#অনুভূতির_অন্বেষণ
#চন্দ্রিকা_চক্রবর্তী
#পর্বঃ৭
(১৭)
রাত এখন প্রায় সাড়ে এগারোটা। মিশরাত চুপচাপ অন্যপাশে ফিরে শুয়ে আছে বিছানায়। সবসময় ইশরাত আসা পর্যন্ত মিশরাত অপেক্ষা করে। ইশরাতকে আগে ঘুম পাড়িয়ে দেয়। এরপর সে ঘুমায়। কিন্তু আজকে এমনটা হলো না। ইশরাত রুমে এসে মিশরাতের এই অবস্থা দেখে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। নিজে থেকেই মিশরাতের পাশে গিয়ে শুয়ে পড়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। পিঠে মুখ গুঁজে জিজ্ঞেস করলো
—-আপু, মনটা বেশি খারাপ তোর? ওই লোকটার জন্য কেন মন খারাপ করে রেখেছিস আপু? কেন ভাবছিস ওই লোকের কথা? সে তোর কোনো প্রকারের অনুভূতির ভাগীদার হওয়ারই যোগ্যতা রাখে না।
—-আমি শুধুমাত্র আন্টির কথা ভেবে গিয়েছিলাম রে। বিশ্বাস কর! নিজের মায়ের নামে মিথ্যে…
—-ওই অমানুষটা সবই পারে আপু। আমার তো আফসোস হচ্ছে তুই একসময় এই লোকটাকে ভালোবেসেছিলি বলে। আপু, নিজেকে শক্ত কর। ভুলে যা আজকে কী হয়েছে।
—-নিজেকে শক্ত করেই রেখেছি ইশু। তবে আজকে কী হয়েছে তা কখনো ভোলা সম্ভব নয় আমার জন্য।
—-আপু, একটা জিনিস ভেবে দেখেছিস?
—-কী?
—-শোধবোধ হয়ে গিয়েছে কিন্তু।
—-মানে বুঝলাম না।
—-আজ থেকে পাঁচ বছর আগে মাঠভর্তি মানুষের সামনে আরিয়ান হক তোকে অপমান করেছিলো। আর আজ পাঁচ বছর পর রাস্তায় এতোগুলো মানুষের সামনে দাঁড়িয়ে আরিয়ান হক নিজে অপমানিত হয়েছে। শুধু তাই না, তোর হাতের চড় অবধি খেয়েছে। একেবারে সুদে আসলে হিসেব মিটে গিয়েছে।
—-আমি এরকম শোধবোধ চাইনি ইশু। কারোর সাথে খারাপ ব্যবহার করা বা কারোর মনে কষ্ট দিয়ে কথা বলার বৈশিষ্ট্য আমার ছোটবেলা থেকেই নেই। কিন্তু আজকে কী হলো বুঝলাম না। নিজেকে কোনোভাবেই শান্ত রাখতে পারিনি।
—-এটা একদম ঠিক বলেছিস আপু। আমি তো পুরো শকড্ হয়ে গিয়েছিলাম তোর ব্যবহারে! মনে মনে ভাবছিলাম এটাই কী আমার আপু? সত্যিই এরকম রূপ তোর কখনো আগে দেখেনি আমি।
শুয়ে থেকেই ইশরাতের দিকে ফিরে গেল মিশরাত। ইশরাত আরেকটু ঘেঁষে চলে গেল তার বোনের কাছে। মিশরাত ঈষৎ হেসে ইশরাতের চুলে বিলি কেটে দিতে লাগলো।
—-তোর ট্যুরে মোট কয়দিনের মতো সময় লাগবে? তোকে ছাড়া তো আমার ভালো লাগবে না।
—-এইতো আপু, তিনদিন। জানিস? আমি প্রচুর এক্সাইটেড! প্রথমবারের মতো ফ্রেন্ডদের সাথে কোথাও এতো দূরে ঘুরতে যাচ্ছি। আব্বু আম্মু তো আমাকে ছাড়তে রাজি হয় না। এবার ভাগ্যিস তুই রাজি করাতে পেরেছিলি।
—-সবসময় বান্ধবীদের সাথে থাকবি। একা কোথাও যাবি না কিন্তু ভুলেও।
—-আচ্ছা বাবা, আচ্ছা। আমি ছোট বাচ্চা না তো আপু। তুই, আব্বু, আম্মু আমাকে ক্লাস টু এর বাচ্চার মতো ট্রিট করিস।
—-তুই আমাদের কাছে বাচ্চা-ই।
হঠাৎ এরমধ্যে দরজা নক করার শব্দ এলো। শোনা গেল রেণু আক্তারের কন্ঠ
—-দরজা খোল তো!
