#অনুভবে_তুই
#লেখনীতে-ইসরাত জাহান ফারিয়া
#পর্ব-২৪
রোজা এসেছে শুনে রান্নাঘর থেকে মিতালি একপ্রকার ছুটেই এলেন। ঘরভর্তি মানুষের ভিড়ে রোজাকে দেখতে পেয়ে মনটা যেন শান্ত হলো। তাঁর দিকে চোখ পড়তেই রোজা আলতো করে হাসলো। এগিয়ে এসে ভালোমন্দ জিজ্ঞেস করলোও। মিতালির চোখেমুখে অপরাধবোধ ফুটে ওঠলো যেন। সবার সামনে কোনো বাক্য বিনিময় করতে না পারলেও কাজ সেরে লিভিংরুমটা একটু ফাঁকা হতেই রান্নাঘরের পাশের একটা ফাঁকা ঘরে নিয়ে এলেন রোজাকে। তারপর অনুতপ্ত গলায় বললেন, ‘তোমার অপেক্ষাতেই ছিলাম মা। তুমি এসেছো দেখে খুব খুশি হয়েছি।’
রোজা লজ্জিত ভঙ্গিতে মাথা নিচু করে বলল, ‘আপনাদেরকে না জানিয়ে চলে যাওয়াটা উচিৎ হয়নি আমার। স্যরি আন্টি।’
মিতালি অপরাধী গলায় বললেন, ‘এভাবে বলো না মা। জানি তুমি কোন পরিস্থিতিতে চলে গিয়েছিলে। আমাদেরকে মাফ করে দিও মা, তোমার সম্মান রক্ষা করতে পারি নি আমরা।’
রোজা হতচকিত গলায় বলে, ‘আরে কি করছেন আন্টি। আ আমি রেগে নেই আপনাদের প্রতি। এভাবে ক্ষমা চাইবেন না প্লিজ।’
‘তুমি খুব ভালো মেয়ে।’
রোজা নিশ্চুপ থাকলো। সৌজন্যতা বজায় রাখতে হাসার চেষ্টা করলো। মিতালি একটু সময় নিয়ে একসময় রুদ্ধ কন্ঠে বলে ওঠলো, ‘আমি জানি আদ্রিশ তোমাকে পছন্দ করে, ভালোবাসে। দেখো মা, প্রেম-ভালোবাসার বিষয়টা কারোর হাতে নেই। কখন, কীভাবে হয়ে যায় বুঝতেও পারি না, নতুন অনুভূতির সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে একটু সময় লাগে। তুমি হয়তো ওর ব্যবহারে কষ্ট পেয়েছো তাইনা? এজন্য ওর হয়ে আমি তোমার কাছে বিশেষভাবে ক্ষমাপ্রার্থী আমি।’
রোজা নিশ্চুপ বসে রইলো। ওর অস্বস্তি না হলেও খারাপ লাগছে। মিতালির এভাবে ক্ষমা চাওয়াটা ওর ভালো লাগছে না৷ বরংচ নিজেকেই ছোট মনে হচ্ছে। হ্যাঁ, এটা ঠিক ভালোবাসা বলে-কয়ে আসে না। এজন্য আদ্রিশ ওকে পর্যাপ্ত সময় যে দেয়নি তা নয়। কিন্তু রোজাই সেসব পাত্তা দেয়নি। এজন্য অবশ্য আদ্রিশ জবরদস্তি করেনি ওকে। কিন্তু মাঝখানে সেসব ঘটনায় সবটা কেমন ওলট-পালট হয়ে গিয়েছে। অযথাই আদ্রিশকে ও অপমান করেছে, ওর ভালোবাসা-অনুভূতি এসবকে তাচ্ছিল্য করেছে। যেখানে ওর কোনো দোষই নেই৷ এই বিষয়গুলো একজন মানুষের কাছে খুবই অমূল্য, দামী। সেখানে বিনা কারণে আঘাত করলে, পালটা আঘাতে নিজেকেই ক্ষত-বিক্ষত হতে হয়। রোজা ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসে মিতালির কথায়, ‘অজান্তেই ওর ফুফু তোমাকে নিয়ে উদ্ভট ধারণা পোষণ করেছিল। সেসব ভুলে যেও মা।’
রোজা শান্ত কন্ঠে বলল, ‘হুম।’
মিতালি অনেক কষ্টে ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে বলে, ‘পুরোনো সব ভুলে গিয়ে বিয়েতে কিন্তু খুব আনন্দ করবে, একদম মন খারাপ করে থাকবে না। কেমন?’
