#অনুভবে_তুমি
#পর্ব_১২(বোনাস পর্ব)
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ
আম খাবে,জাম খাবে,
তেঁতুল খেও না।
আমার কথা মনে রেখো,
ভুলে যেও না।
অতশীর এমন আজগুবি কবিতা শুনে সবাই হো হো করে হেসে উঠলো।অতশী খেয়াল করলো ইভান আর তার বন্ধুরাও হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।
অতশী তা দেখে আবার বলা শুরু করলো,
আম মিষ্টি,জাম মিষ্টি,
তেঁতুল বড় টক,
তোমার সাথে প্রেম করতে আমার ভারি সখ।
অতশীকে এসব ভুলভাল কবিতা আবৃত্তি করা দেখে সুইটি অতশীকে টেনে নামালো মঞ্চ থেকে।কি বলছিস এসব?আম, জাম, তেঁতুল ছাড়া কি কবিতা নাই?বার বার শুধু আম,জাম,আর তেঁতুলের কথা বলছিস?
অতশী তখন বললো, তাছাড়া আর তো কোনো উপাই দেখছি না।এই মুহুর্তে কিছুই মনে পড়ছে না।
উপস্থাপক অতশীর এমন কবিতা শুনে ভীষণ রেগে গেলো।সেজন্য আর দেরী না করে পরবর্তী জনকে ডেকে নিলেন।এবার লিশা ডান্স করবে।সবাই সেজন্য জোরে জোরে হাততালি দিতে লাগলো।
আসলে অতশী যে আজ কবিতা আবৃত্তি করবে তার জন্য কোনো প্রস্তুতি নিয়ে আসে নি।সে তো এসেছে প্রোগ্রাম দেখার জন্য।তার বান্ধুবী নেহা গাইবে আর লিশা ডান্স করবে।সেজন্য সে ওদের কে হেল্প করার জন্য এসেছে। কিন্তু লিশাকে সাজাতে গিয়ে সেপটিপিন খুঁজে পেলো না অতশী।লিশা সেপটিপিন আনতে ভুলে গেছে।সেপটিপিন ছাড়া তো কোনোভাবেই শাড়ি আটকানো যাবে না।এখন কি করা যায়?এদিকে প্রোগ্রাম এর সময় ও হচ্ছে।অতশী সেজন্য সেপটিপিন নেওয়ার জন্য বের হলো।বাহিরে বের হতেই দেখে ইভান আর তার বন্ধুরা বাইকের উপর বসে আছে।অতশী সেজন্য ইভানের কাছে চলে গেলো।
অতশী আজকাল একটু বেশিই সাহসী হয়েছে।সে যখন তখন ইভানের সাথে কথা বলতে যায়।একটুও লজ্জা করে না বা ভয়ও করে না আগের মতো।ইভান যতই লুকোচুরি করুক না কেনো,অতশীর বিশ্বাস ইভান তাকে অনেক বেশি পছন্দ করে।সেজন্য সবসময় তাকে চোখের সামনে দেখতে পায়।সে হয় তো অতশীকে দেখার জন্যই এভাবে দাঁড়িয়ে থাকে।অতশী এটাও বুঝে গেছে যে ওসব চিরকুট ইভানই পাঠাতো।তার তানিম ভাইয়া তাকে পাওয়ার জন্য মিথ্যা কথা বলছে।আর সেদিন সন্ত্রাসী দের হাত থেকে ইভানই বাঁচায়ছে।অতশী এতোটাও বোকা নয় যে ইভানের শরীরের গড়ন দেখেও চিনতে পারবে না!
কিন্তু ইভান কেনো এভাবে লুকোচুরি করছে আর কেনো অতশীকে সরাসরি তার মনের কথা বলছে না এটা এখনো অজানা অতশীর।
অতশী বুঝে গেছে এর পিছনে কোনো বড় ধরনের রহস্য আছে।সেজন্য ইভান তার থেকে দূরে দূরে থাকে।
অতশী ইভানের কাছে গিয়ে ডাইরেক্ট বললো,জলদি এক প্যাকেট সেপটিপিন এনে দেন।
অতশীর এমন হুকুমদারী দেখে ইভান হা করে তাকিয়ে রইলো।
–কি হলো?ওভাবে হা করে আছেন কেনো?মনে হচ্ছে আকাশের চাঁদ এনে দিতে বলেছি?সেপটিপিনই তো আনতে বলছি!
তাড়াতাড়ি আনুন।অনেক বেশি এমারজেন্সি।
এই বলে অতশী ইভানের হাতে কিছু টাকা দিয়ে সেখান থেকে চলে গেলো।
ইভানের সাথে তার বন্ধুরাও হা করে আছে।শুভ্র তখন বললো,দোস্ত এই মেয়ে মনে হয় পাগল হয়ে গেছে।একে এখানেই থামিয়ে দে।তা না হলে শেষে কিন্তু সামলাতে পারবি না।
ইভান সেই কথা শুনে বললো, কি সব আজেবাজে কথা বলছিস?সবসময় শুধু নেগেটিভ চিন্তাভাবনা!কিছুই হবে না।যা সেপটিপিন নিয়ে আয়।
শুভ্র সেই কথা শুনে বললো,তোকে আনতে বলেছে তুই আন।আমি কেনো আনতে যাবো?
