অচেনা তুমি পর্বঃ৪১

0
1956

#অচেনা_তুমি
#লেখিকাঃমহিমা_হাছনাত_মাহি
#পর্বঃ৪১

সংসার ধর্ম বড়ই বিচিত্র। কাল সে ছিলো একরকম আজ সে সংসার ধর্মে নিজেকে জড়িয়ে হয়ে উঠে আরেকরকম। যে মেয়েটা মা, বোনের উপর চড়ে চড়ে সারাদিন টো টো করতো আজ সে অন্যের ঘরে এসে পাক্কা গৃহিণী।

বিয়ের পর কেটে গেলো আরো এক সপ্তাহ। ধীরে ধীরে যতো দিন যায় কুবরা নিজেকে সাংসারিক ভাবে প্রস্তুত করে। আগের মতা পাগলামি, নাদিমের সাথে কথার কথা ঝগড়া, বাচ্চামো সবই আস্তে আস্তে কমিয়ে দিয়েছে। যথাসম্ভব বাড়ির কাজকর্ম আর পড়ালেখা নিয়ে ব্যস্ত থাকতে চায়। নাদিমের সাথেও এখন তেমন বেয়াদবি করে না। স্বামী হিসেবে যথেষ্ট শ্রদ্ধা করে।

কলেজ বন্ধ থাকায় আজ কুবরা বাড়িতে আছে। নাদিম সকালের দিকে অফিসে চলে গিয়েছে। বিয়ের জন্য প্রায় এক সপ্তাহ অফিসে যায় নি সে। আজই গিয়েছে মাত্র। কুবরা ও এতো দিন যায় নি। আজ বৃহস্পতিবার বার বলে বাড়ির গোছগাছ করছে। বিয়েতে যারা এসেছিলো তারাও পরের দিন চলে যায়। এবং কালই নাদিমের বাবা পুরান ঢাকায় যান আগের ভিটার কি সমস্যা হয়েছে সেসব দেখতে। তিনি বলেছেন সেখানে তিনি তার বোনের বাড়িতে মানে নাদিমের ফুফির বাড়িতে কদিন থাকবেন। যার ফলে বাড়িতে একাই আছে কুবরা।

বেলা প্রায় ১২ টা বাজে। কাজকর্ম সেরে সোফায় বসে বসে টিভিতে “মিঠাই” দেখছিলো কুবরা। এই সিরিয়ালটা তার বড্ড প্রিয়। বিয়ের ঝনযাটে কয়েকদিন দেখতে না পারলেও ইউটিউব থেকে পুরো সব পর্বই তার দেখে নেওয়া চাই। তাই পেন্ডিং পর্ব গুলো আচার খেয়ে খেয়ে দেখছে। হঠাৎ দরজায় কলিং বেল বাজতেই টনক নড়ে তার।

কুবরাঃ কি ব্যাপার! এই সময় আবার কে এলো?( কপাল কুচকে)

সাধারণত সে এবাড়িতে এসেছে থেকে তেমন কেউই আসেনি। আর আজ নাদিম ও তো অফিসে গেলো কিছুক্ষণ হলো আর তার বাবা ও নেই। একা আছে বলে খানিকটা ভড়কে উঠে সে। গিয়ে দেখে দরজার উপারে নাদিম দাঁড়ানো।

কুবরাঃ একি আপনি এতো তারাতাড়ি চলে এলেন? ( দরজা খুলতে খুলতে)

নাদিম ঘরে ভেতর ঢুকে “কুবরা….” বলে চিতকার দিয়ে এক ঝটকায় কোলে তুলে ঘুরতে শুরু করে।

কুবরাঃ আরে আরে পড়ে যাবো তো আমি। কি হয়েছে হঠাত এতো এক্সাইটেড! ( ভয়ে নাদিম কে চেপে ধরে)

নাদিমঃ তোমার জন্য একটা এত্তো বড় গুড নিউজ আছে।( কুবরাকে নিচে নামিয়ে)

কুবরাঃ উম..! গুড নিউজ? মাত্রই তো অফিসে গেলেন এখনো তো দু ঘন্টাও হয় নি। এরই মধ্যে কি গুড নিউজ শুনি।

