#অনুবদ্ধ_আয়াস 💚
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব: ০৪
“তুমি কি জানো, শাড়ি পড়ে তোমাকে ফুটবলের মতো লাগছে? আমাকে ইমপ্রেস করার কথা ভুলে ঘুড় ঘুড় না করে যাও চেঞ্জ করে নাও। যাও!”
রৌধিকের ঘুম ঘুম কন্ঠ। চুল টাওয়াল দিয়ে মুছে নিচ্ছিলাম আমি। তার কথা শুনে হাত থেমে গেল। ভ্রু কুঁচকে তাকালাম। রৌধিক ব্লাঙ্কেট টেনে বসে আছে। দুইটা ছাড়া যে ছেলের ঘুম ভাঙ্গে না, সে এতো তাড়াতাড়ি উঠে গেছে। আটটা পনেরো। অর্থাৎ দুটোর ট্রেন আটটায়। চুলগুলো মুখের উপর ছড়িয়ে গেল। টাওয়াল মাটিতে পড়ে গেল। আমার বাম পাশের বড় আয়নাতে তাকালাম। আমাকে তো দেখতে বেশ সুন্দর লাগছে। তাহলে ফুটবল কেন বলল? চোখের সামনে থেকে ভেজা চুলগুলো সরিয়ে বললাম,
” আপনার চোখে কি সমস্যা আছে? তাহলে গিয়ে ঠিক করে নিন।”
বলেই ভেংচি কাটলাম আমি। রৌধিক ভ্রু কুঁচকালো। তা এড়ালো না আমার থেকে। আয়নাতে ঠিক দেখতে পেলাম। উঠে গেল সে। আমার সামনে দাঁড়িয়ে বলল,
“তোমাকে কি বললাম, শুনতে পাও নি? যাও চেঞ্জ করে নাও। গো ফাস্ট”
“আশ্চর্য তো! শাড়ি ছাড়া কি পড়বো আমি? থ্রী পিছ, টপস্ কিছুই তো নেই।”
কাবার্ড হাতরে খুঁজে দেখলেন। পেলেন না। নিজের কাবার্ড থেকে ট্রাউজার আর টি শার্ট বের করে ধরিয়ে দিলেন।
” আমি ওয়াশরুমে যাচ্ছি। ঘরেই চেঞ্জ করে নাও। এসে যদি দেখি না পড়ে বসে আছো। তাহলে আমিই পড়িয়ে দিবো।”
বলেই হনহনিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলেন। ফোঁস করে দম ছাড়লাম আমি। এই লোকটাকে বিশ্বাস নেই। সবকিছু করতে পারে। কিন্তু আমিই বা কিভাবে এগুলো পড়ে ঘুড়ে বেড়াবো।
তবুও মুখ ভার করে পড়লাম। ভেজা টাওয়াল দিয়ে চুল মুছে বেলকেনিতে মেলে দিলাম। গ্ৰিলে রাখতেই হাওয়া এসে উড়িয়ে ফেলে দিল নিচে। ধরতে গিয়েও ব্যর্থ হলাম। দ্রুত নিচে নেমে এলাম। টাওয়াল নিয়ে পেছনে ফিরতে নিলেই ধাক্কা খেলাম কারো সাথে। পায়ের কাছে এসে পড়লো কেউ। কেঁপে উঠলাম আমি। পিছিয়ে গেলাম কয়েকপা। কালো পোশাক ধারী গার্ড পড়েছে। তার সামনে রৌধিক দাঁড়িয়ে আছে। নীলাভ রঙের চোখ জোড়া অসম্ভব লাল। আমাকে গিলে খেয়ে ফেলবে এমন। আমতা আমতা করে বললাম,
“আপনি? আপনি এখানে আর ইনি পায়ের কাছে কেন, উঠুন?”
” একদম না। ওকে টার্চ করবে না। এন্ড ইউ। গো! গেট আউট অফ হেয়ার। দা নেক্সট টাইম ইউ সি আওয়ার গার্লস, কিপ ইউর হেড ডাউন। আদার-ওয়েজ আই কুড নেভাব থিংক অফ গেটিং আইট। গট ইট। নাউ গেট আউট।
ছেলেটি বন্দুক তুলে মাথা নিচু করে চলে গেল। রৌধিক আমার সামনে এসে দাঁড়াল। কর্কট কন্ঠে বলল,
“তুমি এই জামা কাপড়ে বাইরে বেরিয়েছো কেন? হোয়াই?”
