অনুভূতিতে তুমি 💖পর্ব-৪৯

0
4281

#অনুভূতিতে_তুমি 💖
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে)
#পর্ব_৪৯

পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই মেহেরিন’র মুখ দেখল নির্ঝর। নিজের ঘরে তাকে দেখে লাফিয়ে উঠল সে। মেহেরিন তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তার দিকেই তাকিয়ে আছে। নির্ঝরের বোধ হলো তার গায়ে শার্ট নেই। দ্রুত বিছানার পাশে থাকা শার্ট টা গায়ে দিল সে। বলে উঠল, তুমি! এতো সকালে এখানে।

“হ্যাঁ তো! নিজের স্বামীর ঘরেই আছি। বিয়ের পর সব মেয়েরাই এখানে থাকে। আমিও সেখানে আছি।

“এসব কি বলছো!

মেহেরিন উঠে দাঁড়াল। কোমরে হাত রেখে বলল, যা বলছি একদম ঠিক বলছি। কিভাবে বলতে পারেন আপনি আপনার মাঝে আমার কোন অস্তিত্ব নেই। কি ভেবেছিলেন এতো সহজে মেনে নিব আমি। মেহেরিন বর্ষা খান এতো সহজে হার মানে না বুঝলেন। আপনার স্মৃতি তো আমি ফিরিয়ে ছাড়বোই!

“ওহ আচ্ছা, এভাবে ঝগড়া করে।

“দরকার পড়লে তাই করবো।

বলেই মেহেরিন ধপাস করে হেঁটে চলে গেল। নির্ঝরের মাথার উপর দিয়ে সবকিছু গেল। গতকাল’ই তো এই মেয়েটা এতো কাঁদছিল আর আজ এতোটা পরিবর্তন! কিভাবে?

ফ্রেস হয়ে নিচে নামল নির্ঝর। মেহেরিন রান্না ঘরে। নির্ঝর ফোন নিয়ে ধপাস করে সোফায় বসল। মেহেরিন রান্না ঘর থেকে ডাক পাঠালো। ফোন থেকে চোখ সরিয়ে বলল,
“কি হয়েছে?

“অনেক কিছু, এখানে আসুন বলবো!

নির্ঝর উঠে রান্না ঘরে। মেহেরিন তাকে উপর থেকে আটার ডিব্বা টা নামিয়ে দিতে বলল।

“এটা নামানোর জন্য ডেকেছিলে!

“হুম অবশ্যই, এটা ওইইই উপরের তাকে। আমার হাতের নাগাল পাওয়া বেশ কষ্টকর। তাই দয়া করে আপনি একটু নিয়ে আমাকে দিন।

নির্ঝর মুখ ভেংচি কেটে তাকের কাছে এসে দাঁড়াল। দেখল অনেক ধরণের ডিব্বা আছে এখানে। সে কনফিউজড হয়ে আবারো পিছনে ফিরে মেহেরিন জিজ্ঞেস করতে গিয়ে থতমত খেয়ে গেল। কারণ মেহেরিন তার সামনেই এসে দাঁড়িয়েছিল আগে থেকে। মেহেরিন হেসে বলল, ওই তো ওই কোনে যেই সাদা রঙের ডিব্বা দেখছেন সেটা ছিল।

নির্ঝর মাথা নাড়ল। আটার ডিব্বা টা নিচে নামিয়ে পিছনে ঘুরতেই মেহেরিন কে খুব কাছে দেখল। হতচকিয়ে গেল নির্ঝর। মেহেরিন এক পা বাড়িয়ে আরো কাছে এলো। নির্ঝর পেছনে দেওয়াল থাকা সত্ত্বেও আরো পেছনে যাবার ব্যর্থ চেষ্টা করল। মেহেরিন হাসল। হাত বাড়ালো নির্ঝরের দিকে। নির্ঝর বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে রইল। মেহেরিন হেসে তার হাত থেকে ডিব্বা নিয়ে চলে গেল। নির্ঝর হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। হঠাৎ করেই মেহেরিন আবারো এসে তার সামনে দাঁড়াল। হেসে বলল, আহ আপনাকে ধন্যবাদ দেওয়া হয়নি!

