#অনুভবী_হিয়া
#মাইশাতুল_মিহির
৭.
ব্যস্ত শহরে সময় চলছে আপন গতিতে। সময়ের গতির সাথে তাল মিলিয়ে চলছে মানুষ। এরই মাঝে কেটে গেছে প্রায় সাপ্তাহ খানেক। অফিসের কাজের বাহিরে কথা হয়নি মিহির আর শুভর মাঝে। কথা হয়নি বললে ভুল হবে। শুভ অনেক বার কথা বলতে চেয়েছিলো কিন্তু মিহির সুযোগ দেয় নি। এরিয়ে চলেছে সবসময়।
কেবিনের বাইরে ঠোঁট কামড়ে দাঁড়িয়ে আছে মিহির। ভিতরে আশফাঁশ করছে। পরনে আকাশী রঙের চুড়িদার জামা, নীল হিজাব। বড়বড় শ্বাস নিয়ে নিজেকে প্রস্তুত করে কেবিনে নক করে মিহির। ভিতর থেকে ‘কাম ইন।’ শব্দ শুনে দরজা ঠেলে ঢুকে।
‘কি চাই?’ আগন্তক ব্যক্তি কে না দেখেই ফাইলের দিকে তাকিয়ে বলে শুভ। শুভর খেয়ালিপনায় রেগে যায় মিহির। ঝাঁঝালো গলায় উত্তর দেয়, ‘ফালতু কাজে নিশ্চয় আসি নি। নতুন প্রজেক্টের জন্য কিছু ফাইল রেডি করা হয়েছে সেটা দেখাতে আসছি। দেখুন আর আমাকে উদ্ধার করুন।’ শুভর হাতে ফাইল টা এগিয়ে দেয় মিহির। মিহিরের এমন আচরনে অবাক হয় শুভ। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে সে। তাকে আরো রাগানোর জন্য গলা পরিষ্কার করে বলে শুভ, ‘লিসেন মিস মিহির, আমি তোমার বস। সো রেসপেক্ট দিয়ে কথা বলবে। নেক্সট টাইমে আমার সাথে জুর গলায় কথা বলার চেষ্টা করবে না। গট ইট?’
‘জ্বী!’ ছোট করে উত্তর দেয় মিহির। শুভ ফাইল হাতে নিয়ে ঘেটে দেখছে। আড় চোখে মিহিরের দিকে তাকাচ্ছে বার বার। মিহিরের সাথে কথা বলার সুযোগই পাচ্ছে সে। ফাইল চেক করা শেষে শুভ বলে, ‘মিহি! তোমাকে আমার কিছু বলার ছিলো। আজকে কি তুমি ফ্রি আছো? নীমতলায় যাবে আমার সাথে?’
‘নাহ! আমি খুব বিজি। কারোর সাথে একান্তে সময় কাটানোর মতো সময় আমার কাছে নেই। ধন্যবাদ!’ বলেই ফাইল নিয়ে বেরিয়ে যায় কেবিন থেকে। মিহিরের কথা শুনে চোয়াল শক্ত হয়ে যায় শুভর। অফিসের অন্য এমপ্লয়দের সাথে তো ঠিকই হেসে হেসে কথা বলে অথচ আমার সাথে ঝাঁঝ দেখায়, এভোয়েট করে চলে। রাগে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে শুভ। ভেঙে ফেলতে ইচ্ছে করছে তার সব কিছু। গাড়ির চাবি নিয়ে বেরিয়ে যায় শুভ। এই মুহূর্তে রিফ্রেশমেন্ট দরকার তার।
____________
কাজ শেষ করে দুপুরে অফিস থেকে বাসায় ফিরে মিহির। সোফায় মাহিনের সাথে সবুজ বসে টিভি দেখছিলো। সবুজ মিহিরের বড় মামার ছেলে। মিহির সবুজ কে দেখে সৌজন্যমূলক হাসি দিয়ে বলে, ‘কেমন আছো ভাইয়া? কখন এলে?’
মিহিরের প্রশ্ন শুনে মিষ্টি হাসি দিয়ে বলে সবুজ, ‘এইতো ভালো। ঢাকায় এসেছিলাম একটা কাজে। ভাবলাম তোমাদের সাথে দেখা করে যাই। এগারো টার দিকে এসেছি। তা তোমার কি খবর?’
‘জ্বী ভালো।’ হাসি দিয়ে বলে মিহির। ‘যাও ফ্রেশ হয়ে আসো তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। ক্ষিদে পেটে ইঁদুর দৌড়াচ্ছে।’ পেটে হাত বুলিয়ে বলে সবুজ। মিহির আর মাহিন ফিক করে হেসে ফেলে। ‘আচ্ছা!’ বলে রুমে যায় মিহির। গোসল করে খাবার টেবিলে সাজাতে সাহায্য করে রাশেদাকে। খাবারের পর্ব শেষ এখন ভাত ঘুমের পালা।
_______________
মিহির বিকালে ঘুম থেকে উঠে দেখে মাহিন আর সবুজ বাহিরে যাবে ঘুরতে। রাশেদার কথায় মিহিরও সাথে তৈরি হয়ে নেয়। কালো ওয়ান পিসের সাথে কালো হিজাব, এক হাতে কাঁচের রেশমি চুড়ি আরেক হাতে ঘড়ি, ঠোঁটে হালকা গোলাপি লিপস্টিক, চোখে কাজল ব্যাস রেডি সে। কিছুক্ষন ঘুরার পর ফুচকা খেতে যায় তারা। মাহিন কোক আনার জন্য দোকানে যায়। সবুজের কথায় হেসে হেসে ফুচকা খাচ্ছে মিহির। দূর থেকে গাড়ির থেকে চোয়াল শক্ত করে তাকিয়ে আছে একজোড়া রক্তিম চোখ। কপালের রগ ফুলে নীল হয়ে আছে। গাড়ির কাঁচ উঠিয়ে চলে যায় শুভ। রাগে ক্ষোভে ভিতরটা পুড়ে যাচ্ছে। তার সাথে কথা বলার সময় নেই অথচ এই ছেলের সাথে দাঁড়িয়ে হেসে হেসে ফুচকা খাচ্ছে। ইডিয়ট!
