অতিরিক্ত চাওয়া { ২ }
১৪
~ আমি খুব দুখিঃত আনন্দ ভাই। প্রস্তাবটি নিয়ে সোজা আপনার বাড়িতে গিয়ে কথা বলা উচিৎ ছিলো! কিন্তু আপনার উত্তর না জেনে যাওয়াটা, আমার কাছে ঠিক মনে হয় নি! তাই আপনাকে ডেকে পাঠালাম! সিদ্ধান্ত শোনাবেন তারপর না-হয় নতুন করে যাব আপনার বাড়ি!
আনন্দ চিন্তিত নজরে তাকিয়ে আমিদের দিক,
~ কিছু কি হয়েছে? আমি কিছুই বুঝতে পারছি না চেয়ারম্যান সাহেব! একটু খুলে যদি বলা যেতো ভাই!
আমিদের পাশে বসা আবির মিষ্টি হেসে আনন্দকে সান্তনা দিল,
~ অস্থির হবেন না! এতো চিন্তার বিষয় না! আমাদের অভিকে তো চিনেনই?
আনন্দ মাথা দুলালো,
~ জ্বী! চেয়ারম্যান সাহেবের ছোট ভাইয়ের বড় ছেলে!
কথপোকথন এ-র মাঝে, ট্রেতে করে চা নিয়ে আসল অঞ্জলি! আরেকটি তে পানি স্ন্যাকস নিয়ে আসল জয়া! অঞ্জলি আনন্দকে সালাম জানিয়ে চলে গেল! জয়া হাতে-হাতে চায়ের কাপ উঠিয়ে দিল, আমিদ, আনন্দ, আবিরের হাতে! পরিবেশন করে নিজেও রান্নাঘরের দিক হাঁটা দিল জয়া!
চা-তে ছোট চুমুক দিয়ে কথা শুরু করল আবির,
~ বিমানের সাথে অভির সম্পর্ক চলছে ২ বছর যাবত!
আনন্দ চা-এ চুমুক দিতে গিয়েও থেমে গেল! আবির আবারও বলতে শুরু করল,
~ হাইপার হবেন না আনন্দ সাহেব! মানুষ মানেই ভালবাসার কাঙাল তাই না? ভালবাসা কি গুনাহ?
আনন্দ মাথা নাড়াল,
~ অবশ্যই না!
~ ভালবাসা কি তা আপনি আমার থেকে ভালো জানবেন! কারণ আপনি একজন শিক্ষক এবং গুরুজন!
আনন্দ একটু সোজা হয়ে বসল,
~ অভি-বিমানের সম্পর্কের বিন্দুমাত্র জানান ছিল না আমাদের! আমরা কাল জানতে পারি! হয়তো কালও জানতে পারতাম না, যদি-না আপনি বিমানের বিয়ের আলাপ শুরু করতেন! বিমানের জন্য প্রস্তাব ঠিক করছেন সেটা শুনে অভি তৃষ্ণাকে খুলে বলে! তৃষ্ণা আমাদের ধমকিয়ে বলে গেল বিয়ে-শাদি দিয়ে দিতে! [ বলেই হালকা হাসলো আবির ] তৃষ্ণা প্রথম থেকেই জানতো সবটা! কাহিনী বিগড়ে যাচ্ছে দেখে, সব জানিয়ে দিয়েছে! এখন আমরা এ-ই দুই ভালবাসার মানুষকে আলাদা করতে চাচ্ছি না! তাই অবশ্যই আপনাদের বিমানের হাত চাইব আমাদের অভির জন্য! ১ ঘন্টার মাঝে অভির বাবা-মা ও এসে পড়বে! এবং তারা-ও সেটাই চাচ্ছে!
আনন্দ কপালের ঘাম পুছে নিলো! হালকা ভাবে গলা ঝাড়ল,
~ বিমানের সাথে আমার কথা বলা দরকার!
