মিস্টার বাদাম বলে ডাকো। কিন্তু এখন আর তা হবে না। নাদিম বলবা।
কুবরাঃ ন.. না। জানেন যখন, তবে আবার বলছেন কেন? আপনি আমাকে অন্যকিছু ডাকতে বলুন। আপনি আমার বয়সে অনেক বড়। নাম ধরে ডাকতে আমার অস্বস্তি লাগে। ( মিনমিন করে)
নাদিমঃ তাহলে ছাড়বো না, যাও। দেখি কি করে বের হতে পারো রুম থেকে। ( শক্ত করে চেপে ধরে)
কুবরাঃ মহামুশকিল তো! প্লিজ এরকম করবেন না। আমাফ ইউয়ার্ড লাগে কেমন। আপনি দেখেছেন, আপ্পি কোনো দিন ভাইয়াকে নাম ধরে ডেকেছে??
নাদিমঃ না না ওদেরটা অন্য ব্যপার। আর আমার টা অন্য ব্যাপার। এবার বলবা নাকি এভাবেই থাকবা। অবশ্যা আমার তো তোমায় এভাবে জড়িয়ে ধরতে বেশ ভালো লাগছে।
কুবরা তো এবার মহা ঝামেলায় পড়লো। নাদিমের কথা শুনে মনে হচ্ছে সে সিরিয়াসলি বলছে। কেমন জেদ করে চেপে ধরে আছে। এখন দেরী হয়ে গেলে অনেকে অনেক রকম কানাঘুষা শুরু করে দিবে।
কুবরাঃ ন…না..দিম আমাকে ছাড়ুন.. আমার যেতে হবে।
নাদিমঃ কি? কি?কি? আরেকবার বলো শুনিনি আমি।
কুবরাঃ মিস্টার নাদিম আমাকে ছাড়ুন। খেতে হবে তো বলি রান্না করতে হবে তো…! ( নাদিমের কানে চিৎকার দিয়ে)
নাদিমঃ আহহহ আস্তে… ছোট করে বললে শুনতাম না নাকি?? ( কুবরাকে ছেড়ে দিয়ে)
নাদিমের ছাড়তে দেরি কিন্তু কুবরার পালাতে নয়। ছাড়া পাওয়ার সাথে সাথে ফুড়ুৎ করে দৌড়ে পালিয়ে যায় সে।
কুবরার পাগলামো দেখে আনমনেই হেসে উঠে নাদিম। বিয়ে হয়ে গেলো অথচ এখনো সেই প্রথম দিনের মতো দুজনের মধ্যে টম এন্ড জেরির কর্মকান্ড। ভাবতেই নিজে নিজে একলা হাসতে থাকে সে।
রান্না ঘরে এসে কুবরা চিন্তায় পড়ে যায় কি কি বানাবে। ফ্রিজ খুলে দেখে কাল রাতের গরুর মাংস আর মুরগির মাংসের তারকারি আছে। কিছু একটা ভেবে ফটাফট ময়দা নিয়ে লুচি বানাতে শুরু করে দেয়। কিছুক্ষন হতেই লুচি বানানোর প্রায় শেষের দিক। তখন হাতে তজবি জপতে জপতে হাজির হয় নাদিমের খালা। সাথে তার ফুপি ও ছিলো।
নাদিমের ফুপিঃ একি বউমা! এতো তারাতাড়ি উঠে পড়েছো? আর সকাল সকাল রান্নাঘরে কেন চলে এলা। কাল রাতে কতো দেরীতে ঘুমুতে গেলা। ঘুম হয়নি নিশ্চয়?
লুচি ভাজার সময় পেছন থেকে আওয়াজ আসায় তাকিয়ে দেখে নাদিমের খালা আর ফুপি দাড়িয়ে আছে। দুজনকে সালাম জানিয়ে বিনয়ের সাথে কথা বলে সে।
কুবরাঃ না না, ঘুমিয়েছিতো। আপনারা বসুন আমার কিছুক্ষনের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে।
নাদিমের ফুপিঃ না না তুমি বসো। কাল কতো ধকল গেলো বলো তো। বাচ্চা মেয়ে সকাল সকাল এতো কিছু পারবা নাকি? দাও আমি করছি।
কুবরাঃ আচ্ছা ঠিক আছি আমি আপনাকে হেল্প করবো। ঘুমিয়ে থাকলে হয় কি করে বলুন তো? মানুষ বউ আনে শাশুড়ীরা যেন একটু আরাম করতে পারে মতো। আর আপনাদের কে আমি ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে কাজ করতে দিই কি করে বলুন তো! এর পর তো সবাই নতুন বউয়ের নামে যা নয় না তা বলতে শুরু করবে বলুন তো সাসু আম্মা।
কুবরার কথা শুনে নাদিমের খালা আর ফুপি হেসে উঠে। আসলে সে তো ঠিক কথায় বলেছে। উপর থেকে যে যতোই মানা করুক, মনে মনে তো অনেকে অনেক কিছুই মনে করে।
ততোক্ষনে নাদিমের বাবা ও মসজিদ থেকে চলে আসেন। মুরিব্বি মানুষ নামাজেত পরে একটু হাটাচলা করেন। যার কারনে উনার একটু বাড়ি আসতে বেলা হয়ে যায়।
নাদিমের বাবাঃ কি সকাল সকাল দেখছি আজ আমার বাড়িতে শোরগোল শুরু হয়ে গেলো।
নাদিমের ফুপিঃকি আর হবে ভাইয়া। আমাদের বাড়িতে যে একটা নতুন কথাকলি এনেছি তার কথা শুনেই তো হাসাহাসি করছি।
