#অনুভূতিতে_তুমি 💖
#মিমি_মুসকান
#পর্ব_৫
নির্ঝর চোখের পাতা ফেলে ফেলে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে পেপারের দিকে। পেপারের ঠিক নিচে এক কোনে লেখা আছে সিগনেচার। নির্ঝর কে সেখানেই সাইন করতে হবে। এখানে সাইন করলেই তার আর মেহেরিন ‘র বিয়েটা একটা ডিল হিসেবে ঠিক হবে। কি করা উচিত তার? সাইন করবে ডিল টা নাকি রেখে দিবে। আচ্ছা রেখে দিবে কেন? আর যাই হোক ঘর সংসার নিয়ে সারাজীবন পার করার ছেলে সে না। তার দরকার নিত্য নতুন সঙ্গী!
মেহেরিন ঠিক’ই বলেছে, এখানে সাইন করলে তার ক্ষতি না বরং লাভ’ই হবে। এখন তার স্বাধীনতায় তার মা আর বাবা হস্তক্ষেপ করছে কিন্তু ঠিক ১ বছর পর মেহেরিন চলে গেলে তখন আর সেটা পারবে না। নিজের ইচ্ছে মতো চলতে পারবে সে। আর বেশি কিছু না ভেবে কলমটা ধরে সাইন করে ফেলল সে। অতঃপর পেপার টা নিয়ে আলমারিতে রেখে দিল। কাল গিয়ে দিয়ে আসবে মেহেরিন কে।
.
ল্যাপটবে বসে কাজ করছিল মেহেরিন। হুট করেই একটা নৌটিফিকেশন এলো। মেহেরিন সেটা ক্লিক করতেই ফেসবুক অন হলো। স্কিনে ভেসে উঠলো একটা ছবি। ছবি টা দেখেই বুক টা মোচড় দিয়ে উঠলো। ঘন ঘন শ্বাস নিচ্ছে সে। ছবি টা গত বছরের কক্সবাজারে সমুদ্রে তোলা। সূর্য যেন ডুবে ডুবে। প্রিয় মানুষটির হাত ধরে সেই দৃশ্য দেখছিল সে। সাগরের ঢেউ টা ছিল স্থির মনে হচ্ছে আজও সেটা তেমন’ই আছে। যার হাতে হাত রাখলে একসময় শান্তি’র অনুভব করতে ঠিক ততোখানি কষ্ট এই ছবি টা দেখে হচ্ছে। কিন্তু এই ছবি এখানে এলো কি করে। সব তো শেষ করে দিয়েছিল সে সব কিছু। কিছুই রাখেনি। রাখেনি কতোকিছুর অস্তিত্ব কে তাহলে এটা। পরক্ষনেই চোখ পড়ল এটা তার ফেসবুকের স্টোরির ছবি। এক বছর পূর্তি হবার কারনে আবারো এটা এসেছে।
মেহেরিন’র মনে পড়ল এইদিনে ঠিক এই সময়ে সেদিন তার সাথে ছিল সে। খোলা আকাশের নিচে তার হাত ধরে প্রতিজ্ঞা করেছিল কখনো যাবে না তাকে ছেড়ে। একা ফেলে রাখবে না তাকে। কিন্তু এসব তো মিথ্যে ছিল। মিথ্যে ছিল বলেই তার হাত ছেড়ে দিল সে। মাঝপথেই হাত ছেড়ে দিয়ে চলে গেল অন্য কারোর জন্য। একবারো জানানোর প্রয়োজন মনে করল না। না বলেই ধরল অন্য কারোর হাত।
মেহেরিন’র দু চোখ ছলছল করছে অশ্রুতে। কাঁপা কাঁপা হাতে ছবি টা স্পর্শ করতে চাইছে সে। অমনি কানে ভেসে আসলো ছোট বাচ্চাটার নরম স্বর। মাম্মি মাম্মি করতে করতে তার কাছেই আসছে সে। দ্রুত ল্যাপটব বন্ধ করে নিজেকে সামলালো সে। এক অফুরন্ত হাসি নিয়ে এলো ঠোঁটের কোনে। অর্ণব কে দেখে যেন সেই হাসির রেখা আরো বড় হলো। কোলে তুলে নিল তাকে। জড়িয়ে ধরল শক্ত ধরে। মনে হলো তার জীবন ফিরে পেয়েছে। হ্যাঁ এটাই হচ্ছে তার গন্তব্য, তার জীবন! এই কারনেই সে বেঁচে আছে এখন অবদি!