ইভান সেই কথা শুনে নিজেই চলে গেলো সেপটিপিন আনতে।
সেপটিপিনের প্যাকেট নিয়ে ইভান পুরো ভার্সিটি খুঁজে বেড়াতে লাগলো।অতশীকে আর খুঁজে পেলো না।অতশী যাওয়ার সময় কোনো ঠিকানা দেয় নি।এখন এই মেয়েকে কই খুঁজবে সে?
হঠাৎ দেখলো লিশা সুন্দর সেজেগুজে এদিকেই আসছে।ইভান এতোদিনে অতশী আর তার বান্ধুবীদের ভালোভাবেই চিনেছে।
লিশাকে দেখামাত্র বললো,অতশী কই?
লিশা ইভান কে দেখামাত্র আগে সালাম দিয়ে নিলো।তারপর বললো,ভাইয়া কি দরকার ওর?
ইভান সেই কথা শুনে সেপটিপিনের প্যাকেট টি লিশার হাতে দিয়ে বললো ওকে দিয়ে দিও।আমাকে আনতে দিয়েছিলো।
লিশা একদম আকাশ থেকে মাটিতে পড়ে গেলো।অতশীর এতোবড় সাহস কবে থেকে হলো?সে ইভান ভাইকে সেপটিপিন আনতে দিয়েছে?
ইভান ভাইয়া চলে যেতেই হঠাৎ সেখানে অতশী আসলো।আর বললো,প্লিজ এখনি যান না?আর একটা কাজ করে দিন?
ইভান সেই কথা শুনে দাঁড়ালো।
অতশী তখন বললো কিছু ফুল লাগতো।প্লিজ এনে দিন।তাহলে আর কষ্ট করে আমাকে যেতে হয় না।
ইভান সেই কথা শুনে রাগে কটমট করতে লাগলো।অতশীর এমন সাহস দেখে সত্যি সে নিজেও নির্বাক।মুখের উপর না ও করতে পারছে না।কিন্তু বন্ধুরা যদি শোনে এ নিয়ে হাসাহাসি করবে সেজন্য ওদের কে আর বললো না।চুপচাপ চলে গেলো ফুল আনার জন্য।
ইভান কে এই অবস্থায় দেখে লিশাও হা করে তাকিয়ে আছে অতশীর দিকে।অতশী তখন হাত দিয়ে লিশার মুখ বন্ধ করে দিলো আর বললো চল তাড়াতাড়ি, সেপটিপিন লাগিয়ে দেই।এই বলে টানতে টানতে লিশাকে নিয়ে গেলো।
ইভানকে এবারও ঠিকানা বললো না অতশী।সেজন্য ইভান ফুল এনে সেই জায়গাতেই চলে গেলো।গিয়ে দেখে অতশীও সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে।ইভান অতশীকে ফুল দিয়েই চলে যেতে ধরলো।
অতশী তখন বললো,থ্যাংক ইউ সো মাচ।বার বার কষ্ট করে বাহিরে যাওয়ার জন্য।
ইভান তখন বললো, ধন্যবাদ দিতে হবে না।কারো উপকার করতে পেরেছি এটাই অনেক।
অতশী তখন বললো,প্রোগ্রাম দেখতে আসবেন না?দাওয়াত রইলো।লিশা ডান্স করবে,আর নেহা গান গাইবে।
ইভান সেই কথা শুনে বললো তুমি কি করবে?
–কিছু না।আমি জাস্ট ওদের অনুষ্ঠান দেখবো।
— তাহলে তুমি দাওয়াত দিচ্ছো কেনো?
–কেনো?আমি দিলে প্রবলেম কোথায়?
