অতিরিক্ত চাওয়া { ২ }
৩২|
আর্বিদার তেতো আওয়াজের জন্য বেলী শাস্তি দিল তৃষ্ণাকে। তাকে এভোয়েড করে। এইযে ঠিক ভাবে কল ধরছে না। সামনাসামনি দেখা হলে হাওয়ায় মিলিয়ে যাচ্ছে৷ অবশ্য এর পরিনতি ও বেলী খুব ভালো ভাবে জানে। পুরো পরিবার মিলে আরেকবার টুকটাক কেনাকাটার জন্য মার্কেট ভ্রমণে নামলো। দেখা গেলো সেখানে তৃষ্ণা হাজির। কিন্তু আজ সে আড়ালে এসেছে। শুধু পেছন দিয়ে বেলীকে নিয়ে সাইড হয়ে গেলো। আরেকদফা বেলীকে মাথা থেকে পা পর্যন্ত দেখলো। তারপর বেলীকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো,
— কি হয়েছে তোর? বেলী,
বেলীর চেহরা নিজের দিক উঠিয়ে,
— আমি ভালবাসি ঠিক ওই সাধারণ কামিজে, বেনী ওয়ালা মেয়েটিকে। যে অল্পতেই কেঁদে দেয়। অভিমানে বুক ফুলিয়ে রাখে। যাকে দেখলে আমার সব শক্তি ফিরে আসে। জীবনে পরিবর্তন দরকার কিন্তু, তোকে মানুষের কথায় পরিবর্তন হতে হবে না। হাজার মেয়ে রেখে আমি তোকে ভালবাসি বেলী। শুধু তোকে।
বেলী মনেমনে নিজেকে শক্ত করে বলল,
— যতটুকু পরিবর্তন থাকলে আপনার,
বেলী চোখ নিচে করে এবার ধীর গলায় বলল,
— আপনার সা..থে চলতে পারব৷ অতোটা না যতটায় আ..আপনায় হা..হাড়ি
বেলী নিজেকে এতো শক্ত করেও বলতে পারলো না৷ আচ্ছা, তৃষ্ণা কিভাবে বলে এতকিছু। বেলী কেন পারে না? তৃষ্ণা অতি গভীরে জড়িয়ে ধরে বলল,
— তারপর বল?
বেলী চুপ মেরে গেলো। গলা দিয়ে আওয়াজই আসছে না।
— ইদানীং তোর উপর রাগও আসছে না। নাহলে কয়েকটা থাপ্পড় খেতিস।
বেলী অস্ফুটস্বরে বলল,
— কেউ দেখবে, ছিঃ। সরুনন্,
তৃষ্ণা বেশ কিছুক্ষণ বেলীকে গভীর ভাবে জড়িয়ে ঘাড়ে ভয়ানক এক চুমু খেলো। এবং দ্রুত নিজেকে জেন্টেলম্যান রূপে ফিরিয়ে আনলো। বেলীকে ইশারায় বুঝালো ‘ এই চ্যাপ্টার ক্লোজ হয়নি ‘।
মার্কেটিং কমপ্লিট করে বাড়ি ফেরবার পথে বেলীর নাজেহাল অবস্থা। তার বারবার তৃষ্ণার কথা মনে পড়ছে। ভয়ানক রকম। বেলীর এঅবস্থা দেখে কাজিন এক বলেই ফেলল,
— একসাথে বিয়ে দিয়ে দেবনি?
বেলীর বলতে ইচ্ছে করছিল,
— হ্যাঁ, দিয়ে দাও বিয়ে।
পরক্ষণেই লজ্জায় লাল হয়ে উঠলো। ইশ, তার এতো লজ্জা কথথেকে আসে? কি হবে তার?
দেখতে দেখতে গায়ে হলুদের দিন ঘনিয়ে এলো। আজ পরেই কাল গায়ে হলুদ। দুপুর দিকে গ্রামের এবং পরিবারে সব মিলে রং খেলায় মেতে উঠলো। রংয়ের কারণে বেলীর এতদিনের রূপচর্চা নিমিষেই পানিতে ভেসে গেলো। বাধ্য হয়ে গামছা দিয়ে চুল সুরক্ষিত রেখে সেও নামলো মাঠে। তীব্র রং খেলায় হাওলাদার বাড়ির উঠান ভিজে চিপচিপে। আনন্দকেও ছাড় দেওয়া হয়নি। তাকেও রং এ চুবানো হয়েছে প্রায়। মানুষে গিজগিজে বাড়িতে বেলী ঠিক খুঁজে বের করলো মাহফুজ নানাকে। সে দিব্বি মুরুব্বিদের সাথে বসে পান খাচ্ছেন। বেলী নানার মুখে রং লাগিয়ে দিল। নানা তো সেই। সেও বেশ বেলীর সাথে নামলো রং খেলায়। এদিকে কালো লোমের টাম্মি আজ সম্পুর্ন কালার দিয়ে মেখে।
রাত্রির দিক, হবু বউয়ের কন্ঠ শোনার আশায় ব্যকুল অভি কল দিয়েই যাচ্ছে। বেলী এতো মানুষের মাঝেও তাদের দুজনের কথা বলার রাস্তা বের করে দিলো। অথচ এদিকে তাকে ফোন করা হচ্ছে খেয়াল নেই।
একটার দিক, তৃষ্ণার চৌদ্দ নাম্বার কল দেখে বেলী রিসিভ করলো। এবং মিনমিন গলায় বলল,
— বলুন ।
তৃষ্ণার নরম কন্ঠ,
— কেউ কি কিছু বলেছে? আমায় বল?
