#অদ্ভুত_প্রেমবিলাস
#লেখিকাঃ সারজীন ইসলাম
|পর্ব-৫৭+৫৮|
ইভান অফিস থেকে এসেছে পর থেকে মুখে হাসি লেগে আছে। কারণে অকারণে ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসছে। ধারা হাসার কারণ জিজ্ঞেস করলে ইভান তা এড়িয়ে যাচ্ছে। জান্নাত আজ সকালে চলে গেছে। ধারা দের বাড়ি থেকেই ওদের অফিসে রওনা দিছে। গতকাল রাতে ধারা এবং ইহিতা জোর করে জান্নাতে এ বাড়িতে রেখে দিয়েছে। জান্নাত প্রথমে বারণ করে কিন্তু পরে ওদের জড়াজড়ির কারণে রাজি হয়ে যায়। ইহিতা জান্নাতে যাওয়ার সময় বলে দিয়েছে অফিস থেকে সোজা এই বাড়িতে আসতে। তারপরে তারা সবাই মিলে অনেক খেলাধুলা করবে। জান্নাত ইহিতা কে বলে আজ তার পক্ষে আসা সম্ভব নয় কিন্তু দুই এক দিনের মধ্যে ছুটি নিয়ে, তার ইহিতা মামনির সঙ্গে অনেক সময় কাটাবে। ইহিতা ও তার এ কথায় রাজি হয়ে যায়। সবাই রাতের খাওয়া-দাওয়া করেছে যে যার ঘরে যায়। ইভান ডিভানে বসে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ধারার দিকে তাকিয়ে আছে। ধারা ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে চুল বাঁধতে বাঁধতে আড়চোখে তা দেখছে। চুল বাঁধা শেষ করে বিছানায় বসে, তাদের রাজকন্যার দিকে তাকায়। ইহিতা ঘুমে কাদা হয়ে আছে। খানিকক্ষণ আগেও তোতাপাখির মতো কত কথা বলা হয়েছে ধারার সঙ্গে সে। তার পাপার কোলে গল্প করতে করতে ঘুমিয়ে পড়েছে একটু আগে। ধারা ঝুঁকে চুমু খায় মেয়ের কপালে। ইভানের দিকে তাকায়। এখনো সে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। ধারা ধীর গলায় বলল,
‘ কী হয়েছে তোমার? এমন করে তাকিয়ে আছো কেন আমার দিকে?’
ইভান উত্তর না দিয়ে এখনো ঠোঁটে বাঁকা হাসি নিয়ে ধারার দিকে তাকিয়ে আছে। ধারা আবার বলল,
‘ উফ! বলবে তো কী হয়েছে তোমার? এমন করছো কেন?’
ইভান ভাবলেশহীন ভাবে বলল,
‘ কী হবে? কিছুই না শুধু ভাবছি।’
ধারা ছোট করে বলল,
‘ ভাবছো! কী ভাবছো?’
ইভেন ধারার দিকে তাকিয়ে মৃদু স্বরে বলল,
‘ দেশে এসেছি পর থেকে তোমাদের নিয়ে কোথাও ঘুরতে যাইনি। ভাবছি কাল তোমাদের নিয়ে ঘুরতে যাব। বাড়ির সবাই যাবে একসাথে ভাইয়ারা, ভাবীরা, বাচ্চারা খুব মজা হবে।’
ধারা হালকা হেসে বলল,
‘ তাহলে তো খুব ভাল হবে।’
ইভান ধারার দিকে তাকিয়ে তীক্ষ্ণ গলায় বলল,
‘ আচ্ছা শোনো আমরা যে সম্রাট ভাইয়াদের জন্য শপিং গুলো করেছিলাম সেই ব্যাগ টা কোথায় রেখেছো তুমি?’
ধারা জিজ্ঞাসু গলায় বলল,
‘ এইতো আমাদের কাপবোর্ড এর উপরে রাখা আছে। তুমি তো রেখেছিলে সেদিন ভুলে গেছে? সেই ব্যাগ টা দিয়ে তুমি এখন কী করবে?’