নাদিমঃ হুম তোমার একমাত্র আপদ মানে লিনাকে আজ আমি আমাদের সিলেট ব্রাঞ্চে ট্রান্সফার করিয়ে দিয়েছি৷ এবং সে আজই সিলেট চলে যাচ্ছে( কুবরা দুই ঘাড়ে হাত রেখে)

নাদিমের কথা শুনে কুবরা “ওয়াও…” বলে চিল্লিয়ে এক লাফে নাদিমের টাই টা নিচের দিকে টেনে তার গাল অজস্র চুমুতে ভরিয়ে দেয়।

কুবরাঃ আই লাভ ইউ লাভ ইউ লাভ ইউ……. আহহা। অবশেষে শাকচুন্নি বিদায় হলো। আর কখনো ওকে এখানে আপনার কোম্পানিতে আনবেন না।

নাদিমঃ আমার একমাত্র মিষ্টি বউটা আবদার করেছে আমি কি ফেলতে পারি? আর আরেকটা নিউজ হলো আজ থেকে কোনো মেয়েকেই আমি পিএ রাখবো না। যা হবে সাবাই ছেলে। শুধুমাত্র আমার এই ছোট্ট বউটা যেন আমার উপর অভিমান না করে।( কুবরার দুইগালে হাত দিয়ে)

কোবরা খুশিতে নাদিমকে শক্ত করে চেপে একটা লম্বা হাগ করে। নাদিম আজ আর অফিস যাবে না। যেহেতু কুবরা বাড়িতে একা আছে। এরপর নাদিম গিয়ে ফ্রেস হতে যায়। কুবরাও দুপুরের খাবার দাবারের ব্যবস্থা করতে রান্নাঘরে যায়।

প্রথম দিন নাদিম শাড়ি পড়িয়ে দেওয়ার পর থেকে কয়েকবার ইউটিউব দেখে পাকাপাকি ভাবে শাড়ি পড়া শিখে ফেলেছে। এখন সে প্রতিদিনই শাড়ি পড়ে। আর পড়তেও তার বেশ ভালো লাগে। শাড়ি পড়লে মনে মনে যেন নিজের মধ্যে একটা বউ বউ ভাব আসে।

রান্নাঘরে গিয়ে পাক্কা গৃহিণীর মতো শাড়ির লম্বা আচল পেচিয়ে কোমড়ে গুজে শুরু করে দেয় সবজী কাটা। দুপুরের জন্য ইলিশ মাছের তরকারি আর আলু ভাজি, শাক রান্না করছে।

দাড়িয়ে দাঁড়িয়ে পেয়াজ কাটছে কুবরা। হঠাত পেটের উন্মুক্ত জায়গায় ঠান্ডা অনুভুতি হওয়ায় পেছন তাকাতে গেলেই কারো বুকে পিট ঠেকে যায়। কুবরার আর বুঝতে বাকি নেই এটা কে হতে পারে। এর আগেও দুবার ঠান্ডা ঠান্ডা হাত ইচ্ছে করে এসে কুবরার উষ্ণ পেটে লাগিয়ে দেয়। আর তাৎক্ষনাত দুজনের মধ্যে লেগে যায় তুমুল খুনসুটি। এবারেও হয়েছে একই ঘটনা। গোসল করে এসে শীতকালীন ঠান্ডা হাত সুযোগ পেয়ে কোবরার পেটে লাগিয়ে দেয়।

তবে আজ আর নাদিমের সাথে এই বিষয় নিয়ে মোটেও তার মাতামাতি করতে ইচ্ছে করছে না। মন আজ খুশিতে বেশ ফুরফুরে। ঝগড়া করে অযথা মুড নষ্ট করতে চাইছে না।

নাদিমঃ কি ব্যাপার, আজ আমার এটম বম ফুটে উঠলো না যে? ( কুবরাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে থুতনি রেখে)

