#অদ্ভুত_প্রেমবিলাস
#লেখিকাঃ সারজীন ইসলাম
|পর্ব-৪১|
ডক্টর সবুজ চলে যাওয়ার পরে মিতা বেগম ইভান কে বলে ধারা কে ওর রুমে নিয়ে যেতে। ধারার এখন কিছুক্ষণ বিশ্রাম এর প্রয়োজন। ইভান ধারা কে নিয়ে ধীরে ধীরে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে থাকে। ধারা দোতলায় উঠে হাঁপিয়ে গেছে। তাকে এখনো আরো একতলায় উঠতে হবে। ইভানের রুম তিনতলায়। দোতালায় অর্ধেকের বেশি নিয়ে ইভানের দুই ভাইয়ার রুম। আর বাকি কয়েকটা গেস্ট রুম। ইভান, ইভানের আম্মু, ইভানের দাদা দাদু সবার রুম তিন তালায়। ইভান আর ধারা ইভানের রুমে প্রবেশ করলে ধারা কোন দিকে না তাকিয়ে সোজা গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ে। ইভান তা দেখে মৃদু হাসে। ইভান ধীর পায়ে হেঁটে গিয়ে ধারার পাশে বিছানায় বসে। ক্লান্তি চোখে মুখে স্পষ্ট ধারার। ইভান ধীরে ধীরে ধারার গায়ের গয়না খুলতে শুরু করে। গয়না খোলা শেষ হলে ইভান ধারা কে ধীরে ধীরে ঘুম থেকে ডেকে তুলে। ধারা ঘুমাই নি। বিছানায় শোয়া মাত্র চোখটা লেগে গেছিলো। ইভান ধারা কে মৃদু বলল,
‘ এইভাবে ঘুমালে তুমি আরামে ঘুমাতে পারবে না। তার থেকে বরং ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসো। তারপরে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়ো। তখন আর কেউ তোমাকে বিরক্ত করবে না।’
ধারা একনজর তাকিয়ে বলল,
‘ আমার ইচ্ছে করছে না এখন উঠে যেতে।’
ইভান ছোট নিঃশ্বাস ফেলে ধারা কে পাঁজাকোলে করে কোলে তুলে নেয়। ধারা সে ঘুমের কারণে ভালো করে কিছু বুঝতে পারে না। ধারা তার মাথা টা এলিয়ে দেয় ইভানের বুকে। ইভান ধারা কে ওয়াশরুমে নিয়ে গিয়ে দাঁড়া করিয়ে ধারার দুই কাঁধে হাত দিয়ে বলল,
‘ তুমি একটু কষ্ট করে ফ্রেশ হয়ে নাও। আমি তোমার জামাকাপড় নিয়ে আসছি।’
ধারা ঘুম ঘুম চোখে ফ্রেশ হতে শুরু করে। ফ্রেস হতে না হতেই ইভান ধারার জামাকাপড় নিয়ে এসে বলল,
‘ ফ্রেশ হয়ে গেছো, গুড! এই নাও তোমার জামা কাপড় চেঞ্জ করে এসো।’
ধারা চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বলল,
‘ এই জামা কাপড়গুলো আপনি কোথায় পেয়েছেন? আমি তো আসার সময় কোন জামাকাপড় নিয়ে আসিনি।’
ইভান মৃদু স্বরে বলল,
‘ এগুলো আমি নিয়ে এসেছি। আসার সময় এগুলো তোমার আলমারি থেকে আমার লাগিসে করে নিয়ে এসেছি। তুমি তো শাড়ি পড়ে ঠিক ভাবে হাঁটতে পারো না। তাই তোমার জন্য সালোয়ার-কামিজ নিয়ে এসেছি। এখন আপাতত এগুলো পড়ে এই রুমে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নাও। পরে নিচে যাওয়ার আগে শাড়ি পরে নিচে যেও।’
ধারা হালকা মাথা দুলিয়ে ইভানের কথায় সম্মতি জানায়। ইভান ধারা হাতে জামা কাপড় দিয়ে বেরিয়ে গেলে ধারা চেঞ্জ করে বের হয়ে।