—-আম্মুর হঠাৎ কী হলো রে?
—-জানি না তো আপু। আমি গিয়ে দেখে আসি।
ইশরাত দরজা খোলার সাথে সাথে হুড়মুড়িয়ে রুমে ঢুকলেন রেণু আক্তার। ইশরাতের হাতের দিকে তিনি তাকিয়ে আছেন।
—-কী হয়েছে আম্মু? কোনো সমস্যা?
—-তোর ফোন কোথায় ইশু?
—-ফোন তো সাইলেন্ট করে রেখে দিয়েছি টেবিলের উপর। কেন?
—-দেখি সর আমার সামনে থেকে। মিশুর সাথে কথা আছে।
ইশরাতকে পাশ কাটিয়ে মিশরাতের পাশে গিয়ে বসলেন রেণু আক্তার।
—-আম্মু, আব্বু কিছু বলেছে? আব্বুর কিছু হয়নি তো? এতো রাতে তোমার কী দরকার পড়লো?
—-ইশুর ফোনে সবসময় নজর রাখবি।
দু’বোন একসাথে বলে উঠলো
—-কীহ্!
—-এই ইশু, তুই চুপ থাক। মিশু, ইশুর এই বয়সটা কিন্তু ভালো যাচ্ছে না। খুবই সাবধানে থাকার সময় এটা। ইশুকে দেখেশুনে রাখতে হবে আমাদের। সাদমান আমাকে আজকে সব বলে দিয়েছে বুঝিয়ে।
মিশরাতের মুখ হা হয়ে গেল। আর ইশরাত রাগে একেবারে একেবারে জ্বলে উঠলো। চিৎকার করে বললো
—-সাদমান কে আম্মু? সাদমান কে? সে তোমার ছেলে হয়? তোমার ভাই বোন এর ছেলে হয়? আব্বুর ভাই বোন এর ছেলে হয়? নাকি মেয়ের জামাই হয়? আমাকে নিয়ে পরামর্শ দেওয়ার সে কে?
—-সে আমাদের শুভাকাঙ্ক্ষী। যা বলবে, অবশ্যই আমাদের ভালোর জন্য বলবে। এটা আমার বিশ্বাস।
—-তোমার বিশ্বাস নয়। বলো অন্ধবিশ্বাস। আমি তোমার কথা শুনবো, আব্বুর কথা শুনবো, আপুর কথা শুনবো। ব্যস! এর বাইরে আর কারোর কথা শুনতে আমি বাধ্য নই। কিংবা তোমরা অন্য কারোর কথায় প্রভাবিত হয়ে আমাকে উপদেশ দেবে, সেটাও আমি মানবো না।
—-তোর ট্যুরে শুনেছি গার্জিয়ান অ্যালাউ করে?
—-হ্যাঁ, তো? আম্মু আম্মু, প্লিজ তুমি আবার আমার সাথে যেতে চেও না। ওইদিকে ফ্রেন্ডরা একসাথে মজা করবো তো আম্মু।
—-আমি কেন যাবো? আমি গেলে বাসা সামলাবে কে? রান্নাবান্না করবে কে? মিশুকে খাওয়াবে কে? সারাদিন অফিসে খাটাখাটুনি করে মেয়েটা।
—-তো? আব্বু এখন নিজের চাকরি ফেলে আসবে?
