অতঃপর_প্রেমের_আগমন #ইরিন_নাজ #পর্ব_০৩

0
496

#অতঃপর_প্রেমের_আগমন
#ইরিন_নাজ
#পর্ব_০৩

চোখে তে’জী সূর্যের আলো পড়ায় ঘুম ভাঙলো আয়ানার। চোখ ডলে উঠতে চাইলে বুঝতে পারলো তার পেটের উপর কিছু একটা রাখা। চোখ মেলে পেটের দিকে তাকাতেই আঁ’ত’কে উঠলো সে। কারোর হাত তার কোমর শক্ত করে জড়িয়ে আছে। হাতের মালিকের দিকে চোখ যেতেই বুঝতে পারলো তার গম্ভীর স্বামী তাকে জড়িয়ে ধরে আছে। হয়তো অজান্তেই তার কোমর আঁকড়ে ধরেছে। কিছুক্ষন পর্যবেক্ষণ করে আয়ানা একটা জিনিস আবিষ্কার করলো, তা হলো তার বর সুদর্শন হলেও মাত্রাতিরিক্ত গম্ভীর। এই যে ঘুমিয়ে আছে তাও মুখ টা গম্ভীর করে রেখেছে। আয়ানা মনে মনে ভাবলো, ‘লোকটা হাসতে জানে না নাকি? ঘুমের মধ্যেও মুখ টা এমন গম্ভীর করে রেখেছে যেনো কোনো ঘুমিয়ে ঘুমিয়েও কোনো সিরিয়াস কাজ করছে।’

নিজের আবোল তাবোল পর্যবেক্ষণ শেষে আয়ানার মনে হলো এবার তার ওঠা উচিত। অনেক দেরি হয়ে গেছে হয়তো। সময় দেখার জন্য মাথা এদিক ওদিক ঘোরালো আয়ানা। বেডের ডান দিকে কাঙ্ক্ষিত বস্তু ঘড়ি পেয়ে তাতে সময় দেখে নিলো সে। ৮:১০ বেজে গেছে তারমানে অনেক দেরি হয়ে গেছে। ওঠার জন্য উসখুস করতে লাগলো সে। কিন্তু উঠবে তো উঠবে কিভাবে! যেই শক্ত করে ধরে রেখেছে দেখে ফোঁস করে শ্বাস ছাড়লো সে। অনেক সাবধানতার সাথে তাকে উঠতে হবে। নাহলে লোক টা জেগে যাবে। আর লোক টা জেগে গেলে তাকেই লজ্জায় পড়তে হবে।

আয়ানা চো’রে’র মতো আদ্রিশের দিকে চোখ রেখে ধীরে ধীরে হাত উঠাতে লাগলো। কিন্তু যেই ভয় মনে ছিলো তাই সত্যি হলো। আদ্রিশের ঘুম ভেঙে গেলো আয়ানার নড়াচড়া করায়। হাতে নরম কিছুর স্পর্শ উপলব্ধি করায় ঘুমে ব্যাঘাত ঘটলো আদ্রিশের। পিটপিট করে চোখ খুলে পাশে থাকাতেই দেখলো আয়ানা গোল গোল চোখ করে তার দিকে তাকিয়ে আছে। আয়ানা আগে থেকেই তাকিয়ে ছিলো আর আদ্রিশের তাকানোতে দুজনের দৃষ্টির মিলন ঘটলো। হঠাৎ করে আদ্রিশের তাকানোতে ভড়কে গেলো সে। এমন কিছুর জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না আয়ানা। সে আদ্রিশের দিক থেকে নজর সরিয়ে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলো। গাল দুটোতে লজ্জার আভা ছড়িয়ে পড়লো। এটা খুবই ছোট একটা বিষয়, তারপরও তার কেনো যেনো লজ্জা লাগছে। বড্ড বেশিই লজ্জা লাগছে।

