অনুভবী হিয়া’ পর্ব-১৬

0
1933

#অনুভবী_হিয়া
#মাইশাতুল_মিহির

১৬.

রাত তিনটার দিকে মাহিন বাড়ি ফিরে। দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে মিহিরকে কল দেয় সে। কল দেওয়ার দুইবার রিং হওয়ার পরেই রিসিভ করে মিহির। গায়ে ওড়না দিয়ে চুপিচুপি দরজা খুলে দেয় সে। মাহিনকে দেখে কিছুক্ষণ স্থব্ধ যায়। মাহিন আস্তে আস্তে হেঁটে রুমে চলে যায়। মিহির দরজা লাগিয়ে ভাইয়ের রুমের দিকে এগিয়ে যায়।

রুমে এসে দেখে মাহিন গা থেকে জ্যাকেট খুলে পাশে রাখে। জ্যাকেটের ভিতরে থাকা সাদা রঙের হাফ হাতা টি-শার্ট র:ক্তে ভিজে আছে। টি-শার্ট খুলতে গিয়ে ব্যাথ্যায় মৃদু আওয়াজ করে মাহিন। ভাইয়ের পিঠ দেখে মিহিরের চোখ ছলছল করছে। ঠোঁট কামড়ে কান্না করছে নিশব্দে। মাহিন পিছে ফিরে মিহিরকে দেখে নিরব হয়ে থাকে। তারপর এগিয়ে এসে দরজা লাগিয়ে বোনকে বিছানায় বসায়। বোনের মাথা নিজের বুকে রেখে চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে মাহিন। শান্ত স্বরে বলে, ‘কান্না করিস না প্লিজ। তোর চোখের পানি আমার সয্য হয় না।’

মিহির এবার ফুঁপিয়ে কান্না শুরু করে। মাহিন একটা ধীর্ঘ শ্বাস ফেলে। মেয়েটা এতো কান্না করতে পারে। আগে জানলে মিহুকে কিছুতেই জানাতো না মাহিন।

মিহির কান্না থামিয়ে উঠে গিয়ে ফাস্ট এন্ড এইড বক্স নিয়ে আসে। তুলো আর সেভলন দিয়ে ডেসিং করে দেয় কাটা স্থান, ছিলে যাওয়া জায়গায়। ব্যান্টেজ লাগিয়ে বলে, ‘এগুলো কিসের কাটা ভাইয়া?’

‘ছু:ড়ি!’

আতংকে উঠে মিহির। শরিলের পশম দাঁড়িয়ে পরে। মিহিরের অবস্থা বুঝতে পেরে মাহিন হেসে ফেলে, ‘আরে পিনিক হোস না। যেই ব্লাস্টার আঘাত করেছে না তাকে উপরে পাঠিয়ে দিয়েছি।’

‘মানে তুমি মা:র্ডার করেছো?’ বিস্ফোরিত হয়ে বলে মিহির। মাহিন জুড়ে হেসে ফেলে। তার পর বলে, ‘আরে এসব করতে এমন একটা দুইটাকে উপরে টপকাতে হয়। টেনশন নট মাই লিটল সিস্টার!’

‘ক্যাস টা কি সলভ হয়েছে?’ আগ্রহ নিয়ে বলে মিহির। মাহিন বিছানায় গা এলিয়ে বলে, ‘হ্যা! ওরা যে এতো গাধা জানা ছিলো না। আমার ফেলা ফাঁদে পা দিয়ে সব কটা টপকে গেছে। তবে ক্যাসটার ইন্টারেস্টিং একটা ব্যাপার ছিলো বুঝলি!’

‘কি ব্যাপার?’

‘অ্যান্টিমনি, রাইসিন! নাম শুনেছিস?’

‘রাইসিনের নাম শুনেছি এটা বিষাক্ত পদার্থ। কিন্তু কেনো?’

‘ব্রাহ্মাণবাড়িয়া তে সাধারন দুইজন লোক খুন হয়েছিলো। তাদের দেহে এই দুই বিষাক্ত পদার্থ পাওয়া গেছে।’

বিস্মিত হয়ে বলে মিহির, ‘কারা খু:ন করেছে ভাই?’

‘এই দুইজন কালো জগতের সাথে জড়িত ছিলো। তাদেরই দলের লোক তাদের মার্ডার করে। ইনভেস্টিগেশন করে জানা যায় আরকি। ওদের দলের লিডার দেশে এসে অনেক বড় বোকামি করেছে মিহু।’

‘তাদের ধরতে গিয়েই বুঝি এই অবস্থা তোমার?’

