#অনুভূতিহীন (পর্ব ৮)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ
পুরোটা সময় ধরে আমি রিদ ভাইয়ার দিকে হা করে তাকিয়ে ছিলাম। চার দিকে সবাই হাত তালি দিচ্ছে আমি ছারা। আমি তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। আমার এমন বলদের মতো চাহুনিতে মনে হলো খুব আনন্দ হচ্ছে তার। সে একটা হাসি দিয়ে সেখান থেকে উঠে গেলো।
একটু পর তাদের গায়ে হলুদ শুরু হবে। ফাহিম ভাইয়ার সাথে বসা তার হবু বৌ। এতোটা সুন্দরি নয় সে। গায়ের রং শ্যামলা। তবে মুখটা খুব মায়াবি দেখতে।
এই দিনটা অব্দি আসতে অনেক কিছু সহ্য করতে হয়েছে তাদের। ফাহিম ভাইয়ার বাবা কিছুতেই বিয়েতে রাজি হচ্ছিলো না। প্রথম’তো তিনি প্রেম করে বিয়ে বিষয় টা পছন্দ করেনা। আর দ্বিতীয়’তো, মেয়ের গায়ের রং চাপা।
সে চেয়েছিলো তার ছেলের জন্য পরীর মতো একটা মেয়ে নিয়ে আসতে। পরে ফাহিম ভাইয়ার জেদের কাছে হেরে বিয়েতে রাজি হয় তার বাবা।
ওদেরকে হলুদ দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। হটাৎ দেখি রিদ ভাইয়া দেওয়াল ঘেষে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে হা করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। তার এমন চাহোনির অর্থ খুজে পেলাম না আমি। এক প্রকার বিব্রতকর অবস্থায় পরে গেলাম।
এর পর কিছুক্ষন এভাবে তাকিয়ে থেকে তিনি স্বাভাবিক ভাবেই বললো,
– তোমাকে আজ শাড়িতে খুব সুন্দর লাগছে আরশি। ইচ্ছে করছে তোমাকে সামনে দাড় করিয়ে এভাবেই তাকিয়ে থাকি অনন্তকাল।
খুশিতে যেন আজ বাকবাকুম করতে মন চাইছে আমার। কিন্তু নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বললাম,
– আমি জানি শাড়িতে আমায় সুন্দর লাগে। এতোক্ষন পর কেও এসে বলতে হবে না তা।
তাকে একটু রাগ দেখানোর চেষ্টা করলাম। করবো নাই বা কেন? বাড়িতে নিজে গিয়ে তার সামনে অনেক্ষন ঘুরেছি, কিন্তু এভাবে ফিরেও তাকায় নি। আর এখন আসছে পিরিত দেখাতে, হুহ্।
বাসায় যখন সে রেডি হতে বলে বাইরে চলে গেলো, তখন আমি শাড়ি টা নিয়ে চুপচাপ দাড়িয়ে রইলাম।
কারণ কখনো শাড়ি পরা হয়নি আগে। বাসায় যখন কেউ থাকতো না, তখন মায়ের শাড়ি অনেকবার লুকিয়ে লুকিয়ে নিজের সাথে ধরে আয়নায় দেখতাম আমাকে কেমন লাগে। আবার দ্রুত রেখে দিতাম। কারণ হুট করে কেু এই অবস্থায় দেখে ফেলে তাহলে এর চেয়ে লজ্জা আর কিছু হবে না।
লজ্জায় কখনো মা কে বলিনি আমায় শাড়ি পরা শিখিয়ে দাও। তখন যদি শিখে নিতাম তাহলে এখন এভাবে দাড়িয়ে থাকতে হতো না।
আমি অনেক গল্প পড়েছি, যেগুলোতে হিরো এসে হিরোইনকে শাড়ি পড়িয়ে দেয়। আমার বেলায়ও যদি এমন হয়? একটু পর যদি রিদ এসে যদি বলে, দাও আমি পড়িয়ে দিচ্ছি। ভাবতেই লজ্জা পাচ্ছে আমার।
কিন্তু এ লজ্জা বেশিক্ষন থাকলো না এর পর মামি এসে বললো,
– কিরে এভাবে দাড়িয়ে আছিস কেন, শাড়ি পরতে পারিস না?