— কে কি বলবে? এখন আপনি রাজা ধীরাজ হয়ে ঘুরবেন আর আমি সোকিনার মা হয়ে। তা তো হচ্ছে না।
— রাজা ধীরাজ? সামনে আয় আগে,
— যাবে কে আপনার সামনে?
— আমি যাবো।
— দেওয়াল তৈরি করে রাখব।
— দেওয়াল ভাঙার গাড়ি নিয়ে চলে আসব।
— আবার বানাবো দেওয়াল ।
— আচ্ছা? তাহলে আমি আবার দেওয়াল ভাঙতে যাব। আর তুই দেওয়াল তৈরি করার আগেই ধরে ফেলব। শর্টকাট পদ্ধতিতে বিয়ে করে ফেলব। সুন্দর ভবে বাসর। তারপর হানিমুনে যাবো। মাঝে বছরের ডিফারেন্স রেখে বাচ্চা নিব।
— তারপর?
— তারপর আবার বাচ্চা নিব। কোনো খালি রাখা হবে…
বেলী ফোন কেটে ফেলল। নিজেকে যতই শক্ত করুক। এই লোকের লজ্জাহীন কথা বেলী বেশিক্ষণ সহ্য করতে পারবে না। কখনোই না।
উফ!
গায়ে হলুদের দিন উঠান জুড়ে স্টেজ তৈরি করা হলো। উঠানের বাহিরে যায়গা থাকার ফলে খুব সুন্দর সব মানিয়ে নেওয়া গেলো। চৌধুরী বাড়ি থেকে ভিডিও রেকর্ডিং এর জন্য লোক পাঠানো হলো। এতো কিছুর মাঝেও আনন্দের টাকার শর্ট পড়লো। অবশ্য টাকা যে এই আছে তা না। বেলীর জন্য টাকা গচ্ছিত। তারপর বাবলুর জন্য। তার আরেক মেয়েও আছে। এক মেয়ের বিয়েতে এতো খরচ করলে তো। এক পর্যায়ে বেলীর চাচারা এগিয়ে আসলেন যারযার মতো। তারা নিজেদের মতো সাহায্য করলেন।
কাজিনদের সাথে মিলে বেলী হলুদ শাড়ি পড়লো। ম্যাচিং জুয়েলারি। যেমন স্ট্রেইট চুলে মাঝের সিঁথিতে টিকলি। কানে লম্বা দুল। হাতে হলুদ চুরি। লাইট মেকওভার। সব মিলিয়ে সে বেশ সেজেগুজে তৈরি। লাউড মিউজিকে কাজিন একটা নাচা শুরু করলো চাচিদের নিয়ে। এক সময় চিল্লাচিল্লি শুরু হলো বরের বাড়ি থেকে হলুদ এসেছে। বেলী মাত্রই উঠানে এসেছে আর সামনে পড়লো তৃষ্ণারা। তৃষ্ণা সে তো একদম ফিটফাট সেজে হাজির। হলুদ পাঞ্জাবি আর সাদা পায়জামা পড়ে এসেছে। পেছনেই
আর্বিদা, তৃষা, আবিদ, আয়ুশ ও একই ভাবে তৈরি। বেলী তৃষ্ণাকে দেখেও যেমন দেখলো না। আর এদিকে যে তৃষ্ণার কত ডিগ্রী মাথা ব্যাথা শুরু হয়েছে তা তো শুধু সেই জানে।
খুশি এবং আরও মহিলারা মিলে বেশ খাতিরে লাগলেন তৃষ্ণাদের। এতো ভিরের মাঝেও তৃষ্ণা বেলীর পাশ ঘেঁষে দাঁড়ালো। বেলী আঁড়চোখে তাকিয়ে অন্যদিকে যেতে নিলে তৃষ্ণা বেলীর হাত আড়ালে চেপে ধরলো। এবং ফোটোগ্রাফার কে ইশারা করলো ছবি তুলতে। এবং সেখানে বেলীর সাথে তৃষ্ণা কয়েকটা ছবি তুলে ফেলল। একসময় তাদের মাঝে বাবলু আর তৃষাও হাজির। চারজন মিলে পারফেক্ট ছবি।
বাবলুর ফ্রেন্ডস গুলো কেমন অন্যচোখে তার দিক বারবার তাকাচ্ছে। সে কয়েকবার লক্ষ্য করে এবার বলল,
— আমাকে দেখে জ্বলে যাদের পুটকি,
তোরা হয়ে যা মরে শুটকি।
কথাটা ঠিক আর্বিদার সামনেই বলল। সে নাক ছিটকে বলল,
— ছিঃ।
এদিকে আবিদ আয়ুশ শুনে তো হাসতে হাসতে শেষ। তারা দুজন মিলে বাবলুর কাঁধ ঝাকিয়ে বলল,
— এই নাহলে অভির শালা। অভিও এমন দুষ্টু ছিলো।
পেছন থেকে তৃষ্ণা বলল,
— তাহলে তোরা কি ছিলি?