নির্ঝর ভ্রু কুঁচকালো। মেহেরিন নির্ঝরের গাল চেপে ধরে হুট করেই তার গালে চুমু খেল। নির্ঝর চমকে উঠলো। ঘটনাটা খুব দ্রুত ঘটায় নির্ঝরের বুঝতে সময় লাগলো!

নির্ঝর বাড়ির বাইরে বের হবার জন্য গাড়ি বের করল। গাড়ি স্টার্ট দিতেই দৌড়ে মেহেরিন এসে সামনে দাঁড়াল। তাড়াহুড়ো করে গাড়ি ব্রেক করল নির্ঝর। মেহেরিন হাতে ব্যাগ নিয়ে হেসে দুলতে লাগলো। নির্ঝর রেগে গাড়ি থেকে বের হলো।

“মরার জন্য সামনে এসেছ নাকি!

“মরতে যাবো কেনো, আপনার সাথে বাইরে যাবো!

“আমার সাথে মানে..

“মানে এটাই! ( বলেই গাড়ির ভেতর এসে বসল। অতঃপর গাড়ির জানলা দিয়ে নির্ঝর কে বলল ) আসুন ভেতরে আসুন।

“এই তুমি আমার গাড়ি করে কেন যাচ্ছ?

“কারণ আমার গাড়ি রিপেয়ারে দিয়েছি তাই!

“গাড়ি আরো আছে!

“ড্রাইভার নেই তো।

“কেন?

*ছুটি দিয়ে দিয়েছি, বেচারার তো ইচ্ছে করে নিজের বউয়ের সাথে ঘুরতে তাই!

নির্ঝর ভ্রু কুঁচকে নিল। মেহেরিন নির্ঝরের থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে মিনমিনয়ে বলল, সবার বর তো আর আমার বরের মতো না।

“এই কি বললে তুমি।

“বলছি এসে গাড়িতে বসুন, আমার লেট হচ্ছে।

নির্ঝর বিরক্তি মুখে এসে বসল গাড়িতে। মেহেরিন মুচকি হাসল। গাড়ি স্টার্ট দিল নির্ঝর। মেহেরিন তার দৃষ্টি নির্ঝরের উপর রাখল। গালে হাত দিয়ে নির্ঝরের দিকেই তাকিয়ে রইল। বির বির করে বলতে লাগল, হায় আমার বর টা কি সুন্দর!
বলেই নিজে লজ্জা পেয়ে গেল। দুই হাত দিয়ে মুখ ঢেকে হাসতে লাগল। মেহেরিন’র এসব পাগলামি নির্ঝর কে বেশ বিরক্ত করছে। কিন্তু কিছুই বলতে পারছে না সে। একবার চোখ ফিরে তাকাল মেহেরিন’র দিকে। মেহেরিন তাকে চোখ টিপ দিল। নির্ঝর থমতম খেয়ে গেল। হুট করেই গাড়ি থামিয়ে দিল। মেহেরিন বাইরে তাকিয়ে বলল, এ কোথায় গাড়ি থামালেন।

“সিট বেল্ট বাধো!

মেহেরিন শুনেও না শোনার ভান করল। ফোন বের করে টিপতে লাগল। নির্ঝর আবারো বলল তাকে কিন্তু সে এবারও নিশ্চুপ। নির্ঝর রেগে গাড়ির হর্ন বাজাল। মেহেরিন কানে হেডফোন গুঁজল। নির্ঝর বেশ বিরক্ত। শব্দ করে দম ফেলল সে। পেছন থেকে অন্য গাড়ি হর্ণ বাজাচ্ছে। মাঝরাস্তায় গাড়ি থামিয়ে দিয়েছে নির্ঝর। মেহেরিন কে আবারো ডা‌ দাল সে। কিন্তু মেহেরিন পাত্তা দিল না। শেষমেষ নির্ঝর রেগে নিজেই তার সিট বেল্ট বাঁধতে নিল। মেহেরিন ফোন নামিয়ে নির্ঝরের দিকে ফিরল। নির্ঝর চোখ ফিরিয়ে নিল। সরতে যাবে তৎক্ষণাৎ চুমু খেল নির্ঝরের গালে। দ্রুত চোখ ফিরিয়ে নিল সে। নির্ঝর চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে তার দিকে। দ্রুত সরে গিয়ে হাত দিয়ে গাল ঢলতে লাগল। রেগে তাকিয়ে রইল সে। কিছু বলতে যাবে আবারো পেছন থেকে হর্ণের আওয়াজ এলো। নির্ঝর রেগে গাড়ি ড্রাইভ করতে লাগল। মেহেরিন মুখ টিপে হাসতে লাগলো। নির্ঝর কে এভাবে জ্বালাতে বেশ লাগছে তার।