রোজা ওপর-নিচে মাথা নাড়িয়ে সায় জানায়। মিতালি আলতো হেসে ওঠে দাঁড়িয়ে ওর কপালে চুমু এঁকে দেয়। রোজা ব্যাপারটায় অনেক চমকালো। মিতালি আলতো হেসে বলল, ‘তোমার মতো একটা মেয়ের খুব প্রয়োজন আমার। শুধু নিজের মেয়ে করে রাখবো বলে!’
রোজা থমকায়। ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায় মিতালির ছলছল করা দুটি চোখের দিকে। তড়িঘড়ি করে আঁচলের কোণা দিয়ে জলটুকু মুছে নেন তিনি।
অপ্রস্তুত হেসে কাজের বাহানা দিয়ে চলে আসেন। রোজার জন্য যে তার ছেলে কতটা কষ্টে পুড়ছে তা দেখে তিনি খুব ব্যথিত। রোজা যদি রাজি থাকতো তাহলে এক্ষুনি কাজি ডাকিয়ে নিজের পুত্রবধূ করে নিতেন তিনি। কিন্তু আফসোস,রোজার মনোভাব বুঝতে ব্যর্থ তিনি। ওদিকে রোজা হতভম্ব হয়ে চিন্তাজগতে মগ্ন হয়ে পড়ে৷ মিতালি এটা কী বলে গেল? ইনডাইরেক্টলি কি তিনি রোজাকে নিজের পুত্রবধূ করার কথা বুঝিয়েছেন? ব্যাপারটা অন্যরকম লাগলো ওর কাছে। রোজা নিজেও জানে না ও কতটুকু আনন্দ করতে পারবে এই বাড়িতে ওই মানুষটার সামনে থেকে। মৃদু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ও ঠাঁই সেখানেই বসে পড়ে। তখনি ওখানে নেহা আসে। রোজা বাস্তবে ফিরে আসে। গোমড়ামুখে বসে থাকা রোজাকে দেখে নেহা ওর মনোভাব বুঝার চেষ্টা করে। গেস্ট রুমে নেহার বান্ধবীরা মিলে গায়ে হলুদে কি কি করবে তার পরিকল্পনা করছে, আর রোজা এখানে একলা বসে! নেহা মুখ কালো করে রাগ দেখিয়ে একপ্রকার জোর করেই রোজাকে গেস্ট রুমের আড্ডায় নিয়ে যায়।
—————————————————————————–
বিয়ের দিন যতই এগুচ্ছে ততই বাড়ির লোকেদের কর্মব্যস্ততা যেন দ্বিগুণ হয়ে ওঠেছে। বাড়ির সকলের সাথে রোজা আর ওর মা-ও বিভিন্ন কাজে মিতালি-নিশিতাকে সাহায্য করছে। ইতোমধ্যে
বাড়ির ভেতর-বাইরে খুব সুন্দর ডেকোরেশন করা হয়েছে। সাদা রঙের মরিচবাতির আলোয় দূর থেকে বাড়িটাকে একটা শুভ্র পাথরের তৈরি ছোটখাটো প্রাসাদ বলে মনে হয়। অতিথিরা প্রায় সবাই এসে পড়েছে। দূরের আত্মীয়স্বজন কিছু বাকি রয়ে গেছে, ওরা আসবে একেবারে হলুদের দিন। কারণ বাড়িতে থাকা প্রতিটা রুমই ব্লকড, এখন অতিরিক্ত মেহমানের জন্য পর্যাপ্ত থাকার জায়গা নেই। এই কারণে উৎসকে অবধি নিজের ঘরটা ছেড়ে আদ্রিশের ঘরে শিফট হতে হয়েছে। ফিহা-ইশার সঙ্গে নেহার ঘরে থাকলো রোজা। এনগেজমেন্টের দিন রোজা নেহার বরকে দেখেনি, তাই রিজভীর সাথে ওকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে নেহা। যাইহোক, বাড়ির সবাইকে হাসিখুশি দেখে বেশ ভালোই লাগছে সুহানা শেখের। তিনি কোনো ঝামেলা আঁটার চিন্তাভাবনা না করে রোজার কাছে সন্তপর্ণে আবারও নিজের দোষ স্বীকার করে মাফ চেয়ে নিলেন। রোজা ইশার ব্যাপারটা জানতো। সেজন্য স্বাভাবিকভাবে সুহানা শেখকে মাফ করে ইশার সাথে মিলিয়ে দিলো। মা-মেয়ে দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে অনেকক্ষণ কান্নাকাটিও করলো। সেটা দেখে রোজা মুচকি হাসলো। ওকে ঘিরে যেসব ঝামেলা তৈরি হয়েছিলো সবকিছুই স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে প্রায়। রোজার বাবা সারাক্ষণ ইনায়েত সাহেবের সঙ্গেই বিয়ের কাজকর্ম দেখছেন, ওর মা সুলতানা বোন নিশিতা আর মিতালির সঙ্গে রান্নাবান্নায় সাহায্য করছেন। বিয়ে বাড়ির হৈচৈ বরাবরই বিরক্তিকর একটা বিষয়। সেজন্য উৎস ওর বন্ধুদের নিয়ে ছাদে গিয়ে আড্ডায় মেতে ওঠেছে। লিভিং রুমে ইশা মেহেদীর প্যাকেট গুনছে, বোধহয় দুটো কম পরেছে তাই ছোট একটা বাচ্চাকে বললো লন থেকে ফিহাকে ডেকে নিয়ে আসতে। বাচ্চাটি দৌড়ে যাওয়ার আগেই দরজা দিয়ে ঢোকা কারো সাথে ধাক্কা খায়। রোজা তখন ইউটিউবে কিছু রান্নার রেসিপি দেখছিলো সোফায় বসে, হুট করে আদ্রিশকে দেখেই ও ওঠে চলে যায় রান্নাঘরে। লোকটা যদি সকালের মতো ওকে চোখের সামনে দেখে আবার চেঁচামেচি করে ওঠে? পরিবেশ শান্ত রাখতেই ও আদ্রিশের চোখের আড়ালে চলে যায়। ওদিকে ধাক্কা খেয়ে সামনে তাকাতেই আদ্রিশকে দেখে ভয়ে গুটিশুটি মেরে দরজার আড়ালে লুকায় বাচ্চাটি। দৃশ্যটি দেখে আদ্রিশ চোখ কুঁচকে তাকায়। পরক্ষণেই ভাবে বাচ্চাটা হয়তো লিভিংরুমে করা ওর আচরণ দেখেই ভয় পেয়েছে আজ সকালে। ও দু’পা এগিয়ে মুচকি হেসে হাঁটু ভেঙ্গে বাচ্চাটির সামনে বসে পড়ে ওর স্নিগ্ধ গালে হাত রেখে বলল, ‘তোমার নাম কী?’
বাচ্চাটি জড়োসড়ো হয়ে বলল, ‘আ আমি মিমি সোনা।’
আধো আধো বুলিতে নামটি উচ্চারণ করতেই আদ্রিশ হেসে ফেলল, ‘খুব সুন্দর নাম তো তোমার।’
মিমি ভয়ে ভয়ে বলে, ‘ত্যাংক’য়ু।’
‘তুমি কী আমাকে ভয় পাচ্ছো?’
মিমি গাল ফুলিয়ে উত্তর দিল, ‘হুঁ।’
আদ্রিশ কপালে ভাঁজ ফেলে বলল, ‘কেন?’
‘তুমি সবাইকে বকো?’
‘উহু।’
‘আমাকে বকবে?’
আদ্রিশ হাসার চেষ্টা করে বলল, ‘আমাকে ওমন মনে হয়?’
মিমি উপরনিচ মাথা নাড়াতেই আদ্রিশ বলল, ‘তুমি খুব মিষ্টি বাচ্চা৷ ওদের আমি পছন্দ করি।’
মিমির চোখ চকচক করে ওঠে। ঘাড় কাত করে বলে, ‘আমাকেও?’
আদ্রিশ হাসিমুখে মিমির নাকটা টেনে দিয়ে বলল, ‘হুম, মিমি সোনা।’
মিমি আদ্রিশের গালে ছোট একটা চুমু এঁকে বলে, ‘তুমি খুব ভালো তো! তাহলে সকালে ওই লোজাপ্পির সাথে ওভাবে কতা বললে কেন?’
‘রোজা’ নামটা যে ‘লোজা’ উচ্চারণ করছে মুহূর্তেই সেটা বুঝতে পারলো আদ্রিশ। অজান্তেই হেসে ওঠলো ও৷ কিছুক্ষণ নিরব থেকে তারপর চোখ উঁচিয়ে বলল, ‘রাগ হয়েছিল।’
মিমি বড়বড় চোখ করে বলল, ‘লাগ হলেও লোজ্জাপ্পির সাথে এভাবে কথা বলবে না। বড়দের সাথেও এভাবে কতা বলতে নেই। ওদেরকে দুষ্ট বলে। কিন্তু তুমি তা নও।’
আদ্রিশ মিমির পাকাপাকা কথা শুনে অপ্রস্তুত হেসে বলল, ‘আচ্ছা মিমি সোনা। আর বলবো না।’
মিমি মিষ্টি হেসে ওর গাল টেনে দিলো। তারপর আধো আধো বুলিতেই বলল, ‘আমি এখন যাই। পরে কতা হবে। কেমন?’
