#অনুভবী_হিয়া
#মাইশাতুল_মিহির
৪.
শূন্যমস্তিষ্কে দাঁড়িয়ে আছে শুভ। বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে যাকে সে এতো গুলো দিন ধরে খুঁজেছে সে এখন তার সামনে। হ্যাঁ সে আর কেউ নয় মিহি, তার প্রেয়সী, তার ভালোবাসা। এতো গুলো দিন পর ভালোবাসার মানুষটিকে দেখে চোখ দুটো বেহায়া হয়ে উঠেছে। কেমন নেশাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে যেনো এতো গুলো দিন না দেখা প্রেয়সী কে দেখে সব শূন্যতা পূরণ করছে। খুশিতে তার চোখ দুটো চিকচিক করছে। আচ্ছা মিহি কি আমাকে ভুলে অন্য কাউকে মন দিয়েছে? নাহ, এটা হতেই পারে না। মিহি শুধু আমার আর কারোর নাহ। এতো গুলো দিন পর আমাকে দেখে মিহি কেমন রিয়েকশন দিবে এখন? খুব কান্না করবে আমার কাদুরে পাখিটা?
দু’জনের ভাবনার ইতি টেনে মিহির খুব শান্ত সুরে জিজ্ঞেস করলো,
‘কেমন আছেন মিঃ রাফিদ রায়হান শুভ?’
‘ভালো। তুমি?’ ছোট করে উত্তর দিলো শুভ।
‘এইতো বেশ ভালো আছি দেখতেই পারছেন।’ কিছুটা তাচ্ছিল্য ভাবে বলে বুকে হাত গুঁজলো মিহির। শুভ খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে মিহির নিজেকে শক্ত প্রমান করতে চাইছে। আগে থেকে বেশ ম্যাচিউর হয়েছে। আগের সেই পিচ্চি মিহি এখন বড় হয়ে গেছে আবার জবও করছে বাহ। মনে মনে ভাবতেই মৃদু হাসে শুভ।
‘আপনি তাহলে আয়াজ স্যারের ছেলে?’ নিরবতা ভেঙে জিজ্ঞেস করলো মিহির। শুভ ছোট করে উত্তর দিলো, ‘হ্যা।’
‘তারমানে এখন থেকে আমি আপনার…’ অসহায় ভাবে বললো মিহির। মিহিরের মুখ দেখে শুভ খানিকক্ষণ ভ্রুঁ কুঁচকে তাকিয়ে থেকে বললো,
‘কেনো আমার সাথে কাজ করতে কি তোমার কোনো সমস্যা?’
‘নাহ, মোটেও না। কিন্তু..’ আমতা আমতা করে বললো। শুভ গম্ভীর মুখ করে জিজ্ঞেস করলো, ‘কিন্তু কি?’
মিহির এইবার বেশ রাগ নিয়েই মৃদু চেঁচিয়ে বললো, ‘কোনো কিন্তু না। আপনাকে কে বলেছে এখানে আসতে? বলুন। দেশে কি আর কোনো কোম্পানি ছিলো না আরএস কোম্পানিতেই কেনো আসতে হলো আপনার? হ্যাঁ। উফফ অস্বস্থিতে মরে যাচ্ছি আমি আল্লাহ! ইচ্ছে তো করছে আপনাকে এই বেল্ডিং এর ছাদ থেকে ধা:ক্কা মে:রে ফেলে দি। ভাল্লাগে না। আমার সাথেই কেনো এমন হয়। আল্লাহ বাঁচাও!!’ একটানা কথা গুলো বলে দ্রুত কেবিন থেকে বের হয়ে গেলো মিহির।
এতোক্ষন চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে মিহিরের কথা গুলো হজম করছিলো শুভ। ঠিক কি রিয়েক্ট করা উচিত বুঝতে পারছে না সে। মিহির বের হয়ে যাবার পরে হালকা আওয়াজে হেসে ফেললো শুভ। মেয়েটা ঠিক আগের মতোই আছে। রেগে গেলে কি বলে হুশ থাকে না। উফফ বুকে থাকা পাথর যেন সরে গেছে। হালকা লাগছে নিজেকে। প্রচন্ড রকমের ভালোলাগা কাজ করছে। তার মানে বাবা এই সারপ্রাইজের কথাই বলছিলো। মিহির কথা তাহলে মা সুহাও জানে। উফফ ইয়ার কেনো যে আগে কানাডা থেকে এসে অফিসে জয়েন করলাম না। ইশ!!’