রাত ন’টার পর পরই লামিয়া এবং তার বাবার বাড়ির সবাই চলে আসে। লামিয়ার মুখ গম্ভীর। লামিয়ার বাবা-মা সবার সঙ্গে হাসি মুখে কথা বলছে। লিমা সে আজ এ বাড়িতে আসেনি। তার ফ্রেন্ডের সাথে আজ পার্টি আছে, তাই সে সেখানে গেছে। সাড়ে নয়টার পরে রুমি মিতা বেগমের দেওয়া নতুন একটা শাড়ি পরিয়ে, সাজগোজ করিয়ে নিচে নিয়ে আসে ধারা কে। লামিয়ার বাবা-মা ধারার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। লামিয়ার মা ইতিমধ্যে তার ব্যাগ থেকে একটা গয়নার বক্স বের করে ধারা কে একটা গলার হার পরিয়ে দেয়। লামিয়া সে বসে বসে সব কিছু চুপচাপ দেখছে, মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে না রেগে আছে নাকি খুশি হয়েছে। লামিয়ার রুমি কে একবার জিজ্ঞেস করেছি জুয়েল কথা, সে জানিয়েছে জুয়েল, লাবিদ, ইভান এরা তিন ভাই এক সঙ্গে কোথায় যেন গিয়েছে। যাওয়ার আগে বলে যায়নি কিছু।
ইভান রা তিন ভাই মিলে রকমারি মিষ্টি চকলেট আরো অনেক ধরনের খাবার নিয়ে বাড়িতে আসে। জুয়েল লামিয়ার হাব ভাব দেখে খানিকটা ভয় পায় যায়। কেমন মুখটা গম্ভীর করে রেখেছে। এইটুকু জুয়েল আন্দাজ করতে পারছে আজ তার কপালে অনেক দুঃখ আছে। ইভান লামিয়াকে দেখে ওর দিকে এগিয়ে গিয়ে হাসিমুখে বলল,
‘ ভাবি কেমন আছো তুমি?’
লামিয়া চোখমুখ শক্ত করে গম্ভীর গলায় ছোট করে বলল,
‘ ভালো আছি আমি।’
ইভান এক নজরে বড় ভাইয়া জুয়েলর দিকে তাকায়। বেচারা সে তার বউকে খুব ভয় পায়। লামিয়া জুয়েলর দিকে এক পলক তাকিয়ে বলল,
‘ আমার মাথা ব্যথা করছে আমি আমার ঘরে গেলাম।’
আর বসে না থেকে উঠে হনহনিয়ে দোতালায় নিজের ঘরের দিকে চলে যায় লামিয়া। জুয়েল লামিয়ার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ছোট নিঃশ্বাস ফেলে। ইভান গিয়ে জুয়েল এর কাঁধে হাত দিয়ে আশ্বাস দিয়ে বলল,
‘ চিন্তা করিস না ভাইয়া আমি ভাবি কে সবকিছু বুঝিয়ে বলব। ইনশাল্লাহ, ভাবি আমাদের কথা বুঝবে। তুই আর চিন্তা করিস না।’
ইভানের দিকে তাকিয়ে জুয়েল মৃদু মাথা নাড়ে।
লামিয়া নিজের ঘরের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। জুয়েল এর উপর প্রচন্ড অভিমান হয়েছে তার। ছোট ভাইয়ের বিয়ে দিয়েছে ভাল কথা তাই বলে তাকে একবার জানানোর প্রয়োজন বোধ করলো না। এতোটাই কী পর সে তার কাছে। এতগুলো বছর তার সঙ্গে সংসার করে তার কাছের মানুষ হতে পারেনি। ফোন দিলে একাধিকবার মিথ্যে কথা বলেছে অন্যথায় ফোন বন্ধ করে রেখেছে। হঠাৎ কারও উপস্থিতি টের পায় লামিয়া তার পিছনে। ঘাড় ঘুরিয়ে এক নজরে তাকিয়ে দেখে জুয়েল দাঁড়িয়ে আছে। লামিয়া ছোট নিঃশ্বাস ফেলে আবার আগের মত সামনের দিকে তাকায়। জুয়েল ভীতু গলায় বলল,
‘ সরি লামু। আমি আসলে…
জুয়েলের কথা সম্পূর্ণ করতে না দিয়ে লামিয়া শান্ত গলায় বলল,
‘ সরি? সরি কেন বলছো তুমি আমাকে? সরি বলার মত তুমি কী কোন কাজ করেছো? তুমি তোমার ভাইয়ের বিয়ে দিয়েছো। আমাকে জানাওনি আমি যদি আমার বোনের জন্য তোমার ভাইয়ের বিয়েটা ভেঙে দেই। তাই, না জানিয়ে ভালোই করেছ না হলে দেখা যেত বিয়ের আসরে আমি এমন কিছু করতাম যে কারণে বিয়েটা সম্পন্ন হতো না।’
জুয়েল ধীর গলায় বলল,
‘ লামু তুমি আমাকে ভুল বুঝছো।’
জুয়েলের কথা শুনে লামিয়ার ঠোটে তাচ্ছিল্য হাসি ফুটে উঠে। লামিয়া কিছু বলবে তার আগেই গলা পরিষ্কার করে কেউ একজন বলল,
‘ আসবো ভাবি?’
