#অন্তঃকরণে_তোরই_পদচারণ
#পর্ব-১৩
#লেখিকা-মেহরুমা নূর
★বর্তমান,
ফোনের তীব্র আওয়াজে অতীতের ভাবনা থেকে বেড়িয়ে এলো খুশি৷ ফ্লোরে পড়ে থাকা ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলো স্ক্রিনে BB নামটা ভেষে উঠেছে। তবে সেটার থেকে বেশি খুশির নজর গেল ফোনের কোনায় ছোট সংখ্যায় থাকা সময়ের দিকে। যেটা ওর মস্তিষ্ক কে সতর্ক করে দিচ্ছে যে ও গত দু’ঘন্টা যাবৎ এভাবেই পড়ে ছিল। আৎকে উঠলো খুশি। মনে পড়ে গেল প্রহরের কথা। হড়বড়িয়ে উঠে দাঁড়াল খুশি। তড়িৎ গতিতে গিয়ে নিজের কাপড়চোপড় অগোছালো ভাবে লাগেজে ভরতে লাগলো। আর এক সেকেন্ডও এখানে থাকা যাবে না। এখুনি চলে যেতে হবে ওকে। প্রহর যে ওকে এতো সহজে ছাড়বে দিবে না সেটা ওর থেকে ভালো আর কেউ জানে না। তাই ওকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এখান থেকে চলে যেতে হবে। নাহলে যে সব বর্বাদ হয়ে যাবে। এতদিনের সব প্রচেষ্টা ধূলিসাৎ হয়ে যাবে।
কোনরকমে কাপড়চোপড় গুলো ঢুকিয়ে নিয়ে তড়িঘড়ি করে রুম থেকে বেড়িয়ে এলো খুশি। ভয়ে ভয়ে দ্রুত লিফটের কাছে এসে বাটন চাপলো। ভয়ে বুক কাঁপছে। প্রহর দেখার আগে এখান থেকে বের হতে পারলেই হলো। লিফট খুলতেই ভেতরে ঢুকলো খুশি। লিফটে কাউকে না দেখে একটু স্বস্তি পেল। তবে তার এই স্বস্তির স্থায়িত্বকাল খুবই ক্ষীণ প্রমাণিত হলো। লিফট বন্ধ হওয়ার ঠিক মুহূর্তেই প্রহরের আগমন ঘটলো। লিফটের ফাঁকের মাঝে হাত দিয়ে লিফট আবারও খুলে ফেললো সে। মুখমন্ডলের কঠিনত্ব চরম পর্যায়ে তার। ভয়ে কেঁপে উঠল খুশি। যে ভয়টা পাচ্ছিল সেটাই হলো। এখন কি করবে ও? প্রহরের হাত থেকে নিস্তার পাবে কি করে?
খুশি তবুও যথাযথ সাহস যুগিয়ে লিফট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলো। তবে বরাবরের মতোই প্রহরের কাছে ব্যার্থ হতে হলো তাকে। প্রহর খুশির হাত টেনে ধরে একহাতে লিফটের স্টপ বাটন চেপে লিফট থামিয়ে দিলো। খুশিকে আটকে ধরলো লিফটের দেয়ালে। খুশির দুই দিকে হাত রেখে মাঝখানে খুশিকে কারাবন্দী করে নিলো। খুশি মাথা নিচু করে আছে। প্রহরের দিকে তাকানোর সাহস নেই আপাতত। প্রহর তীক্ষ্ণ দৃষ্টির তীর নিক্ষেপ করে বলে উঠলো।
–আবারও পালানোর প্ল্যান চলছে তাইনা? বারবার একই কাজ করে ফেড আপ হওনা তুমি? তবে এবার না।দিস টাইম নট সো ইজি সুইটহার্ট। এবার আর পালাতে পারবেনা তুমি। তুমি হয়তো জানোনা যে রিসোর্টে তুমি আছ সেটা কার। এটা তোমার এক্স বয়ফ্রেন্ড প্রহর মেহরাবের রিসোর্ট। আর আমার জন্য তোমার বর্তমান স্থায়ী ঠিকানা বের করা জাস্ট একটা তুড়ির কাজ। তো তুমি চাইলেও আমার হাত থেকে বাঁচতে পারবেনা। তুমি পালাতে চাও পালাও। তবে যেখানেই যাওনা কেন আমাকে তোমার সামনে পাবে।
চমকে গেল খুশি। এটা প্রহরের রিসোর্ট সেটা ওর জানাই ছিলোনা। প্রহর ওর বর্তমান ঠিকানায় পৌঁছে গেলে সর্বনাশ হয়ে যাবে। আসল সত্যি টা জেনে যাবে ও। সব শেষ হয়ে যাবে তখন। খুশি বুঝতে পারছে এভাবে ও প্রহরকে ফাঁকি দিতে পারবে না। তাই নিজেকে সামলে নিয়ে বলে উঠলো।
–কি চাও তুমি?