আমি মাথা নাড়িয়ে বললাম, না মামি।
এর পর মামি একটু হেসে আমায় শাড়ি পরিয়ে দিলো। বললো,
– শাড়ি পরা শিখে নিবি। নতুন বৌ দের শাড়িতেই বেশি সুন্দর লাগে।
আমি বাধ্য মেয়ের মতো মাথা নাড়ালাম।
এর পর যখন শাড়ি পরা শেষ হলো, তখন আয়নার সামনে দাড়িয়ে দেখলাম সত্যিই বেশ লাগছে আমায়। রিদ ভাইয়া ফেরার পর আমি লজ্জায় মাথা নিচু করে ছিলাম। ভেবেছিলাম হয়তো সে প্রশংসা লরবে। কিন্তু আমার সব অনুভুতি মাটির সাথি মিশিয়ে দিয়েছিলো ওই অনুভুতিহিন মানুষ টা। আমার দিকে তাকিয়েও স্বাভাবিক ভাবে নিজে রেডি হতে শুরু করলো। প্রশংসা নামক শব্দটা নেই তার কাছে।
তবে এখন পশংসা টা ভালোই লাগলো। আমার ভাবনার ইতি ঘটলো। তখন দেখলাম রিদ ভাইয়া অলরেডি সকলের সাথে মিলে কেক কাটছে। আর আমাকেও ডাকছে।
আমার রাগ হলো প্রচুর। যখন দেখলাম রিদ ভাইয়ার মেয়ে ফ্রেন্ড টা তার মুখে কেল তুলে দিচ্ছে। খুব হিংসে হচ্ছে আমার। কেন যানি মনে হচ্ছে ওই মেয়েটাকে একটা থাপ্পর মারতে পারলে ভালো লাগতো। কারণ আমি মেয়েটা একটু বেশিই জেলাস। নিজের জিনিসে কারো নজর সহ্য হয় না।
,
,
পর দিন বিয়ে হলো তাদের। বেশি মানুষ নেই। অল্প কয় জন মিলে বিয়েটা শেষ করে বৌ কে বাড়ি নিয়ে এলো। ফাহিম ভাইয়াদের বাড়ি এসে নানান কথা কানে আসছিলো আমার।
কেউ বলছে,
– ছবিতে যেম দেখেছিলাম বাস্তবে এতো সুন্দর না।
আবার কেও বলছে,
– এই মেয়ের জন্যই ফাহিম এতো কিছু করলো? যাই হোক কপালে যে আছে সে ই তো আসবে।
পাশে একজন বললো,
-এই মেয়ে আমাদের ফাহিমকে কিভাবে এতোটা বসে আনলো কে জানে? যে ফাহিমের এই মেয়েকেই লাগবে? এ তো ব্রামন হয়ে চাঁদ ছুয়েছে। জাদু টোনা করলো কিনা তাও সন্দেও।
আমার খুব রাগ হচ্ছে তাদের কথা শুনে। নতুন বৌ এসব শুনলে নিশ্চই অনেক কষ্ট পাবে। মানুষ গুলো এমন কেন?
একটা কালো ছেলে যদি কোনো সুন্দরি মেয়েকে বিয়ে করে, তখন তা সবাই স্বাভাবিক ভাবেই নেয়। বলে, তোমাদের খুব সুন্দর মানিয়েছে। আর যদি কোনো শেমলা মেয়ে ফর্শা ছেলেকে বিয়ে করে, তাহলে সবাই বলে জাদু টোনা করেছে নাকি?
