#অনুভবে_তুমি
#পর্ব_০৯
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ
খবরদার আমার কাছে আসবেন না।ডোন্ট টাচ মি!আপনি শুনছেন না কেনো?
অতশী এই বলে চিৎকার চেঁচামেচি করেই যাচ্ছে।তবুও একজন সন্ত্রাসী তার দিকেই এগিয়ে আসছে।এই সন্ত্রাসী টা ঐ পাঁচজনের মধ্যে একজন।সন্ত্রাসী টার লক্ষণ মোটেও ভালো মনে হচ্ছে না।সে অতশীর ক্ষতি করার উদ্দেশ্যেই এসেছে এই রুমে।ছেলেটি একদম অতশীর কাছে চলে আসলো।তা দেখে অতশীর ভীষণ ভয় হতে লাগলো।সে কাঁদছে আর বলছে প্লিজ ভাই আমার কোনো ক্ষতি করেন না।ছেলেটি কোনো কথা না শুনে হঠাৎ অতশীকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো।অতশী নিজেকে রক্ষা করার জন্য হাতের কাছে কিছুই পেলো না।সেজন্য আবার রিকুয়েষ্ট করলো ভাই আমি তোমার বোনের মতো।প্লিজ ভাই।আমি কি ক্ষতি করেছি তোমাদের?আর যদি কোনো ক্ষতি করেই থাকি তাহলে আমাকে ডাইরেক্ট মেরে ফেলো।তবুও আমার মানসম্মান নষ্ট করো না।কে শোনে কার কথা?
এতো বারণ করা সত্ত্বেও ছেলেটি অতশীর হাত টেনে ধরলো।অতশী কোনো উপাই না দেখে তার হিজাবের একটা পিন খুলে সন্ত্রাসী টার গলায় বসিয়ে দিলো।সন্ত্রাসী টা সাথে সাথে জোরে এক চিৎকার দিয়ে উঠলো।সন্ত্রাসীটার চিৎকার শুনে বাকি চারজন ছেলেও রুমের মধ্যে প্রবেশ করলো।আর জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে?
আঘাত পাওয়া ছেলেটি তখন বললো কিছুই হয় নি।তবে এখন হবে।এই বলে ছেলেটি রাগ করে অতশীর মাথার হিজাব এক টানে খুলে ফেললো।অতশী অসহায় দের মতো বলতে লাগলো প্লিজ ভাই আমাকে ছেড়ে দিন।আমাকে যেতে দিন।ছেলেটি তখন বললো হ্যাঁ যাবিই তো তার আগে একটু আনন্দ ফূর্তি করে নেই।এই বলে অতশীর মুখের নিকাব টিও টেনে খুলে ফেললো।ছেলেটির এমন আচরণ দেখে বাকি ছেলেগুলো বললো,এই এটা কি করছিস?মেয়েটার সাথে এমন করছিস কেনো?বস জানতে পারলে ভীষণ রেগে যাবে।উনি কিন্তু মেয়েদের উপর অত্যাচার করা মোটেও পছন্দ করেন না।
–বস জানবে কি করে?আমরা আনন্দ করবো এখানে।বস কিছুই টের পাবে না।তাছাড়া হাতের কাছে এমন সুন্দর একটা ফুল পেয়ে কি করে ছাড়ি বল?তোদের মন চাইলে আসতে পারিস দাওয়াত রইলো।এই বলে ছেলেটি আবার অতশীর দিকে লোলুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।অতশী মনে মনে শুধু তার সৃষ্টিকর্তাকে ডাকতে লাগলো।এদিকে আরেকটি ছেলে এগিয়ে এসে বললো,হ্যাঁ ঠিকই তো।বস জানবে কি করে?আমরা একটু আনন্দ ফূর্তি তো করতেই পারি?মুহুর্তের মধ্যে সবার মনেই লোভ জেগে উঠলো।অতশী সবার এমন লোলুপ চাহনি দেখে ভয়ে কাঁদতে লাগলো।সে তার মৃত্যু কামনা করতে লাগলো।আর জোরে জোরে বলতে লাগলো সে কি এমন পাপ করেছে?কিসের শাস্তি দিচ্ছে তাকে বিধাতা?
