#অনুভবী_হিয়া
#মাইশাতুল_মিহির
৩৭.
সকালে ঘুম থেকে উঠে নিজেকে শুভর বাহুডোরের মাঝে পায় মিহির। শুভর থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে গোলাপি লাল সংমিশ্রনের একটা শাড়ী পরে রুম থেকে বের হয়। রান্না ঘরে এসে দেখে মিথিলা আর রহিমা খালা এক সাথে নাস্তা বানাচ্ছে। মিথিলা মিহিরকে দেখে বলে, ‘উঠেছো? রাতে ঘুম কেমন হলো তোমার?’
মিহির মিষ্টি হেসে বলে, ‘জি মা ভালো হয়েছে।’ মিহিরের মুখে মা ডাক শুনে মিথিলা অবাক হয়ে তাকায়। পরোক্ষনে মুচকি হেসে বলে, ‘বাড়ি পছন্দ হয়েছে তোমার?’
মিহির বেসিনে থাকা ধনেপাতা ধুতে ধুতে বলে, ‘হুম অনেক ভালো লেগেছে।’
রহিমা বলে, ‘একি তুমি হাত ভরাচ্ছো কেনো? যাও যাও আমি করে দিচ্ছি।’
মিহির বললো, ‘না খালা সমস্যা নেই। আমি বাড়িতে থাকলে আম্মুকে রান্নার কাজে সাহায্য করতাম। ঠিক আছে তোমরা অন্য কাজ করো আমিও সাহায্য করছি।’
মিথিলা কফির মগ মিহিরের হাতে দিয়ে বলে, ‘যাও শুভকে ডাক দাও। নাস্তা রেডি খেতে হবে।’
‘আচ্ছা’ বলে কফির মগ হাতে নিয়ে রুমে আসে মিহির। শুভকে বিছানায় না দেখে ওয়াশরুমে তাকায়। কফির মগ টেবিলে রেখে বিছানা গুছিয়ে নেয়। শুভ ওয়াশরুম থেকে মাথা মুছতে মুছতে বের হয়। মিহিরকে দেখে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে শুভ। হঠাৎ এমন হওয়ায় ভয় পেয়ে যায় মিহির। তারপর বললো, ‘এভাবে কেউ আসে? ভয় পেয়ে গেছি।’
কাধে চিবুক রেখে হেসে বলে শুভ, ‘ভয় পাওয়ার কি আছে? এখন তোমার জামাই আছে যে কোনো সময় জড়িয়ে ধরবে। সাহস বাড়াও মিহি সাহস বাড়াও’
মিহির নিজেকে ছাড়িয়ে দূরে যায়। লজ্জায় মাথা নুইয়ে মিনমিন করে বলে, ‘নাস্তার জন্য মা ডাকচ্ছে।’ বেরিয়ে যায় মিহির। শুভ উচ্চস্বরে হেসে কফির মগে চুমুক বসায়।
_______________
বিকেলে ঢাকা ফিরে আসে মাহিন। সাথে এসেছে সবুজ, শান্ত, রিয়া, সিয়া, হায়া। মাহিনের মামাদের জরুরী কাজ থাকায় তারা রিসিপশনে আসতে পারবে না। আগামীকাল শুভ আর মিহিরের বিয়ের রিসিপশন।
রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় সটান হয়ে শুয়ে পরে মাহিন। তখন ভিডিও কল দেয় সুহা। কল রিসিভ করার পর সুহা তার দুই হাতের মেহেদী দেখিয়ে বলে, ‘দেখেন কেমন হয়েছে?’
‘সুন্দর হয়েছে। এমন করে মেহেদী দিয়েছো মনে তো হচ্ছে তোমারই বিয়ে।’ হেসে বলে মাহিন। সুহা লাজুক হেসে বলে, ‘আমার হাতের মাঝে কিন্তু আপনার নাম আছে। খুঁজে বের করুন তো।’ দুই হাত ক্যামেরার সামনে ধরে বলে সুহা।
‘উহুম এখন না। কাছ থেকে দেখবো তোমার হাতের মেহেদী আর তোমাকে।’ বুকের বা পাশে হাত রেখে বলে মাহিন। লজ্জা পায় সুহা। চুপ হয়ে যায়। মাহিন থুতনিতে হাত দিয়ে সুহার দিকে অপলক তাকিয়ে আছে। তখন মোবাইলে আননোন নাম্বারে কল আসে মাহিনের। সুহাকে ‘পরে কল দিবো’ বলে কল কেটে দেয়। তারপর মোবাইলের কল রিসিভ করার পর অপরপাশ থেকে রুক্ষ কন্ঠ ভেসে আসে, ‘কেমন আছেন এমআর হাসান।’
মাহিন বাঁকা হেসে বলে, ‘মিঃ জিহান। আই’ম সাপ্রাইজড, আপনি কি মনে করে কল দিলেন?’ অপরপাশ থেকে জিহানের হাসির আওয়াজ আসে।
‘কেনো কল দিতে পারি না?’
