~ কলেজ থেকে বাসায় ফিরে দেখলাম বাসা ভর্তি মেহমান। মামা মামি সাথে কয়েকজন ছেলে বসে আছে৷ ঘরে যেতেই দেখলাম আপুরাও এসেছে। কিচ্ছু মাথায় ঢুকছে না আমার। ব্যাগ রেখে আপুকে জিজ্ঞেস করলাম, ছেলেগুলো কারা?
আপুর কথা শুনে যেন আমি আকাশ থেকে পরলাম।
– ওই যে লম্বা ছেলেটাকে দেখছিস, মাথা নিচু করে বসে আছে। ওটা হলো মামার ছেলে মানে রিদ ভাই। আর বাকি যে দুই জনকে দেখছিস ওরা হলো তার বন্ধু। মামা মামি সহ এরা সবাই এসেছে তোকে বৌ করে নিয়ে যেতে।
আমি আপুর দিকে গরম চোখে তাকালাম।
– মজা করিস না আপু। আমি সিরিয়াসলি প্রশ্ন করেছি তোকে।
আপু একটু ভ্রু-কুচকে আমার দিকে তাকালো,
– আমি তোর সাথে কোন দুঃখে মজা করতে যাবো? আজ সন্ধায় বিয়ে। বাবার কিছু বন্ধু-বান্ধব আসবে আর হয়তো ফুফুরা আসবে। ঘরেয়া ভাবেই বিয়ে হবে।
আমি রাগে পানির গ্লাসটা আছার মারতেই তা টুরো টুকরো হয়ে গেলো। রাগে আপুকে বলে উঠলাম,
– করবো না আমি এই বিয়ে, আমাকে পেয়েছে কি সবাই? যে যা ইচ্ছা তাই ডিসিশন নিবে? আমি তো ভালো করে চিনিও না তাকে। শুধু জানতাম আমার একটা মামাতো ভাই আছে।
হুট করে দরজার সামনে বাবার গলার আওয়াজ ভেষে আসলো।
– হয়েছে কি এখানে? এতো চেচামেচি কিসের?
বাবার উপস্থিতিতে ভয়ে চুপসে গেলাম আমি। চুপচাপ দাড়িয়ে আছি কিছু বলার সাহস পাচ্ছি না। এর মাঝেই আপু বিষয় টা সামলে নিলো,
– না বাবা কিছু হয়নি, হাত থেকে পানির গ্লাস টা পরে গেলো।
বাবা কিছু না বলে চুপচাপ চলে গেলো। আমি আপুর দিকে তাকিয়ে কাঁদু স্বরে বললাম,
– আমি এই বিয়ে করবো না আপু।
বিয়ের জন্য প্রস্তুতি চলছে। সন্ধার পর বিয়ে। রাত টা এখানে থেকে পরদিন সকালে বৌ নিয়ে রওনা দিবে সবাই।
আজ কলেজ থেকে যখন আসছিলাম তখন অনেক প্লেন তৈরি করে ফেলেছিলাম। গ্রীষ্মের বন্ধ দিলো ১৫ দিন। কত প্লেন ছিলো এই ১৫ দিন ঘুরবো ফিরবো আনন্দ উল্লাস করে বেড়াবো। আর বাসায় ঢুকেই এমন হাই বোল্ডেজের শর্ট টা খেলাম।
নিরুপায় হয়ে মায়ের কাছে গেলাম। কিন্তু কেউ আমাকে বিশেষ গুরুত্ব দিলো না। শুধু মামি একবার দুই হাতে ধরে কপালে চুমু দিয়ে বললো,
– আমার লক্ষি বৌ মা।
আমি আবারও নিরুপায় হলাম। কেউ আমায় এতোটা গুরুত্ব দিচ্ছে না। একটুও মনে হচ্ছেনা আমার জন্য এতো আয়োজন।
আসার সময় খাম্বা মহাশয় থুক্কু রিদ ভাইয়ার দিকে আড় চোখে কিছুক্ষন তাকালাম। এটাই তাহলে আমার মামাতো ভাই?
