অনুভবের প্রহর পর্ব_২৪

0
311

#অনুভবের_প্রহর
#অজান্তা_অহি (ছদ্মনাম)
#পর্ব____২৪

প্রহরের কন্ঠস্বর শুনে কিছুক্ষণের জন্য থমকে গেল অনুভব। প্রহর যে তাকে এভাবে ফাঁদে ফেলবে কল্পনাও করেনি। ক্ষণিকের জন্য সন্দেহ হলো অনুভবের। এই মেয়ে এতটা স্মার্ট কবে হলো? নাকি আগে থেকেই এমন তীক্ষ্ণ বুদ্ধিসম্পন্ন ছিল? অথচ সে একটুও টের পায়নি৷ প্রহরের দৃষ্টি তার দিকে। ঠোঁটের কোণে দুষ্টুমি মিশ্রিত হাসি খেলা করছে। অনুভবের হার্টবিট বেড়ে গেল আচমকা। হুট করে দুদিন আগের ঘটনা মনে পড়লো। আর দাঁড়াল না সে! প্রায় দৌঁড়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেল।

প্রহর শব্দ করে হেসে ফেলল। তাকে দেখার পর অনুভবের মুখোভঙ্গি দেখার মতো হয়েছিল। সে ওয়াশরুমের দরজায় টোকা দিল। হাসি নিয়ন্ত্রণ করে বললো,

‘রাতে খেয়েছেন কিছু?’

কয়েক মিনিট কেটে দিল। কিন্তু দরজার ওপাশে থেকে কোনো প্রতিত্তর আসলো না। প্রহর সরে আসার জন্য ঘুরে দাঁড়াতে খট করে দরজা খুলে গেল। সে ঘুরে অনুভবের দিকে তাকালো। অনুভবকে বেশ স্বাভাবিক দেখাচ্ছে।

‘রাতের খাবার তো খাওয়া হয়নি আপনার৷ আসুন, খেয়ে নিবেন।’

প্রহর রান্নাঘরের দিকে পা বাড়াতে অনুভব ডাক দিল।

‘প্রহর!’

‘হুঁম?’

ফের ঘুরে দাঁড়ালো প্রহর। কৌতূহল নিয়ে অপেক্ষায় রইলো অনুভবের পরবর্তী বাক্যের। অনুভব এগিয়ে এলো। অকস্মাৎ হালকা করে প্রহরের বাহু ধরলো৷ তারপর টেনে নিয়ে বিছানায় বসিয়ে দিল। প্রহর নির্দ্বিধায় তাকে অনুকরণ করলো। অনুভবের অদ্ভুত আচরণের উত্তর সে নিজেই দিবে।

চেয়ার টেনে নিয়ে প্রহরের সামনে বসলো অনুভব। দুজন মুখোমুখি। বহু দিন, বহু রাত, বহু অপেক্ষার পর যেন অবশেষে দুজন মুখোমুখি হলো। প্রহরের মুখ থেকে দুষ্টুমি মাখা হাসি অনেক আগে উধাও হয়েছে। চোখে মুখে ভর করেছে উল্টো ভয়। কিছু মুহূর্ত দুজন চুপচাপ রইলো। প্রহর প্রশ্নাতুর দৃষ্টিতে অনুভবের দিকে চেয়ে আছে। অনুভবের দৃষ্টি মেঝেতে স্থির। সে মেঝে থেকে দৃষ্টি সরালো। মাথা তুলে প্রহরের চোখে চোখ রাখলো৷ কোনোরূপ জড়তা ছাড়া বললো,

‘প্রহর। আমাদের মাঝে কোনোদিন প্রোপার একটা কনভারসেশন হয়নি। আমি সিরিয়াস কিছু বললে তুমি ফানি ভাবে নিয়েছ। অথবা তুমি সিরিয়াস কিছু বললে আমি ফানি হিসেবে নিয়েছি। এর থেকে কি হয়েছে? কোনো সমস্যার সমাধান হয়েছে? হয়নি! উল্টো আমাদের সম্পর্কটা আরো জটিল হয়ে গেছে। আমাদের এখানেই থামা দরকার। কোনো একটা প্রোপার ওয়ে বেছে নেওয়া উচিত।’

প্রহরের বুক কাঁপছে ভয়ে। মনে হচ্ছে অনুভব এমন কিছু বলবে যা সে নিতে পারবে না। মানতে পারবে না। হাত-পা শক্ত হয়ে এলো তার।

‘আজ তোমাকে কিছু নির্মম সত্যি বলি। মনোযোগ দিয়ে শুনবে। কে……’

‘আমি শুনতে চাই না কিছু!’

