অতঃপর_প্রেমের_গল্প❤পর্ব___২১
#কায়ানাত_আফরিন
ভোরের আমেজে এক অন্যরকম টান অনুভব করা যায় শ্রীমঙ্গলে। চারিদিকে ফুরফুরে হাওয়া, নির্মল আকাশে উড়ে বেড়ায় সাদা মেঘের ভেলা। সেই মেঘের আড়ালে রৌদ্দুর লুকোচুরি খেলা শুরু করেছে সবার সাথে। আফরা সেসব প্রকৃতিতে বিভোর না হয়ে কাথা মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে রইলো। আজ ওর শরীরটা ভালোলাগছে না। বাবার সাথে কথা বলেছে অনেক রাত পর্যন্ত। মা’এখনও রেগে আছে ওর ওপর। সেদিন মায়ের অফিসে হঠাৎ করে নাকি এরিকের উপদ্রব হয়েছিলো। এরিক জানতো না যে এখানেই আফরার মা জব করে কিন্ত এরিককে দেখে বেজায় রেগে গিয়েছিলেন তিনি। আফরা সেসব সামলে নিয়ে ঘুমালো অনেক রাত করে। ঘুমের মধ্যেও বারবার ভেসে উঠছিলো একটি মানুষের চেহারা , মানুষটি আর কেউ নয় , ফারহান! গতকালকের কলেজের ঘটনায় সর্বপ্রথম ফারহানের উত্তেজিত রাগের মুখোমুখি হয়েছিলো সে। কি ভয়ংকরভাবেই না হামলে পড়লো সে মানুষগুলোর ওপর! আচ্ছা রাজনীতি কি আসলেই এত ভয়ংকর? আফরা দুর্বলচিত্তে ঘুমানোর চেষ্টা করতেই অনুভব করলো কপালে কারও উষ্ণ স্পর্শ।
আফরা শুনতে পারছে মিসেস নাবিলার কন্ঠ। উনি বলছেন,
-‘আফরা, আজ এতক্ষণ ঘুমাচ্ছো যে? শরীর খারাপ করছে?’
-‘না আন্টি।’
মিথ্যে বলতে বলতে উঠে বসলো আফরা। আফরার নিজেরই খারাপ লাগছে ঘুম থেকে উঠেই প্রথমে মিথ্যে বলাতে। কিন্ত সত্য বললে সবাই টেনশনে অস্থির হয়ে যেতেন ওর জন্য। আর আফরা এসব বিষয় কখনোই পছন্দ করেনা। মিসেস নাবিলা এবার তপ্তশ্বাস ছাড়লেন। জড়ানো কন্ঠে বললেন,
-‘জলদি মুখ ধুয়ে আসো মা। এতো বেলা করে ওঠা ভালো নয়।’
-‘আমি ফ্রেস হয়ে আসছি।’
আফরার কথা শুনে চলে গেলেন মিসেস নাবিলা। আফরা হাতগুলো হালকা ঝারি মেরে নিজেকে ষতেজ করে নিলো। মাথাটা যন্ত্রণায় ভোঁ ভোঁ করছে। তারপর দ্রুত ফ্রেস হওয়ার জন্য চলে গেলো বাথরুমে।
_____________
ড্রইংরুমে যেতেই আফরা প্রথমে মুখোমুখি হলো ফারহানের।ফারহানকে দেখে আফরা কিঞ্চিত অবাক। বাংলোবাড়িতে সচরাচর কমই আসে ফারহান। আর যদি এসে থাকে, তাহলে বুঝতে হবে খুব প্রয়োজনের জন্যই এসেছে। আফরা মিহি কন্ঠে ফারহানকে এবার বললো,
-‘গুড মর্নিং!’
-‘মর্নিং!’
প্রতিউত্তর দিলো ফারহান। তারপর ড্রইংরুমের সোফায় আড়ষ্ট হয়ে বসে পড়লো। ফারহানের শরীর ক্লান্ত, অবসন্ন। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম দেখা যাচ্ছে। আফরা আন্দাজ করে নিলো হয়তো বাহিরে গিয়ছিলো সে।মিসেস নাবিলা আফরাকে বললো,
-‘একি আফরা! ওখানে দাঁড়িয়ে আছো কেনো? নাস্তা করতে আসো?’
-‘জ্বি আসছি।’
বলেই ডাইনিং টেবিলে বসলো আফরা। ফাহিম মিঃ ইফাজ ড্রইংরুমে বসে আছে ফারহানের সাথে। আফরা মিসেস নাবিলাকে পরখ করে নিলো একবার। ভদ্রমহিলা কিচেনে কাজ করতে ব্যস্ত। এখনই উত্তম সুযোগ ফারহান সম্পর্কে ইলাকে প্রশ্ন করার। নাহলে মিসেস নাবিলা বরাবরের মতোই সুক্ষ্ণ চালে এড়িয়ে যাবেন ফারহানকে।আফরা ফিষফিসিয়ে সামনে বসা ইলিকে ডাক দিয়ে বললো,
-‘এই ইলা!’