ইভান ধারায় দিকে না তাকিয়ে বলল,
‘ না তেমন কিছু না। আমরা তো এখন গ্রামে যাব না। তাই ভাবছি পরিচিত কারো মাধ্যমে আমাদের গিফটগুলো ভাইয়াদের কাছে পৌঁছে দেবো।’
ধারা মন খারাপ করে বলল,
‘ ওহ। তুমি যা ভালো মনে করো।’
ইভান ধারার কথার ধরন শুনে বুঝতে পারে ওর মন খারাপ। তাও ইভান ধারা কে সে বিষয়ে কিছু না বলে ধারার দিকে তাকিয়ে মিহি গলার বলল,
‘ শুয়ে পড়ো কাল সকাল সকাল উঠতে হবে। ভাইয়া বলেছে কাল সকাল আটটা কিংবা ন’টার মধ্যে আমি রওনা হব।’
ধারা কৌতুহল এর গলায় বলল,
‘ তা তো বুঝলাম কিন্তু আমরা যাব টা কোথায়? জায়গার নাম কী?’
ইভান ঠোঁটে বাঁকা হাসি ফুটিয়ে তুলে বলল,
‘ যাবো? প্রকৃতির খুব কাছে যেখান থেকে মাটির সুবাস পাওয়া যায়, বৃষ্টির ঘ্রাণ পাওয়া যায়। আর জায়গার নাম সেটা বরং সারপ্রাইজ থাক। আমি তোমার প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি এবার তুমি লক্ষী মেয়ের মতো শুয়ে পরো মামনির পাশে।’
ধারা মুখ বাঁকা করে বিড় বিড় করে বলল,
‘ প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যেন আমাকে উদ্ধার করেছে? রহস্য মানব এর মত কী সব বলেছে তার একমাত্র সেই জানে। ধুর আমার কী? আমি শুয়ে পড়ি বড্ড ঘুম পেয়েছে।’
ধারা কেমন মুখ বাঁকা করে বিড় বিড় করতে করতে শুয়ে পড়তে দেখে ইভান ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে তুলে।
বাড়িতে এক প্রকার হুলুস্থুল কাণ্ড। গতকাল রাতে অভি আর হাবিব বাড়িতে এসেছে। ধারার আব্বাজান তাদের জরুরী ভিত্তিতে বাড়িতে ডেকে পাঠিয়েছে। ভোর হতে না হতেই ধারার আব্বাজান তাদের দোকানে থাকা কর্মচারী শাহিন কে নিয়ে বাজারে গেছে। বিয়ে বাড়ির নেয় বাজার-সদাই করে এনেছেন তিনি। বাজার নিয়ে আসার পর শাহিন উঠানে দাঁড়িয়ে লিস্ট মিলিয়ে মিলিয়ে বাজার সদাই দেখছে। বাড়ির সবাই ধারার আব্বাজানের কর্মকাণ্ড দেখছে গতকাল রাত থেকে। অভি আর হাবিব বাড়িতে এনে সবাইকে ডেকে বলে, তার পরিচিত কয়েকজন লোক বাড়িতে আসবে, তাদের খাতির-যত্ন যেন কোনো কমতি না থাকে। জোনাকি কে আজ স্কুলে যেতে বারণ করেছে ধারার আব্বাজান। ধারার আব্বাজান গতকাল রাতে আরো দুজন কাজের লোক নিয়োগ করেছে। তাদের মধ্যে একজনের ওদের বাড়ির পিছনের নারকেল গাছ থেকে ডাব পড়তে গেছে। অন্যজন সে পুকুরে জাল ফেলেছে। বাড়ির মেয়েরা রান্না বান্না শুরু করে দিয়েছে। ধারার আব্বাজান উঠানে চেহারা পেতে গম্ভীর মুখ করে বসে আছে। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে যায় কিন্তু কোন তিথিতে দেখা না পেয়ে অভি এসে তার আব্বাজানের সামনে দাঁড়িয়ে মৃদু স্বরে বলল,
