অন্তঃকরণে তোরই পদচারণ পর্ব-৩৮

0
1392

#অন্তঃকরণে_তোরই_পদচারণ
#পর্ব-৩৮
#লেখিকা-মেহরুমা নূর

★দুদিন পর প্রহররা মরিশাসকে বিদায় জানিয়ে আবারও নিজ গৃহে ফিরে আসে। ফিরে এসে আবারও নিজেদের রেগুলার লাইফে সবাই ব্যাস্ত হয়ে যায়। প্রহর খুশির প্রেমকাব্যের নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে। বিবাহিত জীবনের খুনসটিময় আলোড়ন ছড়াচ্ছে তাদের মাঝে। যদিও সংসার জীবনের তেমন কোনো প্রভাব খুশির ওপর পড়েছে বলে মনে হয়না। আসলে প্রহরই পড়তে দেইনি। খুশি আগে যেমন দুরন্ত চঞ্চল ছিল। এখনো তাই আছে। ওর মাঝে তেমন কোনো পরিবর্তন আসেনি। বরং এখন আরও বেশি দুষ্টু হয়ে গেছে। আগে তাও সাহেলা বেগমের ভয়ে খুশি একটু দমে থাকতো। কিন্তু এখানে প্রহরের কেয়ার আর জিদান সাহেবের আহ্লাদে খুশি আরও স্বাধীন পাখির মতো উড়ে বেড়ায়। সারাদিন শুধু লাফালাফি আর দুষ্টুমি। প্রহর বলেছে খুশির গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করতে। কিন্তু সেটা শুনেই খুশির যতো মেলোড্রামা করে বলেছে।
–আরে না না তুমি জানো না, আমার মাথায় কোন রকম প্রেসার দেওয়া যাবে না। আর পড়ালেখার চেয়ে বেশি প্রেসার আর কিছুতে আছে নাকি। দেখ এতো প্রেসারে আমার মাথায় সমস্যা হতে পারে। আর এত পড়াশোনা দিয়ে হবেটা কি শুনি? আমিতো এখন বসে বসে শুধু বাচ্চা ডাউনলোড করবো।

খুশির এতো এতো যুক্তিসম্মত দলিল পেশ করার পরও কোন কাজ হয়নি। প্রহর কোন কিছু কর্নপাত না করে খুশিকে একটা প্রাইভেট ভার্সিটিতে ভর্তি করিয়ে দিয়ে এসেছে। খুশির হাত পা ছড়িয়ে কান্নাকাটিও কাজে দেয়নি। এমনকি ওর ক্রাইম পার্টনার জিদান সাহেবও এব্যাপারে অপারগ হয়ে আগেই তার হাত খাঁড়া করে দিয়েছেন। আর কি! বেচারি,অসহায়, অবলা,জনম দুঃখীনি খুশিকে শেষমেশ পরাজয়ের তিক্ত বিষ সেবন করতে হলো। তবে সে তার প্রতি এই অত্যাচারের কথা কখনো ভুলবে না। মনের মধ্যে সুই সুতা দিয়ে সেলাই করে রাখবে সে এই কথা। সময় তারও আসবে। সেও তখন এই নির্মম অত্যাচারের কঠিন প্রতিশোধ নিবে সে।

বেলা তখন বিকালে গড়িয়েছে। অফিস থেকে ফিরেছে প্রহর। বাসায় ঢুকে দেখলো বাসা একেবারে শান্তশিষ্ট। প্রহরের মনে হল ও বোধহয় অন্য কোন বাসায় চলে এসেছে। ওর বাসা এতো শান্ত কিভাবে? কারণ ওর পাগলীটা সারাদিন বাড়ি মাথায় তুলে রাখে। সাথে যোগ দেয় ওর গুনধর বাবা। দুজন মিলে যেন বাচ্চা হয়ে যায়। আর ওদের দুই পাগলের পাগলামিতে প্রহর বেচারার নাজেহাল অবস্থা হয়ে যায়।