—–

অর্ণব বাসায় নেই, মেহেরিন’র মনটা ভালো না। আজ দুদিন হলো অর্ণব কে দেখতে পেলো না সে। নির্ঝর সবে বের হবার জন্য গাড়ির চাবি হাতে নিল। ঠিক তৎক্ষণাৎ এসে হাজির হলো মেহেরিন। নির্ঝর তাকে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিল মেহেরিন তার পথ আটকালো। নির্ঝর বলে উঠল,‌

“কি হয়েছে?

“অর্ণব কে দেখতে যাবো, আপনাদের বাসায় ও।

“তাহলে আমি কি করবো।

“দিয়ে আসুন আমাকে।

“পারবো না নিজ থেকে চলে যাও তুমি।

“মনে নেই আপনার, আমার গাড়ি নেই।

নির্ঝর বিরক্ত হয়ে দম ছাড়ল। মেহেরিন এসে তার সামনে দাঁড়িয়ে বলল, মা দেখতে চাইছেন আপনাকে, চলুন না।

নির্ঝর কিছু না বলে চলে গেল। মেহেরিন হেসে তার পিছন পিছন যেতে লাগলো।

গাড়ির আওয়াজ শুনেই দৌড়ে এলো অর্ণব। মেহেরিন কে নামতে দেখে দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরল তাকে। নির্ঝর কে নামতে দেখে ড্যাডি ড্যাডি করতে করতে কোলে চড়ল তার। চুমু খেল নির্ঝরের গালে। নির্ঝর হেসে তার মাথায় হাত বোলাল। মেহেরিন আল নির্ঝর কে দেখে খুব খুশি হলো নীলিমা। তাদের একসাথে ঘরে নিয়ে গেল সে। নির্ঝরের সেদিন আর বের হওয়া হলো না। পুরোটা দিন কাটালো অর্ণবের সাথে। যদিও নির্ঝর চেয়েছিল বাইরে এসে অনামিকার খোঁজ করতে কিন্তু তা সম্ভব হলো না তার। তবে অর্ণবের সাথে ভালো সময় কাটালো সে। অর্ণবও বেজায় খুশি এতোদিন পর নির্ঝর কে পেয়ে।

মেহেরিন’র নিত্য নতুন কান্ড কারখানা অতিষ্ট করছে নির্ঝর কে। সে কিছুই ঠিক মতো করছে না। মেহেরিন প্রতিদিন এসেই তাকে জ্বালায়। এমনকি সে ঘুমিয়ে গেলে মাঝরাতে এসে তার পাশে বসে থাকে। একদিন নির্ঝর ধরে ফেলেছিল তাকে। অতঃপর ঘর থেকে বের করে দেয়। একই কাজ আবারো আজ করেছে মেহেরিন। নির্ঝর ঘুম ঘুম চোখে উঠে মেহেরিন কে দেখতে পেল। তার মেজাজ গেল বিগড়ে। মেহেরিন কে কিছু বলতে নিবে খেয়াল করল মেহেরিন ঘুমিয়ে আছে। মেঝেতে বসে খাটে মাথা রেখেই ঘুমিয়ে পড়েছে সে। নির্ঝর উঠে বসল। মেয়েটার পাগলামি বেড়ে যাচ্ছে দিন দিন। এমন হতে থাকলে কিভাবে চলবে। নির্ঝরের মাথায় কিছুই ঢুকলো না। উঠে বসল সে ‌। মাথা নুইয়ে মেহেরিন কে দেখতে লাগল সে। এতোটা গভীর ঘুম কি তার। হঠাৎ কি এক অদ্ভুত ইচ্ছে করতে লাগলো তার। মেহেরিন’র মাথায় হাত বুলিয়ে দেবার জন্য হাত উঠালো সে। হাত টা মাথায় নেওয়া অবদি তো ঠিক ছিল। কিন্তু মুহুর্তে’ই সেই হাত উঠিয়ে নিল সে। বিছানা ছেড়ে উঠে আসল সে। এসে দাঁড়াল বেলকনির কাছে।