আদ্রিশ আয়ানার এমন অদ্ভুত ব্যবহারের কারণ বুঝে উঠতে পারলো না প্রথমে। আয়ানার লাল আভা যুক্ত ফুলো ফুলো গালজোড়া অবলোকন করতে লাগলো। মনে মনে ভাবতে লাগলো, ‘মেয়ে টা এতো আদুরে কেনো? এই লাল আভা যুক্ত ফুলো গাল দেখে ইচ্ছা করছে একটু টেনে আদর করে দেই। কিন্তু এই মেয়ে লজ্জা পাচ্ছে কেনো?’ পরক্ষনেই নিজের হাতের দিকে নজর যেতেই ঘটনার বুঝতে পারলো আদ্রিশ। নিজের হাত আয়ানার কোমরে দেখে অপ্রস্তুত হলো সে। দ্রুত হাত সরিয়ে উঠে বসলো। আয়ানাও উঠে বসে গেলো। হাতে, গলায় আর গালের কিছু অংশে চিটমিট করে জ্বলছে। হয়তো গহনা আর শাড়ির ঘষাতে এমন হয়েছে। আয়ানা হাতের লাল লাল হওয়া জায়গা টা দেখছে।

আদ্রিশ উসখুস করছে কিছু বলার জন্য। শেষে আয়ানার দিকে না তাকিয়েই এক নিঃশ্বাসে বললো,

— শোনো আমি দুঃখিত। আমি আসলে তেমন টা ইচ্ছা করে করি নি। আমি অমন ছেলে না। ঘুমের ঘোরে হয়ে গেছে।

নিজের কথা শেষ করে আর এক সেকেন্ড ও বসলো না আদ্রিশ। সোজা ওয়াশরুমে গিয়ে ধু’ম করে দরজা লাগিয়ে দিলো। আয়ানা এখনো হা করে আদ্রিশের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। আদ্রিশের বলা সরি এখনো তার হজম হয় নি। আদ্রিশ যে সরি বলবে চিন্তার বাহিরে ছিলো তার।

অন্যদিকে আদ্রিশ ওয়াশরুমের দরজা লক করে বেসিনের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। মুখে পানির ছিটা দিয়ে আয়নায় নিজের প্রতিবিম্বর দিকে তাকিয়ে রইলো। নিজের মাঝের পরিবর্তন গুলো দেখার চেষ্টা করতে লাগলো। নিজেই নিজেকে বলতে লাগলো,

— এসব কি হচ্ছে আমার সাথে? ওই মেয়ের কাছাকাছি থাকলে আমার হার্ট এতো জোরে লাফায় কেনো? যেই আমি কখনো কারোর সামনে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করি না ; সেই আমার সবকিছু ওই মেয়ের সামনে থাকলে এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে! Why! এক রাতে আমার মাঝে এই পরিবর্তন কোথা থেকে আসলো? এতটুকুন একটা পুচকি মেয়ের সামনে আমি, আদ্রিশ কখনোই নত হতে পারি না। কখনোই না।

নিজের চুল খা’ম’চে ধরলো আদ্রিশ। পুনরায় বিড়বিড় করলো,

— নিজেকে, আর নিজের অনুভূতি কে সামলে রাখতে হবে। এসব প্রেম, ভালোবাসা কিছু হয় না। সব ধোঁ’কা, সব। আর এসব অল্প বয়সী মেয়েরা অনেক বেশি আবেগ প্রবন হয়। সেই আবেগে আমি একজন ম্যাচুর মানুষ হয়ে গা ভাসাতে পারি না।

——–

আয়ানা এখনো আগের জায়গায় বসে আছে। কি করবে বুঝতে পারছে না। গহনাগুলো সব একে একে খুলে রেখেছে। কিন্তু শাড়ি, তা তো চেঞ্জ করা হলো না। পরনের শাড়িটাকে এখন খুব বেশি বিরক্তিকর লাগছে আয়ানার। শরীর টা মেজমেজ করছে। শাওয়ার নিতে পারলে ভালো লাগতো। কিন্তু তার লাগেজ, কাপড় কোথায় আছে জানা নাই তার। তাই বিরক্ত লাগা সত্ত্বেও চুপচাপ বসে আছে।