কুবরা চুপটি করে মুচকি হেসে হেসে পেয়াজ কাটছে।

নাদিমঃ উম… বুঝেছি… আমার বউপরী টা আর আমার সাথে ঝগড়া করতে চাইছে না। শুধু রোমান্স করতে ইচ্ছে করছে তাই না?? ( ঘাড়ে মুখ ঘষে)

নাদিমের চাপা দাড়ির ঘষা আর মাথা থেকে বিন্দু বিন্দু পড়া পানির স্পর্শে ঠিক ততোটাই কেপে উঠছে যতো টা ঠান্ডা হাতের স্পর্শ পেয়ে উঠেনি। চোখ খিচে বন্ধ করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে এদিকে নাদিম ক্ষুদার্তের ন্যায় কুবরার ঘাড়, গলা, পিঠে আষ্টেপৃষ্টে চুমু দিচ্ছে আর শুকছে। কুবরা এবার না পেরে নাদিমের দিকে ফিরে দাঁড়ায়।

কুবরাঃ কি হচ্ছে কি.. এটা রান্না ঘর তো! এভাবে ডিস্টার্ব করলে দুপুরে খাবেন কি?

নাদিমঃ তোমাকে.. তোমায় খেলে আর বাকি খাবার খেতে হবে নাকি? ( কোমড় ধরে নিজের কাছে টেনে এনে)

কুবরাঃ আমাকে খেয়ে আরেকটা বিয়ে করবেন নিশ্চয়! ওইযে মেহজাবিন আর নিশোর একটা নাটক “পূনর্জন্ম “, ওইটার মতো? বউকে কেটে অন্যদের খাইয়ে নিজে দ্বিতীয় মেহজাবিনের সাথে থাকবেন? সেরকম ভাবে আমাকেও খাওয়ার ইচ্ছা আছে বুঝি?? আর এখন তো ওই সিনের মতো রান্না ঘরেই আছেন। আর ছুরি ও আমার হাতে। ( ছুরি দেখিয়ে)

নাদিমঃ হায় আল্লাহ!!!! মানুষ কতোটা আনরোমান্টিক হলে তার মাথায় এমন থ্রিলার চিন্তাভাবনা আসতে পারে? আমার দশটা নয় বিশটা নয় একটা মাত্র বউ তাকে আমি মেরে ফেলবো? তাও এভাবে? তার আগে যেন আল্লাহ আমার মৃত্যু করুক এটাই আমি দোয়া করি। বুঝাতে চেয়েছিলাম কি আর বুঝিলা কি? ওহে নারী তুমি কতো দিন থাকিবা এমন অবলা… ( কুবরার মাথায় দুই হাত রেখে)

কুবরা খুব ভালো করে বুঝতে পেরেছিলো নাদিম কি বলতে চেয়েছিলো শুধু মাত্র কথা ঘুরাবার জন্যই এমন উদ্ভট কথা বলে উঠে সে। এই মূহুর্তে নাদিমের বাংলার পাচের মতো করে রাখা চেহারা দেখে ইচ্ছে করছে হেসে ফ্লোরে গড়াগড়ি খেতে। মুখ চেপে হালকা হেসে আবার কাজ করার জন্য পেছনে ঘুরতে গেলেই আবার আটকে ধরে নাদিম।

নাদিমঃ কোথায় যাচ্ছো মিসেস… বোকা বোকা কথা বলে পার পেয়ে যাবে ভেবেছো? আমি কিন্তু সবই বুঝি।

কুবরাঃ বুঝলে তবে ছাড়ুন না। আপনার ক্ষিদে না পেলে হবে? আমার তো খুব ক্ষিদে পেয়েছে।

নাদিমঃ আচ্ছা ছাড়বো। কিছুক্ষন আগে যেগুলো দিয়েছিলা সেরকম আবার দাও তো এখানে। ( কুবরার ঠোঁটের দিকে ইশারা করে)

কুবরাঃ 😏 দিবো না।

নাদিমঃ তাহলে ছাড়বো না।

কুবরাঃ আমার ক্ষিদে পেয়েছে….( 😣)