.
নির্ঝর এসে বসে আছে মেহেরিন’র সামনে। তার সামনে খানিকক্ষণ আগেই একটা কফির মগ রাখা হয়েছে। গরম কফির মগ থেকে ধোঁয়া উড়ছে। তার সামনে থাকা মেয়েটার নজর হচ্ছে ল্যাপটবে। কখন থেকে হাত দিয়ে এটা টিপেই যাচ্ছে। হাতের আঙুল কি ব্যাথা করে না। অদ্ভুত করার বিষয় ছিল তার মুখের কোথাও এতটুকু বিরক্ত’র ছাপ নেই। যেন অক্লান্ত পরিশ্রম করতে পারে এই মেয়ে টা। তবে নির্ঝর বেশ বিরক্ত হচ্ছে। আজ সে ঠিক সময় আসে নি তা না। আসলে তাকে বলাই হয় নি কখন আসবে তাই হঠাৎ করেই এসে উপস্থিত। ভেবছিল যেভাবে হঠাৎ করে এসেছে সেভাবেই চলে যাবে কিন্তু না তা হচ্ছে না। আজও মেহেরিন বসিয়ে রেখেছে তাকে। এতো মনোযোগ দিয়ে কাজ করছে তাই কিছু বলতেও পারছে না।
নির্ঝর চোখ বুলালো মেহেরিন’র কেবিনে। মেহেরিন’র কেবিন টা খুব সুন্দর সাজানো গোছানো তার সাথে বেশ নিরব। আর নিরব বলেই নির্ঝরের থাকতে অসুবিধা হচ্ছে। নির্ঝর নিরব থাকতে পারে না। তাই চাই হইচই! শেষ কবে নিজের ড্যাডির কেবিনে গিয়েছিল তার মনে নেই। তবে নিশ্চিত সেটা মেহেরিন’র কেবিনের মতো সুন্দর হতো না। এই মেয়ের রুচিবোধ বেশ ভালো বলা যায়। খান কোম্পানির একমাত্র ওনার এখন এই মেয়ে এটা ভাবতেও অবাক লাগে। মেহেরিন’র দুই প্রজন্ম ধরে নিয়ে যাচ্ছে এই কোম্পানির দায়িত্ব। শেষমেষ এখন এসে পড়েছে এই মেয়েটার কাঁধে। মেয়েটাও বেশ ভালো ভাবেই ধরে রেখেছে তার নাম! কোনো আঁচ লাগতে দেই নি এখন অবদি!
মেহেরিন কাজ শেষ করে সামনে তাকাতেই দেখে নির্ঝর তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মেহেরিন ভ্রু কুঁচকে বলে উঠে,
“এতো মনোযোগ দিয়ে আমাকে দেখলেও বুঝতে পারবেন না নির্ঝর!
নির্ঝর একটু নড়েচড়ে বসল। মেহেরিন’র থেকে চোখ সরিয়ে কফির মগ টা হাতে নিল। তাতে চুমুক দিয়ে বলে উঠে,
“তোমাকে আমি যতটুকু বুঝেছি মনে হয় আমার জন্য ততোটুকুই যথেষ্ট!
“তা কি বুঝলেন আমার সম্পর্কে?
