#অন্তঃকরণে_তোরই_পদচারণ
#পর্ব-৩৩
#লেখিকা-মেহরুমা নূর
★সকাল বেলার শিরশিরানি বাতাসের শীতলতা ছুয়ে দিলো খুশির মুখমণ্ডল। আস্তে করে আঁখি যুগল মেলে তাকালো সে। প্রহরকে বিছানায় দেখতে পেল না। ভাবলো হয়তো উঠে গেছে। কালকের ওই ঘটনার পর খুশি প্রচুর ভয় পেয়ে গিয়েছিল। সারারাত প্রহরের বুকের মাঝে লুকিয়ে ছিলো। একটুর জন্যেও প্রহরকে কোথাও যেতে দেয়নি ও। খুশি আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসলো। তখনই প্রহর হাতে ট্রে নিয়ে রুমে ঢুকলো। প্রফুল্লতার সহিত বলতে লাগলো।
–আমার খুশিরাণীর ঘুম ভেঙেছে বুঝি? এই দেখ তোমার ডিয়ার হাসব্যান্ড তার বউয়ের খিদমতে হাজির হয়ে গেছে। পেশ হে তোমার জন্য ফ্রেশ ফ্রেশ ব্রেকফাস্ট।
ট্রেটা বেডের ওপর রেখে খুশির সামনে এসে বসলো প্রহর। কপালে চুমু একে দিয়ে বললো।
–চলো তাড়াতাড়ি ব্রেকফাস্ট সেরে নাও। তারপর আমরা বের হবো কেমন?
খুশির খুব খারাপ নিজের কাছে। প্রহর ওকে এখানে এনেছে কিছু সুন্দর সময় কাটানোর জন্য। আর আমি কিনা সামান্য একটা ব্যাপার নিয়ে এভাবে ওকে টেনশনে ফেলে দিয়েছি। না না এটা একদম ঠিক না। আমি প্রহরকে আর কোন টেনশন দিবোনা। কথাগুলো ভেবে খুশি হাসিমুখে প্রহরের গলা জড়িয়ে ধরে বললো।
–গুড মর্নিং মাই হ্যান্ডসাম হাবি। ভাবছি আজ বাইরে না গেলে কেমন হয়? তুমি আমি আর এই হানিমুন সুইট। ব্যাপার টা কেমন হবে?
প্রহর খুশির কোমড় জড়িয়ে ধরে বললো।
–আই থিংক ইটস আ গ্রেট আইডিয়া। উই শুড গো ফর ইট।
খুশি প্রহরের কপালে কপাল ঠেকিয়ে হাসলো। সাথে হাসলো প্রহরও। তারপর বললো।
–বাচ একটাই সমস্যা। ফাহিমদের কি বলবো? এখন সবারতো আর তোমার মতো এতো ইনটেলিজেন্ট বউ নেই। ওদের মাথায় তো আর এই গ্রেট আইডিয়া টা নাও আসতে পারে।
–হুম তাও ঠিক। সবাই তো আর খুশি না। ঠিক আছে তাহলে ওদের মন রাখতে বাইরে যাবো। কি আর করার?
প্রহর হেঁসে দিয়ে খুশিকে কাতুকুতু দিতে দিতে বললো।
–তাই না??