মা একটা লেহেঙ্গা নিয়ে আমার সামনে এসে দাড়ালো। আমি এখনো বসে আছি মুখ গোমড়া করে। মা আমাকে ওয়াশ রুমে নিয়ে গেলো। এর পর আপুকে বললো, গরম পানি নিয়ে আসতে।
এমনিতেও গরম কাল তার উপর আবার গরম পানি। ব্যাপার টা একটু অসহ্যকর মনে হলো আমার কাছে। তবুও কিছু বললাম না। কেমন যেনো একটা ঘোরের মধ্য দিয়ে সময়টা কাটছে আমার। নাকি এটা স্বপ্ন, একটু পর হুট করে ঘুম ভেঙে যাবে। এটাও বুঝতে পারছি না। আজ মনে হচ্ছে সেই এক মাত্র প্রানি, যে কি না কলেজ থেকে আসার পরই বিয়ের পিড়িতে বসতে হবে।
মা আমাকে গোসল করিয়ে দিচ্ছে খুব যত্ন করে। এর আগে শেষ কবে এমন ভাবে গোসল করালো ঠিক মনে নেই তার। হয়তো ছোট কালে। আমি মাকে ধরে ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে দিলাম।
– আমি এই বিয়ে করবো না মা। তুমি আব্বুকে বুঝাও। আমি ভালো করে চিনিও না তাকে। কখনো কথাও হয়নি আমাদের। আর হুট করেই বিয়ে?
– তাতে কি হয়েছে? বিয়ের আগে কি আমি তোর বাবাকে চিনতাম? বিয়ের পরই তো একে অপরকে ভালো করে চিনলাম আমরা।
– তবুও মা, সে কেমন ভালো না খারাপ, রাগি না শান্ত এটাও তো জানিনা আমি। অনন্তত আমায় একটু সময় দিতে তোমরা।
– ওসব নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না, রিদ খুব ভালো ছেলে। যথেষ্ট ঠান্ডা মাথার ছেলে। ঠিক তুই যেমন টা চাস ঠিক তেমন। তা না হলে কি আমরা তোকে না বলে এতো কিছু করতাম? আর পড়ালেখা শেষ করে দেশে ফিরেছে, এখন ভালো ডাক্তারও। তোকে ভালোই রাখবে সে।
– চোখের দেখায় মানুষ চেনা যায় না মা।
মা আর কিছু বললো না। আমাকে লেহেঙ্গা পড়িয়ে আয়নার সামনে বসালো। সবাই আমাকে সাজাতে ব্যাস্ত। আমার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না একটুপর আমার বিয়ে।
আমি আরশি। আর যার সাথে আজ আমার বিয়ে হচ্ছে সে হলো রিদ ভাইয়া। আমার মামাতো ভাই। সেই ছোট বেলায় দেখেছিলাম তাকে। এর পর আর আমাদের বাড়িতে আসেনি। আমি কয়েক বার মামার বাড়িতে গেলেও তাকে দেখতে পাইনি। পড়াশুনা নিয়ে বাইরে ছিলো সে। এতো বছর পর সামনা সামনি দেখার সুজুগ হলো, তাও আবার নিজের বর বেশে।
আজ রিদের ফ্রেন্ড গুলোর মতে এক আকাশ সময়ন দুঃখ। রিদের পিঠে থাপ্পর দিয়ে বললো,
– সালা কোন জায়গায় বিয়ে করতে এলি? একটা শালি নেই তোর? আমাদের কি একটা হক নেই?
