#অদ্ভুত_প্রেমবিলাস
#লেখিকাঃ সারজীন ইসলাম
|পর্ব-৪২|
বেলা আটটা বাজে ধারা এখনো বিছানায় শুয়ে গড়াগড়ি করছে। কাল রাতে অনেকটা পথ জার্নি করে আসার পরে ইভানের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে, ক্লান্ত শরীরে তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়ে ধারা। ধারার ঘরের বাইরে সবার হাঁটাচলার সময় করা পায়ের শব্দ শুনতে পাচ্ছে শুয়ে শুয়ে। সবাই হয়তো যে যার কাজে ব্যস্ত। ধারা আরো কিছুক্ষণ বিছানায় গড়াগড়ি করে চোখ খুলে তাকায়। কাল রাতে ইভানের সাথে সে দুই ঘণ্টার মত সময় কথা বলেছে। অবশ্য ধারা খুব একটা কথা বলেনি হুম, হ্যাঁ ছাড়া। যত কথা সব ইভান বলেছে। ফোন রাখার সময় ইভান স্পষ্ট ভাবে বলে দিয়েছে আজ বাংলাদেশে সময় দুপুর বারোটার দিকে ইভান ধারা কে ভিডিও কল দিবে। তখন সে ধারা কে ভিডিও কলে তার ইউনিভার্সিটি দেখাবে। এসব ভাবতে ভাবতে ধারা শোয়া থেকে উঠে বসে। সামনে তাকিয়েই চোখ ছানাবড়া হয়ে যায় ধারার। জান্নাত ধারার পড়ার টেবিল চেয়ারে বসে আছে। মুখ চোখ কেমন করে রেখেছে। ধারা বিছানা থেকে নামতে নামতে জান্নাত কে বলল,
‘ জান্নাত তুই কখন এসেছিস? আর এসে এভাবে বসে আছিস কেন? আমাকে তো ডেকে ঘুম থেকে তুলবি নাকি?’
জান্নাত কিছু না বলে ধারার দিকে চোখ মুখ শক্ত করে তাকায়। ধারা জান্নাত এর সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলল,
‘ কিরে কী হয়েছে এই ভাবে তাকিয়ে আছিস কেন আমার দিকে!’
জান্নাত চোখ মুখ শক্ত করে উত্তরে বলল,
‘ আমি কেন তোর দিকে তাকিয়ে আছে বুঝতে পারছিস না? তুই যে বিয়ে করেছিস তা আমাকে জানানোর প্রয়োজন মনে করলি না? আজ তোদের বাড়ি না এলে তো জানতেই পারতাম না যে তোর বিয়ে হয়ে গেছে।’
ধারা জান্নাত এর সামনে বিছানায় পা দুলিয়ে বসে উদাসীন গলায় বলল,
‘ তোকে কী জানাবো আমার বিয়ের কথা? আমি তো নিজেই জানতাম না আমার বিয়ের কথা। চোখের পলকে সবকিছু কেমন যেন স্বপ্নের মত করে হয়ে গেছে।’
জান্নাত ধারার দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বলল,
‘ মানে?’
ধারা উত্তরে কিছু বলার আগেই জোনাকি ধারার ঘরে ঢুকে জান্নাতের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ ধারা সত্যি কথা বলছে জান্নাত। ধারা এসবের কিছুই জানত না। একদিন বিকেলবেলা ছেলের বাড়ি থেকে সবাই ধারা কে দেখতে আসে। ছেলের মা ধারা কে দেখে পছন্দ করে বসে ব্যাস, সেই রাতেই ধারার বিয়ে হয়ে যায়। বিয়েতে আমরা আমাদের আত্মীয় স্বজনদের ও খবর দিতে পারেনি। এখানে তোর বান্ধবীর কোন দোষ নেই জান্নাত।’
সব কথা শুনে জান্নাত ধারার দিকে তাকায়। সে মাথা নিচু করে মাটির দিকে তাকিয়ে আছে। জান্নাত চেয়ার থেকে উঠে গিয়ে ধারার সামনে দাঁড়িয়ে ওকে হাসানোর জন্য বলল,
‘ বিয়েটা করে নিলি পেত্নী আমার আগে। এখন কী তোর বরের সঙ্গে আমার পরিচয় করিয়ে দিবি নাকি তাকে তোর শাড়ির আঁচলের তলায় তাকে লুকিয়ে রাখবি?’
জোনাকি হেসে ওদের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ তোরা কথা বল আমি যাই দেখি আমার কাজ পড়ে আছে। আর ধারা তাড়াতাড়ি উঠে হাত মুখ ধুয়ে জান্নাত কে নিয়ে কিছু খেয়ে নে আগে। তারপরে যত গল্প করার করিস দুটিতে মিলে।’
জোনাকি এইটুকু বলে ধারার ঘর থেকে বেরিয়ে চলে যায়। জান্নাত আবার ধারার দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ কী রে কথা বলিস না কেনো?’
ধারা ছোট নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
‘ কী বলবো সবই তো আমার ভাগ্য। ছাড় ওসব কথা! এখন বল তুই কবে গ্ৰামে আসছো?’
জান্নাত ধীর গলায় বলল,
‘ কাল বিকেলে এসেছি। তুই কি ভেবেছিস এইসব কথা বলে তুই পার পেয়ে যাবি। কখনো না। এখন তাড়াতাড়ি বল কখন আমার দুলাভাইয়ের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিবি?’