~ বাহিরে আছে বিমান-অভি, দুজনেই! [ আবির আনন্দের হাত দু’টো নিজের হাতের মাঝে আবদ্ধ করে নেয়, ] প্রচন্ড ভয়ে আছে মেয়েটা! বারবার বলে যাচ্ছে বাবা ঘৃনা করবে আমায়, মাফ করবেন না! আমি চাই আপনি মন দিয়ে বুঝে সিদ্ধান্ত নিন! যদি মনে হয় অভি আপনার মেয়ের জন্য সঠিক নয়, তাহলে অবশ্যই না করে দিতে পারবেন! কোনো জড়াজড়ি নেই!
আমিদ আওয়াজ দিতেই, ভিতরে প্রবেশ করল অভি! পিছনে বিমান জড়সড় হয়ে আছে! আনন্দের সামনে আসতেই বিমানের চোখ দিয়ে পানি ঝরতে লাগল! আনন্দ সোফা থেকে উঠে বিমানের সামনে দাড়াল,
~ আবির ভাই যা বলল সেগুলো কি সত্যি?
বিমান চুপ করে কেঁদে চলেছে,
~ অভিকে ভালোবাসিস?
বিমান কান্না জড়িত অবস্থায় মাথা দুলালো,
~ জ..জ্বী আব্বু!
~ আমাদের জানানোর প্রয়োজন মনে করলে না.?
বিমান এবার আওয়াজ করে কেঁদে উঠল,
~ আমায় মাফ করে দাও আব্বু! আ..আমি ভয় পেয়েছিলাম!
আনন্দ মেয়ের চোখের পানি মুছে দিল,
~ কাঁদতে হবে না!
পাশে দাঁড়িয়ে থাকা অভির দিক নজর দিল আনন্দ,
~ তুমি ?
~ প্রচন্ড ভালবাসি চাচা! আপনার মেয়ের জামাই হাওয়ার জন্য তৈরি!
আনন্দ হালকা চাঁপা হাসলো! আবার গিয়ে একই যায়গায় বসলো,
~ আমি মোহিত চেয়ারম্যান সাহেব, আবির সাহেব! আমি ভাবতেই পারছি না, আপনারা ব্যাপারটা এতটা সহজ করে দিচ্ছেন! আমাদের আর রাজি না হয়ে উপায় আছে? ছেলে ভালো, পরিবার ভালো! আমি সত্যি কৃতজ্ঞ এমন প্রস্তাব পেয়ে!
~ এ-ই কৃতজ্ঞতার বদলে একদিন আপনার কাছ থেকে কিছু চাইব! আশা রাখি ফিরিয়ে দেবেন না!
~ পারলে অবশ্যই দেব! আপনি বলুন!
~ সময় আসুক চেয়ে নেব!
আনন্দ মাথা দুলালো!
আমিদ চা-টা শেষ করে পাশেই রেখে দাড়ালো! সাথে আনন্দ ও দাঁড়িয়ে গেলো! আমিদ হাত মেলে দিতেই, আনন্দও হাসি মুখে এগিয়ে জড়িয়ে নিলো,
~ তাহলে তো খুব জলদি নতুন সম্পর্কে জড়াব!
~ জ্বী!
আনন্দ আবিরের দিক ও হাত মেলে দিল! এদিকে বিমান কাঁদতে কাঁদতে হেসে দিচ্ছে! অভি মিষ্টি হেসে-হেসে শীলার দিক তাকাচ্ছে! আমিদ সোফায় বসার ইশারা করল,
~ আপনি তারপরও সময় নিতে পারেন আনন্দ ভাই! বাড়িতে গিয়ে সকলের সাথে ফায়সালা করে সন্ধ্যায় ভাবি আর শীলার মামা-চাচাদের নিয়ে চলে আসবেন! খাওয়া-আড্ডা করে কি করা যায় বলা যাবে?
আনন্দ মাথা দুলালো,
~ তাহলে উঠি! সন্ধ্যায় আসছি!
জয়া দ্রুত রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে আসলো,
~ না ভাই! আমি নুডলস-পায়েস বসিয়েছি! খেয়ে যাবেন!
আবির উঠে দাঁড়ালো,
~ তাহলে চলুন হেঁটে আসা যাক!
~ অবশ্যই!