প্রহর নিজের রুমে এসে দেখলো খুশি বিছানায় ঘুমিয়ে আছে। মুচকি হাসলো প্রহর। এইজন্য বাসাটা এতো শান্ত লাগছে। পাগলীটা টা যে ঘুমিয়ে আছে। মৃদু পায়ে এসে খুশির পাশে বিছানার উপর বসলো প্রহর। মুগ্ধ নয়নে খুশির মায়াবী মুখটার দর্শন করছে সে। অফিস থেকে এসে খুশির মুখটা না দেখলে যেন শান্তিই লাগে না। মাথা ঝুকিয়ে খুশির কপালে অধর ছোঁয়ালো প্রহর। কপালের পরশ শেষে মাথা তুলতে নিলেই খুশি চোখ বন্ধ অবস্থায়ই তর্জনী আঙুল দিয়ে নিজের ডান গালে ইশারা করলো। মৃদু হাসলো প্রহর। তারমানে ওর পাগলীটা জেগে গেছে। খুশির ইশারা অনুযায়ী প্রহর খুশির গালেও অধর ছোঁয়ালো। খুশি এবার বাম গালে ইশারা করলো। প্রহর সেখানেও তার পরশ দিলো। এরপর নাক আর সবশেষে ঠোঁটের দিকে ইশারা করলো। প্রহর আজ্ঞাকারী বালকের মতো সব আদেশই পুরন করলো সে। এরপর জনাবা খুশি চোখ মেলে তাকালো। প্রহর মুচকি হেঁসে বললো।
–আচ্ছা তো ঘুমের ভান করে আদর খাওয়া হচ্ছিল?

খুশি মাথা উঠিয়ে প্রহরের কোলে মাথা রেখে ঘুমো ঘুমো কন্ঠে বললো।
–ভান করিনি সত্যিই ঘুমিয়ে ছিলাম। তুমি চুমু দিলে তখন ঘুম ভেঙে গেছে।

প্রহর খুশির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো।
–তা অবেলায় হঠাৎ ঘুমোচ্ছিলে যে? শরীর খারাপ লাগছে নাকি?

–উহুম, এমনই শুয়ে থাকতে থাকতে একটু চোখ লেগে গিয়েছিল।

একটু পরে খুশি উঠে বসে বললো।
–যাও তুমি ফ্রেশ হয়ে এসো। আমি তোমার জন্য কফি নিয়ে আসছি।

প্রহর মুচকি হেসে উঠে ফ্রেশ হতে চলে গেল। একটু পরে দুজন কফির কাপ নিয়ে ব্যালকনিতে বসলো।প্রহরের কাঁধে মাথা এলিয়ে দিয়ে কফি খেতে খেতে দুজন নানান কথা শুরু করলো। খুশি সুযোগ বুঝে হঠাৎ বলে উঠলো।
–আচ্ছা তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?

–বলোনা।

–আচ্ছা তুমি কখনো এসবির দ্বিতীয় বিয়ের কথা ভাবোনি? তোমার মনে হয় না তারও একটা সুখ দুঃখের সাথীর দরকার? নাকি তুমি এসব পছন্দ করো না?

–না না এমন কিছুই না। আমিতো অনেক আগে থেকেই বাবাকে বলি আরেকটা বিয়ে করতে। কারণ আমি জানি বাবা যতই বলুক সে অনেক একাকিত্ব বোধ করে। কিন্তু বাবা কখনো তেমন কোন আগ্রহ দেখায়নি। তাই আমিও আর জোর করিনি। তবে আমি এখনো চাই বাবা একটা যোগ্য কোন জীবন সাথী পাক।

–যদি বলি এমন কাউকে পেয়ে গেছে সে। এবং তাকে নিজের জীবনে আনতেও আগ্রহী সে।

প্রহর ভ্রু কুঁচকে বললো।
–মানে? কে সে?

–বেলি ফুপি।

–বেলি ফুপি মানে তোমার ফুপি?