“হুম এটাই যে তোমারে মাঝে অনেক রহস্য আছে। একটা রহস্যময়ী তুমি।
” তো রহস্য উদঘাটন করলেন না।
“রহস্য উদঘাটন করে আমার কোন লাভ নেই আর যে কাজে লাভ নেই সে কাজ আমি করি না।
“সেটা আমি জানি। নির্ঝর চৌধুরী নিজের প্রোফিট ছাড়া কিছু বুঝে না। এটা শুধু নির্ঝর চৌধুরী না সবাই, প্রত্যেক মানুষ নিজের স্বার্থ টাই বড় করে দেখে। তো পেপার এনেছেন, আমার মনে হয় আপনি পেপার এ সাইন করেছেন।
“এমন মনে হবার কারন?
“ওই যে বললাম প্রোফিট!
নির্ঝর পেপার টা এগিয়ে মেহেরিন’র হাতে দিল। মেহেরিন পেপারে একবার চোখ বুলিয়ে আরেকটা পেপার বের করল। সেটাও এনে রাখল নির্ঝরের সামনে। নির্ঝর জিজ্ঞেস করল,
“আবার কিসের ডিল?
“এটা কোন ডিল টা, যাস্ট আপনার জন্য একটা উপহার।
“মানে?
“চেক ইট!
নির্ঝর পেপার খানা হাতে উঠিয়ে দেখতে লাগল। খান বাড়ি এখন তার নামে। ব্যাপারটা হজম হচ্ছে না তার। মেহেরিন কে কিছু জিজ্ঞেস করবে তার আগেই মেহেরিন বলল,
“বিয়ের পর আমি আমার বাড়িতেই থাকবো। এখন নিয়ম হিসেবে বরের বাড়ি থাকা উচিত তো আমার এই বাড়ি টা আমি আপনার নামে করছি। সেই দিক দিয়ে হিসেব করলে আমি বরের বাড়ি’ই থাকছি।
নির্ঝর হেসে পেপার টা টেবিলে রেখে বলে উঠে,
“তুমি হয়তো জানো না, ছেলের বউ আসবে শুনে আমার মা কি কি করছে? আর তুমি বলছ বাড়িতেই যাবে না।
“যে ছেলের বউ এক বছর পর’ই বাড়ি থেকে চলে যাবে তার জন্য এতো তোড়জোড়?
মেহেরিন’র এমন কথায় নির্ঝর বেশ বিরক্ত হলো। বিরক্ত চোখে তাকাল মেহেরিন’র দিকে। মেহেরিন হেসে বলল,
“থাক বাদ দিন এই ব্যাপার টাও আমি দেখে নেবো। তো আরেক কাপ কফি খাবেন।
“না আমি এখন উঠবো।
“হুম ঠিক আছে!
নির্ঝর উঠেছে বাইরে যাবার জন্য, ঠিক তখনই দরজা খোলার শব্দে এলো। নির্ঝর পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখে অর্ণ আসছে। নির্ঝর একটু অবাক হলো। মেহেরিন হেসে বলল,
“অর্ণ সোনা!
অর্ণব দৌড়ে এলো মেহেরিন’র কাছে। জরিয়ে ধরল তাকে। ডঃ রাহেলা ইতিমধ্যে ঘরে প্রবেশ করল। মেহেরিন আর নির্ঝর কে দেখে একগাল হেসে বলেন,
“আমি তাহলে আজ আসি মেহেরিন।
“জ্বি!
ডঃ রাহেলা যেতেই মেহেরিন অর্ণবের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
“দিন কেমন কাটল তোমার!
“ভালো!
নির্ঝরের কাছে এতোক্ষণে সবটা পরিষ্কার হলো। নির্ঝর বলে উঠে,
“অর্ণ!
অর্ণব এতোক্ষণে খেয়াল করে নির্ঝর কে। তাকে দেখে দৌড়ে নির্ঝরের কাছে গিয়ে বলে,
“ড্যাডি!
নির্ঝর অবাক হয়েই হাঁটু গেড়ে বসে অর্ণবের মাথায় হাত বুলিয়ে মেহেরিন’র দিকে তাকায়। মেহেরিন পিএ কে কল করে বলে আসতে। সে আসতেই মেহেরিন অর্ণব কে বলে,
“মাম্মি একটু কাজ করবে ততোক্ষণ তুমি আন্টি’র সাথে খেলো ঠিক আছে।
অর্ণব মাথা নেড়ে পিএ হাত ধরে চলে যায়। তার আগে নির্ঝর কে টাটা দেয়। নির্ঝর ও হেসে হাত দোলায়। অর্ণব যেতেই মেহেরিন’র দিকে তাকিয়ে বলে,
“এটাই তোমার ছেলে অর্ণব!
