#অনুভবী_হিয়া
#মাইশাতুল_মিহির
৬.
স্নিগ্ধ সকাল! চারদিকে পাখির কোলাহল। ভোরের আলো চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। বাতাসে বইছে হাসনাহেনা ফুলের ঘ্রান যা মাতোয়ারা করে তুলছে মন। এমন একটা মনোমুগ্ধকর পরিবেশ এক কাপ চা আর হুমায়ন আহমেদের ‘অপেক্ষা’ বই বেশ মানানসই বটে। চায়ের কাপে শেষ চুমুক দিয়ে বই বন্ধ করে উঠে মিহির। চুল গুলো হাত দিয়ে খোঁপা করে গায়ে ওড়না জড়িয়ে বেরিয়ে যায় রুম থেকে। রান্না ঘরে গিয়ে দেখে রাশেদা রুটি বেলছে। ‘আমাকে দাও আম্মু।’ বলে মায়ের হাত থেকে খুন্তি নিয়ে রুটি বেলতে শুরু করে। নাস্তা তৈরি শেষে মাহিনের রুমে গিয়ে দেখে মাহিন বইয়ে মুখ ডুবিয়ে বসে আছে।
‘বাব্বাহ্! আজকে কোন দিকে সূর্য উঠেছে শুনি?’ মাহিনের পাশের চেয়ারে বসতে বসতে বললো মিহির। মাথা তুলে বিরক্ত হয়ে বলে মাহিন, ‘ফাজলামি করিস না তো। পড়তে বসছি দেখছিস না?’
‘সেটা তো আমিও বলতেছি। কেমনে কেমনে তুমি নিজে থেকে বই নিয়ে পড়তে বসলে তাও আবার সকাল বেলা। এইসময় তো তোমাকে ঘরে বেধেও রাখা যায় না। কাহিনী কি ভাইয়া?’ ভ্রুঁ নাচিয়ে বলে মিহির।
‘এমন করে বলছিস যেনো আমি কখনো পড়তে বসি না। হারামির গুলার জন্য বাহিরে যেতে ভাল্লাগছে না। তাই ম্যাথের এই থিউরি গুলো পড়তেছিলাম।’
‘তোমার ফ্রেন্ডরা আবার কি করেছে?’
‘কাহিনী আছে অনেক। এখন বলতে পারবো না। যা।’
‘না এখনি বলো!’
‘আর বলিস না! গতকাল কলেজে…..
ফ্লাশ ব্যাক.!
মাহিন কলেজে ঢুকার সময় হঠাৎ একটা মেয়ের সাথে ধাক্কা লাগে। মাহিন দাঁড়িয়ে থাকলেও মেয়েটা নিচে পরে যায়। মেয়েটি ‘ওহ আল্লাহ গো আমার কোমড়।’ বলে কোমড়ে হাত দিয়ে উঠে মাহিনের দিকে কটমট চোখে তাকিয়ে বলে, ‘এই ছেলে চোখ কি হাতে নিয়ে হাটেন নাকি? মেয়ে মানুষ দেখলেই ধাক্কা দিতে ইচ্ছে করে হ্যাঁ? আপনার নামে আমি মাম:লা করবো। জেলের ভাত খাওয়াবো আমি। কানা কোথাকার আমার কোমরের বারো টা বাজালেন।’
মাহিন কিছুটা বিরক্ত হয়ে তাকিয়ে থেকে কিছু না বলে পাশ কাটিয়ে চলে যায় ক্লাসে ]
‘ছ্যাঁচড়া মেয়ে ইচ্ছে করছিলো ঠাটিয়ে দুই টা থা:প্পড় মা:রি। ইডিয়ট মেয়ে কোথাকার।’
মিহির হাসতে হাসতে মাটিতে লুটিয়ে পরার অবস্থা। হাসি কোনোমতে থামিয়ে বলে, ‘তো এর সাথে বাহিরে না যাওয়ার কি সম্পর্ক?’
‘হারামি গুলা ওই মেয়েকে নিয়ে বার বার ক্ষেপাচ্ছে আমাকে বলছে একটা মেয়ে তোকে ধুলাই দিলো। জাস্ট অসয্যকর। আর তুই এইভাবে হাসছিস কেনো ফাজিল। যা ঘর থেকে বের হ।’ বিরক্ত নিয়ে বলে মাহিন।
‘নাস্তা রেডি খেতে আসো।’ বলে হাসতে হাসতে বের হয়ে গেলো মিহির। বোনের এই পাগলা হাসি দেখে নিজেও হেসে দেয় মাহিন। সবার সাথে গম্ভীর থাকলেও বোনের সাথে বেশ ফ্রি। একে অপরের কাছ থেকে সব কিছু শেয়ার করে তারা। কলিজার বোন বলে কথা।
__________________
সকালে ব্রেকফাস্ট শেষ করে শুভ সুহাকে কলেজে নামিয়ে অফিসে চলে গেলো। সুহা প্রাইভেট কলেজে পড়ে, এখানে কলেজ আর ভার্সিটি এক সাথে। কলেজের গেইটে লারা আর মারিয়া অপেক্ষা করছিলো সুহার জন্য। সুহা তাদের দিকে এগিয়ে যেতেই লারা বললো, ‘সুহা বেবি, ছেলেটা কে রে? উফফ কত্ত কিউট। ইচ্ছে করছে খেয়ে ফেলি। নাম কিরে?’
