#অনুভূতিতে_তুমি 💖
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে)
#পর্ব_৩৬ ( #বোনাস_পর্ব )
মেহেরিন’র পিএ এসে সব স্টাফ কে সরিয়ে দিল। নিরব মেহেরিন’র কে চেয়ারে বসাল। মাথায় হাত রেখে ভরসা দিল। গ্লাসে পানি ঢেলে তার হাতে দিল। নির্ঝর দাঁতে দাঁত চেপে তাকিয়ে দেখছে। হঠাৎ করেই খেয়াল করল নিরব মেহেরিন’র চুলের দিকে হাত বাড়াচ্ছে। মনে হয় চুল গুলো কানে গুঁজে দিবে। নিরব হাত বাড়াতেই নির্ঝর এসে তার হাত ধরে ফেলল। নিরব নির্ঝরের দিকে তাকাল। নির্ঝর তার হাত সরিয়ে ফেলল। হাটু গেড়ে বসল মেহেরিন’র সামনে। মেহু ঘেমে একাকার। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম। নির্ঝর তার চুল গুলো কানে গুঁজে দিল। মেহেরিন এখনো ঘন ঘন শ্বাস নিচ্ছে। নির্ঝর বলে উঠল,
“বাসায় যাওয়া যাক!
মেহেরিন মাথা নাড়ল। নির্ঝর মেহেরিন’র হাত শক্ত করে ধরল। মেহেরিন দাঁড়িয়ে বলল,
“আমার ফোন!
নিরব হাত বাড়িয়ে ফোন দিল। নির্ঝর রেগে তার হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নিল। অতঃপর মেহুর হাত ধরে তাকে বের করিয়ে আনল। মানসিক ভাবে অনেকটা অসুস্থ মেহেরিন। গাড়ির কাছে আসতেই অর্ণবের জন্য জোরাজুরি শুরু করল। নির্ঝর উপায়ন্তর না পেয়ে তাকে চৌধুরী বাড়িতে নিয়ে এলো। নীলিমা আর রিদুয়ান’র সাথে খেলছিল অর্ণব। মেহেরিন যেতেই দৌড়ে তার কাছে চলে এলো সে। মেহু তাকে আকড়ে ধরল। শুধু তাই না কোলে করে একদম গাড়ির কাছে চলে এলো। নীলিমা আর রিদুয়ান দুজনেই অবাক। নির্ঝর বলে উঠল,
“আমি পড়ে বলছি সব, মেহু এখন একদম’ই সুস্থ না!
বলেই গাড়ির কাছে এসে দেখল পিছনের সিটে অর্ণব কে আকঁড়ে ধরে বসে আছে। বারবার মাথায় হাত বুলিয়ে যাচ্ছে। নির্ঝর জন কে গাড়ি স্টার্ট করতে বলে গাড়ির ড্রাইভিং সিটেই বসল।
বাড়িতে আসতেই অর্ণব কে নিয়ে ঘরে চলে গেল মেহু। বিছানায় বসিয়ে দিল। নির্ঝর দৌড়াতে দৌড়াতে এসে দেখে মেহু অর্ণবের হাত দুটো ধরে হু হু করে কাঁদছে। ছোট অর্ণব ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে দেখছে। বুঝতেই পারছে না কিছু। মনে হয় এখন’ই কেঁদে দেবে। নির্ঝরের চোঁখের কোনো অশ্রু জমল। মেহেরিন কে এভাবে কাঁদতে দেখে খুব কষ্ট হচ্ছে তার। কেন কাঁদছে, কি কারণে কাঁদছে কিছুই জানে না সে। হেঁটে এসে দাঁড়াল মেহেরিন’র কাছে। নির্ঝর কে দেখে অর্ণব বলে উঠল,
“ড্যাডি!
মেহেরিন’র বোধ হলো। দ্রুত চোখের জল মুছে উঠে দাঁড়াল। কিছু না বলেই দ্রুত চলে গেল। নির্ঝর বসে অর্ণবের কপালে চুমু খেয়ে বলল,
“মাম্মির কিছু হয় নি, শুধু একটা দুঃস্বপ্ন দেখেছে বুঝলে অর্ণব!