খুশি খিলখিল করে হাসছে আর মোচড়ামুচড়ি করছে।
__
আজ ওর প্রথমে “গ্রান্ড বে” বিচে এলো। মরিশাস দ্বিপের চারপাশে শুধুই সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্যে ভরপুর। যতদূর চোখ যায় শুধুই নীল রুপে রুপান্বিত। এই অসীম সৌন্দর্য ভাষায় প্রকাশ করা হয়তো অসম্ভব। “গ্রান্ড বে” বিচও তেমনি আরেকটি অপরুপ প্রকৃতির নিদর্শন। মরিশাসের উওরে অবস্থিত মরিশাসের অন্যতম সৈকত হিসেবে পরিচিত। প্রহররা কিছুক্ষণ পূর্বেই এসে পৌঁছেছে এখানে। সৈকতের সৌন্দর্যে মোহিত হচ্ছে সবাই। নীল স্বচ্ছ পানির মাঝে পা ডুবালো খুশি। সুইমিং পুলের পানির চেয়েও স্বচ্ছ সুন্দর পানি। পানির নিচের সবকিছু পরিস্কার দেখা যাচ্ছে। এ যেন এক অভূতপূর্ব অনুভূতি। পাশেই প্রহর খুশির হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে। আজ আর খুশিকে সে এক মুহূর্তের জন্যেও একা ছাড়বে না। গতকালের ভুলের পুনরাবৃত্তি কোনমতেই করবে না সে।
পানিতে কিছুক্ষণ ঘোরার পর। ওরা এখানেও সি বোটে উঠলো। বোটে চড়ে গভীর নীল লেগুন প্রদক্ষিণ করছে। বোটে ঘুরতে ঘুরতে ওরা পোর্ট লুইস আর পর্বতমালারও প্রদক্ষিণ করলো। ঘোরা শেষে ওরা সমুদ্র কিনারে সারি করা ছোন পাতার গোল গোল ছাউনির নিচে এলো। ওখানে টেবিল চেয়ার রাখা আছে। ওর এসে চেয়াগুলোতে বসলো। ওখানেই হালকা কিছু খাওয়া দাওয়া করে নিলো। খাওয়া দাওয়া শেষে একটু রেস্ট নিয়ে আবার বেড়িয়ে পড়লো ”
ওদের সাথে সাথে চলছে সেই অজানা ব্যক্তি। ওদের সব গতিবিধির ওপর তীক্ষ্ণ নজর তার। সঠিক সুযোগের অপেক্ষা করছে সে।
প্রহররা এবার এলো “গ্রান্ড বের আরেকটি অপরুপ সৈকত “লা কুভেটে। এটিও অসীম সৌন্দর্য বহনকৃত এক রূপবতী সৈকত। সমুদ্রের তীরে এবং পানির মাঝে জমা আছে হাজারো পাথরের মেলা। খুশি প্রহরের আর তিশা ফাহিমের হাত ধরে পানির মাঝে সেই পাথরের উপর এসে দাঁড়াল। পাথর গুলো অনেক পিচ্ছিল হয়ে আছে। স্বচ্ছ জলরাশির মাঝে পাথর আর শৈবাল গুলো দেখতে অপূর্ব লাগছে। পানির উত্তাল ঢেউ এসে পায়ের কাছে আছড়ে পড়ছে। এক অবিস্মরণীয় অনুভূতি হচ্ছে ওদের।
সারাদিন আরও কিছু দর্শনীয় স্থানগুলো ঘুরে বেড়ালো ওরা। তারপর সন্ধ্যার একটু আগে “পিরেবেরে” বিচের “পয়েন ডি আজুরে এলো সূর্যাস্ত দেখতে। সীমাহীন নীল সুস্পষ্ট জলরাশি আর পাথরে ঘেরা আরেকটি প্রকৃতির অপরুপ নিদর্শন হলো এই স্থানটি। অপরিসীম সৌন্দর্যে সমন্বিত এই জায়গার সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে দিলো সূর্যাস্তের রক্তিম আভা। চারিদিকে কমলা আলোর ঝলকানি দিয়ে বিশাল থালার মতো সূর্য টা ঢলে পড়ছে সমুদ্রের গহ্বরে। প্রহর এসে পেছন থেকে খুশিকে বাহুডোরে আবদ্ধ করে নিলো। দুজন সাক্ষী হলো এক অবিস্মরণীয় মুহূর্তের। ফাহিমও পিছিয়ে রইলোনা। প্রহরের দেখাদেখি সেও তিশাকে জড়িয়ে ধরলো। সূর্যাস্ত শেষে ওরা আবারও রিসোর্টে ফিরে এলো। সাথেই ফিরলো সেই অজানা ব্যক্তি। আজ সারাদিন কোন সুযোগ পায়নি নিজের কার্য প্রতিফলন করার। প্রহর এক সেকেন্ডের জন্যেও খুশিকে হাত ছাড়া করেনি। তবে সেও এতো সহজে ছাড়বে না। ওদের এই সুখ দুঃখে পরিনত করেই ছাড়বে।
ডিনার শেষ করে প্রহর আর ফাহিমরা নিজেদের রুমে এলো। ফাহিম রুমে আসতেই দরজা আটকে দিয়ে তিশার হাত টেনে ধরলো। তিশা ভ্রু কুঁচকে বললো।
–কি হয়েছে? টেনে ধরলে কেন?
