#অনুভূতিতে_তুমি
#মিমি_মুসকান
#পর্ব_২
বসার ঘরে সোফায় আধশোয়া অবস্থায় নির্ঝর গুনছে,
“১৮, ১৯ , ২০ ,২১..
নীলিমা নির্ঝরের দিকে একবার তাকিয়ে ডাইনিং টেবিলের কাছে গিয়ে বলে,
“এতো পড়াশোনা করছিস তুই বাহ!
নীলিমার ডাক শুনে নির্ঝর আধশোয়া থেকে উঠে আসন পেতে বসে জিজ্ঞেস করে,
“আচ্ছা মম্ ওই মেয়েটার বয়স কত?
“কোন মেয়ে?
“ওই যে মেহু না মেহের?
“মেহেরিন!
“হুম হুম।
“নিজের হবু বউয়ের নামটা কি মনে রাখতে পারিস না।
“এতো বড় নাম কিভাবে মনে রাখবো। ছোট করে দুই অক্ষরের নাম হলেই তো হতো। এই ধরো মেহু!
“হ্যাঁ তাই তো, তোকে তো আবার হাজার টা মেয়ের নাম মনে রাখতে হয়।
“মম!
“কি?
“বলো না ওর বয়স কত?
“শুনেছি গত মাসে ২৩ এ পা দিল কেন?
“তাহলে পাঁচ বছরের একটা ছেলে থাকলে ওর বয়স তখন হবে হুমম ১৭ তার মানে কি এই মেয়ে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেছিল।
নীলিমা গ্লাসে পানি ঢেলে বলে,
“কি বলছিস এইসব আবোল তাবোল।
নির্ঝর উঠে টেবিলের কাছে এসে একটা আপেল হাতে নিয়ে বলে,
“তোমার হবু বউ মা পালিয়ে গিয়ে একবার বিয়ে করেছিল বুঝলে!
“একদম ফালতু কথা বলবি। আমার বউ মা তোর চেয়ে ভালো। লাখে একটা বুঝলি।
নির্ঝর বিড় বিড় করে বলে,
“হ্যাঁ যখন শুনবে পাঁচ বছরের একটা ছেলে আছে তখন’ই হবে
“এই কি বলছিস তুই বিড় বিড় করে।
“তোমার হবু বউ’র কান্ডকারখানা। খুব মাথায় রাখছো না তাকে।
“নির্ঝর!
“কি মম! আচ্ছা আমাকে এটা বলো তো তুমি তো জানতে না ওর একটা পাঁচ বছরের ছেলে আছে।
“কি? কি বললি তুই!
“মানে? তুমি জানো না ওর একটা ছেলে আছে।
“কার ছেলে?
“মেহুর ছেলে! ওর নিজ ছেলে যাকে নিয়ে সে এখন থাকছে!
মূহুর্তে’ই নীলিমার মুখটা মলিন হয়ে গেল। হাতে থাকা পানির গ্লাস টা ধপ করে পড়ে গেল নিচে। সে বিষ্ময় গলায় বলে উঠল,
“কি বললি তুই! মেহেরিন’র ছেলে!
.
রিদুয়ান চৌধুরী গাড়ি পার্ক করে বাড়িতে সবে ঢুকেছে। নীলিমা বসার ঘরে সোফায় বসে আছে। তার প্রেসার বেড়ে গেছে। ডাক্তার চেকাপ করছে। রিদুয়ান চৌধুরী নীলিমার কাছে বসতেই নীলিমা গরম চোখে তাকাল তার দিকে। নির্ঝর বলে উঠে,
“মম মাথা ঠান্ডা কর, তোমার প্রেসার হাই!
নীলিমা কিছু না বলে মাথা ঠান্ডা করতে লাগল। রিদুয়ান কিছু জিজ্ঞেস করতে গিয়েও করল না। অতঃপর ডাক্তার যাবার পর রিদুয়ান চৌধুরী নীলিমার হাত ধরতেই নীলিমা হুট করেই হাত সরিয়ে ফেলল। নির্ঝর হেসে বলে উঠে,
“আহ গরম ছ্যাক লাগলো।
নীলিমা রেগে বলে,
“তুই চুপ কর!
“আরে আজব তো, অন্যের রাগ আমাকে দেখাচ্ছ কেন?
রিদুয়ান ভ্রু কুঁচকে বলে,
“কার রাগ কিসের রাগ!
নীলিমা বলে উঠে,
“এমন ভাব করছো যেন কিছুই জানো না।
“কি হয়েছে সেটা তো বলবে!