–হ্যাঁ আমার ফুপি। আসলে এর পেছনে একটা কাহিনি আছে।
খুশি বেলি আর জিদান সাহেবের সব কাহিনি খুলে বললো। সব শুনে প্রহর বললো।
–বাহ্ তাহলে তো ভালোই। আমার এতে কোন সমস্যা নেই। বাবার খুশি আমার কাছে সবচেয়ে বেশি মূল্যবান।

খুশি প্রফুল্লিত হয়ে বললো।
–থ্যাংক ইউ সো মাচ। আমি জানতাম তুমি মানা করবেনা। তাহলে আমরা কালই যাবো পাকা কথা বলতে। ঠিক আছে?

–জ্বি জনাবা জাহা আপুনি বলিবেন।
__

পরদিন যথারীতি ওরা খুশিদের বাড়িতে আসে। খুশি রাতেই ওর বাবা মাকে ফোনে সবটা বলে রেখেছিল। তারাও অনেক খুশি এই পস্তাবে। বেলা এগোরাটার দিকে প্রহর, খুশি আর জিদান সাহেব এসে পৌঁছালো খুশিদের বাড়িতে। আজকে দ্যা গ্রেট খুশি অন্য রকমই এক মুডে আছে। সে আজ পার্পেল কালারের সিল্কের একটা শাড়ি পড়েছে। চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা।টিভি সিরিয়ালের মাতাজীর মতো মুখমন্ডলে অপ্রয়োজনীয় মাত্রাতিরিক্ত গাম্ভীর্য ধারণ করে বসে আছে। যেন কোন লাট গভর্নরের আম্মাজান এসেছে। প্রহর শুধু ভ্রু কুঁচকে দেখছে। সে বুঝতে পারছে এই ড্রামাকুইন আজ কোন ভরপুর ড্রামা করবে।

খুশিদের দরজায় এসে কলিং বেল বাজালো খুশি। একটু পরে খুশির বাবা এসে দরজা খুলে দিলেন। ওদের দেখে হাসিমুখে ভেতরে সাদর আমন্ত্রণ জানালেন। ওরা সবাই ভেতরে এসে ড্রয়িং রুমের সোফায় বসলো। খুশি সেই একইভাবে গুরুগম্ভীর ভাব ধরে সিনা টান করে পায়ের ওপর পা তুলে বসলো। একটু পরে সাহেলা বেগম আর নিভানও আসলো ওদের সাথে দেখা করতে। রাকিব হাসান খুশির উদ্দেশ্যে বললো।
–হ্যারে খুশি মা তুই কেমন আছিস? আর বেড়ানো কেমন হলো?

খুশি তখন ভাব নিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বললো।
–দেখুন আজ আমি এবাড়ির মেয়ে খুশি না। তাই নো পার্সোনাল কথা। আজ আমি এখানে পাত্রপক্ষ হয়ে এসেছি। আমাদের ছেলের জন্য মেয়ে দেখতে এসেছি। তাই আমার সাথে সেভাবেই পেশ হবেন। মনে রাখবেন আমি কিন্তু এতো সহজেই পছন্দ করবো না। তাই আপনাদের খাতিরদারিতে কোন ত্রুটি পেলে কিন্তু আমি এক্ষুণি আমাদের ছেলেকে নিয়ে চলে যাবো।

খুশির মা বাবা একজন আরেকজনের মুখ চাওয়াচাওয়ি করছে। বেচারা দের ব্যাপার টা বোঝার জন্য কিছু সময়ের দরকার। তবে নিভান ঠিকই বুঝতে পারছে ওর বোন কেমন সুযোগের সৎ ব্যাবহার করছে। আর প্রহর বেচারা শুধু দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। আর করারই বা কি আছে তার? ড্রামাকুইন বউয়ের সাইড ইফেক্ট। সবাইকে চুপ থাকতে দেখে খুশি বলে উঠলো।
–কি ব্যাপার আপনারা সবাই ভুত হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন কেন। ছেলেপক্ষ কখন থেকে বসে আছে আর আপনাদের মেয়ের খবর কই? এটা কেমন বিহেভিয়ার? আমাদের সময়ের কি কোন দাম নেই নাকি? আপনারা কি মেয়ে দেখাবেন নাকি চলে যাবো আমরা?