‘আমার ভাই রাফিদ রায়হান শুভ।’
‘হারামি তোর এত্তো সুন্দর একটা ভাই আছে আর তুই আমাকে বলিস নি? কুত্তা!’ রেগে বললো লারা। লারার কথায় বিরক্ত নিয়ে বললো সুহা, ‘ক্যান ভাই থাকলেই কি মাইক ডেকে বলতে হবে নাকি?’
‘এমন সুন্দর ভাই থাকলে বলতেই হবে। ইয়ার বড় ধরনের ক্রাশ খাইছি।’ লজ্জা পাওয়ার ভান ধরে বললো লারা। চোখ বড় বড় করে তাকালো সুহা। মারিয়া বলে উঠলো, ‘লারা! গরুও এতো ঘাস খায় না তুই সেকেন্ডে সেকেন্ডে যত ক্রাশ খাছ। ছ্যাঁচড়া মাইয়া।’
‘আমার ভাই যদি জানতে পারে না মনু তোমার এই সুন্দর সুন্দর গাল দুইটা হাত চালিয়ে লাল করে দিবে। আর ভাইয়ার গফ আছে। ট্রাই কইরা লাভ নাই।’ হাই তুলে বলে সুহা। লারা ঠোঁট উল্টে ক্লাসের উদ্দেশ্যে হাটা ধরে। হাসতে হাসতে পিছু নেয় সুহা মারিয়া।
_________
ক্যান্টিনে বসে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলো মাহিন। হঠাৎ পিছন থেকে ‘এই কানা হ্যান্ডসাম বিলাই!’ বলে কেউ এক জন ডেকে উঠে। কণ্ঠস্বর কানে যেতেই ভ্রুঁ কুঁচকে পিছনে তাকাই মাহিন। গতকালকের সেই মেয়েটিকে দেখে বিরক্তবোধ করে সে। কিছু না বলে ঘাড় ফিরিয়ে নেয়।
‘হাই! আমি সুহানা রায়হান। সবাই আমাকে সুহা বলেই ডাকে।’ মাহিনের কাছে এসে দাঁড়িয়ে বলে সুহা। মাহিন বিরক্ত হয়ে বলে, ‘তো?’
সুহা মুখ দিয়ে ‘চ’ উচ্চারণ করে মাহিনের পাশের সিটে বসতে বসতে বলে, ‘কেউ একজন নাম বললে তাকেও নিজের নাম বলতে হয় জানেন নাহ?’
‘আপনাকে কেনো আমার নাম বলবো? আর আপনি আমার পাশে কেনো বসেছেন?’ পাল্টা প্রশ্ন করে মাহিন। সুহা হাসি মুখে বলে, ‘আমি আপনার ছোট। আমাকে তুমি করেই বলতে পারেন। আই ডোন্ট মাইন্ড।’
‘বাট আই মাইন্ড। অপরিচিত কাউকে আমি তুমি করে বলি না। আর সেটা যদি হয় মেয়ে।’
‘পরিচিত হতে কতক্ষন। তো মিঃ এখন আপনার নাম টা তো বলুন?’
চেয়ারে গা এলিয়ে বললো মাহিন, ‘বলতে বাধ্য নয়। আপনি এখন আসতে পারেন আপু।’ মাহিনের মুখে আপু ডাক শুনে তেঁলেবেগুনে জ্বলে উঠে সুহা। ধপ করে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে ঝাঁঝালো গলায় বলে, ‘আপু? কে আপু? আমি তোর কোন জন্মের বইন লাগি? নাম জানতে চাইছি বলে কি ভাব মারতেছোস? থা:প্রা:ইয়া ভাব ছুটামু। ভালোই ভালোই নাম বল নয়তো আজকে তোর একদিন তো আমার দশ দিন।’ একনাগাড়ে কথা গুলো বলে বড় বড় শ্বাস নেয় সুহা। হঠাৎ সুহার এমন আচরণে অবাক হয়ে যায় মাহিন। কয়েক সেকেন্ড অবাক চোখে তাকিয়ে থেকে দাঁড়িয়ে কড়া গলায় বলে, ‘এই মেয়ে সমস্যা কি তোমার? কোন সাহসে তুই করে বললে? মুখে যা আসছে সেটাই বলছো। মাথায় কি সিট আছে নাকি থাকলে পাবনা যাও আমার মাথা খেও না। এইসব ফালতু পাবলিক কে কলেজে ঢুকতে দেয় কে। স্টুপিড গার্ল।’
‘কি বললেন আমি ফালতু পাবলিক? আমি পাগল? তাহলে আপনি কি? আপনি তো একটা আস্তো কানা বিলাই।’ ডান হাতের তর্জনী আঙুল তুলে বলে সুহা। ক্যান্টিনের বাকিরা আপাতত নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। ‘তুমি তো একদম শ্যাওলা গাছের পেত্নীর মতো। মর্ডান পেত্নী যাকে বলে। সামনে থেকে সরো ফাজিল মেয়ে কোথাকার।’ বলেই ব্যাগ নিয়ে চলে গেলো মাহিন। পাশে দাঁড়িয়ে রাগে ফুশছে সুহা। তাকে শ্যাওলা গাছের পেত্নী বলেছে। কত বড় সাহস।
চলবে..!!
[এই যে গল্পের আরেকটি বেষ্ট জুটি মাহিন-সুহা 🖤 ওদের প্রনয়ের কাহিনী আস্তে আস্তে জানতে পারবেন! হ্যাপি রিডিং]