লামিয়া তাকিয়ে দেখে ইভান দাঁড়িয়ে আছে। ইভান এইসময় এখানে কী করছে? মনে মনে কিছু প্রশ্ন করে লামিয়া নিজেকে, পরে ইভানের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ আরে ইভান তুমি? এসো, এসো তুমি এখন এই সময় কী মনে করে কিছু বলবে?’
ইভান দুজনের দিকে তাকিয়ে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করে লামিয়ার দিকে তাকিয়ে মৃদু স্বরে বলল,
‘ ভাবি তুমি শুধু শুধু ভাইয়া কে দোষ দিচ্ছো, এখানে ভাইয়ার কোন দোষ নেই। গ্রামে গিয়ে ধারা কে দেখে আমার পছন্দ হয়ে যায়। আমি জেদ ধরি তাকেই আমি বিয়ে করবো। আম্মু তখন দুই ভাইয়া আর ভাবি কে ডাকে আমাকে বোঝানোর জন্য। কিন্তু তুমি তো জানো আমি কতটা জেদি। ভাইয়ারা যেইদিন যায় গ্রামের আমি ঐদিনই ধারা কে বিয়ে করে নেই। এখানে ভাইয়ার কোন দোষ নেই ভাবি। তাছাড়া তোমার বোন তো আর আমাকে ভালোবাসত না। আর আমিও তোমার বোনকে ভালোবাসতাম না। আমার মনে ওর জন্য তেমন কোনো ফিলিংস ই ছিল না। আমি ছিলাম তোমার বোনের ক্রাশ। এর থেকে বেশি কিছু হয়তো না। আর একটা কথা তোমার বোনের একটা বন্ধু আছে না নাম আবির! সে তোমার বোন কে অসম্ভব ভালোবাসে। কোন কারণের জন্য তোমার বোন কে ওর মনের কথা বলতে পারছে না। আমি জানি তুমি এখন জিজ্ঞেস করবে আমি এত কিছু জানলাম কী করে, আগেরবার আমি যখন ইতালি থেকে দেশে ফিরে ছিলাম। তখন তোমাদের বাড়িতে আমাদের সবার নিমন্ত্রণ ছিল। মনে আছে তোমার? তখন তোমার বোনের বন্ধুরা সবাই এসেছিল। তখনই আমি আবিরকে দেখে বুঝতে পেরেছি। একজন ছেলে আর একজন ছেলের চোখ দেখে বুঝতে পারে তার মনের মধ্যে কী চলছে। তোমার বোন যখন আমার গায়ে হাত দিয়ে কথা বলত তখন মুহূর্তেই আবিরের চোখগুলো লাল হয়ে যেতো। তোমার বকা বোন এসবের কিছুই বুঝে না পারলে তুমি একটু ওকে বুঝিয়ে বলো। আবির কে আর কষ্ট না দিয়ে নিজের করে নিতে। ওয়ান লাস্ট থিংক, এই পুরো ঘটনায় ভাইয়ার কোন দোষ নেই। তুমি শুধু শুধু ভাইয়া কে ভুল বুঝনা। আমি আসি এখন তোমরা তোমাদের মান অভিমান ভাঙ্গা ও।’
ইভান আর দাঁড়ায় না এইটুকু বলে বারান্দা থেকে বেরিয়ে চলে যায়। জুয়েল ইভানের যাওয়ার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। যেখানে জুয়েলের আম্মুর ইচ্ছেতে বিয়ে টা হয়েছে ওদের সেখানে ইভান জুয়েলের জন্য পুরো দোষ টা নিজের কাঁধে নিয়েছে।
রাতে খাওয়া টেবিলে মিতা বেগম সবাইকে স্পষ্ট ভাবে বলে দিয়েছে ইভান ইতালি যাওয়ার আগ পর্যন্ত সবাই এই বাড়িতে থাকবে। লামিয়া বাবা-মা জানায় তাদের এই মুহূর্তে থাকা সম্ভব নয় তার ওপরে লামিয়ার বাবার নতুন প্রজেক্ট এর কাজ শুরু হয়েছে। তারা খাওয়া-দাওয়া করে আজ রাতে চলে যাবে। ধারা দের বাড়ির সবাই ইভান ইতালি চলে যাওয়ার পরে গ্রামে ফিরে যাবে বলে মনস্থির করে। খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষ করে বাড়ির বড়রা হল রুমে বসে আড্ডার আসর জমিয়েছে। আর বাড়ির ছোট না এই শীতের রাতে বাড়ির ছাদে আড্ডা দিচ্ছে।