অর্ণব মাথা নেড়ে না না করল। দুঃস্বপ্ন কি তা সে জানে না। অর্ণব তাকে কোলে বসিয়ে বলল,
“কিছু না, যখন তুমি বড় হবে তখন জানবে। কিন্তু একটা কথা মনে রাখবে মাম্মি কে কখনো ক/ষ্ট দেবে না। মাম্মি অনেক ভালোবাসে তোমায় বুঝলে তুমি।
অর্ণব মাথা নেড়ে সম্মতি জানাল। চুমু খেল নির্ঝরের গালে। দৌড়ে গেল মেহেরিন’র কাছে।
মেহেরিন আর অর্ণব আজ একসাথে ঘুমিয়েছে। নির্ঝর আজ আলাদা ঘরেই ঘুমাতে গেছে। কিন্তু কিছুতেই তার ঘুম এলো না। সে এসে হাজির হলো মেহুর ঘরে। অর্ণব কে জড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে সে। তার ঘুম খুব গভীর। নির্ঝর অনেক কাছে এগিয়ে মেহু কে দেখল। তার স্নিগ্ধ মুখখানা দেখে ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটল তবে হাসির প্রয়াস বেশিক্ষণ রইল না। মেহেরিন’র কান্না মাখা মুখটার কথা মনে করতেই মুখট মলিন হয়ে গেল তার। বিছানায় পাশে মেঝেতে বসে পড়ল সে। মেহেরিন’র দিকে তাকিয়ে বলল,
“আমি সত্যি জানি না কি নিয়ে তুমি এতো ভয় পেয়েছ মেহু। কিন্তু কথা দিচ্ছি সেটা যাই’ই হোক না কেন আমি তোমার পাশে থাকবো।
—
নিরব কে গতকালের ঘটনা জিজ্ঞেস করতেই নিরব মুখ ফিরিয়ে নিল। বলল, কিছু হয় নি। নির্ঝর রেগে গেল। আবারো জিজ্ঞেস করল। নিরব বলে উঠল,
“কিছু হয় নি বললাম তো আমি।
“কিছু না হলে মেহু অবশ্যই এভাবে কাঁদতো না।
নিরব মুখ ফিরিয়ে নিল। নির্ঝর বেশ বুঝতে পারছে কিছু একটা হয়েছে। নিরবের সামনে দাঁড়িয়ে শক্ত মুখে বলে উঠল,
“ভালো মতো জিজ্ঞেস করছি বলো।
“না বললে কি করবে তুমি, আমি বাধ্য নই তোমাকে কিছু বলার জন্য!
বলেই পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিল। নির্ঝর রেগে তার জামার কলার চেপে ধরল। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“খুব বেশি বেড়ে যাচ্ছো, দূরে থাকো আমার মেহু থেকে!
নিরব মুখ সরিয়ে বলল,
“মেহু তোমার না!
নির্ঝর চোয়াল শক্ত করে নিল। উঠে ঘু/ষি মারল তার মুখে। নিরব ছিটকে দূরে এসে পড়ল। নিরব বলে উঠল,
“নির্ঝর পা/গল হয়ে গেছো?
নির্ঝর বলে উঠল,
“হ্যাঁ হয়ে গেছি। সাহস হয় কিভাবে, আমার মেহু কে জড়িয়ে ধরার। কেন জড়িয়ে ধরেছিলে তুমি মেহুকে!
বলেই রাগে ফুসফুস করতে থাকল সে। পেছন থেকে মেহুর গলার আওয়াজ পেয়ে চমকে উঠলো নির্ঝর। মেহেরিন এসে নির্ঝরের মুখোমুখি দাঁড়াল। পিছনে দাঁড়িয়ে নিরব কে দেখল মেঝেতে পড়ে আছে। মেহেরিন কে দেখে চোখ নামিয়ে ফেলল সে। ভ্রু কুঁচকে নির্ঝর কে জিজ্ঞেস করল,
“আপনি নিরব কে মে/রেছেন নির্ঝর!
নির্ঝর দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“হুম!