হঠাৎ রুমের মধ্যে আরেকজন প্রবেশ করলো।যার পুরো শরীর কালো পোশাকে ঢাকা ছিলো।চোখে কালো সানগ্লাস।তিনি এসেই কোনো কথা না বলে তার পিস্তল বের করে সব কয়টারে গুলি করলো।
অতশী তা দেখে একদম স্তব্ধ হয়ে গেলো।সে নির্বাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। তার পুরো শরীরে কোনো বোধশক্তি ছিলো না।সে মনে হয় অন্য দুনিয়ায় আছে এখন।
সন্ত্রাসী টা এবার তার পিস্তল ঢুকিয়ে রেখে অতশীর যেই হাত ধরেছে ঠিক তখনি অতশী ওখানেই অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়। তারপর অতশীর আর কিছুই মনে নাই।
যখন অতশীর জ্ঞান ফিরলো সে চোখ মেলে তাকাতেই দেখে তার আম্মু, দাদী পাশেই বসে আছে।অতশী সবাই কে দেখে তাড়াতাড়ি করে উঠে বসলো।কারন তার বিশ্বাসই হচ্ছে না সে এখানে।অতশীর আম্মু অতশীকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো।আর বলতে লাগলো মা তুই ঠিক আছিস?কোথাই ছিলি তুই?
অতশী তখন বললো আম্মু আমি এখানে কিভাবে এলাম?অতশীর আম্মু তখন বললো, কি বলছিস এসব?তুই তো নিজেই এসেছিস?বারান্দায় অজ্ঞান হয়ে পড়ে ছিলি।
অতশী তখন মনে মনে ভাবলো এটা কি করে হতে পারে?সে তো সন্ত্রাসীদের আস্তানায় ছিলো।তাহলে কি ঐ সন্ত্রাসী টাই তাকে এখানে রেখে গেছে?কিন্তু সন্ত্রাসী টা এ ঠিকানা পেলো কোথায়?কারন এটা তো তানিমের বাড়ি?অতশী সত্যি কিছুই বুঝতে পারছে না।সব তার মাথার উপর দিয়ে চলে যাচ্ছে।
অতশীর জ্ঞান ফিরেছে শুনে তানিম তাড়াতাড়ি করে বাসায় চলে এলো।আর এসেই অতশীকে একের পর এক প্রশ্ন করতে লাগলো।
অতশী তখন তানিম কে সব ঘটনা খুলে বললো যা যা তার সাথে ঘটেছে।অতশীর মুখে সব কাহিনী শুনে সবার শরীরের লোম দাঁড়িয়ে গেলো।অতশীর দাদী হাউমাউ করে কেঁদে বললো,বড় বিপদের হাত থেকে বেঁচে গেছে অতশী। তা না হলে আজ কি যে হতো?