— ভালো। অতি ভালো যাকে বলে।
বাবলু বলল,
— অতি ভালো চোরের লক্ষন।
ব্যস, আরেকদফা হাসির বন্যা বয়ে গেলো।
শীলা এসে ব্যাস্ত আওয়াজে বলল,
— চাচী তোকে একটি পুকুর পারের ওদিক ডাকছে।
— ওখানে?
— মনে হচ্ছে, পুকুরের পানি লাগবে।
— কেন?
— আররে যেয়ে না দেখবি।
বেলী ওখানে গিয়ে থেমে গেলো। তার আগেই ভাবা উচিৎ ছিলো এমন কিছু। এই লোক এতো সহজে যাওয়ার মানুষ নই। বেলী দ্রুত উল্টো পায়ে ফিরবার আগেই তৃষ্ণা বেলীকে ধরে ফেলল। পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে, নেশাগ্রস্ত আওয়াজে বলল,
— আমি যে পাগল হচ্ছি। সেটার কি করবি?
— পানি ঢালুন মাথায়।
ত্ৃষ্ণা বেলীর কোমর চেপে নিজের দিক ফিরালো,
— ঢেলে দে।
— নিজে নিন।
বেলীর বলতে দেরি তৃষ্ণার বেলীর ঠোঁটে ঠোঁট চাপতে দেরি হয়নি। বেলীর শাড়ি ভেদ করে পেটে হাত যেতেই বেলীর স্বাশ প্রায় আটকে। বেলীর নড়ানড়ি দেখে তৃষ্ণার জড়িয়ে ধরাটা মনে হচ্ছে, আরেকটু প্রবল হলো। ঘাড়ে লাগাতার কিছু চুমু খেয়ে, সে নিজেই সরে গেলো। এবং দ্রুত পায়ে চল যাচ্ছে। বেলী এখনও শ্বাস নিচ্ছে। হঠাৎ আক্রমনে সে নিস্তেজ।
উঠানে পৌঁছাতেই শিলার খোঁচা মারা প্রশ্ন,
— কিরে, লিপস্টিক কই?
বেলী ঠোঁটে হাত দিয়ে দ্রুত ঘরে ঢুকে যাচ্ছে। লজ্জায় তার মরি যাই যাই অবস্থা।
রাত ২ টা বাজছে। হঠাৎ তৃষ্ণার কল। বেলী ধরলো না। আবার আসতেই বেলী সবাইকে আড়াল করে ধরলো। তৃষ্ণা নেশায় বুদ হয়ে আছে৷ আবিদ আয়ুশ ভাইয়েরও আওয়াজ আসছে। বেলী জানতো এমন কিছু করবে। সে শান্ত কন্ঠে বলল,
— কি হয়েছে?
— তোকে মিস করছি। আম মিসিং ইউ ব্যাডলি। সিরিয়াসলি।
বেলী?
— হুঁ?
— কি মারাত্মক লেগেছিল তোকে। পেটের দিক দিয়ে,কালো তিল। ধরতে যে…
বেলীর লজ্জায় গাল লাল হচ্ছে। তাও শান্ত কন্ঠে বলল,
— তো?
— কত কষ্টে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করেছি। এইবার তোকে পেলে নিয়ন্ত্রণের মায়রে বাপ। বেলী, চল বিয়ে করে ফেলি। এই বয়স টয়স ধুর, বাদ এগুলো।
— আচ্ছা৷
— আমি কি গাড়ি নিয়ে আসব?
— না, কাল আসবেন।
— আমরা শর্টকাট বিয়ে করে ফেলব।
— হ্যাঁ, এখন কোথায়?
— অভিদের বাড়ি৷ ওঁরা কি নাচছে। আমাকে কথাও বলতে দিচ্ছে না।
— আপনি এখন রুমে গিয়ে শুয়ে পড়বেন। যান৷
— বেলী,
— আপনার অসভ্য কথাবার্তা সারাদিন শুনতে হয়। মদ খেয়ে আরও দুইগুণ বেড়ে যায়। এইসব চিন্তাভাবনা ছাড়াও কি মাথায় আর কিছু আছে?
— তুই তো পুরো শুনলিই না।
— যান ঘুমাবেন। আবিদ ভাই থেকে খবর নেব।
ফোন কেটে বেলী কিছুক্ষণ মোবাইলের দিক তাকিয়েই রইলো। কি এক ভয়ানক লোকের খপ্পরে পড়লো সে?
চলবে
নাবিলা ইষ্ক