মেহেরিন শব্দ করে শ্বাস ফেলল। নির্ঝরের থেকে চোখ সরিয়ে নিরবের কাছে গেল। নিরব কে উঠালো নিচ থেকে। নির্ঝর অনেকটা জোরেই মেরেছে। বেচারা গাল ফুলে গেছে।মেহেরিন একজন স্টাফ কে ডেকে পাঠাল আইস ব্যাগ আনার জন্য। অতঃপর এসে নির্ঝরের সামনে দাঁড়িয়ে বলল,
“আমি জিজ্ঞেস করতে পারি আপনি এমনটা কেন করছেন?
নির্ঝর চোখ সরিয়ে নিল। দুই হাত প্যান্টের প্যাকেটে ঢুকিয়ে চোয়ার শক্ত করে নিল। মেহেরিন বলে উঠল,
“নির্ঝর আমি জিজ্ঞেস করছি কিছু!
নির্ঝর এবারও চুপ! মেহেরিন এবার নির্ঝরের সামনে এসে দাঁড়াল। বলে উঠল,
“আমি বলছি কেন? কারণ গতকাল ও আমাকে আগলে রেখেছিল তাই তো! কেন সমস্যা কি আপনার, আমার বন্ধু আমাকে আগলে না রাখলে আর কে রাখবে।
নির্ঝর চোখ মুখ শক্ত করে তাকিয়ে রইল। রাগে তার শরীর জ্বলে যাচ্ছে। মেহেরিন তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করছে তার উপর। নির্ঝর সেই চোখে ঘৃণাও দেখতে পাচ্ছে। শব্দ করে শ্বাস ফেলল সে। বলে উঠল,
“হ্যাঁ এ কারণেই মেরেছি, কেন জড়িয়ে ধরবে ও তোমায় কেন?
“কারণ ও আমার বন্ধু, আমার চিন্তা করে কেয়ার করে আমার, তাই!
“ওহ আচ্ছা!
“নির্ঝর সরি বলুন ওকে।
“সরি মাই ফুট!
“নির্ঝর!
“সরি বলবো না ওকে, যা ইচ্ছে করে নাও।
মেহেরিন কপালে হাত রাখল। কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না সে। শুধু বলে উঠল,
“একটা কথা মনে রাখবেন এসব কিছু করলেই আপনি আমাকে পাবেন না। আমি যখন একবার বলেছি আপনাকে ভালোবাসি না তো বাসি না। এটাকে হ্যাঁ করতে পারবেন না আপনি। তাই শুধু শুধু এসব সিন ক্রিয়েট করে কোন লাভ হবে না। মনে রাখবেন!
নির্ঝর কিছু বলার জন্য মুখ খুলতেই স্টাফ এসে হাজির হলো। মেহেরিন তার থেকে আইস ব্যাগ টা নিয়ে নিরবের গালে ধরল। নির্ঝর দাঁতে দাঁত চেপে তাকিয়ে রইল। “সরি” শব্দ টা বলেই প্রস্থান করল সে! মেহেরিন দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“সরি ইয়ার!
“ইট’স ওকে, আইম ফাইন! কিন্তু মেহু।
“কি?
“নির্ঝর তোকে ভালোবাসে!
মেহেরিন উঠে দাঁড়াল। ফার্স্ট এইড বক্স নিয়ে এলো।
শীতল গলায় বলল,
“এটা ওর ভালোবাসা না ওর ভ্রম যা সময়ের সাথে সাথে এক সময় চলে যাবে।
“আর তুই! তুই ভালোবাসিস ওকে!
মেহেরিন ঔষধ বের করল। নিরবের গালে তা লাগিয়ে দিয়ে বলল,
“না! ভালোবাসা আর আমার পক্ষে সম্ভব না!
বলেই মুচকি হাসল সে। নিরব ও কিঞ্চিত হাসল। মনের মাঝে বলল,
“তুই শুধু আমার ভালোবাসা!
মেহেরিন ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করল নিরব মাথা নাড়িয়ে বলল কিছু না। শুধু এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল মেহেরিন’র দিকে!