রাকিব হাসান বলে উঠলেন।
–না না চলে যাবে কেন? আমরা এখুনি মেয়েকে নিয়ে আসছি। এই নিভান যা তোর ফুপিকে নিয়ে আয়।

নিভান মাথা ঝাকিয়ে ভেতরে চলে গেল। কিছুক্ষণ পর বেলি নিভানের সাথে বাইরে বেরিয়ে এলো। ওদের সামনে এসে সোফায় বসতে নিলেই খুশি আবারও গাম্ভীর্যের সুরে বলে উঠলো।
–আরে আরে তুমি তো দেখছি খুবই অভদ্র মেয়ে।একেতো এখানে মুরুব্বিদের সামনে এসে সালাম দাওনি। তারওপর বিনা অনুমতিতেই বসে পড়ছো। ভদ্রতা শেখনি নাকি?

খুশির কথায় বেচারি বেলি থতমত খেয়ে গেল। এখানে মুরুব্বি বলতে কাকে বোঝাতে চাইছে সেটাই খুঁজে পাচ্ছে না বেলি। আর এই খুশিই বা সরদারনীর মতো এভাবে কথা বলছে কেন? বেলি কনফিউজড চোখে জিদান সাহেবের দিকে তাকাতেই খুশি আবারও বলে উঠলো।
–ছিঃ ছিঃ কি বেশরম মেয়ে গো তুমি। সবার সামনেই আমাদের ছেলেকে দেখে যাচ্ছ? একটা কথা শুনে রাখ মেয়ে আমার ছেলের দিকে তাকিয়ে লাভ নেই। আমার ছেলে আমার অনেক আজ্ঞাকারী। আমার বিনা অনুমতিতে এক পাও নড়বে না সে।
তারপর জিদান সাহেবের দিকে তাকিয়ে বললো।
–তাইনা এসবি??

জিদান সাহেবও অনুগত ছেলের মতো বলে উঠলো।
–ইয়েস মাম্মা।

খুশির পরিবার এবার তব্দা খেয়ে গেল। তবে শেষমেশ তাদের এট বোধগম্য হলে যে তাদের পাগল মেয়ে এসব ড্রামা করছে। আর জিদান সাহেবও তাতে যোগদান করেছেন। অতঃপর তারাও খুশির ড্রামা অনুযায়ীই চলা শুরু করলো। বেলি মাথায় ঘোমটা দিয়ে মাথা নুইয়ে সালাম দিল সবাইকে। খুশি সালামের উত্তর নিয়ে এবার বসার অনুমতি দিলো বেলিকে। বেলি বসার পর খুশি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে অবলোকন করে বললো।
–দেখতে মোটামুটি খারাপ না। যদিও আমার হ্যান্ডসাম ছেলের সামনে কিছুই না। তবুও চালিয়ে নিবো। তাইনা এসবি?

–ইয়েস মাম্মা।

খুশি এবার প্রশ্নের তীর ছুড়তে লাগলো।
— হ্যাঁ তো বলো পড়াশোনা কতদূর করেছ? নাকি ফেল্টুস মেরেছ? আমার ছেলে কিন্তু ডাবল এম এ। তাইনা এসবি?

–ইয়েস মাম্মা।

— রান্না বান্না পারোতো? দেখ আমার ছেলে কিন্তু খাবার দাবারের ব্যাপারে খুব কনশিয়াস। তাইনা এসবি?

–ইয়েস মাম্মা।

–নাচ গান কিছু পারোতো? আমার ছেলেকে কিন্তু এন্টারটেইন করতে হবে। তাইনা এসবি?