“হুম!
“তুমি তোমার ছেলে কে শিখিয়ে দিয়েছ আমাকে ড্যাডি বলে ডাকতে।
“না।
“তাহলে…
“ও নিজে থেকেই ডাকে।
“এটা কোন ভাবেই হয় না মেহেরিন। বাচ্চা কে না শিখিয়ে দিলে সে কখনো অন্য জনকে ড্যাডি ডাকে না।
“অর্ণব আর পাঁচ টা বাচ্চার মতো না নির্ঝর, ও সবার থেকে আলাদা।
“মানে!
মেহেরিন চেয়ারে বসে বলে,
“অর্ণব আর বাকি বাচ্চাদের মতো না, তার মানসিক গ্রোথ সবার মতো না। ও মানসিক ভাবে খুব দুর্বল।
“তাহলে আমাকে কেন ড্যাডি বলে ডাকে?
“সেটা আমি জানি না। তবে আমি ওকে বলি নি।
“আমার কাছে সবটা গুলিয়ে যাচ্ছে।
“গোলাবেন না। আমি বলবো এইসব নিয়ে ভাববেন না। আর দেরি করে হলেও কয়েকদিন পর অর্ণবও আপনার সন্তান হবে তাও ১ বছরের জন্যই!
মেহেরিন’র কথা শুনে নির্ঝর ভারী বিরক্ত হলো। সে উঠে দাঁড়াল। কিছু না বলেই বের হয়ে গেল। তার মনে হলো তার নিঃশ্বাস যেন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বাইরে এসে খোলা আকাশের নিচে শ্বাস নিল সে।
নির্ঝর চলে যেতেই মেহেরিন এক দীর্ঘ শ্বাস ফেলল। সামনে তাকিয়ে দেখল একটা ফ্রেমে তার আর অর্ণবের ছবি। অর্ণব কে কোলে নিয়ে বসে আছে সে। অর্ণবের মুখে স্নিগ্ধ হাসি। মেহেরিন ছবি টাকে হাতে নিল। সে জানে নির্ঝর এখন কি ভাবছে। এটা কারো পক্ষেই সম্ভব না অন্যের বাচ্চা কে নিজের বাচ্চার চোখে দেখা। কিন্তু অর্ণব নির্ঝর কে নিজের বাবা’র জায়গা দিয়েছে। এখন নির্ঝরের প্রতিক্রিয়া কি হবে সে জানে না। নির্ঝর মানিয়ে নিতে পারবে তো তার অর্ণব কে। না পারলে নিতে হবে। সে সবকিছুই দিচ্ছে নির্ঝর কে। এরপরও কেন মানিয়ে নিবে না সে?
নির্ঝর খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। কখনো ভাবে নি অন্যের বাচ্চা তাকে ড্যাডি বলে ডাকবে। গতকাল ডাকলেও সে নিছক মজা বলে ভেবে নিয়েছে। সে জানতো’ই না এটা মেহেরিন’র ছেলে অর্ণব! এইবার যখন অর্ণব তাকে ড্যাডি বলে ডাকলো এতে নির্ঝরের বেশ বিরক্ত লাগছে। তার নিজের কোন সন্তান নেই বউ বাচ্চা নেই কয়েকদিন পর বিয়ে করবে তাকে কেউ ড্যাডি বলে ডাকলে ব্যাপারটা বেশ বিরক্তিকর! অস্বস্তি লাগছে তার!
নির্ঝর গায়ের জ্যাকেট টা খুলে ফেলল। বেশ গরম লাগছে তার। তার শরীরে কালো রঙের একটা টি শার্ট। সেটা নাড়িয়ে যাচ্ছে সে। গাড়ির ভেতর ঢুকে গাড়ি স্টার্ট দিল। এখন তার মাথা গরম হয়ে আছে। আপাতত কিছু একটা না করলে সে শান্ত হবে না।
.