আকাশের দিকে তাকাল সে। শেষরাতে ঘুম ভেঙ্গে গেছে তার। পর পর কয়েকদিন এমনটা হচ্ছে তার সাথে। এর কারণ তার স্বপ্ন। স্বপ্নে প্রতিদিন’ই একটা মেয়েকে দেখতে পায় সে। তবে এখন অবদি তার মুখটা দেখতে পায় নি সে। তবে মেয়েটার হাত ধরে তাকে বলা কয়েকটা কথা এখনো তার মনে আছে। মেয়েটাকে বলেছিল তাকেই সারাজীবন ভালোবাসবে সে।‌ কখনো ছেড়ে যাবে না, সারাজীবন আগলে রাখবে। কিন্তু কে এই মেয়েটা। প্রতিদিন’ই স্বপ্নটার সমাপ্তি এখান অবদিই হয়। অতঃপর মেয়েটার মুখ দেখার আগেই স্বপ্ন টা ভেঙ্গে যায় তার। এসব কি হচ্ছে তার সাথে বুঝতে পারছে না সে। এক হচ্ছে তার ধোঁয়াশা অতীত আরেক হচ্ছে তার বাস্তব। দুটোই গুলিয়ে ফেলছে সে।‌

চোখ বন্ধ করে নেয় নির্ঝর, ঠান্ডা বাতাস বয়ে যাচ্ছে। নির্ঝর দীর্ঘশ্বাস ফেলল। চোখ মেলতেই মনে হলো কেউ তাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরেছে। তাকে না ছুঁয়েই নির্ঝর বলে ফেলতে পারল এটা মেহেরিন। তার ছোঁয়া এতো দিনে চিনে গেছে সে। মেহেরিন পেছন থেকে তার তাকে শক্ত করে জড়িয়ে রেখেছে। তার হাত জোড়া রেখেছে নির্ঝরের পেটে। নির্ঝর তার হাত ছাড়িয়ে নেবার আগেই মেহেরিন বলে উঠল,

“আপনার শরীর কি ভালো না।

“ঠিক আছে আমি।

“তবে উঠে পড়লেন যে। দুঃস্বপ্ন দেখেছেন কি ?

নির্ঝর হাত ছড়াল মেহেরিন। বলে উঠল, এটা নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না।
বলেই নির্ঝর যেতে নিল। কিন্তু থেমে গেল। আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল, আরেকটা দিনের সূচনা হয়ে গেছে। তবে আর দুদিন। এরপর থেকে তুমি তোমার রাস্তায় আর আমি আমার!

আর দাঁড়াল না সে, হন হন করে হেঁটে ঘরে চলে গেল। মেহেরিন কিছু বলার ইচ্ছে ছিল কিন্তু তা আর বলতে পারল না সে। কাকে কি বলবে সে, এই মানুষটাকে যে অনেক ভালোবাসে সে। আকাশের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলল, নির্ঝর আপনার প্রতি আমার ভালোবাসা এই আকাশ সমান। আমি জানি আপনিও আমাকে ঠিক ততোটাই ভালোবাসেন। কোন খুদ তো ছিল না আমাদের এই ভালোবাসার প্রতি তবে কেন এমনটা হলো। আমি যে আপনাকে খুব ভালোবাসি নির্ঝর! খুব!

