#অনুভবে_তুমি
#পর্ব_১৯(বোনাস পর্ব)
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ
আজকের ব্রেকিং নিউজ;সি আই ডি অফিসার ইভান চৌধুরী সন্ত্রাসীদের হাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন। তিনি আহত হলেও সন্ত্রাসীকে কিছুতেই পালিয়ে যেতে দেন নি।নিজের জীবন বিপন্ন করে সন্ত্রাসী টির উপর এট্যাক করেন।আর তাকে ধরে ফেলেন।
আজ ছাত্রনেতা আহসান ভার্সিটিতে একটা সমাবেশের আয়োজন করেছিলেন।তিনি মঞ্চে ওঠার কিছুক্ষন পরেই হঠাৎ একজন সন্ত্রাসী তাকে একের পর এক গুলি করতে থাকে।কিন্তু আহসানের কিছুই হয় নি।কারন তিনি আজ সেফটি জ্যাকেট পরে গিয়েছিলেন।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে তাহলে কি তিনি আগে থেকেই জানতেন আজ তার উপর হামলা হবে?
ওনাকে প্রশ্ন করা হলে উনি জানান এর আগেও তার উপর হামলা হয়েছে সেজন্য তিনি এবার নিজের নিরাপত্তার জন্য সেফটি জ্যাকেট পরে এসেছেন।
এদিকে সন্ত্রাসটি পালিয়ে গেলে অফিসার ইভান আর তার তিনজন সহচরী ধাওয়া করে তাকে।তখন সন্ত্রাসীটি নিজেকে বাঁচানোর জন্য গুলি চালায়।যার একটা গুলি ইভানের বাম হাতে লাগে।
ইভান আর তার তিনজন সহচরী কিভাবে ঘটনাস্থলে পৌঁছলেন তা এখনো ক্লিয়ার করে জানা যায় নি। যেহেতু অফিসার ইভান এখন অসুস্থ সেজন্য ওনার ইন্টারভিউ নেওয়াও সম্ভব হয় নি।তবে গোপনসূত্রে জানা গেছে ইভান আর তার তিনজন সহচরী বেশ কিছুদিন ধরেই ছদ্মবেশে ভার্সিটিতে যাতায়াত করছেন।এর পিছনে নিশ্চয় কোনো রহস্য আছে,যা এখন পর্যন্ত প্রকাশ্যে আসে নি।
এদিকে অতশী কিছুতেই স্থির হতে পারছিলো না।শুধু বার বার ইভানের ওই রক্তমাখা হাতের ছবি চোখের সামনে ভেসে উঠতে লাগলো।কেনো এমন হচ্ছে তার?নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করতে লাগলো।সে শুধু বার বার ঘড়ির দিকে দেখছে।কখন চারটা বাজবে আর সে টিউশনিতে চলে যাবে।বাসায় তার কিছুতেই মন বসছে না।অতশী টিভি টা অন করলো।কিন্তু টিভি দেখতে একদম ইচ্ছে হচ্ছে না।সেজন্য সে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো।
অতশীর একবার মনে হলো ইভানের এমন একটা অবস্থায় ওদের বাসায় যাওয়া ঠিক হবে না।মনে তো হয় না আজ ওরা পড়তে বসবে।পরে আবার মনে হলো দূর ঘুরেই আসি একবার।এইভাবে সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে অতশী চলেই গেলো ইভানের বাড়িতে।
অতশী ইভানদের বাসায় প্রবেশ করতেই দেখে অনেক লোকজন।অতশী কে দেখে ইভান দের বাসার কাজের মেয়ে রিয়া বললো,ম্যাডাম আজ আপনি চলে যান।আজ ইমান আর ইশান পড়বে না।
অতশী যদিও জানে এর কারণ,তবুও সে জিজ্ঞেস করলো কেনো?আজ আবার কই গেছে ওরা?
–যায় নি কোথাও।সবাই বাসাতেই আছে।আসলে আজ ইভান স্যারের হাতে গুলি লেগেছে।সেজন্য সবাই খুব চিন্তিত আছে।
অতশী সেই কথা শুনে চলে যেতে ধরলো।হঠাৎ কি মনে করে যেনো আবার ফিরে এলো।অতশী তখন রিয়াকে বললো,এখন উনি কেমন আছেন?