নির্ঝর গাড়ি নিয়ে সোজা গেল তার বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে। এখন তারাই পারে তার মন ভালো করতে। সবাই একে একে গল্প করছে। এর মাঝে নির্ঝর শুধু বিয়ারে চুমুক দিচ্ছে আর ভাবছে। ড্যাডি ডাকটা যেন তার শরীরে কাঁটার মতো বিঁধছে। চোখ বন্ধ করতেই অর্ণবের মুখটা ভেসে উঠে। পরক্ষনেই তার শরীর শান্ত হলো। বোধ হলো কি করছে সে? একটা নিষ্পাপ বাচ্চার উপর রাগ করছে। এটা কি ঠিক, কোন মানুষের পক্ষে সম্ভব না একটা বাচ্চার প্রতি রাগ হওয়ার। একজন অমানুষ’ই পারে কিন্তু সে তো আর অমানুষ না। এরকম মানসিক যন্ত্রণা নিতে নিতে এখন ক্লান্ত সে। টেবিলের উপর মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে দীর্ঘশ্বাস নিল সে। তার শরীর ছেড়ে দিয়েছে। কেমন এক শান্তির অনুভব করছে। এতোক্ষণের অস্থিরতা যেন এখন কাটল।
নির্ঝরের এক্স গার্লফ্রেন্ড তমা এলো হুট করেই। নির্ঝর এখনো আগের অবস্থায়। সে এসেই নির্ঝরের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
“হ্যান্ডসামের আজ কি হলো?
ফরহাদ বলে উঠে,
“কিছুই না, হবু বউয়ের সাথে দেখা করে এসেছে।
ঈশান বলে উঠে,
“ভাবী নিশ্চিত ঝাড়ছে ওকে।
আরিফ বলে উঠে,
“ঝাড়ছে না অন্য কিছু কিভাবে বলবো?
তমা ন্যাকামি করে বলে উঠে,
“এটা তুমি কি করলে নির্ঝর,আমি চাইলাম তোমায় বিয়ে করতে আর শেষ মেষ কিনা তুমি মেহেরিন বর্ষা খান কে বিয়ে করছো। এটা কি ঠিক?
তার কথা বলার ভঙ্গিতে হেসে উঠলো চারপাশ! নির্ঝর এখনো আগের অবস্থায়। শুধু ফরহাদ তাকিয়ে আছে তার দিকে। সে হাসছে না। ফরহাদের চোখ পড়ল, অনামিকা ঢুকছে। ঈশান বলে উঠে,
“আরে অনামিকা!
অনামিকার নাম শুনে মাথা তুলে নির্ঝর। তাকিয়ে দেখে অনামিকা আসছে। তার সাথে একটা ছেলে তার হাত ধরেই আসছে সে। বেশ সেজেগুজে এসেছে। নির্ঝর একটা জিনিস খেয়াল করে হেসে দিল আর তা হলো অনামিকা তার দেওয়া উপরের ড্রেস টা পড়ে এসেছে তার নিউ বয়ফ্রেন্ড’র সাথে ঘুরতে। তমা ঢং করে বলে,
“মনে হচ্ছে পুরান প্রেম জেগে উঠেছে।
আরিফ বলে উঠে,
“পিরিতি কাঁঠালের আঠা লাগলে পড়ে ছাড়ে না….