ফাহিম দুষ্টু হেসে বললো।
–কারণ আজ খেলা হবে।
তিশা ভ্রু কুঁচকে বললো।
–খেলা? কি খেলা?
–ফুটবল, বলিবল,সব ধরনের খেলাই চলবে। এখানে আসার পর থেকে আমরা একবারও রোমান্টিক কোন কিছু করতেই পারিনি। রোজ তুমি ঘুরে ঘুরে এসে টায়ার্ড হয়ে শুয়ে পড়ো। আরে খুশি ভাবির কাছ থেকে কিছু শেখ। ওরা কতো রোমান্টিক ব্যাপার স্যাপার করে।ওদের রোমাঞ্চের চিহ্ন গুলো প্রহরের শরীরে বিদ্যমান দেখা যায়। আর এক তুমি। হানিমুনে এসেও ঘুমাও। এটা কোন কথা? তাই আজ নো ঘুমানো। ওনলি রোমাঞ্চ এন্ড রোমাঞ্চ। আমিও আমার শরীরে এমন চিহ্ন চাই। দেখ আমি তোমার জন্য কিছু এনেছি।
ফাহিম লাগেজের ভেতর থেকে একটা প্যাকেট বের করে এনে তিশার হাতে দিয়ে বললো।
–এটা তোমার জন্য। প্লিজ এটা পড়ে এসোনা?
তিশা প্যাকেট খুলে দেখলো একটা লাল রঙের শিফন জর্জেটের নাইটি। তিশা চোখ মুখ নাইটিটা বেডের সাথে ছিটকে ফেলে দিয়ে বললো।
–ছিহ্হ,, এটা কি? এসব আমি পড়বো? কিছুতেই না।
ফাহিম অনুনয়ের সুরে বললো।
–আরে ছিহ এর কি হলো? এটাতো সবাই পড়ে। প্লিজ একবার শুধু আমার জন্য পড়োনা? প্লিজ প্লিজ প্লিজ..
ফাহিমের জোরাজুরিতে তিশাও আর মানা করতে পারলোনা। ওর মন রাখতে তিশা নাইটি টা নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল। ফাহিম এদিকে এক্সাইটেড হয়ে লাফাতে লাগলো। আজতো খেলা জমবে খুব। তিশা আসতে আসতে ফাহিম এক্সাইটমেন্টে নিজের প্রায় অর্ধেক জামাকাপড় খুলে ফেললো। বিছানার উপর ফুলের পাপড়ি বিছিয়ে দিলো। তারপর অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে লাগলো তিশার। কিছুক্ষণ পর ওয়াশরুমের দরজা খোলার শব্দে ফাহিম অতি উৎসাহ নিয়ে সেদিকে তাকালো। তবে তিশাকে দেখে ওর সব উৎসাহ ফাটা বেলুনের মতো ফুসস হয়ে গেল। তিশা কামিজের ওপর দিয়েই নাইটি টা পরিধান করেছে। তিশার আউট অফ দ্যা ওয়ার্ল্ড ড্রেসিং সেন্স দেখে ফাহিম বেচারা হতবিহ্বল হয়ে গেল।তিশা মৃদু পায়ে এগিয়ে এসে বললো।
–সরি আসলে আমার খুব লজ্জা করছিল। তাই এভাবেই পড়েছি।
ফাহিম নিজেকে কোনরকমে সামলে নিয়ে বললো।
–আচ্ছা থাক বাদ দাও। তুমি আছ আমি আছি আর কি চাই। লেটস ডু সাম এ্যাকশন বেবি।
ফাহিম ধীরে ধীরে এগিয়ে এলো তিশার কাছে। মাথা ঝুকিয়ে তিশার ঠোঁটের দিকে এগুলো সে। তিশার ঠোঁট প্রায় ছুঁইছুঁই তখনই ফাহিমের রোমাঞ্চে এক বালতি পানি ঢেলে দিয়ে তিশার ফোনটা তীব্র আওয়াজে বেজে উঠলো। তিশা দ্রুত ওখান থেকে সরে গিয়ে ফোনটা ধরলো। ফাহিম বেচারা চুমু খেতেই যাচ্ছিলো সেই মুহূর্তে তিশা সরে যাওয়ায় ফাহিম পড়ে যেতে যেতে কোনরকমে নিজেকে বাঁচালো। পেছনে তাকিয়ে দেখলো তিশা ফোনে কথা বলছে। তিশার মা ফোন করেছে। এই কনভোকেশন যে কতো ঘন্টা চলবে