হুম এটাই সমাজ। আমার কিছু বলতে ইচ্ছে হলেও চুপচাপ দাড়িয়ে রইলাম। কারণ এখানে সত্য কিছু বললেও সবাই বলবে, মেয়েটার বয়াবহার ঠিক নেই। বড় দের মুকের উপর কথা বলে। এসব ভেবে চুপ করে রইলাম আমি। আর একটু দুড়েই ফাহিম ভাইয়া আর নিরব ভাইয়ার সাথে দাড়িয়ে তাকতে দেখলাম রিদ ভাইকে। আমি ওদিকে এগিয়ে গেলাম। আমাকে দেখেই নিরব ভাই লজ্জায় চুপচাপ ওখান থেকে চলে গেলো। হয়তো কাল রাতের ঘটনাটার জন্য।
আমার হাসি পাচ্ছে খুব। বেচারা কত জোরেই না চর টা খেলো।
,
,
বিকেলে আমায় বাসায় পৌছে দিয়ে সে চলে গেলো হসপিটালে। আমি সব চেন্জ করে খাটে লম্বা হয়ে শুয়ে পড়লাম। গ্রিষ্মের গরম, অস্থির লাগছে খুব।
মামিকে দেখলাম নিজের রুমে শুয়ে বিশ্রাম নিচ্ছে। বেলনিতে এসে দেখলাম আকাশে ঘেঙ উড়ে বেড়াচ্ছে। গ্রিষ্ম থেকেই বৃষ্ট শুরু হয়। এর পর তো পুরাই বর্ষা কাল।
কেটে গেলো আরো দুদিন। আমার হয়তো যাওয়ার সময় হয়ে গেছে। এই ৮-১০ দিনে মানুষটা খুব কাছের হয়ে গেছে আমার। ওখানে ফিরে গিয়ে থাকতে পারবো কি না জানিনা। তবে এটা জানি, তাকে খুব মিস করবো আমি। খুব বাজে ভাবে মিস করবো।
আজ সন্ধায় মা ফোন দিয়ে বললো, আমার নিয়ে যেতে আসবে। খুশি হওয়ার বিপরিতে কেন যানি মন খারাপ লাগছে আমার। এখন মনে হচ্ছে বাবা মায়ের মতো এখন এটাও আমার একটা ফ্যামিলি।
সন্ধায়ই বাসায় চলে আসলো সে। আমি সেই সন্ধা থেকেই তার আশে পাশে ঘুর ঘুর করছি। হুটহাট ইচ্ছে করছে ওকে গিয়ে জড়িয়ে ধরি। আবার কোনো এক অজানা কারণে নিজেকে বুঝিয়ে থামিয়ে নিই আমি।
রাতে ঘুমানোর সময় তাকে খুব করে বলতে ইচ্ছি হচ্ছে,
– আজ সোফায় না। আমার সাথে একই বিছানায় থাকবেন? আমি আপনার বুকে মাথা রেখে চুপটি মেরে ঘুমি থাকবো।
কিন্তু তাও বলতে পারছি না। চুপচাপ এক কাত হয়ে শুয়ে আছি।
রাত তখন অনেক গভির। আমার চোখে এখনো ঘুম ধরা দিচ্ছে না। বার বার মানুষটার দিকে তাকাচ্ছি। খুব শান্ত হয়ে ঘুমিয়ে আছে সে। কিন্তু তার এই শান্ত ভাব যে আমার মাঝে অশান্তের ঢেউ তুলছে বার বার৷ সেটা কি সে জানে?
আর চেয়ে থাকতে পারলাম না। ওর কাছে চলে গেলাম। পাশে বসে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকলাম তার দিকে। খুব ঘুমাচ্ছে। কেও হয়তো তুলে নিয়ে গেলেও তার হুস থাকবে না। আমি চুপচাপ তার হাত টা সরিয়ে তার বুকের উপর শুয়ে পরলাম। চুপটি মেরে শুয়ে তার হৃদপিন্ডের শব্দ শুনতে লাগলাম। যা হওয়ার হোক। তার বুকে মাথা রেখেই ঘুমাবো আজ।
To be continue,,,,,,
~ খুব তাড়াহুরা করে লিখেছি এই পর্ব। বানান হয়তো কিছু ভুল থাকতে পারে। ভুল ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখার অনুরুধ রইলো।
আমার গ্রুপ লিংক,
https://facebook.com/groups/1140829716492700/?ref=share