চিৎকার করে বলে উঠলো প্রহর। অস্থিরতা নিয়ে উঠে দাঁড়ালো। শরীর কাঁপছে তার। চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতে অনুভব পথ আগলে দাঁড়ালো। কাঁধে হাত রেখে আবার বিছানায় বসিয়ে দিল। নিজে চেয়ারে বসে বললো,

‘আমি তখন সবেমাত্র কলেজে উঠেছি। দীর্ঘদিনের ব্যাক পেইনের ফলস্বরূপ একদিন অজ্ঞান হয়ে গেলাম। ডাক্তার পরীক্ষা নিরীক্ষা করে জানালেন দুটো কিডনি নষ্ট হয়ে গেছে। মাস দেড়েকের মধ্যে প্রতিস্থাপন না করলে বাঁচানো সম্ভব হবে না। প্রথম দিকে আমার থেকে লুকিয়ে রেখেছিল। কিন্তু এতবড়ো ঘটনা কি চেপে থাকে? আমার কান অবধি ঠিক পৌঁছালো। জানতে পেরে দুচোখে আঁধার ঘনিয়ে এলো আমার। অদ্ভুত এক ব্যথায় মন পুড়ে ছারখার হয়ে গেল। সে-ই অনুভূতি কখনো ব্যক্ত করার মতো নয়!

বাবা-মায়ের মুখের দিকে তখন আমি তাকাতে পারতাম না। পৃথিবীর সবচেয়ে অসহায় তাদের মনে হতো। কারণ তারা জানতো আমাকে বাঁচাতে পারবে না। সার্জারীর মতো ব্যয়বহুল ব্যবস্থা তারা গ্রহণ করতে পারবে না। আমার আড়ালে ফেলা তাদের চোখের জল আমাকে বড্ড পীড়া দিত। বিছানায় শুয়ে থেকে তখন কষ্টে ছটফট করতাম।

ঢাকায় কিছুদিন চিকিৎসার পর টাকার অভাবে আমাকে ফের গ্রামে নেওয়া হলো। গ্রামে তখন হইচই অবস্থা। সমস্ত গ্রামে আমার অসুস্থতার কথা ছড়িয়ে পড়েছে। ঝাঁকে ঝাঁকে লোক এসে দেখে যাচ্ছে। কেউ কেউ অযথা সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছে৷ এক বুক হাহাকার নিয়ে আমি তাদের সামনে হাসতাম। হাস্যোজ্জ্বল থাকার চেষ্টা করতাম। এরপর ধীরে ধীরে অবস্থা আরো অবনতির দিকে গেল। বেশ কিছুদিন আশপাশে বাবাকে দেখলাম না। হুট করে একদিন রাতের আঁধারে আমাকে ঢাকা নিয়ে এলো। পরদিনই কিডনি হসপিটালে আমার সার্জারী হলো। সিস্টসহ একটা বৃক্ক কেটে ফেলে দিল। আরেকটা প্রতিস্থাপন করা হলো।’

অনুভব একটু থামলো। লম্বা করে দম নিয়ে আবার বলা শুরু করলো,

‘বাবা আমার সাথে দেখা করলো আমার জ্ঞান ফেরার বেশ কয়েক দিন পর। আমাকে সুস্থ দেখে তার মুখে সেই পূর্বের মতো প্রশান্তির হাসি ফুটে উঠলো। আমার চিকিৎসা চললো দীর্ঘদিন। মোটামুটি সুস্থ হওয়ার পর বাবা বললেন, আর গ্রামে ফিরবে না। ঢাকাতে থাকবে এখন থেকে। প্রথম দিকে আমি একটু আপত্তি করেছিলাম। কিন্তু বাবা শুনলেন না। অল্পের মধ্যে বাসা ভাড়া নিয়ে ফেললেন। এখানকার এক কলেজে ভর্তি করিয়ে দিলেন৷ বাবা ঢাকার রাস্তায় রিকশা চালাতে লাগলেন। আমার প্রচন্ড ভয় হচ্ছিল। এত ব্যস্ত শহরের ব্যস্ত রাস্তা। কখন কোন অঘটন ঘটে যায়। বাবাকে অন্য কাজ করতে বললাম। কিন্তু তিনি রাজি হলেন না। এর মাস দুই পর আমার ভয় সত্যি হলো। বাবা মারাত্মক এক্সিডেন্ট করলেন। সাতদিন হাসপাতালে চিকিৎসা ধীন অবস্থায় থেকে দুনিয়া ছাড়লেন। বাবার মৃত্যুর পর জানতে পারলাম আমার চিকিৎসার জন্য তিনি একটা কিডনি বিক্রি করেছেন। প্রথমদিকে তার কিডনি আমাকে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু টিস্যু ম্যাচ, ব্লাড গ্রুপ ইত্যাদিসহ বাকি স্যাম্পল না মেলায় ডাক্তার অমত প্রকাশ করেন। তখন তিনি নিজের কিডনি বিক্রি করে দেন। বাড়িঘর বিক্রির পরও বিশাল এমাউন্টের বাকি টাকা কিভাবে জোগাড় করেছিলেন তা অজানা আমার। বহুবার মাকে জিগ্যেস করে যথোপযুক্ত উত্তর পাইনি।’