–গুলি বের করে ব্যান্ডেজ করা হইছে।এখন সুস্থই আছে।
হঠাৎ মৌরি এলো অতশীর কাছে।সে এসেই বললো,এখানে দাঁড়িয়ে আছো যে?রুমে যাও।ইশান আর ইমান সেই থেকে অপেক্ষা করছে।
অতশী তখন বললো,রিয়া তো বললো আজ পড়বে না ওরা।আমি সেজন্য চলে যেতে ধরেছিলাম।
–না না পড়বে।যাও তুমি।
অতশী সেই কথা শুনে ইশান আর ইমানের রুমে চলে গেলো।
ব্রেকিং নিউজ দেখে নেহা,লিশা,আর সুইটি একদম শকড হয়ে গেলো।এটা কি দেখছে তারা।সবাই তো ইভান আর তার ফ্রেন্ডদের ভার্সিটির বড় ভাই বলে মানতো।কিন্তু তারা আসলে সন্ত্রাসীদের ধরার জন্য ছদ্মবেশে রোজ রোজ আসতেন ভার্সিটিতে। নেহা ভীষণ কষ্ট পেলো।কারন সে শুভ্র কে সন্ত্রাস বলে অনেক গালমন্দ করেছে।
লিশা নিউজ টা শুনেই অতশীর আম্মুকে ফোন দিলো।কিন্তু অতশীর আম্মু জানালো অতশী বাসাই নাই।সে টিউশনিতে গিয়েছে।
অতশী মনোযোগ দিয়ে ইশান আর ইমান কে পড়াচ্ছে।
হঠাৎ সে ইভানের গলার স্বর শুনতে পেলো।ইভান চিৎকার করে জোরে জোরে তার ভাইদের ডাকতে ডাকতে রুমে প্রবেশ করলো।
ইভান কে দেখামাত্র ইশান আর ইমান দৌঁড়ে চলে গেলো।
ভাইয়া ডাকছো আমাদের?
–হ্যাঁ।আমার ল্যাপটপ টা খুঁজে পাচ্ছি না।
ইশান তখন বললো,আমরাই নিয়ে এসেছি।দাঁড়াও আনছি।এই বলে ইশান টেবিলের উপর থেকে ল্যাপটপ টা এনে দিলো।
ইভান তা দেখে ভীষণ রেগে গেলো।সে বললো,বারণ করি নি আমার ল্যাপটপে হাত নিতে?কেনো ধরেছিস এটা?এই বলে ইভান তার ভাইদের উপর চড় মারতে গেলো।
ইশান আর ইমান ভয়ে একদম কুঁকড়ে গেছে।কারণ তারা খুবই ভয় পাই ইভান কে।আসলে ইভান সবার সাথেই এমন রুঢ় আচরণ করে।
অতশী এতোক্ষণ চুপ করেই ছিলো।কিন্তু ছোট বাচ্চাদের উপর হাত তোলা দেখে সে বললো,কি করছেন এটা?মারছেন কেনো ওদের?সামান্য ল্যাপটপ ই তো এনেছে?
ইভান তা শুনে বললো,যা বোঝো না সেটা নিয়ে কথা বলতে এসো না।কত গুরুত্বপূর্ণ ফাইল আছে এখানে আছে জানো তুমি?সামান্য ল্যাপটপ এটা?
অতশী ইভানের হাতের এমন অবস্থা দেখে এতোক্ষন ভীষণ কষ্ট পাচ্ছিলো।মনে মনে কত আফসোস করছিলো।ভালো হাত টা কিভাবে পংগু করে এনেছে!কিন্তু এখন মনে হচ্ছে ঠিকই হয়েছে।
অতশী নিজের রাগ কে কন্ট্রোল করতে পারছিলো না,সে বিড়বিড় করে বললো,ভদ্র ঘরের ছেলেরা কেনো যে এমন অধঃপতন এ চলে যায় সত্যি আমি বুঝতে পারি না।কি দরকার সন্ত্রাসগীরি করার?এতো ভালো একটা ফ্যামিলির ছেলে কি করে এভাবে পিস্তল নিয়ে ঘুরে বেড়ায়?যার বাবা একজন এডভোকেট সে কি করে,,,,,,,,,
অতশী পুরো কথা শেষ না করতেই ইভান বললো,তুমি কি বললে এগুলো?আমি কিন্তু সব শুনতে পেয়েছি।তোমাকে না বলেছি বেশি ওভার কনফিডেন্স দেখাবে না।আমার ব্যাপারে এতো নাক গলাও কেনো তুমি?
আর তুমি আজ কি জন্য এসেছো?তুমি তো দেখলেই আমার হাতে গুলি লেগেছে।এজন্য নিশ্চয় বাসার সবাই টেনশনে থাকবে?আজ পড়াতে আসার কি দরকার ছিলো?
