#অদ্ভুত_প্রেমবিলাস
#লেখিকাঃ সারজীন ইসলাম
|পর্ব-৪৪|
হেরি ইভানের দিকে তাকিয়ে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করছে। ইভানের মত ছেলেকে কী না বিয়ে করে ফেলেছে। তাও কিনা গোপনে। এসব ভেবে হেরির মাথা ধরে আসছে। হেরি ইভানের দিকে তাকিয়ে কৌতুহলী গলায় বলল,
‘ তুই কী আমার সঙ্গে মজা করছিস? কিন্তু আমি এখন এই মুহূর্তে একদম মজা করার মুডে নেই। এসব মজা টজা বাদ দিয়ে সত্যি কথা বলতে হলে বল না হলে ক্লাসে চল।’
ইভান চোখ মুখ গম্ভীর হয়ে বলল,
‘ তোর কী মনে হয় আমি মজা করছি? এটা সত্যি আমার বিয়ে হয়ে গেছে। ভিডিওটা তোরা যাকে দেখেছি সে আমার জীবন সঙ্গিনী, অর্ধাঙ্গিনী যা বলতে পারিস।’
হেরি অবাক গলায় বলল,
‘ এসব সত্যি ইভান? আমি তো মনে করেছি তুই এতক্ষণ আমার সঙ্গে মজা করছিস? আমাদের বলে গেলি ইউনিভার্সিটির ছুটিতে বাড়ি থেকে কিছু দিন ঘুরে আসি। এদিকে তুই দেশে ফিরে বিয়ে করে ফেলেছিস। আমাদের একবারও জানানোর প্রয়োজন মনে করলি না? এই আমাদের এত বছরের বন্ধুত্ব?’
ইভান সূক্ষ্ম গলায় বলল,
‘ তোর প্রতিটা কথা সত্যি কিন্তু তখন তোদের জানানোর মত পরিস্থিতি ছিলো না। ঐদিন যে আমার বিয়ে তা তো আমি নিজেই জানতাম না তোদের কিভাবে জানাতাম। আর ফোনের ওই ঘটনা তাদের জানালে তারা আমার সঙ্গে রাগারাগি করতি। তখন পরিস্থিতি আরও বিপন্ন হত।’
হেরি মৃদু স্বরে বলল,
‘ তুই কী বলছিস কিছুই বুঝতে পারছিনা একটু ক্লিয়ার করে সব কিছু বল। তোর বিয়ে আর তুই জানতি না এমনটা কখনও হয় নাকি?’
ইভান ধীর গলায় বলল,
‘ হয়েছে! আমাদের সঙ্গে হয়েছে। আমি বা ধারা দুজনের কেউই জানতাম না যে ঐদিন আমাদের বিয়ে ছিল। তোরা তো জানতি আমি আম্মুর সঙ্গে গ্রামে ঘুরতে গেছিলাম, আম্মুর ছোট ফুপির বাড়িতে। ওখানেই আম্মুর ধারা কে দেখে অসম্ভব ভালো লাগে। আম্মুর ছোট ফুপির মাধ্যমে ওর খোঁজ-খবর নেওয়া শুরু করে। প্রথমে আম্মু যখন আমাকে জানায় আমার জন্য একটা মেয়ে পছন্দ করেছে, তখন আমি আম্মুর সঙ্গে রাগারাগি করি। তোরা জানিস আমি আম্মুর সঙ্গে রাগারাগি করে বেশিক্ষণ থাকতে পারি না কিছুক্ষণ পরে গিয়ে আম্মু কে সরি বলি। মনে মনে সিদ্ধান্ত নেই ওই মেয়েটির বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে ওর সঙ্গে আলাদা করে কথা বলে বিয়ে ভেঙে দেবো। কিন্তু ওই যে নিয়তি বলে একটা কথা আছে না? সেই নিয়তি এসব কিছুই হতে দেয়নি। উল্টে মেয়েটির ব্যাপারে খোঁজখবর নিতে গিয়ে আমি আরো মেয়েটি কে ভালোবেসে ফেলি। এদিকে আম্মু আমার হাবভাব বুঝতে পেরে আমাকে পরীক্ষা করার জন্য জানায় সে ঐ মেয়ের সঙ্গে আমার বিয়ে দেবে না অন্য কোথাও আমার বিয়ে ঠিক করেছে। বুঝতে পারছিস তখন আমার অবস্থা কেমন ছিল? নিজের এ কেমন পাগল পাগল মনে হচ্ছিল। আম্মু কে কিছু বলতে পারছিলাম না। দিশেহারা হয়ে একা একা ভাবছিলাম কিভাবে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যায় তখন আম্মু ভাইয়াদের ডেকে পাঠায় গ্ৰামে। দুপুরের পরে ভাইয়েরা গ্রামে এলে আম্মু আমাদের সবাইকে নিয়ে ধারা দের বাড়িতে যায়। আম্মুর তো আগে থেকেই ধারা কে পছন্দ। ব্যাস, ওই দিনই আম্মু আমাদের বিয়ে দিয়ে দেয়। এখন তুই বল আমি কিভাবে ওই পরিস্থিতিতে তোদের এসব কথা জানতাম?’