নিজের দিকে তাকাতেই লজ্জায় কুঁকড়ে উঠলাম আমি। ভেজা চুলগুলো একটু সামনে এনে বললাম,
” টাওয়াল টা নিচে পাওয়া পড়ে গেছিলো। সেটা নিতে এসেছি।”
” তারজন্য এই অবস্থায়?”
” আপনিই তো শাড়ি পড়তে বারণ করেছিলেন।”
“আমি এসে নিতে পারতাম না। আমি কি বাড়িতে ছিলাম না?”
“আপনি তো ওয়াশরুমে ছিলেন।”
“সারাজীবন ওয়াশরুমে বসে থাকতাম। জীবনেও বের হতাম না! আবার কথা বলছো। স্টুপিড যাও এখান থেকে।”
আমি চলে আসার জন্য পা বাড়াতেই হাত ধরে ফেললেন তিনি। ডান হাতে ঝুঁলে থাকা টাওয়াল টা নিয়ে শরীরে পেঁচিয়ে দিলো আমার। ক্ষিপ্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন,” নাও! গো!’
রৌদ্রের তাপে রৌধিককে অগ্নির ন্যায় লাগছে আমার কাছে। ভীত হলাম আমি। তাকে ভয়ংকর ঠেকছে আমার কাছে। আমি আগে পেছনে না চেয়েই বাড়ির ভেতরের দিকে ছুটে এলাম। এতোটায় অনুতপ্ত ছিলাম কিছু খেয়াল করলাম না। ঘরে ঢোকার আগেই ধাক্কা খেলাম কারো সাথে। থেমে গেলাম আমি। বিপরীত মানুষটির হাত থেকে ফোনটা মৃদু শব্দে নিচে পড়ে গেল। নিজেকে সামলে নিলাম আমি। আমার দিকে হিংস্র চোখে তাকালো বিপরীত তরুণী। দেখতে অসম্ভব সুন্দর। এই বাড়িতে প্রথম তাকে দেখছি। এর আগে দেখা হয়নি বললেই চলে। আমি তরীগড়ি করে ফোনটা তুললাম। ফ্লোরে পড়ার কারণে স্ক্রিনের কিছুটা অংশ ফেটে গেছে। ফোনটা তার দিকে এগিয়ে দিলাম। টেনে নিল হাত থেকে। নত কন্ঠে বললাম,
” স্যারি আমি আসলে..
আর উচ্চারণ করতে পারলাম না। তার আগেই বিকট শব্দে চ’ড় পড়ল গালে। পুড়ে উঠলো জায়গাটা। মনে হলো কোনো গলিত আগ্নেয়গিরির লাভা গালে এসে পড়ল। হাতটা আপনাআপনি গালে চলে গেল। সামান্য একটা ভুল হওয়ার জন্য গাঁয়ে হাত তুলতে পারে জানা ছিলো না। আঙুল তুলে রুদ্ধ কন্ঠে বললেন,
” অস’ভ্য মেয়ে। চোখে দেখো না? চোখ কি মাথায় তুলে রাখো? আমার কতো দামী ফোনটা ভেঙে ফেলেছো ধারণা আছে? রাস্তা থেকে তুলে এনেছে বলেই এমন চলাফেরা। দুদিন হয়েছে আনতে না আনতেই জামা কাপড় ছেড়ে এইসব পড়া শুরু করেছে। দুই মাস এগুলোও থাকবে না।”
বলেই হনহনিয়ে চলে গেল। আমি অশান্ত মনে নিয়ে ঘরে চলে এলাম। দরজা বন্ধ করে দিলাম। আয়নার সামনের দাঁড়ালাম। চার আঙুলের কালচে দাগ পড়েছে। পরিবারের বড় মেয়ে হওয়ার কারণে, চ’ড় কিংবা মার আমার ভাগ্যে কখনোই ছিলো না। জীবনের প্রথম চ’ড় খেয়ে চিরতরে শিক্ষা হয়ে গেছে। কাবার্ড হাতরে মলম বের করে গালে লাগালাম। মাথা টা জিম জিম করছে। পেটেও প্রচুর ক্ষুধা লেগেছে। কিন্তু এভাবে নিচে গেলে সবাই আমাকে নিয়ে পড়বে। ব্লাঙ্কেট মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়লাম।
.