-‘হুম?’
-‘ফারহান তো কখনোই এখানে আসে না। আজ তাহলে এখানে এসেছে যে?’
ইলাও একবার দেখে নিলো ওর মা’কে । তারপর ফিসফিসিয়ে বললো,
-‘আসলে এই টি এস্টেটটা ফারহান ভাইয়ের কাছ থেকে কিনে নিতে চাচ্ছে আমার মা। যদিও ফারহান ভাই সাফ মানা করে দিয়েছে। আমার মনে হয় এ বিষয় নিয়েই কথা হচ্ছে। তবে কি কথা হচ্ছে তা আমি জানি না আপু।’
আফরা ছোট্ট করে ‘ওহ্’ বলে আবার খাবারে মনোনিবেশ করলো।ইলাও এ প্রসঙ্গে কথা বাড়ালো না আর।
.
.
ফারহান সোফায় মেরুদন্ড সোজা করে বসে অপেক্ষা করছে মিঃ ইফাজ আর ফাহিমের কথাবার্তা শোনার জন্য। দুজনেই কথা শুরু করতে গিয়ে আটকে যাচ্ছে বারবার। ফারহান একটা উষ্ণশ্বাস ছাড়লো। হাতঘড়ির দিকে তাকিয়ে সময়টা দেখে মিহি স্বরে বললো,
-‘অনেকক্ষণ তো হয়ে গেলো চাচু আমি এখানে এসেছি। কি বলতে চাও বলো?’
মিঃ ইফাজ অগোচরে ঠোঁটজোড়া চেপে ভাবলেন কিছুক্ষণ। তারপর প্রতিউত্তরে বললেন,
-‘আমি বারবার তোমায় বিরক্ত করতে চাচ্ছি না ফারহান। তবুও করতে আমি দায়বদ্ধ। কেনো জানো? তোমার চাচির জন্য।’
ফারহান মৌন রইলো এবার। ওর চাচি ওরফে মিসেস নাবিলা যে ফারহানের কাছে ঠিক কি চায় ফারহান তা ভালোমতই জানে।ফারহানকে এতটা ভাবুক হতে দেখে ফাহিম এবার বললো,
-‘মা’কে আমি বারবার বোঝানোর চেষ্টা করেছি ফারহান। কিন্ত মা আমার কথা মোটেও শুনছে না। সে যে করেই হোক , তোমার থেকে এই টি এস্টেটটা কিনে নিতে চায়।’
ফারহান তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো। গম্ভীর কন্ঠে বললো,
-‘তোমরা কি মনে করো চাচি কেন আমার থেকে এই টি এস্টেটটি কিনে নিতে চায় তা আমি বুঝিনা?শ্রীমঙ্গলে এরকম অজস্র টি এস্টেট আছে। শুধু তাই নয় ইন্ডিয়ার বর্ডার ঘেষে এই টি এস্টেট বলে এখানকার সিকিউরিটি যেমন কম , তেমনই এর চাহিদাও অনেক বেশি। তাহলে এত টি এস্টেট থাকতে চাচি এটাই কেনো চাচ্ছে?আসলে দাদু যে এই সম্পত্তিটা আমার নামে করে দিচ্ছে এটা উনার ভালোলাগছে না।’
ফারহান থেমে গেলো এবার। মিঃ ইফাজ নিশ্চুপ। ফাহিম আগ বাড়িয়ে বললো,
-‘আরে এমন কিছু না ফারহান। আসলে তুমি এই জায়গাগুলো থেকে যা প্রফিট পাও সবই তো পার্টি আর এখানকার মানুষদের জন্য বিলিয়ে দাও। এটাই মা’র পছন্দ না।’
-‘আমার কোনো কাজে কখনোই তো উনার মাথা ব্যাথা ছিলো না , বরং যতদিন আমি তোমাদের মাথায় বোঝা ছিলাম ততদিন চাচি শুধু এটাই চেয়েছে কতদিনে আমি এ বাড়ি ছেড়ে চলে যাই। আমি আগেও বলেছি ফাহিম আবারও বলছি ,আমার দাদুর দেওয়া শেষ স্মৃতি এটি। আমি মরে যাবো তবুও কারও কাছে এই জায়গা হস্তান্তর করবো না।’
মিঃ ইফাজ দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। তিনি জানেন ফারহান তার সিদ্ধান্তে অটল। আফরা খাওয়ায় মগ্ন থাকলেও ঙ্কীণ স্বরে ওদের কথাগুলো শুনতে পেয়েছে আবছা আবছা। কিন্ত ও সেদিকে কর্ণপাত করলো না। কেননা মানুষের কথা লুকিয়ে শোনার মতো অভ্যাস ওর কখনই ছিলো না। মিঃ ইফাজ মৃদুভাবে বললেন,
-‘আচ্ছা তোমাকে আর চিন্তা করতে হবে না। আর কখনোই আমি বা ফাহিম এ বিষয়ে তোমায় জোর দেবো না। ঠিকাছে?’