পরের দিন সকালবেলা ব্রেকফাস্ট করে সবাই বেলা এগারটার দিকে শপিংয়ের জন্য বের হয়। জুয়েল আর লামিয়ার মান অভিমান গতকাল রাতেই শেষ হয়ে গেছে। এখন বেশ হাসি খুশি সবার সঙ্গে কথা বলছিলে লামিয়া। লামিয়ার সঙ্গে ধারার বেশ ভাব জমে যায়। ইভান ওর শ্বশুর বাড়ির সবার জন্য শপিং করে। রুমি ধারা কে নিয়ে ঘুরে ঘুরে সবকিছু দেখাচ্ছে। ইভান সেই সকালের পর থেকে ধারা কে আর নিজের কাছে পায়নি। ভাবি, ভাইয়া, ছোট ছোট শালিকা আরো কিছু আত্মীয়-স্বজনের সামনে কিছু বলতেও পারছে না। ইভান আপাতত নিজের মনের মত করে ধারার জন্য শপিং করছে। সবার শপিং শেষে লামিয়া আরজি করে, আজ তারা সবাই রেস্টুরেন্টে খাবে। তারপরে কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করে বাড়ী ফিরবে। লামিয়ার কথায় কেউ সমর্থন করে আবার কেউ সমর্থন করে না। অবশেষে লামিয়ার কথায় সবাই রাজি হয়, রেস্টুরেন্টে খাওয়া দাওয়া করে কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করে বাড়ী ফিরবে সবাই।
রেস্টুরেন্টে খেয়ে কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করে সবাই। ঘোরাঘুরি করার সময় সবাই জোড়ায় জোড়ায় ঘোরাঘুরি করে। জুয়েল, লামিয়া, লাবিদ, রুমি, সম্রাট, জোনাকি। এই প্রথমবার সম্রাট সুযোগ পেয়েছে জোনাকির কে শহর ঘুরে দেখবার। সম্রাট সে নিজেও কখনো এইভাবে শহর ঘুরে দেখে নি। ব্যবসায়ীর কাছে শহরে এসেছে কয়েকবার। ব্যবসার কাজ শেষ করে সেখান থেকে গ্রামে ফিরে গেছে। ঘুরাঘুরির একপর্যায়ে জুয়েল সবাইকে তাড়া দেয় বাড়িতে যাওয়ার জন্য। ইতিমধ্যে বাড়িতে সবাই অনেকবার ফোন দেওয়া হয়ে গেছে। এবার তাদের ফেরা প্রয়োজন। ইভান সে চোখের ইশারায় রুমি ভাবি কে কিছু একটা বুঝায়, তখন রুমি ভাবি সবাইকে বলে, ‘ ইভান সে নিজের জন্য এখনো কিছু কেনাকাটা করিনি। তিনদিন পরে ফ্লাইট পরে হয়তো কেনার জন্য সময় পাবে না। তাই যা কেনার এখন ধারা কে সঙ্গে নিয়ে গিয়ে কিনে আনতে পারে সে।’ ব্যাস এবার আর কে পায় ইভান কে। ইভান মৃদু হেসে চোখের ইশারায় ধন্যবাদ জানায় রুমি ভাবি কে। রুমির কথা শুনে জুয়েল ইভান কে বলে, যা কেনার সে যেন কিনে তাড়াতাড়ি বাড়িতে ফিরে, ওদিকে ওর আম্মু সবার জন্য চিন্তা করছে। জুয়েল এইটুকু বলে সবাইকে গাড়িতে উঠতে বলে। একে একে সবাই গাড়িতে উঠে বসলে ধারা আর ইভান কে রেখে সবাই চলে যায়। ইভান ধারা কে নিয়ে শপিংমলে না গিয়ে উল্টো ধারা কে নিয়ে গাড়িতে করে ঘুরতে শুরু করে। ধারা কয়েকবার জিজ্ঞেস করেছিল তারা কোথায় যাচ্ছে, কিন্তু ইভান উত্তরে কিছু না বলে প্রতিবার মাতাল করা দৃষ্টিত ধারার দিকে তাকিয়ে ছিল। ধারা ইভানের এমন দিশেহারা দৃষ্টি দেখে আর সাহস করে কোন কিছু জিজ্ঞেস করেনি। নিজের মত গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরের প্রকৃতি দেখতে থাকে। বেশ কিছুক্ষণ গাড়ি করে ঘোরাঘুরি করার পরে ইভান গাড়ি থামিয়ে ধারা কে বলে, সে কিছু খেতে চায় কিনা। ধারা মৃদু মাথা নাড়িয়ে না বলে। ইভান ধারার দিকে তাকিয়ে ছোট নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
‘ আমি এখানে তোমাকে কেন নিয়ে এসেছি তুমি জানো?’