‘পারেন। আপনার কলটা দুর্যোগ আসার পূর্বাভাস হিসেবে কাজ করে।’
‘খুব বুদ্ধি আপনার মানতে হবে। খুব সহজে সব কিছু বুঝে ফেলেন।’
‘কাজের কথায় আসেন!’ শক্ত কন্ঠে বলে মাহিন। জিহান হেসে বলে, ‘বাব্বাহ্ বোনের বিয়ে দিয়ে দিলেন আমাদের দাওয়াত দিলেন না।’
‘ভনিতা না করে যা বলার সোজাসুজি বলুন।’
‘এতো অধৈর্য্য হলে চলে মাহিন। শুনলাম আপনার গার্লফ্রেন্ডের বড় ভাইয়ের সাথেই নাকি বিয়ে হয়েছে? বাহ্ আমার রাস্তা সহজ হয়েছে আরো। দুই দুইবার চেষ্টা করেও মিহিরকে কিছু করতে পারলাম না।’ আফসোস স্বরে বলে জিহান
মাহিন দাঁতে দাঁত চেপে বলে, ‘সেটার হিসেব আমি পরে চুকাবো। আপনার মা যা করেছিলো তার শাস্তি সে পেয়েছে। তার জন্য আমার পিছে লাগতে আসা বোকামো ছাড়া কিছুই না।’
জিহান শক্ত গলায় বলে, ‘ মম যা করেছে বেশ করেছে। আপনি যদি কোটে প্রমান গুলো পেশ না করতেন তাহলে মম জেলে যেতো না। আর না অপমানে জেলের ভিতর সুইসাইড করতো।’
‘এটা সম্পূর্ণ উনার নিজের দুষ জিহান। এর পিছে আমার কোনো হাত ছিলো না। আমি আমার কাজ করেছি মাত্র।’
‘আপনার চয়েজ আছে বলতে হবে। সুহানা রায়হান জাস্ট দেখার মতো।’ বাঁকা হেসে বলে জিহান। মাহিন রেগে কড়া গলায় বলে, ‘খবরদার জিহান। সুহার দিকে নজর দিলে তোর চোখ আমি তুলে ফেলবো।’
‘পারলে করে দেখা। নজর অলরেডি দিয়ে ফেলেছি। সাবধানে রাখ। আল্লাহ হাফেজ।’ ত্যাছড়া ভাবে বলে কল কেটে দেয় জিহান। মাহিন হাতের মোবাইল ফ্লোরে স্বজোড়ে আছাড় মারে। রাগে তার শরির কাপছে। মিহিরের রিসিপশনটা শেষ হলে জিহানের একটা ব্যবস্থা করতেই হবে।
_________________
মিহিরের বিয়ে হয়েছে আজ সাপ্তাহ খানেক হবে। স্বাভাবিক ভাবেই চলছে শুভ আর মিহিরের দাম্পত্য জীবন। তবে তাদের দুজনের মাঝে বেশ ভালোই ঝগড়া হয়। শুভ ইচ্ছে করে মিহিরকে রাগিয়ে দেয়, আর মিহিরও রেগে বোম হয়ে যায়। মিহির এখন আগের মতোই অফিসে যায়। বাড়িতে মিহিরের সাথে না পারলেও শুভ অফিসে মিহিরকে হ্যানস্তা করে।
অফিসে একি কেবিনে বসে আছে দুজন। মিহির ফাইলে চোখ রেখেই বলে, ‘এই ভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো?’
শুভ গালে হাত রেখে বলে, ‘আজকে কিভাবে তোমাকে রাগানো যায় সেটাই ভাবছি।’ বিরক্তি নিয়ে তাকালো মিহির। তারপর বললো, ‘সারাদিন কি মাথায় এইসবই ঘুরে নাকি?’
‘আগে তো আমাকে তুমি করে বলতে। আর এখন তো বিয়ে হয়েই গেছে। তুমি করে বলো প্লিজ।’
‘পারবো না।’
‘ডিম পারতে বলি নি তোমায়। তুমি করে বলো।’
তীক্ষ্ণ ভাবে তাকালো মিহির। অতঃপর কেবিন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। মিহিরকে উঠতে দেখে শুভ বলে উঠে, ‘আরেহ্ যাচ্ছো কেনো? বসো এখানে!’