‘ আব্বাজান তুমি না গতকাল রাতে বলেছিলে আমাদের বাড়িতে কারা যেন আসবে কিন্তু বিকেল হয়ে গেল এখন পর্যন্ত তো কেউ এলো না। তারা কী আসবে না? তাদের জন্য বাড়ির অধিকাংশ লোকই এখন পর্যন্ত না খাওয়া।’
ধারার আব্বাজান গম্ভীর গলায় বলল,
‘ এতক্ষণে তো তাদের এসে পড়ার কথা। কিন্তু এখনও আসছে না কেন? রাস্তা কী কোন ঝামেলা হয়েছে নাকি কিছুই তো বুঝতে পারছি না।’
ধারার আব্বাজান এইটুকু বলে কিছুক্ষণ থামে। অভি সব শুনে চুপ করে আছে। ধারার আব্বাজান আবার কিছু বলবে তার আগে বাড়ির বাইরে গাড়ির শব্দ পায়, তা শুনে ধারার আব্বাজান হালকা হেসে অভির দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ ঐতো এসে গেছি আমার অথিতিরা এবার যা সবাইকে গিয়ে ডেকে নিয়ে আয় উঠানে।’
ধারা বিস্ফোরিত চোখে চারদিকে তাকাচ্ছে। সবকিছু যেন ওর কাছে স্বপ্ন স্বপ্ন মনে হচ্ছে। ধারা নিজের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে এই মুহূর্তে। বিশ্বাস করতে চেয়েও করতে পারছে না ধারা। কিছুক্ষণ আগে যখন ওদের গাড়িতে ওদের গ্রামের রাস্তায় ঢুকে তখন থেকে তখন থেকে অস্থিরতা বিরাজ করছে ওর মাঝে। ইভান আজ গাড়ি ড্রাইভ করেছে পাশের সিটে ধারা বসে ছিল। পিছনের সিটে বাচ্চা তিনটা বসা ছিল লিওন, রোহান, আর ইহিতা। ওদের পিছনের গাড়িতে দুই ভাইয়া ভাবি আসছে। গ্রামের রাস্তায় গাড়ি ঢুকেছে পর থেকে ধারা সমানে ইভান কে জিজ্ঞেস করে যাচ্ছে ওরা এখানে কেন এসেছে? কিন্তু ইভান উত্তরে কিছু বলেনি। গাড়ি যখন ওদের বাড়ির সামনে থামে তখন ধারার উত্তেজনা আরও কয়েক হাজার গুণ বেড়ে যায়। গাড়িতে থাকা অবস্থায় পুরো শরীর কাঁপা কাঁপি শুরু করে দেয়। ধারা গাড়িতে শক্ত হয়ে বসে থাকে সে গাড়ি থেকে নামবে না, কিছুতেই নামবে না। ইভান এক প্রকার জোর করে ধারা কে গাড়ি থেকে নামায়। ধারা ইভানের দিকে যত বার করুন চোখের তাকিয়েছে, ইভান ততবার চোখের ইশারায় ধারা কে আশ্বাস দিয়েছে সব কিছু ঠিক আছে। কয়েক মুহূর্তের মধ্যে বাড়ীর সবাই হাজির ধারা দের সামনে। সবার চোখে-মুখে বিস্ময় এর ছাপ। কেউ যেন বিশ্বাসই করতে পারছে না এই মুহূর্তটা। গোধূলি বেলায় নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে ওদের মাঝে। নিস্তব্ধতা ভাঙতে হঠাৎ করে ধারার আম্মা ধারা কে জাপটে বুকের সঙ্গে জড়িয়ে ধরে হু হু করে কেঁদে দেয়। ধারা তার আম্মার বুকে আছড়ে পড়ে শব্দ করে কেঁদে দেয়। পরিবারের প্রতিটি ব্যক্তির চোখ ছল ছল করছে। ধারার আম্মা ধারার গালে কপালে চুমু দিতে দিতে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলল,
‘ কেমন আছিস মা তুই? আজ কতদিন পরে আমি তোকে দেখলাম দুচোখ ভরে। আমার শূন্য কোল টা আজ আবার পূর্ণ হয়ে গেছে।’
