অচেনা শহর পর্বঃ১২

0
2549

#গল্পের_নাম_অচেনা_শহর
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্বঃ১২
অনু বের হতেই তার দেখা হলো হেমন্তির সাথে অনুকে দেখে হেমন্তি তাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
~কেমন আছিস?
অনু মলিন হেসে বললো,
~ভালো আছি তুই কেমন আছিস? আর দুলাভাই কোথায়?
হেমন্তি বললো,
~বেশ ভালো আছি আর তোর দুলাভাই আমাকে দিয়ে অফিসে চলে গেছেন।
অনু বললো,
~চল তাহলে ক্লাসে লেট হয়ে যাচ্ছে।
হেমন্তি আর অনু ক্লাসের দিকে যেতে লাগলো তখনই ইমজাদ লাইব্রেরি থেকে বের হয়ে আসলো হেমন্তি তাকে দেখে অনুর পিছে দাড়িয়ে পরলো।কিন্তু ইমজাদ হেমন্তিকে অবাক করে দিয়ে তার পাশ কেটে চলে গেলো ইমজাদ একবারের জন্যও হেমন্তির দিকে তাকাইনি।হেমন্তি অনুকে বললো,
~এতো ভালো কী করে হলো?
অনু বললো,
~তুই বাদ দে ওনার কথা তোকে আর সে জ্বালাতন করবেনা।
হেমন্তি বললো,
~তুই কীভাবে জানিস?
অনু বললো,
~তোকে এতো কিছু জানতে হবে না চল ক্লাসে।
বলেই সে হাঁটতে শুরু করলো হেমন্তিও আর অন্য কিছু চিন্তা না করে অনুর সাথে হাঁটতে লাগলো।
ইলহাম অফিসে এসে সম্পূর্ণ রুপে কাজে মনোযোগ দিলো এতদিনের ছুটির কারণে বেশ ভালোই কাজের চাপ পরেছে।ইলহাম পুরোপুরি কাজের মাঝে ডুবে আছে তখনই দরজায় কেউ নক করলো ইলহাম ফাইলের দিকে তাকিয়ে বললো,
~Come in.
দরজা ঠেলে কেবিনে প্রবেশ করলো আরাফাত সে ইলহামের কলিগ+ভালো বন্ধু। আরাফাত চেয়ার টেনে বসে পরলো আর বললো,
~কী রে বিয়ে করে ফেললি আমায় ছাড়া?গ্রামে গেলাম কিছুদিনের জন্য আর আমাকে রেখে কাজ করে ফেললি।
আরাফাতের কথায় ইলহাম ফাইল থেকে মাথা উঠিয়ে তার দিকে তাকিয়ে বললো,
~সব কিছু তাড়াতাড়ির মধ্যে হয়েছে তাই জানাতে পারিনি সরি।
আরাফাত বললো,
~সরি বললে হবে না দাওয়াত চাই তোর ভাবি কিন্তু বেশ রেগে আছে তোর এই কর্মকাণ্ডে।
ইলহাম হেসে বললো,
~ভাবিকে বল রাগ করতে মানা কবে যাবি তা কনফার্ম কর।
আরাফাত বললো,
~আগামীকাল রাতের ডিনার তোর বাসায়।
ইলহাম বললো,
~ঠিক আছে ভাবি আর ছোট্ট পরীকে নিয়ে চলে আসিস।
আরাফাত বললো,
~ছোট্ট পরী এখন বাবা বাবা বলে ডাকে।
ইলহাম বললো,
~তাই নাকি যাক ওর কথাও শুনতে পাবো তাহলে।
আরাফাত আর ইলহাম বেশখানিক সময় কথা বললো এরপর আরাফাত নিজ কেবিনে চলে গেলো।ইলহাম একবার মোবাইলের দিকে তাকিয়ে ভাবলো হেমন্তিকে একটা কল করবে পরক্ষণেই মনে পরলো সে তো এখন ক্লাসে থাকবে তাই আর ফোন করলো না।