তানিম তখন বললো তুমি আর ভয় পেয়ো না অতশী।আমি পুলিশের কাছে জিডি করে এসেছি।যা যা হয়েছে তুমি সব পরিষ্কার করে বলবে।কিছুক্ষন পর মিডিয়ার লোক আসবে।অতশী মাথা নাড়িয়ে জানালো হুম।তবে তার ভয় মোটেও দূর হয় নি।সে এখনো ভয় পাচ্ছে।আর ঐ সন্ত্রাসী টার কথা ভাবছে যে তাকে বাঁচিয়েছে।
কিছুক্ষন পর পুলিশ আসলো তানিমের বাসায়।আর পুলিশের সাথে মিডিয়ার লোকও।অতশী সবাই কে দেখে খুব ভয় পাচ্ছিলো।সবার সামনে সে কি করে এসব বলবে?কিন্তু তানিম অতশীকে সাহস দিয়ে বললো,এভাবে ভয় পেলে হবে না,সব কিছু পরিষ্কার করে বলতে হবে।তুমি নির্ভয়ে সবকিছু বলো।
অতশী তানিম এর কথা শুনে সেদিনের সেই ঘটনার কথা বললো যেটার ভিডিও গনমাধ্যম এ ভাইরাল হয়েছে।অতশী এটাও বললো,কিভাবে তাকে কিডন্যাপ করা হয়েছে,আর কিভাবে একজন তাকে বাঁচিয়েছে।অতশীর মুখে পুরো কাহিনী শুনে সবাই সবার দিকে তাকাতে লাগলো।কারন ঘটনা টা সত্যি অবাস্তবের মতো ছিলো।এমন ঘটনা সত্যি বিশ্বাসযোগ্য নয়।অতশী এবার সবার সামনে জোরে জোরে করে কাঁদতে লাগলো।আর বললো,আমার ভাই কে তাড়াতাড়ি করে ছেড়ে দিন।আমার ভাই কখনোই কাউকে খুন করতে পারে না।ভাই ছাড়া আমাদের কেউ নাই।
পুলিশ তখন বললো, আপনারা ভালো একজন আইনজীবীর সাথে কথা বলেন।উনি নির্দোষ হলে অবশ্যই ছাড়া পাবেন।এই বলে সবাই চলে গেলো।
সকল নিউজচ্যানেলে এখন শুধু অতশীর কাহিনী।এমন লোমহর্ষক ঘটনা শুনে সবাই বেশ অবাক হয়েছে।কারন আজ অতশীর সাথে অনেক খারাপ কিছু হতে পারতো।হয় তো তাকেও আত্নহত্যা করে বস্তায় ভরে ফেলে দেওয়া হতো।কেউ কেউ বলছে মেয়েটার কপাল ভালো,সেজন্য বেঁচে ফিরেছে তা না হলে স্বাধীন বাংলাদেশে আরেকটি নির্দোষ মেয়ের ধর্ষিত দেহ পাওয়া যেতো।
এই ঘটনার পর থেকে অতশী একদম অন্যরকম হয়ে গেছে।সে সবসময় চুপচাপ ঘরের মধ্যে বসে থাকে।কারো সাথে কোনো কথা বলতে চায় না।তারা তানিমের বাড়িতেই রয়ে গেলো।কারন তানিম আর তানিমের ফ্যামিলি অতশীদের তাদের নিজের বাড়িতে আর যেতে দিলো না।অয়ন জেল থেকে না আসা পর্যন্ত এভাবে একা ছাড়বে না তাদের।যেহেতু অতশীর উপর একবার হামলা হয়েছে কে জানে আবার কোন বিপদ হয়?
অতশী চুপচাপ বারান্দায় বসে আছে।আর বাহিরের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে।কি থেকে কি হয়ে গেলো।তার চোখের সামনে শুধু ঐ ঘটনায় এখন ভাসছে।ছেলেটা একবারে কি করে পাঁচজন কে শেষ করে দিলো?
হঠাৎ তানিম এলো সেখানে।অতশী তানিম কে দেখে চমকে উঠলো।
–ভয় পেলে?
–না।
–এখানে চুপচাপ বসে আছো যে?
–এমনিতেই।
–তুমি ভার্সিটিতে কবে থেকে যাবে?
–ভাইয়া জেল থেকে আসুক।
–কেনো?এখন গেলে কি প্রবলেম?
–আমার মন ভালো নেই।সেজন্য কিছু ভালোও লাগছে না।এই মুহুর্তে পড়াশোনায় মনোযোগ দেওয়া মোটেও সম্ভব না।
তানিম তখন বললো সবকিছু ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করো অতশী।ভাবো কিছুই হয় নি।যত তাড়াতাড়ি ভুলে যাবে ততো তোমার জন্য ভালো হবে।কালকে রেডি থেকো।কাল থেকে আমি তোমায় ভার্সিটিতে নিয়ে যাবো।
–কিন্তু আপনার না অফিস আছে?আপনি কি করে নিয়ে যাবেন?
