#অনুভবে_তুমি
#পর্ব_১৩
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ
অতশী টিউশনি শুরু করেছে এক বাসায়।দুইজন জমজ ছেলেকে পড়ায় সে।ক্লাস থ্রী তে পড়ে ছেলে দুইটি।দেখতে কিউট হলেও খুবই দুষ্ট তারা।তাদের কে সামলানো অতশীর জন্য খুবই কষ্টদায়ক। তার চেয়েও বেশি কষ্টদায়ক এই বাসার বড় মেয়েকে বোঝানো।সে বুঝতেই চায় না পাশের রুমে পড়াশোনা চলছে।সে সারাক্ষণ ফোনে জোরে জোরে কথা বলে।মেয়েটির নাম মৌরি।যে অতশীর সমবয়সী। দেখতেও বেশ মিষ্টি মেয়েটা।অতশীর ভীষণ জানতে ইচ্ছে করে সারাক্ষন কার সাথে সে কথা বলে?কিন্তু বলা হয়ে ওঠে না।কারন এখনো তেমন ভাব জমে নি মেয়েটির সাথে।
আজও অতশী টিউশনিতে এসেছে।টিউশনি শেষ করে যেই সে বাসায় যেতে ধরেছে হঠাৎ মৌরি ডাকতে লাগলো,এই অতশী!শুনে যাও।
অতশী তা শুনে মৌরির রুমে চলে গেলো।
অতশী বুঝতে পারলো মৌরি তার সাথে বন্ধুত্ব করতে চায়।সেজন্যই নিজের থেকে ডাকছে।
–তোমার বয়ফ্রেন্ড আছে?
মৌরির এমন প্রশ্ন শুনে অতশী কিছুটা অবাকই হলো।এখন পর্যন্ত তো ভালো করে কথাই হয় নি তাতেই বয়ফ্রেন্ডের কথা জিজ্ঞেস করছে!
–কি হলো?বলো?ভয় পেয়ো না।আমি বলবো না কাউকে।
অতশী নিচ মুখ হয়ে বললো,না নেই।
–নেই?সত্যি?এতো কিউট একটা মেয়ে সিংগেল?এই বলে মৌরি অতশীর গাল টেনে ধরলো।
অতশী বুঝতে পারলো মৌরিকে যেমন ভেবেছিলো সে তেমন নয়।অনেক বেশি মিশুক সে।
মৌরি তখন তার হাত বাড়িয়ে বললো,আমরা কি ফ্রেন্ড হতে পারি?
অতশী আর দেরী না করে সেও হাত মিলিয়ে নিলো।মৌরি তখন বললো, কোনো সংকোচ করবে না।এটাকে নিজের বাসা মনে করবে।আসলে আমার ভাই দুটি ভীষণ দুষ্ট।আমি অনেক চেষ্টা করেছি।তবুও আমার কাছে পড়তে চায় না।তোমার কাছে তো দেখি ভালোই পড়ে।
অতশী তখন হাসতে হাসতে বললো,এটাই নিয়ম।ছোট ভাইবোন কখনোই তার বড় ভাইবোন দের কাছে পড়তে চায় না।আমি নিজেও পড়ি নি?
–তারমানে তুমি ছোট?
–হ্যাঁ।আমার বড় ভাইয়া আছে।
–তাই?নিশ্চয় তোমার ভাইয়া তোমার মতই সুন্দর!
–হুম।
–ইশঃ আফসোস হচ্ছে।কেনো যে আগেই প্রেম করতে গেলাম!তোমার মতো ননদ কে হারিয়ে ফেললাম!
অতশী সেই কথা শুনে বললো, তোমার বয়ফ্রেন্ড আছে?তাই তো বলি সারাক্ষন কার সাথে এতো কথা বলো?
–এটা একদম ভুল কথা।ওর সাথে তেমন একটা কথা হয় না।জব করে তো সেজন্য ভীষণ ব্যস্ত।তবে চ্যাটিং করি সারাক্ষন।
–খুব ভালো লাগলো শুনে।অনেক বেশি লাভ করে তোমাকে?