ধারা মৃদু স্বরে বলল,
‘ কিছুক্ষণ পরে সে ফোন করবে তখন তোর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবো।’
জান্নাত চোখগুলা ছোট ছোট করে বলল,
‘ ভাইয়া তার বাড়িতে চলে গেছে?’
ধারা উদাসীন গলায় বলল,
‘ সে ইতালি চলে গেছে।’
জান্নাত অবাক গলায় বলল,
‘ মানে? সেখানে গেছে কেনো? আর কবেই বা গেছে।’
ধারা ছোট নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
‘ সে ইতালির ইউনিভার্সিটি অফ ট্রেন্টো (University of Trento) ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করছে। ইউনিভার্সিটির ছুটিতে দেশে এসেছিল, পরশুদিনের রাতের ফ্লাইটে আবার চলে গেছে ইতালি। আমি তার মুখে শুনেছি এক সপ্তাহের বেশি সময় হয়েছে নাকি তাদের ইউনিভার্সিটি খুলে দিয়েছে, কিন্তু এই বিয়েতে ঝামেলার জন্য সে যেতে পারিনি। আর সে আজ থেকে তার ক্লাসের জয়েন করবে।’
জান্নাত মুখে হাত দিয়ে বলল,
‘ তোর জামাই ইঞ্জিনিয়ার!’
ধারা জান্নাতের কথা শুনে মুখ ভেঙ্গিয়ে বলল,
‘ সর, তুই এখন শুরু করবি তোর যত ফাজলামি। তুই বস আমি হাত মুখ ধুয়ে আসছি। তারপর তোকে সব কিছু বলবো।’
জান্নাত খানিকটা উত্তেজিত গলায় বলল,
‘ যা তাড়াতাড়ি হাত মুখ ধুয়ে আয় আমি আর সবকিছু শোনার জন্য অপেক্ষা করতে পারছি না।’
ধারা আর কিছু না বলে তাড়াতাড়ি ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। ধারা হাত মুখ ধুয়ে এসে জান্নাত কে নিয়ে খাবার ঘরের দিকে যায়। ধারার চাচি জান ওদেরকে খাবার বেড়ে দিতে দিতে বলল,
‘ পরশু দিন তোর নানার বাড়িতে অনুষ্ঠান আছে মনে আছে তো তোর? দুপুরে খাবার খেয়ে আমরা রওনা দিবো। জান্নাত তুইও কিন্তু আমাদের সঙ্গে যাবি। আর হ্যাঁ জামাই কে ফোন দিয়ে আমাদের যাওয়ার কথা জানিয়ে দিস।’
ধারা মুখে থাকা রুটির টুকরো চিবোতে চিবোতে বলল,
‘ ঠিক আছে।’
জান্নাত ধারার দিকে তাকিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল,
‘ চাচি জান কীসের অনুষ্ঠানের কথা বলছে রে? তোর নানার বাড়িতে প্রতিবছর যে বড় করে মিলাদ এর আয়োজন করা হয়, সেটার কথা বলছে?’
ধারা উপর-নিচ মাথা নাড়িয়ে বলল,
‘ হ্যাঁ। তুই তোর দুই একটা জামা কাপড় নিয়ে নিস দুপুরের আগেই আমাদের বাড়িতে চলে এসেছিস। আর যদি দরকার পরে আমি গিয়ে চাচা চাচিকে বলে তোকে নিয়ে আসব।’
টুকটাক কথাবার্তার মধ্যে দিয়ে খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষ করে ধারা আর জান্নাত।
জোনাকি ভাবি আর জান্নাত মিলে একে একে ধারার সব গিফট গুলো খুলছে। প্রথমেই ধারার শাশুড়ি আম্মু গিফট এর প্যাকেট খুলেছে জোনাকি। দুইটা দামি শাড়ি, চারটা না জানি ছয়টা থ্রি পিস, সব সময় পড়ার জন্য হালকা কিছু সোনার গয়না। আরও টুকটাক অনেক কিছু দিয়েছেন তিনি। জুয়েল আর লামিয়া ধারা কে উপহার দিয়েছে দুইটা খুব ভারী লেহেঙ্গা, আর ডায়মন্ডের হাতের চুর। লাবিদ আর রুমি ধারা কে উপহার দিয়েছে অনেকগুলো ডিজাইনার থ্রি পিস, সব সময় পড়ে থাকার জন্য হালকার মধ্যে ডায়মন্ডের কানের দুল, গলার চেইন, হাতের আংটি। সব গিফট এর প্যাকেট গুলো খোলা হলে জোনাকি ভাবি ধারার দিকে তাকিয়ে দুষ্টুমির সুরে বলল,
‘ ইভানের দেওয়া গিফট গুলো কী আমাদের সামনে খুলবি। না কী আমাদের থেকে লুকিয়ে একা একা খুলে দেখবি।’
ধারা মৃদু স্বরে বলল,
‘ লুকিয়ে দেখার কি আছে? তাছাড়া তার দেওয়া গিফট গুলো সে নিজেই খুলে আমার হাতে দিয়ে গেছে। আর শুধু তিন-চারটা গিফটের প্যাকেট খোলা বাকি। তোমরা বসো, আমি ঐগুলো নিয়ে আসছি।’
চলবে…