–তোমাকে ভার্সিটিতে রেখেই তবে আমি অফিসে যাবো।এই বলে তানিম চলে গেলো।
অতশী একজন অবিবাহিত মেয়ে। এইভাবে তারা তানিমের বাসায় থাকতে পারে না।নানা মানুষ নানা কথা বলবে।সেজন্য অতশীর আম্মু আর দাদী ঠিক করেছে দুই একদিন পরে এ নিয়ে কথা বলবে।এমনিতেই অতশীকে নিয়ে নানা গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে।কেউ কেউ তো বলছে সন্ত্রাসী রা কি এমনি এমনি ছেড়ে দিয়েছে? কিছু না কিছু তো হয়েছেই।অতশী এসব শুনতে চায় না দেখেই বাসা থেকে বের হচ্ছে না।
পরের দিন তানিম রেডি হয়ে অতশীকে ডাকতে এলো।এসে দেখে অতশী রেডি না হয়ে শুয়ে আছে।তানিম কে দেখে অতশীর আম্মু বললো,বাবা তুমি অফিসে চলে যাও।আমি নিয়ে যাবো অতশীকে।
–কেনো আন্টি?
অতশীর আম্মু তখন বললো,বাবা মন খারাপ করো না।তোমার সাথে অতশীকে দেখলে আবার নতুন করে কানাঘুষা শুরু করে দিবে।এমনিতেই মেয়েটার মানসম্মান একেবারেই শেষ হয়ে গেছে।
–ঠিক আছে আন্টি।সাবধানে যাবেন।কোনো সমস্যা হলে ফোন দিয়েন আমাকে।
–ঠিক আছে বাবা।
এই কথা বলে তানিম অফিসে চলে গেলো।
এদিকে অতশীকে নিয়ে তার আম্মু গেলো ভার্সিটিতে। ভার্সিটিতে যেতেই সবাই অতশীকে ঘিরে ধরলো।কারন অতশী কে এখন এক নামে সবাই চেনে।এই কয় দিন তো আর কম নিউজ হয় নি তাকে নিয়ে।আজ যে অতশী ভার্সিটিতে এসেছে সেটা নিয়েও হয় তো নিউজ হবে।
সবাইকে এভাবে আসা দেখে অতশীর আম্মু শুধু বলছে ,প্লিজ তোমরা কেউ ওকে আর এসব নিয়ে প্রশ্ন করো না।প্লিজ সাইড দাও আমাদের।কিন্তু কেউ কোনো কথাই শুনলো না।
হঠাৎ সেখানে ভার্সিটির বড় ভাইয়েরা আসলো।এসেই ধমক দিলো সবাইকে।কি হচ্ছে এখানে?এতো ভীড় কেনো?
–আমরা একটু ইন্টারভিউ নিচ্ছি অতশীর।
সেই কথা শোনামাত্র ভার্সিটির ভাইগুলো বললো,অনেক হয়েছে ইন্টারভিউ নেওয়া।এবার একটু মেয়েটাকে ছাড় দাও।ওকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে সাহায্য করো সবাই।ও এমনিতেই ভীষণ শকড পেয়েছে।তোমরা যদি এভাবে ওকে এই এক বিষয় নিয়েই প্রশ্ন করো তাহলে ও হয় তো আর ভার্সিটিতেই আসতে চাইবে না।
ভার্সিটির বড় ভাইগুলোর কথা শুনে সবাই চলে গেলো।শুধু অতশীর বান্ধুবীরা থাকলো।
অতশী এতোক্ষণ নিচ মুখ হয়ে ছিলো।সে সবাইকে যাওয়া দেখে এবার তার মাথাটা উপরে ওঠালো।হঠাৎ সে খেয়াল করলো দূরে ভার্সিটির বড় ভাই ইভান বাইকের উপর বসে আছে।তিনি অতশীর দিকেই তাকিয়ে আছেন।অতশী তখন তার দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলো।আর বড়ভাইগুলোকে ধন্যবাদ জানিয়ে সেখান থেকে চলে গেলো।
#চলবে,,,,,
কেমন লাগলো আজকের পর্ব অবশ্যই জানাবে।