–ইয়েস মাম্মা।

–তো বলো এসব পারো? যদি পারো তাহলেই আমরা এই বিয়েতে রাজি হবো। নাহলে আমার হ্যান্ডসাম ছেলের জন্য লাখ লাখ মেয়ে লাইন ধরে আছে। তাইনা এসবি?

–ইয়েস মাম্মা।

বেলি সব শুনে আস্তে করে উঠে দাঁড়াল। তারপর ধীরে ধীরে হেঁটে গিয়ে ফ্রীজের কাছে গেল। ফ্রিজের পেছন থেকে ঝাড়ুটা হাতে নিলো। খুশির দিকে আসতে আসতে বললো।
–আপনার জবাব চাই তাইনা? এখনি দিচ্ছি মাতাজী।

অবস্থা বেগতিক দেখতে পেয়ে খুশি উঠে দাঁড়িয়ে দুই হাতে শাড়ী তুলে ভোঁ দৌড় দিল। বেলি ওর পিছে পিছে ঝাড়ু নিয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে বললো।
–আরে আরে দৌড়াচ্ছেন কেন মাতাজী? দাঁড়ান না? জবাব তো নিয়ে যান।

খুশি সারাবাড়ি দৌড়াতে দৌড়াতে বললো।
–দেখ এটা কিন্তু একদম ঠিক না। মানবাধিকার লঙ্ঘন করছো তুমি। ছেলেপক্ষের সাথে কেউ এই ব্যাবহার করে?

–তাই না? দাঁড়া তোকে তো দেখাচ্ছি মজা। অনেক বাঁদর হয়ে গেছিস তুই।

ওদের কান্ড দেখে সবাই হেঁসে কুটিকুটি হচ্ছে। এই পাগলীটা পারেও বটে।

এদের ড্রামা পর্ব শেষ হলে প্রহর এবার আসল কনভেনশন শুরু করলো। রাকিব হাসানের উদ্দেশ্যে বললো।
–বাবা, যেহেতু এই বিষয়ে কারোরই অমত নেই। তাহলে শুভ কাজে আর দেরি করে কি লাভ? একটা কাজী ডেকে আজই বিয়েটা সেরে ফেলি।

রাকিব হাসান বললেন।
–ঠিক আছে বাবা তুমি যেটা ভালো মনে করো। আমি তাহলে কাজী সাহেব কে ফোন করে আসতে বলছি।

বেলির মনে যেন হাজারো অনুভূতির মেলা জমে যাচ্ছে। আজ এতবছর পর ওর অসম্পূর্ণ ভালোবাসা পূর্ণতা পেতে চলেছে। এটা যেন বিশ্বাসই হচ্ছে না ওর। মনে হচ্ছে কোন স্বপ্ন দেখছে ও। কিছুক্ষণ পরেই কাজী চলে এলো। কাজী বিয়ে পড়ানো শুরু করতে নিলেই কেউ ফট করে এসে টিভি সিরিয়ালের মতো বলে উঠলো।
–থামুন! এ বিয়ে হবে না।

অনাকাঙ্ক্ষিত এই কথায় সবাই চকিত হয়ে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা আগন্তুকের দিকে তাকালো। খুশি আর ওর মা বাবা ভাই এই আগুন্তকে চিনতে পারলোনা। তবে বেলির চেহারায় আতঙ্ক হানা দিলো। জিদান সাহেব আর প্রহরের মুখচ্ছবি পাল্টে গেল। বিশেষ করে প্রহরের মাঝে বেশি প্রভাব দেখা গেল। মুহূর্তের ব্যবধানেই চেহারা পুরো রক্তিম হয়ে উঠলো প্রহরের। চোয়াল আর হাতের মুঠো শক্ত মজবুত হতে শুরু করলো। চোখের লাল আভায় ভেসে উঠলো তীব্র রাগ, ঘৃণা আর কষ্টের প্রতিচ্ছবি। সবার আকস্মিকতা এড়িয়ে জিদান সাহেব বলে উঠলো।
–পাপিয়া???