নাদিমের বাবাঃ ও তাহলে তো মনে হয় আমি দেরী করে ফেলেছি।
কুবরাঃ নো টেনশন। এখনো তো মাত্র শুরু আমি না হয় আরো অনেক কিছু বলবো। এবার আপনারা বসুন আমার প্রায় শেষ।
তবু নাদিমের ফুপি কুবরার সাথে হাতে হাত লাগিয়ে কাজ করে আর নাদিমের খালা আর বাবা ডাইনিং এ বসে।
নাদিমের খালাঃ বুঝলেন ভাইজান, কপাল করে বউমা পেয়েছেম। আমি তো ভাবছিলুম টাউনের মেয়ে, দাপটে হবে। এ দেখছি একেবারে আমাদের মন মতো। আমাদের নাদিম বাবা তো জিতেছে বলতে গেলে।
নাদিমের বাবাঃ সে আর বলতে। জানেন আপা৷ যখন আমি প্রথম বউমা কে দেখতে যাই তখন তার আচরন আর কথাবার্তাতে আমি যেন আমার পারভিন কে খুজে পেয়েছিলাম। ও যেমন চঞ্চল, পাগলাটে, হাবাগোবা ছিলো আমার নাদিমের বউটা ও হয়েছে তেমন। সারাক্ষন উলটাপালটা কথা বলে বলে যেমন ঘর উজাড় করে রাখতো আমি সেই ক্ষমতা আমার নাদিমের বউয়ের মধ্যে দেখেছি।
নাদিমের খালাঃ তা ঠিক আমার বোন টাও তো এমন হাসিখুশি ছিলো। চঞ্চল,দুষ্টু, আর সারাক্ষণ ময়না পাখির মতো কথা বলতো। আল্লাহ এক জন কে নিয়ে গেলেও কোনো না কোনো ভাবে আরেকজন কে ঠিকি দেয়। ( চোখের জ্বল মুছতে মুছতে)
নাদিমের বাবাঃ সময় কতোটা দ্রুত এগিয়ে যায় দেখেছেন। দেখতে দেখতে আমার পারু ২৫ টা বছর ধরে আমার কাছ থেকে চলে গিয়েছে। আর ভাগ্যের মিলনে ঠিক তার মতোই একটা ফুটফুটে পুত্রবধূ পেয়েছি। আমি ভেবেছিলাম আমার ছেলে যাকে ভালোবাসে আমি তার জন্য রাজি হবো। অন্যান্য বাবা দের মতো নিজের ইচ্ছে অনুযায়ী বউমা পাওয়ার জন্য কোনো ভাবেই বাধ সাধবো না। তবে আল্লাহ যে আমার নসীবে একদম যোগ্য বউমা দিয়েছেন এটাই শোকর আলহামদুলিল্লাহ।
নাদিমের খালাঃ হ্যা ঠিকই বলেছেন, এ কথা বলতেই হবে যে মেয়ের আচার আচরণ সত্যিই খুব ভালো। আমি তো শহুরে মেয়ে অনেক ডানপিটে, নামাজ দোয়া পড়ে না ভেবেছিলাম। মেয়ে সকাল সকাল নাদিম বাবাকে মসজিদেও পাঠিয়েছে দেখলুম। যেখানে সকাল ১০/১১ টার আগে এখনকার মেয়েরা উঠে সেখানে এই বউ মা তো সকাল সকাল উঠে কতো সুন্দর করে জলখাবার বানাচ্ছে। বলতেই হবে মেয়ের মা ভালো শিক্ষা দিয়েছে। এমন কপাল করে বউ পাবেন তাও শহুরে তা তো ভাবনাতীত ছিলো ভাইজান।
নাদিমের বাবা নিজের ডান হাত বুকের বা পাশে রেখে একটা লম্বা নিশ্বাস ত্যাগ করে। যেন জীবনটা তার স্বার্থক হয়েছে আজ।
নাদিম তখন ব্রেকফাস্ট এর উদ্যেশ্যে সিড়ি দিয়ে নামছিলো হঠাৎ বাবার মুখে নিজের মায়ের নাম শুনে থমকে দাঁড়ায় সে। তার মানে তার বাবা কুবরার মধ্যে তার মায়ের প্রতিচ্ছবি দেখতে পায় বলে শুধুমাত্র নাদিমের কথা ভেবে কুবরা কে বউ বানিয়ে এনেছে।
যেখানে সকল বিষয়ে তার খালা এতো খুতখুতে, সেখানে মাত্র এক দিনের ব্যবধানেই কুবরা তার প্রিয় পাত্রী হয়ে উঠেছে। অথচ এই ব্যাপার টার জন্যই সে কুবরাকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি ভয় পেয়েছিলো। আজ সত্যি নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে হচ্ছে নাদিমের। বাবা পরিস্বজনের পছন্দ মতো, একমাত্র ভালোবাসার মানুষটিকে নিজের করে পেয়ে সত্যি লাকি মনে হচ্ছে নিজেকে।
এরপর বাড়ির নাদিম সহ বাড়ির অন্যান্য সদস্য ( যারা বেড়াতে এসেছে) তারা সকলে ডাইনিং এ চলে আসে। কুবরা ও ততোক্ষণে গরুর মাংস, মুরগীর রেজালা, গরম গরম লুচি আর শেষে খাওয়ার জন্য সেমাই নিয়ে পরিবেশন করে ফেলে।
সকলে তো কুবরার হাতের রান্না খেয়ে খুশিতে পঞ্চমুখ। বিশেষ করে নাদিমের বাবা আর মিমি। আর নাদিমের কাছে তো কুবরার হাতে তৈরি খাবাত বরাবরই অমৃতের স্বাদ।
#চলবে।