নাদিমঃ আচ্ছা, লিনা এখনো ঢাকার বাইরে যায়নি। অকে তাহলে কাল থেকে এই অফিসেই আসতে বলি। ( কুবরাকে ছেড়ে দিয়ে)

কুবরাঃ এ… না.. না.. আন্না এমন করবেন না।

নাদিমঃ তাহলে দাও ( চোখ বন্ধ করে কুবরার দিকে অগ্রসর হয়ে)।

কুবরা আস্তে আস্তে নাদিমের দিকে এগোই আর নাদিম ও খুশিতে গদগদ হয়ে কুবরার জন্য মুখটা নিচে করে রাখে। যেই দুজন কাছাকাছি আসে কুবরা আস্তে করে নাদিমের গালে হাত রেখে টুক করে দাড়ি ধরে টান দেয়।

নাদিমঃ আহহহহ ( গাল চেপে ধরে) ।

কুবরাঃ বেশ হয়েছে। জানেন না এটা রান্নাঘর? উল্টাপাল্টা জিনিস যেখানে সেখানে চাইলেই তো পাওয়া যাবে না।

নাদিমঃ তাই বলে তুমি এভাবে আমাকে বোকা বানাবে? কতো খুশি হয়েছিলাম জানো তুমি?

কুবরাঃ আহারে আমার বেচারা জামাইতা (🥺🥺-> এমন ফেইস করে)

নাদিমঃ দাও তুমি পতা মেয়ে, তোমাল তাতে মোতেও কতা বলবো না। 😏😏

এরপর দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে হু হা করে হেসে পুরো বাড়ি কাপিয়ে তুলে।

খাওয়াদাওয়া শেষে দুজনে বসে একসাথে এটাই টাইট্যানিক দেখতে বসে। সোফায় লম্বা হয়ে নাদিম আধশুয়া হয়ে বসে এবং তার বুকে মাথা রেখে কুবরা ও শুয়ে।

কুবরাঃ বুঝলেন,, এই রোজ না আসলে জ্যাক কে ভালোই বাসে নি। নাহলে যদি এতোই ভালোবাসতো ওর ও উচিত ছিলো জ্যাকের সাথে ডুবে মরে যাওয়া। খামকা ওর বেচে থাকার কোনো কারণ আছে? যদি ওকে ভালোবেসে না পায়। ( পপকর্ন খেতে খেতে)

নাদিমঃ হুম ঠিকি বলেছো ওর জায়গায় হলে আমি কক্ষনো হাত ছাড়তাম না। এভাবে শক্ত করে ধরে রাখতাম। ( কুবরার হাত নিজের দুটি হাতে আবদ্ধ করে নিয়ে)

কুবরাঃ উম… যেভাবে বলছেন যেন সত্যিই এরকম কোনো ঘটনা হলে আপনি তেমন করবেন ।

নাদিমঃ হ্যা করবোই তো। তোমাকে ছাড়া আমি থাকবো কি করে? যদি বাচবো একসাথে। মরলেও এক সাথে।

কুবরাঃ হয়েছে বুঝি বুঝি সব। এখন মুভি দেখি।

কিছুক্ষন পর হঠাৎ কুবরার ফোনে রিং হওয়ায় হাতে নিয়ে দেখে ইলিয়ানার কল। এতোদিন টুকটাক মেসেঞ্জারে কথা হতো। আজ ডিরেক্ট কল দেওয়াতে খুশিতে তারাতাড়ি রিসিভ করে নেয়।

কুবরাঃ হ্যা ইলু আপ্পি। আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছো আপ্পি?

ইলিয়ানাঃ ওয়ালাইকুমুসসালাম। আলহামদুলিল্লাহ। তুই কেমন আছিস? বিয়ে করে তো স্বামী সংসার পেয়ে একদম এতোই ব্যস্ত হয়ে উঠেছিস যে মেসেজের রিপ্লে দেওয়ার টাইম নেই।

কুবরাঃ কি যে বলোনা আপ্পি। লজ্জা করে তো ( লজ্জামাখা মুখে) তোমার হলে তুমিও বুঝতে। কবে যে তোমার বিয়ে হবে আর আমরাও তোমার সংসার করা দেখবো।

ইলিয়ানাঃ এই আমি কিন্তু বয়সে তোর বড় হই। ( ভাব দেখিয়ে) তবে এই যাত্রায় মনে হচ্ছে তো আশাটা পূরণ হতে চলছে।

কুবরাঃ কিইইইইই!! ( এক লাফে উঠে) তোমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে? কখন? কবে? ছেলে কে?

