অনুভবী হিয়া পর্ব-৩৩

0
1581

#অনুভবী_হিয়া
#মাইশাতুল_মিহির

৩৩.

মিহিরের এক্সাম শেষ হয়েছে আজ দুই দিন। এতোদিন মিহিরকে ভার্সিটিতে মাহিন দিয়ে আসতো আর এক্সাম শেষে নিয়ে আসতো। এতো দিন যেনো মাহিন একটা আতংকে ছিলো। তার নিজের জন্য না বরং তার কাছের মানুষ গুলোর ক্ষতি হওয়ার ভয়ে। সুহার সাথেও দেখা করে না এখন। শুধু মোবাইলে যোগাযোগ রেখেছে সে। সুহা জানতে চাইলে সে কিছু বলে না। মাহিন চাই না সুহাকে দেখে জিহান সুহার ক্ষতি করার চেষ্টা করুক। এতো চিন্তার মাঝে মিহির আর তার মাকে সেভ রাখার জন্য সেও সিদ্ধান্ত নেয় তাদের কে কুমিল্লা পাঠানোর আর সেটা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। প্রথমে ওদের নিরাপত্তার দরকার। তার পর নাহয় জিহানের ব্যবস্থা করা হবে।
_________________

মিহিরের দুই মামা আজমির আর রাজমির। দুইজন এ কুমিল্লা শহরের বড় পলিটিশিয়ান। আজমিরে এক ছেলে দুই মেয়ে, সবুজ, রিয়া, সিয়া। আর রাজমিরের এক মেয়ে হায়া।

মিহিররা কুমিল্লা এসেছে আজ দুই দিন। আসার পর থেকেই সকলে ব্যস্ত হয়ে পরে তাদের জন্য। এতো দিন পর মিহুকে পেয়ে যেনো রিয়া হিয়া হায়া উন্মাদ হয়ে গেছে। তারা সবাই মিহু বলতে পাগল।

দরজার পাশে দাঁড়িয়ে আছে রিয়া, সিয়া আর হায়া। রিয়া দরজা ধাক্কা দিয়ে বলে, ‘মিহু আপু? ঘুমিয়ে আছো?’

‘না ভেতরে আয়।’ অনুমতি পেয়ে তিন জন রুমে ঢুকে। বিছানায় বসে আড্ডা জুড়ে দেয় সবাই।

‘জানো আপু? এতো দিন তুমি ছিলে না বাড়িটা আমাদের জন্য একেবারে ফাঁকা ফাঁকা লেগেছিলো।’ হায়া মন খারাপ করে বললো। মিহির হেসে বলে, ‘এতো এতো মানুষ থেকেও বলছিস ফাঁকা ফাঁকা লেগেছে?’

‘আরে ওরা সব কাজের লোক। আর বড়মা ছোট মা রা তো কাজে ব্যস্থ থাকে। সবুজ ভাইয়া শান্ত ভাইয়া মাহিন ভাইয়া তো থাকেই না। তুমি থাকলে অনেক অনেক মজা করতে পারি।’ প্রফুল্লিত হয়ে বলে সিয়া।

মিহির হেসে বলে, ‘ওলে বাবা রে। যা এবার থেকে এখানেই থাকবো। কেমন হবে?’

তিন জন বিস্ফোরিত হয়ে বলে, ‘সত্যি??’ মিহির মাথা নাড়ায়। সবাই খুশী হয়ে মিহিরকে জড়িয়ে ধরে বলে, ‘লাভ ইউ আপুইইইইইইইই!’
______________

থুতনিতে হাত রেখে ভাবছে শুভ। তার পাশে বসা আদিল সামির রাহুল বিস্ফোরিত হয়ে তাকিয়ে আছে। সামির গলা ঝেড়ে বলে, ‘তুই সিউর যে মিহু কুমিল্লা চলে গেছে?’

ছোট করে উত্তর দেয়, ‘হুম। অফিসে যখন রিজাইন দিয়েছিলো তখন বলেছে আমাকে এক্সাম শেষে নাকি কুমিল্লা চলে যাবে।’

রাহুল মাথা চুলকে বলে, ‘তোদের এই প্রেম কাহিনী ইতিহাসের পাতায় লিখা উচিত ছিলো।’

আদিল বললো, ‘কুমিল্লা চলে গেলে তুই মিহুকে কিভাবে কনভেন্স করবি? এমনিতেও এই সাত আট মাসে পারিস নি।’

সামির বলে, ‘ভেবেছিলাম ওদের বাসায় তোর আব্বুকে দিয়ে প্রস্তাব পাঠাবো। কিন্তু মিহুরা যদি কুমিল্লা থাকে তাহলে সেটা কিভাবে সম্ভব?’

রাহুল বিরক্ত হয়ে বলে, ‘ক্লাস নাইনে পিথাগোরাসের উপপাদ্য এতো কঠিন লাগে নাই, যতো টা কঠিন তোর এই প্রেম কাহিনী লাগতাছে।’
________________

রেস্টুরেন্টে বসে আছে মাহিন শুভ। সামনে রাখা আছে ধোয়া উঠা কফির কাপ। দুজনের মাঝেই নিরবতা বিরাজমান। মাহিন তার কাজের জন্য ঢাকা এসেছিলো গতকাল। আজ কুমিল্লা যাবে কিন্তু তার আগেই শুভ দেখা করতে বলে বিধায় সে আসে।

দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে শুভ, ‘দেখো মাহিন আমি সত্যি অনেক সিরিয়াস। মিহি কে ভালোবাসি, বিয়ে করতে চাই ওকে। ভেবেছিলাম তোমাকে কনভেন্স করে তোমাদের বাসায় আব্বুকে পাঠাবো। কিন্তু তার আগেই তোমরা কুমিল্লা চলে গিয়েছো।’