“ওহ এখন আমাকেই তাহলে বলতে হবে কি হয়েছে?
রিদুয়ান নির্ঝরকে উদ্দেশ্য করে বলে,
“আবার তুমি কি করলে?
নির্ঝর হতবাক হয়ে বলে উঠে,
“আমি কি করলাম, আমার উপর কেন দোষ দিচ্ছ? আমি কি বলেছি নাকি এই মেয়ে কে বিয়ে করব!
নীলিমা দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠে,
“নির্ঝর করে নি যা করার নির্ঝরের ড্যাড করেছে।
“সেটাই বলো না কি করেছি।
“কি করেছ? আচ্ছা আমাকে বলো তো আমার ছেলেটার এত বড় ক্ষতি তুমি কিভাবে করলে। ওতো তোমার নিজের ছেলে।
“সেটা তো আমিও জানি। এখন কি ডিএনএ টেস্ট করবো।
“তুমি..
“এই আসল কথা বলো কি হয়েছে? তোমার প্রেসার হাই যখন মাথা ঠান্ডা হবে তখন ঝগড়া করো।
নির্ঝর হেসে নীলিমার কাঁধে হাত রেখে বলে,
“হ্যাঁ মম তুমি আগে মাথা ঠান্ডা করো। তারপর কথা বলো।
নীলিমা নির্ঝরের দিকে একবার তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে রিদুয়ান’র দিকে তাকিয়ে উষ্ণ গলায় বলে,
“মেহেরিন’র একটা ছেলে আছে তুমি জানতে!
নীলিমার কথার উওর না দিয়ে রিদুয়ান চৌধুরী উঠে দাঁড়াল। হাতের ঘড়ি খুলতে খুলতে বলে,
“এই কথা!
“এই কথা! তুমি এই কথা বলছো। শেষমেষ এমন একটা মেয়ের কাছে নিজের ছেলে কে বিয়ে দিবে তুমি!
নির্ঝর রিদুয়ান চৌধুরী আর নীলিমার এমন কথার ধারায় বুঝতে পারল তার বিয়ে ভাঙতে চলেছে। এসব ভেঙে একটা বাঁকা হাসি হাসলো সে। এদিকে রিদুয়ান কথা না বাড়িয়ে ঘরের দিকে চলে গেল। নীলিমাও রিদুয়ান’র পিছনে পিছনে রেগে রেগে ঘরের দিকে গেল। ধপাস করে দরজা আটকানোর শব্দ পেয়ে নির্ঝরের হাসিল রেখা দীর্ঘ হলো। সে এবার নিশ্চিত বিয়ে ভাঙতে চলেছে। সে আস্তে আস্তে দরজার কাছে গিয়ে কান পেতে শুনতে লাগল নীলিমা বলছে,
“তুমি শুনে রাখ আমার কথা, আমি এই মেয়ের সাথে কখনোই আমার ছেলের বিয়ে দিবো না। এমন মেয়েকে বিয়ে করার চেয়ে আমার ছেলে আজীবন কুমার থাকবে সমস্যা নেই। বুঝলে তুমি! কি তুমি কি শুনছো আমার কথা। এই বিয়ে ভেঙে দাও তুমি!
নির্ঝর এইসব কথা শুনে খুশিতে নাচতে লাগলো। এক হাত দিয়ে অন্য হাতের ঘাড়ে বাহবা দিয়ে বলতে লাগলো,
“বাহ নির্ঝর বাহ, তুই তো চুটকি বাজিয়ে বিয়ে ভেঙে দিলি। তাও একদিনে!
অতঃপর আংটির দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে
বলে,
“তোমার মেয়াদ একদিন’ই ছিল গো!
বলেই হেসে দিল তবে আওয়াজ করল না। একটা বিয়ারের বোতল নিয়ে ঘরে এসে লাউড স্পিকারে গান ছাড়ল সে। সে গানের তালে তালে বিছানায় দাঁড়িয়ে লাফাতে লাফাতে লাগলো।
খানিকক্ষণ বাদে দরজার কাছে নীলিমা কে দেখে থামল সে। বিয়ারের বোতল টা রেখে গান বন্ধ করল। নীলিমার কাছে গিয়ে তাকে ধরে ঘুরতে লাগল। ছেলের এমন কর্মকান্ডে চমকে উঠলেন নীলিমা। কোনমতে নির্ঝর কে থামিয়ে বলল,
“ছেলে মানুষী কবে কমবে তোর নির্ঝর, তুই কি এখনো ছোট আসিস।
“মম সব মা বাবা দের কাছে তার ছেলে মেয়েরা ছোট’ই থাকে। আচ্ছা শোন আমি এখন বাইরে যাচ্ছি।
“এতো রাতে কেন?