ধারা ইভানের দিকে তাকায়। ধারা কিছু বলার আগে ইভান আবার বলল,
‘ আর মাত্র তিনটি দিন আমি আছি তোমার সঙ্গে। তারপর তোমার থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে চলে যাবো। এই তিন দিনের প্রতিটা মুহূর্ত চাই আমি তোমার সঙ্গে কাটাতে। তাই আম্মুকে বলে তোমাদের সবাইকে রাজি করিয়েছি আমার ইতালি যাওয়ার আগ পর্যন্ত তোমরা সবাই আমাদের বাড়িতে থাকবে। তুমি বয়সে খুবই ছোট। একদম পিচ্চি। তোমার থেকে দূরে যাবার জন্য আমার যে পীড়া বেদনা তা তুমি কিছুই উপলব্ধি করতে পারবে না। উপলব্ধি করবে একদিন যেদিন তুমি তোমার থেকে বেশি আমাকে ভালোবাসতে শিখবে সেইদিন তুমি উপলব্ধি করবে। আমি সেই দিনের অপেক্ষায় থাকবো যে দিন আমার বিল্লু রানী আমাকে তার থেকে বেশি ভালোবাসতে শিখবে।’
এইটুকু বলে ইভান ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে আবার বলল,
‘ এসব কথা থাক এখন। সামনের পার্কে একটা লেক আছে। দুপুরের দিকে পার্ক একদম ফাঁকা থাকে বললেই চলে। সেখানে বসে কিছুক্ষণ তোমার সঙ্গে সময় কাটাবো।’
ইভান ধারার কথার অপেক্ষায় না করে। গাড়ি থেকে বের হয়ে, গাড়ির সামনে দিয়ে ঘুরে গিয়ে ধারার পাশের গাড়ির দরজা খুলে দেয়।
অনেকক্ষণ ঘোরাঘুরি করে বিকেল চারটার আগে বাড়িতে ফিরে ইভান আর ধারা। ইভান শপিং করে আনা জামাকাপড় যার টা তাকে বুঝিয়ে দিয়ে ধারা কে নিয়ে নিজের রুমে চলে যায়। ধারা কে ফ্রেশ হতে বলে ইভান তার হাতের শপিং ব্যাগ গুলো আলমারিতে তুলে রাখে।
আজ রাত নয়টায় ইভানের ফ্লাইট। চোখের পলক এ যে কিভাবে তিনটে দিন চলে গেছে ইভান তা বুঝতে পারেনি। কিন্তু এই তিন দিনে ধারা কে ভালোবাসতে কোনো কমতি রাখিনি ইভান। প্রতিদিন ধারা কে নিয়ে ঘুরতে বের হয়েছিলো। ধারার সঙ্গে সময় কাটিয়েছে। সকাল থেকে ইভান মন খারাপ করে আছে। হাসি মুখে সবার সঙ্গে কথা বলছে কাউকে ওর মনের অবস্থা বুঝতে দিচ্ছি না। কিন্তু মায়ের চোখে ফাঁকি দেওয়া কী ওতো সহজ? মিতা বেগম ঠিকই উপলব্ধি করে ইভানের মনের অবস্থা। মিতা বেগম এ কয়দিন ভালো ভাবে উপলব্ধি করেছে ইভান ধারা কে খুব ভালোবাসে ফেলেছে। হয়তো নিজের থেকেও বেশি। কিন্তু ছোট্ট ধারা যে এসব কিছুই বুঝতে পারেনা। ইভান বলতে গেলে আজ দিনের বেশিরভাগ সময়ই ওর রুমের দরজা দিয়ে ধারা কে জড়িয়ে ধরে বসে ছিল। সন্ধ্যার পরে ইভান রেডি হয়ে আলমারি থেকে কয়েকটা ব্যাগ বের করে। প্রথম ব্যাগ থেকে নতুন একটা ল্যাপটপ বের করে ধারার দিকে এগিয়ে দেয়। ধারা একবার ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে পরে ইভানের দিকে তাকায়। ইভান ধারার দিকে না তাকিয়ে মৃদু স্বরে বলল,
‘ হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট থেকে শুরু করে সবকিছু ল্যাপটপের সেট করে দিয়েছি। আমি ভিডিও কল দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যেন ফোন ধরা হয়, ফোন রিসিভ করতে যদি এক সেকেন্ড এদিক ওদিক হয় তাহলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।’
এরপর ইভান ল্যাপটপ ওপেন করে সবকিছু দেখিয়ে দিয়ে কিভাবে হোয়াটসঅ্যাপে দিয়ে ফোন রিসিভ করতে হয় কিভাবে ফোন দিতে হয়। অন্য একটা ব্যাগ খুলে ইভান একটা ফোন বের করে। তা দেখে ধারা ছোট করে বলল,