-‘হুমমম।’
-‘এখন তাহলে আসো। নাস্তা করো।আমাদের নাস্তা করা শেষ। আফরা খাচ্ছে। তুমিও পাশ দিয়ে বসে পড়ো।’
-‘ঠিকাছে।’
ফারহান সোফা থেকে উঠে ডাইনিং টেবিলে বসে পড়লো আফরার পাশে।আফরা গোল গোল চোখ করে একপলক তাকালো ফারহানের দিকে। মানুষটা নির্বিকার। মিসেস নাবিলা এবার মৌনতা বজায় রেখে খাবারের প্লেট এগিয়ে দিলো ফারহানকে। আফরা হঠাৎ ফারহানকে ফিসফিসিয়ে বললো,
-‘আপনার হাতের ব্যাথা কমেছে মিঃ কমরেড?’
ফারহান ভ্রু কুচকে তাকালো আফরার দিকে। আফরা উত্তর শোনার জন্য তাকিয়ে আছে ওর দিকে। ফারহান ঠোঁট চেপে মৃদু কন্ঠে বললো,
-‘তুমি গতকাল আমার হাতে রক্ত দেখে যেরকম করছিলে ব্যাথা তো ভয়ে আগেই পালিয়ে গিয়েছে যাতে তোমার মুখোমুখি আর হতে না লাগে।’
ফারহানের ঠাট্টা ধরতে পরে আফরা মুখ ফুলিয়ে আবার খাওয়াতে মন দিলো। ফারহান আলতো হাসলো এবার। মেয়েটার কিছু কিছু পাগলামি দেখলে ভালোই লাগে। হঠাৎ সদর দরজায় জোরে জোরে কড়াঘাতের জন্য সবাই ওদিকে নজর দিলো। মিসেস নাবিলা ইলাকে বললো,
-‘ইলা! দেখ তো কে এসেছে!’
-‘দেখছি মা।’
বলেই ইলা গিয়ে দরজা খুলে দিলো। কিন্ত ইলাকে সেই জায়গায় স্তব্ধ হয়ে থাকতে দেখে আশ্চর্য হয়ে গেলো সবাই। মিঃ ইফাজ বললো,
-‘কে এসেছে ইলা?’
-‘পু-পু-পুলিশ বাবা!’
ইলা বে ওঠলো তটস্থ গলায়। পুলিশের কিছু লোক এবর ঘরে প্রবেশ করে ফেললো অনুমতির অপেক্ষা না করেই। হঠাৎ ঘরে পুলিশ বেশধারী লোকদের দেখে সবাই আশ্চর্য। মিসেস নাবিলা ভয় পেয়ে গিয়েছেন এদেরকে দেখে।ফাহিম এবার বললো,
-‘কি চাই আপনাদের?’
পুলিশের মধ্যে একজন বলে ওঠলো,
-‘ফারহান জুবায়েরকে।’
আফরা কিছুই বুঝতে পারছে না এদের কার্যকলাপ।পুলিশ এবার ফারহানের কাছে হ্যান্ডক্রাফ এগিয়ে বললো,
-‘কমরেড ফারহান জুবায়ের। ইউ আর আন্ডার অ্যারেস্ট। গতকাল কলেজে তোমার আঘাতে দুজন আহত হয়েছে। ডানপন্থীর দল তোমার নামে মামলা দিয়েছে নির্বাচনের পরিবেশ উত্যপ্ত করার জন্য আর তাদের আহত করার জন্য।’
.
.
.
~চলবে ইনশাআল্লাহ!!
[সকাল থেকে কারেন্ট না থাকায় গল্প দিতে পারছি না। তাই পোস্ট করতে দেরি হয়ে গেলো। মন্তব্যের অপেক্ষায় থাকবো।]
কারেন্ট জনিত সমস্যার কারণে আজকের পার্টটা ছোটো হয়ে গিয়েছে।আজকে ছোটো করে দিতে বাধ্য হলাম আপনাদের অনুরোধে। তবে আগামী পার্ট অবশ্যই বড় করে দেবো।