আদ্রিশ হেসে বলল, ‘ঠিক আছে, মিমি সোনা।’
মিমি ওর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে দৌড়ে চলে যায়। আদ্রিশ এতক্ষণ হাঁটু ভেঙ্গে বসেছিলো। এবার সে ওঠে দাঁড়ায়। স্যুটটা খুলে হাতে নিয়ে ডান হাতের তিনটে আঙুল দিয়ে কপালটা ঘষতে ঘষতে ক্লান্ত ভঙ্গিতে বসে পড়ে সোফায়৷ তারপর হাঁক-ডাক ছেড়ে মিতালির উদ্দেশ্যে বলে ওঠে, ‘কফি চাই আমার।’
রোজা তখন রান্নাঘরে অযথাই দাঁড়িয়ে ছিলো। নিশিতা মুরগী কাটছে আর মিতালি আটা গুলছে। হাত বন্ধ থাকায় তিনি নিশিতাকে বললেন, ‘কফি তৈরিই আছে। কাউকে দিয়ে পাঠিয়ে দে তো।’
নিশিতা কাজ করছিলো বিধায় পাশে দাঁড়িয়ে থাকা রোজাকে হন্তদন্ত গলায় কফির মগটা আদ্রিশকে দিয়ে আসতে বললো। নিশিতার মাথায় তখন ঝামেলার ব্যাপারটা ছিলো না। মিতালি একটু দূরে থাকায় কথাটা ঠিক খেয়াল করলো না। এদিকে খালার আদেশ শুনে রোজার পা সেখানেই আটকে গেলো। তবুও অগ্রাহ্য করতে পারলো না। নিজের হতভম্ব ভাবটা কাটিয়ে ফোনটা সেলফের ওপর রেখে কফির মগ হাতে নিতেই খেয়াল হলো ওর হাত কাঁপছে। কয়েক সেকেন্ড নিজেকে ধাতস্থ করে গাঢ় নিঃশ্বাস ফেলে কফির মগ নিয়ে লিভিং রুমের দিকে পা বাড়ালো।
আদ্রিশ চোখদুটো বন্ধ করে আঙুল ঘষারত অবস্থায়ই বিরক্তির সুরে তৃতীয়বারের মতো কফির মগটা দ্রুত আনতে বললেই ওর কানে বাজে মেয়েলি কন্ঠ। ঘাড় সোজা করে চোখ খুলে তাকাতেই রোজার বিমূঢ় চেহারা দেখে আপনাআপনিই ভ্রু জোড়া কুঁচকে ওঠে। খানিকটা সময় চুপ করে রোজার মনোভাব বুঝার চেষ্টা করে মাথা উঁচিয়ে জিজ্ঞেস করে, ‘কী চাই?’
উঁচু গলায় বলা কথাটা শুনে রোজা কেঁপে ওঠে। মিনমিন করে বলে, ‘আ আ আপনার কফি।’
আদ্রিশ এতক্ষণে ওর হাতের দিকে তাকায়। নিজের প্রিয় কফি মগটা রোজার হাতে দেখেই চোয়াল শক্ত করে গর্জে ওঠল, ‘এটা আপনার হাতে কেন? হুয়াই?’