ইলিয়ানাঃ আরে আরে কুল কুল। এখনই এতো এক্সাইটেড হয়ে উঠছিস, যখন আসল সারপ্রাইজ পাবি তখন কি হবে?
কুবরাঃ সারপ্রাইজ?? না না ইলু আপ্পি প্লিজ বলো না। তুমি জানো আমি কতোটা অধৈর্যশীল।

ইলিয়ানাঃ না না সেটা তো কক্সবাজার আসলেই দেখতে পারবি। দেখ আগামী সপ্তাহে আমার বিয়ে সো কালই তোরা সকলে চলে আসবি।

কুবরাঃ কিই মানে এক্কেবারে বিয়ের ডেট ও ফিক্সড করে ফেললে? দিস ইস নট ডান আপ্পি। আমাদের ছাড়া বিয়ের প্ল্যান করে ফেলছো।

ইলিয়ানাঃ আরে না সময় তো অনেক আছে।

শুন যা বলছি সেটাই কিন্তু ফাইনাল। কাল অবশ্যই নাদিম ভাইয়া সহ স্ব পরিবারে কক্সবাজার চলে আসবি। আমি আর কোনো অযুহাত শুনবো না।

এরপর কুবরা আছে নাদিম দুজনেই সম্মতি জানায় যে কালই তারা চলে যাবে। আরো কিছুক্ষন কথা বলে তারা বিকেল হতে হতেই বিয়ে বাড়ি যাওয়ার জন্য গোছগাছ শুরু করে।

➡️➡️➡️➡️

“এসব কি ম্যাথ করেছো শুভি। তিনটে অংক দিয়েছিস তিনটেই তো ভুল হয়েছে ” ( সাদাফ কিঞ্চিৎ রাগান্বিত হয়ে বলে)

প্রতিদিনকার নিয়মের মতো আজও সাদাফ শুভ্রাকে পড়াতে বসে। তবে শুভ্রা আজ অন্যদিনকার তুলনায় বেশ অমনোযোগী হয়ে পড়ছে। কোনো ভাবেই পড়ায় মন বসছে না তার আজ। সাদাফের কথা শুনে কয়েকটি ম্যাথ করেছে ঠিকই কিন্তু সব ভুল।

শুভ্রাঃ ধ্যাত আমার পড়তে ভালো লাগছে না। ( বিরক্তি মুখে)

সাদাফঃ কিইই? আমি ঠিক শুনলাম তো? আপনার ভালো লাগছেনা? তাও পড়তে? কুবরা ম্যাডাম যাওয়ার সময় কি তোমার মাথায় ফাকি দেওয়ার ভুত চেপে দিয়েছে নাকি? ( ভ্রু কুচকে)

শুভ্রাঃ না… সেরকম আবার হয় নাকি? আমার ভালো লাগছে না এমনি। কাল তো ইলু আপ্পির বিয়েতে যাবোই। ওখানে গেলে আরো কয়েকদিন পড়া হবে না। খামকা আজ মাত্র একদিনে কি এমন মহামারী ক্ষতি হবে?

