অন্তঃকরণে তোরই পদচারণ পর্ব-১৪

0
1038

#অন্তঃকরণে_তোরই_পদচারণ
#পর্ব-১৪
#লেখিকা-মেহরুমা নূর

★আরও একটা বিষাদময় রাতের অবসান ঘটিয়ে সকালের ঝলমলে আলো ফুটে উঠলো। যদিও এ আলোর কিরণ প্রহরের মাঝে পৌঁছাতে ব্যার্থ। তার ভেতরের কালো আধার সারাতে ব্যার্থ। এই আধার যে একমাত্র খুশি নামক আলোতেই ঘুচবে। প্রহরের সব সরণি যে খুশিতেই প্রারম্ভ আর খুশিতেই অন্ত।রাগে, অনুরাগে, শয়নেস্বপনে সর্বত্রই খুশির আধিপত্য। প্রহরের সূচনাও খুশি আর উপসংহারও খুশি। তাইতো প্রহরের ভাবনার জুড়ে শুধু তারই পদচারণ।

দুই হাতে মাথা চেপে ধরে বসে আছে প্রহর। নেশার ঘোর কেটেছে। মনে পড়ে যাচ্ছে কাল রাতের কথা। কাল নেশার ঘোরে, রাগের মাথায় খুশির সাথে অনেক বাজে বিহেব করে ফেলেছে সে। অপরাধ বোধে তলিয়ে যাচ্ছে সে। কিভাবে পারলো খুশির সাথে অমন ব্যাবহার করতে? ও যদি আবারও পালিয়ে যায় তাহলে কি করবো আমি? না না ওকে আবারও হারাতে পারবোনা আমি কিছুতেই না। অস্থির মনে দ্রুত বেড়িয়ে গেল খুশির খোঁজে। খুশিকে না দেখা পর্যন্ত শান্তি পাবে না ও।

খুশির রুমের সামনে এসে দেখলো রুম লক করা। তারমানে খুশি ভেতরে নেই। তাহলে কি সত্যি সত্যিই চলে গেল ও? নো নো দিস টাইম ইট কান্ট বি হ্যাপেন্ড। প্রহর অশান্ত হয়ে চারিদিকে খুশিকে খুঁজতে লাগলো। রিসোর্টের কোথাও না পেয়ে প্রহর এবার বাইরে এসে বিচের দিকে গেল খুঁজতে। কিছুক্ষণ খোঁজার পর দেখা পেল খুশির। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো প্রহর। ওইতো সামনে ছাতা বিশিষ্ট চেয়ারে বসে আছে ওর প্রনয়ণী।আনমোনা হয়ে তাকিয়ে আছে সামনের বিশাল সমুদ্রের দিকে। বাতাসে তার খোলা চুলগুলো উড়ছে। প্রহর খুশির দিকে যেতে নিয়েও আবার গেলনা। এইমুহূর্তে ওকে ডিস্টার্ব না করাটাই ঠিক মনে হলো। প্রহর দূরে বসেই খুশিকে অবলোকন করতে লাগলো। ওর খুশিটা আর আগের মতো নেই।সেই প্রাণচাঞ্চল্যতা,দূরন্তপনা সব যেন গায়েব হয়ে গেছে। চেহারায় কেমন উদাসীনতা বিরাজ করছে। মুখটা কেমন ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। অনেক টা শুঁকেয়েও গেছে।

খুশির এই রুপান্তরিত রুপ প্রহরকে আরও দুমড়ে মুচড়ে দিচ্ছে।নিজের ওপর চরম রাগ হচ্ছে। কাল রাতে করা ওর কাজের জন্যই হয়তো খুশি এতো আপসেট। প্রহর বুঝতে পারছে ওর খুশি ভালো নেই। থাকবেই বা কি করে? প্রহরের খুশিতো শুধু প্রহরের কাছেই ভালো থাকবে। আর কারোর কাছে না। প্রহর আর খুশি দুজন দুজনার পরিপূরক। একজনকে ছাড়া আরেকজন ভালো থাকতেই পারে না। হঠাৎ প্রহরের নজর গেল খুশির হাতের দিকে। হাতে ব্যান্ডেজ দেখে বুক কেঁপে উঠল ওর। কি হয়েছে খুশির হাতে? কাল রাতে তো ঠিকই ছিল।তাহলে হঠাৎ কি হয়ে গেল? ওই রাস্কেল টা আবার কিছু করলো নাতো খুশির সাথে? যদি ওই রাস্কেল টা কোনকারণে খুশিকে আঘাত করে থাকে তাহলে ওর আয়ুকাল সমাপ্ত হয়ে এসেছে। কুল ডাউন প্রহর। কোন কিছু না জেনে আগেই কোন স্টেপ নেওয়া ঠিক হবে না। এতে খুশির আরও ক্ষতি হতে পারে।