“বন্ধুদের পার্টি দিতে হবে না।
“কিসের খুশিতে?
নির্ঝর একগাল হেসে বলে,
“আসলে মানে বিয়ে ভেঙেছে এই খুশিতে!
নীলিমা কোমরে হাত রেখে বলে,
“তোকে কে বলল বিয়ে ভাঙছে। তোর বিয়ে হবে আলবাদ হবে।
নির্ঝর ভ্রু কুঁচকে বলে,
“বিয়ে হবে মানে, অন্য মেয়ের সাথে কি তাহলে বিয়ে হবে। মানে তোমরা মেয়ে দেখছো। না মম প্লিজ আমার এখন বিয়ে করার কোন ইচ্ছে নেই। এখন কি আমার বিয়ের বয়স বলো।
নীলিমা হেসে নির্ঝরের শার্টের কলার ঠিক করে বলে,
“না বিয়ে করার না বরং তোর বাচ্চা দের নিয়ে ঘোরার বয়স। তাদের আইসক্রিম খাওয়াবি, মার্কেটে নিয়ে যাবি, পার্কে গিয়ে খেলবি তখন তো বুঝতে পারবি একজন বাবার কর্তব্য!
“কি বলছো মম এইসব।
“যা বলছি ঠিক বলছি। তোর বিয়ে আমার মেহেরিন মা’র সাথেই হবে ঠিক আছে , আর বিয়ের আগে ছেলেদের রাত বেরাতে বাইরে যেতে নেই। তাই তুইও এখন যাবি না বুঝলি ঘরেই থাকবি।
“বিয়ে হবে মানে, তুমি না একটু আগে বললে বিয়ে ভেঙে দিবে। এই বিয়ে হতে দিবে না।
“বলেছিলাম!
“হ্যাঁ আমি নিজের কানে শুনেছি!
“হতে পারে, কিন্তু এখন মত পাল্টে ফেলেছি। আমার বাড়ির বউ মেহেরিন হবে।
“মম আমি না তোমার নিজের ছেলে।
“সতীনের ছেলে হলেও ওর সাথেই তোর বিয়ে দিতাম।
“মম আমি বিয়ে করব না।
“করবি করবি…
বলেই ঘর থেকে বের হতে নিল নীলিমা। পেছন থেকে নির্ঝর বলছে,
“মম তুমি আর ড্যাড কিন্তু এসব ঠিক করছো না। আমি বলছি বিয়ে করবো না এই মেয়ে কে। তুমি তোমার ছেলের জীবনটা এভাবে নষ্ট করে দেবে।
নীলিমা কিছু না বলেই চলে যেতে লাগল। নির্ঝর বলে উঠে,
“বিয়ের রাতে কিন্তু আমি পালিয়ে যাবো বলে দিলাম।
নীলিমা পিছনে না ঘুরেই বলে,
“ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেব।
“মম এটা ঠিক না।
নীলিমা পিছনে ঘুরে বলে,
তোমার বিয়ে মেহেরিন’র সাথেই হবে। আর হ্যাঁ তোমার ছেলের নাম হলো অর্ণব! বাহ নামটা কিন্তু বেশ। নীলিমার গ্রান্ডসন অর্ণব!
“এই মেহেরিন তোমার মাথা খেয়ে নিয়েছে!
বলেই ধপাস করে দরজা বন্ধ করে দিল। বিয়ার নিয়ে বিন ব্যাগে বসে রইল। হুট করেই ফোনটা বেজে উঠলো। তাকিয়ে দেখে কথার নাম্বার। ইচ্ছে করেই উঠালো না তবে কাটলোও না। কেটে দিলে হাজারো কাহিনী করবে। তার চেয়ে বরং বাজতে থাকুক। ফোনের রিংটোন শুনতে খারাপ লাগছে না। কিছুক্ষণ বাজার পর’ই থেমে গেল। নির্ঝর উঁকি দিয়ে তাকিয়ে বলে,
“১ , ২ ,৩ ….
