অনুভবী হিয়া’ পর্ব-১

0
6769

#অনুভবী_হিয়া’
#মাইশাতুল_মিহির
ক্যাটাগরি : সামাজিক, থ্রিলার, রোমান্টিক
১.

রাত ২:৪০ মিনিট! অন্ধকারে ব্যস্ত ঢাকা শহর। চারদিকে পিনপিন নিরবতা। কোলাহল মুক্ত রাস্তায় অল্পসংখ্যক গাড়ি চলছে আপন গতিতে যার যার গন্তব্যের উদ্দেশ্যে। ল্যাম্পপোস্টের নিচে দাঁড়ানো কুকুর ডাকছে করুণ সুরে। আপন মানুষকে হারানোর যন্ত্রণা যেনো কাতর করে তুলছে। রাতের পোকারা ডাকছে নিজেদের মতো করে। চাঁদ টাও কেমন মুখ গুমরো করে আছে। যেনো আজই সবকিছু উদাস। একাকীত্বে ভুগছে সব। একাকীত্বের জীবন বড় কঠিন। সারা দিন নিজেকে বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত রেখে, মুখে মিথ্যে হাসি টেনে সবার সাথে খুশি থাকলেও দিন শেষে তার প্রিয়জনকে মনে করে কাঁদে। হয়তো এতো রাতে কেউ কেউ তার প্রেয়সী কে জড়িয়ে ধরে ঘুমে বিভোর। আর কেউ হয়তো তারই মতো প্রেয়সী কে ভেবে জেগে আছে।

থাইগ্লাসে এক হাত দিয়ে আরেক হাত পকেটে গুঁজে দাঁড়িয়ে আপন মনে ভাবছে শুভ। হারিয়ে গেলো তার প্রেয়সী। কত খুঁজেছে কিন্তু পাই নি। অভিমানে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে তার সাথে প্রায় ২ বছর। কত চেষ্টা করেছে যোগাযোগ করতে। তার ঘুমু ঘুমু কন্ঠ শুনতে প্রেমিক পুরুষটির মন ব্যাকুল হয়ে আছে। মুগ্ধকর হাসিভরা সেই মুখটি দেখার জন্য তৃষ্ণাতুর কাকের মতো হাহাকার করছে মন। পুড়ছে তার হৃদয় প্রেয়সী কে না দেখার যন্ত্রনায়। কত নির্ঘুম রাত কাটিয়েছে। একাকিত্বের সঙ্গি হিসেবে সায় দিয়েছে নিকোটিন। কানাডা থেকে বাংলাদেশে ব্যাক করেছে আজ দুই দিন হলো। কিন্তু বাহিরে যাওয়া হয়ে উঠে নি এখনো। তার ঘুমপরীকে যদি দেখতেই না পারে তাহলে বাহিরে কি লাভ কি? অবুঝ মন শুধু বার বার বলছে,

‘ফিরে আসো প্লিজ। নিজের সবটা দিয়ে ভালোবাসবো তোমায়। এই আমি টাকে তোমাতে বিলিয়ে দিবো। এই অগুছালো জীবনটা গুছিয়ে দিয়ে দাও। তোমাকে আমার আয়নার প্রতিবিম্বে আটকে রাখবো। যেখানে থাকবে শুধু তোমার আমার অস্তিত্ব। শুধু তোমাতে আমার বাস। ভালোবাসি!’

‘তোমাকে দরকার, ভিষন ভাবে দরকার।’

রাফিদ রায়হান শুভ। বাবা আয়াজ রায়হান, মা মিথিলা চৌধুরী। ছোট বোন সুহানা রায়হান, সে ইন্টার ফাস্ট ইয়ারের স্টুডেন্ট। এই তিন জনকে নিয়েই তার পরিবার।
________________

অন্ধকার কক্ষে মুখে মাক্স পরে মাথায় হুডি দিয়ে বেধড় পি:টাচ্ছে একজনকে। লোকটির আর্তনাদ যেনো চার দেওয়ালেই বন্ধি।

‘ছেড়ে দে ভাই ম:রে যাবে।’ আফসোস স্বরে বলে পাশে দাঁড়ানো মাক্স পরিহিত একজন। চোখে মুখে হিংস্রতা বজায় রেখে মেজেতে শুয়ে থাকা অর্ধমৃত লোকটিকে যুবকটি বলে, ‘সাবধান করেছিলাম তোকে। সাহস কি করে হয় আমাকে মা:রতে আসার? এবার নিশ্চিন্তে উপরে যা!’ বলেই লোহার মোটা রড দিয়ে মাথায় আঘাত করে যুবক। মুহূর্তেই শেষ নিশ্বাস ফেলে উপরে চলে যায় লোকটি। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা গার্ডদের উদ্দেশ্যে বলে, ‘এই নর্দমার কীট টাকে গু:ম করে দিয়ে আয়।’

