অচেনা শহর পর্বঃ১৯ অন্তিম পর্ব

0
2927

#গল্পের_নাম_অচেনা_শহর
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্বঃ১৯ অন্তিম পর্ব
সকালবেলা কেয়া দরজা খুলে ধীর পায়ে চলে গেলো বাবার ঘরে সেখানে গিয়ে দেখলো আফজাল হোসেন রকিং চেয়ারে বসে চা খাচ্ছেন।কেয়া আফজাল হোসেনের পাশে বসে পরলো আর বললো,
~বাবা,তোমার কী সত্যিই মনে হয় আমি ওই উজবুকটার সাথে সুখী হবো?
আফজাল হোসেন হেসে বললেন,
~উজবুকটা বেশ ভালো ছেলে তোকে খুব সুখে রাখবে।
কেয়া বললো,
~আমাকে যে শুধু বকে তা তো দেখো না।
আফজাল হোসেন বললেন,
~পাগলী মেয়ে যখন জীবনসঙ্গীনী হবি তখনই তুই বকবি ও শুনবে।
কেয়া খুশী হয়ে বললো,
~সত্যি?
আফজাল হোসেন বললেন,
~হ্যা রে সকল বিবাহিত পুরুষ নিজ স্ত্রী কাছে বকা খেয়েই মানুষ হয়।
কেয়া বললো,
~তাহলে আমি রাজি কখন বিয়ে করতে হবে?
আফজাল হোসেন মেয়ের কথা শুনে হো হো করে হেসে উঠলেন আর বললেন,
~হেমন্তির মা শুনে যাও তোমার মেয়ে বিয়ের জন্য তৈরি হয়ে গেছে।
পারভীন বেগম রান্নাঘর থেকে রুমে এসে বললেন,
~তাহলে তো ভালোই হলো শোন কেয়া তানভীর অনেক ভালো ছেলে দেখবি তোকে সুখে রাখবে।
কেয়া মুখ বাকিয়ে বললো,
~আমাকে সুখে না রাখলে ওর জীবনে অনেক দুঃখ নামবে।
পারভীন বেগম চোখ বড় বড় করে বললো,
~বেয়াদব মেয়ে যা রুমে যা।
কেয়া উঠে নিজ রুমের দিকে চলে গেলো ডাইনিং টেবিলের সামনে আসতেই তানভীরের দেখা পেলো কেয়া তানভীরের দিকে তাকিয়ে মুখ ভেংচি কেটে নিজের রুমে চলে গেলো।তানভীর পানির গ্লাস টেবিলে রেখে মুচকি হেসে মাথা নাড়িয়ে বললো,
~পাগল মেয়ে।
ইলহাম নাস্তার টেবিলে বসে হেমন্তি আর আজাদ সাহেবকে কেয়া আর তানভীরের বিয়ের কথা বললো।আজাদ সাহেব বললেন,
~যতদূর ছেলেটাকে দেখেছি ছেলেটা ভালো কেয়ার সাথে বেশ মানাবে।
হেমন্তি বললো,
~কেয়া রাজি হয়েছে?
ইলহাম বললো,
~বাবা ফোন করেছিলো একটু আগে কেয়া রাজি আছে।
হেমন্তি বললো,
~তাহলে তো কোনো সমস্যা নেই।
ইলহাম বললো,
~অনুর বিয়ের দিন আমি তানভীরের সাথে কথা বলেছিলাম তানভীরও রাজি আমার মতে এগিয়ে যাওয়াটা ভালোই হবে।
হেমন্তি বললো,
~আগামীকাল তো তানভীরের বাবা আসছেই তখনই সরাসরি কথা হয়ে যাবে।
ইলহাম বললো,
~হ্যা তাই করতে হবে।
হেমন্তি ইলহামকে অফিসের জন্য বিদায় দিয়ে পারভীন বেগমকে ফোন দিয়ে সব জেনে নিলো পারভীন বেগম বললেন,
~হিয়া আর ওর পরিবারকেও বলতে হবে তুই ওদেরকে বলে দিস আর তোর বাবা দোকান থেকে আসার সময় ওদের বাড়ি হয়ে আসবে নে।
হেমন্তি বললো,
~তাই ঠিক হবে।
পারভীন বেগম বললেন,
~অনুকেও ফোন করে বলে দিয়েছি।
হেমন্তি বললো,
~আমিও ওকে ফোন দিবো কালকের পর আর কথা হয়নি এখন একটু কথা বলবো।