প্রহর তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো।
–যা চাই তা কি দিতে পারবে? এনিওয়ে, মেইন কথায় আসি। তুমি বলেছিলে না আমি চাইলে তোমাকে যেকোনো শাস্তি দিতে পারি? তো এখন শাস্তি ভোগ না করেই চলে যাচ্ছো?
–ঠিক আছে। যা শাস্তি দিতে চাও দাও। অ্যাম রেডি।
–গুড গার্ল। তো এখন তোমার প্রথম টাস্ক হলো ভদ্র মেয়ের মতো চুপচাপ নিজের রুমে চলে যাবে। আর খবরদার পালানোর চেষ্টা করবে না। এতে বরঞ্চ তোমার ক্ষতিই বেশি হবে। গেট ইট।
মাথা দোলালো খুশি। মানে সে বুঝতে পেরেছে। প্রহর লিফট চালু করে দিলো। লিফট খুলতেই খুশি তড়িঘড়ি করে বেড়িয়ে গেল। প্রহর রহস্যময় হাসি দিয়ে তাকিয়ে রইলো খুশির পানে।
___
রাত আট টা,
ব্যালকনির গ্রীল ধরে উদাস মনে বসে আছে খুশি। শুন্য দৃষ্টি তার দূর আকাশের তারার দিকে। রাতের আঁধারের তুলনায় তার জীবনের আঁধারের পাল্লা ভারী। মলিন চোখে নেই কোন আশার আলো। যতদূর চোখ যায় শুধু আঁধারই ছুতে পায়। কেন হঠাৎ সব এমন দিকবিদিকশুন্য হয়ে গেল? কি ছিল তাহার কসুর? কোন হেতু পাচ্ছে সে এমন দন্ড? এসব সত্তয়াল পুছিবে কাহার কাছে? সেটাও যে বৃহৎ ধাঁধা। যে প্রহরের কাছ থেকে এতদিন পালিয়ে বেড়িয়েছে। এখন কিভাবে উপেক্ষা করবে তাকে? কিভাবে তার সম্মুখে থেকে নিজের অবাধ্য মনের অনুভূতিকে সামলাবে? প্রহর যে এখন আহত বাঘ হয়ে আছে। তাঁকেই বা কিভাবে শান্ত করবে? চারিদিকে শুধুই চক্রধারা।
ভাবনায় ছেদ পড়লো ফোনের আওয়াজে। টুং করে একটা ম্যাসেজ এলো। খুশি ম্যাসেজকারীর নাম্বার দেখেই চমকে গেল। এই নাম্বার যে তার চিরপরিচিত। কিন্তু প্রহর ওর নাম্বার কোথায় পেল? খুশি নিজের ভাবনার ওপরই তিরস্কার করলো। যেখানে এই রিসোর্ট টাই প্রহরের,সেখানে ওর নাম্বার পাওয়া টা কি এমন কঠিন ব্যাপার। খুশি ম্যাসেজ ওপেন করে দেখলো,
“আজ রাত রিসোর্টের হলরুমে নিউ ইয়ার পার্টি অ্যারেঞ্জ করা হয়েছে। এন্ড ইউ আর মাই স্পেশাল গেস্ট। ইউ মাস্ট কাম। অ্যাল বি ওয়েটিং ফর ইউ সুইটহার্ট। ”
ম্যাসেজ পড়ে চিন্তাভীতে আড়ষ্ট হয়ে পড়লো খুশি। নাজানি প্রহরের মাথায় কি চলছে? আর কিইবা করতে চাচ্ছে ও? প্রহরের মাথা এখন ঠিক নেই। ক্রোধের বসে উল্টোপাল্টা কিছু করে না বসে? ম্যাসেজ যখন পাঠিয়েছে তখন যেতে তো হবেই। নাহলে আরও হিতে বিপরীত হয়ে যেতে পারে। তবে ওর সামনে আমাকে যথাযথ স্বাভাবিক থাকতে হবে। যাতে ও এটা মেনে নেয় যে আমি ওর জীবন থেকে সত্যিই চলে গেছি। যতদ্রুত এটা ও মানবে ততই ও নিজের জীবনেও সুখী হতে পারবে।