_______
ওয়াসরুমে দাঁড়িয়ে চোখে মুখে বার বার পানি দিচ্ছে মিহির। কান্না গুলো দলা পাকিয়ে যাচ্ছে। চোখ ফুলে লাল হয়ে আছে।কাঁদতে চায় না মিহির। তার জন্য কান্না করা বহু আগেই বন্ধ করে দিয়েছে। চোখ যে বেহায়া তাই তো মাঝে মাঝে চোখ দিয়ে পানি এসে পরে। বার বার বিড়বিড় করে বলছে শুধু, ‘এটা কিছুতেই হতে পারে না! নাহ! এই লোকটার আশেপাশে আমি থাকতে পারবো না। অস্বস্থিতে আমি ম:রে যাবো। কাঁদবি না মিহির। তুই অনেক স্টং মেয়ে। ওই লোকের জন্য কান্না করবি না। ওই লোকটা তোকে ভালোবাসে না। কাঁদবি না তুই।’ বলতে বলতেই কান্নায় ভেঙে পরে মিহির। মেজেতে বসে হাটুতে হাত জড়িয়ে মাথা ঠেঁকিয়ে বসে কাঁদছে মিহির। অতীত কেনো আবার এলো সামনে। ভুলতে চেয়েছিলাম সব কিন্তু পারিনি। তবে সময়ের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছিলাম। তাহলে কেনো আবার এতো দিন পর এসে সেই অতীতের শুকিয়ে যাওয়া যন্ত্রনা তাজা করে দিলো? কেনো??
অনেকক্ষণ কান্না করার কারনে চোখ জ্বলছে। বসা থেকে উঠে আবার চোখে মুখে পানি দিলো। তারপর টিস্যু পেপার নিয়ে মুখ মুছে বের হয়ে টেবিলের উপর থেকে ব্যাগ নিয়ে রিসিপশনের দায়িত্বে থাকা মেয়েটিকে বলে বেরিয়ে গেলো অফিস থেকে। ভালো লাগছে না আপাতত একটা কোলাহল মুক্ত পরিবেশ দরকার। তার পর বাড়ি ফিরে শান্তির ঘুম।
_______
অনেকক্ষন যাবত মিহিরকে না দেখে অস্থির হয়ে পরছে শুভ। ইচ্ছে করছে তাকে সামনে বসিয়ে রেখে তাকিয়ে থাকতে। আর থাকতে না পেরে বের হলো কেবিন থেকে সে। সোজা রিসিপশনের মেয়েটার দিকে এগিয়ে গিয়ে মিহিরের সম্পর্কে জানতে চাইলে মেয়েটি জানায় শরীর খারাপ লাগায় মিহির অফিস থেকে চলে গেছে। ছোট একটা ধীর্ঘশ্বাস ফেলে কেবিনে ফিরে যায় শুভ। সে খুব ভালো ভাবেই বুঝতে পারছে মিহির এখন তার সামনে আসতে চাইছে না তাই বাহানা দিয়ে চলে গেছে। কেবিনের দক্ষিন পাশে বিশাল বড় থাইগ্লাসের সামনে পকেটে হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে আছে শুভ। ভাবছে আজকের কিছুক্ষণ আগে ঘটে যাওয়া ঘটনার কথা। বাহিরে তাকিয়ে আপন মনে বাঁকা হেসে বললো,
‘পেয়ে যখন গেছি তোমায় আর ছাঁড়ছি না। এবার তোমাকে আমার করেই ছাড়বো। যে কোনো মূল্যেই হোক না কেনো তুমি আমারই হবে। আই ওয়ান্ট ইউ ডিপলি বেবি। আই জাস্ট নিড ইউ এট এনি কস্ট। জাস্ট নিড ইউর আর্মস। ইউ আর মাইন আন্ড অলয়েজ বি। 💖
চলবে..!!
[অনুভূতি গুলো ঠিক গুছিয়ে লিখতে পারছি না। কিভাবে কি লিখছি জানি না। প্রথম বার চেষ্টা করছি তাই। আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে। হ্যাপি রিডিং]