প্রহর পাথরের মতো নিশ্চুপ। তার চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে হলো,

‘আমি এসব জানি। প্লিজ অন্য কিছু বলুন।’

কোনো কথা বলতে পারলো না। শুধু দু’চোখ বেয়ে অঝোর ধারায় অশ্রু নির্গত হতে লাগলো। অনুভব দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,

‘আমার জীবনের কোনো গ্যারান্টি নেই প্রহর। আজ আছি তো কাল নেই! এমন অনিশ্চয়তা ভরা জীবনের সাথে তোমায় জড়াতে চাইছিলাম না। কিন্তু তুমি নাছোড়বান্দা। নিজের দুঃখ নিজে সৃষ্টি করলে।’

‘ভালোবাসেন না আমায়? এতটুকুও?’

সামান্য চমকালো অনুভব। প্রহরের অশ্রু ভরা চোখে চেয়ে রইলো কিয়ৎক্ষণ। অতঃপর মাথা নেড়ে বললো,

‘নাহ। শুনতে নিষ্ঠুর হলেও এটাই সত্যি। ভালোবাসি না!’

‘তাহলে সেদিন নিজে থেকে এত কাছে এলেন কেন?’

‘সেদিনের জন্য স্যরি। স্যরি ছাড়া বলার মতো কিছু নেই। আমি দ্বিতীয় বার আর কোনো ভুল করবো না। তোমার কাছাকাছি যেতে চাই না আমি। তোমার সাথে ভালো ব্যবহার করতে চাই না প্রহর। এতে তুমি আমার অবর্তমানে আরো বেশি কষ্ট পাবে। আমি যখন আশপাশে থাকবো না আরো দুঃখ বেশি পাবে। আমি যত ক্লোজ হবো তোমার, তত আমাকে ভুলবে পারবে না তুমি।’

‘আপনাকে আমি ভুলতে চাই, এমনটা কেন মনে হলো?’

অনুভব এই প্রশ্নের উপর না দিয়ে বললো,

‘আমার থেকে কোনো এক্সেপ্টেশন রেখো না। তোমার জীবন নষ্ট করার জন্য আমাকে দোষারোপও করতে পারো না। কারণ তোমাকে বহুবার নিষেধ করেছিলাম আমি। কিন্তু আমি চাই, আমাকে দোষারোপ করো তুমি। দোষারোপ করে চলে যাও। দূরে যাও আমার থেকে! আমার অন্ধকারাচ্ছন্ন বেরঙ পৃথিবী ছেড়ে নতুন কোনো পৃথিবীতে সংসার গড়ো।’

অনুভব উঠে দাঁড়ালো। ভারী পা দুটো টেনে টেনে রুম থেকে বের হয়ে গেল। সে চলে যেতে প্রহর ফুঁপিয়ে উঠলো। এতক্ষণ চেপে রাখা কান্না গুলো মুখ উপচে বেরিয়ে পড়লো। মুখে ওড়না চেপে বলে উঠলো,

‘আপনাকে কতবার বলেছি অনুভব? যে পৃথিবীতে আপনি নেই সে পৃথিবী আমার চাই না! হোক না তা রোদ ঝলমলে নতুন পৃথিবী।’