–হ্যাঁ খুবই।অনেক বেশি কেয়ারিং ও।তেমন একটা দেখা হয় না।ছুটির দিনে শুধু দেখা করি।
–তোমার সাথে কথা বলে খুব ভালো লাগলো।আজ তাহলে আসি।আরেকদিন অনেক অনেক গল্প করবো।এই বলে অতশী চলে গেলো।
মৌরির সাথে কথা বলে অতশী ভীষণ খুশি!যাক ভয় টা কেটে গেলো তার।সে ভেবেছিলো অপরিচিত কোনো বাসায় কিভাবে প্রতিদিন যাবে!সবদিক দিয়ে ভালোই আছে ফ্যামিলি টা।
পরের দিন অতশী আর ভার্সিটিতে গেলো না।কারন আজ তানিম তাদের জেলখানায় নিয়ে যাবে।যে করেই হোক আজ অতশী তার ভাইয়ার সাথে দেখা করবেই।তানিম ও কথা দিয়েছে যে সে চেষ্টা করবে।কিন্তু আজও তারা ব্যর্থ হলো।দরজা থেকেই ঘুরে আসতে হয়েছে ওদের। এজন্য সবার ভীষণ মন খারাপ।অতশীর আম্মু তো সেই থেকে শুধু কাঁদতেই আছে।তানিম নানাভাবে শান্ত্বনা দিয়েও অতশীর আম্মুকে থামাতে পারলো না।অতশীর মাথায় এটা কিছুতেই ঢুকছে না যে তার ভাইয়া নির্দোষ প্রমাণ হওয়া সত্ত্বেও কেনো এখনো ছাড়া পাচ্ছে না?অতশী কিছুটা আন্দাজ করতে পারলো।সে ঠিক করলো পরবর্তীতে একাই যাবে জেলখানায়।
তানিমদের বাসার আশেপাশের লোকজন অতশীকে নিয়ে আজেবাজে কথা বলতে লাগলো।এভাবে একটা অবিবাহিত মেয়ে কি জন্য এ বাসায় থাকে!তানিম যদিও ব্যাপার টাকে গুরুত্ব দেয় না কিন্তু অতশীর আম্মু আর দাদী ব্যাপারটাকে নিয়ে খুবই চিন্তিত।তাই তারা ঠিক করলো আর তানিমের বাসায় থাকবে না।
তানিম শোনামাত্র বললো,আন্টি, আমি আপনাদের ছেলের মতো।আর মা ছেলের বাসায় থাকলে প্রবলেম টা কোথায়?কে কি বললো তাতে প্লিজ কান দেবেন না।অয়ন না আসা পর্যন্ত আপনারা যাবেন না কোথাও।
অতশীর আম্মু সেই কথা শুনে বললো, না এটা হয় না বাবা।নানা মানুষে নানা কথা বলছে।আমাদের তো একটা মানসম্মান আছে।তুমি আমাদের জন্য অনেক করেছো।এবার প্লিজ আমাদের টা আমাদেরকেই ভাবতে দাও।
অতশী আর দাদী ইতোমধ্যে রেডিও হয়েছে।অতশীও চায় না এ বাড়িতে থাকতে।কারন তানিম দিন দিন আরো বেশি আকৃষ্ট হচ্ছে তার প্রতি।তার লক্ষ্ণন ও তেমন ভালো মনে হচ্ছে না অতশীর।
তানিম অনেক চেষ্টা করেও আটকাতে পারলো না ওদের।তানিমের চোখ জল ছলছল করছে।কিছুক্ষণের মধ্যেই তা গড়িয়ে পড়বে দু চোখ বেয়ে।সে হঠাৎ কান্নাজড়িত কন্ঠে বললো,অতশী আমার রুমে একবার আসবা?
অতশী একবার তার মায়ের দিকে আর আরেকবার তার দাদীর দিকে তাকালো।
–কি হলো আসো?