হো হো হেসে উঠে চারদিক। নির্ঝর তমা’র দিকে এবার তাকায়। তমা বলে উঠে,
“বাহ এতোক্ষনে আমার দিকে চোখ পড়ল।
নির্ঝর একটু জোরেই বলে,
“আমার হবু বউ কে দেখার পর অন্য মেয়েদের উপর বিশেষ একটা নজর পরে না।
কথাটা উপস্থিত সবার কানেই গেল। অনামিকাও বাদ পড়ে নি। অনামিকা একটা ড্রিক’র গ্লাস হাতে নিয়ে সামনে ফিরল। চোখ পড়ল নির্ঝরের উপর। অনামিকার নতুন বয়ফ্রেন্ড তার কানে ফিসফিসিয়ে বলল,
“নির্ঝর তোমাকে জ্বালানোর জন্য এসব বলছে। তুমি ওর কথায় কান দিও না।
বলেই অনামিকাকে হাত ধরল। নির্ঝরের চোখ থেকে এটা আড়াল হলো না। সে ভ্রু নাচিয়ে বিয়ারের বোতল মুখে দিল। কিন্তু বিয়ার শেষ। নির্ঝর খুব জোরে ওয়েটার কে বলল আরেক বোতল বিয়ার দিতে। অনামিকা হেসে তার বয়ফ্রেন্ড’র হাত ছেড়ে নির্ঝরের দিকে এলো। তার হাতের গ্লাস সেখানে রেখে নির্ঝরের দিকে তাকাল। অতঃপর সবার উদ্দেশ্যে বলে উঠে,
“নির্ঝরের হবু বউ যে সুন্দরী সেটা তো শুধু সে জানলে হবে না, তাই না গাইস!
চারদিক থেকে সবার চিৎকার শোনা গেল। সবাই চাইছে নির্ঝর যেন তার হবু বউয়ের সাথে সবাইকে পরিচয় করিয়ে দেয়। নির্ঝর উঠে অনামিকার একটু কাছে গিয়ে বলল,
“সুন্দর জিনিস একা দেখার মজাই আলাদা কিন্তু.. বলেই একটা বাঁকা হাসি দিল। অতঃপর অনামিকার হাত থেকে ড্রিক’র গ্লাস টা নিয়ে সবার উদ্দেশ্যে বলল,
“আগামী রবিবার সবাইকে আমার তরফ থেকে ট্রিট। যেখানে আমার হবু বউ মানে জানেমান উপস্থিত থাকবে। সবাইকে দেখাব সেদিন। ( অনামিকার দিকে তাকিয়ে )
অনামিকার বয়ফ্রেন্ড এসে অনামিকা’র হাত ধরে তাকে একটু দূরে নিয়ে গেল। চারদিক থেকে হাততালির আওয়াজ। ফরহাদ, ঈশান আরিফ তিন জন’ই বেশ অবাক। নির্ঝর গ্লাসে চুমুক দিয়ে বের হয়ে এলো ক্লাব থেকে। তার পিছন পিছন ফরহাদ, ঈশান আর আরিফ। তিনজন’ই নির্ঝর কে ঘিরে ধরল। নির্ঝর ভ্রু কুঁচকে ৩ জনের দিকে তাকিয়ে বলল,
“এভাবে আমার পথ আটকে দাঁড়িয়ে আছিস যে?
“তুই কি পাগল হলি?
“কেন পাগল হবো কেন?
ঈশান বলে উঠে,
“তুই ভাবি কে আনবি তাও এখানে?
“হ্যাঁ তো!
ফরহাদ বলে উঠে,
“তুই বুঝতে পারছিস না অনামিকা তোকে জ্বালানোর জন্য করছে।
“হুম জানি!
বলেই নির্ঝর পাশ কাটিয়ে চলে গেল। পেছন থেকে আরিফ বলে উঠে,
“আমার মনে হয় না ভাবি কখনো এখানে আসতে চাইবে।কোন চিন্তা ভাবনা না করেই এমন একটা ডিসেশন নেওয়া ঠিক হয় নি।
“একবার ভাবি কে জিজ্ঞেস তো করতি, তারপর না হয় সবাইকে বলতি।
“নির্ঝর তোর আরেকবার ভাবা উচিত!
নির্ঝর গাড়ির দরজা খুলে ভেতরে বসে বলল,
“আমি যখন বলেছি মেহু আসবে তার মানে সে আসবে।
বলেই গাড়ি স্টার্ট দিয়ে নির্ঝর চলে গেল!
#চলবে….