_____________________♥________________________

পরেরদিন হেমন্তি ইলহাম সকলকে নিয়ে হেমন্তির বাসায় চলে আসলো হেমন্তি মায়ের সাথে কাজে যোগ দিলো।অনু আর হিয়া চলে গেলো কেয়ার কাছে তানভীরের বাবা একটু পরই চলে আসবে তানভীর, আফজাল হোসেন, আর আজাদ সাহেব গিয়েছেন তাকে আনতে।কেয়া শাড়ি পরেছে পারভীন বেগম তাকে দিয়ে গেছে আর কড়া গলায় বলে গেছে যাতে সে এই শাড়িটাই পরে।কেয়া শাড়ি পরে মাথা খোঁপা করেছে অনু বললো,
~তোকে তো অনেক সুন্দর লাগছে।
কেয়া বললো,
~ছাই সুন্দর লাগছে সেই ভোর ৬টায় উঠিয়ে রেখেছে আমায়।
হিয়া বললো,
~তুমি কী বিরক্ত বোধ করছো?
কেয়া বললো,
~বিরক্ত,ভয়,কান্না,হাসি সবই লাগছে এখন বলুন তো আপু কী করা যায়?
হিয়া হেসে বললো,
~তুমি অনেক দুষ্ট কেয়া বিয়ের পর এই দুষ্টুমি কমাতে হবে।
কেয়া বললো,
~একটুও না আমি ওই উজবুকটাকে সারাক্ষণ জ্বালাবো।
অনু বললো,
~উজবুকটা কী তানভীর?
কেয়া বললো,
~আর কে হতে পারে?
অনু বললো,
~তোর হবু শ্বশুর আসছে একটু কন্টোল করিস।
তখনই রুমে হেমন্তি বললো,
~তানভীরের বাবা এসে পরেছে কেয়া মাথায় কাপড় দিয়ে চলে আয়।
কেয়া শাড়ির আঁচল মাথায় দিলো হিয়া আর অনু তাকে নিয়ে সোফার ঘরে চলে আসলো কেয়াকে দেখে তানভীরের বাবা অনেক পছন্দ করলো।সে একটা আবদার করলো আফজাল হোসেনের কাছে তিনি বললেন,
~আজই যদি বিয়েটা হয়ে যেতো তাহলে আমি নিশ্চিন্তে বাসায় যেতে পারতাম।
আফজাল হোসেন বললেন,
~আজ কীভাবে সব হবে?
তানভীরের বাবা বললেন,
~আসলে গ্রামের বাড়িতে কেউই নেই আমি ছাড়া এখন পুরো খালি তাই দ্রুত যাওয়ার চেষ্টা করছি।
ইলহাম বললো,
~তাহলে আজ বিকেলেই বিয়ে হয়ে যাক।
সবাই সহমত পোষন করলো তানভীর কিছু টাকা হেমন্তির হাতে দিয়ে দিলো শপিং করতে।সব মেয়েরা শপিংয়ে চলে গেলো বিয়ের শাড়ি আর বাকি জিনিস কিনতে দেখতে দেখতে দুপুর গড়িয়ে বিকেল চলে আসলো তানভীর আর কেয়ার বিয়ে পরানো শুরু হলো কাজী সাহেব কেয়ার কাছে চলে গলেন কেয়ার শেষ হলে তানভীরের কাছে চলে গেলেন।অবশেষে কেয়া আর তানভীরের বিয়ে সম্পন্ন হলো তানভীর আজই নতুন বউ নিয়ে নিজ ফ্লাটে উঠতে চায়।
তানভীরের বাবা আগামী মাসে গ্রামের বাড়ি গুছিয়ে ছেলের কাছে চলে আসবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিলেন।অতঃপর কেয়ার বিদায়ের সময় চলে আসলো সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে কেয়া তানভীরের সাথে চলে গেলো নিজ সংসারে।
কেয়াকে বিদায় দিয়ে হেমন্তি আর বাকিরাও চলে আসলো যার যার বাড়িতে। হিয়া রাস্তায় জানিয়ে দিলো তাদের যাওয়ার ডেট ১মাস ইলহামের বোনের জন্য মন খারাপ হলো বোনটা তার অনেক দূরে চলে যাচ্ছে।