বোতল থাকা পানি দিয়ে হাতের রক্ত ধুয়ে গাড়িতে গিয়ে সীটে হেলান দিয়ে বসে যুবক। পাশে ড্রাইভিং সীটে দ্বিতীয় জন বসে বলে, ‘একেবারে মা:রার কি দরকার ছিলো? থ্রেট দেওয়াও যেতো।’

‘বেঁচে থাকলে এমনিতেও মরতো, আমি না হয় সাপ্তাহ খানেক আগে টিকেট কেটে দিলাম।’ বাকা হেসে বলে যুবক।
________________

সকাল ৮:০০ টা! ব্রেকফাস্ট করার জন্য টেবিলে বসে আছে আয়াজ আর সুহা। মিথিলা ডাইনিং টেবিলে নাস্তা সাজাচ্ছে। তাকে সাহায্য করছে রহিমা বেগম। বয়স ৩৫ এর ঊর্ধে। নিঃসন্তান, স্বামী মারা যাবার পর থাকার জায়গা হয় নি বাবার বাড়ি। তিনি এই বাড়িতে থাকেন প্রায় দশ বছর যাবত।

মিথিলা টেবিলে অমলেটের প্লেট রেখেই সুহার উদ্দেশ্যে বলে উঠে,

‘সুহা, যা তো শুভকে ডেকে নিয়ে আয়।’

‘উফফ, ভাইয়া কে ডাকার জন্য কি আমাকেই পাও তুমি? আমি পারবো না ডাকতে। কালকে ডাক দেওয়াই যে জুরে রামধমক দিয়েছিলো তোমার ছেলে। বাবা গো আমি নাই। তুমি ডাকো গিয়ে।’

‘কারোর ডাকার দরকার নেই।’

সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে বললো শুভ। এসেই সুহার মাথায় হাল্কা চাপড় দিয়ে বললো, ‘রামধমক কি এমনি এমনি দিয়েছিলাম আমি। বেয়াদবি করেছিস বলেই ধমকটা তোর প্রাপ্য ছিলো ইডিয়ট।’

‘কি বেয়াদবি করেছি আমি ভাইয়া? তোমাকে প্রথমে ভালো করে ডেকেছিলাম। কিন্তু তুমি যে কানাডা গিয়ে বয়রা হয়ে গেছো সেটা কি জানতাম? তাইতো শেষে একটু জুড়ে ডাক দিয়েছিলাম।’ বলেই দাঁত কেলালো সুহা।

‘আহ! থামবি তোরা। খাবার খাওয়ার সময়ও ঝগড়া করিস। সুহা ছেলেটাকে শান্তিতে খেতে দে বেশি কথা বলিস না।’ বিরক্ত নিয়ে বললো মিথিলা।

‘যা বাবা, আমি কখন তোমার ছেলেকে বিরক্ত করলাম?’

‘সুহা, চুপচাপ খাও। খাবার খাওয়ার সময় অযথা কথা আমার পছন্দ না।’ খেতে খেতে বললো আয়াজ। সবাই চুপচাপ নিজেদের খাবার খাওয়াই মনোযোগ দিলো। কিছু সময় বাদে মুখ খুললেন আয়াজ,

‘শুভ, অফিসে জয়েন দিচ্ছো কবে থেকে?’

‘বাংলাদেশে এসেছি আজ তিন দিন হলো। ভাবছি কাল থেকেই জয়েন দিবো। তুমি আমাকে সব কিছু বুঝিয়ে দিও।’ স্বাভাবিক ভাবেই উত্তর দিলো শুভ।

‘ঠিক আছে। তাহলে আমি আজই অফিসের সবাইকে জানিয়ে দিবো। আর হ্যা, অফিসে একটা মেয়ে আছে খুব ভদ্র। আমার পিএ হিসেবে ৭ মাস হয়েছে জয়েন করেছে। তাকে তোমার এসিস্টেন্ট হিসেবে রাখবো। সে তোমাকে সব বুঝিয়ে দিবে।’

‘মেয়ে কেনো আব্বু? আমি কোনো মেয়ে টলারেট করবো না।’ ভ্রুঁ কুঁচকে বিরক্ত নিয়ে বললো শুভ।