হেরি এতক্ষণ ইভানের দিকে হা করে তাকিয়ে সবকিছু শুনছিলো। সবকিছু শুনে হেরি মন খারাপের গলায় বলল,
‘ আন্টি এমন করল কেন? আমাদের কত ইচ্ছে ছিল তোর বিয়েতে বাংলাদেশে যাবো। কত মজা করবো। আমি আর রোজা তো কখনো বাঙালি বিয়ে দেখিনি, তোর বিয়েতে আমাদের সেই ইচ্ছে ও পূরণ হয়ে যেত। ধুর, আমার এত বছরের প্লান আন্টি এক নিমিষে শেষ করে দিয়েছে।’
ইভান হেসে বলল,
‘ কিছু শেষ হয়নি। আমার ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করার পরে ধুমধাম অনুষ্ঠান করে ধারা কে আমাদের বাড়িতে নিয়ে আসা হবে। তখন তোরা তোদের মত ইনজয় করিস।’
হেরি হাসি মুখে বলল,
‘ আমাদের ভাবিজির নাম বুঝি ধারা! খুব সুইট নামটা।’
ইভান আনমনে বলল,
‘ নামের থেকেও তোদের ভাবিজি দেখতে আরও বেশি সুইট।’
হেরি মৃদু স্বরে বলল,
‘ বিয়ে তো করে নিলি, এখন আমাদের ভাবিজির ছবি আমাদের দেখাবি না।’
ইভান ধীর গলায় বলল,
‘ অবশ্যই দেখাবো, কিন্তু তার আগে তোকে আমাকে প্রমিস করতে হবে।’
হেরি চোখগুলো ছোট ছোট করে বলল,
‘ কীসের প্রমিস?’
ইভান মৃদু স্বরে বলল,
‘ আমি যে বিয়ে করেছি এই কথাটা এই মুহূর্তে আর কাউকে জানাতে পারবি না তুই। এমনকি রাহুল, মিহু, রোজা কেও না।’
হেরি অবাক হয়ে বলল,
‘ কেন রে? এই কথাটা ওদের জানালে এমন কী ক্ষতি হবে?’
ইভান ধীর গলায় বলল,
‘ লাভা কিংবা ক্ষতির বিষয় না এটা। আমি চাইছি না এই মুহূর্তে আমাদের বিয়ের কথা কাউকে জানাতে। তাছাড়া ধারা অতিরিক্ত পিচ্চি। এবার সবে ক্লাস নাইনে উঠেছে। বুঝতে পারছিস তুই, কতটা পিচ্চি ঐ মেয়ে। তাই তো আমাদের বিয়ের ব্যাপারে এখনই সবাইকে জানাতে তোকে নিষেধ করছি।’
হেরি বিষ্ময় গলায় বলল,
‘ ও মাই গড। ইভান তুই এত ছোট মেয়েকে বিয়ে করেছিস? আবার তাকে পাগলের মতো ভালোবেসেছি!’