‘ ফোন। কিন্তু আমার তো ফোন আছে।’
ইভান ধারার কথায় পাত্তা না দিয়ে বলল,
‘ আমি যে আইফোন ব্যবহার করি, সেই একই মডেল একই কালারের ফোন কিনেছি তোমার জন্য। যদি ইচ্ছে হয় তাহলে ব্যবহার করো।’
ইভান পাশে থাকা অন্যান্য ব্যাগ গুলো দেখিয়ে বলল,
‘ এইসব ব্যাগে তোমার জন্য চকলেট চিপস এসব জাতীয় কিছু খাবার আছে।’
ইভান উঠে গিয়ে আমার আবার আলমারি দরজা খুলে একটা ইয়া বড় টেডি বিয়ার বের করে ধারার কোলে দিয়ে বলল,
‘ এটাও তোমার জন্য কিনে লুকিয়ে রেখেছিলাম।’
ধারা একনজর সব কিছুর দিকে তাকিয়ে পরে ইভানের দিকে তাকিয়ে মৃদু স্বরে বলল,
‘ এতকিছু? এতকিছুর কোন দরকার ছিল? আমাকে একটা চকলেট কিনে দিলেই হত। এতকিছুর আমার প্রয়োজন ছিল না।’
ইভান ধারার হাত থেকে টেডি বিয়ারটা নিয়ে পাশে রেখে দিয়ে ধারার হাত ধরে ধরে ধারার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে ইভান ধীর গলায় বলল,
‘ আমি বুঝে নেব তোমার কী প্রয়োজন আছে আর কী প্রয়োজন নেই। এখন আমি যা যা বলবো মন দিয়ে শুনবে, আমি ফ্লাইটে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে আমার ফোন বন্ধ হয়ে যাবে, ইতালি পৌঁছে আমি তোমাকে ফোন করবো। ঠিক মত খাওয়া-দাওয়া করবে। নিজের যত্ন নিবে। মন দিয়ে লেখাপড়া করবে। নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে তোমাকে। তোমাকে কিছু লোককে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে হবে তুমি কোন অংশে আমার থেকে কম নও। সব সময় ছেলেদের থেকে দূরে থাকবে। কোন সমস্যায় পড়লে তোমার আব্বু কিংবা সম্রাট ভাইয়া কে আগে আগে বলবে। আমার অবর্তমানে তারাই তোমার অভিভাবক। মাথায় রাখবে সবসময় তুমি এখন অন্য কারোর বাড়ির বউ, কারো ছেলের বউ, কারো ভাবি। আর একটা কথা বলা হয়নি ঐ রাতে তোমার হাতের আংটিটা আমি পড়িয়ে দিয়েছি। কোন ভূত এসে পরিয়ে দেয় নি তোমাকে। বিল্লু রানী নিজের যত্ন নিও। তুমি জাননা বিল্লু রানী আমি কত মূল্যবান সম্পদ দেশে রেখে বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছি।’
শেষের কথাগুলো গলা ধরে আসে ইভানের। ইভান উঠে গিয়ে ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ার থেকে একটা ছোট প্যাকেট বের করে এনে ধারার হাতে দিয়ে বলল,
‘ প্যাকেটের দুটি মেডিসিন আছে। একটা ট্যাবলেট অন্যটা ক্রিম। রাতে খাওয়ার পরে ট্যাবলেটটা খাবে, আর রাতে ঘুমানোর আগে তোমার যে আঙ্গুলের নখের সমস্যা সেখানে ক্রিমটা ভালো ভাবে লাগিয়ে দিবে। ঐদিন সবুজ আঙ্কেল তোমার হাতের এই অবস্থা দেখে এই মেডিসিন দুটো সাজেস্ট করেছে।’
কথা শেষ করার পর পর নিচ থেকে ডাক আসে। ইভান জ্যাকেটটা গায়ে পড়ে ধারার কাছে গিয়ে ধারা কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ওর কপালে অগণিত বার চুমু দিয়ে বলল,
‘ নিজের খেয়াল রাখবে বিল্লু রানী। তোমার কিছু হলে আমি আমি মরে যাবো।’
ধারা কী মনে করে ইভানের কোমরের দুই হাত দিয়ে মোলায়েম গলায় বলল,
‘ আপনিও নিজের খেয়াল রাখবেন, ঠিকমতো পড়াশোনা করবেন। খাওয়া-দাওয়া ঠিক মতো করবেন।’
ধারার ছোঁয়া পেয়ে ইভান আরো শক্ত করে ধারা কে জড়িয়ে নেয় নিজের বুকের সাথে।