পাপিয়া বেগম এগিয়ে এসে বাঁকা হেসে বললো।
–বাহ্ এখনো ভোলনি তাহলে আমাকে? ভুলবেই বা কি করে? প্রথম ভালোবাসা বলে কথা।

জিদান সাহেব এগিয়ে এসে দাঁতে দাঁত চেপে বললো।
–তুমি এতবছর পর এখানে কি করতে এসেছ?

–বারে আমার হাসব্যান্ড আমাকে দ্বিতীয় বিয়ে করবে আর আমি তা বসে বসে দেখবো? আমি থাকতে এটা কখনোই হবে না।

রাকিব হাসান এতক্ষণে বলে উঠলেন।
–এসব কি হচ্ছে বিয়াই সাহেব? আর উনি কে?

জিদান সাহেব মলিন সুরে বললেন।
–আসলে ও আমার প্রথম স্ত্রী আর প্রহরের জন্মদাত্রী।

জিদান সাহেবের কথায় সবাই চমকে গেল। সবার মাঝে এক আতঙ্ক ভর করলো। কথাটা শুনে খুশি সবার প্রথমে দিকে তাকালো। প্রহরের মুখচ্ছবি দেখে খুশি উপলব্ধি করতে পারলো প্রহরের মাঝে কি ঝড় চলছে।বুকের মাঝে মোচড় দিয়ে উঠলো খুশির। এতবছর পর এই মহিলাটা এসে প্রহরের সব শুঁকিয়ে ক্ষত তাজা করে দিয়েছে। খুশি প্রহরের শক্ত মুঠ করে রাখা হাতটা দুই হাতে জড়িয়ে নিলো। প্রহরের দিকে মায়া ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে মাথা দুই দিকে নাড়িয়ে চোখের ইশারায় প্রহরকে শান্ত করার চেষ্টা করলো। তবে প্রহর চেয়েও পারছেনা নিজেকে ঠিক রাখতে। ভেতরে ভেতরে তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে ওর। রাগে দুঃখে মাথা ফেটে যাচ্ছে প্রহরের। এই মহিলাটা সবসময় ওর সুখ কেঁড়ে নেয়। প্রথমে একবার কষ্ট দিয়ে চলে গেল। আর আজ যখন সবকিছু ভুলে প্রহর আর ওর বাবা জীবনে সুখের মুখ দেখছে তখনই আবারও সব তছনছ করতে চলে এসেছে উনি। কেন এসেছে সে? কি চায়? আর কতবার ভাঙতে চায় আমাদের? আর কত কষ্ট দিলে উনি সুখী হবেন?

জিদান সাহেব পাপিয়ার উদ্দেশ্যে বললেন।
–তুমি এসব কেন করছ? কি চাই তোমার? তুমিতো নিজেই আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছিলে। তাহলে আমি এখন যাকে ইচ্ছে তাকে বিয়ে করি তাতে তোমার কি? আর তুমি ঠেকানোর কে?

পাপিয়া বেগম বললেন।
–আমার কি মানে? আমারই তো সব। তুমি হয়তো ভুলে যাচ্ছো আমাদের কিন্তু এখনো ডিভোর্স হয়নি। সেই হিসেবে আমরা এখনো লিগ্যাল হাসব্যান্ড ওয়াইফ। আর এমতো অবস্থায় তুমি বিয়ে করলে সেটা ইলিগ্যাল হবে। আর তোমার বউ হবে ইলিগ্যাল বউ। খাস বাংলা বলতে গেলে নাজায়েজ বউ।

জিদান সাহেব উচ্চস্বরে বলে উঠলেন।
–পাপিয়া !!!!