তবে খুশির এই মলিন চেহারা প্রহরের সহ্য হচ্ছে না। আপাতত খুশির মুখে একটু হাসি কিভাবে ফুটানো যায় সেই চিন্তা করছে প্রহর। তখনই পাশে তাকিয়ে দেখলো কিছু বাচ্চারা বেলুন দিয়ে খেলছিল। প্রহর বাচ্চাগুলোকে ডেকে কানে কানে কিছু বললো। বাচ্চারা মাথা ঝাকিয়ে সবাই দৌড়ে খুশির সামনে গেল। খুশির সাথে ওরা বেলুন দিয়ে খেলতে লাগলো। মাছুম বাচ্চাদের দেখে খুশির ঠোঁটে আপনাআপনি এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো। আর খুশির ঠোঁটের এই সামন্য হাসিটুকুই যেন প্রহরের মনে এই বিশাল সমুদ্রের জলরাশি সমান তৃপ্ততা বয়ে আনলো।

তখনই ফাহিম এসে প্রহরের পাশে বসে বলে উঠলো।
–কি করছিস তুই ইয়ার? খুশিকে জোর করে এখানে রেখে তুই কি করতে চাইছিস?

প্রহর খুশির দিকে তাকিয়ে থেকেই বলে উঠলো। –কি আবার করবো? আমার খুশিকে আমার কাছে ফিরিয়ে আনবো ব্যাস আর কি?

–প্রহর তুই কেন বুঝতে পারছিস না? খুশির বিয়ে হয়ে গেছে? ও এখন অন্য কারোর সাথে হাসিখুশি সংসার করছে। তুই কেন ওর লাইফে কমপ্লিকেশন ক্রিয়েট করতে চাচ্ছিস?

প্রহর ফাহিমকে খুশির দিকে ইশারায় দেখিয়ে বললো।
–হাসিখুশি? কিসের হাসিখুশি? তুই একটু ভালো করে দেখতো খুশিকে। দেখ কোথায় ওকে হাসিখুশি দেখাচ্ছে? আরে ওকেতো খুশিই মনে হচ্ছে না।মনে হচ্ছে অন্য কেউ। ওর মাঝে তুই আমাদের আগের খুশির মতো কিছু খুঁজে পাচ্ছিস? যে খুশি সবাইকে তার উদ্দীপনায় মাতিয়ে রাখতো, সেই খুশি আজ নিজেই হারিয়ে গেছে। একে তুই হাসিখুশি থাকা বলছিস?

–তুই কি বলতে চাইছিস?

–দেখ আমি যা বোঝার বুঝে গেছি। আমি বুঝতে পেরেছি হয়তো খুশির ফ্যামিলি ওকে জোর করে বা কোনরকম ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে ওকে এই বিয়ে করতে বাধ্য করেছে। আর এই কারনেই ও এভাবে আমার জীবন থেকে গায়েব হয়ে গেছে। তবে আমি জানি আমার খুশি অন্য কারোর সাথে কিছুতেই ভালো থাকতে পারে না। ও শুধুমাত্র আমার সাথেই সুখী হবে। তাই যে করেই হোক আমার খুশিকে আমি আবারও আমার কাছে ফিরিয়ে আনবো। এবার আর হারাতে দেবনা ওকে।

ফাহিম আর কিছু বললো না ওকে। জানে বলে লাভ নেই। প্রহর খুশির জন্য দিওয়ানা। খুশির জন্য ও পাগলামির সর্বোসীমা ছাড়িয়ে যাবে। করোর কোন কথাই মানবে না। বাচ শুধু আশা করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই।
__

ফাহিম একটু বিচে এসেছে ঘুরতে। প্রহরতো ওর কাজেই মত্তো তাই ফাহিম আপাতত ওর বাকি বন্ধুদের সাথে এসেছে। সমুদ্রের পানিতে দাঁড়িয়ে টুকটাক আড্ডা দিচ্ছে বন্ধুদের সাথে। সব পর্যটকেরা যার যার মতো আনন্দ উল্লাসে মাতোয়ারা। কেউ পরিবারের সাথে, কেউ বন্ধুবান্ধবদের সাথে, আবার কেউবা এসেছে তাদের নব বিবাহিত জীবনের কিছু সুন্দর মুহূর্ত গড়তে।