আবারো বাজতে লাগাল। কথা’ই কল করেছে আবারো। নির্ঝর এবার রিংটোন’র তালে তালে মাথা নাড়ছে আর বিয়ার খাচ্ছে। নিজেকে পাগল পাগল লাগছে। উফ এই মেহু মেয়েটা পাগল করে ছাড়বে তাকে। কয়েকবার বাজল ফোন কিন্তু নির্ঝর ফোন তুলল না। এরপর’ই মেসেজ’র রিংটোন বাজতে লাগাল। টুং টুং শব্দ হয়েই যাচ্ছে। কথা এক নাগাড়ে মেসেজ দিচ্ছে। দেক তার কি! নির্ঝর একবার চোখ বুলিয়ে দেখল কথার মেসেজ স্কিনে ভেসে উঠেছে। নির্ঝর ফোনটা হাতে তুলে দেখল তাতে লেখা,
“কথা বলতে চাই তোমার সাথে প্লিজ কলটা ধরো!
নির্ঝর বাঁকা হেসে ফোনটা যেখানে ছিল সেখানেই রেখে দিল। তার বেশ মজা লাগে মেয়েরা এভাবে তার পিছনে ঘুরলে। তার জন্য কষ্ট পেল। কেন জানি খুব আনন্দ পায় সে। আজও পাচ্ছে। সে চোখ বন্ধ ধরে বসে রইল। মেসেজ বা কল কিছুই আসছে না। কি হলো কথা কি তাহলে হাঁফিয়ে উঠল। কিন্তু নির্ঝর হাঁফিয়ে উঠি নি। ভেবেছিল আরো কয়েকবার মেসেজ করবে সে!
হুট করেই কল বেজে উঠলো। নির্ঝর আবারো বাঁকা হেসে ফোনের দিকে তাকাল। নিশ্চিত কথা ধৈর্য্য হারিয়ে আবারো কল করছে। তার অবশ্য বেশ মজাই লাগছে। কিন্তু না! এবারের কল কথা করে নি। ফোনের স্কিনে বেব নামটা ভেসে উঠলো। নির্ঝর কলটা রিসিভ করার উদ্দেশ্যে ফোনটা হাতে নিল। এটা অনামিকার কল।
অনামিকা হলো সেই মেয়ে যে কি না সুন্দরী মেয়েদের তালিকা থাকলে ২ – ৫ এর মধ্যে থাকতো বলে নির্ঝরের ধারনা। নির্ঝর আজ পর্যন্ত কোন মেয়েকেই সুন্দরী মেয়ের তালিকায় ১ দেই নি। কখনো দিবে কি না তাও ভাবি নি। যত সুন্দরী হোক না কেন কিন্তু তার কাছে মনে হয় সে ১ এ থাকবার যোগ্যতা নেই। আচ্ছা এই তালিকার মাঝে মেহু কে কি আনবে। তাকে আনলে কত নাম্বারে দিবি সে! সে না হয় পরে ভাবা যাবে এখন অনামিকার কল তুলতে হবে। এই মেয়েটা একটু বেশিই চালাক। তবে তার থেকে না। কিন্তু মেহু কে তার নিজ থেকে একটু বেশিই চালাক বলে মনে হয়।
“হ্যালো বেব!
“রাখো তোমার বেব, কল রিসিভ করতে এতোক্ষণ লাগে।
“লাগে লাগে ফোনের কাছে না থাকলে লাগে।
“তা ফোনের কাছে না থেকে কার কাছে ছিলে? নিজের হবু বউয়ের কাছে।
“সেটা কিভাবে হবে? তুমি তো আমার কাছেই নেই।
“ধান্দাবাজি ছাড়ো। আমাকে তো বলেছিলে বাবা জোর করে নাকি কথা’র সাথে তোমার এনগেজমেন্ট করিয়ে দিচ্ছে! তুমি বলেছিলে কিছুদিন তোমাকে সময় দিতে তাহলে এই এনগেজমেন্ট হবার পর ও তুমি তা ভেঙ্গে ফেলবে।
“হ্যাঁ বেব। আমি তো তোমাকে এখনো তাই বলছি!
“তুমি মিথ্যে বলছো। এনগেজমেন্ট তো কথার সাথে হয় নি। হয়েছে মেহেরিন বর্ষা খান’র সাথে
“সে যার সাথেই হোক না কেন আমি ভেঙে ফেলবো।
“নির্ঝর এটা কাঁচ না যে ফেলে দিবে আর ভেঙে যাবে।
“বেব! তোমার আর আমার মাঝে যা আসবে সেসব দেওয়াল না কাঁচ’ই হবে।
“তবে এই কাঁচ মেহেরিন বর্ষা খান। তুমি ভেঙ্গে ফেললেও তার উপর হাঁটতে পারবে না । তার আগেই তোমার পায়ে ঢুকে ছিন্নভিন্ন করে দিবে তোমায়।
“একটু বেশিই জানো দেখছি ওই মেয়ের ব্যাপারে।
“জানা লাগবে! কারন আমাদের ব্যবসায়িক সম্পর্ক আছে তার সম্পর্কে! আমার বাবা’র সাথে যত’ই ভালো সম্পর্ক থাকূক না কেন আমার বাবা তবুও তাকে ভয় পায়। যখন তখন কোন কিছু করে ফেলতে পারে এই মেয়ে!