নির্ঝর হন হন নিজের কেবিনে আসল। অর্ণব তার টেবিলের উপরে বসে চকলেট খাচ্ছে। ধপাস করে এসে চেয়ারে বসে পড়ল নির্ঝর। নির্ঝর কে রেগে থাকতে দেখে “ড্যাডি” ডেকে চকলেট বাড়িয়ে দিল। নির্ঝর হেসে সেই চকলেট’এ কামড় বসাল। অর্ণব কে কোলে বসিয়ে বলল,
“তোমার মাম্মির সাথে ঝগড়া করার পর তোমার কাছে আসা লাগবে। তাহলেই আমার মন ভালো হয়ে যাবে বুঝলে অর্ণব সোনা। নাও এবার একটু হেসে দাও!
অর্ণব একগাল হেসে বলল,
“মাম্মি!
নির্ঝর মাথা নেড়ে বলল,
“হ্যাঁ তোমার মাম্মি, ধানি লঙ্কা! বুঝলে..
—-
গাড়িতে বসে আছে নির্ঝর, তার পাশের সিটে অর্ণব। দু’জনেই অপেক্ষা করছে মেহেরিনের। মেহেরিন বাইরে দাঁড়িয়ে নিরবের সাথে কথা বলছে। তার গালে আবার হাতও দিচ্ছে। নির্ঝর তা দেখে দাঁতে দাঁত বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে রইল। অর্ণব গাড়ির জানালা দিয়ে ডাক দিল,
“মাম্মি!
মেহেরিন নিরব কে খেয়াল রাখতে বলে গাড়ির কাছে এগিয়ে গেল। হুট করেই নিরবের ফোনে একটা মেসেজ এলো। মেহেরিন গাড়ির কাছে এগিয়ে যেতেই নিরব তাকে পেছন থেকে ডাক দিল। নির্ঝর রেগে হাত মুঠো করে নিল। অর্ণব কপালে হাত দিল। কিছুক্ষণ পর গাড়ির কাছে এসে মেহেরিন বলল,
“নির্ঝর একটু সমস্যা হয়েছে, আগামীকালের মিটিং নিয়ে কিছুটা ঘোরপাক খেয়ে গেছে।
নির্ঝর হেসে বলল,
“ঠিক আছে আমি অর্ণব কে নিয়ে চলে যাচ্ছি তাহলে..
“না, আপনি একা যান। অর্ণব কে রেখে যান, ডঃ রাহেলা’র সাথে আজ দেখা করার কথা আছে। অর্ণব কে সাথে করে নিয়ে যাবো। আপনি বরং একাই চলে যান আমাদের ফিরতে লেট হবে।
বলেই গাড়ির ভিতর থেকে অর্ণব কে বের করে আনল। অর্ণব নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে মুখটা মলিন করে বের হয়ে এলো। নিরব মেহু আর অর্ণব কে সাথে নিয়ে আবারো অফিসে ঢুকল। নির্ঝর তা দেখে রেগে অস্থির। জন কে গাড়ি ক্লাবের কাছে নিয়ে যেতে বলল!
—-
“নির্ঝর তুই শুধু শুধু রেগে যাচ্ছিস, এবার বন্ধ কর!
ঈশানের কথায় নির্ঝর রেগে তার বিয়ারের বোতল ছুঁড়ে মা/রল তার দিকে। একটুর জন্য বেঁচে গেছে সে। দেওয়ালে বাড়ি খেয়ে বিয়ারের বোতলটা টু/করো টু/করো হয়ে নিচে পড়ে গেল। নির্ঝর নিজেও পড়ে যেতে নিল। ফরহাদ এসে তাকে সামলে নিল। নির্ঝর তাকে ঝাড়া দিয়ে ছাড়িয়ে নিয়ে দাঁড়াবার চেষ্টা করল। কিন্তু কিছুতেই তা সম্ভব না। অতিরিক্ত ড্রিংক করে ফেলেছে সে। হেলেদুলে চলছে। ফরহাদ তার সামনে থাকা সত্বেও তার পাশে হাতে আঙুল দিয়ে বলছে,
“ধরবি না আমায়!
ফরহাদ নির্ঝরের হাত ঘুরিয়ে বলল,
“আমি এখানে!