চোখ বন্ধ করে নিল মেহেরিন। চোখ থেকে দু ফোঁটা নোনা জল গড়িয়ে পড়ল তার চোখ দিয়ে।
নির্ঝরের অস্বস্তি লাগছে, বিছানার‌ কাছে আসার আগেই বুকের ব্যাথায় পড়ে যেতে নিল সে। আঁকড়ে ধরল বিছানার চাদর সে। হাঁটু গেড়ে বসে পড়ল সে। বুকের মাঝে হাত দিয়ে সে ব্যাথা নিবারণের চেষ্টা করল সে। চোখ বন্ধ করে ঘন ঘন শ্বাস নিতে লাগল। তবে কিছুতেই যেন কিছু হচ্ছে না। ঘরে ব্যাথায় ছটফট করছে নির্ঝর আর বেলকনিতে দাঁড়িয়ে কাঁদছে মেহেরিন। দুটো ভালোবাসার মানুষ আজ কাছে থেকেও বড্ড দূরে। ভালো নেই কেউই। একজন কে কষ্ট দিয়ে অন্যজন সেই কষ্ট পেতে দীর্ঘ সময় লাগছে না। কিন্তু তবুও এই দূরত্ব, তবে এই দূরত্ব মুছবে না।

—–

সারাদিন ঘর থেকে বের হয়নি নির্ঝর। সকালে ব্রেকফাস্ট নিয়ে এসেও ফিরে গেছে মেহেরিন। খাওয়া তারও হয় নি। ঘরে এসে বিছানায় বসল সে। মন ছটফট করছে তার। আর তো সবে দুদিন! এরপর থেকেই কি তবে সব আলাদা হয়ে যাবে। মেহেরিন উঠে দাঁড়াল। পাইচারি করছে সে। কিছুই ভালো লাগছে না তার।‌ হঠাৎ কি মনে করে যেন আলমারি খুলল সে। অনেকক্ষণ ধরেই কিছু খুঁজতে লাগল পাগলের মতো। অবশেষে তা পেয়েও গেল সে।

বিকেলের দিকে বের হলো নির্ঝর। খুব ক্ষিদে পেয়েছে তার। তৈরি হয়েই ঘর থেকে বের হলো সে। রান্না ঘরে একটা মেয়ে কে দেখে থমকে গেল সে। কে এই রমণী! যদিও নির্ঝর তাকে পিছ থেকেই দেখেছিল তবে সে হলফ করে বলতে পারে এই মেয়েটা এই বাড়ির না। কারণ মেয়েটার পড়নে একটা শাড়ি। নির্ঝর আজ অবদি এই বাড়িতে কোন মেয়েকে শাড়ি বেশে দেখেনি। কেমন অদ্ভুত লাগছে তার।

সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামল সে। রান্না ঘরের কাছে আসতেই পেছন খুরল সেই রমনী। তাকে দেখে নির্ঝরের চক্ষু চড়কগাছ। এ তো মেহেরিন! শাড়ি পড়ায় তাকে দেখতে একটু অন্যরকম লাগছে তবে সুন্দর লাগছে। মেহেরিন’র মুখে স্নিগ্ধ হাসি। এই হাসি দেখলে মাঝে মাঝে অবাক হয় নির্ঝর। সবসময় হাসি মুখে থাকতে কি করে পারে এই মেয়েটা। এতো অপমানের পরও নির্ঝরের সামনে সবসময় হেসে থাকে সে। বিরিয়ানির ঘ্রাণ পাচ্ছে অনেকক্ষণ ধরে। মেহেরিন থালা হাতে সাজিয়ে নিয়ে এলো নির্ঝরের কাছে। নির্ঝর ঢোক গিলল। মেহেরিন টেবিলে থালা রেখে নির্ঝরের হাত ধরে বসাল তাকে। বলে উঠল,

“খেয়ে দেখুন কেমন হয়েছে? আপনার তো খুব পছন্দ! সারাদিনে এখনো কিছু খাওয়া হয় নি, বেশ ক্ষুদাও তো লেগেছে আপনার!

নির্ঝর চোখ সরালো মেহেরিন’র থেকে। বিরিয়ানি মুখে দিলো সে। স্বাদ টা পরিচিতি লাগছে। মেহেরিন গালে হাত রেখে তার দিকেই তাকিয়ে আছে। বলে উঠল,
“ভালো হয়েছে খেতে।

নির্ঝর মাথা নাড়ল। মেহেরিন নির্ঝরের দিকেই এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। নির্ঝর খেলো না, উঠে দাঁড়িয়ে গেল। মেহেরিনও দাঁড়াল সাথে সাথে। নির্ঝর পানি খেয়ে হেঁটে চলে আসতে নিল। মেহেরিন পেছন থেকে বলল,‌

“না খেয়ে চলে যাচ্ছেন যে।

“ক্ষুদা নেই আমার!