খুব সাদামাটা ভাবে বিয়েটা সম্পন্ন হলো আমাদের। এর পর আসলো ঘুমানো নিয়ে দ্বন্দ। কেউ বলছে নতুন বিয়ে করা দম্পত্বি বাড়ি ফেরার পরই ওই বাড়িতেই তাদের প্রথম রাত সম্পন্ন হোক। আবার মা বললো, তার ছোট মেয়ে আর কোনো মেয়ে নেই। বড় মেয়েটারও বিয়ে গেয়ে গেছে। তাই সে চায় আমরা প্রথম রাত টা এই বাড়ি থেকেই শুরু করি।
অবশেষে এই বাড়িতেই আমার রুমটা হালকা ফুল দিয়ে সাজিয়ে দুজনকে থাকার ব্যাবস্থা করে দিলো। আজ আমার বাসর রাত ভাবতেই হাসি কান্না সব একসাথে আসতে গিয়েও তালগোল পাকিয়ে ফেলছে। আমার মতে এটা একটু বেশি বেশি হয়ে গেছে। একে তো হুট করেই বিয়ে দিয়ে দিলো আবার এখন নাকি বাসর ঘরও সাজালো। কেন, একটু সময় নিলে পারতো না তারা?
আমার মনে একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। আর তা হলো, রিদ ভাই কেমন? রাগি নাকি শান্ত? বিষয় টা আগে দেখতে হবে। আমাকে কোনো ভাবেই দুর্বল হওয়া যাবে না। ভাবের উপর থাকতে হবে তার সামনে।
কিছুক্ষন পর রিদের বন্ধুরা তাকে রুমে ঢুকিয়ে দিয়ে বাইরে দিয়ে বন্ধ করে চলে গেলো। মানুষ টা রুমে প্রবেশ করতেই আমার সব সাহস মুহুর্তেই হাওয়া হয়ে গেলো। তবুও বুক ফুলিয়ে একটা নিশ্বাস নিয়ে সাহস সঞ্চয় করলাম।
এরপর সে কাছে আসতেই পট পট করে বলতে লাগলাম,
– দেখুন আপনি আমার সামনে আসবেন না। আমি এসবের জন্য মোটেও প্রস্তুত নই। ফ্যামিলি হুট করেই জোড় করে আমাকে বিয়েটা দিয়েছে। আপনাকে আমি ভালো করে জানিও না। দেখুন প্রেম ভালোবাসা এসব তৈরি হতে সময় লাগে। আর ভালোবাসা ছারা এসব করা সম্ভব না। আমাকে সময় দিতে হবে আপনার। যতদিন লাগে।
কথা গুলো এক নিশ্বাসে বলে তার দিকে তাকালাম, তার রি-একশান দেখার জন্য। কিন্তু সে কিছু বললো না। চুপচাপ আমার পাশে এসে আমার দিকে ঝুকে গেলো। আমি কাঁপা গলায় বললাম,
– এই আপনাকে কি বলেছি শুনতে পান নি? বিয়ে হয়ে গেছে বলে কি যা ইচ্ছে তাই করবেন?
এখনো সে কিছু বললো না। হাত টেনে একটা বালিশ নিয়ে নিলো।
নিচে থাকার জন্য ব্যবস্থা করতে করতে বললো,
– আমার এইসবে কোনো ইন্টারেস্ট নাই। আর যার তার সাথে শুয়ে পড়ার তো কোনো প্রশ্নই আসে না। আর নিজেকে এতোটাও মহান ভাববে না। তুমি তোমার মতো থাকবে। কখনো যদি আমার মন জয় করতে তুমি সক্ষম হও, তাহলে আমার কাছে আশার চেষ্টা করবে। তার আগে না।
তার কথায় আমি যেন তাজ্জব বনে গেলাম। বলে কি এই ছেলে? আমি আরশি তার কাছে যাওয়ার জন্য তার মন জয় করতে হবে? এতোই ঠ্যাকা পরছে আমার? আমার পেছনে এখনো কতো ছেলে লাইন দিয়ে আছে। আর এই ব্যাটা আমাকে কোনো পাত্তাই দিলো না? আজব,,,,,
To be continue,,,,,,,
#অনুভুতিহীন (পর্ব ১)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