বেশিক্ষণ না, আধাঘণ্টা আগে ইভান বাংলাদেশ ছেড়ে রওনা দিয়েছে ইতালির উদ্দেশ্যে। এয়ারপোর্টের ধারার বাড়ির প্রত্যেকে এসেছি। ইভান এয়ারপোর্টে আসার পথে সারা রাস্তা ধারার হাতটা শক্ত করে ধরে বসে ছিল। বড়দের সালাম করে ইভান সবার চোখের আড়ালে ধারার কপালে চুমু খেয়ে জড়িয়ে ধরেছিল কিছুক্ষণ। ধারা শুধু আজ সারাদিন বিস্ময় নিয়ে ইভানকে দেখে গেছে। আজ সারাদিন লোকটা কেমন অদ্ভুত আচরন করেছে। কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারেনি ধারা ইভানকে। শেষ মুহূর্তে ইভান ধারার হাতে চুমু দিয়ে হনহনিয়ে এয়ারপোর্টের ভিতরের দিকে চলে যায়। ধারা ইভানের চলে যাওয়ার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে পরে হাতের দিকে তাকিয়ে দেখে হাতের পিঠের এক বিন্দু পানি পড়ে আছে। কোথা থেকে এই পানির বিন্দু এসে ওর হাতে পড়েছে তার কোন সূত্র খুঁজে পায়না ধারা। শাড়ির আঁচল দিয়ে যত্ন করে হাতে পড়ে থাকা পানির বিন্দু মুছে নেয় ধারা।
কাল দুপুরে খাওয়া-দাওয়া করে ধারা রা গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দিবে। ধারার আব্বাজান তিনি চেয়েছিলেন খুব ভোরে রওনা দিতে। পরে জুয়েল তাকে অনুরোধ করে অত সকালে রওনা দেওয়ার থেকে দুপুরের খাওয়া-দাওয়া করে তারা রওনা দিবে। ধারার আব্বাজান কিছুক্ষণ ভেবে জুয়েলের কথায় রাজি হয়।
পরেরদিন দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পরে ধারা রা গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়ার সময় মিতা বেগম, লাবিদ, জুয়েল, লামিয়া আর রুমি যাওয়ার সময় ধারা কে অনেকগুলো গিফট দেয়। মিতা বেগম বাড়ির ড্রাইভার কে বলে দেয় ইভানের দেওয়া গিফট গুলো এবং তাদের দেওয়া গিফট গুলো গাড়িতে উঠাতে বলে দেয়। ধারা বাড়ির বড়দের সালাম করে গিয়ে গাড়িতে উঠে বসে। ধারার আব্বাজান বাড়ির সবার সঙ্গে টুকটাক কথা বলে বিদায় নিয়ে রওনা দেয় গ্রামের উদ্দেশ্যে।
বিকাল চারটায় বেশি বাজে। সূর্য হেলে পড়েছে পশ্চিম আকাশে। সূর্যের আলোয় কমলাটে রং ধারণ করেছে। ধারা এক মনে গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে। ধারার পাশে জোনাকি ভাবি আর জোনাকি ভাবির পাশে দাদি আম্মা বসে আছে। গ্রাম থেকে আসার পথে কতই না পাগলামি করেছিল ইভান। বলতে গেলে পুরো রাস্তা ইভানের কোলে বসে এসেছে। কালকে রাত থেকে বড্ড মিস করছে লোকটা কে ধারা। হঠাৎ ভাবনার সমাপ্তি ঘটে ফোনের রিংটোনে। ধারার কোলের উপরে রাখা ফোনটা বাজছে। ইভানের দেওয়া সেই ফোন টা। কী মনে করে কালকে রাতেই ফোনটা অন করে রেখেছিল। যদি লোকটা ফোন দিয়ে না পায় তাকে তাহলে কিভাবে কথা বলবে লোকটারে সঙ্গে। এই ভেবেই হয়তো ফোন অন করে রেখেছিল ধারা। ধারা ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখে ইভানের ছবি, নাম সেভ করার জায়গায় দেখে দুপাশে দুটো লাভের ইমোজি দিয়ে মাঝে লাইফ লাইন লেখা। এসব নিশ্চয়ই ঐ লোকটার কাজ। ধারা আর না ভেবে ফোন রিসিভ করে। ওপাশ থেকে এলোমেলো কন্ঠে বলল,
‘ কিছুক্ষণ আগে পৌঁছেছি আমি। এখন গাড়িতে আছি। আর এক ঘন্টার মত সময় লাগবে বাড়িতে পৌঁছাতে। খাওয়া-দাওয়া করছো তুমি?’