_______

অনুভব বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছে। প্রহর একটু একা থাকুক। ভাবুক, ভেবেচিন্তে সুন্দর একটা সিদ্ধান্ত নিক। রাত তেমন গভীর হয়নি। রাস্তায় প্রচুর গাড়ি চলছে৷ হালকা বাতাস বইছে। অনুভবের নিজেকে অনেক হালকা লাগছে৷ বুকের উপর থেকে মস্তবড় কোনো পাথর নেমে গেছে যেন। গলায় কাঁটার মতো বিঁধতে থাকা বস্তুটা নির্মূল হয়ে গেছে। তবুও বুকের গহীনে কোথায় যেন তীব্র জ্বলুনি! কাটা ক্ষতে মরিচ ডলার মতো অনুভূত হচ্ছে।

অন্ধকার রাস্তা ধরে হাঁটতে হাঁটতে সে ব্রিজের দিকে এগোল। ব্রিজের এক কোণায় দাঁড়িয়ে পড়লো। চোখের সামনে বাবার চেহারাটা হঠাৎ ভেসে উঠলো। বাবার জীবনটা এত করুণ কেন? বাবার গল্পটা অন্য রকম হলে কি খুব ক্ষতি হয়ে যেত?

‘আরে অনুভব না?’

আবছা অন্ধকারে অনুভব চমকে উঠলো। কন্ঠস্বর পরিচিত। পেছন ঘুরে তাকাতে মুখে হাসি ফুটে উঠলো। বিস্মিত স্বরে বললো,

‘নাজমুল! কেমন আছিস?’

‘আমি ভালো। তোর কি খবর?’

নাজমুল নামের ছেলেটা এগিয়ে এলো। অনুভবের বাল্যকালের বন্ধু। একই গ্রামে জন্ম। একসাথে বেড়ে উঠা! বর্তমানে একই শহরে থাকে দুজন। কিন্তু দেখা সাক্ষাৎ খুব কম। সবাই যার যার জীবন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। অনুভব তার পিঠ চাপড়ে বললো,

‘এদিকে কেন হঠাৎ?’

‘একটা কাজে এসেছিলাম। প্রহর কেমন আছে? তোদের সম্পর্কে কোনো উন্নতি হয়েছে?’

প্রহরের ব্যাপারে মোটামুটি জানে নাজমুল। অনুভব নিজেই জানিয়েছে। তার বন্ধু মানুষ বলতে এই একটা ছেলেকে সে চিনে। হঠাৎ গম্ভীর হয়ে গেল সে৷ শ্বাস ফেলে বললো,

‘প্রহরকে নিয়ে অনেক দুশ্চিন্তায় আছি নাজমুল। আমার জন্য মেয়েটার জীবন বোধ হয় নষ্ট হয়ে গেল। আমার শরীরের অবস্থা ভালো না৷ ডাক্তারের কথা বলার ভঙ্গি দেখে কিছুটা আঁচ করেছি। হাতে বেশি সময় নেই। হয়তো কয়েক মাস।’

নাজমুল চমকে উঠলো। পরক্ষণে বুকের ভেতর সূক্ষ্ম একটা কষ্ট ছড়িয়ে পড়লো। অনুভবের কাছ ঘেঁষে এলো একটু। বলার মতো কিছু তার না অতীতে ছিল, না এখন আছে! অনুভব নিজে থেকে বললো,

‘নূপুরের কোনো খবর জানিস? কেমন আছে ও? বাচ্চা হয়েছে এতদিনে না?’

‘হুঁ! একটা ছেলে হয়েছে। মাস দেড়েক আগে হাসপাতালে দেখা হয়েছিল ওর সাথে। ওর হাসবেন্ড তো ডাক্তার। সেই সূত্রে।’

অনুভব মনে মনে খুশি হলো। একটা সময় এই মেয়েটা তার জন্য পাগল ছিল। ধনী বাড়ির মেয়ে। বনেদী বংশ! নূপুরের বাবাকে গ্রামের সবাই এক নামে চিনতো। যমের মতো ভয় পেতো সবাই। এমন বাড়ির মেয়ে হয়ে শেষমেশ তাকে ভালোবেসে ফেলল। একই স্কুলে পড়াশোনার সূত্রে পরিচয়। সে বন্ধুর বেশি কখনো ভাবেনি নূপুরকে। হয়তো মস্তিষ্ক দুজনের ব্যবধান দেখিয়ে মনকে এগোতে দেয়নি। তাছাড়া নূপুরকে ভালো না বাসার কোনো কারণ ছিল না। এ নিয়ে মেয়েটির কত আক্ষেপ! হঠাৎ যখন তার অসুস্থতার কথা ছড়িয়ে পড়লো তখন দেখতে এসে খুব করে কাঁদলো একদিন। তারপর বেশ কিছুদিন কোনো খোঁজ জানতো না অনুভব। সার্জারীর কয়েক মাস পর নাজমুলের থেকে জানতে পারে নূপুরের বিয়ে হয়ে গেছে। এরপর আর দেখা হয়নি তাদের। দেখা না হওয়াই ভালো! নূপুর অন্তত সুখে আছে। এটাই অনেক।

‘নূপুরের প্রতি কখনো কোনো অনুভূতি ছিল না অনুভব?’