সাদাফঃ বাব্বাহ! এতো দেখছি পুরাই কুবরার ডায়লগ। শুভিই… তোমাদের নেক্সট মান্থে এক্সাম হবে। অলরেডি রোটিন দিয়ে দিয়েছে। পড়ে না নিলে ভালো মার্কস পাবা কি করে? এমনিতেই কুবরার বিয়ের ঝামেলায় অনেকদিন গ্যাপ গিয়েছে। এখন আবার ইলিয়ানার বিয়ে। ( মুখে রাগীভাব তুলে)

শুভ্রা চুপচাপ সাদাফের লম্বা রচনা শুনার পর দৌড়ে গিয়ে তাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে সাদাফ যে অবস্থাতে বসে ছিলো সেখানেই টুপ কতে গিয়ে কোলে বসে পড়ে। সাদাফের গলার দুই পাশের হাত রেখে বুকে মাথা রেখে হেলান দেয়।

সাদাফঃ মন গলানো কিভাবে করা যায় তা কেউ তোমার কাছ থেকে শিখতে আসুক। তুমি জানো আমি তোমার উপর কখনোই রাগ করতে পারি না। আর এটা তো তুমি ঠিক করলে না। পুরো টিচার মুড টাই নষ্ট করে দিলে । ( মাথায় হাত বুলিয়ে)

শুভ্রাঃ রাগ করতে জানেন না যখন মিছে মিছে রাগ দেখান কেন? ওসব ন্যারা রাগে আমি ভয় পাই নহে। ( ভাব নিয়ে)

সাদাফঃ তাই নাকি? তো যখন পড়াশোনা বাদ দিয়ে এতোই রোমান্স করতে ইচ্ছে করছে তাহলে হবে নাকি? ( শুভ্রার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে

হঠাৎ সাদাফের মোবাইলে রিং হতেই চোখ ফিরিয়ে দেখে পারভেজ কল দিয়েছে।

সাদাফঃ হ্যালো ভাই কেমন আছেন?

পারভেজঃ এইতো আলহামদুলিল্লাহ। তোমাদের কি খবর আমার বোন কেমন আছে?

সাদাফঃ আছে আপনার বোন। পড়ায় ফাকি দিয়ে বসে আছে।

পারভেজঃ কি বলো আমার বোন পড়ায় ফাকি দিবে? নিশ্চয় কোনো কারণ আছে। আর কাল তো তোমরা কক্সবাজার আসছোই। এই একদিনের জন্য কি পড়বে এই ভেবে হয়তো আর পড়ছে না দেখো।

সাদাফঃ হ্যা মুল কারণ তো নাকি এটাই। বাই দ্যা ওয়ে আপনি জানলেন কি করে আমরা কাল কক্সবাজার যাচ্ছি?

পারভেজঃ ওমা আমার বিয়ের জন্য আসছো তো আমি জানবো না?

সাদাফঃ মানে? আমরা তো যাচ্ছি ইলিয়ানার বিয়েতে। আপনার বিয়ে.. মানে.. বুঝলাম না?

পারভেজঃ আচ্ছা তাই নাকি? আমারও তো বিয়ে ঠিক হয়েছে। দেখো তোমরা সকলে না আসলে কিন্তু আমি খুব রাগ করবো। আমার আম্মু কিন্তু আলরেডি শুভ্রার আম্মু আর তোমার আম্মু আব্বুর সাথে কথা বলেছেন। আমি স্পেশালি তোমার কল করেছি। কুবরা আর নাদিম ভাইকেও বলেছি। তাই সিউরলি কালই চলে আসতে হবে।

সাদাফঃ মানে? এতো দেখছি ডাবল সারপ্রাইজ। কই আম্মু আব্বু তো বলে নি আমাদের।

পারভেজঃ এখানে এসে আরো বড় সারপ্রাইজ পাবা। আগে সকলে চলে আসো তো।

এরপর আরো কিছুক্ষন কথা বলার পর কল কেটে সাদাফ আর শুভ্রা নিচে যায় মা বাবার সাথে কথা বলার জন্য৷ নিচে গিয়েও জানে সত্যি পারভেজের বিয়েও আগামী সপ্তাহে। যেহেতু বিদেশ চলে যাবে কয়েকদিন পর তাই যতো তারাতাড়ি সম্ভব তার মা বিয়েটা দিতে চাচ্ছে। এরপর সকলে মিলে গোছগাছ শুরু করে দেয় বিয়ে বাড়ির নেমন্তন্ন রাখতে যাওয়ার উদ্যেশ্যে। আফটার অল দু দুটো বিয়ে এটেন্ড করতে হবে বলে কথা।

#চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here