___________
পরদিন অফিসে গিয়েই মিহির কে কেবিনে দেখা করতে বলে শুভ। মিহির সাত পাঁচ না ভেবে কেবিনে যায়। গিয়ে দেখে শুভ উল্টো ফিরে দাঁড়িয়ে আছে। মিহির কেবিনের ভিতরে ঢুকে কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই শুভ বলে উঠে, ‘ছেলেটা কে?’
হঠাৎ এমন প্রশ্নে কিছুটা ভড়কে যায় মিহির। কোন ছেলের কথা বলছে শুভ। কিছু বুঝতে না পেরে বলে, ‘কার কথা বলছেন বুঝতে পারছি না।’ শুভ রেগে মিহিরের এক হাতের বাহু চেপে ধরে বলে, ‘বুঝতে পারছো না তুমি তাই না? নাকি ঢং করছো? রাস্তা ঘাটে ছেলে দের সাথে ঢলাঢলি করতে ভালো লাগে খুব হ্যাঁ?’
মিহির নিজেকে ছাঁড়ানোর চেষ্টা করে বলে, ‘কি করছেন আমার হাত ছাড়ুন। লাগছে আমার।’ শুভ মিহিরের দুহাত কোমড়ের পিছে নিয়ে শক্ত করে চেপে ধরে। দাঁতে দাঁত চিবিয়ে বলে, ‘আমি ধরলে দুষ আর রাস্তা ঘাটে ছেলেদের সাথে ঘুরাঘুরি করা দুষের কিছু না।’
‘সমস্যা কি আপনার কখন থেকে আজে বাজে কথা বলছেন আপনি। আমি কোনো ছেলের সাথে যায়নি। হাত ছাড়ুন আমার লাগছে।’ বলে নিজেকে ছাঁড়ানোর চেষ্টা করে মিহির। শুভ মিহির কে দায়ালের সাথে মিশিয়ে শক্ত করে হাত ধরে রাগ দ্বিগুণ করে বলে, ‘তোমার সাহস কি করে হয় অন্য ছেলের সাথে ঘুরার? আমার সাথে কথা বলার সময় নেই তোমার। আমাকে এভোয়েট করে চলো আর বাহিরে ছেলেদের সাথে ফুচকা খেতে চলে যাও। ছেলে টা কে ছিলো বলো মিহি।’
মিহির এতোক্ষনে টনক নড়লো। সে তো কোনো ছেলের সাথে দেখাতো দূর কথাও বলে না। গতকাল সবুজ ভাইয়ার সাথে ফুচকা খেয়ে গিয়েছিলো। আর সেটাই হয়তো কোনো ভাবে শুভ দেখেছে। তাই এইভাবে রাগ দেখাচ্ছে আমার উপর। মিহি প্রতিউত্তরে কাটকাট গলায় বলে উঠে, ‘বেশ করেছি ফুচকা খেতে গিয়েছি, দরকার পরলে ডেটে যাবো তাতে আপনার কি?’
‘জানে মে:রে ফেলবো একদম। আজকের পর থেকে যেনো কোনো ছেলের সাথে না দেখি তোমাকে।’ চোখ মুখ শক্ত করে বলে শুভ। মিহির রেগে চেঁচিয়ে বলে উঠে, ‘আজিব তো। আমি কার সাথে দেখা করবো কি না করবো তা আপনার কাছ থেকে কেনো জানতে যাবো। কে হোন আপনি আমার? কোন অধিকারে এইসব বলছেন? আমার উপর আপনার অধিকার বহু আগেই হারিয়ে গেছে। আর কান খুলে শুনে রাখুন আমার লাইফে ইন্টারফেয়ার করার অধিকার আপনার নেই।’
আবেগভরা চাহনীতে মিহিরের চোখে কয়েক পলক তাকিয়ে কপালে কপাল ঠেকিয়ে মিহি কন্ঠে বলে শুভ, ‘তুমিসহ তোমার সব কিছুর উপর একমাত্র আমার অধিকার থাকবে। আমার অধিকারের হস্তক্ষেপ হতে দিবো না আমি। সাবধান করে দিচ্ছি মিহির, আজকের পর থেকে যেনো কোনো ছেলের সাথে কথা বলতে না দেখি তোমাকে। তাহলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না। তুমি জানো না আমি ঠিক কি করতে পারি। মাইন্ড ইট। নাও গেট লস্ট।’ শেষের কথাটা মিহিরকে ছেড়ে জোরে ধমক দিয়ে বলে শুভ। মিহির কেঁপে উঠে দ্রুত কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়। সব কিছু তার মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে। অসয্য!
চলবে..!!
[রেসপন্স কমে গেছে কেনো? ঘটনমূলক মন্তব্য করবেন 🙂🖤]