পার্টি সেন্টারে নিউ ইয়ারের জাঁকজমক সেলিব্রেশন আরম্ভ হয়ে গেছে। সবাই মনের আনন্দে নাচগান হৈ হুল্লোড়ে মেতে উঠেছে। ফাহিমও ওর ফ্রেন্ডসদের সাথে এনজয় করছে। তবে প্রহর এসবের মাঝে তার ফেবারিট জায়গায় অবস্থান করে নিয়েছে। ড্রিংকস বারে বসে ইচ্ছেমতো অ্যালকোহল সেবন করে যাচ্ছে। নজর খুঁজে চলেছে শুধুই তার স্পেশাল গেস্ট খুশিকে। এখনো তার দর্শন হয়নি। কিছুক্ষণ পরে সেই কাঙ্ক্ষিত ব্যাক্তির দর্শন পেল প্রহর।কালো জর্জেটের শাড়ী পড়ে এসেছে খুশি। তাকে দেখে যতটা না চোখের তৃপ্তি পাবে তারচেয়ে বেশি তিক্ততা ঘিরে ধরলো খুশির হাত ধরে রাখা ব্যাক্তিটাকে দেখে। খুশির বয়ান অনুযায়ী যে কিনা খুশির সো কল্ড হাসব্যান্ড। আহত হৃদয়ের ক্ষত দীর্ঘ থেকে আরও দীর্ঘায়িত হচ্ছে। রক্তক্ষরণের ধারা বইছে হৃদবক্ষ জুড়ে। আর এই অসহনীয় যন্ত্রণার বহিঃপ্রকাশ স্বরূপ বাড়ছে শুধুই সীমাহীন ক্রোধ। যে ক্রোধ সব ধ্বংস করে দিতে সক্ষম। মায়াময়ী চোখে ভেসে উঠছে ক্রোধের লালিমা।
খুশির নজর পড়লো প্রহরের দিকে। প্রহরকে এভাবে অ্যালকোহলে ডুবে থাকতে দেখে বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠলো খুশির। অপরাধ বোধে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাচ্ছে অন্তর। প্রহরের এই দূর্দশা যে ওর কারণেই হয়েছে সেটা থেকে ও অজ্ঞাত না। কিন্তু ওতো এটা চায়নি। সেতো প্রহর কে জীবনে সুখী দেখতে চেয়েছিল।
খুশি নিজেকে সামলে নিয়ে নিজের নজর সরিয়ে নিল। জোরপূর্বক হেসে তার বর্ণিত স্বামী নামক ব্যাক্তিটার সাথে কথা বলতে লাগলো। যেন সে প্রহরকে দেখাতে চাইছে সে তার জীবনে কত সুখী। খুশি এবার সেই লোকটার হাত ধরে ডান্স ফ্লোরে এসে বাকিদের সাথে নাচতে লাগলো। সেসব দেখে প্রহরের ক্রোধ তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে।দাউ দাউ করে জ্বলছে মনের আগুন।কষ্ট আর ক্রোধের সংমিশ্রণে ভয়ংকর এক মনোভাবের সৃষ্টি হচ্ছে।ওদের দিকে অগ্নি চোখে তাকিয়ে থেকে একের পর এক ড্রিংকস শেষ করছে প্রহর।
হঠাৎ সেই লোকটির ফোন আসায় লোকটি ফোন নিয়ে বাইরের দিকে গেল। ভেতরে এত আওয়াজে কথা শোনা যাবে না। তাই ফোনে কথা বলার জন্য বাইরে চলে গেল।
খুশি ডান্স ফ্লোর থেকে সরে যেতে নিলেই হাতে টান পড়লো। এতক্ষণে প্রহর এসে খুশির হাত ধরে হ্যাঁচকা টান দিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নিল। খুশি চমকে উঠে বললো।
–কি করছো প্রহর ছাড়ো আমাকে।
প্রহর মাতাল কন্ঠে বললো।
–কি করছি মানে? ডান্স করছি। কেন এতক্ষণ তো খুব লাফিয়ে লাফিয়ে নাচছিলে। তো এখন আমার সাথে ডান্স করবে। কামন স্টার্ট।
–আমার এখন ডান্স করার ইচ্ছে নেই। ছাড়ো প্লিজ।
