অনুভবী হিয়া’ পর্ব-১৮

0
1868

#অনুভবী_হিয়া
#মাইশাতুল_মিহির

১৮.

প্রভাতের স্নিগ্ধ বাতাস। শুভ্র শিউলি ফুল ফুটে চারদিকে বিলিয়ে দিচ্ছে শুভ্রতা। পাখির কিচিরমিচির, হালকা মৃদু মাতাল করা বাতাস, রাস্তায় পরে থাকা শিউলি কৃষ্ণচূড়া ফুল, রংবেরঙের স্নিগ্ধতার আহাজারি যেনো আজকের প্রভাতকে মুগ্ধতায় ভরিয়ে দিচ্ছে। গায়ে পাতলা শাল পেচিয়ে ফুটপাত ধরে আনমনে হাটছে মিহির। ভোরের এই স্নিগ্ধতা উপভোগ করার পরম ইচ্ছা পোষণ করছে তার মন। বেনী করা চুল এক পাশে, বেবি হেয়ার গুলো উড়ে চোখে মুখে পরছে। হঠাৎ পাশ দিয়ে একটা বাইক তুমুল বেগে ছুটে গেছে। মনে পরে যায় তার সেই দিনের কথা……


~ প্রায় চার বছর আগের কথা!

দিনটা ছিলো ফেব্রুয়ারি মাসের কোনো এক তারিখের প্রভাত। সকাল ছয়টা বাজে বোধহয়। স্নিগ্ধতায় ভরা ভোরে রাস্তার পাশ দিয়ে হাটছে সাদা থ্রি-পিসের সাথে হিজাব পরা এক মেয়ে। পাশে থাকা বান্ধুবীর সাথে কথোপকথনে মেতে আছে আর মাঝে মাঝে উচ্চস্বরে খিলখিল করে হাসছে। হাতে থাকা পাথরের ব্যাসলেট ছিড়ে আওয়াজ করে রাস্তার মাঝে পরে যায়। ছড়িয়ে ছিটিয়ে পরে পুথিগুলো। প্রিয় ব্যাসলেট পরে যাওয়ায় মন বিষন্ন হয় তার। পাথর গুলো অনুসরন করে রাস্তায় বসে কুঁড়োতে থাকে সে। একমনে পাথর হাতে নিচ্ছে যে এটাই তার একমাত্র কাজ। হঠাৎ মেয়েটির পাশে তুমুল গতিতে ব্রেক কষে একটি বাইক। মেয়েটি ভয়ে চোখ বন্ধ করে মুখে হাত দিয়ে ঢেকে ফেলে।

বাইকে থাকা ছেলেটি বাইক থেকে নেমে মেয়েটির উদ্দেশ্যে বলে, ‘ইউ স্টুপিড গার্ল! রাস্তার মাঝে কেউ বসে? এখন যদি এক্সিডেন্ট হয়ে যেতো?’

মুখ থেকে হাত সরিয়ে পিটপিট করে চোখ খুলে সামনে দাঁড়ানো ব্যক্তি টির দিকে তাকায় সে। মেয়েটির চেহারা দেখে স্থব্ধ হয়ে যায় ছেলেটি। কয়েকটা হার্টবিট মিস হয়ে গেছে। মেয়েটির মায়াবী কাজল টানা চোখ, স্নিগ্ধতায় ভরা মুখ, হালকা গোলাপি ঠোঁটে লিপ জেল দেওয়ায় ঝিলিক দিচ্ছে। সব কিছু মিলিয়ে মেয়েটির মুগ্ধতায় পরে যায় ছেলেটি। চোখের পলক পরছে না তার। বিরক্তি নিয়ে উঠে দাঁড়ায় মেয়েটি।

‘দোস্ত, তুই ঠিক আছিস?’ পাশে দাঁড়ানো মেয়েটির কথায় ভাবনার রেশ কাটে ছেলেটির।

‘ঠিক আছি!’ নরম গলায় বলে মেয়েটি।

মুগ্ধতা নিজের ভিতরে দমিয়ে রেখে বাহিরে গম্ভীরতা বজায় রেখে ছেলেটি বলে, ‘নাম কি তোমার? রাস্তার মাঝ খানে কি করছিলে?’

এবার বেশ বিরক্ত এসে পরে মেয়েটির মাঝে। ঝাঁঝালো গলায় বলে উঠে, ‘আপনাকে কেনো নাম বলবো? এইভাবে কেউ বাইক চালায়? পারেন না যেহেতু বাইক চালাতে কে বলেছে? এটলিস্ট হর্ন তো দিবেন? আর কাকে আপনি স্টুপিড বলেছেন? আপনি নিজেই তো স্টুপিড ইডিয়ট ঘোড়ার ডিম। আসছে আবার আমাকে বলতে ননসেন্স কোথাকার।’

চুপচাপ কর্ণপাত করছে ছেলেটি। তার কাছে এই ঝাঁঝালো গলাও কেনো যেনো মিষ্টি মিষ্টি লাগছে। ইশ বুকের পাশে গিয়ে লাগে। উফফ!!