তার ঠিকানা নেই। ফাহিমের এখন হাত পা ছড়িয়ে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। কারোর শাশুড়ী যে মেয়ের জামায়ের রোমাঞ্চের দুশমন হতে পারে তা তিশার মাকে না দেখলে জানতোই না। যখনই একটু দুজন রোমাঞ্চ করতে নেয় ঠিক তখনই ওনার ফোন আসা লাগে। আর তিশাও তখন দুনিয়া দাড়ি ভুলে ঘন্টার ঘন্টা আলাপ শুরু করে দেয়। কিন্তু আজ আর তা হতে দিবেনা।
ফাহিম এগিয়ে গেল তিশার কাছে। চোখের ইশারায় ফোন রাখতে বললো। তিশাও আঙুল দেখিয়ে বুঝালো একটুখানি। কিন্তু এই একটুখানি সময় আর শেষ হচ্ছে না। ফাহিম এবার তিশাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে তিশার ফোনালাপের মাঝেই ওর সাথে দুষ্টুমি শুরু করে দিলো। তিশা বারবার চোখ গরম করে দেখাচ্ছে। কিন্তু কিছুই মানছে না ফাহিম। অনেকক্ষণ পর শেষমেশ তিশা ফোনালাপ শেষ করলো। ফাহিম ভাবলো এবার নিশ্চয় রোমাঞ্চ জমবে। ফাহিম আবারও তিশার অধরপানে এগুলো। তখনই হঠাৎ তিশা বলে উঠলো।
–আমি একটু ওয়াশরুম থেকে আসছি প্লিজ।
ফাহিম বেচারা আবারও হতাশ হলো।তবে আশা ছাড়লোনা।তিশার ওয়াশরুম থেকে ফিরে আসার অপেক্ষা করছে সে। তিশা ফিরে আসলেই ফাহিম ওর রোমাঞ্চ আবারও রিজুম করবে। অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে তিশা বেড়িয়ে এলো ওয়াশরুম থেকে। ফাহিম টেবিলের ওপর থাকা ফুলদানি থেকে একটা লাল গোলাপ তুলে নিল। ফুলের ডাটিটা দাঁতের দুই পাটির মাঝে কামড় দিয়ে ধরে রোমান্টিক মুডে এগুলো তিশার দিকে। তিশার কাছে এসে এক হাতে তিশার কোমড় পেঁচিয়ে ধরে নিজের কাছে টেনে নিলো। দাতের মাঝে থাকা ফুলটা এবার বের করে তিশার কপাল থেকে গাল পর্যন্ত ফুল দিয়ে স্লাইড করলো।অতঃপর আবারও নিজের মিশনে অগ্রসর হলো। তবে এবারও ওর মিশন নাকামিয়াব করে দিয়ে তিশা বলে উঠলো।
–আমার পিরিয়ড শুরু হয়ে গেছে। সরি..
বেচারা ফাহিম এতবড় পরাজয় মেনে নিতে পারলোনা।ঠাস করে জ্ঞান হারিয়ে ঠুস করে পড়ে গেল।
___
রাতের আকাশে তাঁরারা ঝলমল করছে। জানালা ভেদ করে আসছে ভরা জোছনার রুপালী আলো। ঘড়ির কাঁটা গিয়ে ঠেকেছে রাত দশটায়। প্রহর বসে ফোনে কিছু ইমেইল চেক করছে। খুশি ওয়াশরুমে ঢুকেছে অনেকক্ষণ হলো।এখনো বের হওয়ার নাম নেই। কি করছে কে জানে? পাগলিটার মাথায় কখন কি চলে তা জানা মুশকিল। তবে ওর এই পাগলামু গুলোই প্রহরকে আনন্দঘন মুহূর্ত এনে দেয়। খুশির হাসিখুশি প্রাণচঞ্চলতাই প্রহরের সুখী জীবনের মূলমন্ত্র।
খট করে দরজা খোলার শব্দে ফোন থেকে মাথা তুলে সামনে তাকালো প্রহর। তাকাতেই চোখের নজর সহ সব ইন্দ্রিয় গুলো আবদ্ধ হয়ে গেল সামনের মহীয়সী রমনীতে।ওর সামনে পিংক নাইট ড্রেস পরিধানরত খুশি নামক এই আবেদনময়ী নারীর মায়াজালে নিজের সর্বস্ব হারিয়ে ফেলছে প্রহর। নাইট ড্রেস টার ঝুল হাটুর উপর পর্যন্ত। প্রহর ভেবে পায়না একটা নারীই আর কতবার ঘায়েল করবে ওকে। ওতো কবেই এই নারীতে নিজেকে বিলীন করে দিয়েছে।