___________________♥_______________________

কেয়া রান্নাঘরে কাজ করছে পারভীন বেগমের মাথা ব্যাথা তাই সে ঘরে বিশ্রাম নিচ্ছে রান্নার দায়িত্বটা কেয়ার উপর পরেছে।কেয়া খিচুরীটা ভালো রান্না করতে পারে তাই সেটাই করবে আজ আর সাথে মাংস ভূনা।কেয়া মাংস চুলোয় দিয়ে অন্য কাজ করতে লাগলো তখনই কলিংবেল বেজে উঠলো কেয়া বিরক্তি নিয়ে হাতের কাজ রেখে দরজার কাছে চলে গেলো।দরজা খুলতেই সে দেখতে পেলো একজন যুবক চোখে চশমা দেওয়া মুখটা লাল হয়ে আছে সম্ভব গরমে।কেয়া সেই যুবককে জিজ্ঞেস করলো,
~কাকে চাই?
যুবকটি রুমাল দিয়ে মাথার ঘাম মুছে বললো,
~আফজাল আঙ্কেল বাসায় আছেন?
কেয়া বললো,
~নাহ পরে আসেন।
বলেই সে দরজা বন্ধ করে দিলো কেয়ার এমন কান্ডে যুবকটি অবাক হলো সে আবার কলিংবেল টিপলো।কেয়া দ্বিগুন বিরক্তি নিয়ে দরজা খুলে সেই একই লোককে দেখে বললো,
~ভাই রে ঘরে অনেক কাজ মা শুয়ে আছে ঘরে এতো জ্বালাতন করবেন না তো।
বলে কেয়া আবারও দরজা বন্ধ করতে নিবে সেই যুবকটি দরজায় হাত দিয়ে বললো,
~শুনেন মিস আমার নাম তানভীন হোসেন আপনার বাবা আপনাকে পড়ানোর জন্য আমায় ঠিক করেছে।
তানভীরের কথা শুনে কেয়া দরজা পুরোটা খুলে বললো,
~আপনি কী বললেন?
তানভীর বললো,
~আপনাদের বাসায় কানে যে শুনতে পায় তার সাথে কথা বলতে চাই।
কেয়া রেগে গিয়ে কিছু বলতে নিবে তখনই পারভীন বেগম পিছন থেকে বলে উঠলেন,
~তানভীর এসেছো তুমি ভিতরে আসো বাহিরে কেন দাড়িয়ে।
মায়ের কন্ঠ শুনে দরজা ছেড়ে দাড়ালো কেয়া তানভীর ঘরে প্রবেশ করতেই পারভীন বেগম বললেন,
~বসো বাবা আসলে আজ আমার শরীরটা ভালো না তাই সব কাজ ওকেই করতে হচ্ছে।কেয়াকে বলতেও ভুলে গেছি তোমার কথা
তানভীর বললো,
~কোনো সমস্যা নেই আন্টি আজ তাহলে আসি কাল থেকে চলে আসবো ঠিক ১টায়।
শেষের কথাটা কেয়ার দিকে তাকিয়ে বললো কেয়া নাক ফুলিয়ে বিড়বিড় করতে করতে বললো,
~আর না আসলেও চলবে।
পারভীন বেগম বললেন,
~আজ খেয়ে যেতে হবে বাবা কেয়া খিচুরি আর মাংস ভূনা টা বেশ করে।
তানভীর জুতা পড়তে পড়তে বললো,
~নাহ আন্টি আরেকদিন অবশ্যই খাবো এখন তো রোজ আসবো।
তানভীর বিদায় নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যায় কেয়া রান্নাঘরে চলে যায় আর তানভীরকে কীভাবে বিদায় করবে তাই ভাবতে লাগলো?
হেমন্তি ক্লাস শেষ করে একটা রিক্সা নিয়ে নিলো ইলহাম যেভাবে যেভাবে বলেছে সেই ভাবেই রিক্সা চালককে বুঝিয়ে দিলো।অনু হেমন্তিকে বিদায় দিয়ে সোজা চলে গেলো ইমজাদের খোঁজে আজকাল মানুষটাকে সে চোখে হারায় আজকের কথাটা অনুকে কষ্ট দিলেও সে একবার ইমজাদকে দেখতে চায়।অনেক আগে থেকেই সে ইমজাদকে পছন্দ করে কিন্তু ইমজাদকে বলার সাহস হয়ে উঠে না আর সে কোনোদিন বলবেওনা নিজ মনের কথা আজকের পরতো আরো না।