অতশী ইভানের মুখে এমন কথা শুনে একদম স্তব্ধ হয়ে গেলো।সে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো ইভানের দিকে।ইভান তার সাথে কেনো এমন খারাপ আচরণ করে সত্যি সে জানে না।অতশীর চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়তে লাগলো।সেজন্য সে আর এক মুহুর্ত ও দেরী করলো না।তাড়াতাড়ি করে বাসা থেকে বের হয়ে গেলো।
এদিকে ইশান আর ইমান কিছুই বুঝলো না।হঠাৎ কি হলো ম্যামের?তারা ম্যাম ম্যাম বলে ডাকতে লাগলো।কিন্তু অতশী তাদের কথায় কান না দিয়ে সোজা চলে গেলো।
ইভান নিজেও জানে না কেনো এমনভাবে কথা বলে অতশীর সাথে?অতশীর সাথে কেনো সে ভালো করে কথা বলতে পারে না?শুধু অতশী না সবার সাথেই সে এমন খারাপ আচরণ করে।কাউকে কষ্ট দেওয়ার পর তার মনে হয় সে এটা কেনো করলো?
এদিকে ইশান আর ইমান সব ঘটনা খুলে বললো মৌরিকে।তার ইভান ভাইয়া কিভাবে অপমান করলো তাদের অতশী ম্যামকে সেগুলোও বলে দিলো।মৌরি নিজেও ভয়ে কথা বলে না ইভানের সাথে।সে আর কি বিচার করবে ইভানের?সেজন্য সব শুনে চুপচাপ থাকলো।
অতশী পুরো রাস্তা কাঁদতে কাঁদতে চলে গেলো।কারণ ইভানের এমন ব্যবহারে তার ভীষণ খারাপ লাগছিলো।সে ঠিক করলো আর টিউশনি করতে যাবে না ইভানদের বাসায়।
অতশী কিছুদিন ধরে ভার্সিটিতে যায় না।তার মন টা এতোটাই খারাপ যে কারো সাথে যোগাযোগ পর্যন্ত করলো না।এদিকে মৌরিও বার বার অতশীর আম্মুর ফোনে কল দিতে লাগলো।অতশী তা দেখে মৌরির নাম্বার ব্লক করে দিলো।কারন ও বাড়ির সাথে কোনো সম্পর্ক নাই তার।সে আর টিউশনি করবে না।
প্রায় এক সপ্তাহ পর,
অতশী ভার্সিটিতে যাবে বলে রেডি হচ্ছে।হঠাৎ কে যেনো কলিং বেল বাজালো।অতশী রেডি হচ্ছে দেখে সে আর দরজা খুলতে গেলো না।অতশীর আম্মু নিজেই দরজা খুলে দিলো।অতশীর আম্মু দরজা খুলেই দেখে অয়ন দাঁড়িয়ে আছে।একদম চেনা যাচ্ছিলো না অয়ন কে।মুখ চোখ একদম শুকিয়ে গেছে।
অয়নের আম্মু অয়ন কে দেখামাত্র তাকে জড়িয়ে ধরলো।আর চিৎকার করে অতশী কে ডাকতে লাগলো।
কিন্তু অয়ন উলটো রাগ দেখালো সবার উপর।সে রাগান্বিত হয়ে বললো,আমি কখনো ভাবতেই পারি নি আমার ফ্যামিলির লোকজন এমন!তারা আমাকে ছাড়ানোর কোনো ব্যবস্থা তো করলোই না,আমাকে একটিবার দেখতেও গেলো না।এই পরিবারের জন্য আমি এতো কষ্ট করি!
অতশী তখন বললো,ভাইয়া আমরা অনেক চেষ্টা করেছি।কিন্ত তোর সাথে দেখা করতে দেয় নি আমাদের।
অয়ন রাগ হয়ে বললো,কে দেখা করতে দেয় নি?নাম বল তার?
অতশী তখন বললো, আমরা তো নাম জানি না কারো।আর কাউকে চিনিও না।তানিম ভাইয়া নিয়ে গিয়েছিলো আমাদের।
তানিমের নাম শোনামাত্র অয়ন চিৎকার করে বললো,ওই হারামির নাম নিবে না কেউ।ও তো একটা প্রতারক। শালা হারামি বেঈমানির শাস্তি দুনিয়াতেই পাইছে।
অতশীর অনেক কিছু জানার ছিলো কিন্তু সাহস করে আর কিছু জিজ্ঞেস করলো না।
চলবে,