—-এতো সময় তোর আব্বুর নেই। সপ্তাহে একবার একদিনের জন্য আমাদের দেখতে আসতে পারে না। আর তোর সাথে ঘুরতে যাওয়ার জন্য আসবে?
—-তো কী আপু যাবে?
—-একটু আগে বললাম যে শুনিসনি? মিশু অফিসে যাবে। তাই রান্নাবান্না করা লাগবে আমার। আমার থাকা লাগবে।
—-তো যাবে টা কে?
—-সাদমান।
মিশরাত শোয়া থেকে উঠে দাঁড়িয়ে গেল। আর ইশরাত দাঁড়ানো থেকে খাটে বসে পড়লো। মিশরাতের মুখ হা করার আকার আরও বড় হয়ে গিয়েছে। কোনোমতে প্রশ্ন করলো
—-আম্মু, তোমার কী রাত-বিরেতে শরীর খারাপ করলো নাকি হ্যাঁ? কী আবোল তাবোল বলছো?
—-আবোল তাবোল না। সাদমান বলেছে ইশুকে একা ছাড়া ঠিক হবে না। যদি ট্যুরে গিয়ে তার কলেজের কোনো ছেলের সাথে পালিয়ে যায়! সাদমান না বললে তো এই ভয়ংকর কথাটা আমার মাথায়ই আসতো না।
ধপাস করে একটা শব্দ হলো। রেণু আক্তার আর মিশরাত ফিরে তাকিয়ে দেখলো কিছুই হয়নি। শুধু মাথা উল্টে বিছানায় পড়ে গিয়েছে ইশরাত। এতোবড় মেন্টাল শক বোধহয় বেচারির মস্তিষ্ক সহ্য করতে পারেনি! একবারে ধ-পা-স!
—-সাদমান তিনদিনের ছুটি ম্যানেজ করবে কীভাবে?
—-তিনদিন নয়তো। একদিনের করবে। প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করছিস। তোদের তো শুক্র শনিবার এমনিতেই বন্ধ। শুধু রবিবার ছুটি নিচ্ছে।
—-কিন্তু আমি যতোটুকু শুনেছি ইশুর রবিবারে বাসায় পৌঁছাতে রাত হবে। পরের দিন আবার অফিস করতে যাবে কেন সাদমান? এতো ধকল কেন নিজের উপর নেবে সে?
—-সেটা আমি কী জানি! আমাকে ফোন করে যা বললো, আমি তো তাই বললাম। এখন আমি যাই। তবে তোকে আবারও বলে রাখছি, ইশুর ফোন কিন্তু চেক করিস।
রেণু আক্তার চলে গেলেও মিশরাত এখনো আগের জায়গায় দাঁড়িয়ে। সাদমান এসব কী রহস্যময় কাহিনী তৈরি করছে এটা? দরজা লাগিয়ে রোবটের মতো হাঁটতে হাঁটতে ইশরাতের পাশে গিয়ে বসলো মিশরাত। সে নিজেও এখনো শক এর মধ্যে আছে। মৃদুকণ্ঠে ডাকলো
—-ইশু, শুনছিস আমার কথা? জ্ঞান কী পুরোপুরি হারিয়েছিস?
ইশরাতের থেকে কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মিশরাত স্বগতোক্তি করলো
—-বুঝেছি। পানির ছিটা দিতে হবে!
বেশ কয়েকবার চোখে পানি পড়ায় মিটমিট করে চোখ খুলে তাকালো ইশরাত।
—-আমি কোথায় আছি আপু?
—-জানি না রে। আমিও কোথায় আছি বুঝতে পারছি না। কেমন যেন অবিশ্বাস্য কাজকারবার করছে সাদমান।
—-আম্মু সত্যিই এসেছিলো আপু? স্বপ্ন দেখছি না তো?