–আঃ আঃ তা বললে হচ্ছে না জানেমন। ডান্স তো তোমাকে করতেই হবে। ইউ নো না, ইউ কান্ট সে নো টু মি? সো লেটস স্টার্ট। শো মি সাম মুভস।
প্রহর খুশির হাত ধরে একপ্রকার জোর করেই খুশিকে নাচাতে লাগলো। খুশির হাত ধরে জোরে জোরে এদিক ওদিক ঘোরাতে লাগলো। খুবই রুডলি ভাবে খুশির কোমড় চেপে ধরে ডান্স করছে। নেশায় বুদ প্রহর এতক্ষণ ধরে চেপে রাখা নিজের কষ্ট আর ক্রোধের বহিঃপ্রকাশ ঘটাচ্ছে খুশির সাথে। খুশির প্রচুর ব্যাথা লাগছে। তবে খুশি বুঝতে পারছে প্রহর নেশায় মাতাল হয়ে গেছে।আর মারাত্মক রেগেও আছে। তাছাড়া প্রহর কখনো ওর এমন রুড বিহেব করতো না। খুশি নিজেকে ছাড়িয়ে চলে যেতে চাইলে প্রহর খুশির হাত ধরে পিঠে হাত মোড়া দিয়ে নিজের সাথে আটকে ধরলো। খুশির পিঠ গিয়ে ঠেকলো প্রহরের বুকে।হাতে প্রচন্ড ব্যাথা পাচ্ছে। ব্যাথায় চোখের কোনে পানি চলে এলো খুশির। প্রহর খুশির কাঁধে থুতনি রেখে বললো।
–কি হলো সুইটহার্ট এতো জলদি টায়ার্ড হয়ে গেলে? এতক্ষণ তো খুব হাসির ঝর্ণাধারা ঝরাচ্ছিলে। এখন কি হলো? আমার কাছে থাকতে বুঝি ভালো লাগছে না?
খুশি কান্না জড়িত কন্ঠে বললো।
–প্রহর লাগছে আমার। ছাড় প্লিজ।
খুশির কান্না মিশ্রিত কন্ঠ কানে আসতেই প্রহরের হাতটা ঢিলা হয়ে এলো। সেই সুযোগেই খুশি নিজেকে ছাড়িয়ে দৌড়ে ওখান থেকে সরে এলো। বাইরে ব্যালকনিতে এসে মুখে হাত চেপে কান্না আটকানোর যথাযথ চেষ্টা করছে। কাদলে যে চলবে না। ওকে শক্ত থাকতে হবে। এখনো যে অনেক রাস্তা পারি দিতে হবে ওকে। এভাবে এইটুকুতেই ভেঙে পড়লে চলবে না। হঠাৎ কোমড়ে কারোর স্পর্শ পেল খুশি। অন্তর কেঁপে উঠল। সে জানে এটা কে। প্রহর এবার আলতো করে পেছন থেকে খুশির কোমড় জড়িয়ে ধরে খুশির চুলে নাক ডুবিয়ে দিল। থমকে গেল খুশি। এই ভালোবাসার পরশ যে তার চিরচেনা। তার অস্তিত্বে গেঁথে আছে। এতদিন পর প্রিয়তমের স্পর্শে মনের জানালায় দক্ষিণা বাতাস ছুঁয়ে গেল। সব ভুলে হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে এই ধারায়।
খুশির চুলের ঘ্রাণে হারিয়ে মাতাল প্রহর আরও মাতাল হয়ে গেল। নেশায় মাতাল কন্ঠে বললো।
–সো সরি বাবু। আমার দুষ্টুপরি টাকে ব্যাথা দিয়ে ফেলেছি বুঝি।
দুষ্টুপরি, এতদিন পরে আবারও সেই ডাকটা শুনে বুকের মাঝে হু হু করে উঠলো। মন চাচ্ছে সময়টা যেন এখানেই থেমে যাক। তবে না। ওকে এভাবে দূর্বল হওয়া যাবে না। নিজেকে একটু সামলে নিয়ে খুশি নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললো।
–কি করছ প্রহর? তুমি কি ভুলে গেছ আমার বিয়ে হয়ে গেছে?