ধারা তার কান্নার জন্য ভালোভাবে কিছুই বলতে পারছে না। মাথা নাড়িয়ে বোঝানোর চেষ্টা করছে। কতগুলো দিন, কতগুলো মাস, কতগুলো বছর পরে দেখা আপনজনের সঙ্গে। অতিরিক্ত খুশিতে ধারা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছে। সবার দিকে পলকহীন ভাবে তাকায়। সবার থেকে দূরে দাঁড়িয়ে আছে ধারার আব্বাজান। চোখ মুখ হাজার কষ্টের ছাপ দেখতে পাচ্ছে ধারা। ধারা ওর আম্মা কে ছেড়ে হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখ মুছে ধীর পায়ে এক পা এক পা করে এগিয়ে যায় ওর আব্বাজানের দিকে। ধারার আব্বাজান এক দৃষ্টিতে তার মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। তার আদরের মেয়েটা তার জেদের কারণে তাদের থেকে দূরে ছিল এতদিন! এতদিন? না না এতগুলো বছর। ধারা ওর আব্বাজানের সামনে দাঁড়িয়ে মোলায়েম গলায় বলল,
‘ আব্বাজান।’
ধারার আব্বাজান চোখ বন্ধ করে নিঃশ্বাস ফেলে, মেয়ে কে বুকে জড়িয়ে নেয়। ধারার কান্না এবার দেখে? আব্বাজানের বুকে মাথা রেখে ফুঁপিয়ে কেঁদতে শুরু করে। হাজারো অভিমান, অভিযোগ, কষ্ট সব একসাথে বেরিয়ে আসছে। ধারার আব্বাজানের চোখ থেকে গড়িয়ে পানি পড়ছে। উপস্থিত সবার দৃষ্টি ওদের দুজনের দিকে। বাবা মেয়ের মান অভিমান দেখছে সবাই হাসি মুখে। এতক্ষণে বাড়ির সবাই বুঝতে পারছে ধারার আব্বাজান আজ কেনো এত এলাহি আয়োজন করেছে। হঠাৎ ওদের এই আবেগি মুহূর্তে কেউ বলল,
‘ মাম্মা, হোয়াই আর ইউ ক্রইং? এই লোকটা কী তোমাকে কিছু বলেছে মাম্মা?’
ধারা তার আব্বাজানের বুকে মাথা রাখা অবস্থায় কথা টা শোনা মাত্র হালকা হেসে দেয়। কে এই কথাটা বলল তা দেখার জন্য সবাই সে দিকে তাকায়। ইভানের হাতের আঙ্গুল ধরে একটা বাচ্চা মেয়ে চোখ ছোট ছোট করে ধারা এবং ধারার আব্বাজানের দিকে তাকিয়ে আছে। এতক্ষণে সবাই খেয়াল করেনি ইভান এর সঙ্গে আরো তিনটে বাচ্চা আছে। এতক্ষণ তো সবাই ধারার সঙ্গে কথা বলতে বলতে এদিকে খেয়ালই করেনি। ধারা আম্মা ইভানের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায়। ইভান তা দেখে মৃদু হেসে মাথা নাড়িয়ে তার মেয়ে কে বলল,
‘ মামনি উনি তোমার নানু হয়। যাও তার কোলে যাও।’
ইহিতা এক পলক ওর পাপার দিকে তাকিয়ে, গুটি গুটি পায়ে গিয়ে ধারার আম্মা সামনে দাঁড়ায়। আচমকা ঝড়ের গতিতে ধারার আম্মা ইহিতা কে নিজের বুকের সঙ্গে জড়িয়ে ধরে আবার কান্না করে দেয়। ধারার আম্মা বিশ্বাস করতে পারছে না, তাদের মেয়ের এমন সুন্দর একটা পরীর মতো মেয়ে আছে। অভি এসে ওর আম্মা সামনে দাঁড়িয়ে হাসিমুখে বলল,
‘ আম্মা আমার কোলে একটু দেওনা ওকে!’