‘কুমিল্লা যাওয়াটা দরকার ছিলো।’

‘হ্যা সেটা নাহয় বুঝলাম। কিন্তু এখন কিভাবে? আমি কিছু বুঝতে পারছি না। নিজেকে ছন্নছাড়া লাগছে মাহিন। আমার মিহি কে চাই। আমাকে বুঝার চেষ্টা করো প্লিজ।’

লম্বা দম ফেলে মাহিন। শুভকে বিশ্বাস করে সে। তার বোনকে যে ভালোবাসে আর খুব ভালো রাখবে সেটাও জানে। জ্বিব দিয়ে ঠোট ভিজিয়ে বলে, ‘আমি মিহুর সাথে কথা বলবো। মিহুর ইচ্ছার বিরোধে তো যাবো না। মিহুর সম্মতির পর নাহয় মায়ের সাথে কথা বলবো।’

‘তুমি যদি চাও আব্বু কুমিল্লা তেও যেতে রাজি।’

অবাক হয়ে বলে মাহিন, ‘আপনার বাবা মা জানে মিহুর সম্পর্কে?’ মৃদু হাসে শুভ। তারপর বলে, ‘আমাদের রিলেশনের প্রথম থেকেই সবাই জানে। সুহা তো মিহি বলতে পাগল।’

হেসে ফেলে মাহিন। হাসি থামিয়ে শান্ত কন্ঠে বলে, ‘সুহাকে একটু সাবধানে রাখবেন।’

কপালে সূক্ষ্ম ভাজ পরে শুভর। বিস্মিত গলায় বলে, ‘আমার কেনো জানি মনে হচ্ছে মিহি দের কুমিল্লা নিয়ে যাওয়ার পিছে বিশেষ কোনো কারণ আছে। আর এখন সুহার কথা বলছো? কারণ টা পরিষ্কার করে বলো তো মাহিন।’

স্বাভাবিক কন্ঠে বলে মাহিন, ‘ওই দিন ট্রাক আসা টা এক্সিডেন্ট ছিলো না। মিহুকে মা:রার জন্য ট্রাক তার সামনে আসে।’

বিস্ফোরিত হয়ে শুভ। তারপর বললো, ‘মিহির সাথে কার শত্রুতা আছে?’

‘উহুম মিহু নয় আমার সাথে।’ মাহিনের কথায় অবাক হয়ে বলে শুভ, ‘মানে? কে সে? তোমার সাথে শত্রুতামী কেনো?’

‘আপনি হয়তো জানেন না আমি একজন সিক্রেট এজেন্ট।’

আরেক দফা অবাক হয় শুভ। সে ভাবতেও পারেনি মাহিন এমন একটা কাজের সাথে জড়িত। কিছু বলতে যাবে তার আগেই মাহিন তাকে থামিয়ে বলে, ‘আমাদের কেউ একজন ফলো করছে শুভ।’

অস্থির হয়ে যায় শুভ। কিছু বলার আগেই মাহিন বলে, ‘উত্তেজিত হবেন না শুভ। চুপচাপ বসে থাকেন। আমার সানগ্লাসের দিকে তাকিয়ে খেয়াল করে দেখেন আপনার পিছনের টেবিলে কালো হুডি পরা একটা লোক।’

মাহিনের কথা অনুসারে তার চোখে থাকা সানগ্লাসে খেয়াল করে দেখে। মাহিন কিছুক্ষণ গভীর ভাবে চিন্তা করে। শুভ কিছু বুঝার আগেই তাদের টেবিলে থাকা ফ্লাওয়ার বেজ হাতে নিয়া তাৎক্ষণাৎ কালো হুডি পরা লোকটার মাথায় ঢিল দেয়। সাথে সাথে লোকটা আর্তনাদ করে উঠে। মাহিন লোকটাকে ধরে নাক বরাবর কয়েকটা ঘুষি দেয়। লোকটা সেখানেই শুয়ে ব্যাথায় কাতরাচ্ছে। শুভ এইসব দেখে অবাকের চূড়ান্ত পর্যায়ে। এই মুহূর্তে মাহিনকে সাইলেন্ট কিলারের সাথে তুলনা ছাড়া চলে না।

মাহিন লোকটার কলার চেপে বলে, ‘কে তুই? তোকে কে পাঠিয়েছে সত্যি করে বল?’

‘আমি লুকমান। আমাকে ছেড়ে দিন। আপনার কোনো ক্ষ:তি করবো না।’ ব্যাথ্যা কাতরে বলে।

‘কে পাঠিয়েছে বল? নয়তো ম:র। ম:রতে না চাইলে সত্যি করে বল। ‘ লোকটার নাক বরাবর ঘুষি দিয়ে বলে।

‘বলছি বলছি। আমাকে জিহান স্যার পাঠিয়েছে। আপনার সম্পর্কে সব আপডেট উনাকে জানানোর জন্য।’

মাহিন আরো কয়েকদফা মা:রে তাকে ফলে জ্ঞান হারায়। পুলিশকে ইনফোর্ম করে মাহিন। উপস্থিত থাকা সকলে তাদের দিকেই তাকিয়ে ছিলো। ম্যানেজার কিছু বলার আগেই মাহিন তার পরিচয় দিয়ে ক্ষতিপূরণ করে। পুলিশ এসে লুকমান কে নিয়ে যায়। মাহিন শুভ বেরিয়ে যায় রেস্টুরেন্ট থেকে।

চলবে???

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here