—-দু’জনে একসাথে একরুমে বসে একই স্বপ্ন দেখার নজির আমি এখনো দেখিনি আর শুনিওনি। বাস্তবেই বোধহয় আছি।
—-চল একজন আরেকজনকে চিমটি মারি?
—-চিমটি মারার দরকার নেই। ফোন করলেই সব পরিষ্কার হয়ে যাবে।
এক লাফে উঠে বসলো ইশরাত। যেন হুট করেই তার ভেতর উত্তেজনা বেড়ে গিয়েছে।
—-ঠিক বলেছিস তো! আপু, কল দিয়ে আমার কাছে ধরিয়ে দে। এসব কী রসিকতা করছে নাকি? অদ্ভুত তো!
মিশরাত সাদমানের নাম্বারে ডায়াল করে ইশরাতের হাতে দিয়ে দিলো। ফোন নিয়ে বারান্দায় চলে গেল ইশরাত। আবার পাছে না রেণু আক্তার সাদমানের সাথে কথা বলতে শুনে ফেলেন।
প্রথমবারে ফোন ধরেনি সাদমান। পরের বার রিসিভ করলো
—-হ্যাঁ, মিশরাত বলো। ওয়াশরুমে ছিলাম। তাই ধরতে পারিনি।
—-এসবের মানে কী?
—-তোমার ভয়েস অন্যরকম লাগছে কেন মিশরাত? আর এতোটা রেগে আছো কেন? আর কোন সবের মানের কথা জিজ্ঞেস করছো?
—-আমি মিশরাত না। ইশরাত। আপনার সমস্যা কী হ্যাঁ? আমার পেছনে পড়ে আছেন কেন এভাবে?
—-অযৌক্তিক কথা কেউ তোমার থেকে বলতে শিখুক। আমি আমার রুমে, আমার বিছানায় শুয়ে আছি। তোমার পেছনে কখন পড়লাম? তোমার আশেপাশে কোথাও আমি আছি কী?
—-একদম কথা ঘোরানোর চেষ্টা করবেন না। আমার আম্মু আপনাকে বিশ্বাস করে বলে তাকে আমার ব্যাপারে যাচ্ছে তাই পরামর্শ দেবেন? আমার ফোন এখন হাতে নেওয়া মানেই আম্মু পাশে বসে থাকা। একটু আগে আপুকেও বলে গেল নজর রাখতে। আবার আমার সাথে ট্যুরে যাবেন বলে আপনি নাকি বলেছেন? আপনার কী কাজকর্মের এতোটাই অভাব পড়েছে?
—-আমি কী করবো আর কী করবো না সেটা আমি ঠিক করবো। তুমি না।
—-আপনি কী করেন না করেন সেটা কী আমি দেখতে যাই? নাকি কখনো বলেছি কিছু? আপনার বিষয়ে আমার কোনো ইন্টারেস্ট নেই। কিন্তু এখানে ব্যাপারটা আমাকে নিয়ে। তাই আমার তো কথা বলতেই হবে। আপনাকে আমার বিষয়ে নাক গলানোর অধিকার কে দিয়েছে?
—-কামরুল নামের ছেলেটা তোমাকে ইদানীং ফোনে ডিসটার্ব করছে সেটা তুমি কাউকে বলোনি কেন?
থতমত খেয়ে ফোন কান থেকে নামিয়ে একবার সাদমানের নাম্বারটা চেক করে আবারও ফোন কানে লাগালো ইশরাত।
—-এখন গলা দিয়ে আওয়াজ বের হচ্ছে না?
—-সেটা আপনার না ভাবলেও চলবে।
—-সত্যি সত্যি যখন ঠ্যাং খোঁড়া করে দিবো সেদিন বুঝবি বেয়াদব!