রোজা অবাক হয়ে কাঁপতে কাঁপতেই উত্তর দিল, ‘আ আ আন্টি দিলেন।’
রোজার কাঁপা-কাঁপি দেখলো আদ্রিশ। চেহারা কালো করে ফেললো সঙ্গে সঙ্গেই। আশ্চর্য, এভাবে কাঁপছে কেন রোজানু? আদ্রিশকে কি ভয় পাচ্ছে? হতেই পারে। সকালের ঘটনাটার জন্যই হয়তো! তিরিক্ষি মেজাজে অফিসে যাওয়ার উদ্দেশ্যে সকালে নিচে নামতেই আদ্রিশ দেখলো রোজা ইশার সঙ্গে কাজ করছে। নিশ্চিন্ত মনে ফুলদানিতে জমা ধুলোর আস্তরণ ঝাড়ছে আদ্রিশেরই প্রিয় একটা শার্ট দিয়ে। নিজের অতি প্রিয় শার্টের বেহাল অবস্থা দেখে রাগ আয়ত্ত্বে আনার বদলে মাথায় চড়ে বসে ওর। এগিয়ে গিয়ে রোজাকে কিছু কড়া কড়া কথা শুনাতেই মিতালি এসে ওকে থামানোর চেষ্টা করে। কিন্তু তাতেও আদ্রিশের রাগ কমে না। মুখ দিয়ে যা আসে তাই বলতে থাকে, অতিথিদের কেউ কেউ আড়াল থেকেও তা শুনেছে। মা ছেলের কথা কাটাকাটি আর বাগবিন্ডতায় অপমানে রোজার চোখ ছলছল হয়ে ওঠে। হঠাৎ ওই চোখগুলোতে চোখ পড়তেই কন্ঠস্বর আটকে যায় আদ্রিশের। বক্ষগহ্বরের সূক্ষ্ম ব্যথা চিনচিন করে ওঠতেই হনহন করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। রোজানুটা কী বুঝে? ওকে কষ্ট দিয়ে আদ্রিশ নিজেই বেশি কষ্ট পায়? ভাবনার প্রহর কাটিয়ে বাস্তবে ফিরে এসে মুখাবয়বে কাঠিন্যতা ছড়িয়ে আদ্রিশ বলে ওঠে, ‘চাই না আমার কফি।’
বলেই পা বাড়ায় সিঁড়ির দিকে। রোজা কাঁপতে কাঁপতেই হন্তদন্ত পায়ে ওর পেছন পেছন ছুটে এসে জিজ্ঞেস করে, ‘আমি এনেছি বলে খাবেন না?’
আদ্রিশ রাগী স্বরে বলে, ‘অফকোর্স। যার-তার হাতের কফি আমি খাইনা।’
রোজা হতাশ কন্ঠে বলল, ‘এটা আমি বানাইনি। আন্টি মানে আপনার মা বানিয়েছেন। ওনি কাজ করছেন বলেই আমার হাত দিয়ে পাঠালো।’
আদ্রিশ ঘুরে দাঁড়িয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো ওর দিকে। রোজা অস্বস্তি নিয়ে মাথা নিচু করলো। আচমকা ছোঁ-মেরে ওর হাত থেকে কফির মগটা নিয়ে নেয় আদ্রিশ। রোজা হতভম্ব হয়ে যায়। একটু সময় নিয়ে নিজেকে সামলে তারপর বলল, ‘সকালে রাগ করে বেরিয়ে গেলেন তাই কথাটা বলতে পারি নি। আসলে ওটা যে আপনার শার্ট আমি জানতাম না, কাজের খালা কোথা থেকে নিয়ে এসে আমাকে দিলো, আমিও কিছু না ভেবে… ‘
‘থাক। আপনার কাছে এক্সকিউজ চাইনি। নিজেকে নিষ্পাপ প্রমাণ করার জন্য সবসময় একটা এক্সকিউজ রেডি রাখেন তাইনা?’
রোজা অবাক চোখে তাকিয়ে বলল, ‘আ আমি বুঝতে পারলাম না আপনার কথা। আ আ আমি আমি এক্সকিউজ রেডি করে রাখি না। আমি আমি সত্যটা ব…..’
কথার মাঝপথে রোজাকে থামিয়ে দেয় আদ্রিশ। তারপর একরাশ বিরক্তি নিয়ে বলে ওঠে, ‘স্টপ ইট। তোতাপাখির মতো এক লাইনে কয়বার ‘আমি আমি’ করছেন? আপনার সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছুক নই এই আদ্রিশ। যত্তসব ঢং আর বাচ্চামিপনা…’
একটা তাচ্ছিল্যকর ভাব নিয়ে আদ্রিশ সেখান থেকে চলে যায়। রোজা গাল ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। ইচ্ছে করছে নিজের মাথার চুল নিজেই ছিঁড়ে ফেলতে। রোজা প্রচন্ড বিরক্ত হলো নিজের ওপর, ভীষণ রকম বিরক্ত। ঘরের সবকিছু ভেঙ্গে নিজের বিরক্ত ভাবটা কাটাতে ইচ্ছে করলো!
—————————————-
গ্রুপ – Israt’s Typescripts
বি দ্র: আদ্রিশকে উচিৎ শিক্ষা দেওয়ার কিছু আইডিয়া দিন।
[নোট: বড় পর্ব দিয়েছি। সবাই-ই আমার সমস্যা সম্পর্কে অবগত এবং গ্যাপ দিয়ে হলেও কন্টিনিউ করতে বলায় আমি সেই চেষ্টাই করছি। অবশ্যই আজকে মতামত জানাবেন ও ভুলভ্রান্তি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।]
চলবে…..