আদ্রিশ ফ্রেশ হয়ে এসে দেখলো আয়ানা ঠোঁট উল্টে নিজের হাত উল্টে পাল্টে দেখছে। প্রথমে এর কারণ না ধরতে পারলেও গলার দিকে চোখ যেতেই একটু অস্থিরতা কাজ করলো আদ্রিশের মনে। গলার দিকটায় লাল লাল হয়ে আছে। সে এক পা, দুই পা করে আয়ানার কাছে গিয়ে দাঁড়ালো। জিজ্ঞাসা করলো,

— হাতে, গলায় কি হয়েছে? এমন লাল লাল হয়ে আছে কেনো?

আয়ানা হুট করে আদ্রিশের আওয়াজ শুনে একটু ভয় পেলেও নিজেকে সামলে নিলো। মিনমিন করে বললো,

— শাড়ির কাজ আর গহনার ঘষা লেগে এমন হয়েছে।

আদ্রিশ ফোঁস করে একটা শ্বাস ছাড়লো। বিরক্তিতে কপাল কুঁচকে এলো তার। এখন এই দাগ দেখে মানুষজন উল্টাপাল্টা ভাবলে কি হবে! আয়ানার দিকে তাকিয়ে রাগী গলায় বললো,

— স্টু’পি’ড একটা। এসব জ’ঞ্জা’ল পরে ঘুমালে তো এমন হবেই। এখনো বসে আছো কেনো স্টুপিড? যাও ড্রেস চেঞ্জ করে আসো।

আদ্রিশের বকা খেয়ে আয়ানার মুখ টা কাঁদো কাঁদো হয়ে গেলো। ঠোঁট উল্টে ভাবতে লাগলো, তার জামাই ও বুঝি রিয়ার আর তার মার জামাইয়ের মতো হবে!

— কি হলো যাওও।

আয়ানার হেলদোল না দেখে হালকা ধমক দিয়ে বললো আদ্রিশ। আয়ানা কেঁপে উঠে কেঁদেই ফেললো এবার। কোনো শব্দ হচ্ছে না। শুধু চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। আয়ানার চোখে পানি দেখে আদ্রিশ নিজের বুঁকের মধ্যে কেমন চিনচিন ব্যথা অনুভব করলো। তার এই অল্প বকায় যে আয়ানা কেঁদে ফেলবে বুঝতে পারে নি সে।

আদ্রিশ আয়ানার দিকে ঝুঁকে বিছানার দু পাশে নিজের হাত রাখলো। হঠাৎ আদ্রিশের এতো কাছে আসার কারণ বুঝে উঠলো না আয়ানা। ফেলফেল করে তাকিয়ে রইলো সে। আদ্রিশ আয়ানার চোখে চোখ রেখে বললো,

— কি সমস্যা? ফ্রেস হতে বললাম তাতে কাঁদলে কেনো? তোমার কি এই জ’ঞ্জা’ল পড়ে বসে থাকতে ইচ্ছা করছে! তাহলে বসে থাকো।

আয়ানা নিম্ন স্বরে বললো,

— আ,, আসলে আমার লাগেজ কোথায় আমার জানা নেই। আমি ফ্রেস হয়ে কি পড়বো?

এবার কাহিনী বুঝলো আদ্রিশ। আয়ানার কপালে একটা টো’কা মে’রে বললো,

— তুমি আসলেই একটা স্টু’পি’ড। এতক্ষন বলা যেতো না এই কথা?

আদ্রিশ নিজের ফোন নিয়ে বেলকনিতে চলে গেলো কাউকে কল করতে। আয়ানা কপাল ঘষতে ঘষতে বিড়বিড় করে বললো,

— বারবার স্টু’পি’ড স্টু’পি’ড করে কেনো? এখন তো জানলো কি সমস্যা, তাও হেল্প করলো না। লোকটা একদম ভালো না।

চলবে?

(সবাই অবশ্যই জানাবেন গল্প কেমন হচ্ছে। আর ভু’ল-ত্রু’টি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here