খুশি মায়াবী হাসির রেখা টেনে ধীরে ধীরে এগিয়ে এলো প্রহরের কাছে। প্রহরও মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় উঠে দাঁড়িয়ে এগিয়ে এলো খুশির দিকে। খুশির কাছে এসে ওর সাথে আলিঙ্গন করতে নিলেই খুশি আবেদনময়ী হাসি দিয়ে হালকা ধাক্কা দিয়ে প্রহরকে পেছনের সোফায় ফেলে দিলো। হেঁসে উঠলো প্রহর। খুশি প্রহরের মুখোমুখি হয়ে ওর কোলে বসলো। হাতের দুই আঙুল দিয়ে বন্দুকের মতো বানিয়ে প্রহরের থুতনির নিচে ঠেকিয়ে বলে উঠলো।
–দ্যা খুশি তোমাকে চারিদিক থেকে ঘিরে ফেলেছে।পালানোর পথ খোলা নেই। বাঁচতে চাইলে আত্মসমর্পণ করো। নিজেকে আমারে কাছে সঁপে দাও। নাহলে চুমু চালাতে বাদ্ধ হবো।
প্রহর হাসলো কিছুক্ষণ। তারপর খুশির কোমড়ে রাখা হাতের বাঁধন আরও মজবুত করে বললো।
–আমি আত্মসমর্পণ করবোনা। আপনি আপনার হুমকি কার্যকর করুন।
খুশি তার হুমকি কার্যকর করা আরম্ভ করলো। প্রহরের শার্টের বোতাম খুলে প্রহরের গলা আর বুকে শুরু করলো চুমুর তীর চালানো। প্রহর ভাসছে অনাবিল সুখের সাগরে। খুশির অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে যাচ্ছে ও। আর পারছে না। এবার সেও পাল্টা আক্রমণ করবে। প্রহর আকড়ে ধরলো খুশির অধরযুগল। ওভাবে খুশিকে কোলে নিয়েই এগুলো বিছানার দিকে।
___
পরম শান্তি সুখের আবেশে প্রহরের বুকে মিশে ঘুমিয়ে আছে খুশি। দুজনের মুখমন্ডলে ভাসছে অসীম সুখের প্রচ্ছায়া। যেন এদের চেয়ে সুখী দুনিয়াতে আর কেই নেই। আর ওদের এই সুখ কারো চোখে বিষাক্ত কাটা হয়ে বিঁধছে। ওদের এই সুখ সে কিছুতেই সহ্য করতে পারছে না। কেড়ে নিবে ওদের সব সুখ। কিছুতেই ওদের কে সুখে থাকতে দিবেনা।
সকালের মিষ্টি রোদ রুমে ঢুকে ঘরময় আলো ছড়িয়ে দিলো। ঘুমের লেশ কেটে মুচকি হাসির রেখা ঠোঁটে এনে ধীরে ধীরে চোখ মেলে তাকালো খুশি। তবে চোখ খুলে যে এমন কিছু দেখতে হবে তা স্বপ্নেও ভাবেনি খুশি। বিছানায় প্রহরের জায়গায় রক্তে রঞ্জিত প্রহরের শার্ট পড়ে থাকতে দেখে খুশির অন্তর আত্মা কেঁপে উঠল। ঠাস করে উঠে বসলো ও। শার্টের ওপর রক্ত মাখা ছুরি দেখে চোখের সামনে পৃথিবী ঘুরে উঠলো ওর। হঠাৎ কেমন বোধশক্তিহীন হয়ে পড়লো খুশি। হাত পা থরথর করে কাঁপছে। ও নিশ্চয় কোন খারাপ স্বপ্ন দেখছে। এটা সত্যি হতে পারে না। কিছুতেই না। প পপ্রহর?? প্রহর কোথায়? আ আমার প্রহর কোথায়?? ভয়ে নিঃশ্বাস আটকে আসছে খুশির। খুশি অনেক কষ্টে চোখ বন্ধ করে চিৎকার করে প্রহরকে ডাকলো।
–প্রহররররররর…..