এতক্ষণ যাবত কান পেতে ছিলো এ-ই বাড়ির সবগুলো! বেলি, বাবলু চোখ বড়সড় করে তাকিয়ে বিমানের দিক! বিমান এসে দুই ভাইবোন কে জড়িয়ে নিলো! বেলি ভ্রু-উঁচু করে বলল,
~ আচ্ছা? তারজন্য তৃষ্ণা ভাইয়ার নাম্বার তোমার কাছে ছিলো?
বিমান লাজুক হাসলো! বাবলু লাফাচ্ছে,
~ ইয়ে বাড়ি থেকে সয়তান বিদায় হবে!
~ তবে রে..
বিমান তেড়ে যেতেই দৌঁড় লাগালো বাবলু!
বেলি আড়চোখে বারবার এদিক-ওদিক তাকাচ্ছে! আবিদ পেছন থেকে অভির কাঁধে লাফ দিয়ে উঠে পড়লো! আয়ুশ চোখ টিপ দিলো,
~ ট্রিট দিতে হবে ভাই!
অভি নিজেকে ছাড়াতে ছাড়াতে বলল,
~ অবশ্যই, অবশ্যই! আগে ট্রিট তো তৃষ ভাই পাবে! সে আমার পরিবারের সাথে গুন্ডামী না করলে কি রাজি হতো? [ সকলের দিক তাকিয়ে ] তাঁর নায়িকা এসেছে জানে?
আবিদ, আয়ুশ দুষ্টু হেসে মাথা নাড়ালো,
~ নাহ.!
বেলি লজ্জা পেয়ে অঞ্জলির পেছন চলে গেলো! আয়েশা বেলির গাল টেল টেনে দিল,
~ লজ্জা পাচ্ছে আরেএএ!
অঞ্জলি মিনমিন করে বলল,
~ মামা পাশে থাকলে তো তোমার মুখের দিক তাকানো যায় না! লজ্জায় গাল দু’টো ফুলে থাকে!
আয়েশা অঞ্জলির কান টেনে দিল,
~ আর তোর? আসুক সোলাইমান! আমরাও দেখবো তুমি লজ্জা পাও নাকি!
অভি বেলির দিক তাকিয়ে বলল,
~ চল বেলি তোমাকে ভাইয়ের রুম দেখিয়ে আনি!
বেলি ঢোক গিলল,
~ না.. নাহ! আমি ভাবির রুমে ঠিকাছি!
আবিদ দুষ্টু হেসে বেলির হাত টেনে ধরলো,
~ আরে চল না!
আয়েশা-অঞ্জলি মুচকি হেসে রান্নাঘরের দিক রওনা দিল, জয়াকে সাহায্য করতে! ড্রয়িং রুমে টিভি দেখছে বাবলু! অভি বিমানকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে! আবিদ আর বেলির পেছন-পেছন আয়ুশও চলল!
বেলির বুক ধুকপুক করছে! হাত-পা রীতিমতো কাঁপছে! আবিদ পেছনের রুমের দরজার কালো রঙের পর্দা সরিয়ে, ভিতরে প্রবেশ করল ডান হাতে বেলিকে টেনে! রুমের কর্নারের বিছানায় পেটে ভর দিয়ে শুয়ে তৃষ্ণা! সাদা রঙের মাঝে কালো ছাপার কম্বলে মোড়ানো! বেলি দরজায় দাঁড়িয়ে গেলো! এ-ই শীতের সিজনের মাঝেও রুমে এসি ছেড়ে রেখেছে! আবিদের টানাটানিতে ভিতরে ঢুকতে হলো! বেলিকে ছেড়ে আবিদ বিছানার দিক গেলো! তৃষ্ণার কানের কাছে মুখ নিয়ে চেচিয়ে,
~ বেলিইইইইইইই!
তৃষ্ণা আড়মোড়া হয়ে নড়ে উঠলো! ঘুমা জড়ানো কন্ঠ তাঁর,
~ আবিদ.. উঠলে মাইর খাবি!
~ ভাবি এসেছে !
~ আমার ঘু..ঘুম হয় নি! কেনো মনে করিয়ে দিচ্ছিস!