বিয়ের কথা শুনে প্রহরের ক্রোধ আবারও জাগ্রত হয়ে গেল। প্রহর খুশির কাছে এগিয়ে গিয়ে খুশিকে পেছনের দেয়ালের সাথে আটকে ধরে মাতাল কন্ঠে বললো।
–কেন কি হয়েছে? আমিতো আদর করছি তোমাকে। এসোনা আরও আদর করি।
প্রহর খুশির কোমড়ের কাছে শাড়ি সরিয়ে কোমড়ে স্লাইড করতে লাগলো। খুশি প্রহরের হাত সরিয়ে দিয়ে বললো।
–কি হচ্ছে এসব প্রহর? অসভ্যতামী করছ কেন?
প্রহর তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো।
–ওও তো এখন তোমার এসব অসভ্যতামী লাগে? আগে তো নিজেই আমার কাছে সবসময় আদর চাইতে। আর এখন আমার স্পর্শ তোমার অসহ্য লাগে? কেন আমার ছোঁয়ায় বুঝি আর মজা নেই? এখন ওই লোকটার ছোঁয়া ভালো লাগে তোমার তাইনা? তাইতো আমাকে ছেড়ে ওর কাছে চলে গেলে? ইস হি দ্যাট মাস গুড? টেল মি, হাউ ওয়াজ হি? ডিড হি রিয়্যালি স্যাটিসফাইড ইউ?
নেশা,কষ্ট আর ক্রোধ সব মিলিয়ে প্রহরের হিতাহিত জ্ঞান লোপ পেয়েছে। সে কি বলছে তার কোন চৈতন্য নেই। তবে খুশি আর শুনতে পারলোনা। সারা শরীর কেমন রি রি করে উঠলো ওর। তাই আর সইতে না পেরে ঠাস করে প্রহরের গালে চড় বসিয়ে দিয়ে বললো।
–ছিহহ্…
আর একমুহূর্তও না দাঁড়িয়ে দৌড়ে চলে গেল ওখান থেকে। আর প্রহর যথারীতি হাতের কাছে যা পাচ্ছে তাই ভাঙতে শুরু করে দিল। নিজের ক্ষোভ এই নিষ্প্রাণ বস্তু গুলোর ওপর খাটাতে লাগলো।
__
জারিফ খুশির রুমের দরজায় কয়েকবার নক করে কোন সারাশব্দ না পেয়ে, নিজের কাছে থাকা চাবি দিয়ে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলো। ভেতরে ঢুকে পুরো রুম অন্ধকার দেখতে পেল। জারিফ রুমের সুইচ খুঁজতে খুঁজতে বলতে লাগলো।
–কিরে খুশি তুই পার্টি থেকে কখন চলে এলি? আর আমি তোকে খুঁজে মরছি। একবার বলে আসবিনা আমাকে?