প্রহর ওয়াশরুমে শাওয়ার নিয়ে মাত্রই তোয়ালে পড়ছিল। তখনই হঠাৎ খুশির চিৎকার শুনে ঘাবড়ে গেল প্রহর। তড়িঘড়ি করে তোয়ালেটা পেঁচিয়ে ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে এলো প্রহর। এসে দেখলো খুশি আবারও সেদিনের মতো ভয়ে চোখ বুজে চিৎকার করে যাচ্ছে। প্রহর দৌড়ে এলো খুশির কাছে। দুই হাতে খুশির মুখটা ধরে বললো।
–এই খুশি কি হয়েছে তোমার? এই দেখ আমি এখানে।
খুশি চোখ খুলে তাকালো। প্রহরকে দেখে ওর জানে পানি এলো। প্রহরকে জাপটে ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো খুশি। প্রহর আরও ঘাবড়ে গেল। কি হলো ওর খুশিরাণীটার? সবতো ঠিকই ছিল। খুশি প্রহরের সারা মুখে পাগলের মতো চুমু খেয়ে অস্থির হয়ে বললো।
–তু তুমি ঠিক আছ? তোমার কিছু হয়নিতো?
–আমার কি হবে? আমি একদম ঠিক আছি? এই দেখ। কিন্তু তোমার কি হয়েছে? আর এভাবে কেন বলছ?
খুশি বিছানার দিকে আঙুল দিয়ে ইশারা করে বলতে লাগলো।
–ও ও ওখানে…
বিছানার দিকে তাকাতেই কথা বন্ধ হয়ে গেল খুশির। কারণ বিছানা একদম পরিস্কার দেখা যাচ্ছে। একটু আগের কোনকিছুই নেই এখানে। কিন্তু এটা কিভাবে সম্ভব? প্রহর ভ্রু কুঁচকে বললো।
–কি হয়েছে খুশি? ওখানে কি?
–প্রহর এখানে এইমাত্র তোমার রক্ত মাখা শার্ট আর চাকু দেখেছি আমি। ঘুম থেকে উঠেই ওসব দেখলাম আমি। আ আমি ভেবেছি তোমার হয়তো কিছু…
–কিন্তু এখানে তো কিছুই নেই। আমার মনে হয় তুমি কোন খারাপ স্বপ্ন দেখেছ। ওটাকে সত্যি ভেবে ভয় পেয়ে গেছ।
খুশি কিছুই বুঝতে পারছে না। ওতো সত্যিই দেখেছিল। তাহলে সব গায়েব হয়ে গেল কিভাবে? নাকি প্রহর ঠিক বলছে? আমি কি কোন স্বপ্ন দেখেছিলাম? খুশি প্রহরকে জড়িয়ে ধরে বললো।
–তুমি আমাকো ছেড়ে আর কোথাও যেওনা প্লিজ। আমার অনেক ভয় করছে।
প্রহর খুশির মাথায় হাত বুলিয়ে বললো।
–আমি এখানেই আছি আমার খুশিরাণীর কাছে। কোথাও যাবোনা। ভয়ের কিছু নেই।
খুশিকে শান্তনা দিলেও প্রহরের ভেতর ভেতর অনেক চিন্তা হচ্ছে। ওর খুশির হঠাৎ কি হয়ে গেল? এমন অদ্ভুত কথা বলছে কেন? ওর অপারেশনের কারণে মাথায় কোন সাইড ইফেক্ট হলো নাতো?
ওদের কে এভাবে অশান্তিতে দেখে অজানা ব্যক্তির মনে পরম শান্তি হচ্ছে। পরবর্তীতে সে এমন কিছু করবে যাতে এদের সুখ চিরতরে বিলীন হয়ে যাবে।
চলবে…..
গল্পের লেটেস্ট আপডেট পেতে আর গল্প নিয়ে যেকোনো আলোচনা আড্ডা দিতে আমার গ্রুপে জয়েন হওয়ার আমন্ত্রণ রইল। নিচে গ্রুপ লিংক দেওয়া হলো। জয়েন হতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন। 👇
গ্রুপ
https://facebook.com/groups/170529085281953/