এমনই এক ফ্রেন্ডসার্কেল ফাহিম দের থেকে কিছুটা দূরে আড্ডা দিচ্ছে। সবাই মিলে হৈ হুল্লোড়ে মেতে উঠেছে। তবে ওদের মাঝে একটা মেয়ে ওর নজর আকৃষ্ট করেছে। না মেয়েটার রুপের সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হয়নি ফাহিম।যদিও মেয়েটা যথেষ্ট সুন্দর। তবে ফাহিমের কৌতুহলের কারণ হলো মেয়েটিকে কেন যেন ওর চেনা চেনা মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে কোথায় যেন দেখেছে ও মেয়েটাকে। ফাহিম ব্রেনের হার্ড ডিস্কে সার্চ মারলো। মেয়েটাকে কোথায় দেখেছে সেটা মনে করার চেষ্টা করছে। অতঃপর সফল হলো তার প্রচেষ্টায়। মনে পড়লো কোথায় দেখেছে সে মেয়েটাকে। আর মনে পড়তেই ভ্রু কুঁচকে এলো ফাহিমের। এই মেয়ে এখানে? এভাবে?

(ফ্লাসব্যাক)
মাসখানেক আগের কথা। ফাহিম ওর মায়ের অনেক জোড়াজুড়িতে বিয়ের জন্য, অনিচ্ছা সত্ত্বেও একটা মেয়ের সাথে রেস্টুরেন্টে দেখা করতে যায়। রেস্টুরেন্টে গিয়ে টেবিল বুক করে বসে মেয়েটার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। পাঁচ মিনিট একটা মেয়ে সেখানে আসে। ফাহিম মেয়েটাকে দেখে একটু বিভ্রান্ত চোখে তাকায়। মেয়টা কেমন পুরানো দিনের মতো ঢিলাঢালা সেলোয়ার-কামিজ পড়েছে। চোখে ইয়া বড়ো বড়ো মোটা ফ্রেমের চশমা।চশমার পাওয়ার তো মনে হচ্ছে সর্বোনিম্ন মাত্রায়। চুলগুলো মনে হচ্ছে তেলের মধ্যে ডুবিয়ে এনেছে। মেয়েটা তার বাঁধাই করা দাঁত গুলো বের করে বললো।
–জ্বি আমি তিশা।

ফাহিম নিজেকে একটু সামলে নিয়ে বললো।
–ও হ্যাঁ হ্যাঁ আমি ফাহিম। বসুন না প্লিজ।

তিশা ফাহিমের মুখোমুখি চেয়ার টান দিয়ে বসে লাজুক ভঙ্গিতে নিচের দিকে তাকিয়ে রইলো। ফাহিম একটু স্বাভাবিক হওয়ার জন্য বলে উঠলো।
–আপনি কি খাবেন? চা না কফি?

তিশা কিছু না বলে ওভাবেই বসে আছে। ফাহিম আবারও বলে উঠলো।
–বলছিলাম যে আপনি কি কিছু অর্ডার দিবেন?

তিশা তখন বলে উঠলো।
–কি বললেন আরেকটু জোরে বলুন না? আসলে আমি কানে কম শুনি তো। আগে তো একদমই শুনতে পেতাম না। এইতো কিছুদিন আগে অপরেশন হয়েছে। তাই এখন আধটু শুনতে পাই।

বেচারা ফাহিম হতবিহবল হয়ে গেল। ওর মা কি দেশে আর কোন মেয়ে খুজে পায়নি? শেষমেশ কিনা এই মেয়ে? তবুও নিজের মনোভাব কোনরকমে দমিয়ে নিয়ে একটু উচ্চস্বরে বললো।
–আমি বলছিলাম আপনি কি খাবেন?

