#অনুভবী_হিয়া
#মাইশাতুল_মিহির
৩২.
রাশেদার কথায় কুমিল্লা যাবে বলে অফিসে গিয়ে রিজাইন দিয়ে দেয় মিহির। তাছাড়া এক্সাম আর বেশি দিন বাকি নেই। মাত্র এক সাপ্তাহ পরে। এখন সব কাজ বাদ দিয়ে ভালো করে পড়াশোনায় মন দিচ্ছে সে। অবশ্য রিজাইন দেওয়ার কথা শুভ জানতো কিন্তু মিহিরের এক্সাম তাই কিছু বলেনি।
ক্যানভাসে বসে বইয়ের পাতা ঘাটছে মিহির। পাশে মিতু, আয়না, আশা। এক্সাম নিয়ে প্রিপারেশনে এক জন আরেক জনকে সাহায্য করছে।
‘হায় হায় এবার আমার কি হবে? এবার ফেল করে বসবো রে। আমার বুঝি রিকশা ওয়ালার সাথেই বিয়ে টা হয়ে যাবে রে।’ কাদু কাদু মুখে বলে আয়না। বিরক্তি হয়ে বলে মিহির, ‘চুপ করবি। পটরপটর না করে মনোযোগ দে না ভাই।’
‘চিন্তা করিস না রিকশাওয়ালা না, তোকে ফুচকা ওয়ালার কাছে বিয়ে দিবো। তাহলে আমরা ফ্রি তে ফুচকা খেতে পারবো।’ মিতু বললো। হেসে ফেলে সবাই।
হঠাৎ কানে গিটারের আওয়াজ আসে। উৎসাহিত হয়ে তাকায় সবাই। ক্যানভাসের মাঝে গিটার হাতে নিয়ে সুর তুলছে শুভ। তার পাশে সামির, আদিল আর রাহুল। ক্যানভাসের সকলের দৃষ্টি এখন শুভর দিকে। শুভ মিহিরের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে উঠে এসে মিহিরের পাশে বসে। বিস্ফোরিত হয়ে যায় মিহির। অবাক হয়ে বলে, ‘আপনি এখানে?’
এক গাল হেসে বলে শুভ, ‘তোমার জন্য এসেছিলাম। একটা ছেলের হাতে গিটার দেখে ভাবলাম আজ তোমার জন্য একটা গান গায়।’
রাহুল চেঁচিয়ে বলে, ‘রোমিও চুপচাপ না থেকে আমাদের গান শুনার সুযোগ তো দাও।’ ক্যানভাসের বাকি সবাইও একি কথা বলে। শুভ হেসে গিটার বাজাতে শুরু করে।
আমি প্রেমিক, আমি কবি,
তুমি সিরিয়াস ভাবে দেখো সবই।
আমি গেম খেলে সারারাত জাগি,
তুমি পড়ুয়া মেয়ে বেজায় রাগি।
আমি বিড়ি খোর, আমি আড্ডাবাজ,
পড়াশোনা শুধু তোমার কাজ।
তোমার প্রিয় বিড়াল ছানা, আমার প্রিয় কুকুর,
তোমার প্রিয় পাহাড়ি ঝর্না, আমার প্রিয় পুকুর,
গোলাপ ফুলের জায়গায় আমি দিলাম তোমায় জবা,
বলো তুমি এইবার কি আমার প্রেমিকা হবা? (২)
এতোক্ষনে শুভ আর মিহিরের আশেপাশে মানুষের ভীড় জমে গেছে। সবাই গোল হয়ে বসে আছে তাদের পাশে। একটা ছেলে বলে, ‘মিহু তুই উনার প্রেমিকা হয়েই যা। ভাই কিন্তু তোকে সরাসরি প্রপোজ করে ফেলেছে।’
‘আহা গো কি প্রেম দেখেছো?’ পিঞ্চ মেরে বলে আয়না। মিহির দাঁতে দাঁত চেপে আয়নার দিকে কড়া চোখে তাকায়। আদিল বলে, ‘ভাই একটা রোমান্টিক গান গেয়ে শুনা। ‘ সামিরও বললো, ‘হ্যা একটা হিন্দি গান গা ভাই!’