এইটুকু বলে হেরি হাসতে শুরু করে। কিছুক্ষণ পরে হেরি কোনমতে হাসি থামিয়ে বলল,
‘ ভাবিজির সঙ্গে আমার পরিচয় করিয়ে দিস। এই বিষয় নিশ্চিন্ত থাকতে পারিস তুই, আমি কাউকে কিছু বলব না তুমি না চাইলে। বাই দ্যা ওয়ে তোর বিয়ে উপলক্ষে আমাদের সবাইকে কিন্তু ট্রিট দিতে হবে। না হলে তোর খবর আছে কিন্তু আমি বলে দিলাম।’
ইভান হেসে বলল,
‘ সে দেখা যাবে। এখন ক্লাসে চল। ক্লাসের এমনিতেই অনেক দেরি হয়ে গেছে।’
হেরি মৃদু হেসে ইভানের কথা সম্মতি জানিয়ে দুজনে মিলে ক্লাসের দিকে রওনা দেয়।
গ্রামের বাজারে এসে দাঁড়িয়ে আছে সেই কখন থেকে ধারারা কিন্তু দেখা নেই সম্রাট আর ধারার আব্বাজানের। মিষ্টি কিনতে দোকানে গেছে কিন্তু এখনও তারা ফিরছে না। ধারার বড় মামা মামী আজ সকালে রওনা দিয়ে তাদের বাড়িতে গেছে। ধারার মিনু আপু আজ সকালবেলা তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন সমেদ রওনা দিয়েছে তার বাপের বাড়ির উদ্দেশ্যে। এর জন্যই ধারার মামা মামী তড়িঘড়ি করে তাদের বাড়িতে গেছে। ধারা আজকে কালো রঙের একটা থ্রি-পিস পড়েছে। থ্রি-পিস টা রুমি ধারা কে গিফট করেছিলো। গলায়, কানে ও হাতে শাশুড়ি আম্মুর দেওয়ার স্বর্ণের কিছু গয়না পড়েছে আছে। সব মিলিয়ে অসম্ভব সুন্দর লাগছে ধারা কে। হঠাৎ করে লতা এসে ধারার পাশে দাঁড়িয়ে ফিসফিসিয়ে বলল,
‘ আপু ওই দেখো রাস্তার ওই পাশে ওই বজ্জাদ ছেলেটা তোমার দিকে এখনও তাকিয়ে আছে।’
ধারা লতার কথা বুঝতে না পেরে রাস্তার ওপাশে তাকায়। মুহূর্তেই চমকে উঠে ধারা। মতিন দাঁড়িয়ে আছে সঙ্গে তার বন্ধুদের নিয়ে। ধারা দের দিকে তাকিয়ে আছে। ধারা দ্রুত চোখ সরিয়ে নেয় তাদের থেকে। জোনাকি মতিন কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ব্যস্ত পাশে এসে ধারার পাশে দাঁড়ায়। জান্নাত পাতার পাশে দাঁড়িয়ে আসতে করে বলল,
‘ কী হয়েছে রে সবাই এমন করছে কেনো?’
পাতা ফিসফিসিয়ে বলল,
‘ আপু তুমি তখন গ্রামে এসেছিলে না তাই ছেলেটাকে চিনতে পারছো না। রাস্তায় ওই পাশে লাল গেঞ্জি পরা যে ছেলেটা দাঁড়িয়ে আছে তার নাম মতিন। তার সাথেই আমাদের ধারা আপুর বিয়ে হবার কথা ছিল। কিন্তু ওই অসভ্য ছেলেটা এবং তার পরিবার মিলে বিয়ের আসরে আমাদের ধারা আপুকে একা ফেলে চলে যায়।’
জান্নাত চমকে উঠে বলল,
‘ ওই ইতর ছেলেটা এখানে কী চাচ্ছে? আর এভাবে ধারার দিকে তাকিয়ে বা আছে কেন? চল তো ধারার কাছে চল।’
জান্নাত ধারার কাছে আসতে না আসতে শুনতে পায় জোনাকি ভাবির কাছে। সে রাগি গলায় বলল,
‘ দেখো না কেমন শকুনের মত করে তাকিয়ে আছে এই দিকে। ইচ্ছে করছে পায়ের জুতো খুলে মারি।’
একটু থেমে নিঃশ্বাস নিয়ে আবার বলল,
‘ তোদের ভাইয়া আমাকে বলেছিল, ওই হারামজাদা নাকি ওই ঘটনার পরের দিনে বিয়ে করে নিয়েছে। মেয়ে শিক্ষিত। এবার নাকি এসএসসি দেবে। গ্রামের মানুষ জনের মুখে তোদের ভাইয়া শুনেছে, মেয়ের ভাই নাকি বিদেশে এই সুযোগে মেয়ের মামা আর মা মিলে বিয়ে দিয়েছে। মেয়ের ভাই দেশে ফিরলে এই বিয়ে নাও টিকতে পারে। এমন পরিবারের সঙ্গে কেউই আত্মীয়তা করতে চাইনা।’
চলবে….