“বেব! ভালো লাগছে না আর আমার। সত্যি একটুও ভালো লাগছে না। সারাদিন এই মেয়ের ঘ্যান ঘ্যান আমি অতিষ্ট! দয়াকরে তুমি চুপ করো।
“তো কি শুনতে চাইছো তুমি!
“আই লাভ ইউ!
ওপাশ থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস’র শব্দ হলো। নির্ঝর অপেক্ষায় আছে অনামিকার গলার স্বর শোনার জন্য। অবশেষে ওপাশ থেকে উওর এলো,
“নির্ঝর! আই ওয়ান্ট টু ব্রেকআপ উইথ ইউ
“ওয়াট! আর ইউ ক্রেজি!
“না আমি ঠিক’ই আছি।
“তাহলে, তাহলে ব্রেকাপ কেন করতে চাইছো।
“কারন মেহেরিন বর্ষা খান’র সাথে আমি পারবো না।
“আরে বেব তুমি শোন তো আমার কথা।
ওপাশ থেকে ততোক্ষণে কল কেটে গেছে। নির্ঝরের কানে কল কেটে যাবার শব্দ হলো। তবুও সে ডেকেই যাচ্ছে,
“বেব! বেব শোন!
নির্ঝর বিরক্ত হয়ে বলে উঠল,
“ধ্যাত!
এর মাঝেই ফোন আবারো বেজে উঠলো। অনামিকা কল করেছে ভেবে নির্ঝর দ্রুত রিসিভ করে কানে দিয়ে বলল,
“বেব, বেব আমার কথাটা একবার শোন..
“কেউ কল করলে আগে চেক করে কল রিসিভ করতে হয় মিঃ নির্ঝর! এটা কি আপনি জানেন না!
“কে?
“আর যেই হই না কেন আপনার বেব না।
“মেহু…
“বাহ চিনতে পেরেছেন। এতোটা তাড়াতাড়ি চিনবেন আশা করি নি। অনেক মেয়ের সাথে কথা বলার কারনে গলার স্বর একটু এদিক ওদিক হবে ভেবেছিলাম।
“কি জন্য ফোন করেছ তাই বলো!
“আগামীকাল এসে আমার সাথে একবার দেখা করবেন।
“কেন?
“নিশ্চিত দরকার আছে তাই।
“বাসার অ্যাড্রেস দাও!
“বাসার না অফিসের দিচ্ছি, একটু পরেই মেসেজ চেক করবেন। আগামীকাল সকাল ১১ টায় এসে দেখা করবেন। ঠিক সকাল ১১ টায়।
“দেরি হলে?
“তখন না হয় দেখে নিবেন!
নির্ঝর কিছু বলতে যাবে টুং টুং শব্দ হলো। লাইন আবারো কেটে গেছে। নির্ঝরের খুব রাগ হচ্ছে। এমনটা কখনো হয় না তার সাথে। আজ পর্যন্ত কোন মেয়ে তার কল এভাবে কাটে নি। আজ প্রথমদিন এটা হলো। তাও দু দুবার। এসবের জন্য মেহেরিন কেই দায়ী করছে সে। মাথা গরম হচ্ছে। মাথা ঠান্ডা করার জন্য কিছুক্ষণের জন্য চোখ বন্ধ করল।
অতঃপর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মেঝেতে শুয়ে পড়ল সে। চোখ বন্ধ করে উষ্ণ কন্ঠে বলে উঠল,
“এই মেহু আমার জীবনে আসতে না আসতেই সব কিছু নষ্ট করে দিচ্ছে। মনে হচ্ছে কোন ঝড় এসে আমার সাজানো জিনিস এলোমেলো করে দিচ্ছে। আর যাই হোক এই মেহু কে আই ছাড়বো না। নির্ঝর চৌধুরী মেঘ কখনো কারো ঋণ রাখে না। শোধে আসলে সমস্ত কিছু ফেরত দেবো তোমায়। আই প্রমিস ইউ দ্যাট মেহেরিন বর্ষা খান! তুমি আমায় যা দিয়েছ তার দ্বিগুণ পাবে তুমি!
ফোনে আবারো টুং টুং শব্দ। মেহেরিন মেসেজ দিয়েছে তাকে।
#চলবে….