–জ্বি ধন্যবাদ আমি এখন কিছু খাবোনা। আসলে আমার আবার গ্যাসের সমস্যা আছে। একটুখানি গড়বড় হলেই বোম ব্লাস্ট শুরু হয়ে যাবে। তাই মা বলেছে আমি এবার যেন কিছু না খাই। নাহলে গত উননব্বই নাম্বার ছেলেটার মতো আপনিও ব্লাস্টে উড়ে যাবেন।

বেচারা ফাহিম সেদিন কোমায় যেতে যেতে রক্ষা হয়েছিল। বাসায় গিয়ে সেদিন ওর মার সাথে অনেক রাগ দেখিয়ে ওই বিয়েতে মানা করে দেয়।

কিন্তু আজকের এই তিশা তো অন্যই একজন মনে হচ্ছে। সেদিনের সেই তিশার সাথে কোন মিল নেই এই মেয়ের। এই মেয়েতো একেবারে মডার্ন মেয়েদের মতো জিন্স প্যান্ট, টপস পড়া। চোখে নেই কোন চশমার বালাই। চুলগুলোও এখন বাতাসে দোল খাচ্ছে। কাহিনি কি? এটা কি সত্যিই তিশা? নাকি ওর কোন জমজ বোন? বিষয় টা ক্ষতিয়ে দেখার কৌতুহল দমিয়ে রাখতে না পেরে ফাহিম মেয়েটার দিকে এগিয়ে গেল। মেয়েগুলোর কাছাকাছি যেতেই ওদের কথপোকথন কানে এলো ফাহিমের। তিশার এক বান্ধবী বলছে।
–ওয়াও ইয়ার কত্তো মজা হচ্ছে। আমার তো এখান থেকে যেতেই ইচ্ছে করছে না। সব তোর জন্য হয়েছে তিশা। থ্যাংকস ইয়ার।

তিশা ডাকায় ফাহিম শিওর হলো এই মেয়েটিই তাহলে তিশা। এবার তিশা বলে উঠলো।
–মেনশন নট দোস্ত। আরে আমিওতো এই ফ্রিডম লাইফ চাই। তাইতো কোন বন্ধনে আবদ্ধ হইনা। দেখিস না বাবা মার আনা ছেলে গুলোকে কিভাবে ভাগাই। আমও খাই লাঠিও ভাঙিনা। এমন নাটক করি যে ছেলেগুলো নিজে থেকেই বিয়েতে মানা করে দেয়। আর মাঝখান আমি দুখিয়ারি সব সিমপ্যাথি পেয়ে যাই। আর আমার মন ভালো করার জন্য বাবা আমাকে ট্রিপে পাঠিয়ে দেয়। এটা হলো তিশার ক্যালমা।

পেছন থেকে সব শুনে ফাহিম হতভম্ব হয়ে গেল। মানে এই মেয়েটা ওকে এভাবে উল্লু বানিয়ে দিয়েছে? একে তো আমি মজা দেখাচ্ছি। অনেক সখ না দুখিয়ারি সাজার? এবার দেখাবো আমার ক্যালমা। ফাহিম বাঁকা হেসে মাথায় কিছু সয়তানি আঁটতে লাগলো।
__

রাত আট টা,
জানুয়ারি মাসের প্রথম দিন আজ। তীব্র শীত চারিদিকে। হিম শীতল বাতাসে শরীর যেন জমে যাওয়ার উপক্রম।রুমের ভেতর বসে বসে ভালো লাগছিল না খুশির।তাই গায়ে একটা চাদর জড়িয়ে হাঁটতে হাঁটতে বাইরের দিকে এলো। বাইরে এসে দেখলো রিসোর্টের খোলা জায়গায় অনেক ছেলেমেয়ে আগুন জ্বালিয়ে বসে আড্ডা দিচ্ছে। কেউ আবার গিটার বাজিয়ে গান ধরেছে।বিষয় টা খুশির ভালোই লাগলো। খুশিও এগিয়ে গিয়ে ওদের মাঝে বসলো। সবার সাথে টুকটাক কথা বলতে লাগলো।

কিছুসময় অতিবাহিত হওয়ার পর ওখানে প্রহরও এসে উপস্থিত হলো। সেও ওখানে বসে খুশিকেই অবলোকন করতে লাগলো। প্রহরকে দেখে খুশি একবার উঠে যেতে চাইলো, আবার ভাবলো এভাবে উঠে গেলে হয়তো আরও রেগে যেতে পারে প্রহর। তখন সবার সামনে উল্টো পাল্টা কোনকিছু করে বসবে। অগত্যা ওভাবেই বসে রইলো খুশি। প্রহরের নজর খুশিতেই আবদ্ধ। আগুনের প্রজ্বলিত আলোয় খুশির মায়াবী মুখখানা জ্বলজ্বল করছে। যে আলোয় মোহময় হচ্ছে প্রহরের মন বাগান। খুব ইচ্ছে করছে পাগলীটাকে বুকের মাঝে নিয়ে,এ বুকের দহন মেটাতে। সমুদ্র কিনারে তাকে নিয়ে চন্দ্রবিলাস করতে। কিন্তু শতইচ্ছা থাকা সত্বেও পারছে না তা করতে। কেন এতো বাঁধা বিঘ্নতা ওদের মাঝে?