_____________________♥______________________

হেমন্তি বাসায় পৌছে দেখলো তার জন্য সবাই অপেক্ষা করছে সে দ্রুত ফ্রেশ হয়ে এসে সবার সাথে বসে পরলো।হেমন্তি ফারুক আর রেহেনা বেগমকে দেখে তাদের সাথে কুশলাদি করলো হেমন্তি হিয়াকে বললো,
~আপু,আমার জন্য আপনাদের কষ্ট হলো।
হিয়া বললো
~কীসের কষ্ট?পরিবারের সদস্যের জন্য এতটুকু তো করাই যায়।
হেমন্তির দিকে তাকিয়ে আজাদ সাহেব বললেন,
~হিয়ার জন্যও আমরা এভাবেই অপেক্ষা করতাম তাহলে তোমার জন্য করবো না কেন?তুমিও তো আমার মেয়ে।
হেমন্তি হাসলো সবাই একসাথে খেয়ে নিলো হেমন্তির ইলহামকে অনেক মনে পরছে সে বিছানায় শুয়ে আছে হাতে ফোন নিয়ে তার অনেক মন চাইছে ইলহামের গলার আওয়াজ শুনতে।হেমন্তি উঠে বসলো তারপর ফোন হাতে নিলো কিন্তু ফোন করলো না হেমন্তি ফোনটা রেখে আবার বিছানায় শুয়ে পরলো।
গতকাল রাতের কথা মনে হতেই হেমন্তি লজ্জায় লাল হয়ে যায় কত কথা বলে ফেলেছে সে কালকে সেই মানুষটিকে।হেমন্তি বিছানায় কাত হয়ে শুয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো এক পর্যায়ে তার চোখে ঘুম নেমে আসলো।
সন্ধ্যার দিকে ইলহাম চলে আসলো বাসায় রুমে এসে দেখলো হেমন্তি ঘুমিয়ে আছে ইলহাম হেমন্তিকে ঘুমিয়ে থাকতে দেখে মনে মনে বললো,
~শরীর খারাপ নাকি এখন ঘুমিয়ে আছে।
ভাবতে ভাবতে সে হেমন্তির কাছে গিয়ে তার কপালে হাত রাখতেই হেমন্তির ঘুম ভেঙ্গে গেলো।সে চোখ খুলে ইলহামকে দেখে অবাক হয়ে গেলো ইলহাম তার কপাল থেকে হাত সরিয়ে বললো,
~এখন পর্যন্ত ঘুমিয়ে আছো কেন?
হেমন্তি বললো,
~কয়টা বাজে?
ইলহাম বললো,
~৬.৩০।
হেমন্তি অবাক হয়ে বললো,
~এতোক্ষন ঘুমিয়ে ছিলাম আপুদের তো আজ চলে যাওয়ার কথা।
ইলহাম বললো,
~একটু পরেই বের হবে হিয়ারা।
হেমন্তি বিছানা ছেড়ে উঠতেই হিয়া দরজায় টোকা দিলো ইলহাম বললো,
~আয় ভিতরে।
হেমন্তি হিয়াকে দেখে দাড়িয়ে পরলো হিয়া হেমন্তির কাছে এসে বললো,
~হেমন্তি,আজ থেকে এ সংসার তোমার সংসারের প্রতিটি জিনিস এখন তোমার। দায়িত্বটা অনেক বেড়ে গেছে সব আগলে রেখো বোন আমি তোমার ভরসায় সব ছেড়ে যাচ্ছি।
বলেই হেমন্তিকে জড়িয়ে ধরলো হেমন্তি বললো,
~আমি অবশ্যই চেষ্টা করবো আপু আমার জন্য দোয়া করবেন।
হিয়ার সাথে হেমন্তি আর ইলহামও হলরুমে এসে পরলো ফারুক,ফারহান,রেহেনা বেগম বিদায় নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে আসলেন হিয়া হেমন্তির হাতে বাড়ির চাবি দিয়ে বললো,
~তোমার সংসার তোমার শহর।
বলেই সে বাসা থেকে বের হয়ে গেলো হেমন্তি দরজার সামনে দাড়িয়ে রইলো আর মনে মনে বললো,
~আমি এই সংসারকে আগলে রাখবো আপু।

চলবে

(বিদ্রঃকেমন হয়েছে জানাবেন।ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো🥰🥰।Happy Reading 🤗🤗)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here