সূর্য তখন আকাশের অন্য প্রান্তে গেছে। সূর্যের রক্তিম আভা অন্ধকারে আকাশে নেই। সন্ধ্যার মিটিমিটি তারা জ্বলছে। ধীরে ধীরে আরো আঁধারে ছেড়ে গেল। ঘড়ির কাঁটা গিয়ে ঠেকলো নয়টা তিপ্পান্ন তে। সেকেন্ডে সেকেন্ডে যখন দশটা কাঁটা ছুঁলো তখন দরজা নক পড়লো। ক্লান্তির মাঝে দরজা খুলতেও কষ্ট হচ্ছিল আমার। ঘুমু ঘুমু চোখে দরজার দিকে চেয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়লাম। ধীরে ধীরে আওয়াজ বাড়তে লাগল। কন্ঠস্বর শুনতে পেলাম। কিন্তু নিদ্রার সমাপ্তি ঘটাতে পারলাম না। মনে হচ্ছে শরীর টা পুড়ে যাচ্ছে। কেটে গেল আরো মিনিট পাঁচেক। হুট করেই কেউ টেনে বসিয়ে দিল আমায়। তখনও চোখের পাতা ঝাঁপসা। পরিস্থিতি বুঝে উঠার আগেই চ’ড় পড়ল একই গালে। ভেতরটা পুড়ে উঠলো। মুখটা বাম দিকে বেঁকিয়ে গেল। চুলগুলো মুখে জুড়ে ছড়িয়ে গেল। জ্বলে উঠলো স্ক্রিন টা। তিক্ত চাপা স্বরে আহ্ করলাম ঠিকই কিন্তু স্বর বেরিয়ে এলো না। গালে হাত দিয়ে ঘসলাম। সবকিছু স্পষ্ট হতেই বুঝতে পারলাম রৌধিক আমার সামনে দাঁড়িয়ে। তার দম বন্ধ সূচালো দৃষ্টি। সকালের চেয়েও ভয়ঙ্কর লাগছে। অধর চেপে কিয়ৎক্ষণ নিজের ভেতরের রাগ দমন করার চেষ্টা করলো। অতঃপর ঝাঁঝালো কন্ঠে বললেন,
“এতোক্ষণ ধরে দরজা ধাক্কা দিচ্ছিলাম। জানো কতো চিন্তা হচ্ছিল? ইউ হ্যাভ এনি আইডিয়া? তুমি কী করছিলি? সকালের বিহেবিয়ার জন্য না খেয়ে দরজা বন্ধ করে রেখেছো। এসে দেখি দরজা বন্ধ করে ঘুমাচ্ছো, হাউ ফানি।”
দরজার দিকে তাকালাম আমি। এখনো দরজাটা ভেতর থেকে বন্ধ করা। আমি তো দরজা বন্ধ করে একটু শুয়ে ছিলাম। আর উঠি নি। তাহলে তিনি ভেতরে এলেন কী করে। ভূত নয় তো। পিছিয়ে গেলাম আমি। ভীত গলায় বললাম,
“কে আপনি? দরজা তো বন্ধ ছিলো। তাহলে আপনি এলেন কী করে? হাওয়ার মতো আসেন নি তো? দেখতে রৌধিকের মতো। ভূত নয় তো? সরুন আমার থেকে।”
পিছিয়ে গেলাম আমি। দেয়ালের সাথে বিঁধে গেলাম। বিরাগী হলেন তিনি। রৌধিক আমার দিকে চেয়ে রইল। আমার সামনে বসে দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,
“ঢং না দেখিয়ে চুপচাপ বসো। আমি বেলকেনি দিয়ে রুমে এসেছি। দেখো, হাতে ছুলে গেছে।”
হাত দেখিয়ে বললেন তিনি।
আমার মধ্যে কোনো ভাবাবেগ হলো না। রৌধিক আমার হাত ধরলো। অন্যহাত গালে রাখল। মুহুর্তেই কেঁপে উঠলাম আমি। আহ্ করে উঠলাম।
রৌধিক সরে গেল। আমাকে টেনে নিজের কাছে নিয়ে নিল। অসহায় কন্ঠে বলল,”স্যরি। আ’ম স্যরি।”
সূক্ষ্মভাবে ভাবলেন তিনি। আমার গালে হাত রেখে বললেন,” কি হয়েছে গালে?”
আমি সাথে সাথে চুল দিয়ে গাল ঢাকার চেষ্টা করলাম। সন্দিহান চোখে চাইল। ফট করে আমার হাত সরিয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখলেন। গালে হাত বুলিয়ে দিলেন। অতিশয় স্বাভাবিক কন্ঠে বললেন,
[চলবে ইনশাআল্লাহ]