‘পৃথিবীতে আমার একটা মেয়ের প্রতিই অনুভূতি ছিল এবং এখনো আছে। তুই তো জানিস মেয়েটা কে।’

‘মেয়েটির কাছে নিজেকে ধরা দিচ্ছিস না কেন? অগোছালো নিজেকে একটু তার দায়িত্বে দিয়ে দেখ। দেখ, গোছাতে পারে কিনা।’

‘বুঝতে পারছিস না কেন তোরা? আমি যত ওর প্রতি দূর্বলতা দেখাব ও তত আমাকে ভুলতে পারবে না। আমি চাই, আমার অবর্তমানে ও যেন দ্রুত আমাকে ভুলে যায়। অন্য কারো সাথে জীবন সাজিয়ে নেয়।’

নাজমুল মৃদু হাসলো। তাচ্ছিল্যের সুরে বললো,

‘অনেক তো প্রহরের কথা ভাবলি। এবার একটু নিজের কথা ভাব। যে’কটা দিন পৃথিবীতে আছিস, প্রিয় মানুষটার কোলে মাথা রাখ। ক্লান্ত মনটাকে যত্ন নিতে দে অনুভব। এতে তোরা দুজনেই ভালো থাকবি। প্রহরকে দূরে রেখে, কষ্ট দিয়ে তুই কি ভালো আছিস? নেই তো!’

‘কিন্তু?’

‘তোর ধারণা ভুল অনুভব। প্রহরের ভালোবাসা তুই এখনো হয়তো বুঝিসনি। ভালোবাসা এত ঠুনকো কিছু নয় যে একজন দুনিয়াতে না থাকলে তার প্রতি গড়ে উঠা দীর্ঘদিনের সমস্ত অনুভূতি ধীরে ধীরে নিঃশেষ হয়ে যাবে৷ তা হয় না! একবার কাউকে মন দিয়ে ফেলবে, নিজেকে খুচরো করে ভালোবেসে ফেললে তাকে কখনো ভুলা যায় না রে! সে মানুষটা চিরদিন পাশে থাকুক বা না থাকুক, তাকে কখনো ভুলা যায় না। তার চেয়ে বরং প্রহরকে সুন্দর কিছু মুহূর্ত উপহার দে। তোর অবর্তমানে মেয়েটি যেন সেগুলো ভেবে আনন্দ পায়৷ মুখে হাসি ফুটে উঠে।’

অনুভব গভীর চিন্তায় ডুব দিল। একে একে সময় অতিক্রম হতে চললো। ঘড়ির কাঁটা মিনিট পেরিয়ে ঘন্টার ঘরে পা রাখলো। অনুভব স্থির। আচমকা সে নড়ে উঠলো। নাজমুলের হাত চেপে ধরে বললো,

‘আমি আসছি দোস্ত। পরে কথা হবে। ফোন দিব।’

নাজমুল কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে দৌঁড় শুরু করলো অনুভব। দৌঁড়ানো অবস্থায় হাত নাড়লো। অন্ধকারে চোখের পলকে অবয়বটা মিলিয়ে যেতে নাজমুলের মুখে হাসি ফুটে উঠলো। এতদিনে ছেলেটা আজ একটা সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সে চায় না অনুভব কষ্ট পাক। দুঃখে থাকুক। অনুভবের পৃথিবীতে বেঁচে থাকার জন্য, সুখে থাকার জন্য অনেক গুলো মানুষ অনেক কিছু হারিয়েছে। জীবনের সেরা কিছু স্যাক্রিফাইজ করেছে যা ছেলেটার অজানা। নাজমুল কখনো জানাবেও না! তবে সেই স্যাক্রিফাইজ গুলোর মর্যাদা দেওয়ার জন্য হলেও ছেলেটার সুখে থাকতে হবে। অনেক সুখে থাকতে হবে।

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here