‘এই মিহু তাড়াতাড়ি আয় দেড়ি হয়ে যাচ্ছে।’

মিহির একপলক রাগী চোখে ছেলেটিকে দেখে বান্ধবীদের সাথে চলে যায়। সকাল ছয়টায় প্রাইভেটের উদ্দেশ্যে বের হয়েছিলো মিহির, মিতু, আয়না। যুবক স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার যাওয়ার দিকে। ‘শুভ?’ আদিলের ডাকে খুশ আসে তার।

‘মামা সামথিং সামথিং!’ হেসে বলে রাহুল।

‘নাথিং নাথিং ব্রো!.’ আলতো হেসে বলে শুভ।

‘মেয়েটি মনে হয় এইদিক দিয়ে পড়তে যায়। হাতে বই ছিলো আবার সাথে মেয়ে গুলো।’ বলে সামির।

‘যাই বল মেয়েটা সুন্দর ছিলো!’ হেসে বলে রাহুল। শুভ রাগী চোখে তাকায় তার দিকে। ক্যাবলা মার্কা হাসি দিয়ে বলে রাহুল, ‘ভাই তোর টার দিকে নজর দেই নাই, পাশের টা রে বলছি।’ হেসে দেয় সবাই।

‘দোস্ত, এই মেয়েটার সম্পর্কে সব জানতে চাই!’ বাইকে উঠতে উঠতে বললো শুভ। ‘পেয়ে যাবেন জাঁহাপনা!’ এক সাথে বলে উঠে রাহুল আদিল সামির। তারপর বাইক স্টার্ট দিয়ে চলে যায় চার জন।
_________________

টং’য়ের দোকানে বসে আছে শুভ, সামির, রাহুল। অপেক্ষা করছে আদিলের জন্য। কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর আদিল এসে পাশে বসে তাদের। সবাই আগ্রহ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। আদিল ভাব নিয়ে কলার ঠিক করে চা খেতে শুরু করে।

আদিলের এমন ভাব দেখে বিরক্ত নিয়ে বলে সামির, ‘শা:লা ভাব মারিস পরে আসল কথা বল আগে।’

‘কোন কথা দোস্ত?’ না বুঝার ভান ধরে বলে আদিল। শুভ সাথে সাথে কাঠের বেঞ্চের উপরে থাকা নিউজপেপার আদিলের দিকে ছুঁড়ে মারে। আদিল হেসে বলতে শুরু করে,

‘মেয়েটির নাম মাইশাতুল জামান মিহির। এইসএসসি ক্যান্ডিডেট। আমাদের ভার্সিটির কলেজেই পড়ে। বাবা মার সাথে এখানকার শিমুলপাড়া (কাল্পনিক নাম) ৪ নাম্বার বাড়িতে থাকে। তাদের বাড়ি কোথায় এইসব জানতে পারি নি।’

‘এতোটুকুই যতেষ্ট ছিলো!’ বলে সামির। শুরু হয় চার বন্ধুর আড্ডা।

___________________

ক্লাস শেষে ফুচকার দোকানে বসে ফুচকা খাচ্ছে মিহির পাশে মিতু আয়না।

‘দোস্ত প্রচুর ঝাল রে!’ বলে আয়না। ঝালে হুহু করতে করতে বলে মিহির, ‘আরে ফুচকায় ঝাল না থাকলে ভালো লাগে না।’

হঠাৎ শুভ এসে সামনে দাঁড়িয়ে বলে, ‘হাই, আমাকে চিনতে পারছো?’

‘না তো! কে আপনি?’ প্রশ্ন করে মিহির। মিহির কথা শুনে কিছুটা অবাক হয় শুভ। তারপর শান্ত স্বরে বলে, ‘কয়েকদিন আগে রাস্তায় তুমি বাইকের সামনে এসেছিলে মনে নেই? ব্রেক না দিলে যে কি হতো। আরেকটুর জন্য বেঁচে গিয়েছিলে।’

খানিকটা বিরক্ত হয় মিহির। কড়া গলায় জিজ্ঞেস করে, ‘হ্যা তো?’

‘আসলে তোমাকে খুঁজেছিলাম পাই নি। হঠাৎ এই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছি তখন তোমাকে দেখলাম।’

‘আমার জানা মতে আপনার কোনো জিনিস আমার কাছে নেই যে আমাকে খুঁজতে হবে! সামনে থেকে সরেন!’ ঝাঁঝালো গলায় বলে মিহির। শুভ কিছুটা ইতস্ততবোধ করে বলে, ‘আব্ আই’ম সরি!’

সরি বলার কারন বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করে, ‘কারন?’

‘ওইদিনের ঘটনার জন্য। আসলে সকালে রাস্তা ফাঁকা থাকে তাই ফ্রেন্ডরা মিলে রেস নিয়েছিলাম। এই জন্যে বাইক স্প্রিডে চালিয়েছিলাম আর তখনই… হুয়াট এবার আই’ম সরি!’

আড় চোখে তাকায় মিহির। কিছু না বলে চলে যায় সেখান থেকে। শুভ দাঁড়িয়ে দেখছে মিহিরের যাওয়া। মিহির যেতেই আদিল সামির রাহুল আসে শুভর কাছে। পিছন থেকে রাহুল কাধে চাপড় দিয়ে বলে, ‘কিরে মামা টায়ার পাঞ্চার?’

‘তোর মাথা!!’

চলবে..!!

[আসেন আসেন আমার সাথে মিহির আর শুভর অতীতে আসেন দেখে আসি! 🙄 ওকে হ্যাপি রিডিং 😊]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here