অতশী সেজন্য চলে গেলো তানিমের রুমে।
তানিমের রুমে যেতেই তানিম একটা গিফট বক্স অতশীর হাতে দিয়ে বললো, এটাই লাস্ট পার্সেল।ভিতরে তোমার ফেভারিট ফ্লাওয়ার আর একটা চকলেট বক্স আছে।আর একটা চিরকুট ও আছে।এবার আমি আমার নিজের হাতে লিখেছি।কষ্ট করে একটু পড়ে নিও।
অতশী সবকিছু বুঝেও না বোঝার ভান করে থাকলো।তবে তানিম কে সে ধন্যবাদ দিতে ভুললো না।
অতশী মনে মনে হাসতে লাগলো।আর ভাবতে লাগলো,মানুষ এতো মিথ্যে কথা কেমন করে বলে?আর কি ভালো অভিনয় করে ছেলেটা!কিভাবে অন্যজনের গিফট নিজের নামে চালিয়ে দেয়!নিশ্চয় ইভান আবারো গিফট পাঠায়ছে।এবার ভার্সিটিতে গিয়ে ইভানের সাথে কথা বলতে হবে।কেনো এভাবে লুকিয়ে পার্সেল পাঠাচ্ছে সে?তার সাথে তো ভার্সিটিতে রোজ দেখা হয়!কেনো মুখে বলে না কিছু।
ইভান কি তাহলে তার ফ্রেন্ড দের ভয়ে এমন লুকোচুরি করছে!
অতশী চুপচাপ আছে আর ইভানের কথা ভাবছে।
তানিম হঠাৎ নিজেকে আর কন্ট্রোল করতে পারলো না।সে অতশীকে জড়িয়ে ধরে বললো, আই লাভ ইউ সো মাচ অতশী।প্লিজ আমার মনের অবস্থাটা বোঝার চেষ্টা করো।
অতশী তখন চিৎকার করে বললো,কি করছেন এসব?ছাড়ুন বলছি।
–সরি সরি।এই বলে তানিম অতশীকে ছেড়ে দিলো।
অতশী তখন বললো, খবরদার এমন পাগলামি কখনোই করবেন না।তাহলে কিন্তু আর কখনোই আপনার সামনে আসবো না।এই বলে অতশী চলে গেলো।
অতশী চলে যাওয়ার সাথে সাথে তানিম টেবিলের উপর রাখা একটা শোপিচ ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে চিৎকার করতে লাগলো।কারন সে অতশীকে পাওয়ার জন্য এতোকিছু করলো তবুও অতশীকে আর তার পাওয়া হলো না।
অতশী তিনদিন পর ভার্সিটিতে গেলো।ভার্সিটিতে যেতেই দেখে গেটের সামনে বিশাল এক লাইন।অতশী বুঝতে পারলো না কিছু।কাউকে তো চেনেও না।কাকে জিজ্ঞেস করবে?তার ডিপার্টমেন্ট এর কাউকেই দেখছে না।তখন অতশী নিজেও লাইনে গিয়ে দাঁড়ালো।আর তার সামনের মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করলো কি হচ্ছে এখানে?
মেয়েটি তখন বললো তুমি নিউজ দেখো নি কাল। জানো না কিছু?
–না তো।কি হয়েছে?
–ভার্সিটির ছাত্র নেতা আহসান এর উপর কে বা কারা জানি এট্যাক করেছে।তিনি আহত হয়েছেন কিন্তু ওনার চারজন সহচরী নিহত হয়েছেন।আজ আবার দুইজনের মৃত্যু দেহ পাওয়া গেছে সেই ডোবায় যেখানে তমালের দেহ পাওয়া গিয়েছিলো।এজন্য সবাইকে চেক করে করে ভার্সিটিতে ঢুকাচ্ছে।
অতশী একদম স্তব্ধ হয়ে গেলো।ভার্সিটির ভিতরেও খুন!এভাবে চললে তো ভার্সিটিতে আসাই সবাই বন্ধ করে দেবে!
অতশীর হঠাৎ ইভানের কথা মনে হলো।কোনো ভাবে এসবের পিছনে ইভান জড়িত নয় তো!ওর হাতে তো সেদিন সে পিস্তল দেখেছে।তার চোখের সামনেই তো শাট শাট শব্দ করে পাঁচজন কে মেরে ফেললো।
এটা কি সত্যি ইভান!না তার ভুল হচ্ছে!
না ভুল কিভাবে হয়?
ইভানের শরীরের গড়ন তার মুখস্ত হয়ে গেছে।
একই উচ্চতা,একই দাঁড়ানোর স্টাইল।তাহলে কি ইভান একজন সন্ত্রাসী!এই সন্ত্রাস টাকে সে ভালোবাসে!
#চলবে,,,,,,,,