হেসে ফেলে মাহিন। তারপর বলে, ‘এতো দিনের সাজানো ফাঁদে পা দিয়েছে ব্যাটা। ভালো মতেই ফেঁসেছে। ভেবেছিলাম হয়তো ২৭/২৮ বছরের কেউ হবে। কিন্তু না ভুরিওয়ালা ব্যাটা।’

মিহিরওও সাথে হেসে ফেলে। মাহিন বিছানায় গা এলিয়ে বলে, ‘এখন যা, আমি ঘুমাবো।’

‘এই না! খেয়েছো তুমি? মাত্রই তো আসলা আমি খাবার গরম করে রেখেছিলাম তুমি আসছো জানানোর পর। একটু ওয়েট করে আমি খায়িয়ে দিবো তোমাকে।’ বলে বের হয়ে যায় মিহির। মুচকি হাসে মাহিন। কাজ নিয়ে যখন সে প্রচুর প্রেশারে থাকে তখন মিহির প্রায়ই খায়িয়ে দেয় তাকে।
_____________

এমআর হাসান উরফে আয়াত হাসান মাহিন। সিক্রেট এজেন্ট অফ বাংলাদেশ। ডিপার্টমেন্টের সবাই তাকে এমআর হাসান নামে চিনে। মাহিন এই পেশায় প্রায় ৪ বছর যাবত জড়িত। কাকতালীয় ভাবে সিক্রেট এজেন্টের হেড উজ্জ্বল আহসানের সাথে তার পরিচয় হয় কুমিল্লাতে। বেশ কয়েকটি ক্যাস সলভ করতে মাহিন তাকে সাহায্য করে। মাহিনের সাহসিকতা, বুদ্ধিমত্তা, তীক্ষ্ণ দৃষ্টি, কাজের প্রতি মনোবল সব মিলিয়ে উজ্জ্বল আহসান তার প্রতি মুগ্ধ ছিলো। তাই তাকে ডিপার্টমেন্টের সদস্যের লিডার হিসেবে যুক্ত করে। বয়সে সবার ছোট কিন্তু বুদ্ধিতে সবার উপরে। সবাই তাকে যতেষ্ট সম্মান আর স্নেহ করে। মাহিনের এই পেশা সম্পর্কে একমাত্র মিহির, সবুজ, আর মাহিনের বেষ্ট ফ্রেন্ড ফুফাতো ভাই শান্ত আরাফ ছাড়া কেউ জানে না। ক্যাসের Investigation করতে সব সময় শান্ত তার পাশে থাকে। শান্তও মাহিনের মতো সিক্রেট এজেন্ট বটে। শান্তকে সবাই এসআর আরাফ নামে চিনে।
_____________

আজ মিহির অফিসে যায় নি। অসুস্থ ভাইকে রেখে অফিসে যাওয়া ইম্পসিবল। তাছাড়া মা জানে না মাহিনের কথা। জানলে কেলেঙ্কারি বানিয়ে ফেলতো, ভাইরে দফারফা করে ফেলতো ভেবে হেসে ফেলে মিহির।

দুপুর ১ টায় উঠে মাহিন। ঘুমের মেডিসিন খেয়েছিলো সে। এখনো শরিল ব্যাথ্যা করছে প্রচুর। সে সবে তোয়াক্কা না করে ওয়াশরুমে গিয়ে লম্বা শাওয়াল নেয় সে। তার পর ফুল হাতা শার্ট পরে বেরিয়ে আসে। ভাইকে দেখে মিহির সোফা থেকে উঠে বলে, ‘কখন উঠলে? আমাকে ডাকতে আমি গোসল করায় হেল্প করতাম।’

মাহিন কিছু বলতে যাবে তার আগেই কড়া গলায় বলে উঠে রাশেদা, ‘হ্যাঁ হ্যাঁ নবাবের পুত্রকে এবার কোলে বসিয়ে গোসল করিয়ে দেই কেমন? নবাব যখন খুশি বেরিয়ে যাবে, আসবে কখন, যাবে কখন, খাবে কি কিছুই জানানোর প্রয়োজনবোধ করে না।’ বলতে বলতে টেবিলে খাবার রাখে মাহিনের জন্য।

মাহিন বিরক্ত হয়ে চেয়ারে বসে। মিহির এসে খায়িয়ে দিতে লাগে মাহিনকে। পরম যত্নে ভাইকে খায়িয়ে দেয় মিহির। খাবার শেষে মাহিন রুমে চলে যায়।
__________