আবিদ উত্তর দেওয়ার আগেই, বেলি হালকা আওয়াজে বলল,
~ আ..আমি যাই! বা..বাবা খুঁজবেন!
তৃষ্ণার চোখ বড়সড় করে খুলে গেলো! কপাল কুঁচকে দ্রুত মাথা ঘুরালো! বেলিকে দেখে তৎক্ষণাৎ উঠে বসলো! কম্বল শরীর থেকে পড়তেই, বেলি লজ্জায় লাল হয়ে উঠলো! তৃষ্ণার শরীর উদোম! না চাইতেও আড়চোখে চোখ যাচ্ছে তৃষ্ণার ধবধবে বডির দিক! বুক কেঁপে উঠছে কেন?
আবিদ, আয়ুশ বাঁকা হাসছে,
~ হ্যাঁ চল বেলি! আমরা ভাবির রুমে গল্প করবো!
তৃষ্ণা আবিদের দিক ভ্রু-উঁচু করে তাকালো,
~ কে এনেছে? [ বেলির দিক তাকিয়ে থেকে, ]
~ আমরা! আনন্দ চাচাকে আনতে গিয়ে ভাবলাম তোমাকে সারপ্রাইজ দেওয়া যাক! কিন্তু তোমার তো…
~ আম সারপ্রাইজড! এমন সারপ্রাইজ প্রতিদিন দিলে তো..
আবিদ হি হি হি করে হাসতে লাগলো,
~ প্রতিদিন তো দেওয়া যাবে না!
তৃষ্ণা ইশারা করতে আবিদ আর আয়ুশ চোখ টিপে বেরিয়ে গেলো! স্তব্ধ বেলি ওঁদের যাওয়া দেখে নিজেও দ্রুত বেরিয়ে যেতে নিলে, তৃষ্ণার ভাঁড়ি আওয়াজ শুনা যায় ,
~ তোকে যেতে বলেছি বেনিওয়ালী ? এদিকে আয়..
বেলি লজ্জায় শেষ! বুক কাঁপছে! একটু একটু করে এগিয়ে যাচ্ছে ! আড়চোখে তাকিয়ে দ্রুত পলক ফিরিয়ে নিলো! তৃষ্ণা তাঁর দিক তাকিয়ে! বেলি বিছানার কাছে যেতেই, তৃষ্ণার হাত বেলির ডান হাত টেনে বিছানায় বসিয়ে দেয়! নিজের মাথা বেলির কোলে রাখতেই, বেলি প্রায় কেঁপে উঠতে নিচ্ছিলো! কিন্তু তৃষ্ণা তাঁর আগেই বেলিকে আটকে নেয়,
~ মাথা ধরেছে টিপে দে!
~ দে..দেখুন কে..কেউ এ..এসে পড়বে! প্লিজ..
~ আসলে আসবে! তোকে যেটা বলেছি সেটা কর!
বেলি কাঁপা-কাঁপা হাত তৃষ্ণা চুলে রাখল! তাঁর চোখ দরজার দিক! কেউ দেখলে? তৃষ্ণার ঘুম জড়ানো কন্ঠে বেলির বুক আরও কাঁপছে,
~ কিছুই করলাম না! এখনই কাঁপছিস!
বলতে বলতে তৃষ্ণা মাথা বেলির পেটের দিক ঘুরাতে নিলে, বেলি চোখ বন্ধ করে তৃষ্ণার মাথা ধরে রাখে!
~ আ..আমি টিপে দিচ্ছি তো! প..প্লিজ এদিকে ফিরবেন না!
বেলি দ্রুত তৃষ্ণার চুল টেনে, কপালে স্লাইড করতে লাগলো! তৃষ্ণার ঠোঁটে তৃপ্তির হাসি! চোখে আবারও ঘুম ভিড় করছে,
~ তোর হাতে যাদু আছে!
বেলির বুক আবারও কেঁপে উঠলো!
চলবে…
নাবিলা ইষ্ক
[ টাইপিং মিস্টেক থাকলে এক্সট্রিমলি সরি! রিভিশন দিতে পারি নি! ]