হঠাৎ পাশের একটা ছেলের কথায় ভাবনায় ছেদ পড়লো প্রহরের। এখানকার অনেকেই প্রহরকপ চেনে।তাদের মাঝে একটা ছেলে প্রহরের দিকে গিটার এগিয়ে দিয়ে বললো।
–ভাইয়া একটা গান শোনান না? আমাদের সবার রিকুয়েষ্ট প্লিজ?

প্রহর একবার খুশির দিকে তাকালো। তারপর গিটার টা হাতে তুলে নিল। খুশির পানে দৃষ্টি রেখে, তাদের ভালোবাসাময় মধুর স্মৃতি গুলো মন করে গেয়ে উঠলো।
♬ তুম মেরে হো ইসপাল মেরে হো
♬ কাল শাহেদ এ আলাম না রাহে
♬ কুছ এইসা হো তুম তুম না রাহো
♬ কুছ এইসা হো হাম হাম না রাহে
♬ ইয়ে রাস্তে আলাগ হো যায়ে
♬ চালতে চালতে হাম খো যায়ে

♬ মে ফিরবি তুমকো চাহুঙ্গা
♬ মে ফিরবি তুমকো চাহুঙ্গা
♬ ইস চাহাত মে মার যাউঙ্গা
♬ মে ফিরবি তুমকো চাহুঙ্গা

♬ এইসে জরুরি হো মুঝকো তুম
♬ জেইসে হাওয়া এ শ্বাসো কো
♬ এইসে তালাসু মে তুমকো
♬ জেইসে কি পের জামিনো কো
♬ হাসনা ইয়া রোনা হো মুঝে
♬ পাগাল সা ঢুনডো মে তুঝে
♬ কাল মুঝকো ইজাজাত হো না হো
♬ কাল মুঝ সে মোহাব্বত হো না হো
♬ টুটে দিলকে টুকরে লেকার
♬ তেরে দার পে হি রেহ যাউঙ্গা

♬ হোও ওওও ও
♬ মে ফিরবি তুমকো চাহুঙ্গা
♬ মে ফিরবি তুমকো চাহুঙ্গা
♬ ইস চাহাত মে মার যাউঙ্গা
♬ মে ফিরবি তুমকো চাহুঙ্গা

প্রহরের গানের মাঝে তার আহত হৃদয়ের বেদনার সুর ভেসে উঠেছে। চোখে ভেসে উঠেছে মর্মবেদনার লাল লালিমা। খুশির পক্ষে আর সহ্য করা অসম্ভব। প্রহরের এই নিদারুন সুর তার সহ্য ক্ষমতার বাইরে। খুশি আর থাকতে না পেরে দ্রুত ওখান থেকে উঠে এলো। দৌড়ে এলো সমুদ্র পাড়ে। নিঃশ্বাস টা কেমন আটকে আসছিল ওর। একটুখানি কাঁদার খুব দরকার ওর। নাহলে দম আঁটকে মরে যাবে ও। খুশি মুখে হাত চেপে কাঁদতে লাগলো।

তবে শান্তিতে বেশিক্ষণ এটাও করতে পারলোনা ও। প্রহর ওর পিছে এসে বললো।
–কি হলো পালিয়ে এলে কেন? নাকি আমার কষ্ট সহ্য হচ্ছিল না তোমার?

খুশি দ্রুত চোখের পানি মুছে ওখান থেকে চলে যেতে লাগলো। কিন্তু প্রতিবারের মতো ব্যার্থ হলো সে। প্রহর খুশির হাত ধরে আটকে দিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললো।
–কি হলো বলোনা? কেন চলে এলে? নাকি আমার মুখোমুখি থাকার ক্ষমতা অর্জন করতে পারছনা? আমি জানি তুমি যাই বলনা কেন, আমার কষ্ট তুমি আজও সইতে পারোনা। তাইনা বলো? তাহলে কেন দূরে থাকছ? কেন কষ্ট দিচ্ছ আমাকে?

খুশি অনেক জোর খাটিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললো।
–এ এমন কিছুই না। তুমি ভুল ভাবছ। যেতে দাও আমাকে।

প্রহর আবারও খুশিকে নিজের সাথে আটকে নিয়ে কপালে কপাল ঠেকিয়ে অবুঝের মতো করে বলতে লাগলো।
–না ছাড়বোনা। কিছুতেই ছাড়বোনা আমি।

খুশি ক্লান্ত হয়ে বললো।
–এমন কেন করছ প্রহর? তুমিতো অনেক আদর্শ আর নীতিবান ছেলে ছিলে। তাহলে এখন কি হয়েছে তোমার? এমন অশোভনীয় আচরণ কেন করছ?