অফিসে গিয়ে মিহিরের খোঁজ নেয় শুভ। মিহির অফিসে আসেনি দেখে রাগ লাগে তার। একে তো কালকের ঘটনা আর আজকে অফিসে আসে নি। রাগে চোয়াল শক্ত করে বসে থাকে সে। মেয়েটা তাকে একদিন পাগল করেই দিবে। সাত পাঁচ না ভেবে মিহিরকে কল দেয়। মোবাইল সাইলেন্ট থাকায় কল রিসিভ করে নি মিহির।

বাহ্! এখন আমার কল রিসিভ করছে না। নিশ্চয় আবার ওই ছেলে টার সাথে বাইকে করে ঘুরতে গেছে। এই ছেলে কে কাছে পেলে জ্যা:ন্ত পুঁ:তে ফেলবো। আচ্ছা মিহির কি কোনো রিলেশনে আছে? তাহলে সবুজ? এই ছেলেটা আবার কে? ওয়েট মিহিরের কয়টা বয়ফ্রেন্ড? ধ্যাত কি ভাবছি আমি। মিহির কোনো রিলেশনশিপে নেই সিউর। উফ আমি পাগল হয়ে যাবো!! 🥴
_______________

সন্ধ্যায় মাহিন সুহার নাম্বারে কল দেয়। কয়েকবার রিং হওয়ার পর রিসিভ করে সুহা। চুপচাপ মোবাইল কানে দিয়ে ডিভানের উপর বসে আছে সে। কেউ কোনো কথা বলছে না। নিরবতা ভেঙে মাহিন শান্ত স্বরে বলে, ‘সুহা? শুনতে পাচ্ছো?’

সুহা উত্তর না দিয়ে চুপ করে আছে। মনে মনে ভেবে রেখেছে কথা বলবে না সে মাহিনের সাথে। মাহিন সুহার অভিমানের কারণ বুঝতে পেরে বলে, ‘সুহারানী কি তবে রেগে আছে আমার উপর?’

সুহার চোখে পানি চিকচিক করছে। কান্না ধরে রাখতে না পেরে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে সে। সুহার কান্নার আওয়াজ মাহিনের বুকের বা-পাশে গিয়ে তীরের ন্যায় ফুটে।

‘আপনি অনেক খারাপ। দুই দিন দেখাতো দূরের কথা একটা কলও দেন নি। বুঝতে পেরেছি আপনি আমাকে ভালোবাসেন না একটুও না। ওই দিন রাতে মিথ্যে বলেছেন। আপনি অনেক খারাপ লোক। আপনার সাথে কথা বলবো না আমি। আড়ি আপনার সাথে।’ কান্না মিশ্রীত কন্ঠে বলে সুহা।

ধীর্ঘশ্বাস ফেলে প্রেয়সীর কান্না মাখা গলায় অভিযোগ শুনে মাহিন। এতো ভালোবাসে মেয়েটা দুই দিন কল না দেওয়ায় কেঁদে দুনিয়া ভাসিয়ে দিচ্ছে। মৃদু হাসে মাহিন।

‘ভালোবাসো আমায়?’ শান্ত স্বরে বলে মাহিন। সুহা কান্না ততোক্ষণে কমে যায়। ভাঙা গলায় বলে, ‘নাহ!’

‘সত্যি তো?’

‘আপনি অনেক খারাপ। কথা নেই আপনার সাথে।’ কাঁদুকাঁদু ভয়েজে বলে সুহা। মাহিন ফিক করে হেসে ফেলে। মাহিনের হাসির আওয়াজ শুনে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে সুহা। চেঁচিয়ে বলে, ‘এই এই সাদা ভাল্লুক হাল্লুক হাসছেন কেনো? আমি হাসির কিছু বলেছি?’

‘নাহ!’ স্বাভাবিক ভাবে বলে মাহিন। সুহা দাঁতে দাঁত চেপে বলে, ‘তাহলে হাসলেন কেনো?’

‘তোমার কাঁদুরে ভয়েজটা অনেক কিউট সুহারানী। কাছে থাকলে আদর করে দিতাম। ছুঁয়ে দিতাম তোমার ওই কান্নামিশ্রীত আদুরে মুখটি।’ নেশাক্ত গলায় বলে মাহিন। এক নিমিষেয় সুহার সকল প্রকার অভিমান গায়েব হয়ে যায়। লজ্জার আভা গালে ভেসে উঠে।

চলবে..!!

[ দিলাম মাহিনের রহস্য ভেঙে। পর্বটা বড় করেই দিয়েছি। এবার খুশি?❤️]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here