শুভ ‘ঠিক আছে’ বলে সুর তুলে…..
Itni muhabbat karo na
Mein doob na jaun kahin
Vaapas kinare pe ana
Mein bhool na jaun kahin
Dekha jabse chehra tera
Mein to hafton se soya nehin
Bol do na zara
Dil mein jo hai chipa
Mein kisi se kahunga nehi (2)
Mujhe neend ati nehi hai ekele
Khwabon mein aaya karo
Nehi chal sakunga tumhare bina mein
Mera tum sahara bano
Ik tumhein chahne ke alaawa
Aur kuch humse hoga nehi
Bol do na zara
Dil mein jo hai chipa
Mein kisi se kahunga nehi
Humari kami tumko mehsoos hogi
Bhiga dengi jab baarishe
Mein bhar karke laaya hoon
Ankhon mein apni
Adhoori si kuch khwahishe
Ruh se chaahne wale aashiq
Bateein jismo ki karte nehi
Bol do na zara
Dil mein jo hai chipa
Mein kisi se kahunga nehi
Bol do na zara
Dil mein jo hai chipa
Mein kisi se kahunga nehi..❤️
পুরো টা গান শুভ মিহিরের দিকে তাকিয়ে গেয়েছে। মিহিরও অন্যরকম ভাবনায় চলে গিয়েছিলো। সকলের তালি দেওয়া তে ধ্যান থেকে ফিরে আসে তার। শুভর দিকে তাকাতেই দেখে শুভ তার দিকে মিষ্টি হাসি দিয়ে তাকিয়ে আছে।
__________________
রাস্তার পাশে বিরক্তি মুখে দাঁড়িয়ে আছে মিহির। তার পাশে হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছে শুভ। প্রায় আধ ঘন্টা ধরে এখানে দাঁড়িয়ে আছে তারা। মিহির রিকশা, সিএনজি থামালে শুভ তাদের বারন করে দেয়। শুভর একটায় কথা তার সাথে যেতে হবে না হলে যেতে পারবে না।
‘সমস্যা কি আপনার? এইভাবে পিছে পরে আছেন কেনো?’ বিরক্ত হয়ে বলে মিহির। ত্যাছড়া ভাবে বলে শুভ, ‘সমস্যা আমার না তোমার মাথায়। আমার সাথে গেলে কি মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে?’
ভ্রুঁ কুঁচকে বলে মিহির, ‘যাবো না আমি।’ শুভ গা জ্বালানো হাসি দিয়ে বলে, ‘তাহলে তোমাকেও যেতে দিবো না।’
‘আপনি ঠিক আগের মতোই আছেন।’ বিরক্তিভঙ্গিতে বলে মিহির। শুভ হেসে বলে, ‘এই আগের আমি টাতেই তো প্রেমে পরেছিলে তাহলে এখন উপেক্ষা করছো কেনো? আমাকে পুড়তে দেখলে ভালো লাগে তোমার? ভালোবাসা যায় না এই অধম টাকে?’