দ্বিতীয় বারের মতো থতমত খেল ইশরাত। সাদমান তাকে তুই করে বলেছে? এতো সাহস? কোত্থেকে পায় এতো সাহস? না, এতো সহজে দমে গেলে তো চলবে না! সে তো মনস্থির করেই নিয়েছিলো যে এবার আর সাদমানের ধমকে সে ঘাবড়ে যাবে না। নিজেকে ভেতর থেকে সাহস জুগিয়ে সাদমানকে রুক্ষ কন্ঠে বললো
—-একদম এরকম দুঃসাহস দেখাতে যাবেন না। আমাকে বকা দেন কোন সাহসে আপনি? বয়সে আপনার থেকে অনেক ছোট হতে পারি। তাই বলে যেভাবে মনে চায় সেভাবে আপনি আমার সাথে কথা বলতে পারেন না। ভবিষ্যতে আর কখনো যদি আমার সাথে গলাবাজি করতে আসেন, তো দেখবেন আমি কী করি।
—-দেখা যাক কে কী করে। কালকে সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা কর।
ফোন কেটে দিলো সাদমান নিজেই। মিশরাত কৌতূহলী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ইশরাতের মুখ থেকে কথা শোনার আশায়।
—-কী হলো রে ইশু? সাদমান কিছু বলেছে তোকে?
—-কয়েকদিন পেছন পেছন ঘুরঘুর করেছিলাম বলে এখন মাথায় উঠে গিয়েছে তোর এই বন্ধু। শোন আপু, তুই ওই সাদমান হাসানকে বলে দিবি যাতে আমার সাথে লাগতে না আসে। তোর ওই বন্ধু এখন আদা-জল খেয়ে আমার পেছনে পড়েছে। গোয়েন্দাগিরি শুরু করেছে।
—-কী গোয়েন্দাগিরি?
—-আরে কামরুল আমাকে….
এতোটুকু বলেই গলার আওয়াজ কমে গিয়ে একপর্যায়ে বন্ধ হয়ে গেল ইশরাতের। এই এক সমস্যা মেয়েটার। অতিরিক্ত বকবক করতে করতে কী বলে না বলে মাথায় থাকে না।
—-কী বললি? থেমে গেলি কেন? কামরুল কে? সে তোকে কী করেছে?
—-আপু, কিছু না। আসলে হয়েছে কী…
—-মিথ্যে বলার চেষ্টা করবি না ইশু। যা সত্যি, তাই বল। কে কামরুল?
—-আপু, টেনশন করিস না প্লিজ। তোরা সবাই চিন্তা করবি দেখেই আমি আরও বলতে চাইনি। আরে কামরুল কেউ না। আমার কলেজে পড়ে আর কী একটা ছেলে। প্রথম প্রথম কয়েকদিন আমার পেছনে আঠার মতো লেগে ছিলো৷ ভেবেছিলাম তখন তোদের বলবো। এরপর কী হলো কে জানে? নিজেই সরে গেল। ট্যুরে যেহেতু আমাদের কলেজের সবাই যাচ্ছি, তাই সে-ও যাবে। আমার নাম্বার কীভাবে জোগাড় করেছে কে জানে? হয়তো ক্লাসমেইট কোনো মেয়ে থেকে। এখন আবার দু-তিন দিন যাবত ফোন দিয়ে আসছে আমাকে।
—-এতোবড় কথা তুই আমাদের কাউকে বললি না কেন?
—-এটা সিরিয়াস কিছু নয় তো আপু। ঠিক হয়ে যাবে সব। এই ছেলের দু’দিন পরপর পাগলামি শুরু হয়। কয়েকদিন পাগলামো করে আবার ঠিক হয়ে যায়।
—-তোকে অন্যসব ক্ষেত্রে সাপোর্ট করলেও আমি এই ক্ষেত্রে সাপোর্ট করতে পারলাম না ইশু। ব্যাপারটা সিরিয়াস কিছু হোক বা না হোক। তোর উচিত ছিলো অন্ততপক্ষে আমাকে একটাবার বলার। আব্বু এখানে থাকে না ইশু। পুরুষ সদস্য বলতে কেউ নেই এই পরিবারে। তাই তোকে ওই ছেলে যদি টার্গেট করে বসে থাকে, তাহলেও কিন্তু আমি অবাক হবো না। তুই ট্যুরে যাবি না।
—-আপু!