ধারা আম্মা হেসে ইহিতা কে আদর করে দিয়ে, অভির কোলে দিয়ে দেয়। সম্রাট সে বাড়িতে নেই কাজের জন্য শহরের দিকে গেছে। জোনাকি সে বারবার করে সম্রাট কে বলেছিল আব্বাজান আজ সবাইকে বাড়িতে থাকতে বলেছে কিন্তু সম্রাট কারো কথা পাত্তা না দিয়ে সে চলে গেছে। কিছুক্ষণ পরে ধারা কান্না থামিয়ে ওর আব্বাজানের বুক থেকে উঠে চোখের পানি মুছে তার দিকে তাকিয়ে। ধারা তার আব্বাজানের চোখে পানি দেখতে পায়। পরম যত্নে ধারা তার আব্বাজানের চোখের পানি মুছে দেয়। ধারা ওর মেয়ের দিকে তাকিয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলল,
‘ আমার কাছে এসো তো ইহিতা মামনি।’
অভি ইহিতা কে কোলে নিয়ে ধারার সামনে এসে দাঁড়ায়। ধারা অভির কোল থেকে ইহিতা কে নিজের কোলে নিয়ে ওর আব্বাজানের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ মামনি এটা তোমার নানু ভাই।’
ইহিতা গোল গোল চোখ এ ধারার আব্বাজানের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ মাম্মা তুমি আর পাপা আমাকে নানু ভাইয়ের ছবিটা দেখিয়েছিলে। সেই ছবি টায় নানু ভাইকে কী সুন্দর দেখতে। কিন্তু এই নানু ভাই টা তো দেখতে বুড়ো বুড়ো।’
ইহিতার কথা শুনে সবাই মুখ টিপে হাসতে শুরু করে। ধারার চোখ বড় বড় হয়ে যায় ইহিতার কথা শুনে। ধারার আব্বাজান হেসে দিয়ে ইহিতা কে তার কোলে নেয়। ইহিতা আবার ধারার আব্বাজানের দিকে তাকিয়ে সন্দেহের গলায় বলল,
‘ তুমি কী সত্যিই আমার নানু ভাই?’
ধারা মৃদু হেসে বলল,
‘ হ্যাঁ, মা এটাই তোমার নানু ভাই। আমি আর তোমার পাপা তোমাকে তোমার নানু ভাইয়ের যে ছবি দেখিয়েছি তা অনেক বছর আগের ছবি। যেমন ধরো তুমি যখন তোমার ছোটবেলার ভিডিও গুলো দেখো তখন তুমি বলো না আগে তুমি সঙ্গে বর্তমান তুমি এর কোন মিল নেই। ঠিক তেমনই বয়সের সঙ্গে সঙ্গে চেহারার গঠন ও পাল্টে যায়। বুঝলে এবার।’
ইহিতা টোল পড়া গালে এক গাল হেসে ধারার আব্বাজানের গলা ছোট ছোট হাত দিয়ে পেঁচিয়ে ধরে বলল,
‘ ইয়েস মাম্মা, আমি বুঝতে পেরেছি। এটাই আমার সেই নানু ভাই টা।’
ইহিতার কথা শুনে সবাই আবার উল্লাসধ্বনিতে শব্দ করে হেসে দেয়।
ধারা রা এ বাড়িতে এসেছে পর থেকে সবাই ইহিতা কে কাড়াকাড়ি শুরু করে দিয়েছে। কে আগে ইহিতা কে কোলে নেবে তা নিয়ে। ধারার দাদি আম্মা সবাইকে একটা রাম ধমক দিয়ে ইহিতা কে নিজের কোলে নিয়ে বসে আছে। ইহিতা শান্ত মেয়ের মত তার কোলে বসে এটা ওটা জিজ্ঞেস করছে। ইহিতার দুই একটা কথা শুনে সবাই হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরে গেছে। ধারা সে এখন পৃথিবীর সবথেকে ব্যস্ত মানুষ। রান্না ঘরে বসে জমিয়ে কথাবার্তা বলছে সবার সঙ্গে। ইভান সে ধারার রুমে বিশ্রাম নিতে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। ইভানের বড় ভাইয়া আর ভাবীরা তাদের জন্য নির্ধারিত রুমে বিশ্রাম নিচ্ছে। লিওন আর রোহান ধারার দাদি আম্মার ঘরে গল্প করছে। রান্নাঘরে গল্প করার মাঝে শুনতে পায় সম্রাট বাড়িতে এসেছে। বসার ঘরে বসে জোনাকি কে ডাকছে এক গ্লাস পানি দেওয়ার জন্য। জোনাকি ধারা কে কিছু একটা বলে তাড়াতাড়ি করে উঠে ধারার দাদি আম্মার রুমে যায়। সম্রাট আবার বসার ঘর বসে মৃদু চিৎকার দিয়ে বলল,
‘ জোনাকি তুমি কী আমাকে এক গ্লাস পানি দিবে? না আমি উঠে ঘরে চলে যাব।’
হঠাৎ করে জোনাকি এসে সম্রাটের সামনে দাঁড়িয়ে হাসি মুখে বলল,
‘ পানিতে কী তোমার তৃষ্ণা মেটবে? আমার কাছে অন্য উপায় আছে তোমার তৃষ্ণা মেটানোর।’
সম্রাট বিরক্ত চোখে, চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বলল,
‘ মানে? তোমার কোলে বাচ্চা মেয়েটাকে? ভারী মিষ্টি দেখতে তো।’
সম্রাটের পিছন থেকে ধারা এসে সম্রাটের সামনে এক গ্লাস পানি ধরে হাসি মুখে বলল,
‘ দেখতে হবেনা ভাগ্নি টা কার।’
চমকে ওঠে সম্রাট। বিস্ফোরিত চোখে ধারার দিকে তাকায়। এটা কী তার স্বপ্ন নাকি বাস্তব? সম্রাটের মনের অবস্থা বুঝতে পেরে জোনাকি মৃদু স্বরে বলল,
‘ কী ভাবছো এটা স্বপ্ন? আজ্ঞে না মশাই, তোমার আদরের বোন তোমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আর আমার কোলে যাকে দেখছ সে তোমার বোনের অংশ, তার কলিজার টুকরা মেয়ে। ইহিতা, আমাদের ইহিতা মা। তুমি ঠিকই বলেছ আমাদের ইহিতা মা খুব মিষ্টি দেখতে। তার থেকেও মিষ্টি ওর কথাগুলো। একটা পাকা বুড়ি যেন।’
সম্রাট ছল ছল চোখে একবার তার বোনের দিকে তাকায় আর একবার তার স্ত্রীর কোলে থাকা বাচ্চা মেয়েটার দিকে তাকায়। তারা এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না এটা বাস্তব। মনে হচ্ছে চোখের পলক ফেলার সঙ্গে সঙ্গে সব আবার ধোঁয়াশা হয়ে যাবে। স্বপ্ন নাকি বাস্তব তা যাচাই করার জন্য সম্রাট কাঁপা কাঁপা একটা হাত আলতো করে ধারার গালে রাখে। তা দেখে ধারা মিষ্টি করে হেসে দেয়। সম্রাট ছোট নিঃশ্বাস ফেলে চোখ বন্ধ করে নেয়। চোখ বন্ধ করার সঙ্গে সঙ্গে এক বিন্দু পানি গড়িয়ে পড়ে সম্রাটের গালে। না স্বপ্ন নয় বাস্তব। তার আদরের বোন তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে হাসি মুখে।
চলবে…