মেহেরিন হেঁটে নির্ঝরের সামনে এসে দাঁড়াল। শীতল গলায় বলল, আমার রাগ খাবারের উপর দেখাবেন।

“আমি রাগ দেখাচ্ছি না, কিন্তু খেতে ইচ্ছে করছে না।

“কেন শরীর কি খারাপ লাগছে।

“না!

বলেই পাশ কাটিয়ে চলে আসতে নিল। মেহেরিন পেছন থেকে বলল, নির্ঝর আজ কিন্তু আমি শাড়ি পড়েছি।

“তো!

“তো কিছু না, প্রথম বার পড়েছি। আর আপনি জানেন?

“কি?

বলেই পেছন ফিরল নির্ঝর। মেহেরিন হেঁটে তার সামনে এসে দাঁড়াল। নির্ঝর গলা জড়িয়ে বলল, শাড়ি টা আপনি দিয়েছিলেন। জানেন কেউ প্রথমবার আমায় শাড়ি গিফট করেছিল। মনে পড়ে আপনার নির্ঝর!

নির্ঝরের দম বন্ধ হবার উপক্রম। সে মেহেরিন’র গলা ছাড়িয়ে বলল, না!

“বার বার না বলে ক্লান্ত হন না।

“কি বলতে চাও তুমি।

“নির্ঝর আপনি চেষ্টা করছেন না।

“কিসের চেষ্টা করবো, কি হয়েছে?

“আপনি বুঝতে পারছেন না নির্ঝর? নাকি বুঝেও না বোঝার ভান করছেন।

“মেহেরিন তুমি কি বলতে চাও।

“অনেক কিছু তবে তা শোনাবার সময় কি আছে আপনার কাছে। আপনি তো পাগলের মতো খুঁজে যাচ্ছেন অনামিকা কে।

“তুমি আমাকে ফলো করছে?

“নিজের স্বামী কে করতে দোষ কি। ( দীর্ঘশ্বাস ফেলল মেহেরিন, তার চোখের কোনে পানি চক চক করছে। ঢোক গিলে বলল ) কি খুঁজছেন অনামিকার মাঝে, আমাকে কি পাবেন তার মাঝে।

“আমি তো তোমায় খুঁজেছি না।

“আমাকেই খুঁজছেন তবে বুঝতে পারছেন ন সেটা আমি। কিন্তু একদিন ঠিকই বুঝবেন যখন আমাকে আর পাবেন না তখন।

“বাজে কথা রাখো।

“আচ্ছা আর বলছি না, ফোন নাম্বার দিন আপনার।

“কেন?

“অনামিকার ঠিকানা দিচ্ছি আপনাকে, দেখা করে আসুন।

“আমি নিজেই খুঁজে নিত পারবো তাকে।

“আচ্ছা নিন তাহলে।

“তাচ্ছিল্য করছো আমায়।

“এতো সাহস কোথায় নির্ঝর।

“মেহেরিন দেখো, আমি তোমাকে একটা কথা বলতে বলতে হাঁপিয়ে উঠেছি যে আমি তোমাকে ভালোবাসি না।

“কিন্তু আমি ক্লান্ত না নির্ঝর। আমি বার বার বলতে পারবো আমি আপনাকে ভালোবাসি!