—-আমি তোর দায়িত্ব নিয়ে আব্বু আম্মুকে রাজি করিয়েছি। কিন্তু এই ঘটনা তো আমি জানতাম না। তাহলে কখনো রাজি হতাম না। বান্দরবান কতোটা দূর এখান থেকে। হুট করেই তো আমি ছুটে যেতে পারবো না।
—-আপু, সেখানে টিচার্সরা থাকবে। আমার মতো অনেক মেয়ে আছে। আমি তাদের সাথে থাকবো৷ কামরুল আমার সাথে কথা বলার সুযোগই পাবে না। প্লিজ আপু, আমি অনেক দিন থেকে একটা সফরে যাওয়ার ইচ্ছে মনে পোষণ করে আসছি। এখন এভাবে তীরে এসে তরী ডুবিয়ে দিস না প্লিজ!
—-আমি তোকে নিয়ে চিন্তায় থাকবো ইশু। তোর চিন্তায় চিন্তায় থেকে আমার ঘুম হবে না। কাজে মন বসবে না।
—-প্লিজ আপু, প্লিজ। আমি তোকে ঘন্টায় ঘন্টায় ফোন দেবো প্রমিস!
—-উঁহু। তাতেও হবে না। আমি জানি না সাদমান কেন তোর সাথে যেতে চাইছে। তবে এবার সাদমানের সাথে আমি একমত। তোর যদি ট্যুরে যাওয়ার হয় তাহলে সাদমান তোর সাথে যাবে। নয়তো তোর যাওয়া বন্ধ।
ইশরাত আরও কিছু বলতে চাইছিলো। কিন্তু মিশরাত প্রশ্রয় দেয়নি। ইশরাতকে বিছানায় নিয়ে এসে প্রথমে শাসন করেছে, এরপর নিজেই ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছে। ইশরাত ঘুমিয়ে যাওয়ার পর অন্যপাশ ফিরে মিশরাত ঘুমোতে নেবে, তার আগেই ফোন ভাইব্রেট করলো তার। হাতে নিয়ে দেখলো আরিয়ান ফোন দিচ্ছে। দ্বিতীয় কোনো চিন্তা মাথায় না এনে সরাসরি ফোন অফ করে দিলো মিশরাত। যথেষ্ট হয়েছে, আর না। আর সে কথা বলতে চায় না আরিয়ানের সাথে। কথা বলার মতো রুচি টুকুও হারিয়ে ফেলেছে সে। মন খারাপের দল এসে আবারও হানা দিলো। এতোক্ষণ যাবত সবকিছু ভুলে থাকা মিশরাতের আবারও আজকের কাহিনী চোখের সামনে ভেসে উঠলো। মোনার সাথে কতোটা ঘনিষ্ঠ অবস্থায় ছিলো আরিয়ান! তার মানে মোনার সাথে তার এখনো সম্পর্ক আছে? থাকতেই পারে। সম্পর্ক তো আর আজকের নয়। অনেক বছর আগের। সে-ই তো তৃতীয় ব্যক্তি ছিলো তাদের দু’জনের মধ্যে। অতীত চোখের সামনে যেন জীবন্ত হয়ে উঠছে। রাত-বিরেতে ঘুম বাদ দিয়ে তাই তো মিশরাত ডুব দিলো অতীতের পাতায়।
চলবে…
(ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। কার্টেসী ছাড়া দয়া করে কেউ কপি করবেন না।)
[আগামী পর্ব থেকে অতীত সম্পর্কে আপনারা আস্তে আস্তে জানতে পারবেন। তবে একাধারে আমি অতীত নিয়ে লিখবো না। তাহলে বিরক্তি চলে আসতে পারে। অতীত এবং বর্তমান দু’টো একসাথে মিলিয়ে লেখার চেষ্টা করবো। ধন্যবাদ]