–তুমি যদি এটেন্ড করতে তাহলে তোমার ইনভাইট গ্রহন করতাম।
এই বলে ইভান আবার চলে যেতে ধরলো।
অতশী তখন ভুল করে বলে ফেললো,আমিও করবো এটেন্ড।প্রোগ্রাম দেখতে আসলে খুশি হতাম।এটা বলেই অতশী দিলো এক দৌঁড়।কারন এই কম সময়ের মধ্যে তাকে কিছু একটা ম্যানেজ করতে হবে।সে না পারে নাচতে আর না পারে গাইতে।সুইটি তখন বুদ্ধি দিলো কবিতা আবৃত্তি করার জন্য।।
আজ অতশীর কেমন যেনো এক অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছিলো।এই প্রথমবার ইভানের সাথে সে ভালোভাবে কথা বললো।আর ইভানকেও আজ ভালো মুডেই কথা বলতে দেখলো সে।
ইভানের জন্যই সে কবিতা আবৃত্তি করার জন্য মঞ্চে উঠেছে।
সুইটি অতশীকে এমন ভুলভাল কবিতা আবৃত্তি করা দেখে বললো,আচ্ছা তোর সেই চিরকুট ওয়ালা লাভার তো অনেক অনেক সুন্দর সুন্দর কবিতা পাঠাতো।তার কি একটাও মনে নেই?তার একটা বল।
অতশী সেই কথা শুনে সুইটিকে কোলে তুলে নিলো।আর গালে চুমু খেয়ে বললো,কি বুদ্ধি রে তোর?এতো বুদ্ধি কই পাস তোরা?এই বুদ্ধিটা আমার মাথায় কেন ঢোকে নি।
অতশী মনে মনে ভীষণ এক্সসাইটেড।কারন আজ সে ইভানের পাঠানো কবিতাই পাঠ করবে।যাতে ইভান কিছুটা হলেও বুঝতে পারে যে সে তাকে চিনতে পেরেছে।
অতশী উপস্থাপক কে রিকুয়েষ্ট করে আবার মঞ্চে উঠলো।সে সামনে তাকিয়ে দেখে ইভান এখনো আছে।অতশী ইভানের দিকে তাকিয়ে বললো,
আমি এখন যে কবিতাটি আবৃত্তি করবো সেটা আমার খুব কাছের একজনের লেখা।কাছের বলতে একদম প্রিয় একজন মানুষ।আমার শয়নে স্বপনে শুধু সেই মানুষটিই আছে।সেই কথা শুনে সবাই হাততালি দিতে লাগলো।
“অনুভবে তুমি”
মুখটি তোমার ফুলের মতন,চাঁদের মতোন হাসি।
সেই কারনে ওগো প্রিয়া,তোমায় ভালোবাসি।
দু চোখ ভরে দেখি শুধু তোমার মুখখানা।
পাগল হয়ে দেখি আঁখি,পলক আর পরে না।
গোলাপ তোমার ঠোঁটগুলো,নয়ন তোমার সাগর।
এমন সুন্দর রুপখানি দেখিনি আর কারোর।
তোমার দুটি ডাগর চোখে আমার মনের ছবি।
এসো প্রিয়া কাছে এসো দেখে যাও সবই।
বাতাসে ভেসে বেড়ায় প্রেম প্রেম গন্ধ,
ভাবনাতে শিহরিত,আছে যত রন্ধ্র।
নয়নে আঁকা তোমার প্রেমময় ছবিটা,
শব্দের মালা গেঁথে লিখি আমি এই কবিতা।
তোমার নামের মালা জপি,আমি প্রেম যোগী।
স্বর্গ সুখ লাভ হয়, তোমায় যখন দেখি।
“অনুভবে তুমি প্রিয়,তুমি শুধুই তুমি”।
অতশীর কবিতা শুনে সবাই তাজ্জব লেগে গেলো।কেউ কাউকে কত টা ভালোবাসলে এমন কবিতা লিখতে পারে?আহা কি প্রেম!স্বার্থক হোক এমন ভালোবাসা!
অতশী মঞ্চ থেকে নামার সাথে সাথে ইভান আসলো সেখানে।আর বললো,ওয়াও,তুমি তো অনেক সুন্দর কবিতা আবৃত্তি করতে পারো।আমি তো ভেবেছি তুমি কোনো কাজেরই নও।যাক ধারনা টা ভুল ছিলো।এই বলে ইভান চলে গেলো।
ইভানের এমন কমেন্ট শুনে অতশী ভীষণ খুশি হলো।আর মনে মনে ভাবলো, লাইনে বলে আসো না।আরো এমন এমন চমক দেখাবো যে নিজের মুখে প্রশংসা করতে বাধ্য হবে।আর বলতে বাধ্য হবে যে প্রিয়া আমিই তোমার সেই প্রিয়।তোমায় আমি অনেক বেশি ভালোবাসি!অনুভবে শুধুই তুমি।
অতশী ইভান কে নিয়ে সুখের রাজ্যে ভাসতেই ইভান আবার আসলো সেখানে।আর বললো, জানি না কোন ছেলের ঘাড়ে জুটেছো!বেচারার কপালটা খুবই পোড়া!এই পাগল টাকে সামলাবে কি করে!
অতশী ইভানের মুখে এটা কখনোই আশা করে নি।সে বোকার মতো দাঁড়িয়ে তাকিয়ে রইলো।আর ভাবতে লাগলো,অপমান করলো না অন্য কিছু!কিছুই তো বুঝলাম না।
না!এই ছেলেটা আর সোজা হলো না।ভাবলাম লাইনে এসে গেছে।সহজ এ এই স্বিকার করবে না।অন্য কৌশল অবলম্বন করতে হবে।
#চলবে,,,,,
কেমন লাগলো পর্ব টা অবশ্যয় জানাবে।