‘তুমি নিশ্চয় আমার থেকে বেশি বুঝো না শুভ। আমি যেটা বলেছি সেটাই হবে। এর বেশি যেনো আর কথা না হয়।’

ছেলের উদ্দেশ্যে বললেন মিথিলা, ‘সমস্যা কি শুভ? অফিসের কাজে তো ছেলে মেয়ে দুজনই করে। আর মেয়েটা অনেক ভদ্র, মিশুক। একদিন বাড়িতে এসেছিলো আমার বেশ পছন্দ হয়েছে। মাশা’আল্লাহ রুপে যেমন গুনেও তেমন।’

‘হ্যা ভাইয়া আম্মু ঠিক বলেছে। আপুই টাকে আমার অনেক ভালো লাগেছে। একেবারে কিউটের ডিব্বা উফফ। এমন একটা ভাবি যদি আমার হতো ইসস।’ বেশ আহ্লাদ নিয়ে বললো সুহা।

‘সমস্যা কি তোমাদের? এমন ভাবে বলছো যে এসিস্টেন্ট না আমার জন্য দেখা কোনো পাত্রী। ডিজগাস্টিং।’ দাঁতে দাঁত চিবিয়ে বললো শুভ।

প্রতি উত্তরে কেউ কিছু না বলে মুচকি হাসলো সবাই। যা নজর এড়ায় নি শুভর। কেউ আর কথা না বাড়িয়ে খাবার শেষ করলো। ব্রেকফাস্ট শেষে রেডি হয়ে সুহা বেড়িয়ে গেলো কলেজের উদ্দেশ্যে। ড্রয়িংরুমে বসে কথা বলছিলেন আয়াজ আর মিথিলা। বাহিরে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে আসে শুভ। পরনে হোয়াইট কালার টি-শার্টের উপর ব্লু কালারের শার্ট, শার্টের বোতাম খোলা, ব্ল্যাক জিন্স, হাতে কালো নরমাল ঘড়ি, চুল সিল্কি হওয়ায় কিছু চুল কপালে পরে আছে। শুভ কে দেখে মিথিলা জিজ্ঞেস করলো, ‘কোথায় যাচ্ছিস বাবা?’

‘বাহিরে যাচ্ছি মা। আদিল, সামির, রাহুলের সাথে দেখা করার জন্য।’

‘কাল তোমার জন্য বড়-সড় একটা সারপ্রাইজ আছে শুভ হাহা’ বেশ উচ্ছ্বাস নিয়ে বললো আয়াজ রায়হান। বাবার কথা শুনে ভ্রুঁ কুঁচকে প্রশ্নশোচক দৃষ্টিতে তাকালো শুভ। ছেলের রিয়েকশন দেখে জুরে হেসে দিলো আয়াজ।

‘সারপ্রাইজ টা কি যদি বলেই দেই তাহলে তো আর সারপ্রাইজ থাকবে না বলো। যাও তোমার ফ্রেন্ডরা বোধহয় অপেক্ষা করছে।’ বলেই মুচকি হাসলেন মিথিলা চৌধুরী।

শুভ প্রতি উত্তরে কিছু না হলে বের হয়ে গেলো। মনে মনে শ’খানেক বিরক্ত হলো বাবা মা’র উপর। দেশে আসার পর থেকে সবাই কেমন ব্যবহার করছে, সবাই তাকে দেখেই মুচকি হাসছে। নিজেকেই কেমন সার্কাস লাগছে তার। দেশে আসাই ভুল হয়েছে বোধহয় ধ্যাৎ। ভাবতে ভাবতে গ্যারেজে গিয়ে নিজের বাইক টা বের করলো শুভ। কত দিন পর এই বাইক টা চালাবে আজ। কত অনুভূতি জড়িয়ে আছে বাইক টার সাথে। এর মাধ্যমেই তো প্রেয়সী কে সে পেয়েছিল। তাই হয়তো বাইকটা এতো প্রিয় তার। এইতো পিছনের সিট টার মধ্যেই তার প্রেয়সী তাকে জড়িয়ে ধরে বসে ছিলো। ভেবেই মুচকি হেসে বাইক স্টার্ট দিলো শুভ। উদ্দেশ্য চিরচেনা সেই কৃষ্ণতলায়।

চলবে..!!

[ আসসালামু আলাইকুম। ‘অনুভবী হিয়া’ আমার লিখা প্রথম গল্পের পার্ট। সবার মতো অনুপ্রাণিত হয়ে আজ প্রথম গল্প লিখলাম। রেসপন্স পেলে বাকিটা লিখবো। হ্যাপি রিডিং!❤️ ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here