প্রহর ক্ষোভের সুরে বললো।
–কি লাভ হলো এতো ভালো মানুষ হওয়ার? ভালো মানুষ হওয়ার প্রতিদান স্বরূপ তোমাকে হারালাম। তারচেয়ে তো আমিও তোমার মতো বেপরোয়া হলেই ভালো হতো। নিজেকে সংযত না রেখে তোমাকে যদি একান্ত নিজের করে নিতাম। তাহলে হয়তো আজ তুমি আমার কাছে থাকতে। তাই এখন যদি তোমাকে ফিরে পেতে আমাকে জঘন্য খারাপও হতে হয় তবুও আমি হবো।

খুশি চমকে উঠে বললো।
–ফিরে পেতে মানে? কি বলছ এসব? দেখ,তুমি কিন্তু বলেছিলে তুমি যদি আমাকে শাস্তি দিতে চাও তাই এখানে আটকে রেখেছ। তাহলে এই ফিরে পাবার কথা কোথাথেকে আসছে?

প্রহর তিরস্কার মূলক হাসি দিয়ে বললো।
–শাস্তি? কিসের শাস্তি? যার নামে আমার প্রতিটা নিঃশ্বাস চলে তাকে কি শাস্তি দিবো আমি? এই অন্তর্দেশ জুড়ে যার পদচারণ তাকে কি শাস্তি দিবো? যার দর্শন বিনা মরেও শান্তি পবোনা তাকে কি শাস্তি দিবো বলতে পারো? আরে শাস্তি তো আমি পাচ্ছি। তাও বিনা অপরাধে। দিনরাত প্রতিটি মুহূর্ত পুড়ে পুড়ে ছাই হচ্ছি। আমি আর পারছিনা খুশি। প্লিজ ফিরে এসো আমার কাছে।আই প্রমিজ আমি কখনো তোমাকে কোন প্রশ্ন করবোনা। কখনো তোমার কাছে কোন কৈফিয়ত চাইবো না। বাচ আমার শুধু তুমি চাই খুশি। শুধু তুমি।

কথাগুলো বলতে বলতে প্রহরের চোখ ভরে এলো। প্রহর ধীরে ধীরে হাঁটু ভেঙে নিচে বসে পড়লো। দুই হাতে শক্ত করে খুশির কোমড় জড়িয়ে ধরে পেটে মাথা ঠেকিয়ে আকুতি ভরা কন্ঠে বলতে লাগলো।
–প্লিজ খুশি। আই কান্ট লিভ উইথাউট ইউ। প্লিজ কাম টু মি।প্লিজ প্লিজ প্লিজ….

খুশির বুকটা যে দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে।কঠোর আত্মমর্যাদা পূর্ণ প্রহরের এই নিদারুন অবস্থা খুশি কিছুতেই সহ্য করতে পারছে না। বুকটা ফেটে যাচ্ছে ওর। যাকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসে, আজ তাকেই না চাইতেও কষ্ট দিতে হচ্ছে। খুশি আর সইতে পারলো না। তাই কোনরকমে নিজেকে ছাড়িয়ে আবারও ছুটে চলে গেল। প্রহর ওভাবেই বসে থেকে উচ্চস্বরে বলতে লাগলো।
–প্লিজ খুশি যেওনা। কাম ব্যাক টু মি। একবার মনে করো সেই দিনগুলো। কত খুশি ছিলাম আমরা। কত মধুর ছিল সেই দিনগুলো।

বলতে বলতে প্রহর বালির ওপরই চিত হয়ে শুয়ে পড়লো। খুশিকে পুরোনো দিনের কথা বলতে বলতে নিজেও হারিয়ে গেল সেই মধুই দিনগুলোতে। যেখানে তাদের সুখের সীমা ছিলনা।

চলবে…..

গল্পের লেটেস্ট আপডেট পেতে আর গল্প নিয়ে যেকোনো আলোচনা আড্ডা দিতে আমার গ্রুপে জয়েন হওয়ার আমন্ত্রণ রইল। নিচে গ্রুপ লিংক দেওয়া হলো। জয়েন হতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন। 👇
গ্রুপ
https://facebook.com/groups/170529085281953/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here