আড় চোখে শুভর দিকে তাকায় মিহির। চুপচাপ দাঁড়িয়ে শুভকে তাড়ানোর প্ল্যান আঁটছে মাথায়। শুভকে এখান থেকে তাড়ানোর জন্য মিহির ইচ্ছে করে বলে, ‘পানি খাবো। আমার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে।’ আড় চোখে মিহিরকে দেখে বলে, ‘ওয়েট আমি ঠান্ডা পানি আনছি।’ বলে রাস্তার ওপর পাশে যায় শুভ।
শুভ কে যেতে দেখে মিহির বিশ্বজয়ের হাসি দিয়ে যেই পা বাড়াবে তখনি একটা ট্রাক আসে মিহিরের সামনে। শুভ দোকান থেকে পানি কিনে রাস্তায় তাকাতেই চোখে পরে তার। চেঁচিয়ে বলে, ‘মিহি!’ বলেই দৌড় দেয় মিহিরের দিকে।
আচমকা সামনে ট্রাক আসায় মিহির ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে। শরিল কাপছে তার। ট্রাকের সাথে ধাক্কা লাগার আগেই কেউ একজন মিহির বাহু ধরে টান দিয়ে জড়িয়ে রাস্তায় পরে যায়। শুভর পা থেমে যায়। মুহূর্তেই তার শ্বাস বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো।
মিহির মাথা তুলে মাহিনকে দেখেই জড়িয়ে ধরে বুকে মাথা রেখে ফুঁপিয়ে কেঁদে ফেলে। মাহিন মিহিকে শক্ত করে জড়িয়ে রাস্তায় মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে জোড়ে জোড়ে শ্বাস নেয়। তার বিশ্বাসই হচ্ছে না তার জন্য কেউ তার বোনকে টার্গেট করবে। ভাজ্ঞিস সঠিক সময়ে এসেছিলো।
রাস্তায় মানুষের ভীড় জমে যায়। মাহিন উঠে বসে কিন্তু মিহির এখনো তাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে। অনেক ভয় পেয়েছে যে সেটা সবাই বুঝতে পেরেছে। একজন লোক বলে উঠে, ‘শা:লা ড্রাইভারের বাচ্চা চলে গেছে। নাহলে ধরে গণধো:লাই দিতাম।’
‘এইযে ভাই উনি আপনার কে হয়?’ মাহিনকে উদ্দেশ্যে করে বলে এক লোক। মাহিন দম নিয়ে বলে, ‘আমার বোন।’
তারপর মিহিরের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে, ‘হুশ কাঁদছিস কেনো? এইদেখ কিছু হয়নি। তোর ভাই আছে তো তোর পাশে। মিহু মাই লিটট বার্ড প্লিজ কাঁদিস না। দেখি মুখটা?’ বলে মিহিরের মুখ উঠিয়ে চোখের পানি মুছে দেয়। শুভর কাছ থেকে পানির বোতল নিয়ে মুখ ধুইয়ে পানি খায়িয়ে দেয় মাহিন।
শুভ এখনো স্থব্ধ হয়ে আছে। ছোট করে বলে, ‘মিহি তুমি ঠিক আছো?’ মিহির মাথা নেরে ‘হ্যা’ উত্তর দেয়।
মাহিনের উদ্দেশ্যে বলে শুভ, ‘মাহিন আমার সাথে এসো আমি তোমাদের পৌছে দেই। মিহি অনেক ভয় পেয়েছে তুমি ওকে ধরে রাখো।’ মাহিন প্রতিত্তরে কিছু না বলে মিহিকে ধরে উঠায়। শুভ গাড়ি আনার পর ব্যাক সিটে মিহিরকে একহাতে আগলে ধরে বসে মাহিন। শুভ গাড়ি স্টার্ট দেয়।
মাহিন জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে আছে। মাহিনের মোবাইলে ছোট একটা ম্যাসেজ এসেছিলো। যার মধ্যে লিখা ছিলো পারলে ছোট বোনকে বাঁচাও। মাহিন তখন পুলিশ স্টেশন ছিলো ম্যাসেজ দেখার সাথে সাথে বেড়িয়ে যায়। তাই মিহিরের ভার্সিটিতে আসতে দেড়ি হয়নি তার। এইকাজ টা যে জিহান করেছে সেটা বুঝতে বাকি নেই তার। আরো একদিন মিহিরকে মারার জন্য লোক পাঠিয়েছিলো জিহান। যদিও কেউ জানে না। কারণ মিহিরের কাছে আসার আগেই মাহিন বুঝতে পেরে সব গুলো কে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দেয়। দীর্ঘশ্বাস ফেলে মাহিন। মিহিরের দিকে তাকিয়ে দেখে ঘুমিয়ে গেছে মিহির। নিশব্দে আরো ভালো ভাবে আগলে নেয় তাকে।
চলবে??