“ওহ সরি, ধরবি..
কথা শেষ না করেই হুট করে নিচে বসে পড়ল নির্ঝর। বলে উঠল,
“তোরা জানিস, মেহু আমাকে দিয়ে ওই নিলব কে সরি বলিয়েছে। আমাকে দিয়ে, ভেবে দেখেছিস! আরো অনেক কথা শুনিয়েছে, কিভাবে পারল ও এমনটা করতে! বল তোরাই বল!
আরিফ বলে উঠল,
“নির্ঝরের মাথা গেছে, পুরো পা/গল হয়ে গেছে ও!
নির্ঝর রেগে উঠে দাঁড়াবার চেষ্টা করল। কিন্তু আবারো পড়ে যেতে নিল। ফরহাদ তাকে ধরল। নির্ঝর চিৎকার করে বলল,
“ওই ব্যাডা, তুই পা/গল, তোর গুষ্টি পা/গল। আমাকে পা/গল বলছিস কেন তুই!
ঈশান মিনমিনিয়ে বলল,
“আমি আর কিছু বলছি না!
আরিফ ওর দিকে তাকিয়ে আফসোসে মাথা নাড়ল। ফরহাদ নির্ঝর কে টেনে বলল,
“আচ্ছা আমিও পা/গল ভাই। এখন চল!
“ছাড় আমায়, বলছি আমি যাবো না। আজ আমি কোথাও যাবো না।
বলেই হাত ছাড়িয়ে নিল। ফরহাদ, আরিফ ঈশান ওরা তিনজন কোন কিছু করেই তাকে বের করে আনতে পারল না। নির্ঝর আবারো বিয়ারের বোতল হাতে নিয়েছে। আরিফ ফরহাদ কে ডেকে বলল,
“বাইরে আয় শোন!
অতঃপর তিনজন বাইরে এলো। ঈশান বলে উঠে,
“নির্ঝর আজ পুরোই গেছে!
আরিফ বলে উঠল,
“মেহেরিন কে কল করবো।
ফরহাদ বলে উঠে,
“পা/গল নাকি তুই, মেহেরিন যদি জানে মে/রে দেবে নির্ঝর কে। না না না মেহেরিন কে কিছু বলা যাবে না।
ঈশান বলে উঠল,
“তাহলে কি করবি?
ফরহাদ বলে উঠে,
“দেখছি, একটুপর আবার যাই। নির্ঝরের মাথা ঠান্ডা হোক তখন নিয়ে আসবো!
নির্ঝর বিয়ারের বোতলে মুখ দিতেই সামনে এসে বসল দিশা। নির্ঝর ঝাপসা ঝাপসা চোখে তাকাল তার দিকে। দিশা হেসে বলে উঠল,
“হাই হ্যান্ডসাম!
নির্ঝরের কাছে এটা মনে হলো এটা মেহু। সে ঝাপসা ঝাপসা চোখে দেখতে লাগল। দিশা এসে নির্ঝরের গালে হাত রাখল। নির্ঝর মাথা দুলতে দুলতে বলল,
“মেহু!
দিশা বাঁকা হাসল। বলে উঠল,
“এখানে একা একা কি করছো তুমি?
নির্ঝর দিশার হাত সরিয়ে বলল,
“তোমার সাথে কথা নেই, ছাড়ো তুমি!
“কেন?
“কেন? তুমি জিজ্ঞেস করছো কেন? আজ কতো কথাআআ শোনালে তুমি আমায়।
“আচ্ছা সরি!
নির্ঝর মুখ ঘুরিয়ে নিল। দিশা ওর দিকে তাকিয়ে বলল,
“সরি বললাম তো!
নির্ঝর মাথা নেড়ে বলল,
“না না!
দিশা বলে উঠল,
“ঠিক আছে, বলো না কথা!
বলেই উঠে পড়ল। নির্ঝর তার সাথে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
“মেহু, কোথায় যাচ্ছো?