ঝাঁঝালো গলায় বলে মিহির, ‘এখানে আমার কোনো কাজ নেই।’
শুভ শয়তানী হাসি দিয়ে বলে, ‘কে বলেছে নেই? এই ফাইল টা চেক করো। এমাউন্ট ঠিক আছে কিনা ভালো করে দেখো!’ বলেই একটা ফাইল মিহিরের দিকে এগিয়ে দেয় শুভ। অবাক হয়ে তাকায় মিহির। তারপর বলে, ‘মানে কি? আপনি ইচ্ছে করে অফিসে আমাকে আজাইরা কাজে ডুবিয়ে রাখেন হ্যা? আজ বাড়িতে আসেন তারপর দেখছি আপনাকে।’
‘তা আর বলতে? বাড়িতে তো তুমি আর আম্মু মিলে আমার দফারফা করে ছাড়ো। অফিসে না হয় আমি একটু করি। হারি আপ ওয়াইফি!’ হেসে বলে শুভ। মিহির দাঁতে দাঁত চেপে ফাইল হাতে নিয়ে দেখতে শুরু করে।
________________
লাইব্রেরী তে যাওয়ার জন্য ফুটপাত ধরে হাটছে সুহা। তখন হঠাৎ একটা গাড়ি সুহার পাশ দিয়ে যায়, ঘটনাক্রমে সুহা ভয়ে চেঁচিয়ে উঠে। গাড়ি চালক বেরিয়ে এসে সুহার পাশে দাড়িয়ে জিজ্ঞেস করে, ‘হেই মিস, আর ইউ ওকে?’
সুহা বুকে হাত রেখে বড় বড় শ্বাস নেয়। তারপর লোকটির দিকে তাকিয়ে বলে, ‘হ্যা হ্যা ঠিক আছি। দেখে গাড়ি চালাতে পারেন না? এখন যদি এক্সিডেন্ট হয়ে যেতো তাহলে?’
জিহান চোখ থেকে সানগ্লাস খুলে হেসে বলে, ‘আই’ম সর্যি। আসলে হঠাৎ করে সামনে একটা কুকুর এসে পরে যার কারনে ব্যালেন্স হারিয়ে ফেলেছিলাম। বাট থ্যাংকস গড কিছু হয়।’
সুহা একবার ভালো করে জিহান কে দেখে নেয়। সাদা শার্ট পরা, হাতা গুলো কুনই পর্যন্ত গুটানো। অতঃপর কিছু না বলে স্থান প্রতাক্ষান করে। সুহা যেতেই জিহান বাঁকা হাসে। তারপর বলে উঠে, ‘বাহ্, ছবি থেকে বাস্তবে বেশ সুন্দরী। ভাই তোর চয়েজ ভালো।’ চোখে সানগ্লাস লাগিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চলে যায় সে।
লাইব্রেরি তে এসেই সুহা মাহিনের সামনে ধপ করে বসে পরে। বইয়ের পাতা থেকে চোখ তুলে সুহার দিকে এক পলক তাকিয়ে আবার বইয়ে দৃষ্টি ফেলে মাহিন। সুহা ফিচেল গলায় বলে, ‘আল্লাহ আরেকটুর জন্য বেঁচে গেছি।’
মাহিন আবার সুহার দিকে তাকায়। সুহা বলতেই থাকে, ‘জানেন রাস্তায় হঠাৎ একটা গাড়ি আমার পাশ দিয়ে যায়। ভাগ্যিস লাগে নি। ছেলেটা ভালোই এসে আমাকে সরিও বলেছে। দেখতেও সুন্দর।’
বলেই সুহা জিব কাটলো। মাহিন কপালে সূক্ষ্ম ভাজ ফেলে তীক্ষ্ণ চোখে তাকায় সুহার দিকে। দাত কেলিয়ে বলে সুহা, ‘আরেহ্ আপনার থেকে অনেক কম সুন্দর। এভাবে তাকাবেন না। ভাল্লুকের মতো লাগে একদম।’ মাহিন তাও কিছু বললো না। সুহা এবার আহত হলো। অনুনয় স্বরে বলে, ‘রাগ করে আছেন কেনো? বললাম তো সরি আর হবে না।’
মাহিন তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে বলে, ‘সরি বলতে কে বলেছে তোমাকে? আমার একটা কথাও তো শুনো না। যা ইচ্ছে তাই করো তাতে আমার কি? আই রিয়েলি ইভেন ডোন্ট কেয়ার।’
সুহা ভাব নিয়ে বলে, ‘আরেহ্ ধুরু, কেউ কিছু করতে পারবে না। আপনি আছেন না। সেভ করবেন আমাকে।’
হাতে থাকা বই বন্ধ করে বলে মাহিন, ‘দেখো সুহা, এই মুহূর্তে তুমি আর মিহু অনেক রিক্সে আছো। বুঝার চেষ্টা করো আমাকে। বারণ করার সত্ত্বেও কেনো বের হলে আজকে? কিছু দিন বাড়িতে থাকলে কি তোমার দিন ফুরাতো না? আষ্টর্য!’
চুপ হয়ে যায় সুহা। আজকে লাইব্রেরী আসতে মাহিন বারণ করে তাকে। কিন্তু সুহা কথা শুনেনি সে আসবেই। তাই মাহিন এতো টা রেগে আছে।
চলবে??
[দুঃখিত ৩৭ নাম্বার পর্ব টা ভুলে দেওয়া হয়নি। তাই এখন পোস্ট করা। পরবর্তীতে ৪০ নাম্বার পর্বটা দেওয়া হবে। হ্যাপি রিডিং ❤️]