_____________________♥____________________

১মাস পর,
আজ হিয়া আর ফারুক আমেরিকা চলে যাবে হেমন্তি ইলহাম আর আজাদ সাহেব চলে এসেছেন হিয়ার বাসায়।হিয়ার হাতে হাতে সব কাজই হেমন্তি করছে।হেমন্তির শরীরটাও ইদানিং ভালো যাচ্ছে না।হঠাৎ হেমন্তির অজ্ঞান হয়ে নিচে পরে গেলো হিয়া হেমন্তিকে ধরে চিৎকার দিয়ে ইলহামকে ডাকলো।হিয়ার কন্ঠ শুনে সবাই একত্রিত হয়ে গেলো ইলহাম হেমন্তিকে কোলে তুলে বিছানায় শুইয়ে দিলো ফারুক ডক্টর ডেকে নিয়ে আসলো।ডাক্তার তাকে চেক করে বললেন,
~আমি কিছু টেস্ট দিচ্ছি তা করিয়ে নিন হয়তো সে প্রেগন্যান্ট তবুও টেস্ট করিয়ে কনফার্ম করে নিন।
ইলহাম সহ বাকি সবাই অনেক খুশী হয়ে গেলো হিয়া তো খুশীতে পাগলপ্রায় অবস্থা।ইলহাম হেমন্তির মাথার কাছে বসে আছে তখনই হেমন্তি পিটপিট করে চোখ খুলে ইলহামকে দেখতে পেলো।ইলহাম হেমন্তির মাথায় ভালোবাসার পরশ এঁকে দিয়ে বললো,
~হাসপাতাল যেতে হবে কিছু টেস্ট করাতে।
হেমন্তি বললো,
~ডক্টর কী বলেছে?
ইলহাম বললো,
~হয়তো তুমি প্রেগন্যান্ট।
হেমন্তি বললো,
~সত্যি?
ইলহাম বললো,
~হাসপাতাল গেলে সব বুঝা যাবে।
অতঃপর ইলহাম হেমন্তিকে নিয়ে হাসপাতাল চলে গেলো সব রিপোর্ট করিয়ে ডাক্তারকে দেখানোর পর ডাক্তার বললো,
~আপনি প্রেগন্যান্ট মিসেস হেমন্তি।
ইলহাম আর হেমন্তি দুজনই খুশী মনে বাসায় ফিরে সবাইকে জানালো কথাটা।হিয়া তো এখন আমেরিকা যেতেই চাইছেনা কিন্তু ফারুকের জন্য যেতে হবে হিয়া হেমন্তিকে জড়িয়ে ধরে বললো,
~আমার জন্যও দোয়া করো যাতে আমিও মা হওয়ার সুখটা অনুভব করি।
হেমন্তি বললো,
~ইনশআল্লাহ।
হিয়া আর ফারুকে ইলহাম এয়ারপোর্টে পৌছে দিয়ে আসলো হিয়া ইলহামকে ধরে অনেক কাদলো বোনের জন্য আজ ইলহামের চোখেও পানি।হিয়া বললো,
~হেমন্তির খেয়াল রাখিস।
হিয়া আর ফারুকের প্লেন ছেড়ে দিলো দুজনই নিজ মাতৃভূমি ছেড়ে চলে গেলো #অচেনা_শহরে।
ফারহান আর রেহেনা বেগম ইলহামদের বাসায় চলে এসেছেন রাতে হেমন্তি ইলহামের কাঁধে মাথা রেখে বসে আছে ইলহাম বললো,
~হেমন্তি,আমার অতীতটা জানলে কী খুব ক্ষতি হয়?
হেমন্তি বললো,
~বিষাক্ত জিনিস জানতে চাইনা আর কখনো এ ব্যাপারে কথা বলবেন না নাহলে বাবু সহ চলে যাবে এ বাসা থেকে।
ইলহাম বললো,
~এতো সোজা নাকি চলে যাওয়া দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখবো।
দুজনই খুনশুটিতে ব্যাস্ত হয়ে পরলো ইলহাম এখন নিজ অতীতকে ভুলে হেমন্তিকে আকড়ে ধরে বেঁচে থাকতে শিখে গেছে।