দিশা বাঁকা হেসে হাঁটতে লাগলো। নির্ঝর উঠে তার পিছে পিছে যেতে লাগল।
দিশা’র কাজ’ই হচ্ছে বড় লোকের ছেলেদের ফাঁসিয়ে টাকা উপার্জন করা। নির্ঝরের উপর তার নজর ছিল কিন্তু কখনো সুযোগ করে উঠতে পারে নি। আজ যখন নির্ঝর তার মাঝে মেহেরিন কে দেখছে এই সুযোগ হাত ছাড়া করবে না। নির্ঝর কে আজ ফাসাবে। তাই তাকে নিজের পিছু পিছু নিয়ে আসতে লাগল। একটা ঘরের কাছে নিয়ে এলো তাকে। নির্ঝর এর মাঝেই দিশার হাত ধরে দরজার সাথে ঠেকাল। বলে উঠল,
“আমাকে ছেড়ে কোথায় যাচ্ছ তুমি মেহু?
“কোথায় না, এই তো এখানেই আছি আমি নির্ঝর!
নির্ঝর কথা বলতে বলতে হেলেদুলে পড়ে যেতে নিল। দিশা তার হাত দুটো নিজের কোমরে ধরাল। নির্ঝরের গলায় নিজের হাত জড়িয়ে বলল,
“বলো কি চাও তুমি?
নির্ঝর নেশালো চোখে তাকিয়ে রইল। হাত দিয়ে স্পর্শ করল দিশার গাল টা। দিশা চোখ বন্ধ করে নিল। নির্ঝর অনেকটা কাছে এগিয়ে এলো দিশার। দিশার গালের হাত রেখে ঠোঁট এগিয়ে নিল সে। কিন্তু দিশার ঠোঁট জোড়া দেখে থমকে গেল সে। ভ্রু কুঁচকে নিল। হাত দিয়ে স্পর্শ করল ঠোঁট দুটো কে। বলে উঠল,
“এটা তুমি নও! এই ঠোঁট তোমার না।
দিশা চোখ মেলে তাকাল। নির্ঝর তার থেকে সরে আসল। বলে উঠল,
“তুমি মেহু নও!
“নির্ঝর! নির্ঝর আমি মেহেরিন। তোমার মেহু!
বলেই নির্ঝরের দিকে হাত বাড়িয়ে দিল। নির্ঝর দিশার হাত এক ঝটকায় সরিয়ে দিল। বলে উঠল,
“তুমি মেহু নও, আমার মেহু নও তুমি!
বলতে বলতে হেলেদুলে চলে আসতে নিল। এদিকে ফরহাদ ওরা সবাই নির্ঝর কে খুঁজে অস্থির। অবশেষে তাকে হেলেদুলে আসতে দেখে তাকে গিয়ে ধরল সবাই। নির্ঝরের মুখে তখন একটা কথাই শুনতে পেল,
“তুমি আমার মেহু নও, আমার মেহু নও তুমি!
ফরহাদ নির্ঝরের হাত নিজের কাঁধে নিয়ে বলল,
“হ্যাঁ হ্যাঁ তোর মেহুর কাছেই নিয়ে যাচ্ছি চল!
এদিকে দিশা পেছন পেছন এসে দেখে ফরহাদ ওরা নির্ঝর কে নিয়ে যাচ্ছে। রেগে ঠোঁট কামড়ে ধরলে সে। আবারো সুযোই চলে গেল তার। কিন্তু এতো সহজে হার মানবে না সে।
—
মেহেরিন’র সামনে হেলছে নির্ঝর! এতোক্ষণ নির্ঝরের জন্য’ই অপেক্ষা করছিল। ঘড়িতে ১.৩০ টা বাজে। নির্ঝর কে দরজার কাছ থেকেই মেহেরিন’র কাছে দিয়ে ভেগেছে ওরা। নাহলে মেহু তাদের একজন কেও ছাড়তো না। এদিকে নির্ঝরের অপেক্ষা করতে করতে তার ঘরেই ঘুমিয়ে পড়েছে অর্ণব। ঘুমায় নি শুধু মেহেরিন। একমাত্র নির্ঝরের অপেক্ষাই করছিল সে। এখন সে তার সামনে দাঁড়ানো। দুই হাত বাহুতে গুঁজে ভ্রু কুঁচকে মেহু জিজ্ঞেস করল,
“ড্রিংক করেছেন আপনি!