“তাহলে আমিও বলছি আমি ভালোবাসি না তোমায়, তাই আমার পিছু আর আমার থেকে কিছু পাবার আশা দুটোই বাদ দাও। কিছুই হবার নয়। আর হ্যাঁ এসব শাড়ি টারি দেখিয়ে আমাকে কিছু করতে পারবে না তুমি। খুলে ফেল এই শাড়ি, আমি জানি এটা আমি দেই নি। আর শাড়িতে তোমাকে বিচ্ছিরি লাগছে।

মেহেরিন হাসল। নির্ঝরের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,
“তবে আপনার চোখ কেন বলছে আমায় আমাকে আজ খুব সুন্দর লাগছে।

নির্ঝর চোয়াল শক্ত করল। বলে উঠল, আমার চোখে তুমি যা দেখছো এটা তোমার কল্পনা ছাড়া আর কিছূই না। কারণ তুমি এটাই দেখতে চাইছো আর এটা সত্যি না। আর হ্যাঁ এটা শুনে রাখো আমি কখনোই তোমাকে খুঁজছি না, আমার সেই ভালোবাসার মানুষটি কখনোই তুমি হতে পারো না। আমি জানি এটা।

“এটা কি আপনার মন বলে না আপনি।

“আমি বলছি!

বলেই নির্ঝর বের হয়ে যায়। মেহেরিন তার অশ্রু বাঁধ দিয়ে তাকিয়ে থাকে নির্ঝরের চলে যাবার দিকে…

সারাদিন বাগানে বসে কাটিয়ে দিল মেহেরিন। পড়নে এখনো সেই শাড়িটা। রাত হয়ে গেছে অনেকক্ষণ তবুও কিসের অপেক্ষা তার। নির্ঝর এসেছে বোধহয়। গাড়ির আওয়াজ পেয়েছ সে। হয়তো এখন ঘরে বসে আছে। অনামিকা কে আজও খুঁজে পায়নি সে। তাকে খুঁজে হয়তো বেশ ক্লান্ত সে।

গাড়ির আওয়াজ আসল হঠাৎ করে। এখন কে এসেছে। মেহেরিন’র ফোন বেজে উঠল। নিরব কল করছে। তবে কি নিরব এসেছে। মেহেরিন কল রিসিভ করে বলল, আমি বাগানে।

নিরব ছুটে এলো বাগানে কারণ মেহেরিন’র গলা বেশ ভারী ভারী লেগেছে। মনে হলো মেহেরিন কাঁদছে। নিরব কে দেখে দাঁড়িয়ে গেল মেহেরিন। নিরব তাকিয়ে দেখল মেহেরিন’র মুখে হাসি। নিঃশ্বাস ফেলল সে। মেহেরিন’র হাত ধরে বলল, হাত এতো ঠান্ডা কেন তোর।

“অনেকক্ষণ ধরে এখানে বসে আছি এখানে তাই।

“তুই ঠিক আছিস মেহু!

মেহেরিন মাথা নেড়ে হ্যাঁ বললেও মুখ ফুটে বলল, না একদম না। আমি একদম ঠিক নেই রে নিরব। আমি আবারো ভুল করেছি। দ্বিতীয় বার ভালোবাসার সিদ্ধান্ত একদম ভুল ছিল আমার। আমার মোটেও উচিত হয় নি। আমি যে অভাগী। সুখ সহ্য হয় না আমার। এতো কিছু জানার পরেও নিজেই জেনে শুনে আগুনে পা দিয়েছি। তাই এখন জ্বলে পুড়ে যাচ্ছি আমি। বলতে বলতে কেঁদে উঠলো মেহেরিন।

নিরব কি বলে সান্তনা দেবে তা বুঝে উঠতে পারল না। সে এসে জড়িয়ে ধরল মেহেরিন কে। কারো আশ্রয় পেয়ে কষ্টটা যেন আরো তীব্র হয়ে গেল। মেহেরিন মাথা ঠুকিয়ে দিল নিরবের কাঁধে।

নির্ঝর গাড়ির আওয়াজ পেয়ে বেলকনিতে এসে দাঁড়াল। নিচ থেকে দাঁড়িয়ে দেখল নিরব জড়িয়ে ধরে আছে মেহেরিন কে। নির্ঝর শুধু তাকিয়ে’ই রইল। কেন জানি বেশ কষ্ট হচ্ছে তার। নিরব কে মেহেরিন’র পাশে সহ্য হয় না তার। মুহূর্তেই মনেই পড়ল মেহেরিন কে ভালোবাসে না সে। তবে এইসব কি ভাবছে। না এসব তো ভাবা যাবে না। নির্ঝর হেঁটে চলে এলো ঘরের মধ্যে!

#চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here