___________________♥______________________

৯ মাস পর
হেমন্তি ব্যাথায় ছটপট করছে তাকে ইলহাম সহ বাকি সবাই হাসপাতালে নিয়ে এসেছে।হিয়া ভিডিও কল করে একটু পর পর কাঁদছে হেমন্তি ব্যাথার কারণে লাল হয়ে গেছে।ডাক্তার তাকে কেবিনে ডুকিয়ে দিলেন ইলহামের অনেক ভয় করছে সবাই কান্না করছে।ফারুক ভিডিও কলে হিয়াকে বলছে চুপ থাকতে কারণ হিয়াও ৩মাসের প্রেগন্যান্ট হ্যাঁ আল্লাহ তা আলা তার মনের আশা পূরণ করেছে।সবাই সুখে আছি অনু,ইমজাদ এক সাথে কোচিং সেন্টার চালু করেছে তারা এখন হাতে হাত রেখে কাজ করছে।কেয়া আর তানভীরও সুখে আছে কেয়া এখন তানভীরকে অনেক বকা দেয়া কিন্তু পড়ার সময় কেয়া তানভীরকে এখনো বাঘের মতো ভয় পায়।পারভীন বেগমকে ফারুকের মা রেহেনা বেগম সামলাচ্ছেন ইলহাম পায়চারী করছে ইমজাদ আর তানভীর তার সাথেই রয়েছে।একটুপর ডাক্তার বের হয়ে বললেন,
~সুখবর আপনার ছেলে হয়েছে। আর আপনার ওয়াইফও ঠিক আছে।
ডাক্তারের কথা শুনে সবাই খুশী হয়ে গেলো হিয়া কান্না থামিয়ে বললো,
~বাবুকে দেখা আমি দেখবো।
ইলহাম মোবাইল হাতে নিয়ে বললো,
~দেখাচ্ছি।
নার্স সাদা টাওয়ালে জড়িয়ে ছোট্ট জানকে ইলহামের হাতে দিয়ে দিলো হিয়া বাবুকে দেখে আবার কাঁদতে লাগলো।সবাই তার কান্না দেখে এখন মিটমিট করে হাসছে ফারুক হিয়াকে বললো,
~সুখের সময় কাঁদছো কেন
হিয়া বললো,
~আপনি বুঝবেন না চুপ থাকুন।
হেমন্তি বাবুকে কোলে নিয়ে বসে আছে অনু তাকে বললো,
~নাম কী ঠিক করেছিস?
হেমন্তি বললো,
~সাদাফ হোসেন অয়ন।
অনু বললো,
~বাহ নামটা খুব সুন্দর।
আজাদ সাহেব পুরো হাসপাতালে মিষ্টি বিলিয়ে বেড়াচ্ছেন তার ছেলের ঘরে সন্তান হয়েছে তার একটা সাথী এসেছে এ বলে বেড়াচ্ছেন।ইলহাম হেমন্তির কাছে গিয়ে হেমন্তির চোখে-মুখে চুমু খেয়ে বললো,
~আমার #অচেনা_শহরে তোমার আগমনটা সারাজীবনে জন্য আমাকে সুখী করে রাখছে আর আমাদের রাজকুমার এসো তা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে ধন্যবাদ তোমায়।
বলেই সে হেমন্তি আর সাদাফকে জড়িয়ে ধরলো হেমন্তির চোখ ছলছল করে উঠলো সে মনে মনে বললো,
~আমার জীবনে এতোটা সুখ আসবে তা জানতাম না আপনাকেও ধন্যবাদ ভালোবাসি আপনাকে❤️❤️।
সবার জীবনেই অতীত থাকে কিন্তু সেই অতীত আকড়ে ধরেই বাড়তে হবে এমন কোনো কথা নেই জীবনের পথে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে মানুষকে ভালোবাসতে হবে তাহলে জীবন সুখের হবে শান্তির হবে।

সমাপ্ত

(গল্পটির সমাপ্তি হয়ে গেলো আমার পাশে থাকার জন্য ধন্যবাদ আপনাদের দিন দিন আপনাদের ভালোবাসা পেয়ে আমি মুগ্ধ। গতকালই পোস্ট করতাম কিন্তু মোবাইল চুরি হয়ে যাওয়ার কারণে করতে পারিনি তার জন্য দুঃখীত।আমি একটা লম্বা ছুটি নিচ্ছি ইনশাআল্লাহ ঈদের পর আবার ফিরে আসবো আপনাদের মাঝে ততদিন পর্যন্ত ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।আল্লাহ হাফেজ🥰🥰)

(বিদ্রঃকেমন হয়েছে জানাবেন।ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো🥰🥰।Happy Reading 🤗🤗)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here