ধারা এতক্ষণে বোধহয় শাস্তি পেয়েছে ইভানের কন্ঠস্বর শুনে। ধারা ছোট করে বলল,
‘ জি, আপনি?’
ইভান নিঃশ্বাস নিয়ে বলল,
‘ হ্যাঁ ফ্লাইটে খেয়েছি। কী করছো এখন তুমি?’
ধারা ধীর গলায় বলল,
‘ গাড়িতে আছি, গ্রামের ফিরছি আমরা।’
ইভান সতর্ক গলায় বলল,
‘ পাশে কেউ আছে।’
ধারা ছোট করে বলল,
‘ হুম।’
ইভান ছোট নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
‘ ঠিক আছে, তাহলে পরে কথা বলবো, সাবধানে যেও। রাখি এখন আমি।’
ধারা অস্পষ্ট স্বরে বলল,
‘ হুম।’
সন্ধ্যা সাতটা সাড়ে সাতটার দিকে গ্রামে পৌঁছে যায় সবাই। ড্রাইভার ধারা এবং তার পরিবারের গিফট গুলো বাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে যায়। আজ রাতে আর রান্না করার প্রয়োজন নেই। মিতা বেগম তাদের সবার জন্য প্রয়োজনের অধিক খাবার পাঠিয়ে দিয়েছে। ধারা দের আসার খবর পেয়ে পাড়া-প্রতিবেশীরা কয়েকজন মহিলা এসেছে ওদের দেখতে। ধারা এবং ধারার পরিবারের সকলের এত এতো উপহার দেখে অনেকে প্রশংসা করতে করতে যখন ব্যথা করে ফেলেছে। আবার অনেকে মুখে মুখে প্রশংসা করলেও মনে মনে হিংসা করছে। জোনাকি তারা শ্বাশুড়ির কথায় ধারার শ্বশুরবাড়ির থেকে আনা মিষ্টি এবং অন্যান্য খাবার তাদের খেতে দিয়েছে।
রাত আটটা সাড়ে আটটার দিকে ধারা ফ্রি হয়ে কী মনে করে ইভানের নাম্বারে ফোন দেয়। রিং হতে না হতেই ফোন রিসিভ করে ইভান। কেউ কিছু না বলে চুপ করে থাকে। দুজন দুজনার নিঃশ্বাসের শব্দ শুনতে পায়। প্রথমে ধারা মৃদু স্বরে বলল,
‘ পৌঁছেছেন?’
ইভান মৃদু হেসে বলল,
‘ হুম।’
ধারা আবার কিছুক্ষণ ভেবে বলল,
‘ খাওয়া দাওয়া করেছেন?’
ইভান ঠোঁটের হাসি আরেকটু প্রসারিত করে বলল,
‘ আসার সময় রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার কিনে নিয়ে এসেছি। কিছুক্ষণ আগে খেয়েছি। এখন শুয়ে আছি। সন্ধ্যার পরে বের হয়ে আবার রাতের খাবার কিনে আনতে হবে।’
ধারা অবাক গলায় বলল,
‘ সন্ধ্যার পর মানে? আপনাদের ওখানে এখন কটা বাজে?’
ইভান ঠোঁট চেপে হেসে বলল,
‘ বাংলাদেশ এখন যখন আটটা বিশ বাজে তাহলে আমাদের এখানে এখন চারটা বিশ বাজে। বুঝলে আমার বিল্লু রানী।’
ধারা হঠাৎ কপাট রাগ দেখিয়ে বলল,
‘ আমি কিছুদিন ধরে দেখছি আপনি আমাকে খালি বিল্লু রানী বিল্লু রানী করে যাচ্ছেন। আমাকে কী দেখতে বিড়ালের মত যে আমাকে বিল্লু রানী বলে ডাকছেন?’
ধারার কথা শুনে ইভান হাসে। এক পর্যায়ে শব্দ করে উচ্চ স্বরে হাসতে শুরু করে ইভান। এদিকে ধারা ইভানের হাসির শব্দ শুনে রেগে লাল হয়ে যাচ্ছে।
- চলবে…