–চিল্লিয়ে লাভ নেই জিদান। আমিতো শুধু সত্যি টা বলছিলাম।

প্রহরের এবার রাগে সারা শরীর টগবগ করছে। রাগ আর কষ্টে ভয়ংকর অবস্থা হচ্ছে ওর। নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখা দুষ্কর হয়ে যাচ্ছে ওর জন্য। এতক্ষণে খুশি পাপিয়
বেগমের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো।
–আচ্ছা? তাহলে তো সেই ট্যাগ টা আপনার ওপরই সবার আগে লাগা উচিত। কারণ বাবা তো এতদিনে বিয়ে করছে। কিন্তু আপনিতো অনেক আগেই বিয়ে করে ফেলেছেন। তাহলে তো আপনিও কারোর ইলিগ্যাল বউ। সহজ ভাষায় বললে নাজায়েজ বউ। তো আপনি কোন অধিকারে বাবার বিয়ে ঠেকাতে এসেছেন?

পাপিয়া বেগম এতক্ষণ জিদান সাহেবের দিকে তাকিয়ে কথা বলছিল। খুশির কথায় এবার ঘাড় ঘুরিয়ে খুশির দিকে তাকালো। এক ভ্রু উঁচিয়ে তীক্ষ্ণ শকুনের নজর নিক্ষেপ করলো খুশির দিকে তাকিয়ে বললো।
–ওও তো তুমি বুঝি সেই খুশি। প্রহরের বউ তাইনা? তো বউমা তোমার কথায় যুক্তি তো আছে। বাট আপসোস কোন প্রুফ নেই। আর আইন তো অন্ধ। সে শুধু প্রুফ চিনে।

কথা বলতে বলতে পাপিয়া বেগম সয়তানি হাসির রেখা টেনে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসতে লাগলো খুশির দিকে। প্রহরের হঠাৎ বুকের ভেতর কেমন কেঁপে উঠল। রাগের জায়গায় হঠাৎ ভয় এসে চেপে ধরলো। প্রহর আচমকা খুশিকে বুকের মাঝে শক্ত করে জড়িয়ে নিয়ে, শক্ত কঠিন গলায় পাপিয়া বেগমের উদ্দেশ্যে বললো।
–স্টপ রাইট দেয়ার। আর এক পাও বাড়ানোর চেষ্টা করবেন না। আমার খুশির থেকে দশহাত দূরে থাকবেন আপনি। ওর ধারে কাছে আসারও চেষ্টা করবেন না। নাহলে আজ এক ছেলের মুখ থেকে এমন কিছু বেরিয়ে যাবে যা মোটেও শোভনীয় হবে না। ছেলের কাছে অপমানিত না হতে চাইলে এক্ষুনি বেরিয়ে যান এখান থেকে।

প্রহরের কথায় এবার একটু দমে গেলেন পাপিয়া বেগম। ঝাঁঝাল সুরে বললেন।
–ঠিক আছে আমি চলে যাচ্ছি আজকের মতো। তবে এই বিয়ে যদি হয় তাহলে আমি কোর্টে যাবো। সবগুলোকে জেলের ভাত খাইয়ে ছাড়বো।
কথাটা বলে পাপিয়া বেগম হনহন করে চলে গেলেন।

খুশি এখনো প্রহরের বাহু বন্ধনে আটকে আছে। প্রহরের হঠাৎ অস্বাভাবিক আচরণে খুশিসহ সবাই কেমন বিস্মিত হয়ে গেল। খুশি টের পাচ্ছে প্রহরের শরীর কেমন কাঁপছে। হৃদস্পন্দনের কম্পনও প্রচুর অস্বাভাবিক গতিতে চলছে।প্রহরের এই অবস্থা দেখে খুশির বুকের মাঝে দুমড়েমুচড়ে যাচ্ছে। প্রহরের ভেতরের এই তুফান কে এখন কিভাবে শান্ত করবে ও? ওর প্রহরকে কিভাবে স্বাভাবিক করবে?

চলবে….

গল্পের লেটেস্ট আপডেট পেতে আর গল্প নিয়ে যেকোনো আলোচনা আড্ডা দিতে আমার গ্রুপে জয়েন হওয়ার আমন্ত্রণ রইল। নিচে গ্রুপ লিংক দেওয়া হলো। জয়েন হতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন। 👇
গ্রুপ
https://facebook.com/groups/170529085281953/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here