লাইট জালিয়ে পেছনে ফিরে তাকাতেই চমকে গেল জারিফ। খুশি খাটের পায়ার সাথে মাথা ঠেকিয়ে ফ্লোরে বসে আছে। ডান হাতের মাঝে কাচের গ্লাস চেপে ধরে আছে। যার দরুন হাতে কাচ বিঁধে গিয়ে ফ্লোরে রক্তের ধারা বয়ে যাচ্ছে। জারিফ আৎকে উঠে দ্রুত খুশির সামনে গিয়ে বসলো। খুশির হাত ধরে হাতের ভেতর থেকে কাচের টুকরো বের করতে করতে বলতে লাগলো।
–হোয়াট দ্যা হেল! এসব কি করেছিস তুই? হাতের কি অবস্থা হয়েছে দেখেছিস? পাগল হয়ে গেছিস তুই?
জারিফ ফাস্ট এইড বক্স বের করে খুশির হাত পরিস্কার দিতে লাগলো। খুশি তখন হাত টান দিয়ে বললো।
–ছেড়ে দাও বিবি। এই হাত ওর কর্মের ফল ভোগ করছে।ও বৃহৎ স্পর্ধা দেখিয়েছে।তাই ওর এটা প্রাপ্য।
জারিফ অবাক বলেন বিস্মিত কন্ঠে বললো।
–হোয়াট রাবিশ। কি আবোল তাবোল বকছিস? হয়েছে টা কি তোর? তখন তো পার্টিতে ঠিকই ছিলি হঠাৎ কি হয়ে গেল?
খুশি ব্যাথিত কন্ঠে বললো।
–ও এসে গেছে বিবি ও এসে গেছে।
–কে এসে গেছে?
–যার কাছ থেকে এতদিন পালিয়ে বেড়িয়েছিলাম সে এসে গেছে।
–এক মিনিট! তুই কি বলতে চাচ্ছিস ওই ছেলেটা? কি জেন নাম, প্রহর মেবি। ওর কথা বলছিস?
–হ্যাঁ প্রহর। আমার প্রহর। ও এখানে চলে এসেছে। আর আমাকেউ দেখে ফেলেছে।
–কখন? কিভাবে?
খুশি তারপর জারিফকে সবটা প্রথম থেকে খুলে ফেললো। সব শুনে জারিফ অবিশ্বাস্য কন্ঠে বললো।
–হোয়াট! তুই আমাকে তোর হাসব্যান্ড বলে দিয়েছিস?
–প্রহর আমাকে তোমার সাথে দেখে ভেবেছিল হয়তো তুমি আমার হাসব্যান্ড। তাই আমিও ওর ভাবনাকেই সঠিক প্রমাণ করে দিয়েছি। ওই মুহূর্তে এছাড়া আর কোন উপায় ছিলনা আমার।
–বাহ্ আর তাই তুই আমাকে তোর হাসব্যান্ড ঘোষিত করে দিলি। এসব করার কি দরকার খুশি? ছেলেটাকে সত্যি বলে দিলেই তো হয়। শুধু শুধু তুইও কষ্ট পাচ্ছিস। আর ওকেও কষ্ট দিচ্ছিস।
–না বিবি, কিছুতেই না। সত্যি টা ওকে কিছুতেই জানতে দেওয়া যাবে না।নাহলে আমার এতদিনের সব প্রচেষ্টা বিফলে যাবে। জানি হয়তো এখন কষ্ট পাবে। তবে চিরজীবনের কষ্টের চেয়ে এই কিছুদিনের কষ্টও যে ঢের ভালো। আমি চাই ও আমাকে তোমার সাথে হাসি খুশি দেখুক। তাহলে একসময় না একসময় ও এটা ঠিকই মেনে নিবে যে আমার জীবনে ওর আর কোন অস্তিত্ব নেই। তখন হয়তো ও আমাকে ভুলে নিজের জীবনে অগ্রসর হতে পারবে।
–আর যদি এমনটা নাহয়?
জারিফের এই প্রশ্নের উত্তর খুশিরও জানা নেই। জানা নেই আদৌও সে তার পরিকল্পনায় সফল হবে কিনা?
চলবে…….
গল্পের লেটেস্ট আপডেট পেতে আর গল্প নিয়ে যেকোনো আলোচনা আড্ডা দিতে আমার গ্রুপে জয়েন হওয়ার আমন্ত্রণ রইল। নিচে গ্রুপ লিংক দেওয়া হলো। জয়েন হতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন। 👇
গ্রুপ
https://facebook.com/groups/170529085281953/