নির্ঝর মাথা নেড়ে বলল,
“না!
“তাহলে দুলছেন কেন? সোজা হয়ে দাড়ান!
নির্ঝর বলে উঠল,
“আমি দুলছি না বাড়ি দুলছে, ( মেহেরিন’র দিকে আঙুল উঠিয়ে বলল ) তুমি দুলছো!
মেহেরিন মুখ খুলে শ্বাস নিয়ে বলল,
“কেন করছেন ড্রিংক!
“বলবো না, তার আগে তুমি বলো। কেন ওই নিলবের সামনে আমাকে কথা শুনিয়েছ?
মেহেরিন ভেবে নিল নির্ঝরের সাথে কথা বলে কোন লাভ নেই। নির্ঝরের হাত ধরে বলল,
“নিন এখানে ঘুমান!
হাত ছাড়িয়ে বলল,
“না, ঘুমাবো না।
“তাহলে কি করবেন নাচবেন!
“না! তোমাকে ভালোবাসবো!
বলেই মেহেরিন কে জড়িয়ে ধরল সে। মেহেরিন ছোটার জন্য ছটফট করতে লাগলো। কিন্তু কোন কাজ’ই হলো না। নির্ঝর খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে তাকে। মেহেরিন বলে উঠল,
“নির্ঝর ছাড়ুন আমায়!
নির্ঝর মাথা নেড়ে বলল,
“না!
“রেগে যাচ্ছি কিন্তু আমি!
নির্ঝর মেহেরিন’র দিকে তাকিয়ে বলল,
“সত্যি!
মেহেরিন দাঁতে দাঁত চেপে তাকিয়ে রইল। নির্ঝর হেসে বলল,
“ঠিক আছে, আমি রাগ পানি করে দিচ্ছি!
বলেই চুমু খেল মেহেরিন’র গালে। মেহেরিন থমকে গেল। তার কথার আওয়াজ হারিয়ে গেল। এদিকে নির্ঝর এখনো জড়িয়ে ধরে আছে। মেহেরিন বলে উঠল,,
“নির..
“তুমি জানো মেহু, আমি তোমাকে কতো ভালোবাসি কিন্তু ওই নিলব আছে না। বিরিয়ানির আলাচি সবসময় তোমাকে আমার কাছ থেকে নিয়ে যায়। আচ্ছা মেহু তুমি বুঝো না আমি কততততততোটা ভালোবাসি তোমায়, বলো বুঝো না।
মেহেরিন ঢোক গিলল। বলে উঠল,
“নির্ঝর ছাড়ুন আমায়!
“মেহু!
“নির্ঝর ছাড়ুন! ( উচ্চস্বরে)
নির্ঝর চমকে উঠে ছেড়ে দিল। বলে উঠল,
“ছেড়ে দিয়েছি, আমি ছেড়ে দিয়েছি। তুমি রেগে যেও না ঠিক আছে!
মেহেরিন বেশ বিরক্ত। বলে উঠল,
“ঘুমিয়ে পড়ুন।
বলেই তার পাশ দিয়ে যেতে নিল। হুট করে নির্ঝর মেহুর হাত ধরে ফেলল। বলল,
“আমি তোমার সাথে ঘুমাবো।
“নির্ঝর!
মেহেরিন’র কথা শোনার আগেই তাকে জড়িয়ে ধরে ধপাস করে বিছানায় পড়ে গেল নির্ঝর! মেহেরিন থতবত খেয়ে গেল। নির্ঝরের মুখ তার কানের কাছে। একই কথা সে বার বার বলে যাচ্ছে,
“তোমাকে ভালোবাসি আমি মেহু, অনেক ভালোবাসি, ভালোবাসি…
মেহেরিন চোখ বন্ধ করে নিল। নির্ঝরের গরম নিঃশ্বাস পড়ছে তার ঘাড়ে আর কানে বাজছে তার আওয়াজ। ফিসফিসিয়ে বলে যাচ্ছে ভালোবাসার কথা সে। উপেক্ষা করতে পারছে না সে এসব!
#চলবে….